সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব-৩০+৩১

0
406

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ৩০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

হসপিটালে এসে আরোহী,ইতি,কায়াসা।তাদের সাথে আরো দুজন লোক এসেছে কিন্তু তাদের ইতি বা কায়াসা কেউ চেনেনা।আরোহী লোক দুটোকে বাইরে দাঁড়াতে বলে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে।বেডে শুয়ে আছে রাতুল,তার একটা চোখে এখনো ব্যান্ডেজ করা,সেই সাথে হাতে পায়েও ব্যান্ডেজ আছে।আরোহীকে দেখে রাতুল নেকা সুরে বলে,

” আরু বেবি তুমি এসেছো।জানো আমার না তোমাকে খু্ব মনে পড়ছিল।আমি এটাই ভাবছিলাম যে…….” রাতুল আর কিছু বলবে তার আগেই আরোহী তাকে একটা থাপ্পড় মেরে বসে।আরোহীর এহেন কাজে ইতি,কায়াসা সহ পাশে বসে থাকা রাতুলের মাও অবাক।রাতুলের মা ক্ষেপে চিৎকার করে উঠে—

” এই মেয়ে তোমার সাহস কত বড় তুমি আমার ছেলেকে থাপ্পড় মেরেছো।”

” বেবি তুমি আমাকে মারলে।”

” তোকে তো এখন মাত্র একটা থাপ্পড় মেরেছি পারলে তো জানে মেরেই ফেলতাম।”

” এই মেয়ে তুমি এসব কি বলছো?”

” ঠিকই বলছি।এখন যা বলার সব আমি বলবো আপনি একদম চুপ করে থাকবেন।ছেলেকে যে সুশিক্ষা দিতে পারেননি তা আমি এখন আপনাকে দেখাবো।তুই কি ভেবেছিস আমি কিছু জানতে পারবোনা।তাহলে এই দেখ।”

আরোহী একটা ভিডিও প্লে করে রাতুলকে দেখায়।ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে রাতুল কায়াসার জুসে কিছু একটা মেশাচ্ছে আর তার সাথে খারাপ কিছু করতে চেয়েছে।ভিডিওটা দেখে রাতুল ঘাবড়ে যায়।

” তোর সাহস কি করে হয় আমার বান্ধবী সাথে বাজে কিছু করার চেষ্টা করার?তুই আমাকে ধোঁকা দিচ্ছিলিস না?” এটা বলেই আরোহী রাতুলের পায়ে জোরে একটা ঘুসি মারে।ব্যথায় রাতুল চিৎকার করে উঠে।

” এই মেয়ে তুমি এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো।আমি কিন্তু এবার পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো।”

” হাহাহাহা,হাসলেন আপনি।পুলিশ ডাকবেন আপনি।আপনাকে এতো কষ্ট করতে হবেনা আমি অলরেডি পুলিশকে সাথে করে নিয়ে এসেছি।”

আরোহন বাইরে গিয়ে লোকদুটোকে বলে,” স্যার এই নিন প্রমাণ।এই সুস্থ হলেই একে গ্রেপ্তার করবেন আর কঠিন শাস্তি দেবেন।”

ইতি আর কায়াসা অবাক হয়ে যায় এটা ভেবে যে এই লোকদুটো পুলিশ।যেহেতু তারা দুজন নরমাল ড্রেসে ছিল তাই তাদের কেউ চিনতে পারেনি।

বাইরে এসে আরোহী কায়াসাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়।

” প্লিজ কায়ু আমাকে ক্ষমা করে দেয়।আমার দোষে তোর এই পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছে।আমার জেদ আর বোকামির জন্য তোকে ওই জানোয়ারটার নজরে পড়তে হয়েছে।”

” শান্ত হ আরোহী।যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে,এখন এসব ভেবে কোন লাভ নেই।চল এখন এখান থেকে যাওয়া যাক।”

” তুই আদ্রিক স্যারের সাথে দেখা করবিনা?” ইতি বলে।

” না,আমি তো ওনার সাথে দেখা করার জন্য আসিনি।আর উনি হয়তো কাজে ব্যস্ত।তাই ওনাকে বিরক্ত না করাই ভালো।”

১ সপ্তাহ পর,

মাঝরাতে,

কায়াসা নিজের রুমে ঘুমিয়ে আছে।আদ্রিক বাড়িতে নেই এখন,সে নাকি কিছু কাজে হসপিটালেই আটকে পড়েছে।তাই কায়াসা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।আদ্রিক আর কায়াসা দুজন আলাদা আলাদা রুমে থাকে।

ঘুমে আচ্ছন্ন কায়াসা কিন্তু অনবরত বেলের শব্দে কায়াসার ঘুম ভেঙে যায়।কায়াসা গায়ে ওড়না জরিয়ে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসে।কায়াসা নিচে আসতে আসতে সুমি দরজা খুলে দিয়েছে।কায়াসা ভেবেছিল আদ্রিক এসেছে কিন্তু না এটা আদ্রিক নয় বরং জেমি।জেমিকে ওই অসময়ে তাও আদ্রিকের বাড়িতে দেখে কায়াসা বেশ অবাক হয়।

” আপনি!”

জেমি কায়াসার কাছে এসে কান্না করতে করতে বলে,

” প্লিজ আমাকে বাঁচাও,নয়তো ওরা আমার ক্ষতি করবো।”

” কারা?আর আপনি এতো রাতে বাইরে কেন?”

জেমি কান্না করতে করতে কায়াসা ব্যাখা দিতে থাকে।জেমির কথা শুনে কায়াসা যা বুঝতে পারে তা হলো জেমি একটা পার্টিতে গিয়েছিল আর ফেরার সময় তাকে কয়েকটা বাজে ছেলের কবলে পড়তে হয়।দৌড়াতে দৌড়াতে জেমি এই বাড়িটা দেখে তাই বাঁচার জন্য এখানে আসে।

জেমির কথা শুনে কায়াসা বুঝতে পারে জেমির মনে কি চলছে কারণ সেও এ-ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল।কায়াসা সুমিকে বলে আজকে রাতের মতো জেমির একটা থাকার ব্যবস্হা করতে।

নিজের রুমে ঘুমিয়ে আছে কায়াসা।জেমি আস্তে আস্তে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে,তার হাতে একটা ছুড়ি।আসলে জেমি কায়াসাকে যা বলেছে সব মিথ্যা,সে সব বানিয়ে কায়াসাকে বলেছে।আর কায়াসাও জেমির মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করে নিয়েছে।জেমি আসার আগে সব জেনে এবং প্ল্যান করেই এসেছে।তার এখানে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো কায়াসাকে মারা।ছুড়ি হাতে জেমি কায়াসার কাছে এসে দাঁড়ায়।

” তুমি আমার জীবনে এসে খুব ভুল করেছো কায়াসা,মস্ত বড় ভুল করেছো।তার থেকেও বড় ভুল করেছে আমার জিনিস নিজের করে নিয়ে।তুমি তো জানোই আমি নিজের লাভের জন্য সব করতে পারি,সব।কাউকে মারতেও পারি।টাটা কায়াসা।”

জেমি ছুড়িটা দিয়ে কায়াসাকে মরতে যাবে তখনই কেউ পেছন থেকে জেমির হাত ধরে ফেলে।জেমি ভয় পেয়ে পেছন ফিরে তাকাই,সে দেখে আদ্রিক তার দিকে গম্ভীর মুখ করে তাকিয়ে আছে।আদ্রিককে দেখে জেমি ভয় পেয়ে যায়।

” আ..পনি…?আ..প.নি…না.র.. না…এ..খন…হস..পিটা..লে…থা…কার..ক..থা…।”

আদ্রিক পাশ থেকে একটা কাপড় নিয়ে জেমির হাত আর মুখ বেঁধে দেয়।তারপর তাকে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে।গাড়িতে জেমিকে বসিয়ে তার চোখ বেঁধে দেয় আদ্রিক।

আদ্রিক নিজের গোপন জায়গায় এনে গাড়িটা থামায়।তারপর আবারো জেমি টানতে টানতে একটা রুমে নিয়ে আসে আর তার বাঁধনগুলো খুলে দেয়।

” আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছো?”

” বাহ্…আপনি থেকে তুমি।তুমি কি ভেবেছিলে?আমাকে হসপিটালে ব্যস্ত রেখে তুমি আমার কায়ুপাখির ক্ষতি করবে?স্বপ্নেও আমি সেটা হতে দেবোনা।তুমি সব প্ল্যান করে আসলেও তুমি হয়তো এটা জানোনা আমার বাড়ির প্রতিটা কোণায় সিসিটিভি ক্যামরা লাগানো।আমি যখন জানতে পারি তুমি আমার বাড়িতে এসেছো তখনিই আমার সন্দেহ হয় আর আমি তোমার উপর নজর রাখতে শুরু করি।কিছুটা সময় তোমার গতিবিধি লক্ষ করেই আমি বুঝতে পেরে যায় তুমি কেন আমার বাড়িতে এসেছো।কেন আমি আমার কায়ুপাখিকে মারা চেষ্টা করেছো?কি ক্ষতি করেছে ও তোমার?”

” আ….কায়ুপাখি কায়ুপাখি কায়ুপাখি।আর কি ক্ষতি করেছে ও আমার?ও আমার থেকে তোমাকে কেড়ে নিয়েছে।আমি কত চেষ্টা করেছি তোমাকে নিজের দিকে আর্কষিত করার কিন্তু তুমি তো ওই কায়াসার নামে চোখে কাপড় বেঁধে রেখেছো।এই ওর মধ্যে কি আছে যা আমার মধ্যে নেই?বলো?আমার কাছে রূপ,গাড়ি,বাড়ি,টাকা সব আছে।কিন্তু ওর কাছে কি আছে?”

” শুনবে আমার কায়ুপাখির মধ্যে কি আছে?আমার কায়ুপাখির মধ্যে মানবতা আছে,একটা বড় মন আছে,সে অন্যকে সম্মান করতে জানে,ভালোবাসতে জানে,সে নিজের আগে অন্যের ভালোটা ভাবে।যা তোমার মধ্যে নেই।”

” আ….আবার লেইম কথা।এই আদ্রিক প্লিজ তুমি আমার কাছে চলে এসো।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসবো,অনেক সুখী রাখবো।প্লিজ তুমি আমার কাছে চলে এসো।”

” এই তোমার না বয়ফ্রেন্ড আছে?”

” আরে কিসের বয়ফ্রেন্ড,ওটা তো শুধু টাইম পাস।প্লিজ তুমি আমার কাছে চলে এসো,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।”

” তোমার মতো মেয়ের কাছে আমি আসবো,যে গিরগিটির মতো প্রতি মিনিটে মিনিটে বয়ফ্রেন্ড চেঞ্জ করে।স্বপ্নেও ভেবোনা আমি তোমার কাছে আসবো।তুমি হয়তো জানোনা আমি আসলে কি।তুমি আমার কায়ুপাখিকে মারতে চেয়েছিলেনা?এবার দেখো আমি তোমার কি করি।”

পরেরদিন সকালে,

কায়াসা গেস্ট রুমে গিয়ে দেখে জেমি ওখানে নেই।কায়াসা নিচে নেমে এসে দেখে সুমি টেবিলে ব্রেকফার্স্ট রাখছে।

” সুমি জেমি মানে কাল রাতে যে মেয়েটা এসেছিল সে কোথায়?”

” ম্যাডাম উনি হয়তো রুমেই আছেন।”

” না উনি তো রুমে নেই আমি দেখা এলাম।”

” তাহলে….”

” জেমি কাল রাতেই চলে গিয়েছে।” পেছন থেকে আদ্রিক বলে।

কায়াসা পেছন ফিরে দেখে আদ্রিক নিচে নামছে।

” আপনি কখন এলেন?”

” কাল মধ্যরাতে।আমি যখন এলাম তখনই জেমি চলে গিয়েছিল।”

” এতো রাতে।”

” জানিনা,হয়তো এখানে তার থাকতে ভালো লাগছিলোনা তাই চলে গিয়েছে।কলেজ যাবে তো?”

” হুম।”

” তাড়াতাড়ি খেয়ে তৈরি হয়ে নাও।”

কলেজে এসে কায়াসা দেখে সবাই কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে।কায়াসা সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে নিজের ক্লাসে চলে যায়।তবে সবার ফিসফিস করা দেখে আদ্রিক নিজের মনে মনে হাসে।ক্লাসে এসে কায়াসা দেখে এখানেও অনেকে ফিসফিস করে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে।

” ইতু সবাই কি নিয়ে কথা বলছেরে?”

” আরে তুই জানিস না নাকি?জেমি আছে না থার্ড ইয়ারের আরে ওই মেয়েটা যে তোকে দেখা হলেই উল্টাপাল্টা কথা বলতো ওনাকে পুলিশ এরেস্ট করে নিয়ে গিয়েছে।”

” এরেস্ট করেছে মানে?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে কায়াসা।

” আরে কাল রাতে নাকি ওনাকে পুলিশ একটা ক্লাব থেকে উদ্ধার করেছে।সেইসাথে অনেক মাদকদ্রব্যও।পুলিশ সন্দেহ করছে উনি মাদক সেবন করার সাথে সাথে মাদকের ব্যবসাও করেছেন।আর ওনার বাবা যেহেতু কমবেশি সবার চেনা পরিচিত তাই আজকের মূল টপিক হচ্ছেন উনি।টিভি,ফেসবুক,ইউটিউব খুললেই ওনার এরেস্টের খবরে ছড়াছড়ি।কলেজেও সবাই এটা নিয়েই কথা বলছে।”

ইতির কথা শুনে কায়াসা অবাক হয়ে যায়।সে বুঝতে পারছেনা জেমি তো কাল রাতে তার বাড়িতে এসেছিল তাহলে সে ক্লাবে কি করে পৌঁছালো।

চলবে…..

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ৩১
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

১ মাস পর,

আদ্রিক এখন বাড়িতে নেই।এই কয়েকদিনে আদ্রিক আর কায়াসার মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা উন্নত হয়েছে।কায়াসা আর আদ্রিক এখন এক ঘরেই থাকে তবে কায়াসা বিছানায় আর আদ্রিক সোফায়।

কায়াসা আজ ঠিক করেছে সে বাড়ির বন্ধ রুমগুলো পরিষ্কার করবে।তাই সুমি নিচে আর কায়াসা উপরের রুমগুলো পরিষ্কার করা শুরু করে দিলো।দুটো রুম পরিষ্কার করার পর কায়াসা একদম শেষের দিকের রুমটার কাছে এসে পৌঁছায়।আগে যখন কায়াসা এদিকে এসেছিল তখন রুমটা বন্ধ ছিল,আজও বন্ধ ভেবে কায়াসা চলে যেতে নিলে পরেই সে খেয়াল করে না রুমটাতো খোলাই আছে।কায়াসাও খোলা দেখে পানির বালতি আর মোছার কাপড়টা নিয়ে দরজা টেলে ভেতরে ঢুকে পড়ে।ভেতরে পুরো অন্ধকার,কায়াসা বাতলি আর কাপড়টা সাইডে রেখে অন্ধকারের মধ্যে হাতড়ে সুইচটা খুঁজে পাই।লাইট জ্বালিয়ে কায়াসা যখন পেছনে ফেরে তখন তার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।পুরো রুম জুরে কায়াসা ছবি।দেয়ালে,টেবিলে এমনকি দড়ি ঝুলিয়ে তার মধ্যেই ক্লিপ দিয়ে কায়াসা ছবি আটকানো।নিজের এতো ছবি তাও আবার আদ্রিকের বাড়িতে এটা দেখে কায়াসা অনেকটাই অবাক।ছবিগুলো দেখতে দেখতে কায়াসা দেখে দেয়ালে অনেকগুলো টিভি লাগানো।কায়াসা এদিক-ওদিক হাতড়ে একটা সুইচ পাই,সুইচটা টিপ দেওয়ার পরেই সবগুলো টিভির চালু হয়ে যায় কিন্তু স্ক্রিনে তাকিয়ে তো কায়াসার মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে।কারণ প্রতিটা স্ক্রিনে তার বাড়ির এক একেকটা জায়গার দৃশ্য ফুটে উঠছে।

এতোকিছু দেখার পর কায়াসা এবার বুঝতে পারে আদ্রিকই তাহলে সুতো।এবার কায়াসা বুঝতে পেরেছে এই ২ মাসে সুতোর কোন খবর নেই কেন।আদ্রিকের সাথে তার বিয়ে হয়েছে এটা নিশ্চয়ই সে জানে তাহলে কেন কিছু করলোনা।এতোদিনে কায়াসা বুঝতে পেরেছে সুতো কিছু করবে কেন তার সাথেই তো কায়াসার বিয়েটা হয়েছে।কায়াসার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।সে ভাবতেই পারছেনা আদ্রিক তার সাথে এতোদিন এতোটা নিখুঁত অভিনয় করে গিয়েছে।কায়াসা নিজেকে শান্ত করে এদিক-ওদিক খুঁজতে শুরু যদি আদ্রিকের বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ পেয়ে যায় এই আশায়।

কার্বাডে খুঁজতে খুঁজতে কায়াসা একটা ফাইল দেখতে পাই।কায়াসা তাড়াতাড়ি ফাইলটা খুলে চেক করতে থাকে।কিন্তু ফাইলটা পুরোটা দেখে কায়াসা আরো বড় ঝটকা খায়।এই ফাইলে কারো ডেথ সার্টিফিটেক সহ তার সম্পর্কে আরো অনেক কিছু লেখা আছে।কায়াসা ডেথ সার্টিফিকেটটা ভালো করে দেখতে শুরু করে।নামের জায়গায় লেখা আছে “নবনী ইসলাম”।মৃত্যু ২৯/০৩/২০০৫।কায়াসা এবার মৃত্যুর কারণ দেখা।সিঁড়ি থেকে পা পিচলে পড়ে গিয়েছে যার ফলে মাথায় আঘাত লাগার কারণে নাকি মৃত্যু হয়েছে।কিন্তু কায়াসা আরেকটু নিচে নেমে যা সেটা দেখে তার পায়ের তলার মাটি সরে যায়।

বিছানায় চুপচাপ বসে আছে কায়াসা,সে আদ্রিকের আসার অপেক্ষা করছে।অবশেষে কায়াসার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আদ্রিক বাড়িতে আসে।আদ্রিক কায়াসাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে ভ্রু-কুচকে তার দিকে তাকাই তবে এখন কিছু বলেনা,সে ফ্রেশ হতে চলে যায়।আদ্রিক ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে কায়াসা এখনো ওভাবেই বসে আসে।মাথা মুছতে মুছতে আদ্রিক কায়াসাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।কায়াসা একদম শান্তদৃষ্টিতে আদ্রিকের দিকে তাকাই।কায়াসাকে এভাবে তাকাতে দেখে আদ্রিকের ভয় হতে লাগে।

” কায়াসা কিছু কি হয়েছে?”

কায়াসা বিছানা থেকে উঠে টেবিল থেকে ফাইলটা নিয়ে আসে।

” এটা কি মিস্টার আদ্রিক?”

” কি?”

” আর কত নাটক করবেন আপনি আমার সাথে?”

” কি..স..ব ব..ল..ছো.. তু..মি..?”

” কিসব বলছি আমি?এটা ডেথ ফাইল যেটা আমি আপনার ওই রুম থেকে পেয়েছি।”

কায়াসার কথা শুনে আদ্রিক ভীত দৃষ্টিকে কায়াসার দিকে তাকাই।

” আমার আম্মু ডেথ সার্টিফিকেট আপনার কাছে কি করে এলো?” চিৎকার করে জিজ্ঞেস করে কায়াসা।

” কায়াসা তুমি প্লিজ একটু শান্ত হও।আমার কথাটা আগে শোন তারপর না হয়….”

” ওকে ঠিক আছে।শান্ত হলাম আমি।আপনি আপনার কথা শুরু করুন।আমিও দেখি আপনি আর কত নাটক করতে পারেন আর কত মিথ্যা কথা বলতে পারেন।”

” প্রথমতো এটা বলো তুমি কি করে জানলে এটা তোমার আম্মুর ডেথ সার্টিফিকেট?আমি যতটুকু জানি তুমি তোমার আম্মুর আসল নাম জানোনা।তোমার আব্বু কোনদিনও ওনার সম্পর্কে তোমাকে কিছু বলেনি।”

আদ্রীকের কথা শুনে কায়াসা হাসে।

” হ্যাঁ আমি হয়তো আমার আম্মুর পুরো নাম জানিনা কিন্তু আব্বুর নামতো জানি।ছোট থেকে আব্বুর নামেই নিজেকে চিনেছি,আশেপাশের সবাই আমাকে চিনেছে তাহলে আব্বুর নাম কি করে আমি ভুলতে পারি।আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন ডেথ সার্টিফিকেটে স্বামীর নামও লেখা থাকে।এবার বলুন আমার আম্মু ডেথ সার্টিফিকেট আপনার কাছে কি করে এলো?আর আপনি যদি আমার আম্মুকে আগে থেকেই চিনে থাকেন তাহলে আমাকে বললেন না কেন?”

” তুমি যখন সত্যিটা জেনেই গিয়েছো তখন আর আমি কিছু লুকাবোনা।হ্যাঁ আমি তোমার আম্মুকে আগে থেকে চিনতাম তবে তা বেশি না ৩/৪ বছর আগে থেকে আর হ্যাঁ আমিই সুতো,আমিই এশান আর আমিই আদ্রিক।মনে আছে তুমি একদিন আমাকে আমার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলে?আজ আমি তোমাকে আমার জীবনের সব না বলা কথাগুলো বলবো।”

কিছুক্ষণ থেমে আদ্রিক আবারো বলতে শুরু করে।

” আমার আপন বলতে শুধু আমার বাবা-মাই ছিল।আমার বাবা-মায়ের লাভ ম্যারেজ ছিল।তারা দুজন পালিয়ে বিয়ে করেছিল বিধায় তাদের সাথে আমার নানুবাড়ি বা দাদুবাড়ির কারো যোগাযোগ ছিলনা।আমার মা তার বিয়ের দিনই আমার বাবার সাথে পালিয়ে এই ঢাকা শহরে চলে এসেছিল আর তাকে সাহায্য করেছে আমার মায়ের সবচেয়ে কাছের বান্ধবী।ভালোই চলছিল আমার বাবা-মায়ের জীবন।সময় ঘনিয়ে যেতে লাগলো,আমার বাবার উন্নতিও হতে লাগলো তাদের বিয়ের ২ বছর পর আমার জন্ম।আমার জন্মের ৩ বছর পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল কিন্তু আস্তে আস্তে আমার বাবা পাল্টে যে শুরু করে।আমাদের আর আগের মতো সময় দেয়না,কথাও ঠিকমতো বলতোনা।এরকম করে কেটে যায় আরো দেড় বছর।একদিন আমার মা জানতে পারে আমার বাবার নাকি অন্য এক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে।সেদিন আমার মা তার সেই বান্ধবীকে ফোন করে প্রচুর কান্না করেছিল।বলে রাখা ভালো মায়ের সেই বান্ধবীর সাথে মায়ের প্রায় ৪ বছর পর কথা হয়েছে।আমি জন্ম হওয়ার পর তাদের মাঝে কথা আস্তে আস্তে কম হতে শুরু করে,একসময় বন্ধ হয়ে যায়।আমার যখন ৫ বছর বয়স তখন আমার বাবা-মায়ের ডির্ভোস হয়ে যায়।মা আমাকে নিয়ে থাকতো।যেহেতু মা পড়াশোনা শেষ করেছিল তাই উনার চাকরি পেতে অসুবিধা হয়নি।”

এতটুকু বলে আদ্রিক থাকে কিন্তু কায়াসা এরপরের কথাগুলো শোনার জন্য আদ্রিকের দিয়ে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কায়াসার উৎসাহ দেখে আদ্রিক মুচকি হাসে।তারপর আবারো বলতে শুরু করে।

” তখন আমার সাড়ে আট বছর বয়স।একদিন মাকে তার সেই বান্ধবী ফোন করে।সেদিন মা অনেক খুশি হয়েছিল।তারা সেদিন অনেক কথা বলে কিন্তু মা জানতোনা যে এটাই তাদের শেষ কথা হতে যাচ্ছে।এরপর কেটে যায় আরো ১০ বছর।তখন আমার ১৯ বছর বয়স,আমি মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম।তখন মা হঠাৎ জানতে পারে তার সেই প্রিয় বান্ধবী নাকি আরো ১০ বছর আগেই মারা গিয়েছে,তাও তার সাথে কথা বলার ১ সপ্তাহ পরেই।এটা শোনার পর সেদিন আমার মা প্রচুর কান্না করেছিল।অনেক খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে মায়ের সেই বান্ধবীর নাকি একটা মেয়ে আছে আর মায়ের সেই বান্ধবীর সাথে যার বিয়ে হয়ে সে আর কেউ না আমার মায়ের সাথে যার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তার সাথেই নাকি ওনার বিয়ে হয়েছে।”

এতটুকু বলে আবারো থামে আদ্রিক।কায়াসা আবারো উৎসুক দৃষ্টিতে আদ্রিকে মুখপানে তাকিয়ে আছে।আদ্রিক কায়াসার দিকে তাকাই।

” তুমি জানো আমার মায়ের সেই বান্ধবীটা কে ছিল?”

” আমার আম্মু?” দ্বিধা নিয়ে বলে কায়াসা।

” তুমি আসলেই অনেক বুদ্ধিমতী।হ্যাঁ তোমার আম্মুই ছিল আমার মায়ের সেই প্রিয় বান্ধবী।১ বছর অনেক খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে তোমার আম্মু মৃত্যু কোন সাধারণ মৃত্যু ছিলনা।”

” মানে?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে কায়াসা।

চলবে…..