সিনিয়র লাভ বার্ড পর্ব-০৫

0
275

#সিনিয়র_লাভ_বার্ড(৫)
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা

ভার্সিটির মাঠে একটি গাছের তলায় বসে আছে সূর্য ও কল্প, সাথে রয়েছে তাদের কিছু ক্লাসমিট। ক্লাস শুরু হতে আরো বিশ মিনিটের মতো বাকি, তাই তারা আড্ডা দিচ্ছে। কল্প বারবার গেইটের দিকে তাকাচ্ছে, সূর্য কল্পের কার্যকলাপ দেখছে আর ঠোঁট কামড়ে হাসছে। কল্পের কাঁধে হাত রেখে হালকা কেশে মনোযোগ নিজের দিকে আনার চেষ্টা করলো সূর্য, কল্প সূর্যের কাশির শব্দে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সূর্যের দিকে তাকায়। ভ্রু কুঁচকে সূর্য বলে-

কী?

কল্প নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে- কিছু না। তুই এভাবে হঠাৎ কাশি দিলি কেনো?

আমার মুখ, আমার গলা। আমি কখন কাশি দিমু সেটা আমার ব্যাপার, আর কাশি কি বলে কয়ে আসে না কি?

আমি কি সেটা বলেছি?

তাহলে? মানে আমার কোনো প্রাইভেসি নেই? কাশি দিলেও তোকে বলে তারপর দিতে হবে?

মেয়েদের মতো কুচিয়ে কুচিয়ে ঝগড়া করছিস কেনো?

চ্যাতে উঠে সূর্য, মুখ ফুলিয়ে বলে- কিহ! আমি মেয়েদের মতো ঝগড়া করি? বুঝলি কল্প সবাই সার্থপর, এইযে তুই তোর ভালোবাসার মানুষের সন্ধান পেয়ে গেছিস। তাই এখন তোর আমাকে অসহ্যই লাগবে, আমি তো আর তোর প্রেমিকা না, আমি হলাম বন্ধু। আর মানুষ প্রেমিকা পেলে বন্ধুকে এমনি ভুলে যায়। এটা স্বাভাবিক আমি কিছু মনে করিনি।

ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে কল্প, এদিকে সূর্য মুখ লুকিয়ে হেসে আবার গম্ভীর ভাব মুখে ফুটিয়ে কল্পের দিকে তাকায়। দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে কল্প বলে- তুই আমায় এই বুঝলি সূর্য? তোর তাই মনে হয় আমি তোকে ভুলে যাচ্ছি? আমার কাছে তোর গুরুত্ব অন্যরকম। বন্ধুত্ব বন্ধুত্বের জায়গায় আর প্রেমিকা প্রেমিকার জায়গায়। আর আমি তো প্রেমও করছি না, তাহলে তুই কিসের ভিত্তিতে এসব কথা বললি?

প্রেম করিস নি, কিন্তু তোর তো ভালোবাসার মানুষ আছে। বলা তো যায় না, তুই কখন আবার আমায় ভুলে যাস।

তুই এই চিনলি আমাকে?

মুখ তুলে কল্পের চোখের দিকে তাকালো সূর্য। কল্পের ছলছল চোখ দেখে আৎকে উঠলো সূর্য, সে তো মজা করছিলো এতোক্ষণ, বুঝেনি তার বন্ধুটা কষ্ট পাবে। কল্পের কাঁধ জড়িয়ে সূর্য অনুনয় করে বলে- ভুল বুঝিস না দোস্ত, আমি তো এতোক্ষণ তোর সাথে মজা করছিলাম। তোর মনে হয় আমি কখনো এমন কিছু ভাবতে পারি? আমি এতোক্ষণ তোর সাথে মজা করেছি। আ’ম এক্সটেমলি স্যরি ইয়ার, আর কখনো এমন মজা করবো না, তুই প্লিজ কাঁদিস না।

বলতে না বলতেই কল্পের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো, বিচলিত হয়ে সূর্য কল্পের চোখের পানি মুছে দিলো। কান ধরে বললো- এই দেখ কান ধরছি, আর কখনো এমন মজা করবো না।

সূর্যের কান থেকে হাত নামিয়ে নেয় কল্প, জড়িয়ে ধরে একে অপরকে। কল্প সূর্যকে আঁকড়ে ধরে বলে- আমাকে কখনো ভুল বুঝিস না সূর্য, আমার বন্ধু বলতে একমাত্র তুই। আমি তুই ছাড়া আর কারো সাথে তেমন মিশি না। আমি তোকে খুব বিশ্বাস করি, কখনো আমার বিশ্বাস ভাঙিস না।

যদি কখনো তোর মনে হয় আমি কোনো ভুল করেছি, তখন কি তুই আমাকে ক্ষমা করবি না কল্প?

ভুলের মধ্যেও পার্থক্য আছে, কিছু ভুলের ক্ষমা হয়, আবার কিছু ভুলের ক্ষমা হয়না।

আৎকে উঠলো সূর্য, সে টের পেলো তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো কল্পকে বলে- না দোস্ত আমার জানা মতে আমি আজ পর্যন্ত ইচ্ছাকৃত কোনো ভুল করিনি, ভবিষ্যতে করবো কি না জানিনা। তবে তুই কখনো আমাকে ভুল বুঝিস না।

মুচকি হেসে কল্প বলে- আমি জানি তুই কেমন, তুই কখনো কোনো অন্যায় বা ভুল করতেই পারিস না। আর যদি কখনো করিসও তাহলে আমি ধরে নিবো তার পিছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।

কল্পকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসে সূর্য, গেইটের দিকে চোখ যেতেই কল্পকে ধাক্কা দিয়ে বলে- ওই দেখ তোর ললনা আসছে!

ভ্রু কুঁচকে কল্প বলে- ললনা?

হো, তোর সিনিয়র ললনা।

মজা করিস শা*লা,

বিনিময়ে দাঁত কেলিয়ে তাকায় সূর্য।

.
ভার্সিটির ভিতরে প্রবেশ করে পূরবি, তখনই কিছু ছেলে মেয়ে তার পথ আটকে দাঁড়ায়। ভ্রু কুঁচকে যায় পূরবির, কিছু সেকেন্ড পরে কিছু মাথায় আসতেই বাঁকা হাসে।

নিশ্চয়ই তোমাকে বলতে হবে না আমরা কারা?

মাথা চুলকে মনে করার চেষ্টা করে পূরবি বলে- কারা আপনারা?

ছেলেমেয়েদের মাঝ থেকে একটি মেয়ে বলে- এই ভার্সিটিতে নতুন তা তোমাকে দেখেই বুঝেছি, আমরা তোমার সিনিয়র।

হাত নাড়িয়ে পূরবি বলর- তো?

তাদের মধ্যে থাকা একটি ছেলে বলে- তো কি? তুমি নিশ্চয়ই জানো সিনিয়রদের কথা শুনতে হয়?

হ্যা সেটা জানি, তবে সব কথা কি আর শুনা বা মেনে নেয়া সম্ভব? আমার সাধ্যের ভিতরে সব মেনে নিবো।

তখনই একটি ছেলে এসে দাড়ায়, বাকি ছেলে মেয়ে গুলো তাকে দেখে ছেলরটিকে কানে কানে কিছু বলে। ছেলেটি এগিয়ে এসে পূরবির কাছাকাছি দাড়ায়, পূরবি অস্বস্তি বোধ করে পিছিয়ে যায়। ছেলেটি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে- হাই, আমি রূপক রায়হান। তোমার সিনিয়র,

হাত না মিলিয়ে ভ্রু কুঁচকে পূরবি বলে- তো?

অপমানবোধ করে রূপক, আরো এক পা এগিয়ে আসে পূরবির দিকে- তুমি কি জানো আজ পর্যন্ত কোনো জুনিয়রের সাহস হয়নি, আমার সাথে বেয়াদবি করার।

এক পা পিছিয়ে পূরবি বলে- আমি কখন আপনার সাথে বেয়াদবি করলাম মিস্টার রূপক?

পাশ থেকে ছেলে মেয়ে গুলো বলে,- রূপক বাদ দে, একে একটা কিছু দে সেটা করাই ওর শাস্তি। তোর সাথে বেয়াদবি করার শাস্তি দে।

কুঁচকানো ভ্রু, সমান করে পূরবি বলে- হাত মিলাই নি বলে, যদি সেটা বেয়াদবি হয় তাহলে আমি বেয়াদব। আপনারা যা খুশি ভাবতে পারেন, আই ডোন্ট কেয়ার। রাস্তা ছাড়ুন আমার ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে।

রূপক বাঁকা হেসে বলে- যাবে, অবশ্যই যাবে তার আগে তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।

কি কাজ?

ভার্সিটির সবার সামনে আমায় প্রপোজ করো!

ফিক করে হেসে উঠে পূরবি, হাসতে হাসতে পেট ধরে যাওয়ার অবস্থা তার। অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলে- রিয়েলি! আমি আপনাকে প্রপোজ করবো? ভাবলেন কি করে সেটা?

তুমি যদি আমার শর্ত না মানো তো তুমি আর এই ভার্সিটিতে ঢুকতে পারবে না। আমার বাবা এই ভার্সিটির ৩০% খরচ বহন করেন, বুঝতেই পারছো আমার কথাই শেষ কথা হবে।

দূরে দাড়িয়ে এতোক্ষণ বাকি স্টুডেন্টদের সাথে কল্প ও সূর্য সব দেখছিলো ও শুনছিলো। কল্প শান্ত স্বভাবের, সহজে রাগে না। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে পূরবির পাশে দাড়ায়, পূরবির হাত ধরে নিয়ে যেতে চাইলেই আটকে দেয় রূপকের ফ্রেন্ডরা। স্বাভাবিক ভাবেই কল্প বলে- পথ ছেড়ে দাড়াও।

রূপক এগিয়ে এসে বলে- তোমার সাহস হলো কি করে, ওকে নিয়ে যাওয়ার? এই মেয়েটাকে আমি একটা শর্ত দিয়েছি ও সেটা না মানা পর্যন্ত যেতে পারবে না ক্লাসে।

কল্পকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় পূরবি, রূপকের দিকে তাকিয়ে বলে- আমি একাই যাবো, পারলে আটকে দেখান। বলেই ওর ক্লাসরুমের বিল্ডিংয়ের দিকে হাটা ধরলো।

পিছন থেকে রূপকের বন্ধুরা আটকাতে চাইলেও তাদের থামিয়ে দিয়ে রূপক বলে- একে আমার চাই, আই লাইক ইট! এই মেয়েটির সম্পর্কে সব খুজে বের কর, রূপক রায়হান এই মেয়েটিকেই নিজের জীবনসঙ্গী করবে!

রূপকের বন্ধুরা অবাক হলেও নিজেদের সামলে নিলো। কল্পের রাগ আকাশচুম্বী হলো, যদিও তার মুখ দেখে সেটা বুঝার উপায় নেই। সূর্য ঢুক গিলে কল্পের দিকে তাকায়, তার শান্তশিষ্ট বন্ধুটা রেগে গেছে, তারমানে কোনো অঘটন ঘটতে বেশি সময় লাগবেনা। কল্পের হাত টেনে ক্লাসের উদ্দেশ্যে চলে গেলো সূর্য, চেষ্টা করেও নিজের হাত মুক্ত করতে পারেনি কল্প। কিন্তু পিছনে তাকিয়ে ঠিকই রূপকের দিকে আগুন চাহনি নিক্ষেপ করেছে।

চলবে, ইনশাআল্লাহ,,