সেই মেয়েটার উপাখ্যান পর্ব-৭+৮

0
164

#সেই মেয়েটার উপাখ্যান
#পর্ব ৭
অদ্বিতীয়া কে যেখানের স্কুলে ভর্তি করা হলো, সেটা কলকাতা থেকে ট্রেনে প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের রাস্তা। সারাদিনে দুটো ট্রেন আসতো আর যেতো, তা বাদে কলকাতায় আসার জন্যে ভরসা ছিলো গোটা দুয়েক বাস। জায়গাটা একটা ছোটো খাটো মফস্বল শহর হলেও সেখানের হোস্টেলে যারা থেকে পড়তে আসতো তারা সবাই আশে পাশের বিভিন্ন গ্রামের, কলকাতা থেকে সেখানে পড়তে যাওয়ার কোনো কারণ ছিলো না।

নতুন ক্লাস শুরু হওয়ার পরে দেখা গেলো অদ্বিতীয়া বাদেও আরও একজন কলকাতা থেকে সেখানে এসেছে, কলকাতার মেয়ে দেখে সে নিজেই অদ্বিতীয়ার সঙ্গে আলাপ করতে এলো, নিজের নাম জানালো সোমা। ক্লাসের অন্য মেয়েরা তাদের একটু হলেও সমীহ করে চলতে লাগলো, গ্রাম্য মেয়েদের তুলনায় তাদের পোশাক পরিচ্ছদ, কথাবার্তার পার্থক্য সহজেই আলাদা করা যেতো। বন্ধুরা তাদের কে কৌতূহলের চোখে দেখলেও, উঁচু ক্লাসের দিদিরা ছাড়লো না, কলকাতা থেকে তারা কেনো এখানে পড়তে এসেছে তার যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা তাদের চাই।

শনিবারে সুকান্ত দেখা করতে এলেন যখন তখন অদ্বিতীয়া তার কাছে সমস্যার কথা খুলে বললো, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ব্যক্তিগত ভাবে সুকান্তর পরিচিত ছিলেন, তাঁর হস্তক্ষেপের দাবি নিয়ে সুকান্ত তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন। সেদিনই সন্ধ্যে বেলায় হোস্টেলের সুপার ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বললেন, এতো তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা দেখেই উঁচু ক্লাসের দিদিরা একটু ভয় পেলো। সুপার বেরিয়ে যাওয়ার পরেই অদ্বিতীয়া বিভিন্ন রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হলো, বড়দি কে ওর ছোট কা চেনে এই তথ্য টুকুই তাকে গুরুত্বপূর্ন হবার সুযোগ এনে দিলো, তার পরিচয় জানতে সবাই ব্যস্ত হলো।

তোর ছোটো কাকা বড়দি কে চেনে! কলকাতায় তো কতো ভালো ভালো ইস্কুল আছে! তুই ওই জন্যে কলকাতা ছেড়ে এখানে ভর্তি হলি?

পিয়া পারতপক্ষে কোনো রকম বিতর্কিত কথা বলতো না, তাই তার এখানে পড়তে আসার আসল কারণ সে লুকিয়ে রাখাই পছন্দ করলো। আস্তে করে ঘাড় নাড়লো সে,

হ্যাঁ, ছোট কা চেয়েছিলো আমি এখানে থাকি তাই এসেছি, আমার তো মা নেই, তাই ছোট কাই আমার সব!

পিয়ার মা নেই, এই কথাটা সবার মনকেই ভারাক্রান্ত করলো, দু একজন এগিয়ে এলো, সুমিতা দিদি পিঠের ওপরে হাত রাখলো,

তাতে কি হয়েছে! আমরা আছি তো! মন খারাপ করিস না!

অদ্বিতীয়ার চোখে জল এলো, সহানুভূতি পেতে অনভ্যস্ত মেয়েটির জীবনে এই ভালোবাসাটুকু অনেক ছিলো, হোস্টেল জীবন ভালো লাগতে শুরু করলো হটাৎ।

এই সুযোগে অন্য মেয়েটি কেনো কলকাতা থেকে এসেছে সেই কৈফিয়ত দেবার আর প্রয়োজন পড়লো না, রাতে খাওয়ার পরে ছাদে দাঁড়িয়ে সে অদ্বিতীয়া কে ধন্যবাদ জানালো। এই প্রথম কোনো সত্যিকারের বন্ধু হলো অদ্বিতীয়ার, সোমা কে পেয়ে সে নতুন জীবনে প্রথম ভালো থাকার স্বাদ পেলো। সোমা একটু চঞ্চল প্রকৃতির, ভীষণ কথা বলতে ভালো বাসে, তার সম্বন্ধে কিছুক্ষনের মধ্যেই প্রচুর তথ্য দিয়ে ফেললো সে।

আমাদের পাড়ায় তরুণ বলে একটা ছেলে থাকে, আমার ওকে ভালো লাগে। ও আমাকে কয়েকটা চিঠি দিয়েছিলো, বড়দা সেটা দেখে বাবা কে বলে দিয়েছিলো তাই বাবা আমাকে এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে।

অদ্বিতীয়া শিহরিত হলো, তাদের বাড়িতে ছেলেদের সঙ্গে বেশি কথা বলা বা গল্প করার অনুমতি নেই, তাই সেভাবে কোনো ছেলের সঙ্গেই তার কথা হয়নি কখনো। কিশোরী বয়সের কৌতূহলে জানতে চাইলো,

তুই চিঠি নিলি! ভয় লাগলো না!

ভয়ের কি আছে! আমিও তো দিই! বড়দা দেখাতেই গন্ডগোল হলো, ছোড়দা হলে কিছু বলতো না! বড়দা কে সুযোগ পেলেই যা ফাঁসাবো না! শালা ওর জন্যেই এখানে আসতে হলো!

শালা! ফাঁসানো!

এসব কি কথা! অদ্বিতীয়া অবাক হচ্ছিলো, এরকম ধরনের কথার চল তাদের বাড়িতে ছিলো না। দাদু সব সময় বলতেন,

এই ভাবে কথা বলতে নেই, ওই ভাবে কথা বলতে নেই! আমাদের বাড়ির মেয়েরা ওই রকম সাজে না, ওই ভাবে কথা বলে না!!

এসব শুনতে শুনতে বড়ো হওয়া অদ্বিতীয়ার কাছে এই শব্দগুলোর নতুনত্ব ভালো লাগছিলো। বনেদী তকমা ছাড়িয়ে গিয়ে সে সাধারণ মধ্যবিত্ত জীবন যাত্রার মানুষ জন, তাদের ভাষার ফারাকের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছিলো। আগের স্কুলের সবাই বনেদী বড়লোক না হলেও স্কুলটা বনেদী ছিলো। তাই সেখানে যারা পড়তে আসতো তারা বংশে বনেদী না হলেও পয়সার অভাব ছিলো না। তাই তাদের কথাবার্তা অনেকটাই আলাদা ছিলো।

তুই শালা বললি! এসব শুনে তোর বাবা, মা কিছু বলে না?

অবাক গলায় প্রশ্ন করেছিলো অদ্বিতীয়া,

কি রে বাবা তুই! এসব শুনিস নি! শালা আবার এমন কি কথা! আমার ছোড়দা তো সব সময় বলে! আচ্ছা তোকে আমার ছোড়দা র সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবো, দেখবি ও কিরকম করে কথা বলে!

খুব গর্বের সঙ্গে বলেছিলো সোমা, অদ্বিতীয়ার সেই থেকেই খুব কৌতুহল, সোমার ছোড়দা কে একবার অন্তত চোখে দেখার ইচ্ছে মনের মধ্যে সযত্নে লালন করছে সে। বন্ধুত্ব এগোচ্ছিল, আস্তে আস্তে দুজনেই দুজনের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছিলো, সোমারা দু ভাই, এক বোন। দাদা, বাবা দুজনেই ছোটো খাটো চাকরি করে, ছোড়দা কলেজে পড়ে। বড়দা র বিয়ের জন্যে মেয়ে খোঁজার গল্প থেকে ছোড়দা র পড়াশুনা না করে ফুটবল নিয়ে পড়ে থাকা, কোনো কিছুই তার গল্প থেকে বাদ গেলো না।

বাবা, মা কে সোমার একটুও পছন্দ নয়, মা তার পেছনে সারাদিন খিট খিট করে, তার ওপরে পাড়ার বখাটে ছেলের সঙ্গে প্রেম করা ধরা পড়ার পর তাকে এখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, মায়ের জন্যেই। সেই রাগ ভুলে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এখানে এসেও যে তার খুব বেশি উন্নতি হয়েছে তা নয়, পড়াশোনায় উৎসাহ যতটাই তার কম, প্রেমিকের গল্প করতে ততোটাই বেশি। তরুণ ছেলেটি সেরকম কিছু করে না এখনও বয়সেও অনেকটা বড়ো, তাই তাদের বাড়িতে আপত্তি। কোনো ছেলের সঙ্গে প্রেম করা তো দূরের কথা, দু মিনিট দাঁড়িয়ে কথা বলার সাহসও আজ পর্যন্ত অদ্বিতীয়া করে উঠতে পারে নি, সেখানে সোমা কে দেখে সে অবাক হতো। সে এরকম কিছু করলে দাদুভাই ঠিক কি কি করতে পারে ভেবেই ভয়ে তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতো।

বনেদী শব্দটির সঙ্গে সোমার কোনই পরিচিতি ছিলো না, তাই সুকান্ত কে শনিবার করে ভাই ঝির সঙ্গে গাড়ি নিয়ে দেখা করতে আসতে দেখে সোমা অদ্বিতীয়া কে বড়লোক ঠাউড়ালো।

তোদের অনেক পয়সা আছে তাই না? তোর কাকা গাড়ি নিয়ে আসে! বনেদী রা অনেক বড়লোক হয়?

অদ্বিতীয়া তাকে দাদুর মতো করেই বোঝানোর চেষ্টা করলো, বনেদী হওয়ার সঙ্গে বড়লোক হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তাদেরই অনেক আত্মীয় আছে, এমনকি তার নতুন মায়ের বাড়িও বনেদী, কিন্তু তারা বড়লোক নয়। সোমা উৎসুক হলো, সে একবার ওদের বাড়ি যেতে চায়। অদ্বিতীয়া সরাসরি না বললো না, এটা কলকাতার বন্ধুরা নয়, যেতে চাইলেও যাওয়া অতো সহজ নয়। মুখে বললো,

ঠিক আছে, একবার ছুটির সময় বাড়ি গেলে তোকে আমাদের বাড়ি নিয়ে আসবো।

দেখতে দেখতে মাস পাঁচেক কেটে গেলো, নতুন জীবনে ক্রমশই অভ্যস্ত হয়ে উঠছিলো অদ্বিতীয়া। বাড়িতে ফেরার তার কোনো আকর্ষণ না থাকায় নতুন জীবনে মানিয়ে নিতে তার খুব বেশি অসুবিধা হচ্ছিলো না। সমস্যা শুধু একটাই ছিলো, বিনা কারণে হোস্টেলের বাইরে যাওয়ার কোনো অনুমতি ছাত্রীদের ছিলো না। অদ্বিতীয়ার হোস্টেল স্কুলের বেশ খানিকটা বাইরে, সেখান থেকে স্কুলে ঢোকার আগে স্কুলের বড়ো মাঠ টা পেরোতে হয়। সোমার সব সময়েই তৈরি হতে দেরি হয়, তাই অদ্বিতীয়া প্রতিদিনই একটু আগে বেরিয়ে গিয়ে মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।স্কুলের সময়টা ছাড় থাকার সুযোগে এই মুক্তি টুকু তার কাছে ভারী আনন্দের। এই খোলা মাঠ টা হোস্টেলের বদ্ধ জানলার বাইরে বেরিয়ে দেখতে খুব ভালো লাগে অদ্বিতীয়ার।

প্রতিদিনের মতোই আজও পিঠে ব্যাগ নিয়ে সোমার না আসা পর্যন্ত সময়টুকু দাঁড়িয়ে ছিলো সে, হটাৎ করেই পেছন থেকে একটা ছেলের গলা ভেসে এলো,

তুমি কি অদ্বিতীয়া?

নিজের নাম শুনে অদ্বিতীয়া চমকে তাকালো, পেছনে দাঁড়ানো বছর তেইশের তরুণ টি পনেরো বছরের অদ্বিতীয়ার থেকে বেশ খানিকটা বড়ো, বেশভূষায় শহুরে ছাপ স্পষ্ট। ওকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ছেলেটি নিজের পরিচয় দিলো,

আমি তরুণ, একটু সোমা কে ডেকে দেবে?

এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি আগে কোনোদিনও হয় নি ও, আত্মীয় স্বজন বাদে কোনো ছেলের সঙ্গে কথাও বলেনি কোনোদিনও, তাই আজ তরুণ নামের ছেলেটি সোমার সঙ্গে দেখা করতে কলকাতা থেকে এখানে চলে এসেছে এটা বুঝে সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলো। কেউ তাদের এখানে দেখে ফেললে কি হতে পারে এটা ভাবার আগেই সোমা বেরিয়ে এলো, তরুণ কে দেখে গলায় উচ্ছাস এনে বললো,

তুমি! এখানে! ঠিকানা পেলে কি করে?

বলেই অদ্বিতীয়ার দিকে ঘুরল সোমা,

তুই চলে যা! আমি একটু পরে যাচ্ছি! কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবি এখনো তৈরি হতে পারিনি!

অদ্বিতীয়া যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো, সে তাড়াতাড়ি স্কুলের দিকে পা বাড়ালো। এই ভাবে কোনো ছেলের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলা তার কাছে একটা বিরাট অপরাধের সামিল ছিলো। স্কুলের বড়দি জানতে পারলে সোমার কি হতে পারে এই ভাবনায় সোমার কোনো হেলদোল না থাকলেও অদ্বিতীয়া ভয়ে অর্ধমৃত হয়ে রইলো।

অদ্বিতীয়া হোস্টেলে চলে গেলো কিন্তু তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার পরে সরলা চুপ করে থাকলো না। দিন পনেরো হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে ছুটি পেয়ে বাড়ি ফিরে গেলেও রতন আর এ বাড়ির চৌকাঠ পেরোনোর সাহস করলো না। সুকান্ত এবং সরলা এ ব্যাপারে একজোট হলো, প্রতাপ সান্যালও স্ত্রী কে তাকে এ বাড়িতে আর কোনোদিনও ঢুকতে না দেওয়ার হুকুম জারি করলেন, তাতে রতিকান্ত বিপদে পড়লো। রতন তার খাস লোক ছিলো, বাইরে থেকে এনে মদের জোগান দেওয়ার কাজটা সে ভালোই করতো। তবে মদের আসর বসা কয়েকদিন থমকে গেলেও এনে দেওয়ার লোকের অভাব না হওয়ায় আবার নতুন করে শুরু হলো।

প্রথম দিন দুয়েক সবাই একটু চুপ চাপ থাকলো, নীচ থেকে খুব বেশি হৈ হট্টগোলের আওয়াজ না আসায় সরলা মাথা ঘামালো না, কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই সরলার দিক থেকে সেভাবে কোনো প্রতিবাদ না আসায় ক্রমশই হৈ চৈ ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। এরকম পরিস্থিতিতে এক বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যেয় সরলা নীচের ঠাকুর ঘরে বসে পাঁচালী পড়ছিলো, ক্রমাগত পাশের ঘর থেকে আসা চিৎকারের আওয়াজ তার পুজোয় বিঘ্ন ঘটাতে থাকায় কোনো রকমে সেদিনের পুজো শেষ করে সে থমথমে মুখে বাইরে এলো।

আজ আর চ্যালা কাঠ নয়, শুধু হাতেই সে ঝি মেরে বউ শেখানোর পদ্ধতি অবলম্বন করে রতিকান্ত কে হিড়হিড় করে টানতে টানতে উঠোনের মাঝখানে এনে ফেললো। মাতাল রতিকান্তের শক্ত সমর্থ সরলার সঙ্গে এঁটে ওঠার ক্ষমতা ছিলো না, উঠোনে পড়ে তাকে বউয়ের হাতে মার খেতে দেখে তার মাতাল বন্ধুরা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার উপক্রম করছিলো কিন্তু সরলা তাদের যেতে দিলো না, কড়া গলায় বললো,

মদের বোতল আর বন্ধু কে দোতলায় তুলে দিয়ে যান। এখানের আসর শেষ, আর কোনোদিনও এ বাড়িতে আসবেন না, এরপরের দিন যদি কাউকে আসতে দেখি তাহলে তার ফিরে যাওয়ার দায়িত্ব তারই,

মাতাল বন্ধুরাই রতিকান্ত কে দোতলায় সরলার পাশের ঘরে তুলে দিয়ে গেলো, অনেক বছর পরে দোতলায় উঠে একটুও স্বস্তি পেলো না রতিকান্ত, তার মদের আসর বন্ধ হয়ে গেলো।

এতদিন বউয়ের ভয়ে সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করলেও ছেলের গায়ে সরাসরি হাত তোলা মেনে নেওয়া সরযূর পক্ষে সম্ভব হলো না। বউয়ের এতো বড়ো ধৃষ্টতায় তিনি বহুদিন পরে স্বরূপে ফিরলেন, সরলার উদ্দেশ্যে তাঁর তীক্ষ্ণ বাক্যবাণ বর্ষিত হতে লাগলো।

আগে যদি জানতুম, এ মেয়ে এরম দজ্জাল, তালে কি আর আমার ছেলেটার এতো বড়ো সর্বনাশ হতো! কি কুক্ষণে এই মেয়ে কে দেখতে গিয়েছিলুম কে জানে!!

সরলা ততোক্ষনে দোতলায় উঠে গিয়েছিলো, ওখান থেকেই জবাব দিলো,

হ্যাঁ, কুক্ষণ তো আপনারই বটে! আমি তো বিরাট ভাগ্য করে এতো ভালো স্বামী পেয়েছি!! তা ছেলে যদি আপনার এতোই সুপূত্তুর, তবে কলকাতা ছেড়ে ওরকম লুকিয়ে পাড়া গাঁয়ের মেয়ে আনতে গেলেন কেনো?

কি এমন খারাপ স্বামী তোমার? বড়লোক বাপের ছেলে, খাওয়া পরার অভাব তো হয়নি কখনো! সোনার আংটি, সে আবার বাঁকা! পড়ে তো ছিলে দাদাদের বাড়িতে, দাদারা তো বিদেয় করতে পেরে বেঁচেছে!

হ্যাঁ, আমি তো বড়লোক শ্বশুর পেয়ে বর্তে গেছি! খাওয়া, পরার অভাব নেই, গরীব ঘরের মেয়েদের আর কিই বা চাওয়ার থাকতে পারে! তা আপনার বড়লোক বাপের ছেলে কে বিয়ে করার জন্যে এতো মেয়ে তৈরি ছিলো, তাও শেষ পর্যন্ত মেয়ে খুঁজতে আপনাকে সেই অজ পাড়াগাঁয়ে যেতে হলো তো! আপনিও অবশ্য তাই চেয়েছিলেন! এমন ঘর থেকেই তো মেয়ে আনতে চেয়েছিলেন, যাতে ফেরত যাওয়ার জায়গা না থাকে!

সরলার কথায় তেড়ে উঠলেন সরযূ,

তোমার মুখ দেখে তোমাকে বউ করে আনতে ছুটি নি! তোমার বাপের বাড়ির বনেদিয়ানা দেখে গেছলুম! তখন যদি জানতুম, বনেদী ঘরের মেয়ের এইরম ব্যভার, তাহলে আর ওই পথে যেতুম নে! ঘটক তো তখন কতো কিছু বলেছিলো! শান্ত শিষ্ট, বনেদী বাড়ির মেয়ে, সাত চড়ে নাকি রা কাড়ে না! এই তো তার অবস্থা!

তাই নাকি! আচ্ছা!

সরলার গলা এবার সপ্তমে চড়লো, দোতলার বারান্দা থেকেই পাড়া শুনিয়ে চিৎকার করে বললো,

তা বনেদী ঘরের বউদের কিরম ব্যাভার হয় শুনি! তারা লুকিয়ে বউয়ের পেটের বাচ্চা নষ্ট করার জন্যে জড়িবুটি খাওয়ায়, আর সিড়িতে তেল ফেলে রাখে তাই তো!

একদম জোঁকের মুখে নুন পড়লো, সরযূ বিস্ফারিত নেত্রে দোতলার বারান্দায় দাঁড়ানো মুখরা বউয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। এখবর তার কাছে কি করে গেলো সেকথা ভাবতে গিয়ে যাকে তিনি দোষী সাব্যস্ত করলেন, সেই মায়া ততক্ষনে তাঁর ধরাছোঁয়ার বাইরে, অগত্যা মনে মনেই তিনি মৃত মায়ার গুষ্টির তুষ্টি করতে লাগলেন।
ক্রমশ

#সেই মেয়েটার উপাখ্যান
#পর্ব ৮
দিন দুয়েক গায়ের ব্যথা মরতে লাগলো, তারপর রতিকান্ত বিছানায় উঠে বসলো, এসময়ে তাকে দেখাশোনা সরলাই করলো, তবে স্বামী কে মারার জন্যে সে যে আদৌ দুঃখিত হয়েছে এরকম কোনো লক্ষণ তার হাবে ভাবে ফুটে উঠলো না।

সুস্থ হয়ে ওঠার পরের সন্ধ্যায় মদের বোতল আর গেলাস হাতে স্বামীর ঘরে ঢুকে এলো সরলা, সেগুলো রতিকান্তের সামনে এগিয়ে দিয়ে কড়া গলায় বললো,

আজ থেকে এখানে বসে খাবে, নিচে নামার বা বন্ধুদের বাড়িতে নিয়ে আসার চেষ্টা করলে এবার একেবারেই মেরে ফেলবো, আগে থেকেই বলে দিলাম। এরকম স্বামী থাকা না থাকা সমান! বয়স অনেক হয়েছে, এবার উড়ে বেড়ানোর দিন শেষ, যা করছো বাড়িতে বসে করো। তোমার গুণকীর্তন অনেকদিন চেপে রেখেছি, আমাকে খবরদার মুখ খুলিও না!

রতিকান্ত বউয়ের কথার কোনো প্রত্যুত্তর করলো না, কিছুক্ষন চুপ করে বসে থেকে গেলাস, বোতল হাতের সামনে টেনে নিলো।

সেদিনের পর থেকেই সরযূ মুখে কুলুপ আঁটলেন, আর কি কি তথ্য নতুন বউয়ের হাতে আছে সেকথা জানার কোনো উপায় বার করতে না পেরে তিনি ভাই বউয়ের পরামর্শ নিতে বাপের বাড়ি যাওয়া মনস্থ করলেন। গিন্নীর মাধ্যমে এখবর প্রতাপ সান্যালের কানেও পৌঁছালো, সরযূ যখন হন্তদন্ত হয়ে তাঁর ঘরে উপস্থিত হলেন তিনি তখন একটি গুরুত্বপূর্ন মামলার শুনানির জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। সরযূ চোখ মুখ ঘুরিয়ে স্বামীর মুখের সামনে হাত নেড়ে বললেন,

ওই মামলা মামলা করে বসে থাকো, এদিকে ঘরে যে সব্বোনাশ হয়ে যাচ্ছে তার দিকে কোনো লক্ষ্য নেই!

প্রতাপ সান্যাল মুচকি হাসলেন, একটু আগের কথোপকথন তাঁর কানেও গিয়েছিলো, বউ এবং গিন্নী কারো গলায়ই জোর কম নেই! তিনি উকিল মানুষ, কোনটা কাজের আর কোনটা অকাজের কথা তার পার্থক্য দিব্যি করতে পারেন। তাঁকে হাসতে দেখে সরযূ ক্ষুব্ধ হলেন, বিরক্তির গলায় বললেন,

বলি, হাসছো যে বড়ো! একবার ভেবে দেখেছো সবটা! এই কথাগুলো বাইরের লোকের কানে গেলে কি হবে! বাড়ির বউয়ের কি গলা! গোটা পাড়া শুনিয়ে কেচ্ছা গাইছে গো! আর কি কি জানে কে জানে! হতচ্ছাড়ি মায়া, মরার আগে কি কি উগরে গেছে কে জানে! আগের বউ বেঁচে আছে, এখবরও জানে কিনা সেতো বুঝলুম নে! সেসব কথা পাড়া পড়শীর কানে একবার গেলে, আর তো পাড়ায় মুখ দেখাতে পারবো নে! আত্মীয় স্বজনও তো সব এক একটা ধুরন্ধর, এক্ষুনি খবর নেবার জন্যে সোহাগ দেখাতে এসে পড়বে!

টেবিলের ওপরে রাখা ফাইল গোছাতে গোছাতে সান্যাল মশাই মাথা নাড়লেন,

আহ! তোমার বয়সই হয়েছে গিন্নী, বুদ্ধি একটুও পাকে নি! তুমি তোমার বাপ, শ্বশুর, স্বামীর তো নাম ডোবালে দেখি! মায়া মরেছে আজ কতকাল হলো বলো তো? এতদিন যখন সে খবর সে মুখ দিয়ে বার করে নি, আগামী দিনেও করবে না। এসব তো শুধু তোমাকে একটু দাবড়ে রাখার চেষ্টা, ওসব কথায় ভয় পেলে চলবে না। যদি তার সত্যি কিছু করার থাকতো, তাহলে সে যা মেয়ে এতদিন চুপ করে বসে থাকতো ভেবেছো? আর একটু মাথাটা খাটাও, নাহলে জাঁদরেল উকিল প্রতাপ সান্যালের বউ কিসে! সে যথেষ্ট চালাক চতুর মেয়ে, যদি জেনেও থাকে যে তার সতীন বেঁচে আছে, তাহলেও মুখ বন্ধই রাখবে, কারণ এক বউ বেঁচে থাকতে আবার বিয়ে করা আইন মতে অবৈধ। আর এই বিয়েটাই যদি না থাকে, তাহলে আর কিসের জোরে এখানে পড়ে থাকা! যাবার জায়গা যদি থাকতো, তাহলে সে কবেই চলে যেতো!

এতক্ষনে বুদ্ধি খুললো সরযূর, সত্যিই তো! এদিকটা তিনি একদমই ভেবে দেখেন নি! বউয়ের বেঁচে থাকার খবর ছড়ালে যে আদতে সরলারই ক্ষতি সেটা একবারের জন্যেও তাঁর মাথায় আসে নি। উৎফুল্ল গলায় তিনি স্বামী কে উদ্দেশ্য করে বললেন,

সত্যি গো! সাধে তোমায় লোকে এতো পয়সা দিয়ে কেস লড়তে ডেকে নিয়ে যায়! তবে মেয়ে কতো ঘোড়েল দেখেছো! সব জেনেশুনে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে! এই কথাটা যদি একবারের জন্যেও এতো বছরে মাথায় আসতো, তাহলে কবে এ বউ কে আমি কড়কে দিতুম গো!

সঙ্গে সঙ্গেই সান্যাল মশাই হাত তুললেন,

এই তো! তোমায় নিয়ে আর পারা যায় না! এই বুদ্ধি নিয়ে তুমি সংসার চালাবে? এখন এতদিন পরে এই কথা নিয়ে তুমি বউ কে বশে রাখবে ভেবেছো? আরে বাবা! বউয়ের ক্ষতি কি তোমার ক্ষতি নয়? আগের বউ বেঁচে আছে এ খবরে বউ বাড়ি ছাড়া হলেও তোমার, আমার কপালেও তো জেলের ঘানি লেখা থাকবে গো! আর তার ওপরে উপরি পাওনা ওই বিষধর মেয়ের বাড়িতে ফেরত আসা! সুঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোবে! ওসব নোংরা মেয়েরা একবার বাড়িতে পা দিলে আর ফেরত পাঠাতে পারবে ভেবেছো? এখন আবার তার সঙ্গে তার মেয়ে আছে, সে যদি জানতে পারে তার মা বেঁচে আছে, সেতো মায়ের দিকে ঝোল টেনেই কথা বলবে নাকি!

কর্তার কথার যৌক্তিকতা অস্বীকার করা সান্যাল গিন্নীর পক্ষে সম্ভব হলো না, কিছুক্ষন ভেবে কূলকিনারা না পেয়ে তিনি নিচু গলায় চোখের জল মুছতে মুছতে কর্তার উদ্দেশ্যে বললেন,

বাপ, ঠাকুর্দার ভিটে তে ওই মেয়ের জন্যে পা পড়াই বন্ধ হয়ে গেল আমার! বাপের বাড়ি বলে আর কিছুই রইলো নে! বাপ মরা ছেলেটা সুস্থ হলো কিনা, ভাই বউটাই বা কি করছে, কিছুই খবর পেলুম নে! কবে থেকে ভাবছি, এট্টু দেখে আসি, তা ওই বউ আর ছোটো ছেলের জন্যে উপায় নেই কো! বাপের বাড়ির নাম টুকু তাদের সামনে উচ্চারণ করা যাবে নে! আমি শাওড়ি না বউ মাঝে মাঝে ঠাওর হয় নে কো! এ বাড়িতে তারে আসতে দিবি নে, তা দিসনে বাপু, তাবলে আমায় যেতেও বাধা দিবি!

গিন্নীর চোখের জলে প্রতাপ সান্যাল দুঃখিত হলেন,

আহা, আবার কান্না কাটি কেনো! তুমি আমার সঙ্গে চলো, কোর্টে যাবার পথে তোমায় নামিয়ে দিয়ে যাবোখন! রতন কে এ বাড়িতে ঢুকতে বারণ করেছি, তাবলে তোমার যেতে তো কোনো বাধা নেই!

সরযূ খুশি হলেন, তাঁর চোখের জলে যে স্বামীর মন গলবেই তা তাঁর জানা ছিলো। সেই কবে থেকেই তো স্বামী কে বশে রাখার জন্যে তিনি আশা র দেওয়া জড়িবুটি প্রয়োগ করে আসছেন! তাড়াতাড়ি তৈরি হতে শুরু করলেন তিনি, আবার বেশি দেরি করলে পাছে স্বামীর মন পাল্টে যায়। আর এটাই তাঁর বাইরে বেরোনোর একমাত্র সুযোগ ছিলো, শ্বশুরের মুখের ওপরে যে সরলা কোনো কথা বলবে না সেটা তিনি ভালো করেই জানতেন। একবার বাপের বাড়িতে যাতায়াত শুরু হলে আবার ভাই বউ, ভাই পো কে বাড়িতে ডাকতে কদ্দিন! ওটুকু তিনি আস্তে আস্তে সময় মতো করেই নেবেন।

তিনি যখন সেজেগুজে তৈরি হয়ে পান মুখে দিয়ে দোতলা থেকে নিচের উঠনে নেমে এলেন, তখন ছেলে রতিকান্ত কলঘর থেকে বেরিয়ে উঠোন পেরিয়ে দোতলার সিঁড়ির দিকে এগোচ্ছিল, মা ছেলের মুখোমুখি দেখা হয়ে গেলো। ছেলের মার খাওয়া, কালশিটে পড়া চেহারা দেখেই বউয়ের ওপরে নতুন করে রাগ হলো সরযূর, ছেলের গায়ে হাত বুলিয়ে কাছে ডেকে বললেন,

একি চেহারা হয়েছে বাবা তোর! তোকে যে একটি বার দেখতে যাবো, তা আর ওই মেয়ের জন্যে সাহস করে উঠতে পারছি নে! যা মুখ! মুখের কোনো লাগাম নেই গো! আমারই পোড়া কপাল, না হলে দেখেশুনে এরম মেয়ে আনি! তখন গাঁয়ের লোকজন কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো, আমিই তাদের সঙ্গে ভয়ে কথা কই নি কো! কি ভুল যে করেছি! সারা জীবন জ্বলে পুড়ে মরা ছাড়া আমাদের মায়েপোয়ের কোনো উপায় নেই কো!

রতিকান্ত ছলছল চোখে চুপ করে সুবোধ বালকের মতো মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো, ছেলের চোখে জলের আভাস সরযূ কে ক্ষুব্ধ করে তুললো, গলা নামিয়ে ছেলের মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললেন,

তোর বাপ বলে একে নাকি কিছু করা যাবে না! তা হ্যাঁ রে বাবা, সত্যিই কি তাই! কোনো উপায় নাই! এতো বন্ধু তোর, তারা কিছু করতে পারবে নে? একে বিদেয় করতে পারলে তোর আবার বিয়ে দিতাম আমি, কবে থেকে একটা সোনার চাঁদ নাতি দেখার সাধ! এই বাঁজা বউয়ের জন্যে কপালে আর বংশধর জুটলো না আমার, সান্যাল দের এতো সম্পত্তি সব পাঁচ ভূতে লুটে পুটে খাবে গো!

থাক না মা! দোষ তো আমারই, আমি অন্যায় করেছি, তাই এসব হয়েছে! ওসব মাতাল বন্ধুদের আর বাড়িতে আনবো না! আমি একা বাড়িতে বসে খেলে ওর কোনো আপত্তি নেই, সে ও আমাকে বলে দিয়েছে! তুমি আর এসব ব্যাপারে মাথা ঘামিও না তো! বয়স হয়েছে, এবার একটু ঠাকুর দেবতা নিয়েই থাকো! সন্ধ্যেবেলায় হরিসভা তে আর যাওনা নাকি?

বিরক্ত গলায় মা কে থামিয়ে দিয়ে বললো রতিকান্ত। ছেলের কথা শুনে হতবাক হয়ে গেলেন সরযূ, যার জন্যে চুরি করি সেই বলে চোর! হলো কি রতির! দু দিন আগেই যে বউয়ের হাতে এরকম মার খেলো সে আজ বউয়ের হয়ে কথা বলছে!

এ আমার তুমি কি করলে ঠাকুর! তোমার নিত্য পুজোয় কোনো ব্যাঘাত ঘটতে দিই নি আজ পর্যন্ত, আর তুমি আমার ছেলে কে পর করে দিলে! আমার এতো দিনের নিত্য পুজোর কি কোনো দাম থাকলো না!

বলতে বলতে মুখে আঁচল চাপা দিয়ে ছুটে গিয়ে ঠাকুর ঘরে উপুড় হয়ে পড়লেন সরযূ, বউ তাঁর আদরের ছেলে কে হাত করে ফেলেছে, এ খবর মেনে নেওয়া তাঁর পক্ষে কিছুতেই সম্ভব ছিলো না।

দিন তিনেক ধরে প্রায় দিনই সোমা হোস্টেলে ফিরতে দেরি করছে, অদ্বিতীয়া লক্ষ্য করছিলো। আজও হোস্টেলে ফিরে হাত, মুখ ধুয়ে তার খাওয়া শেষ হয়ে গেলো প্রায়, তখনো সোমা ফিরলো না! আর কিছুক্ষন পরেই হোস্টেলের গেট বন্ধ হয়ে যাবে, সব ছাত্রীরাই মোটামুটি ফিরে এসেছে, বেশ চিন্তা হচ্ছিলো ওর। টেবিলে বসে খেতে খেতে বারবারই বাইরের দরজার দিকে চোখ চলে যাচ্ছিলো অদ্বিতীয়ার, ওকে উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাঁধুনি দিদি এগিয়ে এলো,

বন্ধু কই তোমার? প্রতিদিন দেরি করে খেতে আসছে! এতক্ষন ধরে বিকেলের খাবার দিতে হলে, রাতের রান্না শুরু করবো কখন!

আসছে এক্ষুনি! ও হাত, মুখ ধুচ্ছে!!

তাড়াতাড়ি উত্তর দিলো অদ্বিতীয়া, বেশি দেরি হলে যদি খাবার শেষ হয়ে যায়!! তাহলে তো রাত পর্যন্ত সোমা কে না খেয়েই থাকতে হবে! আগে কখনো মিথ্যে বলেনি ও, ও মিথ্যে কথা বলছে এটা জানলে ছোট কা খুব রাগ করবেন! মনে মনে শঙ্কিত হচ্ছিলো অদ্বিতীয়া।

সন্ধ্যের ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতি দেখতে আসেন সুপার দিদি, আজ যখন তিনি খাতা নিয়ে এসে দাঁড়ালেন, তখনো সোমা ফেরেনি! সোমার নাম ডাকা সত্বেও কোনো উত্তর না আসায় সবাই অদ্বিতীয়ার দিকেই তাকালো, ওর সঙ্গেই যে সোমার বন্ধুত্ব টা বেশি সেটা এখানে সবাই জানে!

সোমা কোথায়? ওকে ডেকে নিয়ে এসো,

অদ্বিতীয়া মনে মনে প্রমাদ গুনলো। উঁচু ক্লাসের দিদিরা সারা হোস্টেল তন্ন তন্ন করে খুঁজে এসে জানালো, সোমা কে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না! চারদিকে হৈ চৈ পড়ে গেলো, সুপার সবাই কে ডেকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। কিছুক্ষন পরেই রান্নাঘর থেকে রাঁধুনি উপস্থিত হলো, আজ সন্ধ্যে বেলা ফিরে সোমা খায় নি, এই খবর জানানোর সঙ্গে সঙ্গে সে অদ্বিতীয়ার দিকে আঙুল তুললো, জানালো, অদ্বিতীয়া তাকে জানিয়েছিল যে সোমা হাত, মুখ ধুচ্ছে, কিছুক্ষনের মধ্যেই খেতে আসবে!
ক্রমশ