#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ২৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
পিটপিট করে চোখ খুলে কায়াসা।সে আসতে আসতে উঠে বসে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে বাইরে আলো ফুটেছে।ভ্রু-কুচকে কায়াসা রুমটা একবার দেখে।আরে এটা তো তার রুম না কিন্তু সে এই রুমটাকে চেনে।এটা আদ্রিকের বাড়ির গেস্ট রুম।কায়াসা তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে নিচে নেমে আসে।সে এদিক-ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে থাকে।কায়াসা বুঝতে পারছেনা সে তো তার বাসায় ছিল তাহলে ঢাকায় আদ্রিকের বাড়িতে কি করে এলো।
” আরে ম্যাডাম আপনি উঠে পড়েছেন?”
” সুমি,আমি এখানে কি করে?আর তোমার স্যার কোথায়?ওনাকে ডাকো।”
” আমি এখানে কায়াসা।”
কায়াসা পেছন ফিরে দেখে আদ্রিক উপরে দাঁড়িয়ে আছে।
” আদ্রিক স্যার আমি আপনার বাড়িতে কি করে এলাম?আমি তো চট্টগ্রাম ছিলাম।তাহলে ঢাকায় কি করে…..?”
” মাত্রই উঠেছো আগে ফ্রেশ হয়ে নাও।তারপর আমার রুমে এসো।বলছি তোমাকে সব।” আদ্রিক নিজের রুমে চলে যায়।কায়াসা দ্রুত পায়ে গেস্ট রুমে গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে নেয়।মুখ ধোঁয়ার সময় কায়াসা খেয়াল করে তার ডানহাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলটাতে নীল রঙের কালি লেগেছে আছে।তবে কায়াসা এই বিষয়টাকে এড়িয়ে গিয়ে আদ্রিকের রুমে চলে আসে।
” বলুন এবার।”
” বলছি তবে তার আগে তোমাকে একটা কথা বলবো,শোনার পর মোটেও চিল্লাপাল্লা করবেনা।”
” আচ্ছা বলুন।”
” তুমি এখন কাগজে কলমে আমার স্ত্রী।যদিও ধর্মীয় ভাবে আমাদের বিয়ে হয়নি কিন্তু তাও তুমি এখন আমার স্ত্রী।”
আদ্রিকের কথা শুনে কায়াসার নিজের বৃদ্ধ আঙ্গুলটার দিকে তাকাই।তারপর আঙ্গুলটা আদ্রিকের দিকে করে বলে,
” তারমানে এটা….?”
” হুম।যেহেতু তুমি অজ্ঞান ছিলে তাই টিপসই নেওয়া হয়েছে।”
” কিন্তু কিভাবে হলো এসব?” শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে কায়াসা।
” কাল……
ফ্ল্যাসবেক,
কলেজ ছুটি হয়ে যাওয়ার পর আদ্রিক নিজের কেবিনে বসে খাতা দেখছিল।তখন ইতি এসে উপস্থিত হয় সেখানে।
” আদ্রিক স্যার….” হাঁপাতে হাঁপাতে বলে ইতি।
” আরে ইতি তুই এই সময় এখানে?বাড়িতে যাওনি কেন?”
” স্যার অনেক বড় ঝামেলা হয়ে গিয়েছে।আমার এখন আপনি ছাড়া আর কারো কথা মনে পড়েনি।আমার মনে হয়েছে আপনিই কিছু করতে পারবেন।”
” কিন্তু কি হয়েছে?”
” স্যার কায়াসার আব্বু ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।”
” ও আচ্ছা।কিন্তু এতে আমি করতে পারি?”
” স্যার কায়াসা এই বিয়েটা করতে চাইনা।প্রথম কারণ সে তাদের কাউকে চেনেনা আর দ্বিতীয় বিয়ে হয়ে গেলে কায়াসা আর পড়াশোনা করতে পারবেনা আর না ওর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।প্লিজ স্যার আপনি কিছু একটা উপায় বলুন যাতে কায়াসার বিয়েটা ভাঙা যায়।”
আদ্রিক কিছুক্ষণ চুপ করে কিছু একটা চিন্তা করে।
” ইতি আমরা এখন ওর থেকে অনেক দূরে আর এতো দূরে থেকে কিছু করা সম্ভব নয়।কিছু করতে হলে আমাদের কায়াসার বাড়িতে গিয়ে তার বাবার সাথে কথা বলতে হবে।”
” হুম ঠিক বলেছেন স্যার।আচ্ছা স্যার আমি তাহলে এখুনি বের হচ্ছি।”
” দাঁড়াও ইতি আমিও তোমার সাথে যাবো।তুমি একা গিয়েছে কিছু করতে পারবে বলে মনে হয়না।”
” আপনি স্যার?আচ্ছা স্যার চলুন।”
ইতি আর আদ্রিক কলেজ থেকেই সোজা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
কায়াসার বাড়ি যেহেতু ইতি আগে থেকে চিনতো তাই তাদের বেশি অসুবিধা হয়নি।ইতি গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে।
” কায়াসা…..কায়াসা…..” চিৎকার করে বলে ইতি।
” আরে আরে কেডা আপনি?সাহেবের মাইয়ার নাম লইয়া চিল্লান ক্যান?বউয়ের নাম ধরে এমন কইরা কেউ চিল্লাই নাকি?”
” আগে এটা বলুন কায়াসা কোথায়?”
” আপা তো নিজের রুমে,অজ্ঞান হইয়া পইড়া আছে।সাহেব,ভাইজান,বরের বাড়ির সবাই এতো সেইখানে।”
” আমাকে রুমটাতে নিয়ে যাও।”
” কিন্তু আননে কেডা?”
” আমি কায়াসার বান্ধবী ইতি।”
” আচ্ছা আহেন।”
মিতা নামের মেয়েটা ইতিকে কায়াসার রুমে নিয়ে যায়।ইতি রুমে গিয়ে দেখে অনেকগুলো মানুষ ভিড় করে আছে।ইতি ভিড় টেলে ভিতরে ঢুকে দেখে কায়াসা বিছানায় শুয়ে আছে।
” কায়ু কি হয়েছে তোর?উঠ,দেখ আমি চলে এসেছি।”
” আরে এই মেয়ে কে তুমি?ভেতরে এলে কি করে?” কায়াসার ফুফু বলে।
” আমি ইতি,কায়াসার বান্ধবী।আঙ্কেল আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।যদি একটু সবাইকে যেতে বলতেন।”
” কি বলবে সবার সামনে বলো।” গম্ভীরভাবে বলে কায়াসা৷ বাবা।
” আঙ্কেল আমার কথাগুলো সবার সামনে বললে কিন্তু আপনার সম্মানের সমস্যা হবে।”
আকাশ সাহেব সবাইকে বাইরে যেতে বললেন কিন্তু কায়াসার ফুফু থেকে যায়।
” বলো কি বলবে।”
” আঙ্কেল আপনি এটা কি করছেন?কায়াসা এভাবে হুট করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন?ও তো এই বিয়েতে রাজি নয় তাহলে কেন ওকে ব্ল্যাকমেইল করিয়ে বিয়ে করতে জোর করছেন?”
” আমি মোটেও ওকে ব্ল্যাকমেইল করছিনা,যা করছি ওর ভালোর জন্য করছি।”
” কোন ভালো কিছু হচ্ছে না ওর,এতে ওর জীবন শেষ হয়ে যাবে।”
” এই মেয়ে তুমি নিশাতের বান্ধবী তাই এতোক্ষণ সহ্য করেছি।তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছো।”
” আমি যা বলছি ঠিক বলছি।আমি কায়াসাকে আমার সাথে নিয়ে যেতে এসেছি।ওর যখন মনে হবে এটা বিয়ে করা উপযুক্ত সময় তখনই ও নিজে থেকেই আপনাদের বলবে।”
” না নিশাত কোথাও যাবেনা।বরযাত্রীও চলে এসেছে এখন কি করে বিয়ে বন্ধ করা যায়?” ফুফুমণি বলে।
” সেটা আপনাদের ব্যাপার।আমি কায়াসা নিতে এসেছি তো ওকে নিয়েই যাবো।”
” এটা সম্ভব না।নিশাতের বিয়ে আজই হবে।”
” আপনি কেমন বাবা হ্যাঁ যে নিজের মেয়ের মত নেই জেনেও তাকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছেন?এতোই যদি জোর করার ইচ্ছে থাকতো তাহলে এতো পড়াশোনা কেন করিয়েছেন?কেন ওকে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন?”
” পড়াশোনা বিয়ের পরেও করা যাবে।” গম্ভীরভাবে বলে কায়াসার বাবা।
” হাসালেন আঙ্কেল।আঙ্কেল আপনি কিন্তু ভালো করেই জানেন বিয়ের পর কায়াসা আর পড়াশোনা করতে পারবেনা,তাও কেন ওকে মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছেন?আর আপনি কিন্তু জানেন পরিবারটা মোটেও ভালো হয়।যদি ভালো হতো তাহলে আপনাদের এতো হুমকি দিতোনা।”
” এই মেয়ে তুমি নিজের সীমার মধ্যে থাকো।মেয়েটা আমাদের,তাই সীদ্ধান্তটা আমারাই নেবো।”
” আপনারা……”
” ইতি তুমি কিছু বলোনা আর।আমি বলছি বাকিটা।” পেছন থেকে আদ্রিক বলে।
” এইটা আবার কে?তুমি কি সাথে করে পুলিশ নিয়ে এসেছো নাকি?” কায়াসার বাবা বলে।
” আমি হচ্ছি ডাঃআদ্রিক আহসান,সেইসাথে ওদের কলেজের প্রফেসার।আঙ্কেল আপনি প্লিজ আমার সাথে আসুন,আপনার সাথে আমার একটু কথা আছে।”
” আবার তুমি কি বলবে?” ফুফুমণি বলে।
” চলো তুমি আমার সাথে।”
আকাশ সাহেব আদ্রিককে ওনার রুমে নিয়ে যায়।আদ্রিক ওনাকে অনেক বোঝায় অতঃপর উনি কিছুটা হলে বুঝতে পারেন।
” তোমার কথা না হয় বুঝলাম।বিয়েটা না হয় আমি ভেঙে দেবো কিন্তু আমার মেয়েটার কি হবে?আশেপাশের মানুষরা যখন জানতে পারবে বিয়েটা হয়নি তখন তো ওরা নানা রকম কথা বলবে।আর নিশাত আমার কাছেও থাকেনা,সে ঢাকা শহরে একা থাকে যদি এরা কিছু করে ফেলে তো?তোমার কথায় আমি বিয়েটা ভেঙে দিলাম ঠিক আছে কিন্তু আমার মেয়ের দায়িত্বটা কে নেবে?”
আকাশ সাহেব কথা বলে আদ্রিকের দিকে তাকাই।ওনার তাকানোর ধরণ দেখে আদ্রিক বুঝে যায় উনি কি বলতে চায়ছেন।
.
.
.
” তারপর?” এবার মুখ খুলে কায়াসা।
” তারপর আর কি উনি আমাকে বলেন তোমাকে যাতে আমি বিয়ে করি আর এতে ইতিও মত দেয়।তাই তখনই আমাদের বিয়ে হয়ে যায় আর আমরা এখানে চলে আসি।সব তো শুনলে এবার বলো তোমার কি এই সম্পর্কে আপত্তি আছে?আপত্তি থাকলে এখনই বলে দাও তাহলে আমি……”
আদ্রিকের কথা শেষ হওয়ার আগেই কায়াসা উঠে দাঁড়ায়।
” বিয়েটা কোন ছেলেখেলা নয় যে বললেই শেষ হয়ে যাবে।যেভাবেই হোক বিয়েটা হয়েছে আর আমি এই সম্পর্কটাতে সম্মানও করি।যা হওয়ার ছিল তা হয়ে গিয়েছে।আমার এই বিয়েতে কোন আপত্তি নেই,আমি আপনার সাথে সংসার করতে রাজি।আশা করি আপানারও কোন আপত্তি নেই।”
কায়াসা চলে যেতে নিলেও আবারো পেছনে ফিরে তাকাই।
” আমি কি এখন থেকে এখানে থাকবো?”
” যেহেতু তুমি এখন আমার স্ত্রী তাই আমার সাথেই থাকবে এই বাড়িতে।তবে চিন্তা করোনা যেহেতু সব হুট করে হয়ে গিয়েছে তাই আমরা কিছুদিন আলাদা থাকবো তারপর নাহয় বাকি ভেবে দেখা যাবে।”
কায়াসা চলে যায় আর কায়াসার কথা শুনে আদ্রিক হাসে।আদ্রিকের ফোন আসলে সে ফোনটা রিসিভ করে।
” স্যার,ওদেরকে এখানে নিয়ে এসেছি।এবার কি করবো?”
” বেঁধে রাখো,সময় হলে আমি আসবো।” ফোন কেটে দেয় আদ্রিক। “কায়ুপাখি তুমি কি করে ভাবলে যে আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো?তোমাকে পাওয়ার জন্য এতকিছু করলাম তাহলে কি করে এতো সহজে ছেড়ে দিয় বলো।” কথাগুলো বলে বাঁকা হাসে আদ্রিক।
চলবে……
#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ২৯
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
” নিশু মা তুই কি আমার উপর রাগ করেছিস?”
” না আব্বু,আমি তোমার উপর রাগ করিনি তবে অভিমান অবশ্যই করছি।আর তুমি জানো রাগ থেকে অভিমানের পাল্লা কিন্তু অনেক ভারী হয়।”
” দেখ মা আমি যা করতে যাচ্ছিলাম সেটা তোর ভালোর জন্যই।যদি ওরা তোর সাথে বাজে কিছু করতো তখন?তখন তো তুই না কাউকে মুখ দেখতে পারবি আর না তোর ভালো কোথাও বিয়ে হবে।তখন আমাদের আত্নহত্যা ছাড়া আর কোন কিছু করার উপায় থাকবেনা।”
” তুমি আদ্রিক স্যারের সাথে আমার বিয়ে দিলে কেন?তুমি তো জানোই উনি আমার কলেজের প্রফেসর।”
” উনি তো গেস্ট টিচার হিসেবে এসেছেন কয়েকদিন পরেই তো চলে যাবে।এতো তো কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।আর আমার ছেলেটাকে খুব ভালো লেগেছে।অনেক সুন্দর গুছিয়ে কথা বলতে জানে আর ঠিকভাবে পরিস্থিতিও সামলাতে জানে।আদবকায়দা জানে,সাথে সে ভালো একজন ডাক্তারও।ওই মূহুর্তে তোমার বিয়ে না হলে লোকে অনেক কথা বলতো।আর আমার আদ্রিককে উপযুক্ত মনে হচ্ছে তাই আমি ওকেই বেছে নিয়েছি।এতে আমি তোমার বান্ধবীরও মত নিয়েছি,সেও আমার সিদ্ধান্তে রাজি ছিল।”
” হুম বুঝতে পেরেছি।কিন্তু এখন কি করবে তুমি?”
” কোন বিষয়ে?”
” ওইযে টাকা ধার নিয়েছিলে?”
” ওটা আমি দেখে নেবো।এখন আমার এতো চিন্তা নেই।তোমাকে একটা সুরক্ষিত জায়গায় রাখতে পেরেছি এটাতেই আমি নিশ্চিন্ত।আমার বিশ্বাস ও তোমাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে।”
” হুম।”
এরিই মধ্যে দরজায় কেউ নক করে।
” কে?”
” ম্যাডাম আমি,সুমি।স্যার আপনাকে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকছেন।”
” আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি।আব্বু আমি এখন রাখছি,ভালো থেকো তুমি।”
” তুইও সাবধানে থাকিস।”
কায়াসা ফোনটা রেখে নিচে নেমে আসে।টেবিলে আগে থেকেই আদ্রিক বসা ছিল।কায়াসা এসে আদ্রিকের সামনের চেয়ারটা টেনে বসে পড়ে।সুমি এসে কায়াসাকে রুটি আর সবজি দেয়।কায়াসা একবার আদ্রিকের দিকে তাকিয়ে দেখে সে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে তাই কায়াসাও খাবার খাওয়া শুরু করে দেয়।
দুজনের খাবার প্রায় শেষ হওয়ার পথে।এরই মধ্যে বেল বেজে উঠে।সুমি গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
” স্যার।”
কায়াসা যেহেতু পেছনে ঘুরে বসেছিল তাই তার ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে দেখতে হয়।কায়াসাকে দেখে যে ছেলেটা অবাক হয়েছে এটা কায়াসা ছেলেটার মুখ দেখেই বুঝতে পেরে গিয়েছে।কায়াসা ঘুরে আদ্রিকের দিকে তাকাই।
” স্যার উনি…..?”
” এসো কুনাল বসো।তুমিও আমাদের সাথে খেয়ে নাও।”
” না স্যার আমি খেয়ে এসেছি কিন্তু উনি…..”
” এদিকে এসো বলছি তোমাকে।”
কুনাল বড় বড় চোখ করে কায়াসার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায়।কুনালকে এভাবে তাকাতে দেখে কায়াসার অস্বস্তি হতে লাগে।
” স্যার এসব কিভাবে কি?”
আদ্রিক এরপর প্রথম থেকে কুনালকে সব বলতে থাকে।সব শুনে কুনাল ভয় পেয়ে যায় এটা ভেবে যে আজ অথবা কাল আবারো কারো প্রাণ যেতে চলেছে।
” কায়াসা এ হচ্ছে কুনাল,আমার এসিস্টেন্ট।”
” হ্যালো ভাইয়া।আচ্ছা আপনারা কথা বলুন আমি হাতটা ধুয়ে আসছি।”
কায়াসা চলে যেতেই কুনাল তাড়াহুড়ো করে আদ্রিকের পাশে এসে দাঁড়ায়।
” স্যার এসব কি?ম্যাডাম এখানে?উনাকে কি আপনার আসল সত্যিটা বলেছেন?”
” না এখনো পর্যন্ত না।এখন বলবোনা,তুমিও চুপ করে থাকবে।এমন ভাব করবে যেন তুমি ওকে আগে থেকে চেনোনা।”
” কিন্তু স্যার ম্যাডাম যদি কোনভাবে জেনে যায় যে আপনিই সুতো তাহলে….. ”
” আ.. কুনাল এতো চিন্তা করোনা।যা হবে তা তখন দেখা যাবে।তুমি এতো চিন্তা করোনা।তোমাকে যা করতে বলেছিলাম তা করেছিলে তো?”
” হ্যাঁ স্যার আপনি যেমনটা বলেছেন তেমনটাই করেছি।”
এরই মধ্যে কায়াস হাত ধুয়ে চলে আসে।কায়াসাকে দেখে তারা দুজন কথা বলা বন্ধ করে দেয়।
” কায়াসা তুমি কি কলেজ যাবে?”
” হুম যাবো।যেতে দেবেন আপনি?”
” কেন দেবোনা?তোমার পড়াশোনা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই।যদি তুমি না করতে তাহলে আমিই জোর করে তোমাকে কলেজে পাঠাতাম।”
” আচ্ছা তাহলে আমি রেডি হয়ে আসছি।কিন্তু….. ”
” কিন্তু কি?”
” আমার কাছে তো বই বা জামা কোনটাই নেই।তাহলে কলেজ কিভাবে যাবো?”
” গেস্ট রুমে কার্বাড খুলে দেখো কয়েকটা জামা রাখা আছে।আর বই নিয়ে চিন্তা করোনা তোমার ইয়ারের বইগুলো আমার কাছে আছে।আজকের মতো আমার বইগুলো নিয়ে যাও।রাতে তোমারগুলো নিয়ে এসো।”
কায়াসা চুপচাপ গেস্ট রুমে চলে যায়।কায়াসা যাওয়ার পর কুনাল আর আদ্রিক কিছু কথা বলে।কায়াসা নিচে এসে দেখে আদ্রিক সোফায় বসে আছে।
” কুনাল ভাইয়া কি চলে গিয়েছেন?”
” হ্যাঁ ওর ডিউটি আছে এখন।চলো তাহলে যাওয়া যাক।”
” চলুন।”
আদ্রিক গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে,কায়াসাো দরজা খুলে আদ্রিকের পাশে বসে পড়ে।আদ্রিক চোখ বড় বড় করে কায়াসার দিকে তাকিয়ে থাকে।
” এভাবে দেখছেন কেন আদ্রিক?” সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে বলে কায়াসা।
” না তুমি আমার পাশে বসেছো।আমি তো আরো ভেবেছি তুমি আমার সাথে কলেজ যেতে চাইবেনা যদি কেউ জেনে যায় এই জন্য।”
” আমাদের বিয়ে হয়েছে কোন খারাপ কাজ তো করিনি আমরা তাই এতে এতো লুকানোর কিছু আমি খুঁজে পাচ্ছিনা।আর এতক্ষণে হয়তো সবাই জেনে গিয়েছে।”
” কিভাবে?যা হবার তো তা এখানে হয়নি চট্টগ্রামে হয়েছে।”
আদ্রিকের কথা শুনে মুচকি হেসে কায়াসা বলে,” অপ্রয়োজনীয় খবর প্রয়োজনীয় খবর থেকেও তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে।এবার চলুন নয়তো আমাকে বকা খেতে হবে।”
কলেজের সামনে এসে আদ্রিক গাড়ি থামাই।গাড়ি থেকে আদ্রিক আর কায়াসাকে নামতে দেখে সবাই আড়চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।তবে তারা দুজনেই সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে নিজের নিজের কাজে চলে যায়।
কায়াসাকে দেখেই ইতি তাড়াতাড়ি তার কাছে আসে।
” কায়ু তুই!তুই আজ আসতে গেলি কেন?আর কালই তো তোর……।”
” কায়ু তোর নাকি আদ্রিক স্যারের সাথে বিয়ে হয়েছে?” আরোহী অধির আগ্রহে জিজ্ঞেস করে।
” হুম কালকেই হয়েছে।” নরমালভাবে বলে কায়াসা।
আরোহী হা করে কায়াসার দিকে তাকিয়ে আছে।সে বুঝতে পারছেনা কায়াসা কি করে এতো নরমাল বিহেব করছে,শুধু আরোহী না ইতিও বুঝতে পারছেনা।
” কায়ু তুই কি আমার উপর রাগ করেছিস?”
” নাতো,রাগ কেন করবো?শুধু আমাকে তোর হ্যাঁ বলার কারণটা বল।”
” কারণ আমার তখন আর কোন কিছু মাথায় আসেনি।আমার মাথায় শুধু তোকে কিভাবে বাঁচাবো সেটাই ঘুরছিল।তুই তো বলেছিলি আগে থেকে চেনা পরিচিত থাকলে তোর বিয়ে করায় কোন আপত্তি নেই আর তুই তো আদ্রিক স্যারকে আগে থেকেই চিনতিস তাই আমি হ্যাঁ বলে দিয়েছি।”
এরই মধ্যে টিচার চলে আসে।টিচার সবাইকে বসতে বলে একবার কায়াসার দিকে তাকিয়ে তারপর পড়ানো শুরু করে।এই তাকানোর অর্থ কায়াসা ঠিকই বুঝতে পারছে।কায়াসা আগেই থেকে ধারণা করেছে তাকে এই কয়েকদিন এসব ফেস করতে হবে তাই সে আগে থেকেই মেন্টালি প্রিপারেশন নিয়ে রেখেছে।
ক্লাস শেষ হওয়ার পর তারা তিনজন কথা বলতে বলতে ক্লাস থেকে বের হয়।এরিই মধ্যে কেউ কায়াসার নাম ডাকে।তিনজনেই পেছন ফিরে দেখে জেমি কায়াসাকে দেখেছে।
” শুনলাম আদ্রিক স্যারের সাথে নাকি তোমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে?”
কায়াসা একবার আরোহী আর ইতিকে দেখে নেয়।
” হ্যাঁ হয়েছে।”
” দেখলে তো আমি বলেছিলাম না কখন কি হয় তা বলা যায় না।আমার কথা মিলে গেলো তো।ছাড়ো এসব কংগ্রেস নতুন জীবনের জন্য।” জেমি হাত বাড়িয়ে দেয়।কায়াসাও হাত বাড়িয়ে হ্যান্ড শেক করে কিন্তু যখন ছাড়তে যাবে তখন জেমি হাত না ছেড়ে উল্টো কায়াসার হাতটা টেনে কাছে নিয়ে আসে।
” সাবধানে থেকো।বলা যায়না কখন কি হয়,তাই সাবধানে থেকো।” কায়াসার কানে কানে বলে জেমি।কায়াসা কপাল কুচকে জেমির দিকে তাকাই।জেমি কায়াসার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে চলে যায়।কায়াসা জেমির কথার কোন অর্থ খুঁজে পাইনা।
২ দিন পর,
আজ শুক্রবার।কায়াসার কলেজ বন্ধ তবে আদ্রিকের হসপিটাল খোলা।বাড়িতে কায়াসা একা,তাই সে বাড়িটা একটু ঘুরে দেখছে।হাঁটতে হাঁটতে কায়াসা দোতালার ডান সাইডে চলে আসে।এদিকে এসে কায়াসা দুটো রুম দেখতে পাই আর দুটো রুমই বন্ধ।তাই কায়াসা ফিরে চলে আসে।
চলবে…….