সুদর্শন শঙ্খচিল পর্ব-২৪+২৫

0
280

‘সুদর্শন শঙ্খচিল’
[২৪]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

তুয়া কিছু একটা ভেবে আবার চাঁদের কাছে যাওয়ার জন্য ঘুরতেই প্রিয়মের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। তুয়া মুচকি হেসে বলল,”ভাইয়া, আমাদের জীবনটা বহমান নদীর মতো চলমান একটা ঢেউ। আর ঢেউয়ের মতো সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, আবেগ আর অনুভূতি নিয়ে ভেসে চলে আমাদের জীবন। খারাপ পরিস্থিতি যে খারাপ ফল বয়ে আনে তা কিন্তু নয়। সব ভুলে চাঁদকে নিয়ে অনেক ভাল থাকুন আর আপনাদের জন্য অনেক দোয়া এবং ভালবাসা রইল।”

কথাটা বলে তুয়া প্রিয়মের থেকে বিদায় নিয়ে আবার রুমে ঢুকে গেল। আর প্রিয়ম তুয়ার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে নিজের ভাগ্য দেখে মৃদু হাসল। চাঁদ প্রিয়মের রুমের বেলকণিতে দাঁড়িয়ে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়ম রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বেলকণিতে গিয়ে দাঁড়াতেই চাঁদ বলল, “প্রিয় মানুষটাকে অন্যের রুমে ঢুকতে দেখলে তোমার কষ্ট হয় না, প্রিয়ম?”

প্রিয়ম চাঁদের কথায় অবাক না হয়ে চাঁদকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলল। ওর বুকের ক্ষতটাকে এখন নতুন করে খোঁচাতে চাচ্ছেনা সে। এমনিতেই বিনা অনলে যথেষ্ট জ্বলে যাচ্ছে প্রিয়মের বুকের বাঁ পাশটা।

প্রিয়মের উত্তর না পেয়ে চাঁদ আকাশের চাঁদটার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,”জানো প্রিয়ম আমিও ওই চাঁদটার মতো বড্ড একা। মেয়ে হয়ে জন্মানোর অপরাধে কখনও বাবার ছিঁটেফোঁটা আদরও কপালে জুটেনি, ছোট খালার কাছে লাথি ঝাড়া খেয়ে মানুষ হয়েছি। আমার পরে আমার বোন হওয়াতে মায়ের উপরে বাবার অত্যাচার দ্বিগুন বেড়ে গেল। একপর্যায়ে মা বাবার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করল। বাবা আবার বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করল। আর আমি ছিলাম খালার কাছে উটকো ঝামেলা তাই তারা সুযোগ বুঝে তোমার গলাতে আমাকে ঝুলিয়ে দিল। এখন তোমার জীবনে এসে তোমার জীবনটাও নষ্ট করে দিয়েছি, তাই না? আচ্ছা আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায়না প্রিয়ম?”

প্রিয়ম চাঁদের কথা শুনে বলল, ”চেষ্টা করছি বলেই
পুনরায় তোমাকে বিয়ে করে নতুন ভাবে পথচলা শুরু করলাম। আমাদের সম্পর্কটাকে আর একটু সময় দাও। আর তুয়া সম্পর্কে কি জেনেছ বা জানো জানতে চাচ্ছি না। তবে একটা কথা সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছি, এসব কথা আমার সামনে কেনো কারো সামনেই ভুলেও আর কখনও তুলবেনা।
এখন যাও ফ্রেশ হয় ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে।”

প্রিয়মের কথা শুনে চাঁদ আর কথা বাড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ল। প্রিয়মও চাঁদের পাশে গিয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে ওর চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। কিছু কিছু কষ্ট এতটা তীব্র হয় যে কাউকে না বোঝানো যায় আর না দেখানো যায়। শুধু নিজের দীর্ঘশ্বাসের ভিড়ে বুকের গহীনে থাকা কষ্টটাকে আড়ালে রাখতে হয়। চাঁদ অনেকটা সাহস জুগিয়ে প্রিয়মের বুকের বুকে ওর মাথা রাখল। প্রিয়ম চমকে উঠে চাঁদকে সরাতে গিয়েও সরালো না। চাঁদের তখন ওর ঠোঁটের কোণে ফুটিয়ে আবেশে চোখ দুটি বন্ধ করে বিরবির করে বলল, “শুধু তোমাকে ভালবাসার সুযোগটুকু দাও।”

**!!

তুয়া রুমে ঢুকতেই অতি যত্নে কারো বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে গেল। আচানক এমন হওয়াতে তুয়া চমকে উঠলেও তাৎক্ষণিক বুঝল এটা তারই প্রিয় মানুষটা। তাই মুচকি হেসে দুই হাত দিয়ে প্রত্যয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল, “কি জনাব এখনও ঘুমান নি কেন?” প্রত্যয় প্রত্যুত্তরে মুচকি হেসে বলল, ” বউ ছাড়া ঘুমালে বড় বড় পাপ হবে এজন্য।”

প্রত্যয়ের কথা শুনে তুয়া শব্দ করে হেসে প্রত্যয়ের পায়ের পাতার উপর উঠে দাঁড়াল। প্রত্যয় তুয়াকে নিয়ে ধীর পায়ে পুরো রুম জুড়ে হাঁটতে লাগল। তুয়া ভয়ে পেয়ে প্রত্যয়ের টি-শার্ট ধরে ভীত কন্ঠে বলল, “এই পড়ে যাব তো।” প্রত্যয় তুয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল, “পড়তে দিলে তো।” তুয়া প্রত্যয়ের গলা জড়িয়ে ধরে ভ্রু নাচিয়ে বলল, “কি ব্যাপার আসল কাহিনী কি, হুম হুম?” প্রত্যয় ফিচলে হেসে বলল,” কাহিনী ছাড়া বউয়ের কাছে আসা নিষেধ নাকি?”

তুয়া প্রত্যুত্তরে কিছু বলল না শুধু হাসল। দু’জনের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে অনেকটা সময় চন্দ্রবিলাশ করে ঘুমাতে গেল। পরেরদিন ওরা সবাই মিলে রাজশাহীর অনেক জায়গা ঘুরে ফিরে দেখল। হসপিটাল থেকে প্রত্যয়ের জুরুরী কল আসায়, ওরা ঢাকাতে ফিরে রোজকার মতো আবারও ব্যস্ত জীবনে ব্যস্ত হয়ে গেল। প্রিয়ম চাঁদকে একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিল আর প্রত্যয়ের যুক্তির কাছে হার মেরে তুয়া কলেজে যেতে রাজি হল।

তুরাগের এনগেজমেন্টের ডেট ক্যান্সেল করা হয়েছে। কারন ইলার বাবা হঠাৎ সাইলেন্ট হার্ট এ্যার্টাক করেছেন। ইচ্ছে প্রত্যয়ের দেখে বেশ কয়েকবার উপরে এসেছে কিন্তু সঙ্গে কথা বলেনি। কেউ ডাকলেও কারো কাছে যায়নি কিছু জিজ্ঞাসা করলে কোনো উত্তর দেয়নি। একটা পুতুল হাতে নিয়ে একা একা ঘুরে আবার চলে গেছে। ওর ছোট্ট মনে ওদের প্রতি বেশ অভিমান জমেছে।

তুয়া আজকে ওর কলেজে এসেছে। কিন্তু মিতুকে ছাড়া ওর খুব একা লাগছে। স্কুল বা কলেজে বেস্টুর অনুপস্থিতে নিজেকে কেমন এতিম এতিম লাগে। কোনোকিছুতেই যেন মন বসে না। তুয়া মিতুর সঙ্গে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। আজকে কলেজে এসে শুনল মিতু নাকি টিসি নিয়ে অন্য কলেজে চলে গেছে। কথাটা শুনে তুয়ার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে অশ্রু ঝরে পড়ল, কোন অপরাধে মিতু এমন করল তুয়াও জানেনা। নাকি তুয়া ধর্ষিতা বলে মিতু ঘৃণা করে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করেনা? বেস্ট ফ্রেন্ড তো বোনের আরেকটা রুপ হয় তাহলে মিতু কিভাবে পারল এমনটা করতে? এসব প্রশ্ন তুয়ার মাথাতে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। ওর ক্লাস শুরু হতে এখনও বিশ মিনিট দেরী আছে। তাই সে ঘাসের উপর বসে মন খারাপ করে এসবই ভাবছে।

কয়েকটা মেয়ে এসে তুয়ার থেকে একদূরে বসে নিজেরা গল্প করতে লাগল। তাদের মধ্যে একজন হঠাৎ বলে উঠল, ” ধর্ষণ আর সঙ্গমের তফাৎ কি তোরা বলতে পারবি ?” ওদের মধ্যে একজন খিলখিল করে হেসে বলল,”যারা করেছে তাদের জিজ্ঞাসা কর।”

প্রথমজন আশেপাশে কিছু খুঁজার মতো করে তুয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “হেই তুয়া তুমি তো ধর্ষিতা তাই না? বলো! বলো! প্লিজ বলো না ধর্ষণ আর সঙ্গমের মধ্যে তফাৎ কি? তোমার তো এসবে দারুন একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে।”

মেয়ে গুলোর কথা শুনে কয়েকজন তুয়ার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। দুইটা ছেলে খোঁচা মেরে কিছু বলে হাসতে হাসতে স্থান ত্যাগ করল। তুয়া লজ্জা আর অপমান দুই হাতে মুখ ঢেকে শব্দ করে কেঁদে দিল। এতদিন প্রত্যয়ের সংস্পর্শে থেকে ভুলেই গিয়েছিল সে ধর্ষিতা নামক জঘন্য কালিমায় লিপ্ত মানবী। আজকে আবারও ওর মনে পড়ে গেল সেই কুৎসিত সময়টার কথা। সে ভুলেও গেলেও ওর আশেপাশে মানুষ যত্ন করে মনে করিয়ে দিল, “সে ধর্ষিতা।”

মেয়েগুলো তুয়াকে কাঁদতে দেখে আবারও বলল, “এই তুয়া তোমার ফিলিংস আমাদের সঙ্গে শেয়ার করো, তখন মজা তো পেয়েই গেছো। এখন আবার ঢং করে কাঁদছ কেন? আমাদের কে সবটা খুলে বলো না ইয়ার।”

একটুপরে, পিয়ন এসে ওই মেয়ে গুলোকে প্রফেসরের রুমে ডেকে নিয়ে গেল। ওরা তুয়ার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে প্রফেসরের রুমের ঢুকে তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে গেল। প্রফেসর ওদের দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলল, “ধর্ষণ আর সঙ্গমের তফাৎ টিসি নিয়ে কলেজের বাইরে গিয়ে জেনে এসো, বেয়াদব মেয়ে। এসব করতেই তোমারা কলেজে আসো? তোমাদের শিক্ষা দীক্ষা বলে কি আদৌ কিছু আছে?”

টিসির কথা শুনে মেয়েগুলো কাঁদো কাঁদো হয়ে মাফ চাইল কিন্তু প্রফেসর মানতে চাচ্ছিল না। উনি এসব নোংরা কথাবার্তা মোটেও পছন্দ করেন না। মেয়ে গুলো কেঁদে বার বার নিজেদের ভুল স্বীকার করে মাফ চাইল। চাঁদের অনুরোধে প্রফেসর রাজি হয়ে ওদের ওয়ানিং দিয়ে চলে যেতে বলল।

চাঁদ আর তুয়ার স্কুল কলেজ পাশাপাশি হওয়াতে ওদের দু’জনের যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে। চাঁদ ওর স্কুল ফাঁকি দিয়ে তুয়ার কলেজটা ঘুরে দেখতে এসেছিল। আর এসেই দেখে কয়েকটা মেয়ে তুয়াকে নোংরা কথা শুনাচ্ছে, তখন সে ঝটপট ফোনে ভিডিও করে সরাসরি প্রফেসরকে গিয়ে প্রমানসহ দেখায় আর এতেই কাজ হয়ে যায়। চাঁদ প্রফেসরের রুমে থেকে বের হয়ে তুয়াকে আর কোথাও খুঁজে পেল না, তাই তাকে একাই বাসায় ফিরতে হল।

**!!

কয়েকদিন ধরে পলক সামান্য কিছু খেলেও সবটা বমি করে উগলে দিচ্ছে। তাই সে বমির ভয়ে কিছু খেতে না চাইলেও রনিত ওকে ছাড় দিচ্ছেনা।

রনিত অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে পলকের কপালে আদর দিতে ওর কাছে গিয়েছিল। কিন্তু রনিতের পারফিউমের গন্ধ পলক সহ্য করতে না পেরে পলক রনিতের গায়ে বমি করে দিল। এখন খাবার সহ সবকিছুতেই ওর গন্ধ লাগে। রনিতের এত সুন্দর পারফিউমে গন্ধটাও ওর কাছে এখন বিশ্রী লাগছে। গায়ে বমি করাতে রনিত বকবে ভেবে পলক ভয়ার্ত দৃষ্টিতে রনিতের দিকে তাকাল। রনিত পানি এনে পলককে কুলি করিয়ে মুখ মুছিয়ে বলল, “খালি পেটে থাকা যাবেনা এখন কিছু একটা খেতে হবে।”

খাওয়ার কথা শুনে পলক শব্দ করে কেঁদে দিয়ে বলল,”খেলেই বমি হচ্ছে আর আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি। আমাকে কষ্ট পেতে দেখতে তোমার ভাল লাগছে, তাই না?” রনিত কিছু না বলে অন্য রুমে গিয়ে অফিসে ফোন করে দু’টো দিন ছুটি নিল। তারপর ফ্রেশ হয়ে পলকের জন্য ফল কেটে নিয়ে এসে বলল, “ভালো মায়েরা বাবুকে ক্ষুধার্ত রাখেনা। তাই বমি পেলেও আপনাকে খেতে হবে।”

কথাটা শুনে পলক মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে তাকাল। রনিত হেসে পলকের পাশে শুয়ে নিজেও ফল খাচ্ছে আর পলককেও কথা তালে খাইয়ে দিচ্ছে। পলক খেতে খেতে জিজ্ঞাসা করল, “বাবুর কথাটা কি বাড়িতে জানিয়েছ?” রনিত অকপটে বলল,”না সময় হলে জানাব।”

রনিতের আম্মুর কোমরে ব্যাথাটা খুব বেড়েছে তাই শুয়ে ছিলেন। দিশা রান্নাঘরে রাগের চোটে থালা-বাসন গুলো শব্দ করে রাখছে। তার রাগের কারন তাকে আজকে রান্না করতে বলা হয়েছে। কালকে সে ফুড ফেসিয়াল, পেডিকিউর আর মিনিকিউর করে এসেছে আর আজকে রান্না করলে সব টাকা জলে যাবে।

দিশা রাগের চোটে বলেই ফেলল, ” আমি পারব না রান্না করতে, আমার এতো ঠেকা পড়েনি। একজন তো চলে গিয়ে বেঁচে গিয়েছে আর আপদগুলো আমার ঘাড়ে এসে জুটেছে। যার গিলার প্রয়োজন হবে সে রান্না করে গিলুক। আমি দাসী বাদীর মতো আর খাটতে পারব না।”

কথাটা বলে দিশা ওর রুমে গিয়ে শব্দে করে দরজা আঁটকে দিল। রনিতের আম্মু এসব শুনে নিজেই রান্না করতে আসলেন। চোখের পানি ফেলে চুলার উপরে ভাত বসিয়ে আলুর খোসা ছড়াতে ছড়াতে বললেন,”এখন শাশুড়ি হয়েছি। ছেলের বউয়ের লাথি ঝাটা তো সহ্য করতেই হবে, কি আর করার।”

**!!

তুয়া কলেজ থেকে ফিরে প্রত্যয়দের ফ্ল্যাটে আর যায়নি। ওর রুমে গিয়ে বালিশে মুখে গুঁজে ইচ্ছেমতো কেঁদেছে। তুয়ার আম্মু আব্বু এতো ডেকেও দরজা খুলাতে পারেনি। তুরাগ বোনকে আদুরে আদুরে কথা বলেও দরজা খুলাতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রত্যয়ের সঙ্গে মনমালিন্য হয়েছে ভেবে তুয়ার আব্বু আম্মু প্রত্যয়কে ফোন করে জানানোর সাহস করলেন না। প্রতিটা সংসারে স্বামী স্ত্রী মনমালিন্য হয়েই থাকে কিছুক্ষণ পর ওরাই এক হয়ে যাবে। প্রত্যয়ের আম্মু তুয়াকে ডাকতে এসেছিলেন, তুয়া ঘুমাচ্ছে বলে তুরাগ ব্যাপারটা কোনো মতো
সামলে নিয়েছে।

তুয়া সারাদিন না খেয়ে শুয়ে শুয়ে শুধু কেঁদেছে। এমনকি প্রত্যয়ের কলটা অবধি রিসিভ করেনি। প্রত্যয়ের পেশেন্টের সংখ্যা আজকে অনেক বেশি ছিল, তারপর একটা অপারেশনও করেছে। জুরুরী বিভাগের হার্টের পেশেন্টের দেখে আসতে না আসতেই নতুন হার্টের পেশেন্ট এসে ভর্তি হয়েছে। উনার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে চিকিৎসা শুরু আগেই উনি মৃত্যুবরণ করেছেন। এসব নিয়ে সারাটা দিন প্রত্যয়ের খুব ব্যস্ত সময় কেটেছে। তুয়া কল না ধরায় দুপুরে সে ঠিকমতো খেতেও পারেনি।

এই কয়েকদিনে তার অনুপস্থিতে হসপিটালের প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় সব তথ্য জেনে রাত সাড়ে বারোটায় প্রত্যয় বাসায় ফিরল। সারাদিনের ছোটাছুটিতে ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে ঢুকে তুয়াকে কোথাও খুঁজে পেল না। বেশ কয়েকবার কল দিল কিন্তু রিসিভ হলো না। এতো রাতে তুয়াদের ফ্ল্যাটে কলিংবেল বাজানোটাও ওর কাছে দৃষ্টিকটু লাগছে।

হঠাৎ তুয়ার এমন ব্যবহারে প্রত্যয়ের মনটা বিষাদে ছুঁয়ে গেল। ওর কোন ভুলে তুয়া অভিমান করেছে প্রত্যয় বুঝতে পারছেনা। প্রত্যয় ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলল, “এটা আমার কোন অপরাধে শাস্তি দিচ্ছ? দোষটা দেখালে মনটাকে তো অন্তত বুঝ দিতে পারতাম

সুদর্শন শঙ্খচিল’
[২৫]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

-“দুল দুল দুলুনি লাঙ্গা মাতায় চিলুণী।”

ইচ্ছে এই একটা লাইন বার বার বলছে আর ওর পুতুলের চুল আঁচড়ে দিচ্ছে। ফজরের আজানের সময় উঠে সে পুতুল নিয়ে খেলতে বসেছে। ইচ্ছের আম্মু জোর করেও ইচ্ছকে আর ঘুম পাড়াতে পারেননি। ইচ্ছে ওর পুতুলকে সুন্দর করে সাজাচ্ছে, সে তুয়ার ট্রেডির সঙ্গে ওর পুতুলের খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবে। পুতুলের বিয়েতে ইচ্ছে সবাইকে দাওয়াত দিবে, শুধু প্রত্যয় আর প্রিয়মকে ছাড়া। ওরা ইচ্ছের মনে মেলা দুঃখু দিয়েছে তাই ইচ্ছে ওদের সঙ্গে আড়ি করেছে।

ইচ্ছের আম্মু ইচ্ছেকে আবার ডেকে বলল,”আম্মু, এদিকে এসো আর একটু ঘুমাও। এখনও সকাল হয় নি তো মা।” ইচ্ছে ওর আম্মুর দিকে না তাকিয়ে নিজের কাজে মন দিয়ে বলল,”তুমি ধুমাও, আমি কাজ করচি।”

কালকে সারারাত না পলক ঘুমিয়েছে আর না রনিত দু’চোখের পাতা এক করেছে। বমি, অস্বস্তি, মাথা ঘোরা নিয়ে পলক কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিল না। মা হওয়া চারটে খানিক কথা না, পলক এই দুই মাসে যেন হারে হারে টের পাচ্ছে। বমি করে ক্লান্ত হয়ে সে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। বেশ কয়েক মিনিট পর পলক রনিতের গাল ছুঁয়ে কান্নারত কন্ঠে বলল, “আমি মারা গেলে তুমি আবার বিয়ে করবা, তাই না?” এই অবস্থায় পলকের মুখে একথা শুনে রনিতের রাগ লাগলেও সেটা চেপে রেখে বলল, “মরবে কেন? আমি কি তোমার যত্ন আর ভালবাসায় কোনো ঘাটতি রেখেছি?”

পলক রনিতকে জড়িয়ে ধরে আবার কিছুক্ষণ পর বলল,”আমাদের মেয়ে হলে কি তুমি রাগ করবা?” রনিত ভ্রু কুঁচকে পলকের বলল,”বেহুদা কথাবার্তা বলা বন্ধ করবা নাকি আমি উঠে চলে যাব? নিশ্চিন্তে একটু ঘুমাবে তা না বকবক করেই যাচ্ছে।”

এই সময় গর্ভবতী মায়েদের মুড সুইয়িং একটু বেশিই হয়। মেজাজ এই ভালো তো এই খারাপ। রনিতের কথা শুনে পলকের মুহূর্তেই মেজাজ বিগড়ে গেল তখন রেগে বলল,”এই সময় স্বামীরা নাকি পরকিয়া করে, ঘরে পায়না তাই বাইরে যায়। তুই যদি এমন করিস তাহলে তোকে আমি কিমা বানাব।” রনিত হতভম্ব হয়ে পলকের দিকে তাকিয়ে বলল,”পরকিয়া করব কোন দুঃখে? কি পাগলের মতো যা তা বকছ?”

এরকম ভাবে পলক রনিতকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে প্রায় সারারাতই ঝগড়া করেছে। রনিত অতি কষ্টে মুখ বুজে সহ্য করে ছিল। পলক ঝগড়া করে ক্লান্ত হয়ে ভোরের দিকে ঘুমিয়েছে। রনিতও পলককে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে। কালকে পলকদের ফ্ল্যাটে এক প্রতিবেশী এসে এসব উপদেশই দিয়ে গেছেন। উদাহরণ স্বরুপ উনার ফুপাতো ভাইয়ের পরিকিয়ার গল্প তুলে ধরেছিলেন। এমন উপকারী ভাবির কথা শুনলে সংসার বিনা অনলে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকবে। এই ব্যাপারটা রনিত বুঝতে পেরেছে এবং বুদ্ধি খাঁটিয়ে পলককে ওদের এড়িয়ে চলতে বলেছে।

দিশা ওর বরের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করে রেগে বাবার বাসায় চলে গেছে। স্বর্ণের দাম এখন একটু কমেছে। এখনই কিছু গয়না বানিয়ে রাখা উচিত পরে দাম চড়া হতে পারে। দিশা ওর বরের কাছে এই প্রস্তাব রাখলে ওর বর দ্বিমত করেছে, আর এতে দিশা রেগে গেছে। রনিতের আব্বু আম্মু ওই রুম থেকে ওদের সব কথা শুনেছে কিন্তু বলার মতো কিছু খুঁজে পায়নি। রনিতের আম্মু কেঁদে কেঁদে আজকে রান্নার কথাটা উনার স্বামীকে জানালেন। বুড়ো হলে এই হয় সেই হয় এমন নানান অভিযোগ তুলে ধরলেন। আজকাল দিশা নাকি উনাদের কটু কথা বলে গালমন্দ করে খাবারের খোঁটা দেয়। এসব কথা শুনে রনিতের আব্বু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, “তুমি আমার বৃদ্ধা মাকে অত্যাচার করতে তো কম করো নি। উনাকে খাওয়া পড়ার কষ্ট দিতেও তোমার বুক কাপেঁনি।
তাহলে তুমি তোমার পুত্রবধূদের কাছে ভালো ব্যবহার আশা করো কিভাবে, তোমার বিবেকে বাঁধেনা?”

রনিতের আম্মু কথাটা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে কান্না জুড়ে দিলেন। উনার কান্না দেখে রনিতে আব্বু উঠে বাইরে চলে গেলেন। উনার কাছে সংসার জীবনটা বিশ্রী একটা রঙ্গশালা বলে মনে হয়। যেখানে কাহিনীর কোনো শেষ নেই। উনি পুলিশের চাকরি করতেন বিধায় উনার বিধবা মাকে খুব একটা সময় দিতে পারেননি। আর এই সুযোগ রনিতের আম্মু উনার শাশুড়িকে খুব অত্যাচার করতেন। উনাকে খাবার, কাপড় বা ওষুধ কোনোটাই ঠিকমতো দিতেন না। বৃদ্ধার চশমা ভেঙে যাওয়াতে উনি খালি চোখে কিছু দেখতে পেতেন না, তাই দেওয়াল ধরে হাতরে হাতরে চলতেন। তবুও উনাকে চশমা কিনে দেওয়া হয়নি। জ্বরে একা ঘরে শুয়ে একটু পানির জন্য ‘ওহ বউ! ওহ বউ রে, একটু পানি দিয়া যা মা। আমরা গলা শুকিয়ে গেছে রে, মা। একটু দয়া কর মা।” বলে করুন ভাবে ডেকে কেঁদেছেন তবুও উনার পাষাণ মন গলেনি। একদিন রাতে বৃদ্ধা পাকা উঠানে পিছলে পড়ে বুকে প্রচন্ড আঘাত পেয়ে বিছানাগত হয়ে পড়েছিলেন। তার দুই সপ্তাহ পরে অনাদরে উনি নিষ্ঠুর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। প্রকৃতি তার নিজ নিয়মে চলতে পছন্দ করে। মানুষ মানুষকে ছাড় দিলেও প্রকৃতি সঠিক সময়ে তার সঠিক বিচার ঠিকই করে। ওই বৃদ্ধার চোখের পানি দাম আল্লাহ অবশ্যই দিবেন,শুধু সময়ের অপেক্ষা।

আচ্ছা, আমি কি খুব খারাপ গল্প লিখি? আমার গল্প গুলো সত্যিই কি খুব নিম্নমানের হয়? তোমরা কেউ আমার গল্পের রিভিউ তো দাও ই না আবার কাউকে গল্প পড়তে সাজেস্টও করো না। কেন? তার মানে কি আমার গল্প তোমাদের মন ছোঁয়াতে ব্যর্থ হয়। কথাটা ভেবে সত্যিই আমার খুব কষ্ট লাগছে। এত কষ্ট করে গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করেও তোমাদের মন ছোঁয়াতে ব্যর্থ হচ্ছি।

পরেরদিন সকাল দশটার দিকে প্রিয়মের গানের প্রোগ্রাম থাকায় সে দ্রুত বেরিয়ে গেল। প্রত্যয় না খেয়ে খুব সকালে হসপিটালে চলে গেছে। চাঁদ তুয়ার সঙ্গ না পেয়ে সে একা স্কুলের পথে হাঁটা ধরেছে। তুয়া সকালে উঠে তুরাগের জোরাজুরিতে হালকা কিছু খেয়েছে। ওর ফোনটা বন্ধ হয়ে অনাদরে বালিশের নিচে পড়ে আছে। তুয়া দূরে দৃষ্টি মেলে গভীর চিন্তায় এতটাই মগ্ন যে প্রত্যয়ের আম্মুর উপস্থিতি সে বুঝতেই পারেনি। হঠাৎ মাথায় কারো মায়ামাখা স্পর্শ পেয়ে তুয়া পাশে তাকিয়ে মিথিলাকে দেখে মাথা নিচু করে নিল। প্রত্যয়ের আম্মু হেসে বললেন, ”আমার ছেলেটাকে কেন এতো কষ্ট দিচ্ছিস, হুম? শুধু শুধু আমার হিরের টুকরো ছেলেকে কষ্ট দিলে আমি তোকে শূলে চড়াব।”

তুয়া মাথা নিচু করে কাঁদছে ওর বলার কিছু নেই। প্রত্যয়ের আম্মু বললেন,”কালকের ঘটনা চাঁদ আমাকে বলেছে। আমি সব শুনেছি। তোকে শক্ত হতে হবে নাহলে কিভাবে হবে, তুই বল?”

তুয়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। প্রত্যয়ের আম্মু তুয়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল, “প্রত্যয় না খেয়ে হসপিটালে চলে গেছে। তুই বসে বসে কাঁদছিস, তোরা এমন করলে আমরা কিভাবে ভালো থাকব? চল বাসায় চল আর একটা কথা বাড়ালে আমি পিটুনি দিব।”

প্রত্যয়ের আম্মুর জোরাজুরিতে তুয়া প্রত্যয়ের বাসায় গেল। আর তুয়ার আম্মু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল। বাসায় গিয়ে প্রত্যয়ের আম্মু রান্নাঘরে কাজ করছেন আর তুয়ার সঙ্গে গল্প করছেন। তুয়ার মনে বিষাদের মেঘ জমেছে, সে অল্প কথায় উত্তর দিচ্ছে। কেনো জানি তুয়ার প্রত্যয়ের উপর খুব রাগ হচ্ছে। প্রত্যয়কে কষ্টে জর্জরিত করে বলতে ইচ্ছা করছে, ধর্ষিতা শব্দ শুনে ওরও এমনই কষ্ট হয়। কি দরকার ছিল কলেজ যাওয়ার? কলেজে না গেলে কেউ ওর ক্ষতটাকে খুঁচিয়ে আর রক্তাক্ত করতে পারত না। পড়াশোনা করতেই হবে এর কোনো মানে আছে? পড়াশোনা না করলে কি মানুষ বাঁচে না নাকি তারা স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে থাকেনা। কেন প্রত্যয় ওকে কলেজে যেতে বাধ্য করল? সব দোষ প্রত্যয়ের, এসব কথায় ভেবে তুয়া প্রত্যয়ের প্রতি খুব রেগে আছে।

বেস্ট একজন কার্ডিওলজিষ্টের বউ উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত নাহলে সমাজের মানুষই বা কি বলবে? হয়তো প্রত্যয়ের পাশে ওকে বেমানান এজন্য প্রত্যয় পড়াশোনা করতে বলেছে।
যদিও এসব কথা প্রত্যয় নিজে মুখে তুয়াকে বলেনি। তুয়া প্রত্যয়কে ভুল বুঝে ওর মনগড়া কথাগুলোই ধরে নিয়েছে।
। কিছুদিন আগে প্রত্যয় ওকে বলেছিল,” নিজের একটা পরিচয় গড়তে পড়াশোনাটা আবার শুরু করো। যাতে আমার নামে নয় বরং তোমাকে নামে সবাই তোমাকে চিনে।”

প্রত্যয়ের কথা শুনে তুয়া রাজিও হয়েছিল। কিন্তু এই জার্নি এতোটাও সহজ নয় সেটা তুয়া হারে হারে টের পাচ্ছে। চাঁদ বাসায় ফিরে তুয়াকে দেখে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এসে বলল,”তুয়া আপু চলো আমড়া মাখা খায়।” তুয়া কলিকে খাবার দিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে আমড়া মাখিয়ে চাঁদকে দিল। মাসের নিদির্ষ্ট সময়ে প্রতিবারে মতো এবারও প্রিয়মের হাত খরচের টাকা ওর একাউন্টে টাকা এসে জমা হয়েছে। তবে আগের তুলনা টাকার এমাউন্ট এবার একটু বেশি। প্রিয়ম টাকার এমাউন্ট দেখে প্রত্যয়কে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করল,”ভাইয়া এত টাকা কেন? আমার এতো টাকা লাগবেনা।”

প্রত্যয় সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বলল,”তুমি তো আর একা নও প্রিয়ম। চাঁদের আবদারগুলো তো পূর্ণ করতে হবে। ভাইয়ের হাত খরচের টাকা দেওয়ার সার্মথ্যটুকু আমার আছে। আর সঠিক ভাবে নিজের পায়ে না দাঁড়ানো অবধি আমিই দিব। এই বিষয়ে আমি আর একটা কথাও শুনব না।” কথাটা শুনে প্রিয়ম সাহস করে বলল,”আমি প্রোগ্রাম করে বেশ কিছু টাকা পায় তাতেই আমাদের হয়ে যায় তাই বলছি আগে যেটা দিতে ওটাই ঠিক ছিল। আর আমার লাগলে আমি পরে চেয়ে নিব।” প্রত্যয় শান্ত কন্ঠে বলল,”ওকে।”

রাত বারোটায় প্রত্যয় বাসায় ফিরে তুয়াকে রুমে দেখে কিছু বলল না। তুয়া শুয়ে একটা উপন্যাস পড়ছিল, প্রত্যয় দেখেও সে না দেখার ভাণ করে রইল। প্রত্যয় ফ্রেশ হয়ে খেয়ে এসে তুয়া হাত ধরে টেনে উঠে বসাল। তুয়া ভ্রু কুঁচকে প্রত্যয়ের দিকে তাকিয়ে আবার শুয়ে পড়তে গেলে প্রত্যয় ওকে বাঁধা দিয়ে বলল,”হুম বলো এমন ব্যবহারের মানে কি?” তুয়া প্রত্যুত্তর না করে উঠে দাড়াঁলে প্রত্যয় শান্ত কন্ঠে বলল,”এখন এই রুমের বাইরে গেলে প্রবেশের দ্বিতীয় সুযোগ তুমি আর পাবেনা।”

তুয়া থমকে দাঁড়িয়ে প্রত্যয়ের দিকে অবাক চাহনি নিয়ে তাকাল। প্রত্যয় একদম স্বাভাবিক ভাবে কথাটা বলল। প্রত্যয় উঠে দাঁড়িয়ে তুয়া মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,

–“বার বার একই ভুল করবে আর আমি সেটা পুনরায় সংশোধন করব, এটা ভাবলে ভুল ভাববে। রাগ, জেদ, অভিমান শুধু তোমার আছে তা কিন্তু নয়। অকারণে জেদ করা আমার পছন্দ নয়, কিন্তু তুমি তাই করো। কে কি বলল তার দায় ভার আমাকে কেন দিচ্ছ? আমি তো তোমাকে ধর্ষণ করিনি বা করায় নি। তাহলে কেউ কিছু বললে বার বার আমাকে কেন কাঠগড়ায় দাঁড় করাও? তোমাকে ভালবাসি বলে যখন তখন আমাকে এভাবে হার্ট করার রাইট তোমার নেই। তোমার কালকের কাজটাতে তুমি তোমার পরিবারের কাছে আমাকে ছোট করলে, কিন্তু কেন? আমি আদৌ কি তোমাকে হার্ট করেছি বলো?”

তুয়া চুপ করে মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছে। প্রত্যয় আবারও বলল,

–“মেয়েগুলো তোমাকে কথা শুনাল তুমি প্রতিবাদ করলে না কেন? ওরা ভাত খায় তুমি খাও না? আচ্ছা মানলাম কিছু বলতে পারো নি তাহলে আমাকে হার্ট করলে কেন? এখানে আমার কি দোষ ছিল? এখন কিছু বললে তো বললে বলাটা সহজ করাটা এতো সহজ নয়। এই দেখি তাকাও আমার দিকে, আমি যে ডাক্তার হয়েছি। এটা কি এতো সহজ বলে মনে হয়? তোমার কি মনে হয় বই খুলে বসেছি আর সব পড়া অনায়াসে মাথায় ঢুকে গেছে। কষ্ট করেছি, র্নিঘুম থেকে সারারাত পড়ছি, পড়ার চাপে কখনও খেতেও ভুলে গেছি। এক একটা মিনিটের মূল্য বুঝে অযথা আড্ডা না দিয়ে শুধু পড়াতে মন দিয়েছি, নিজের সব শখ আহ্লাদকে দূরে রেখে একটা লক্ষকেই টার্গেট করে পরিবার ছেড়ে দূরে থেকেছি। সেদিন কষ্ট করেছি বলে আজকে এই অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছি। তোমার কি মনে হয় এই জার্নি আমার জন্য খুব সহজ ছিল? এতো অবুজ কেন তুমি তুয়া? এসিডে দগ্ধ হওয়া শত শত মেয়েরা তো বেঁচে আছে, সেখানে তুমি ধর্ষিতা হয়েও
কেন এমন পাগলামি করো? তুমি শিক্ষিত মেয়ে তাই বলছি নিজের চিন্তা চেতনাকে একটু উন্নত করো। তোমাকে এতোবার বুঝিয়েও বার বার একই কাজ করে আমাদের সম্পর্কটাকে নষ্ট করো না।”

তুয়া প্রত্যয়ের ধারালো কথা শুনে হেঁচকি তুলে কেঁদে অন্য দিকে তাকিয়ে চোখ মুছে বলল,”আমি বাইরের দেশে গিয়ে পড়াশোনা করব আর নয়তো বাচ্চা নিয়ে সুখে সংসার করব। আপনি ঠিক করুন আমাকে কোনটাতে সাপোর্ট করবেন। এর মধ্যে যে কোনো একটা অপশন বাছাই করুন।”

চলবে।