সিনিয়র লাভ বার্ড পর্ব-০৩

0
320

#সিনিয়র_লাভ_বার্ড(৩)
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা

আনিকা খান অবসরে বই পড়ছিলেন, তখনই কল্প হুরমুড় করে রুমে ডুকে। বই রেখে সোজা হয়ে বসলেন আনিকা খান, কল্পকে কাছে ডাকলেন। ধীর পায়ে কল্প এগিয়ে গিয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। আনিকা খান ছেলের মাথায় স্নেহের হাত ভুলালেন, – কি হয়েছে আমার বাবাটার? মন খারাপ কি?

ফুঁপিয়ে উঠলো কল্প, মায়ের কোমড় শক্ত করে হাত দিয়ে পেচিয়ে পেটে মুখ গুঁজলো। আনিকা খানের বুকে হাহাকার করে উঠলো, একমাত্র সন্তানের কষ্ট সহ্য হয়না তার। -কি হয়েছে আমার বাবাটার? আম্মুকে কি বলবেনা কল্প?

আম্মু!

বলো বাবা,

সিনিয়রকে এনে দাও!

তোমার পারু আন্টি তো বললেন, পূরবি বাংলাদেশেই আছে, ওর কাজ শেষ হলে এমনই আমাদের বাড়িতে আসবে। ও কি করছে, কোথায় আছে কেউ জানেনা। সময় হলে জানাবে বলেছে।

আম্মু তোমার কাছে সিনিয়রের কোনো ছবি আছে?

না তা নেই, তবে তোমার পারু আন্টি মাঝে মধ্যে আমাকে ওয়ার্সআপে পিক দিতেন, পুরোনো মেসেজ ঘেঁটে দেখতে হবে, পেলেও পেতে পারি। তুমি হঠাৎ পূরবির ছবির কথা বলছো কেনো? তুমি তো চাও পূরবিকে প্রথম সামনাসামনি দেখতে!

আমার ভার্সিটিতে একটা মেয়ে নিউ ভর্তি হয়েছে আম্মু, অনার্স ফাইনাল ইয়ারে। সিনিয়রের ছোট বেলার মুখশ্রী যতোটুকু মনে আছে তাতে আমার মনে হয়েছে ওই মেয়েটা কিছুটা সিনিয়রের মতো দেখতে, আর মেয়েটির নামও সিনিয়রের নামে!

কি নাম মেয়েটির?

‘পূরবি শেখ’

এক নামে তো অনেক মানুষই আছে পৃথিবীতে, আর এক রকম দেখতেও মানুষ আছে।

হ্যা আম্মু, সেটাই। আমি শিওর হতে চাই, আমার বারবার মনে হচ্ছে ওই মেয়েটিই আমার সিনিয়র। আমি মেয়েটির চোখ দেখেছি, ঠিক সিনিয়রের মতো। তুমি যেভাবে পারো সিনিয়রের ছবি কালেক্ট করে দাও, আমি শিওর না হওয়া পর্যন্ত শান্তি পাবো না আম্মু।

চিন্তা করো না বাবা, আমি পূরবির ছবি খুজে বের করবো, যদি না পাই তো তোমার পারু আন্টির থেকে নিবো। এবার তুমি চলো খেয়ে নিবে, আগে ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি রুপাকে খাবার গরম করতে বলছি।

খেতে ইচ্ছে করছে না।

দিবো এক থাপ্পড়, যাও জলদি ফ্রেশ হয়ে আসো। খাবারের প্রতি কোনো অনীহা আমি সহ্য করবো না। আমি সিরিয়ালের মায়েদের মতো না যে ছেলে খেতে চাইবে না বলে, ছেলের ভয়ে জিজ্ঞেস করবো না, খাবে কি খাবে না! বা তুমিও সিরিয়ালের মতো রাগী বদমেজাজি নও। আমার কল্প সবসময় মায়ের বাধ্য ছেলে, যাও বাচ্চা ফ্রেশ হয়ে আসো, মা তোমার জন্য খাবার টেবিলে অপেক্ষা করবো। কল্পের কপালে চুমু দিয়ে উঠে চলে আসেন আনিকা খান।

এতোক্ষণ কল্পের মুখ বেজার ছিলো, আনিকা খানের কথা শুনে হেসে দিয়েছে। মাথা চুলকে হেসে কল্প নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়, তারপর মা ছেলে মিলে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়। কল্পের বাবা অফিসেই দুপুরের খাবার খান।

.
দুপুরের খাবার খেয়ে ভাতঘুম দিয়েছিলো কল্প, সাড়ে তিনটার দিকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়, তারপর পড়তে বসে। কল্পের কোনো বাজে আড্ডা বা সময় অপচয় করার কোনো সঙ্গী নেই। সে সবসময় মায়ের বাধ্য ছেলে।

আনিকা খান একটা লিস্ট দিয়েছেন- ফজরের সময় কল্পকে ডেকে তুলে নামাজে পাঠান বাপ ছেলেকে, তারপর তিনিও নামাজ পড়েন। নামাজ থেকে এসে আবার ঘুমিয়ে পড়েন সবাই। নয়টা বা সাড়ে নয়টার দিকে উঠে কল্প বাবা মার সাথে নাস্তা করে তারপর ভার্সিটিতে যায়। সেখান থেকে দুপুরে বাসায় এসে খেয়ে ভাতঘুম দেয়। তিনটা বা সাড়ে তিনটার দিকে উঠে পড়তে বসে। সন্ধ্যার দিকে আজমিন শেখ চলে আসেন, তখন বাবা ছেলে মিলে সম্পূর্ণ বাসা মাতিয়ে রাখেন। কল্পের বন্ধু বলতে ভার্সিটিতে সূর্যই আছে, সূর্য ও চলে আসে সন্ধ্যার দিকে কখনো কল্পদের বাসায়, সেও আড্ডায় যোগ দেয়। সব মিলিয়ে আনিকা খানের ভরপুর সংসার। তার সংসারে সুখের অন্ত নেই। তবে কল্পের জন্য আনিকা খানের সব চিন্তা, তার ছেলে শান্তস্বভাবের, কখনো কোনো কিছু মুখ ফুটে চায়না। শুধু একটা জিনিসই সে ছোট বেলা থেকে চায়। পূরবিকে! আনিকা খান পারু শেখের সাথে হওয়া পুরনো চ্যাটিং গুলো দেখতে থাকেন। কিন্তু পূরবির কোনো ছবি খুজে পান নি। বাধ্য হয়ে পারু শেখ কে ফোন করেন। কিছুক্ষণ কথা বলে পূরবির ছবি দেওয়ার কথা বলেন ওয়ার্সআপে। পারু শেখ বিনাবাক্যে ওয়ার্সআপে ছবি দিয়ে দেন। তারও কল্পকে ভীষণ পছন্দ, এমন লক্ষী ছেলে আজকালকার যোগে পাওয়াই মুশকিল। কল্পের মতো শান্তশিষ্ট ছেলেই তার মেয়ের জন্য উপযুক্ত, কল্পই পারবে গম্ভীর পূরবিকে হাসিখুশি রাখতে।

কল্প টেবিলে বসে পড়ছিলো, তখনই হাতে দুই কাপ কফির মগ ও ফোন নিয়ে প্রবেশ করেন আনিকা খান। মাকে দেখে কল্প বই বন্ধ করে উঠে দাড়ায়। আনিকা খান ছেলের তার প্রতি শ্রদ্ধা দেখে গর্বে হাসেন। মনে মনে ভাবেন তিনি সার্থক এমন ছেলের মা হয়ে। কফির মগ টেবিলে রেখে কল্পকে বসতে বলে তিনিও আরেকটা চেয়ার টেনে বসেন। কফি খেতে খেতে মা ছেলে নানান গল্পে মেতে উঠেন। কথা বলার ফাঁকেই আনিকা খান নিজের ফোন থেকে গ্যালারিতে গিয়ে পূরবির ছবি বের করে কল্পের দিকে বাড়িয়ে দেন। কল্প মায়ের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে স্কিনের দিকে তাকালো। মুহুর্তেই তার চোখজোড়া থমকে গেলো।

কালো টিশার্ট তার উপরে সাদা লেডিস শার্ট পড়ে মা বাবার কাধ জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে পূরবি। যা স্কিনে দেখতে পাচ্ছে কল্প। সে ঠিকই ভেবেছিলো ভার্সিটির মেয়েটাই তার সিনিয়র। সে চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পেরেছিলো।

আনিকা খান কল্পের গালে হাত রাখলেন, কল্প মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসলো। – আমি তোমাকে বলেছিলাম না আম্মু, ভার্সিটির মেয়েটাই সিনিয়র, মিলে গেছে আম্মু। ওই আমার সিনিয়র!

আর ইউ শিওর কল্প?

হ্যা আম্মু, আমি একশো পার্সেন শিওর। কিন্তু ওই মেয়েটাই যে সিনিয়র সেটা তুমি আর আমিই শুধু জানবো, কাউকে বুঝতে দিও না। আমি চাই সিনিয়র নিজে এসে আমার কাছে ধরা দিক। তার লুকোচুরি খেলা শেষ হলে সে নিজেই আসবে, ততোদিন নাহয় আমি তার সাথে তাল মিলিয়ে অভিনয় করে গেলাম।

ঠিক আছে বেটা, তুমি যা চাও তাই হবে। আমি পূরবিকে চিনি ও নিশ্চয়ই কোনো প্রয়োজনে কাউকে ধরা দিচ্ছে না। ওর কাজ শেষ হলে ও নিজে থেকেই তোমাকে সব বলবে। মন খারাপ করো না, রেডি হয়ে নাও।

কোথায় যাবো?

তুমি আর আমি ঘুরতে যাবো।

আব্বু যাবেন না?

যাবেন তো, তোমার আব্বু অফিস থেকে আমাদের সাথে যুক্ত হবেন। তোমার পারু আন্টি,ফাইয়াজ আঙ্কেল ও থাকছেন।

ওয়াও! তাহলে তো খুব আনন্দ হবে। আমি সূর্যকে ডেকে নেই?

হুম নাও, পারলে তোমার সোনিয়া আন্টিকেও নিয়ে আসতে বলো। কতোদিন উনার সাথে আড্ডা দিচ্ছিনা।

ঠিক আছে আম্মু, কিন্তু আমি কি পড়বো?

এতোবড় হয়ে গেলে, এখনো কোথাও ঘুরতে গেলে বাচ্চাদের মতো কি পড়বে তা নিয়ে চিন্তা করো।

আমি তো বাচ্চাই, তোমার বাচ্চা।

কল্পের গাল টেনে দিলেন আনিকা খান, আলমারি থেকে খুজে বের করে একটা সাদা শার্ট বের করলেন, সাথে কালো প্যান্ট ও কালো কোর্ট। বিছানার উপর সেগুলো রেখে কল্পকে ফ্রেশ হতে বলে, নিজেও তৈরি হতে চলে গেলেন।

কল্প সূর্যকে ফোন দিয়ে বললো রেডি হয়ে তাদের বাসায় আসতে সাথে তার মা সোনিয়া খানম কে নিয়ে আসতে। সূর্য তো একপায়ে রাজি, সোনিয়া খানমকে বলতেই তিনিও রাজি হয়ে গেলেন। কতোদিন আড্ডা দেওয়া হয়নি তার। সাংসারিক ব্যস্ততায় কারোরি তেমন আড্ডা বা দেখা হয়না। কোনো অনুষ্ঠান বা হঠাৎ প্লেন করে ঘুরতে যাওয়া হলে তবেই সবার দেখা ও আড্ডার আসর বসে। তখন সব কিছু ভুলে, বয়স সংসার সব ভুলে একে অপরের সাথে আড্ডায় মত্ত হোন তারা।

চলবে, ইনশাআল্লাহ,,