সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব-২২+২৩

0
542

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ২২
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” কিরে কায়ু উঠে পড়েছিস?শরীর কেমন লাগছে এখন?” ইতি রুমে ঢুকতে ঢুকতে প্রশ্ন করে।

” হুম ঠিক আছি কিন্তু তুই আমার বাড়িতে এতো সকালে?”

” আমি তো কাল রাত থেকে এখানেই আছি।”

” কিন্তু আমার যতটুকু মনে আছে আমি তো কাল রাতে আরোহী জন্মদিনের পার্টিতে ছিলাম।আমার শরীরটা খারাপ লাগছিল তাই আরোহী আমাকে একটা রুমে শুয়ে দিয়েছিল।তাহলে বাড়ি এলাম কি করে?”

” তোকে আমি বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম।হোটেলের রুমে বেহুশ হয়ে ছিলিস তুই।”

” কি?তুই কি করে জানলি আমি কোথায় আছি?”

ইতি আরোহীর পাশে বসে তাকে বলতে থাকে তার দিক থেকে সে কি জানে।

ফ্ল্যাশবেক,(ইতির দৃষ্টি অনুযায়ী)

মাত্রই রেস্টুরেন্টে এসে পৌঁছেছে ইতি।সে এসে প্রথমেই কায়াসাকে খুঁজতে শুরু করে কিন্তু তাকে দেখতে পাইনা।কায়াসাকে খুঁজতে খুঁজতে ইতি আরোহীকে পেয়ে যায়।

” এই আরু।”

” আরে ইতু তুই এসেছিস।এতো দেরি হলো কেন আসতে?কেক তো কখন কাটে শেষ হয়ে গিয়েছে।”

” আসলে গাড়িতে একটু সমস্যা হয়েছিল।আচ্ছা কায়ু কোথায়?ওকে তো দেখছিনা।ও কি চলে গিয়েছে?”

” আরে না না ও এখানে আছে।”

” তাহলে দেখছিনা যে?”

” আসলে ওর একটু শরীর খারাপ লাগছিল তাই আমি ওকে এখানে একটা রুমে বিশ্রাম করতে বলেছি।ও চলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আমি যেতে দিয়নি।একা এই খারাপ শরীর নিয়ে গেলে যদি কোন সমস্যা হয়ে যায়।”

ইতি কি বলবে তার আগেই তার ফোন বেজে উঠে।ইতি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আননোন নম্বর থেকে ফোন এসেছে।

” হ্যালো।কে বলছেন?”

” কায়াসা এখানের একটা রুমে আছে।তুমি তাড়াতাড়ি ওর কাছে যাও।ও মোটেও এখানে সেফ না।তাড়াতাড়ি ওর কাছে যাও নয়তো আবারো বাজে কিছু হয়ে যেতে পারে।”

” হ্যালো কে বলছেন আপনি?”

” আমি কে যেটা পরেও জানতে পারবে।কিন্তু এখন কায়াসার তোমাকে প্রয়োজন।তাড়াতাড়ি ওর কাছে যাও।”

ফোন কেটে যায়।ইতি ভ্রু-কুচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে।

” আরু কায়ু কোন রুমে আছে?আমাকে সেখানে নিয়ে চল।”

আরোহী ইতিকে কায়াসা যেখানে আছে সেখানে নিয়ে যায়।দরজা খুলে ইতি দেখে কায়াসা শুয়ে আছে।ইতি কায়াসার কাছে গিয়ে ওকে ডাকতে থাকে।

” কায়ু,এই কায়ু।উঠ,দেখ আমি চলে এসেছি।কায়ু?”

কায়াসা কোন উওর দেয় না শুধু বিরবির করে যাচ্ছে।কায়াসার এই অদ্ভুত ব্যবহারে ইতির কপাল কুচকে যায়।সে ধাক্কা দিয়ে আরো কয়েকবার কায়াসাকে ডাকে কিন্তু কায়াসা চোখ খোলেনা।

” আরোহী কায়াসা উঠছেনা কেন?”

আরোহী এতক্ষণ চুপচাপ ইতির পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল।সেও কায়াসার না উঠা দেখে অবাক।

” আমি জানিনারে ইতু।আমি তো যখন ওকে রেখে গিয়েছিলাম তখন তো ও ঠিকই ছিল।”

” তাহলে কি ওকে ভুতে এরকম করে দিয়েছে?” বিরক্তি নিয়ে বলে ইতি।প্রথমে ফোন আর এখন কায়াসার অবস্থা দেখে ইতির চিন্তা হতে থাকে কায়াসাকে নিয়ে।এরিই মধ্যে আবারো ইতির ফোন বেজে উঠে।ইতি দেখে আবারো সেই নম্বর থেকে ফোন এসেছে।এবার ইতি তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে নেয় তবে এবার সে কিছু না বলে অপরপাশের মানুষটাকে বলার সুযোগ করে দেয়।

” কায়াসা নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখন থেকে বেরিয়ে যাও।এই জায়গাটা কায়াসার জন্য মোটেও সেফ না সেইসাথে তোমার জন্যও।তোমরা দুজনেই তাড়াতাড়ি এখান থেকে বেরিয়ে যাও।পারলে তোমার ওই বান্ধবীকেও বলো এই ফালতু পার্টি শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যেতে।আর বাড়িতে গিয়ে কোন পরিচিত ডাক্তারকে ফোন করে ডাকবে।কায়াসাকে ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন।যেরকম বলছি সেরকমটা তাড়াতাড়ি করো নয়তো ভালো হবেনা।”

ইতির আর কোন কথা না বলে আরোহীকে বলে কায়াসাকে একপাশে ধরতে।ইতি আর আরোহী মিলে কায়াসাকে ইতির গাড়িতে তোলে।গাড়ি ছাড়ার আগে ইতি আরোহীকে তার জন্য এশানের বলা কথাগুলো বলে।কিন্তু মনে হয়না এতে আরোহীর মধ্যে কোন প্রভাব পড়েছে।

ফ্ল্যাশবেক এন্ড…….

” কিন্তু তুই বেহুশ হলি কি করে?কি হয়েছে?”

” আমি জানিনারে।আমি তো ভালোই ছিলাম কিন্তু হঠাৎ করেই অস্তিত্ব লাগতে শুরু করলো।তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করলাম।শরীরটা খারাপ লাগছিল তাই আরোহী একটা রুমে নিয়ে গেলে।আমি শুয়ে পড়েছিলাম এরপর আর কিছু মনে নেই।”

” তুই কি কিছু খেয়েছিলিস?”

” না তো।”

” ঠিক মতো মনে কর।তা না হলে হুট করে তো এরকম হওয়ার কথা নয়।কোন খাবার না হলেও পানি,জুস বা কোলড্রিংক খেয়েছিলিস?”

” আরে ওই রাতুল……..এ মিনিট তুই তখন কি যেন বলেছিস?ওই লোকটা তোকে ফোনে কি বলেছিলো?এটাও বলেছিল না ‘তাড়াতাড়ি ওর কাছে যাও নয়তো আবারো বাজে কিছু হয়ে যেতে পারে।’এটাই বলেছিল তো?”

” হুম।”

কায়াসার চোখ বন্ধ করে আবারো চিন্তা করতে থাকে এবার আস্তে আস্তে কিছুটা হলে মনে পড়ছে তার সাথে কি হয়েছিল।সব ভেবেচিন্তে কায়াসা বুঝে যায় রাতুলই এসব করেছে।এটা ভাবতে একদিকে কায়াসার যেমন রাগ হচ্ছে তেমনি গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে এটা ভেবে যে কাল রাতে সে কত বড় একটা বাজে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল।

” কিরে কি ভাবছিস?বললিনাতো রাতুলটা কে?”

” আরোহীর বয়ফ্রেন্ড।” খুবই গম্ভীরভাবে বলে কায়াসা।

” কি!আরুর বয়ফ্রেন্ড?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে ইতি।কারণ সেও বিশ্বাস করতে পারছেনা।

” হুম।”

” কিন্তু কিভাবে কি?ও তো আমাদের আগে বলেলি।”

কায়াসা আরোহীকে রাতুল আর আরোহীর বেপারে সব বলতে থাকে শুধু রাতুলের কথা জঘন্য কাজটা বাদে।

” তার মানে আরোহী আমাদের কাছে ওর বয়ফ্রেন্ড সম্পর্কে লুকিয়েছিল।কিন্তু কেন?আমাদের বললে কি হতো?”

” জানিনা কেন লুকিয়েছিল।”

” তোর কথা শুনে আমি যা বুঝতে পেরেছি রাতুল ছেলেটা মোটেও সুবিধার না।আচ্ছা আবার এটা নয়তো যে রাতুলই তোকে কিছু খেতে দিয়েছে আর তার সাথে বাজে কি করার চেষ্টা করেছে?”

ইতির কথা শুনে কায়াসা কিছু না বলে মাথা নিচু করে থাকে।

” কি হলো কিছু বলছিস না কেন?তারমানে আমি যেটা সন্দেহ করছি সেটাই কি ঠিক?রাতুলই……? ”

” আমি জানিনা তবে আমারও তাই মনে হচ্ছে।” একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে কায়াসা।

” ওই রাতুলকে তো আমি ছাড়বোনা আর আরোহীকে তো মোটেও না।আমি এখুনি আরোহীকে ফোন করে এসব জানাচ্ছি।”

” ইতি থাম থাম,শান্ত হয়।কি করছিস তুই?এভাবে হুট করে কোন কিছু করা ঠিক নয়।তুই আরোহীকে এখন এসব বললে ও মোটেও বিশ্বাস করবেনা উল্টো আমাদের অবিশ্বাস করবে।তাড়াহুড়ো করে কোনকিছু করা মোটেও ঠিক হবেনা।”

” তাই বলেকি এসব কিছু জেনে এভাবে চুপ করে থাকবো?”

” আমরা জানাবো তবে এখন নয় সময় হলে প্রমাণসহ জানাবো।”

ইতি চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ দমানোর চেষ্টা করে এরপর কায়াসার হাত ধরে বলে,

” আমাকে ক্ষমা করে দিস কায়ু।আজ আমার জন্য তোকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হলো।আমি যদি তোকে জোর না করতাম পার্টিতে যাওয়ার জন্য তাহলে তুই রাজি হতিনা আর না যেতে।আর আমার যদি পার্টিতে যেতে দেরি না হয় তাহলে আমি তোর সাথে থাকতে পারতাম আর তোর এই পরিস্থিতিতে পড়তে হতোনা।আমাকে ক্ষমা করে দে কায়ু,আমি বুঝতে পারিনি এরকম কিছু হবে।আজ আমার ভুলের জন্য তোর……” ইতি আর কিছু বলতে পারে।সে অজোরে কান্না করছে।সে ভাবতেও পারছেনা তারজন্য আজ তার বেস্টফ্রেন্ড এতো বড় একটা জঘন্য পরিস্থিতিতে পড়েছিল।কায়াসা ইতিকে জরিয়ে ধরে তাকে শান্ত করা চেষ্টা করে।অনেক্ষন কান্না করার পর ইতি কান্না বন্ধ করে।

” এই বোকা মেয়ে এভাবে কান্না করছিস কেন?তুই কি ছোট বাচ্চা নাকি?আর যা হয়েছে তাতে তোর কোন দোষ নেই।ভাগ্য না ছিল তাই হয়েছে।এটাকে আমরা পাল্টাতে পারবোনা।এখন এসব ভুলে যায়।আমি এরজন্য তোকে না দোষ দিয়েছি আর না দেবো।তাই এতো গিলটি ফিল করার কিছু নেই।”

ইতি কায়াসাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে।কায়াসাও হাসি মুখে ইতিকে জরিয়ে ধরে কিন্তু তার মাথায় অন্যকিছু চলছে।

চলবে………

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

টেবিলে বসে সকালের নাস্তা করছে কায়াসা আর ইতি।হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই ইতি কায়াসার দিকে ঘুরে বসে।

” আচ্ছা কায়ু আমাকে একটা কথা বলতো।”

” কি?”

” ওই লোকটা কে ছিল যে আমাকে ফোন করেছিল?কথা শুনে তো মনে হলো লোকটা তোকে চেনে।তোর সবকাজ সম্পর্কে তার জানা।”

ইতির কথা শুনে কায়াসার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।সে নিচের দিকে তাকিয়ে মুখের খাবারটা আস্তে আস্তে নাড়তে থাকে।

” কি হলো কিছু বলছিসনা কেন?”

” কি বলবো?আমার জানা থাকলেই না তোকে কিছু বলবো।যখন আমিই কিছু জানিনা তখন তোকে কি করে বলবো?”

” কিছু জানিস না মানে?তুই যদি কিছু না জানতিস তাহলে তোর পক্ষে এতোটা নরমাল থাকা সম্ভব ছিলনা।তুই ওই লোকটা ব্যপারে আগে থেকেই জানিস।সত্যি করে বলতো ঘটনা কি?”

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কায়াসা আস্তে আস্তে ইতিকে সব বলে এতোদিন তার সাথে কি কি হয়েছিল।সব শুনে ইতি খুব বেশি ভয় না পেলেও সে অবাক হয়।

” কি বলছিস তুই এসব?লোকটা মানুষও খুন করেছে?”

” হুম।আর কয়েকমাস আগে যে ইফাদ ভাইয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছিল আর আমি রক্ত দিয়েছিলাম মনে আছে?”

” হুম।”

” ওই এক্সিডেন্টের পেছনেও উনার হাত ছিল।”

” কিন্তু কেন?এখানে ইফু ভাইয়া আবার কি করলো?”

” ওনার দোষ ছিল আমি ওনার সাথে কলেজে গিয়েছিলাম।”

” কি?এতটুকু একটা কারণে?”

” শুধু এটাই নয় মিস্টার আদ্রিক আমাকে বাড়ি ড্রপ করে দিয়েছিল বিধায় উনি ওনারও এক্সিডেন্টে করিয়েছিলেন।”

” হুম বুঝলাম।”

” কি?”

” এইযে লোকটা তোর প্রতি খুবই পজেসিভ।কিন্তু যতই উনি তোকে ভালোবাসুক কিন্তু ওনার কাজটা মোটেও ঠিক নয়।এটাকে ভালোবাসা না সাইকোগিরি বলে।হ্যাঁ এটা ঠিক ওই ছেলেগুলো মেরে উনি ঠিক করেছেন কারণ আইন প্রমাণের কারণে ওদের ধরতে ব্যর্থ হয়েছে।কিন্তু ইফু ভাইয়া আর আদ্রিক স্যারের সাথে উনি যেটা করেছেন ওটা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়।”

” হুম জানি আমি সেটা কিন্তু কি করবো তাই তো বুঝতে পারছিনা।আমি কি করি না করি সব কেমন করে যেন উনি জানতে পেরে যায়।”

” হয়তো উনি তোর উপর নজর রেখে চলেছেন?”

” কি বলছিস এসব তুই?”

” আমি সিউর না তবে হতেও পারে।”

ইতির কথা শুনে কায়াসার মনে ভয় আরো বেড়ে যায়।

” আচ্ছা তোর কি মনে হয়?কেউ তোকে ফোলো করে?”

” না।আমার তো সেরকম কিছু কোনদিনও মনে হয়নি।”

” আচ্ছা ঠিক আছে।এতো চিন্তা করিস না।আমি আছি তো।এখন থেকে কোন সমস্যা হলে আমাকে বলিস।”

” হুম।”

” আর শোন আরোহীর সাথে যথাসম্ভব কম কথা বলবি।ওর জেদের কারণে আর ওর ক্যারেক্টরলেস বয়ফ্রেন্ডের জন্য তোর এই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল।”

” কিন্তু এতো ওর কি দোষ বল?ও কি আর জানতো ওর বয়ফ্রেন্ড এরকম।”

” হ্যাঁ তুমি তো মহান মানবী।এতো বড় বিপদেরমুখে পড়েও তোমার শিক্ষা হয়নি।বেশি কথা না বলে আমি যা বলছি তা কর।আমি রাতুলের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোরগার করার চেষ্টা করবো।”

” কেন শুধু শুধু এসব ঝামেলায়…….. ”

” এগুলো শুধু শুধু কোন ঝামেলা না।ওর মতো জানোয়ারকে এভাবে খোলা ছেড়ে দিলে না জানি আরো কত মেয়ের জীবন নষ্ট করবে।ওকে তো শিক্ষা দিতেই হবে।আর সেটা আমি যেকোনভাবে দিয়েই ছাড়বো।এখন তোকে যেটা বলেছি সেটা কর।আমি আসছি এখন।দরজা ভালো করে লাগিয়ে রাখবি,না জেনে হুট করে দরজা খুলবিনা আর টিউশনে সাবধানে যাবি।দরকার পরলে রিক্সা নিয়ে আসা যাওয়া করবি।”

কায়াসা মুখ দিয়ে কিছু না বলে বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়িয়ে ইতির কথায় সায় দেয়।

” এখন দরজা বন্ধ করে যা।”

ইতির পেছন পেছন কায়াসা দরজার কাছে আসে।ইতি বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে কায়াসাকে দরজা বন্ধ করাই আর যাওয়ার আগে নিজেও একবার চেক করে নেয় যে কায়াসা ঠিক মতো দরজা বন্ধ করেছে কিনা।

বিকেল বেলা একটু বিশ্রাম নিচ্ছে কায়াসা।কিন্তু ফোনের আওয়াজে তার ঘুম ভেঙে যায়।সে ঘুম জারানো চোখে ফোন রিসিভ করে।

” হ্যালো।” ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে কায়াসা।

” কায়ু।আমি আরোহী বলছি।”

” হুম বল।”

” কোথায় তুই?”

” বাসায়।ঘুমাচ্ছি।”

” কায়ু তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”

” বল।”

” তুই এখন ঘুমের ঘোরে আছিস।বললেও কিছু বুঝবিনা,তাই উঠে নরমাল হয়ে বস।”

সব আলসেমি ছেড়ে কায়াসা উঠে বসে।

” বল কি বলবি?”

” কেমন আছিস তুই এখন?”

” ভালো।এটা জানার জন্য ফোন দিয়েছিস?”

” না।শোন না কাল রাত থেকে রাতুলের কোন খোঁজ পাচ্ছিনা।ওকে সকাল থেকে কত বার ফোন দিয়েছি কিন্তু ও ফোন রিসিভ করছে না আর এখন তো ফোনই বন্ধ।এখন আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।”

রাতুলের কথা শুনে আরোহীর প্রতি কায়াসার একধরনের বিরক্তির সৃষ্টি হয়।

” তুই রাতুল নামের ছেলেটাকে খুব ভালোবাসিস না?”

” হুম।নিজের থেকেও বেশি।”

” নিজের থেকেও বেশি কাউকে কখনোই ভালোবাসা যায় না।যদিও যায় তবে ভাগ্য গুণে হাজারে একটা।কারণ জীবন কারো জন্য থেকে থাকেনা।”

” মানে?” কায়াসার কথার মানে বুঝতে না পেরে আরোহী প্রশ্ন করে।

কিন্তু কায়াসা আরোহীর কথায় গুরুত্ব না দিয়ে বলে,” খুব বিশ্বাস করিস না ওকে?”

” হুম।”

” আচ্ছা যদি কখনো জানতে পারিস ও তোর বিশ্বাস ভেঙেছে,ও তোকে যা দেখায় আসলে ও সেটা নয় তাহলে?”

” কিসব বলছিস তুই?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।”

” কিছুনা।সময় হলে বলবো কোনদিন।চিন্তা করিস না,হয়তো ও কোন সমস্যায় আছে বা কাজে ব্যস্ত আছে তাই ফোনটা বন্ধ করেছে বা হয়তো চার্জ নেই।এতো ভাবিস না,নিজের খেয়াল রাখিস।”

আরোহীকে আর কোন কথা বলতে না দিয়ে কায়াসা ফোনটা দেখে দেয়।কায়াসারও এখন আরোহীর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা।তার মস্তিষ্কে ইতির কথার কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে।তার মন আরোহীর এতে কোন দোষ নেই এটা বললেও তার মস্তিষ্কের একটা ক্ষুদ্র অংশ বলছে আরোহীরও এতো দোষ আছে।ওর দোষের কারণে সে তার সম্মান,সতীত্ব সব হারাতে বসেছিল।

টিউশনে এসে কায়াসা।সে স্টুডেন্টকে পড়াচ্ছে।স্টুডেন্ট অনিকার মা একটু উপরের ফ্ল্যাটে গিয়ে।তখন দরজা খুলে কেউ ঘরে প্রবেশ করে।কায়াসা মনে করে অনিকার মা এসে তাই সে নিজের মতো অনিকার দেখা খাতা কাটতে থাকে।কিন্তু কিছুক্ষণ পর কায়াসার মনে হতে থাকে কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে।কায়াসা ঘাড়টা পাশ করে দেখে ইমন তার পেছনে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।ইমনকে দেখে কায়াসা অন্যপাশে মুখ করে চোখ বন্ধ করে নেয় তারপর চোখ খুলে আবারো অনিকার খাতা কাটায় মনোযোগ দেয়।ইমন কিছুট দূরে থাকা সোফায় একদম কায়াসার সামনাসামনি বসে।

” কি খবর টিচার ম্যাডাম?”

” মার খেয়েও শিক্ষা হয়নি।বেয়াদব ছেলে।” বিরবির করে বলে কায়াসা।”

” কি ম্যাডাম?কি বিরবির করছেন?”

” কিছুনা।আপনার হাত কেমন আছে?”

” ওটাতো একদম ফাটাফাটি আছে।”

তখনি দরজা খুলে আবারো ঘরে কেউ প্রবেশ করে।কায়াসা পেছন ফিরে দেখে অনিকার মা এসেছে।

” ও বাবা তুই এসে পড়েছিস দেখি।বাহ্ বেশ ভালো হলো তাহলে।”

” আচ্ছা অনিকা আমি আজ আসছি।যা পড়া দিয়েছি তা পড়ে রেখো।আমি কাল এই সময়ে আসবো।”

” চলে যাচ্ছো নাকি নিশাত?”

” হ্যাঁ আন্টি,আজকের মতো অনেক পড়া হয়েছে।বেশি পড়ালে ও কাভার করতে পারবেনা।”

” হুম তা যা বলেছে।”

” আচ্ছা আন্টি আমি তাহলে আজ আসি।”

” চলুন তাহলে টিচার ম্যাডাম,আমি আপনাকে ছেড়ে দিয়ে আসছি।”

” হ্যাঁ সেটাও ভালো হবে।সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে,তার উপর তুমি মেয়ে মানুষ।”

” না আন্টি ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই।এটা আমার প্রতিদিনের কাজ।আমি চলে যেতে পারবো।ভালো থাকবেন,আল্লাহ হাফেজ।”

কায়াসা একবার ইমনের দিকে বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে।

চলবে…….