সেই মেয়েটার উপাখ্যান পর্ব-৫+৬

0
200

#সেই মেয়েটার উপাখ্যান
#পর্ব ৫
গোটা সান্যাল বংশেই কোনো শরিকেরই কোনো মেয়ে ছিলো না, তাদের বাড়িতে সন্তান জন্মালেই সে ছেলে হয়, এই প্রবাদ কে মিথ্যে করে তিন প্রজন্ম পরে তার জন্ম হয়েছিলো, তাই সুকান্ত শখ করে নাম রাখলেন অদ্বিতীয়া, একটু একটু করে বড়ো হতে লাগলো শিশুটি, তার আধো আধো মুখের বুলি তে ক্রমশই বেশি করে আকৃষ্ট হয়ে উঠছিলেন সুকান্ত, শখ করে তিনিই ডাক নাম দিলেন পিয়া, আগে শুধু তিনিই ডাকতেন, আস্তে আস্তে গোটা সান্যাল বাড়িই তাকে ওই নামে ডাকতে লাগলো। অদ্বিতীয়া নাম তার শুধু খাতায় কলমেই থেকে গেলো, একমাত্র স্কুলে ছাড়া সেই নাম ব্যবহার করার আর তার কোনো জায়গা থাকলো না।

ইতিমধ্যে রতিকান্ত বাবার টাকা নয়ছয়ের যে উপায় খুঁজে পেয়েছিল, তাতে আরো বেশি করে মনোনিবেশ করলো। রাত ভোর মাতলামো আর নিষিদ্ধ পল্লীতে সময় কাটিয়ে বেশ কিছুদিন পর পর, যখন সে বাড়ি ঢুকতো তখন ছোট্ট শিশুটি ভীত চোখে মায়ার আঁচলের পেছনে লুকিয়ে থাকতো। রতিকান্তের দ্বিতীয় বউয়ের তাকে নিয়ে কোনো মাথাব্যথা ছিলো না, সে তার রান্না ঘর, কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। চ্যালা কাঠের বাড়ি খাওয়ার পর থেকেই রতিকান্তও বউ কে এড়িয়েই চলতো।

সরযূর নাতির শোকে কান্নাকাটিও সেই ঘটনার পর থেকেই বন্ধ হয়েছিলো, বউয়ের আড়ালে আবডালে তিনি বউ সম্পর্কে যে মনোভাব ই পোষণ করুন না কেন, বউয়ের মুখোমুখি সেসব কথা বলার সাহস তাঁর ছিলো না। বউটি একটু হলেও অন্যদের থেকে আলাদা ছিলো, গতরে খেটে খেতে তার কখনই কোনো আপত্তি ছিলো না, কোনোদিনও মুখে মুখে চোপাও সে করতো না কিন্তু তা সত্বেও তার মধ্যে এমন কিছু ছিলো যা তাকে আলাদা গুরুত্ব দিতে বাধ্য করতো।

ক্রমশ বাড়াবাড়ি হতে হতে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো যে রতিকান্তের জন্যে গোটা সান্যাল পরিবারই মুখ দেখানোর জায়গায় থাকলো না। এমন সময়ে একদিন প্রায় দিন সাতেক পরে বাড়ি ফিরলো রতিকান্ত, বাড়িতে ঢুকেই সে মায়ের কাছে ভাত চাইলো। সরযূ বামুন ঠাকুর কে ভাত বাড়ার নির্দেশ দেওয়ার আগেই সরলা সেখানে কোমরে আঁচল জড়িয়ে এসে দাঁড়ালো। স্বামীর দিকে তাকিয়ে রীতিমত হুকুমের সুরে আঙুল তুলে তাকে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার দরজা দেখিয়ে বললো,

গণ্ডেপিন্ডে গিলবে, আর বাপের পয়সায় মচ্ছব করবে! যখন খুশি যাবে আসবে, এ কি হোটেল পেয়েছ? এ বাড়িতে থাকতে খেতে গেলে, এবার থেকে কাজ করে খেতে হবে!

হটাৎ করেই দাসী চাকরদের সামনে বউয়ের এই ধৃষ্টতায় স্বামিত্ব জেগে উঠলো রতিকান্তর, বউয়ের দিকে প্রায় তেড়ে এসে বললো,

আমার বাপের টাকায় আমি খাবো না তো কি তুই খাবি? যতো বড়ো মুখ নয় ততো বড়ো কথা!

সরলা রতিকান্তের শাসানিতে একটুও ভয় পেলো না, আরো দু পা এগিয়ে এসে সেও এবার তুই তোকারি তে নেমে এলো, আঙুল তুলে বললো,

বিয়ের পরে ভাত কাপড়ের দায়িত্ব তো তোর ছিলো মিনসে, তোর বাপের নয়! তা তোর আর দোষ কি! মন্ত্র যে পড়েছিলি, সেতো আর হুঁসে পড়িস নি। তবে হ্যাঁ, তোর বাপের পয়সায় আমি খাই নে, আমি আমার গতরে খেটে খাই। যাইহোক অতো কথায় কাজ নেই, আজ থেকে আর গতরেও খাটব না, তোর বাপের পয়সাও নেবো না, আমার খাই খরচা তুই দিবি! হাতে পয়সা এলে তবেই এবার থেকে বাড়ি আসবি, না হলে আর বাড়িতে পা দিবি না। আর হ্যাঁ, তোর মা আমাকে দেখতে গিয়ে কারোর সঙ্গে কথা বলেনি কেনো জানিস, পাছে তোর গুনকীর্তন বেরিয়ে যায়। যদি বলতো তাহলে জানতে পারতো, তারা তোর মায়ের কাছে আমার গুণের খবর দিতেই চেয়েছিলো তোর গুণের খবর নিতে নয়! সারা গাঁয়ের লোক এই সরলা কে একডাকে চেনে, আমার কাছে কিচ্ছু অনাহ্য হবার জো নেই কো!

মুহূর্তে রতিকান্তের মুখ শুকিয়ে গেলো, বউয়ের খাই খরচা তাকেই মেটাতে হবে এই কথায় সে বেশ বিপদে পড়লো। ছেলে কে খালি পেটে বাইরে বার করে দেওয়ার কথায় মনে মনে অসন্তুষ্ট হলেও বউয়ের চ্যালা কাঠের ভয়ে সরযূ মুখ খুললেন না। তিনি দুঁদে গিন্নী, কিন্তু গ্রাম্য মুখরা মেয়েটির সঙ্গে কিছুতেই পেরে উঠতে পারছিলেন না। রতিকান্ত একটু ভয়ে ভয়েই মায়ের মুখের দিকে তাকালো, এই প্রথম বার বাইরে যাওয়ার প্রস্তাব পেয়েও সে একটুও খুশি হলো না, ফেরার সময় টাকা নিয়ে ফেরার কথা ভাবতে গিয়েই সে ভীত হয়ে পড়ছিলো। মায়ের মুখে কোনো আশ্বাস বাণী না শুনতে পেয়ে এবার সে বিপদ বুঝে বউয়ের পায়ের দিকে হাত বাড়ালো, সরলা চমকে উঠে দু পা পিছিয়ে গিয়ে বললো,

মরণ!

স্বামীর মুখ দেখে একটু হলেও বোধহয় তার মায়া হলো, বামুন ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে বললো,

একে খাবার বেড়ে দাও, আর এর পরের দিন থেকে বাইরে গেলে বাড়িতে ফিরলে যে দরজা খুলবে তার পিঠে আমি চ্যালা কাঠ ভাঙবো এই বলে দিলাম!

বলেই সে স্বামীর দিকে ঘুরল,

তোমার যে বাইরে না বেরোলেও চলে সে তুমি নিজেই জানো! তোমার দম কতো সে আর তোমার থেকে ভালো কে বোঝে! তাই মুখ না খুলিয়ে বাড়িতে বসে থাকো, না হলে সরলার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না, কোনো সরযূ সান্যালের তোমাকে বাঁচানোর ক্ষমতা নেই!

এতদিনে সরলার চ্যালা কাঠের মাহাত্ম্য সবাই বুঝে গিয়েছিলো, তাই রতিকান্তের সঙ্গে অন্য দের মুখও শুকিয়ে গেলো। এটুকু বলেই আর অপেক্ষা করলো না সরলা, সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ করে সে দোতলার দিকে এগিয়ে গেলো। বউয়ের কাছ থেকে অনুমতি পেয়ে রতিকান্ত মাথা নিচু করে খেতে লাগলো, বউ চলে যাওয়ার পরে সরযূ তাঁর অভ্যাস মতো বউয়ের গুষ্টির তুষ্টি করতে লাগলেন ঠিকই কিন্তু সেটা নিচু গলায়, যাতে দোতলায় বউয়ের কানে না পৌঁছায়!

ঠাকুমা সরযূ দেবী স্বামীর ভয়ে খুব বেশি উচ্চবাচ্য না করলেও অদ্বিতীয়া কে আপন করে উঠতে পারেন নি কখনো! যে মেয়েকে তার বাবাই সহ্য করতে পারে না, সেই মেয়েকে ঠাকুমা হয়ে মেনে নেওয়া তার পক্ষে মুশকিল ছিলো। নাতনির ওপরে তাঁর ক্ষোভের প্রকাশ তাই মাঝে মধ্যেই ঘটতো।

অদ্বিতীয়ার বয়স যখন বছর আটেক, তখন এক রোববারের সকালে তাদের বাড়িতে এক ভিখারী ভিক্ষা চাইতে এলো। অবোধ শিশুটি কিছু না বুঝেই তাকে হাত ধরে বাড়ির উঠোনে নিয়ে এসে রান্নাঘরে উপস্থিত মায়ার কাছে ভাত চাইলো। সে বরাবরই মায়ার কাছেই মানুষ, তার বাবা, কাকার মায়া দি, তারও মায়া দি।

মায়াও তাকে বাস্তবিকই ভালো বাসতো, সান্যাল গিন্নি এ দৃশ্য দেখে ফেলার আগেই সে তাকে ভিখিরির হাত ছাড়িয়ে নিয়ে এসে, এক মুঠো চাল তার কাঁধের ঝোলায় ঢেলে দিয়ে তাকে বিদায় করলো। সে যখন সদর দরজা লাগিয়ে উঠোনে পা দিলো, তখন দোতলার বারান্দায় সরযূ দাঁড়িয়েছিলেন, তাকে দেখেই বিরক্তির সুরে বললেন,

ভিখিরি মায়ের ভিখিরি মেয়ে! এক্কেরে হাত ধরে ভিতরে নিয়ে এসেছে গো! তখনই বলেছিলাম ওসব অজাত কুজাতের রক্ত ঘরে এনো না! বনেদী ঘরে ওরকম কতো কি ঘটে! তাবলে কি যেখান সেখান থেকে বাচ্ছা তুলে আনতে হবে!

শিশুটিকে ভিখিরি বলা মায়ার খুব একটা পছন্দ হলো না, সেও অনেক পুরনো ঝি, গিন্নীর মুখে মুখেই জবাব দিলো,

এ কেমন ধারা কথা মা গো! নিজের বংশের মেয়েকে কেউ ভিখিরি বলে! আর গরীব মানুষ দুটি ভাত চেয়েছে বই তো নয়, তাবলে তাকে ভিখিরি বলতে হবে!

সরলার সঙ্গে অদ্বিতীয়ার কোনো বন্ধন ছিলো না, সে যে শিশুটি কে খুব বেশি কিছু ভালো বাসতো এমনটাও নয়, কিন্তু তার প্রকৃতি ছিলো কিছুটা ভিন্ন, কোনো রকম অন্যায় করে তার কাছ থেকে পার পেয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কারোর ছিলো না। মায়ার সঙ্গে সরযূর কথোপকথনের সময় সে ওখান দিয়েই যাচ্ছিলো, শিশুটি কে ভিখারী তকমা পেতে দেখে সে দাঁড়িয়ে পড়লো। দোতলায় দাঁড়ানো শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,

ভিখিরি মা নয়, ভিখিরি বাপ বলুন! বাপের এক পয়সা আমদানি নাই, আর মেয়ে কিনা বাড়িতে অতিথি ধরে আনে!

এই কথা শোনার পরও সরযূ একটাও কথা উচ্চারণ করলেন না, মনে মনেই তিনি জানেন এ কথার প্রতিবাদ করতে যাওয়া মানেই খামোকা বিপদ ডেকে আনা, বউটি কে তিনি সত্যিই ভয় পান।

রতিকান্তের বউয়ের ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ হয়ে গেলো, কিন্তু মদ ছেড়ে দিয়ে সুবোধ বালক হয়ে বাড়িতে বসে থাকা অন্তত তার মতো লোকের পক্ষে সম্ভব ছিলো না। এক্ষেত্রে রতন তার ত্রাতা হয়ে উঠলো, পিসির বাড়ি তার নিত্য যাতায়াত শুরু হলো, ছেলে, ভাই পো র বাড়িতে বসে মদ্য পানে সরযূ বা প্রতাপ সান্যালের কোনো আপত্তি ছিলো না। তাই কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধু বান্ধব সহযোগে বাড়ির নিচের তলায় ক্রমশ আসর বসিয়ে ফেললো রতিকান্ত। তার বউয়ের তাকে নিয়ে কোনো ভাবনা ছিলো না, কিন্তু রতিকান্তের বন্ধুরা তাকে এড়িয়ে চলতো। যখন খুব বেশি হৈ চৈ এর আওয়াজ নিচের থেকে আসতো, তখন সরলা উঠোনে নেমে আসতো। তার নিচে নেমে আসা টুকুই যথেষ্ট ছিলো, মুহূর্তের মধ্যে চিৎকারের পরিমাণ কমে যেতো।

ইতি মধ্যেই বাড়িতে দুটো ঘটনা ঘটলো, সেগুলো বাড়ির লোকেদের কাছে খুব বড়ো বিষয় না হলেও অদ্বিতীয়ার কাছে ছিলো, প্রথম ঘটনা মায়ার মৃত্যু এবং দ্বিতীয় ঘটনা তার প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে বড়ো স্কুলে ভর্তি হওয়া। মায়াই তার প্রকৃত মা ছিলো, তাই তার চলে যাওয়া অদ্বিতীয়ার কাছে এক বড়সড় ধাক্কা ছিলো, এই ঘটনার পরে সে যেনো এক ধাক্কায় অনেকটা বড়ো হয়ে গেলো, শিশু সুলভ আবদারের জায়গাটুকু চলে যাওয়ায় সে নিজেকে শক্ত আবরণের খোলসে মুড়ে ফেললো।

অন্য কেউ না হলেও সুকান্ত তার পড়াশোনার ব্যাপারে যথেষ্টই খেয়াল রাখতেন, অনেকটা তাঁর চেষ্টাতেই পাড়ার মধ্যের প্রাথমিক স্কুলের পাঠ শেষ করে উত্তর কলকাতার এক নামকরা মেয়েদের স্কুলে ভর্তি হলো অদ্বিতীয়া।
ক্রমশ

#সেই মেয়েটার উপাখ্যান
#পর্ব ৬
যাদের ছোটো থেকে মা থাকে না তারা বোধ হয় ছোটো থেকেই অনেক বেশি পরিণত হয়ে ওঠে। অদ্বিতীয়ার ক্ষেত্রেও তাই হলো, তার সম বয়সী বন্ধুদের থেকে সে ছিলো অনেকটাই আলাদা। অন্যেরা যখন হুল্লোড়ে মেতে থাকতো, সে তখন বেঞ্চে বসে আকাশ দেখতো, আর কতো কিছু ভাবতো। অন্য বন্ধুদের কে দেখার পর সে বুঝতে পেরেছিলো যে তার অবস্থান অন্য দের থেকে কিছুটা হলেও আলাদা। তার বাড়ি নিয়ে বন্ধুরা আলোচনা করতো,

তুই সান্যাল বাড়ির মেয়ে না! তোরা নাকি বনেদী? বনেদী বাড়ি কাকে বলে?

বনেদী সম্বন্ধে সেরকম কোনো স্পষ্ট ধারণা তারও ছিলো না, এ ব্যাপারে দাদু প্রতাপ সান্যাল ছিলো তার ভরসা। এসব ব্যাপার আলোচনা করতে দাদু খুব পছন্দ করতেন, সেটা লক্ষ্য করতো অদ্বিতীয়া।

বনেদী মানে বংশ! বনেদী মানে রক্ত! আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, আমাদের বংশ গৌরব, সব মিলিয়ে তৈরি হয় বনেদীয়ানা! এখানেই আমরা অন্যদের থেকে আলাদা! এসব কিনতে পাওয়া যায় না, এগুলো বংশ পরম্পরায় আসে! তোমার শরীরে বনেদী বংশের রক্ত বইছে, যা তোমাকে তোমার বন্ধুদের থেকে আলাদা করে!

মুগ্ধ হয়ে শুনতো অদ্বিতীয়া, মনে মনে অদ্ভুত একটা আনন্দ হতো, এই বংশে জন্মানোর জন্যে মনে মনেই ঈশ্বর কে ধন্যবাদ জানাতে ভুলতো না। তাদের স্কুলে সবাই মোটামুটি উচ্চবিত্ত, তবুও তারা অদ্বিতীয়া কে নিয়ে কৌতূহলী ছিলো, পয়সা থাকলেই যে বনেদী হওয়া যায় না এটা ভেবে গর্ব হতো তার। ছোট কা সুকান্ত অবশ্য এসব কথায় বিশ্বাস করতেন না। অদ্বিতীয়া জানতে গেলে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে উড়িয়ে দিতেন, সহপাঠিনী কে জীবন সঙ্গিনী হিসেবে না পাওয়ার যন্ত্রণা তাঁর কথায় ফুটে বেরিয়ে আসতো,

বনেদী! ধুয়ে জল খা! দ্যাখ খেতে কেমন লাগে! ওসব নিয়ে কারা আলোচনা করে জানিস? যাদের আসলে কোনো কাজ নেই! বংশ, রক্ত এসব কিছু হয় না, মানুষের কাজই তার পরিচয়! বুঝলি? দিন বদলাচ্ছে, তুই যখন বড়ো হবি তখন আরো বেশি করে যোগ্যতার প্রয়োজন হবে, এসব বনেদীয়ানা ভাঙিয়ে খেলে চলবে না!

পাশ দিয়ে যেতে যেতে নতুন মা ফুট কাটত,

চলবে না কেনো! খুব চলবে! ওই যে একজন বাপের বনেদী পরিচয় ধার করেই তো মাতলামি করে গোটা জীবনটা কাটিয়ে দিলো! তবে হ্যাঁ বনেদী হলেই শুধু হবে না সঙ্গে বড়োলোকের তকমা থাকা চাই! আমরাও তো বনেদীই, নামে তাল পুকুর, ঘটি ডোবে না! পয়সা নেই বলে ওরকম কতো বনেদী আমাদের গাঁয়ে পুরুত গিরি করে খাচ্ছে! তাদের কারুর এ বাড়ির মতো রক্ত, বংশের গরম নেই!

মনে মনে বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে ভুগতো অদ্বিতীয়া, বনেদী বংশ নিয়ে তার দাদুর কথা মতো গর্বিত হওয়া উচিত না বাবার জন্যে লজ্জিত, ঠিক বুঝে উঠতে পারত না! তবে তার বন্ধুরা তার জন্যে গর্বিত ছিলো, তার বাড়িতে আসার জন্যে সবাই উৎসুক ছিলো, কিন্তু বাবা আর ঠাকুমার ভয়ে অদ্বিতীয়া তাদের বাড়ি আসার জন্যে কখনো বলতো না।

মোটামুটি নিজের জগতেই নিজেকে অভ্যস্ত করে নিয়েছিলো অদ্বিতীয়া, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে রান্না ঘরে বামুনের ঢাকা রাখা ভাত খেয়ে সে দোতলায় নিজের ঘরে উঠে যেতো, পাশাপাশি ঘরেই তার মা এবং ঠাকুমা থাকলেও সে ফিরলো কিনা বা খেলো কিনা এটুকু খবর রাখার কোনো প্রয়োজন কেউ কখনো অনুভব করে নি। একই বাড়িতে থেকেও সে নিজের মতোই একান্তে থাকতো, এক মাত্র সারাদিন কাজের পরে যখন সুকান্ত বাড়িতে ফিরতেন তখন তার গলার আওয়াজ পাওয়া যেতো। সৎ মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্কটা ছিলো একদম অন্য রকম, দুজনের দুজনের প্রতি কোনো বৈরীতা না থাকলেও ভালোবাসা ছিলো না। খুব প্রয়োজনে তারা একে অপরের সঙ্গে কথাবার্তা বলতো, তবে ঠাকুমার কাছ থেকে যেমন প্রতিনিয়ত কটু কথা শুনতে অদ্বিতীয়া অভ্যস্ত ছিলো, সেরকম কথা তার সৎ মায়ের মুখ থেকে কোনোদিনও বেরোতো না।

অদ্বিতীয়া ক্রমশ বড়ো হচ্ছিলো, আস্তে আস্তে ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছিলো সান্যাল বাড়ির বনেদিয়ানাও। নতুন বউ থেকে ক্রমশ পুরনো বউ হয়ে যাওয়া সরলা নিজের দাপটে সান্যাল বাড়ির গিন্নী হবার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। সরযূ ক্রমশ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অশক্ত হয়ে পড়ে গিন্নীর পদ ধরে রাখার বাসনা ছেড়ে সন্ধ্যে বেলায় হরিসভার কীর্তনের আসরে মন দিয়েছিলেন।

সান্যাল বাড়ির অনেক রদবদলের মধ্যেও একটা জিনিসের কোনো পরিবর্তন হয়নি, সেটা হলো রতিকান্তের সান্ধ্য কালীন মদের আড্ডা। সেই আড্ডা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে বাড়ির কিশোরী কন্যা টি পারতপক্ষে খুব প্রয়োজন ছাড়া সন্ধ্যে বেলায় নিচে নামতো না। এই আড্ডার সর্বেসর্বা রতিকান্ত হলেও, রতনেরও এ ব্যাপারে উৎসাহের অন্ত ছিলো না, প্রতিদিনই সন্ধ্যে বেলায় সে সেজেগুজে পিসির বাড়ি উপস্থিত হতো। রাত যতো বেশি হতো, মাতালদের মাতলামো ততই বাড়তো, সেই চিৎকার বাড়তে বাড়তে যখন দোতলায় পৌঁছে যেতো তখন সরলা চ্যালা কাঠ হাতে বৈঠক খানার দরজায় দাঁড়াতো। তাকে দেখেই জোঁকের মুখে নুন পড়তো, মাতালরা নিজেদের গলার স্বর নিচুতে নামিয়ে আনতো।

যেদিন ঘটনাটা ঘটলো সেদিন সরযূ তাঁর কীর্তনের আসরে গিয়েছিলেন, প্রতাপ সান্যাল দোতলায় তাঁর ঘরে থাকলেও সুকান্ত তাঁর চেম্বার থেকে তখনও ফেরেন নি। অনেকক্ষণ ধরেই নিচের থেকে মাতালদের মাতলামির আওয়াজ ভেসে আসছিলো, বেশ খানিকক্ষন পরেও যখন একটুও চিৎকার কমলো না তখন সরলা দোতলা থেকে নেমে উঠোনে এসে দাঁড়ালো, সদর দরজা খোলা পড়ে রয়েছে কখন থেকে রতিকান্তের কোনো হুঁশ নেই!

যেদিন যাবে সব সেদিন বুঝবে!

মনে মনেই গজগজ করতে করতে উঠোনের কোণায় রাখা চ্যালা কাঠ তুলতে গিয়ে থমকে গেলো সরলা, আবছা অন্ধকারে অদ্বিতীয়া কে উঠোনের দেওয়ালে ঠেসে ধরে আছে রতন, রান্না ঘরের বারান্দা থেকে আসা হলুদ বালবের আলোয় তার মুখ স্পষ্ট বোঝা না গেলেও চিনতে খুব বেশি অসুবিধা নেই!

সরলার মাথা মুহূর্তের মধ্যে গরম হয়ে গেলো, বাপের বয়সী লোকের এই নোংরামো সহ্য করা তার মতো মহিলার পক্ষে একটুও সম্ভব ছিলো না, সে তৎক্ষণাৎ চ্যালা কাঠ ছেড়ে পাশে রাখা না চেরা একটা মোটা কাঠের গুঁড়ি দু হাতে তুলে নিয়ে পেছন থেকে সজোরে রতনের মাথায় বসিয়ে দিলো।

আঘাত এতটাই জোরালো ছিলো যে, রতনের হাত ঢিলে হয়ে গেলো আর একটা “আঁক”করে মুখ দিয়ে আওয়াজ করে রতন ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো। ছেড়ে দেবার সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যেতে যেতে, জ্ঞান হারানোর আগে পড়ে থাকা রক্ত মাখা রতনের চেহারাটা এক ঝলকের জন্যে দেখতে পেলো অদ্বিতীয়া।

ভাই ঝি অজ্ঞান হয়ে উঠনে পড়ে আছে, পাশে রক্তাক্ত রতন, এমন সময় খোলা দরজা দিয়ে সুকান্ত ঘরে ঢুকলেন, রক্ত মাখা কাঠ হাতে বৌদি কে দেখে অবাক হয়ে তাকালেন, সরলা তাঁকে ইশারায় নিজের কাছে ডেকে গলায় বিরক্তি এনে বললো,

মরে গেছে নাকি দেখুন তো একটু, হারামজাদা মাতাল বুড়ো! মেয়ে দেখলেই নোলা এক্কেরে সক সক করে!

সুকান্ত কে দেখতে হলো না, দু ফাঁক হয়ে যাওয়া মাথা নিয়ে রতন অতি কষ্টে উঠে বসলো, সরলা দেওরের দিকে ফিরলো,

উকিল মানুষ আপনি, আপনাকে আর কি বলবো! সবই তো বুঝেছেন নিশ্চয়ই! এ বাড়ি মদো মাতালদের জায়গা, এসব জায়গায় আর যাইহোক ভদ্র ঘরের মেয়েরা মানুষ হয় না। আজ আমি দেখতে পেলুম, তাই বাঁচলো, তার মানেই যে কাল কিছু হবে না এমন তো কথা নেই! আর আজ মেয়ে কে বাঁচাতে এসেছি মানে আমার ঘাড়ে দায়িত্ব ঠেলে দেবেন সেটি হবে না, আমি পস্ট কথার মানুষ, আমার কাছে কিছু অন্যায় হবার জো নেই! সতীনের মেয়ের দায়িত্ব আমি নিতে পারবো না!

এই কথোপকথনের মধ্যেই অদ্বিতীয়ার জ্ঞান ফিরে এসেছিলো, সে উঠে বসে সুকান্ত কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো,

ছোট কা! আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো!

অদ্বিতীয়ার কান্নার আওয়াজের রতিকান্ত তার বন্ধুদের নিয়ে বেরিয়ে এলো, ইতিমধ্যেই সরযূ ও ফিরেছিলেন, রতনের অবস্থা দেখে তারা সবাই চিৎকার করতে লাগলো। প্রতাপ সান্যালের কাছে বংশ মর্যাদা অনেক বড়ো বিষয়, তাঁর বংশের মেয়ের সঙ্গে এই দুর্ব্যবহার মেনে নেওয়া তাঁর পক্ষে একটুও সম্ভব ছিলো না, তাই সরযূর ভাই পো হওয়া সত্বেও তাকে একটুও রেয়াত করলেন না, তিনি রতনের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হলেন না।

রতিকান্ত কিন্তু এতো কিছু হয়ে যাওয়া সত্বেও মেয়ের দিকে না তাকিয়ে রতনের দিকে মনোনিবেশ করলো, তার উদ্যোগই মাতাল বন্ধুরাই ছোটাছুটি করে রতনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করলো। সুকান্ত প্রচণ্ড রেগে গেলেন, তিনি রতন কে থানায় নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন দেখে প্রতাপ সান্যাল ময়দানে নামলেন,

পাগল হয়েছো! লোক জানাজানি হলে বংশের সম্মান থাকবে! এই মেয়ে কে নিয়ে কোর্ট কাছারি করলে আর ওর বিয়ে দিতে পারবো আমি? যা হয়েছে চেপে যাও, আমি তোমার মা কে বলে দিচ্ছি আর কোনোদিনও যেনো ও এ বাড়িতে পা না দেয়। সুকান্ত মনে মনে গজরাতে থাকলেও বাবার কথার যৌক্তিকতা অস্বীকার করতে পারলেন না, থানা পুলিশের প্রস্তাব ধামা চাপা পড়লো।

রতনের মা খবর পেয়ে দৌড়ে এলো, ততোক্ষনে রতন কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাড়িতে ঢুকেই সে ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদতে লাগলো, সরযূ ভাই বউ কে সান্ত্বনা দেবেন কিনা বুঝে উঠতে পারছিলেন না, ক্ষণে ক্ষণে তাঁর কাঠ হাতে বউয়ের চেহারা খানা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। সরলা অবশ্য নিচে এলো না, তার যা করার তা করা হয়ে গিয়েছিলো।

এক মুহূর্তে যেনো অনেক বড়ো হয়ে গেলো অদ্বিতীয়া, এই সান্যাল বাড়ির সন্তান হিসেবে মনে মনে সে গর্বিত ছিলো। ছোটো থেকেই বনেদী বাড়ির মেয়েদের এই করতে নেই, ওই করতে নেই, রক্ত, বংশ মর্যাদার গল্প শুনতে শুনতে বড়ো হওয়া মেয়েটি আজ অনুভব করলো প্রদীপের নিচের অন্ধকারটাই সবচেয়ে বেশি। বনেদী বাড়ির এই অন্ধকার দিকটা তার জানা ছিলো না, হটাৎ করেই যেনো এই বাড়িটা ছেড়ে তার পালিয়ে যেতে ইচ্ছে হলো। বাবার মাতলামো, ঠাকুমার কুট কাচালি, নতুন মায়ের থাকা না থাকা এই সমস্ত কিছুর পরেও দিনের শেষে ওর একটা বাড়ি ছিলো, যেখানে ফিরে আসতে ওর ভালো লাগতো!

আজ এতো কিছুর পরেও যখন বাড়ির বনেদীয়ানা বজায় রাখার জন্যে দাদু, ঠাকুমা ছোট কা কে রতন কাকার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দিলো না, তখন প্রথম বনেদী শব্দটার প্রতি মোহ কাটলো অদ্বিতীয়ার। বাবার তাকে ছেড়ে রতন কাকার প্রতি দেওয়া মনোযোগ তাকে বাবার প্রতিও বিরূপ করে তুললো।

তুমি রতন কাকা কে কিছু করবে না ছোট কা! দাদু বললো বলেই তুমি ছেড়ে দিলে?

ভাই ঝির প্রশ্নে অস্বস্তি তে পড়লেন সুকান্ত,

তুই যখন বড়ো হবি তখন বুঝবি কেনো আমি কিছু করতে পারিনি তোর জন্যে! তুই যতো কষ্ট পাচ্ছিস আমি তার থেকেও বেশি কষ্ট পাচ্ছি, একটা বদমায়েশ লোক কে শাস্তি দিতে না পেরে! কিন্তু আমি চাই আমার এই মেয়েটা বড়ো হয়ে খুব ভালো থাকুক, তাই তোর ছোটো বেলাটা নষ্ট করে দিতে চাইছি না!!

এ কেমন বনেদীয়ানা! যা কিনা বাড়ির মেয়ের সম্মানের থেকেও দামী!

দরজার বাইরে এসে দাঁড়ানো সরলার গলা ভেসে এলো, সুকান্ত চমকে তাকালেন, গলার স্বর নিচু রেখেই বললেন,

আমি বনেদীয়ানায় বিশ্বাসী নই! কিন্তু এই বয়সে থানা পুলিশ, কোর্ট কাছারি করলে ও এমন সব প্রশ্নের মুখোমুখি হবে যেগুলোর স্মৃতি ওকে সারাজীবন দুঃস্বপ্নের মতো বয়ে বেড়াতে হবে! আর সান্যাল বাড়ির এরকম মুখরোচক খবর তো খবরের কাগজের প্রথম পাতায় থাকবে কদিন! আমি বংশ গৌরবের কথা ভাবছিনা, আমি ওর একটা সুস্থ, সুন্দর ভবিষ্যতের কথা ভাবছি!!

এ বাড়িতে থেকে সেসব হবে বলছেন!

শ্লেষ মেশানো গলায় প্রশ্ন করলো সরলা, সুকান্ত মাথা নাড়লেন,

না, এ বাড়িতে আর রাখবো না ওকে! অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেবো! বাড়ির তলায় বসে দাদার এই নোংরামো আর সহ্য হচ্ছে না! তবে সতীনের মেয়ে বলে আপনি দায়িত্ব নিতে পারবেন না, এই কথাটা আমাকে আঘাত দিলো বৌদি, সে তো আপনার স্বামীর সন্তানও বটে!

হ্যাঁ, তা বটে!

বিদ্রুপের গলায় উত্তর দিলো সরলা, খানিকটা উষ্মা নিয়ে বললো,

যাক! তাও ভালো! আমার সুস্থ, সুন্দর ভবিষ্যতের কথা তো ভাবেন নি কখনো! দাদার বিয়েতে বর যাত্রীও জাননি, পাছে সত্যি কথা বলতে হয়। আপনারাই বা দোষ দিই কি! নিজের ভাইরাই তো বিদেয় করতে চেয়েছিলো! যার বাপ নেই, তার আবার সুন্দর ভবিষ্যত! তা আমার না হোক আর একটা মেয়েই বাঁচুক না হয়, বাংলায় তো মেয়ে কম নেই, তার একটা বাঁচলেও ভালো!

আজ পর্যন্ত কোনো দিনও ক্ষোভ প্রকাশ না করা সরলা এই প্রথম তার ক্ষোভ প্রকাশ করলো, সুকান্ত মাথা নিচু করে নিরুত্তর হয়ে বৌদির চলে যাওয়া দেখলেন। অদ্বিতীয়ার হটাৎ করে নিজের সঙ্গে কখনো না ভালোবাসা নতুন মায়ের জন্যে কষ্ট হতে লাগলো, কাকার দিকে তাকিয়ে কষ্টের গলায় বললো,

ছোট কা! বাবা এতো মদ খায়, তুমি নতুন মা কে বিয়ের আগে বলো নি? ওই জন্যেই আসলে নতুন মা বাবার ওপরে রাগেই আমার সঙ্গে কথা বলে না!

সুকান্ত মলিন হাসলেন,

ওই যে বৌদি বললো না, আমি যদি বলেও দিতাম তাহলেও ওর দাদারা অন্য কোনো মাতাল কে ঠিক খুঁজে নিতো!

নতুন মায়ের বাবা ছিলো না তাই হয়েছে, নতুন মা বললো! আমারও তো বাবা নেইই ছোট কা! আজ এতো কিছু হলো তবু বাবা আমার কথা ভাবলো না, রতন কাকা কে হাসপাতালে নিয়ে গেলো! আমারও কি তাহলে এরকমই হবে!

সুকান্ত চট করে ভাই ঝির হাত টা ধরে ফেললেন,

তোর ছোট কা আছে না! তোর কোনো চিন্তা নেই! দ্যাখ আমি কি করি!

এই ঘটনা অদ্বিতীয়ার জন্যে শাপে বর হলো, সুকান্ত সঙ্গে সঙ্গে মনস্থির করলেন, অনেকদিন সব কিছু সহ্য করেছেন, এবার একটু হলেও মেয়েটি কে সুস্থ ভাবে বাঁচতে দিতে হবে। তিনি বাবার সঙ্গে পরামর্শ করে পিয়া কে কলকাতার বাইরের এক স্কুলে পাঠিয়ে দিলেন। প্রতাপ সান্যালও একটুও আপত্তি জানালেন না, আর সরযূ মনে মনে এতটাই লজ্জিত হয়েছিলেন ভাই পো র আচরণে যে প্রতিবাদ করার ইচ্ছেও হারিয়েছিলেন।

মায়ের সম্পর্কে পিয়ার কাছে খুব বেশি তথ্য ছিলো না। তার মা তাকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে এটুকুই সে জানতো। কিন্তু বাবার পরিচয় তার কাছে লজ্জার ছিলো, তাঁর মাতলামো তাকে যথেষ্টই লজ্জায় ফেলতো। অচেনা ইস্কুলে ভর্তি, অচেনা পরিবেশ, আত্মীয় স্বজন, পাড়া পড়শী,পরিচিতির গণ্ডি ছাড়িয়ে যেতে পারা তাকে যথেষ্টই শান্তি দিলো, ধীরে ধীরে সে সহজ হয়ে আসছিলো।
ক্রমশ