সিনিয়র লাভ বার্ড পর্ব-০৬

0
274

#সিনিয়র_লাভ_বার্ড(৬)
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা

সন্ধ্যা সাতটার কাছাকাছি সময়, ভার্সিটির পেছনের মোড়ের নির্জন রাস্তায় বসে আছে একদল ছেলে মেয়ে। সবার হাতেই একটা করে হুইস্কির বোতল, কেউ কেউ হুইস্কির বোতলে ড্রাগস ভরে মিশিয়ে খাচ্ছে আর বার বার তৃপ্তির ঢেঁকর তুলছে। আচ্ছা এসব ছাইপাঁশ খেলেও তৃপ্তি পায় নাকি কেউ? পায়! পায় বলেই তো ওরা মা বাবার কথা চিন্তা করেনা, ভাই বোন ফ্যামিলি সবকিছুর কথা একবারও চিন্তা না করে মাদকাসক্তির পথে পা বাড়ায়। এদের মধ্যে হয়তো কয়েকজন বড়লোকদের বিগড়ে যাওয়া সন্তান, কিন্তু বাকিরা? বাকিরা কেউ মধ্যবিত্ত, কেউ নিম্নবিত্ত। কারো ঘরে মা ছেলের পথ চেয়ে বসে আছে, আবার কারো ঘরে বউ পথ চেয়ে বসে আছে। কারো ঘরে গম্ভীর বাবা একমাত্র মেয়ের পথ চেয়ে বসে। কিন্তু তিনি তো জানেন না, তার মেয়ে বাজে বন্ধুদের কবলে পড়ে খারাপ হয়ে গেছে, মৃত্যুর দিকে ঝুকে যাচ্ছে। ইশশ একবার যদি এই ছেলে মেয়েরা একজন মধ্যবিত্ত মা বাবাদের কষ্ট, বিসর্জন, দায়িত্ব বুঝতো! এসব ছাইপাঁশের পিছনে টাকা না খরচ করে যদি বড়লোকদের বিগড়ে যাওয়া ছেলে মেয়েরা কোনো এতিম কানায় টাকাগুলো দান করতো!

ড্রাগস মিশানো হুইস্কির বোতল মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে ঢকঢক করে সেটা পান করলো রাইসুর। কিছু মুহূর্তের মধ্যেই সে ঢলে পড়লো পাশে বসা মেয়েটির শরীরে। বিরক্ত হয়ে পাশের মেয়েটি বিশ্রী এক গালি দিয়ে রাইসুর কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। ছিটকে গিয়ে রাইসুরের মাথা রাস্তায় পড়ে রক্তাক্ত হলো একটু, তা দেখে নেশা করতে থাকা বাকি ছেলে মেয়ে গুলো বিশ্রী ভাবে হেসে উঠলো, যা নিস্তব্ধ রাস্তায় ঝংকার তুললো। নেশায় মত্ত থাকা রাইসুর নিজের আঘাত পাওয়াটা বুঝতে পারলেও সেটা পাত্তা দিলো না। সে তো নেশায় নৌকায় ভেসে ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে।

ভার্সিটির রাস্তার মোড়ের দিক থেকে কিছুটা দূরে গাড়ি থামালো গোয়েন্দা ইনভেস্টিগেটরদের গাড়ি। সেটা থেকে নেমে এলেন পি.সি সহ তার টিমের অফিসার’রা।

খবরটা সঠিক তো নিয়াজ?

পি.সি’র প্রশ্নের প্রতুত্তোরে মাথা নাড়ায় নিয়াজ, ভার্সিটির চারিদিকে খেয়াল রাখার জন্য যাদের দায়িত্ব দিয়েছিলো, তারাই নিয়াজকে এই খবরটা দিয়েছে। ভার্সিটির মোড়ের সামনেই কয়েকজন ছেলে মেয়ে নেশা করছে। তা তারাতাড়ি পি.সি’কে জানায় সে।

ফলো মি!লেটস গো,

পি.সি’র পিছে পিছে বাকি অফিসাররা যেতে থাকেন। নেশায় মত্ত থাকা ছেলে মেয়ে গুলো একবার টেরই পেলো না, তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে!

রাইসুরদের সবাইকে ঘিরে ধরলো পি.সি’র টিম। যদিও সবাই পালানোর চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু সেই উপায় পায়নি। পি.সি’র ইশারায় সবাইকে গাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়া হলো,ঘুমের দেশে পাড়ি জমানো রাইসুর এখনো ঘুমিয়েই আছে। নিয়াজকে ইশারা করলো পি.সি, নিয়াজ রাইসুরকে টেনে তুলে দাঁড় করায়। পি.সি এক বোতল ঠান্ডা পানি ছুড়ে মারে রাইসুরের সমস্ত মুখে, ছিটকে গিয়ে সম্পূর্ণ শরীরে পানি গড়ায়।

ম্যাম ওর তো মাথার পিছন থেকে রক্ত বের হচ্ছে, আঘাত পেয়েছে মনে হয়।

হাসপাতালে নিয়ে যাও, একটু সুস্থ বোধ করলেই টানতে টানতে নিয়ে আসবে। আমি এদের সবাইকে ২৪ঘন্টার মধ্যে গোয়েন্দা অফিস নয়, আমাদের নতুন গোপন আস্তানায় দেখতে চাই।

গটগট করে চলে গেলেন পি.সি, নিয়াজ তার কথা মতো বাকি সবাইকে নিয়ে যেতে বলে সে রাইসুরকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে প্রস্থান করে।

.
পড়ার টেবিলে বসে পড়তে ব্যস্ত কল্প, আনিকা খান এক মগ কফি নিয়ে ছেলের রুমে ডুকেন কোনো শব্দ ছাড়া। কল্প তার মায়ের উপস্থিতি বুঝতে পারে নি। আলগোছে আনিকা খান কল্পের মাথায় হাত ভুলিয়ে দেন। কল্প মাথা তুলে মায়ের দিকে তাকিয়ে উঠে দাড়ায়। পাশের চেয়ারে বসেন আনিকা খান, কল্পের দিকে কফির মগ এগিয়ে দিয়ে, আবারো কল্পের মাথায় কিছু সময় হাত ভুলান, কল্পের কফি খাওয়া শেষ হতেই খালি কফির মগ নিয়ে কল্পের রুম থেকে প্রস্থান করেন।

আলসেমি ঝেড়ে কল্প আবারো পড়ায় মন দেয়। তখনই তার ফোন বিকট শব্দ করে বেজে উঠে, ভ্রু কুঁচকে কল্প ফোন রিসিভ করে। ওপাশ থেকে সূর্য দাত কেলিয়ে বলে- কিরে সিনিয়র ভাবির হবু জামাই কি করিস?

তোর আর কোনো কাজ নেই না, শুধু আমাকে বিরক্ত করিস। পড়াশোনা নেই তোর?

আরে ইয়ার, পড়ছিলামই তো। একটু বরিং ফিল হলো তাই ভাবলাম তোর সাথে কথা বলে তারপর আবার পড়বো। কিন্তু তুই তো তোর সিনিয়রকে নিয়ে ব্যস্ত আমার সাথে কথা বলার কি আর তোর টাইম আছে?

একদম বাজে কথা বলবি না, আমি পড়ছিলাম, তোর মতো আজাইরা আমি না, প্রেম করে সময় নষ্ট করবো না কখনো। এখন আমাদের পড়াশোনা করার সময়। মাঝে মধ্যে হয়তো সিনিয়রের সাথে কথা হবে কিন্তু সেটা প্রেমিক প্রেমিকা হিসেবে না। আমি বা সিনিয়র কখনো হারাম কিছুতে জড়াবো না। আমি পড়াশোনা শেষ করে বাবার বিজনেস দেখবো, কিছুটা আয়ত্ত নিয়ে তারপর সিনিয়রকে ডাইরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব দিবো। আমি চাই সবকিছু হালাল হোক। চারিদিকে শুধু বিচ্ছেদ আর বিচ্ছেদ। যারা প্রেম করে বিয়ে করে তাদের বিচ্ছেদের সংখ্যা বেশি। কেনো বল তো?

ভাবুক হয়ে প্রশ্ন করে সূর্য- কেনো?

কারণ, রিলেশন হারাম জিনিস, আর যেই সম্পর্কটা হারাম দিয়ে শুরু সেটা টিকে থাকার চান্স থাকবে কিভাবে বল?

হুম, রাইট রাইট!

হুম সেটাই, তোর মাথা থেকে গোবর বের কর। পড়াশোনায় মন দে।

ওপাশ থেকে ক্ষেপে যায় সূর্য, তেতে উঠে বলে- আমার মাথায় গোবরে ভরা?

সহজ স্বীকারোক্তি কল্পের- হ্যা, তোর মাথায় গোবরে ভরা।

চেচিয়ে সূর্য বলে- তোর মাথায় গোবরে ভরা, তোর সিনিয়রের মাথায় গোবরে ভরা। সালা!

চুপ!যা পড়তে বস, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট না করলে তোরে কিন্তু সিনিয়র বউ খুজে দিবো না,

তুই দিবি কি? আমি তো সিনিয়র ভাবিকে বলেছি, সে খুজে দিবে।

আচ্ছা দেখা যাবে।

দেখে নিস, বলেই কল কেটে দিলো সূর্য।

কল্প দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে, মোবাইল রাখতে গিয়েও রাখে না। সেদিন পূরবির নাম্বার মোবাইলে সেভ করেছিলো। মনের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে পূরবির নাম্বারে ফোন দেয়।

ডিভানে বসে লেপটবে কিছু কাজ করছিলো পূরবি, তখনই তার ফোন বেজে উঠে, স্কিনে ‘জুনিয়র রাজকুমার’ নামটি দেখে মুচকি হেসে রিসিভ করে কানে ধরে।

ভালো আছে কি না, কি করছে এগুলোই তাদের কথোপকথন ছিলো। ফোন রেখে দিয়ে পূরবি আবার নিজের কাজ করতে ব্যস্ত হয়ে যায়। কল্প ও পড়ার মধ্যে ডুবে যায়।

রাতে ডিনার শেষে কল্পের মা ডোয়িং রুমে লেফটবে ভিডিও কলে কথা বলছিলেন পারু শেখ এর সাথে। এক পর্যায়ে পারু শেখ কল্প ও পূরবির এনগেজমেন্ট করে রাখার কথা বলেন। আনিকা শেখ আজমিন শেখ কে ডাকেন, ওপাশে ফাইয়াজ শেখ ও যুক্ত হোন। চারজন কথোপকথন ও আলাপ আলোচনা করে ঠিক করেন, এক সপ্তাহের মধ্যে কল্প ও পূরবির এনগেজমেন্ট করবেন। সবকিছু শেষে শুক্রবার ঠিক করেন,শুক্রবারই এনগেজমেন্ট পার্টি হবে। এই বিষয়ে কল্প ও পূরবির মতামত নেওয়ার জন্য আনিকা খান কল্পকে ডাক দেন। কল্প মায়ের এক ডাকে এসে সোফায় বসে। পারু শেখ পূরবিকে ফোন করে ভিডিও কলে যুক্ত হতে বলেন, পূরবি ও যুক্ত হয়। মা বাবার সিদ্ধান্ত শুনে কল্প মাথা নাড়ায়, সে সায় দেয়। পূরবির দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। এখন পূরবি মতামত দিলেই এনগেজমেন্ট এর আয়োজন করা হবে।

টেনশনে কল্পের হাত পা ঠান্ডা হওয়ার অবস্থা, এই পূরবি মতামত জানাচ্ছে না কেনো? তখন থেকে সবার দিকে তাকিয়ে কি কি যেনো ভেবে চলেছে।

অবশেষে কল্পের কানে ভেসে আসে সেই কাঙ্ক্ষিত উত্তর।

‘আমি রাজি’

পূরবির সম্মতি শুনে সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলেন।

চলবে, ইনশাআল্লাহ,,