সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব-৩২ এবং শেষ পর্ব

0
619

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ৩২(অন্তিম পর্ব)
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” আমার মায়ের সন্দেহ হতে থাকে যে তোমার আম্মুর মৃত্যু ন্যাচেরাল না।তাই আম্মু নিজে নিজে খোঁজখবর নিতে শুরু করে কিন্তু এর কিছুই আমি তখনো আমি জানতাম না।আমি তখন ইন্টার্নি করছিলাম,প্রায় শেষের পথে ছিল।তখন আমার মা খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে।তখন মা আমাকে তোমার মায়ের সম্পর্কে বলে আর খোঁজ নিতে বলে আসলেই কি নবনী আন্টির মৃত্যু ন্যাচারাল ছিল কিনা।এর কয়েকমাস পরেই মা মারা যায়।মা মারা যাওয়ার পর আমি অনেক ভেঙে পড়েছিলাম।কিছুদিন পর নিজেকে শক্ত করি,পড়াশোনা শেষ করি তারপর তোমার আম্মু মানে নবনী আন্টির মৃত্যুর ব্যপারে খোঁজ করা শুরু করি।”

কায়াসা মাঝখানে বলে,” আমার আম্মু মৃত্যু কি করে হয়েছিল আদ্রিক?” খুবই শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে কায়াসা।

আদ্রিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে কায়াসার দিকে তাকাই।

” বললে বিশ্বাস করবে তো?”

” বলুন।”

” তোমার আম্মু মৃত্যুর কারণ তোমার আব্বু মিস্টার আকাশ মির্জা।”

আদ্রিকের কথা শুনে কায়াসা কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।

” আপনি আমাকে মিথ্যা কথা বলছেন তাইনা?” এবারো শান্তভাবে জিজ্ঞেস করে কায়াসা।

” জানতাম তুমি বিশ্বাস করবেনা তবে এটাই সত্যি।তোমার আব্বুই সেই ব্যক্তি যার সাথে আমার মায়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিল।তবে তোমার আম্মু আব্বু পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়েছিল।তখনো তোমার আব্বু জানতোনা তোমার আম্মুই ওনার হবুবউকে পালাতে সাহায্য করেছিল কিন্তু তোমার আম্মু সবই জানতো।তবে তিনি কাউকে এই বিষয়ে কিছু বলেনি।একদিন কোনভাবে তোমার আব্বু জেনে যায় সত্যিটা আর সেদিন উনি তোমার মাকে প্রচুর মারে।তবে এটা নয় যে উনি এই প্রথম নবনী আন্টিকে মেরেছে।এর আগেও বহুবার উনি নবনী আন্টিকে মেরেছিলেন।এরপর থেকে নবনী আন্টির উপর অত্যাচার বেড়ে যায়।এরই মধ্যে তুমি পৃথিবীতে আসো।তোমার আসাতে তোমার আব্বু কিছুটা শান্ত হয় তবে ওনার অত্যাচার কমেনি।একদিন তোমার আম্মু তোমার আব্বু আরো কিছু কালো সত্যি জানতে পারে।”

আদ্রিক আবারো থামে।কথা বলতে বলতে তার গলায় শুকিয়ে গিয়েছে।আদ্রিক পানি খেতে খেতে একবার কায়াসাকে পড়ক করে নেয়।সে একদম পাথড়ের মতো শক্ত হয়ে গিয়েছে।

” আম্মু কি জানতে পেরেছিল?”

” নবনী আন্টি জানতে পেরেছিল তোমার আব্বু নিষিদ্ধ পল্লিতে যাওয়া আসা ছিল।জুয়ার নেশা ছিল ওনার।সেইসাথে উনি নারী পাচারেও যুক্ত ছিলেন।এসব জানতে পেরে নবনী আন্টি খুবই ভেঙে পড়ে আর সেদিন আমার মাকে ফোন করে।”

” তারপর?”

” তোমার আম্মু আমার মায়ের সাথে কথা বলেছে এটা জানতে পেরে সেদিন তোমার আব্বু নবনী আন্টিকে খুব মারে।নবনী আন্টি এই মারের জন্য পুরো ১ দিন অজ্ঞান ছিল।তখন তোমার ফুফু নবনী আন্টির সেবা করতো।”

” আপনি কি করে জানলেন এসব?আপনার তো এসব জানার কথা নয়।”

” হুম জানতে পারতাম না যদি না নবনী আন্টির ডাইরিটা না পেতাম।তুমি হয়তো খেয়াল করোনি কিন্তু যে আলমারিকে এই ডেথ ফাইলটা ছিল ওখানেই আন্টির ডাইরিটা ছিল।”

” কিন্তু আম্মু তো মারা গিয়েছে।তাহলে আপনি জানলেন কি করে যে আমার আম্মুর মৃত্যুর কারণ আমার আব্বু?এটা তো ডাইরিতে থাকার কথা নয়।”

” হুম এটা আমি আন্টির ডাইরিতে থেকে নয় বরং তোমার নানু থেকে জানতে পেরেছি।”

” নানু!”

” হুম সেদিন তোমার নানু তোমাদের বাড়িতে এসেছিল আর তিনি এসে দেখেন যে তোমার আম্মুর লাশটা তোমার আব্বু টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।তোমার নানুকে দেখে তোমার আব্বু ভয় পেয়ে যায় কিন্তু উনি তোমার নানুকে ভয় দেখায় যদি কাউকে বলে দেয় তো তোমাকেও মেরে ফেলবে।তোমার নানুও তোমার কথা ভেবে চুপ করেছিল।কিন্তু তোমার আব্বু রিক্স নিতে চাইনি তাই তোমার নানুরও এক্সিডেন্ট করিয়ে দেয় যার কারণে উনি কোমায় চলে যায়।”

” নানু কোমায় থাকলে আপনি কি করে জানলেন?”

” কারণ তোমার নানু এখন সুস্থ আর আমার কাছে আছে।যাবে তুমি?”

একটা বৃদ্ধাশ্রমের সামনে এসে গাড়ি থামায় কায়াসা।আদ্রিকের চোখের ইশারায় কায়াসাকে নামতে বলে।

কায়াসার হাত ধরে আদ্রিক তাকে একটা রুমে নিয়ে আসে।

” সুন্দরী বুড়ি।”

” আরে জামাই তুমি এসেছো।জানো আমার তোমার কথা খুব মনে পড়ছিল।কতদিন আমার জামাইটারে দেখিনা আমি।” মজা করে বলে কায়াসার নানু।

” আমারো তোমার কথা মনে পড়ছিল।দেখো আজ আমি তোমার সাথে কাকে দেখা করাতে নিয়ে এসেছি।”

” এটা কে গো জামাই?তোমার প্রেমিকা নাকি?”

” না গো এটা আমার বউ আর তোমার নাতনি কায়াসা।”

নিজের নাতনিকে এতো বছর পর দেখে কায়াসার নানু তাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে।কায়াসাও ওনাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দেয়।

” কেমন আছিস নাতনি?কত বছর পর তোকে দেখলাম।আমার কথা কি তোর কোনদিনও মনে পড়েনি।”

” কিভাবে মনে পড়তো বলো?আমি যে তোমাদের কারো সম্পর্কে জানতাম না।ছোট থেকে তো শুধু আব্বু আর ফুফুর কাছেই বড় হয়েছি।”

” ওই জানোয়ারটা কি আবারো বিয়ে করেছে?”

” না আব্বু আর বিয়ে করেনি।কিন্তু নানু আদ্রিক এসব কি বলছে?আব্বু নাকি আম্মুকে?নানু তুমি বলো ওনার কথা সব মিথ্যা।”

” না গো নাতনি না।ও যা বলছে সব সত্যি।তোর আব্বুই আমার সোনার টুকরো মেয়েটাকে মেরেছে।আমাদের অনেক বড় ভুল হয়ে গিয়েছিল ওর সাথে আমাদের মেয়েটার বিয়ে দিয়ে।আমার মেয়েটা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো শুধু ওই জানোয়ারটার কারণে।এই আদ্রিক না থাকলে তো আমি আজও কোমায় থাকতাম।আমার মেয়েটা যখন আমার কাছে ফোন করে কান্না করে বলতো আম্মাগো আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও,আমি যে আর পারছিনা।তখন কষ্ট হলেও মেয়েটাকে বলতাম মুখ বুঝে সহ্য করে নে।মেয়েটাকে যদি তখনই নিয়ে আসতাম তাহলে আজ আমার মেয়েটা আমার কোলে থাকতো।” এটা বলতে বলতেই কায়াসার নানু কান্নায় ভেঙে পড়ে।কায়াসা কয়েক কদম পিছিয়ে দেয়ালের সাথে লেগে দাঁড়ায়।

পরেরদিন সকালে,

এখান বাজে সকাল ৮ টা।কায়াসা দাঁড়িয়ে আছে তার বাড়ির সামনে।এই বাড়িতে পা দিতেই এখন তার ঘেন্না লাগছে।কায়াসা বেল বাজায়,তখন মিতা নামের মেয়েটা দরজা খুলে দেয়।মিতা কায়াসাকে দেখে তার বাবা আর ফুফুকে ডাকে।মেয়েকে দেখে আকাশ মির্জা খুবই খুশি হয়।তিনি কায়াসাকে জরিয়ে ধরতে গেলে কায়াসা পিছিয়ে যায়।এতে আকাশ মির্জা অবাক হন।

” কি হলো আম্মু?আর তুই এতো সকালে এখানে?জামাই কোথায়?ওর সাথে ঝগড়া হয়েছে বুঝি?”

কায়াসা একবার তার আব্বু দিকে তাকাই।কি সুন্দর অভিনয় করতে পারেন উনি।

” কেন করছে তুমি এমন আব্বু?”

” কি করেছি আমি?”

” কেন তুমি আমাকে মায়ের ভালোবাসা থেকে বন্ঞিত করলে?কেন আমার আম্মুকে মেরে ফেললে তুমি?”

” এসব তুই কি বলছিস নিশাত?”

” বলো কেন করছে এরকম?”

” এরকম কিছু হয়নি।তোর কোথাও ভুল হচ্ছে,আমি তোর আম্মুকে খুব ভালোবাসতাম তাহলে কেন আমি ওকে মারবো।”

এরই মধ্যে কেউ আকাশ মির্জার গালে চড় মারে আর চড়টাতে মেরেছে কায়াসা নানু ফাতেমা বেগম।ফাতেমা বেগমকে এখানে দেখে ঘাবড়ে যায় আকাশ মির্জা।

” কি শশুড়মশাই,নিজের শাশুড়ী মাকে দেখে এতোটা ঘাবড়ে গেলেন কেন?”

” তুমি?তার মানে তুমিই সব…..”

” একদম ঠিক শশুড় মশাই।আমি ওনাকে সুস্থ করে তুলেছি আর আমিই কায়াসাকে সত্যিটা বলেছি।”

” তুমি এমন কেন করলে আব্বু বল।” চিৎকার করে বলে কায়াসা।

” বল কেন করেছিস তুই এমন?কেন আমার সোনার টুকরো মেয়েটাকে মেরে ফেলেছিস?”

” হ্যাঁ আমিই মেরেছি নবনীকে,আমিই ওকে ইচ্ছে করে মেরেছি।খুব বাড় বেড়ে গিয়েছিল,আমার কথা অমান্য করার ফল হচ্ছে মৃত্যু।”

” কেন মেরেছো তুমি আম্মু?কি ক্ষতি করেছিল আম্মু?”

” ওকে আমি শতবার বারণ করেছি ইশিতার(আদ্রিকের মা) সাথে যেন কথা না বলতে কিন্তু ওতো আমার বারণ উপেক্ষা করে ইশিতার সাথে কথা বললো তার জন্যই ওরে মেরেছিলাম সেইদিন।আর তা ছাড়াও ও আমার কাজে নাক গলাতো,আমাকে নেশা করতে মানা করতো তাই ওকে এর পরের দিনও মেরেছি।কিন্তু যখনই কিছুটা সুস্থ হয় তখন আমাকে হুমকি দেয় আমি যদি এসব কাজ বন্ধ না করি ও সবাইকে বলে দেবে তাইতো আমি ওকে সেদিন সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়।শরীর দুর্বল থাকায় ও আমাকে বাঁধাও দিতে পারেনি।কিন্তু লাশ সরানোর আগেই এই বুড়ি সেখানে চলে আসে তাই ওকেও সরিয়ে দিয় কিন্তু একটুর জন্য বেঁচে যায়।আমি এতো বছর সত্যিটা গোপন করে এসেছি কিন্তু এই আদ্রিক এসে সব শেষ করে দিলো।”

” এখনো তো আরো সত্যি সামনে আসার বাকি আছে।কায়াসা তোমার আব্বু আগে যেমন ছিল এখন তার থেকেও হাজারগুণ খারাপ।উনি এখনো নারী পাচারের সাথে যুক্ত।তোমার সাথে যার বিয়ে কথা ছিল উনি তাদের থেকে নয় বরং উনাদের থেকে তোমার আব্বু টাকা নিয়েছে তাও ২ কোটি।উনি তোমাকে ওদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছিল।”

এটা জানার পর কায়াসা সহ বাকি সবাইও প্রচুর অবাক।এরমধ্যে আবারো আকাশ মির্জার গালে চড় পড়ে।এবার থাপ্পড় দিয়ে কায়াসার ফুফু।ছোটবোনর হাতে চড় খেয়ে আকাশ মির্জা ওনার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাই কিন্তু উনি সেটা উপেক্ষা করেন।

” ছিহ ভাইজান ছিহ।তুমি এতোটা নিচে নেমে গিয়েছো আমি জানতামই না।ভাবীর কথা নয় বাদ দিলাম কিন্তু তুমি এই ফুলের মতো মিষ্টি মেয়েটাকে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলে।তাও মাত্র ২ কোটি টাকার বিনিময়ে আর তুমি এতে আমাকেও মিথ্যা বলে যুক্ত করেছো।ছিহ ভাইজান ছিহ,তোমাকে নিজের বড় ভাই ভাবতেও আমার ঘেন্না লাগছে।”

কায়াসা এবার আকাশ মির্জার সামনে এসে দাঁড়ায়।

” তুমি আমার আব্বু,আমার জন্মদাতা,তোমাকে নিজের আর্দশ ভাবতাম আমি।এখান আমার তোমাকে নিজের বাবার পরিচয় দিতেও ঘেন্না লাগছে।আদ্রিক পুলিশকে ভেতরে এসে ওনাকে নিয়ে যেতে বলুন আর চেষ্টা করবেন যে ওনার কঠিন থেকেও কঠিন শাস্তি হয়।”

কায়াসার বাবাকে পুলিশ নিয়ে যায়।কায়াসা এতোক্ষণ নিজেকে শক্ত রাখলেই এবার সে কান্না করে দে।চিৎকার করে কান্না করতে থাকে কায়াসা।এতোবড় সত্যিগুলো সে মানতে পারছেনা।

২ দিন পর,

কায়াসা পরেরদিনই ঢাকায় বেক করে আদ্রিকের সাথে।এই দুদিন না কায়াসা কলেজ গিয়েছে,না আদ্রিকের সাথে ঠিক মতো কথা বলছে পুরোই একটা জীবন্ত রোবট হয়ে গিয়েছে সে।আদ্রিক ঠিক করেছে আজ সে কায়াসার সাথে মুখোমুখি কথা বলো।কায়াসা রুমে এসে আদ্রিক তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

” আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে।”

” আমারো আপনাকে কিছু বলার আছে।”

” আচ্ছা বলো।”

” আমার ডির্ভোস চাই।”

কায়াসার কথা শুনে আদ্রিকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।

” এসব তুমি কি বলছো কায়াসা?”

” আমি ঠিকই বলছি।আমি কোন সাইকো খুনির সাথে থাকতে পারবোনা।আপনি হয়তো ভেবেছিলেন আমি এই বিষয়টা ভুলে যাবো।কিন্তু না আমি কিছুই ভুলি।আমি অনেক ভেবে চিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

” দেখো কায়াসা আমি যাদের মেরেছি ওরা মোটেও ভালো লোক হয়।ওরা সবাই নানা খারাপ কাজের সাথে জড়িত ছিল।পুলিশও ওদের কিছু করতে পারছিল কারণ তাদের কাছে প্রমাণ ছিলনা।আমি যদি তাদের না মারতাম তাহলে তারা আরো অনেকের জীবন নষ্ট করতো।”

” ঠিক আছে তাদেরটা না হয় মেনে নিলাম কিন্তু ইভান ভাই?ওনার কি দোষ ছিল?আপনি ওনার এক্সিডেন্ট কেন করালেন?এক্সিডেন্টে যদি ওনার কিছু হয়ে যেতো তখন?”

” ওটাতো আমি রাগের মাথায়…..”

” আচ্ছা রাগের মাথায়।ও আই সি।” টোন মেরে কথাটা বলে কায়াসা। “তাহলে আপনি নিজের এক্সিডেন্টটাও বুঝি রাগের মাথায় করেছেন?”

” আসলে ওটা আমি করেছিলাম যাতে তুমি আমাকে সন্দেহ না করো।”

” আপনি কেন সুতো নামের আলাদা একটা মানুষের পরিচয় তৈরি করলেন?কি প্রয়োজন ছিল এটার?কেন আদ্রিক হয়েই আমার সামনে এলেন না?”

” আমি আমার আসল পরিচয়ে কিছুই করতে পারতাম না।এতে তোমার আর দু’জনেরই ক্ষতি হতো।তাই আমি সুতো মানে এশানকে তৈরি করেছি।যাতে আমাকে কেউ ধরতে না পারে,আমি আমার সব কাজ ঠিকভাবে করতে পারি আর তোমাকেও রক্ষা করতে পারি।”

” সে যাই হবে হোক আমার আপনার থেকে ডির্ভোস চাই,এটাই ফাইনাল।”

কায়াসা চলে যায় আর আদ্রিক অসহায় দৃষ্টিতে তার যাওয়ারপানে তাকিয়ে থাকে।
.
.
.

৭ বছর পর,

ওটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা লোক এবং তার পরিবার।কিছুক্ষণ পর একটা বাচ্চার কান্না শব্দ শোনা যায়।বাচ্চার কান্না শব্দ শুনে সবাই খুব খুশি হয়।কিছুটা সময় পর একজন নার্স এসে বাচ্চাটাকে লোকটা কোলে তুলে দেয়।

অপারেশন শেষে নিজের কেবিনে বসে আছে কায়াসা।কায়াসা এখন একজন ডাক্তার।তখন সেখানে আদ্রিক আসে।বলে রাখা ভালো তারা দুজন কিন্তু একই হসপিটালে চাকরি করে।আদ্রিক কায়াসার সামনের চেয়ারটাতে বসে।

” অপারেশন কেমন হলো?”

” সাকসেসফুল।যখন আমি বাচ্চা মেয়েটাকে যখন হাতে নিয় তখন মেয়েকে কি যে কিউট লাগছিল বলে বোঝাতে পারবোনা।”

” বাচ্চাটাকে পছন্দ হয়েছে বুঝি?”

” খুব।আদ্রিক চলোনা এবার আমরাও আমাদের বাচ্চার প্ল্যান করি।৭ বছর তো হলো এবার তো বাচ্চা নেওয়া যায়।”

” মাত্র ২ বছর হয়েছে ডাক্তার হয়েছো আরো কিছুদিন পর নেবো।”

আদ্রিকের কথা শুনে কায়াসার মন খারাপ হয়ে যায়।এতোদিন পড়াশোনা অজুহাত দিয়ে আদ্রিক বাচ্চা নেয় নিই আর এখন চাকরির।কায়াসার মন খারাপটা আদ্রিক বুঝতে পারে।আদ্রিক উঠে এসে কায়াসাকে জরিয়ে ধরে।

” মন খারাপ করোনা সুঁই।এইতো আর কয়েকটা মাস তারপর আমারও বাচ্চার প্ল্যান করবো।”

কায়াসা কিছু না বলে আদ্রিকে জরিয়ে ধরে।সেদিন কায়াসা ডির্ভোস চাইলেও আদ্রিক তাকে অনেক বোঝায়।যার কারণে কায়াসা তাকে ডির্ভোস দেয়না।প্রথম প্রথম আদ্রিকের থেকে দূরত্ব বজায় রাখলেও আস্তে আস্তে তাদের সম্পর্কও স্বাভাবিক হয়ে যায়।

মধ্যরাত,

কায়াসা ঘুমিয়ে গেলে আদ্রিক চুপিচুপি তার গোপন জায়গায় আসে।

” হ্যালো ডক্টর শিমুল,আমাকে দেখে বুঝি অবাক হচ্ছেন?”

” ডক্টর আদ্রিক আপনি?আপনি আমাকে কেন বেঁধে রেখেছেন?ছাড়ুন আমাকে।”

আদ্রিক চোখ মুখ শক্ত করে বলে,” তুই কি ভেবেছিলিস আমার কায়ুপাখির সাথে তুই বাজে ব্যবহার করবি,তাতে নোংরা ভাবে টাচ করবি আর আমি কিছু জানতে পারবোনা।এটা তোন ভুল ধারণা।ও আমার জান,ও কি করে,কার সাথে কথা বলে,কে ওকে কি বলেছে সব আমি জানি সেখানে তুই কি করে ভাবলি তোর এই জঘন্য কাজ আমার চোখে পড়বেনা।এতোদিন তুই অনেক নার্স,ডাক্তার এমনকি পেসেন্টদের সাথেও মিস বিহেব করেছিস।এতোদিন চুপ ছিলাম কিন্তু তুই আমার কায়ুপাখির সাথে এধরনের ব্যবহার করে খুব ভুল করেছিস।এরফল তো তো কে দিতেই হবে আর সেটাও খুব ভয়ানকভাবে।হাহাহাহা……..

_________________সমাপ্ত____________________

দীর্ঘসময় পর গল্পটা শেষ হলো।অনেকের মনে হয়তো একটা প্রশ্ন থাকতে পারে যে ” আদ্রিক এতো জনকে মারলো,৩/৪ জনকে তো সে খুনই করেছে তাহলে তার কেন কোন শাস্তি হলোনা?” তো এই প্রশ্নের উওর হচ্ছে “আদ্রিক যে তাদের মেরেছে বা খুন করেছে এর কিন্তু কোন প্রমাণ আদ্রিক রাখেনি।যাদের মেরেছে তারও কিন্তু আদ্রিকের চেহারা দেখেনি,তাই তারাও কিছু করতে বা বলতে পারবেনা।আর রইলো কায়াসার কথা,কায়াসা যদি পুলিশ কমপ্লেইন করতো তাহলে হয়তো আদ্রিককে পুলিশ ধরে নিয়ে যেতো,হয়তো এই কেইসটা আদালতেও যেতো কিন্তু তাতে আদ্রিকের কিছুই হতোনা।প্রমাণ বা সাক্ষী না থাকার কারণে ওনাদের বাধ্য হয়ে আদ্রিককে ছেড়ে দিতেই হতো।আর ছাড়া পেয়ে আদ্রিক কায়াসাকে কষ্ট দিতো।এরকম হলে গল্প অন্যদিকে চলে যেতো।তাই গল্পটা এরকমভাবে শেষ করেছি।।যারা প্রথম থেকে গল্পটা পড়েছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইলো।ভালো থাকবেন সবাই।