সেই মেয়েটার উপাখ্যান পর্ব-৯+১০

0
170

#সেই মেয়েটার উপাখ্যান
#পর্ব ৯
ইস্কুলের টিফিনের সময় অদ্বিতীয়ার ডাক পড়লো বড়দির ঘরে, গত কাল রাত থেকে মনের মধ্যে চেপে রাখা আশঙ্কা যে সত্যি হতে চলেছে পিয়া বুঝতে পারছিলো। কাল যখন সোমা বেশ দেরি করে ফিরে এলো হোস্টেলে, তার আগেই সুপারের জেরার মুখে অদ্বিতীয়া স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলো যে সে আসলে শুধুমাত্র বন্ধু কে বাঁচাতে মিথ্যে কথা বলেছিলো রাঁধুনি কে।

সুপার কিছু বলেন নি, শুধু থমথমে মুখে কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে দেখে সোমা কে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার বেশ খানিকক্ষণ পরে সুপারের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সোমা জানিয়েছিল যে সুপার ওর বাবা কে ডেকে পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন। সোমার চোখে মুখে ভয়ের বিন্দুমাত্র ছাপ না থাকলেও পিয়া সারা রাত দু চোখের পাতা এক করতে পারে নি।

বড়দি, ভেতরে আসবো?

নিচু গলায় প্রশ্ন করলো অদ্বিতীয়া, ঘরের ভেতরে বড়ো টেবিলের উল্টো দিকে বসে থাকা শান্ত, দোহারা চেহারার ভদ্রমহিলা মাথা তুললেন, চশমার ভেতর দিয়ে তাকিয়ে ঘাড় নাড়লেন,

এসো!

আপনি আমাকে ডেকেছেন?

কলকাতা থেকে তোমার ছোটো কাকা কেনো তোমাকে এখানে পাঠিয়েছেন জানো? কারণ তিনি চান তুমি একজন ভালো মানুষ হও! পড়াশোনায় ভালো হওয়ার মতোই মানুষ হিসেবে ভালো হওয়াটাও খুব জরুরী। আর তার প্রথম ধাপ হলো সৎ হওয়া, সত্যি কথা বলা! ভবিষ্যতে আর কোনোদিনও এরকম ভুল করবে না আশাকরি!

অদ্বিতীয়া মাথা নাড়লো, ভবিষ্যতে এই ভুল আর কখনো হবে না জানিয়ে সে ক্লাসে ফিরলো। মনের মধ্যের কাল থেকে জমে থাকা বোঝাটা যেনো এক নিমেষে হালকা হয়ে গেলো পিয়ার, এতো অল্পের ওপর দিয়ে সে ছাড়া পেয়ে যাবে এটা তার ধারণা ছিলো না। সোমা কে যেহেতু কেউ তরুণের সঙ্গে দেখতে পায় নি তাই এ যাত্রা সেও বেশ কিছু বকা ঝকা র পরে মুক্তি পেলো, রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে তারা দুজনে ছাদে উঠে এলো।

যদি সত্যি তোর বাবা কে বড়দি ডেকে পাঠাতেন! কি হতো তাহলে?

অদ্বিতীয়ার চিন্তা ফুৎকারে উড়িয়ে দিলো সোমা,

ভালোই তো হতো! আমাকে ইস্কুল থেকে বার করে দিলে আমি আবার কলকাতা ফিরে যেতাম!! তরুণের সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হতো, আমার এখানে থাকতে একটুও ভালো লাগে না!

মনের মধ্যে একটা কষ্ট ফিরে এলো পিয়ার, সোমা কলকাতা ফিরতে চায়, কিন্তু ও তো চায় না। ওখানে ওর জন্যে কেউ অপেক্ষা করে বসে নেই! তাই এমন কিছু আর ও কখনো করবে না যার জন্যে ওকে বাড়ি ফিরে যেতে হয়!

আচ্ছা বলতো বড়দি আমাদের ছেড়ে দিলো কেনো?

পিয়া ঘাড় নাড়লো,

জানি না!

তোর ছোট কার জন্যে! বড়দি তো বিয়ে করে নি, নিজের বাড়িতে বাবা, মা মারা যাবার পরে একটা অনাথ আশ্রম খুলেছে! তোর ছোটো কাকা ওখানে মাঝে মাঝেই আসে, তোর কাকার সঙ্গে বড়দির প্রেম আছে!!

অদ্বিতীয়া একদম অবাক হয়ে গেলো, রীতিমত রাগের গলায় বললো,

বড়দির সম্বন্ধে এরকম বাজে কথা বলিস না! কে বলেছে এসব কথা তোকে! ছোট কা আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে!!

সেতো এখন! কিন্তু বড়দি কে তো তোর ছোটো কাকা আগে থেকেই চেনে! তুইই তো বলেছিস! তাহলে? কি করে চেনে জিজ্ঞেস করেছিস কখনো?

পিয়া থমকে গেলো, সত্যিই তো ছোট কা বড়দির পরিচিত ও জানতো, কিন্তু কিভাবে পরিচিত সেটা জানা হয়নি কখনো! আগে তো কোনোদিনও ওদের বাড়িতেও ও দেখেনি বড়দি কে! তাহলে কি সোমা ঠিক বলছে!

আগে থেকে চেনে মানেই কি প্রেম করে! কেউ কাউকে আগে থেকে চিনতে পারে না!

খানিকটা ভাঙা গলায় বললো অদ্বিতীয়া, কান্নায় ওর গলা বুজে আসছিলো। বাড়িতে একমাত্র এই মানুষটাই শুধু ওর ছিলো, এখন সেখানেও ভাগ হতে দেখার সম্ভাবনায় নিজের চোখের জল ধরে রাখা ওর পক্ষে সম্ভব হচ্ছিলো না।

না তা কেনো! আগে থেকে চিনলে প্রেম হয়না এটা ঠিক! তবে টুয়েলভ এর দিদিরা বলছিলো এটা একদম সত্যি!! তোর কাকা আর বড়দি একসঙ্গে কলকাতায় কলেজে পড়তো! তুই এখানে ভর্তি হওয়ার অনেক আগে থেকেই তোর কাকা এখানে আসে, সবাই দেখেছে।

চেনা লোকের সঙ্গে দেখা করতে আসতেই পারে, তাতে কি হয়েছে!

নিজের সপক্ষে যুক্তি তৈরি করার জন্যে শেষ চেষ্টা করলো পিয়া, সোমা হাত নেড়ে থামিয়ে দিলো,

থাম তো!! ছেলে, মেয়ে আবার বন্ধু হয় নাকি! এখানে সবাই জানে সব কিছু! বড়দির জন্যেই তোর কাকা বিয়ে করে নি, বড়দিও করে নি। তুই কিছুই বুঝিস না! তোর কি মনে হয় কাল যা হয়েছে সেটা অন্য কেউ হলে বড়দি বা সুপার দিদি ছেড়ে দিতো আমাদের? বার করে দিতো ইস্কুল থেকে কালই! নেহাত আমার বাবা কে ডেকে পাঠালে তুই ও জড়িয়ে যাবি, তাই এ যাত্রা ছাড় পেলাম! তোর জন্যেই হলো সব কিছু, বুঝেছিস সেটা! আহ! আর তরুণের সঙ্গে দেখা করতে আমার কোনো অসুবিধা হবে না, তুই সবটা সামলে নিবি, বুঝলি তো?

অদ্বিতীয়া চুপ করে গেলো, ওর ছোট কা ওর সঙ্গেই আরো কাউকে ভালোবাসে এটা মেনে নেওয়া কিশোরী মেয়েটির কাছে যতো টা কষ্টের ছিলো, ঠিক ততোটাই খারাপ লাগা ছিলো বন্ধুর এই মানসিকতায়। সোমা যে তাকে ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ পূরণের চেষ্টা করছে এটা তাকে আরো বেশি করে কষ্ট দিলো। জন্ম থেকে ভালোবাসা না পাওয়া কিশোরীটি এই নতুন তথ্যগুলি সামনে আসার পরে আরো বেশি করে নিজেকে গুটিয়ে ফেললো, পৃথিবী তে ওকে যে ভালোবাসার কেউ নেই এই ধারণাই তার মনে গেঁড়ে বসলো।

ভাই বউয়ের সামনে বসে বিলাপ করেই চলেছিলেন সরযূ, রতিকান্তের মতো ছেলে যে বউয়ের বশ হতে পারে এ তাঁর কল্পনাতেও ছিলো না।

দু দিন আগে যার হাতে মার খেলি, তার কথাই তোর বেদ বাক্য হলো! মা যে তোকে দশ মাস পেটে ধরলো তার কথা একটুও মনে হলো না!

হ্যাঁ গো ঠাকুরঝি! তোমার ঐ আশা এখনো তোমায় আলতা পরাতে আসে? ওই কিছু দিচ্ছে নাতো বউয়ের হাতে?

চিন্তিত গলায় মতামত দিলো ভাই বউ, সরযূ অবাক হলেন,

আশা! সে এরম করতে পারে! খানিকক্ষন ভাবলেন তিনি, তার এতো বছরের কাজের লোক মায়া যদি মরার আগে তাঁর এতো বড় সব্বনাশ করে যেতে পারে, তাহলে আশা তো কোন ছার! দুটো পয়সার লোভে একাজ করা এমন কিছু কঠিন নয়!

ঠিক বলেছো বৌদি, দাঁড়াও বেটি আসুক সামনের হপ্তায়, ওকে দরজা থেকেই বিদেয় না করেছি তো আমার নামও সরযূ নয়!

দাঁতে দাঁত পিষে বললেন সরযূ, আশা র ওষুধ যে ভালোই কাজ করে সেকথা তিনি মন থেকে বিশ্বাস করেন। সরযূর ভাই বউয়ের সন্দেহ তালিকায় আরো একজন ছিলো, সে বাড়ির বামুন ঠাকুর। সাধারণত রতিকান্ত কে খেতে দেওয়ার কাজটা সেই করে, সুতরাং তার সাহায্য ছাড়া সরলার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। সরযূও একমত হলেন, এতো লোক কে সন্দেহ তালিকায় রাখার পরে তিনি বুঝতে পারলেন যে বাড়িতে বিশ্বাসযোগ্য আর কেউ নেই।

না আছে রূপ, তার না আছে গুণ, ওই তো চেহারা! ওই দিয়েই আমার ছেলেটা কে বশে এনে ফেললো গো! আগের বউটার তবু রূপটা ছিলো, এর তো ওই বনেদিয়ানা টুকু ছাড়া কিছুই নেই!

কপাল চাপড়ে হা হুতাশ করছিলেন সরযূ, আগের বউ এর বিয়ের আগের বাড়ি ঘর, বংশ সম্পর্কে কিছু জানা না থাকলেও সে যে চুপচাপ নিজের ঘরেই পড়ে থাকতো, সরযূর সামনে মুখ তুলেও তাকাতো না সেকথা স্মরণ করে তাঁর বিলাপ ক্রমশই বাড়ছিলো। এই সরলার থেকে সে যে রূপে গুনে হাজার গুণ ভালো ছিলো সেসব এখন মনে আসছিলো তাঁর। তাঁর রূপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন ভাই বউও, ননদের কথায় তাল মিলিয়ে বললেন,

সে এক্কেরে ঠিক কথা ঠাকুর ঝি! মেয়ে কে দেখলেই সে কথা বোঝা যায়! এক্কেরে মায়ের মুখ কেটে বসানো, এই বয়সেই কি সুন্দর হয়েছে, চোখ ফেরানো দায়!

একথা যদিও সরযূর পছন্দ হলো না, তাড়াতাড়ি বললেন,

তোমার চোখে ন্যাবা হয়েছে বৌদি! সান্যাল বাড়ির মেয়ে নাকি তার মায়ের মতো দেখতে! ও এক্কেরে আমার রতির মতো মুখের ভাব, দেখলেই বাপের মেয়ে বলে চেনা যায়! কিন্তু আমার কপাল দেখো! মেয়ে না হয়ে ছেলে হলে তো আমার বংশ টা রক্ষা হতো! ওই সুন্দরী নিয়ে কি আমি ধুয়ে খাবো গো!

বাড়ি ফিরে থেকে সরযূ বউ কে একটা কথাও বললেন না, বেস্পতিবারে আশার আসার অপেক্ষায় চুপ করে বসে থাকলেন, সরলাও আর মুখ খুললো না, মা ছেলের কথোপকথন সে না শুনতে পেলেও তার পরে ঠাকুর ঘর থেকে আসা শাশুড়ির বিলাপ তার কানে গিয়েছিলো। দেখতে দেখতে বেস্পতিবার এসে গেলো, বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যের দিকে আশা আলতা পরাতে উপস্থিত হলো,

মা! কই গো!

নিচের থেকে ডাক শুনে সরযূ নিচে নেমে এলেন, তাঁর গম্ভীর মুখ আশার মনে ভয়ের সঞ্চার করলো,

কি হয়েছে মা? মুখ এতো গম্ভীর কেনো? শরীর গতিক ঠিক আছে তো?

আশার এই নিরীহ প্রশ্ন টুকুই সরযূর মনে রাগের সঞ্চার করলো, রীতিমত উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন,

কেনো? শরীর খারাপ হবে কেনো? তুই কিছু দিচ্ছিস নাকি বউয়ের হাতে? এবার আমাকে সরানোর কোনো ছল করছিস বুঝি? তা নতুন বউ তোকে দিচ্ছে কতো?

আশা কিছুই বুঝতে না পেরে থতমত খেলো,

কি দেওয়ার কথা বলছো মা? তোমার নুন খেয়েছি সেই কবে থেকেই, আর জেনেশুনে কিনা তোমার সব্বনাশ করবো! ছি ছি! এমন চিন্তা মনে আনাও পাপ! নতুন বউয়ের সঙ্গে তো আলতা পরানো টুকু ছাড়া একটা কথাও বলি নে কো!!

তাই বুঝি! তবে আমার ছেলে ওই বউয়ের কথায় বশ হচ্ছে কি ভাবে? আমি কিছুই বুঝিনা ভাবিস?

প্রায় তেড়ে উঠলেন সান্যাল গিন্নি, আশা মহা বিপদে পড়লো, তার যতটা না তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় তার থেকেও বেশি অন্য কে তার বদলে বউয়ের হাতে ওষুধ তুলে দিচ্ছে সেই চিন্তায়।

এর পরে যদি আর একটুকরো ওষুধও ওর হাতে তুলে দিয়েছিস তবে এ বাড়িতে তুই কি করে আর পা দিস আমিও দেখবো,

আলতা পরা শেষ হয়ে গিয়েছিলো, আশা কে মনে মনে গালি গালাজ করতে করতে সিঁড়ির দিকে এগোচ্ছিলেন সরযূ, এমন সময় ঠাকুর ঘর থেকে সরলা বেরিয়ে এলো। বউ কে আশার দিকে এগোতে দেখেই দুজনের কথোপকথন শোনার চেষ্টায় সরযূ অন্ধকার সিঁড়িতে থমকে দাঁড়ালেন। সরলা আশার সামনে পিঁড়ি পেতে বসলো, পা দুটো সামনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

তোমার আলতার জোর আছে আশা দিদি! পা দেখে এ বাড়ির বড়ো ছেলের তো চোখের পলক পড়ে না গো! সে তো বাইরে যাওয়া দূরে থাক, দোতলা থেকে নিচে নামাও ছেড়েছে!

আশা পুলকিত হলো, তার আলতার জোরে মদো মাতাল রতিকান্ত দোতলা থেকে নিচে নামে না , বউয়ের পায়ের দিকে চেয়ে বসে থাকে এ খবরে তার গর্বে বুক ফুলে উঠলো। খানিকটা গর্বের সঙ্গে বললো,

এই বুকে হাত রেখে বলতেছি বউ দিদি, বললে বিশ্বাস যাবে নে, আশার আলতার অপেক্ষায় কতো বউ ঝি বসে থাকে জানো! এ একেবারে অব্যর্থ ওষুধ, স্বামী তোমার আঁচল ধরা হয়ে থাকবে সারা জীবন!

সরযূ এতক্ষন অন্ধকারে দাঁড়িয়ে সবটাই শুনছিলেন, এবার আর ধৈর্য্য রাখতে না পেরে সামনে বেরিয়ে এলেন, আশার দিকে আঙুল তুলে বললেন,

এখন তুই তালে আলতার মধ্যেও এসব মেশাতে লেগেছিস! আমি মিছে বামুনের দোষ ধরে মরি! যা দূর হয়ে যা এখান থেকে, আর কোনোদিনও এ বাড়িতে পা দিবি নে খবরদার! এই এখানে দাঁড়িয়ে বলে দিলুম!

আশা দু একবার কিছু বলার চেষ্টা করলেও সান্যাল গিন্নী শুনলেন না, প্রায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাকে বাড়ির বাইরে বার করে দিলেন। সরলা সব কিছু দাঁড়িয়ে দেখলেও শাশুড়ির কথার কোনো প্রতিবাদ করলো না, বউ ধরা পড়ে গিয়ে ভয়ে চুপ করে আছে বুঝে সরযূ খুশি হলেন। মুখে পরিতৃপ্তির হাসি নিয়ে তিনি ওপরে উঠে যাবার পরে সরলা মুচকি হেসে পাঁচালী হাতে ঠাকুর ঘরে ঢুকে এলো, এতদিনে আশা কে সরানোর চেষ্টায় সে সফল হয়েছে! শাশুড়ি কে সিঁড়ি তে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই সে এই প্রসঙ্গের অবতারণা করেছিলো, আশার এই জড়িবুটি কে সে বড়ো ভয় পায়!
ক্রমশ

#সেই মেয়েটার উপাখ্যান
#পর্ব ১০
পর পর দুটো শনিবারে যখন সুকান্ত ভাইঝির সঙ্গে দেখা করতে এলেন তখন অদ্বিতীয়া একটু চুপ চাপ থাকলো। তার চুপ করে থাকা সুকান্তর নজর এড়ালো না, তিনি অদ্বিতীয়া কে এর কারণ জানতে চাইলেন,

কি হয়েছে তোর পিয়া? বাড়ির জন্যে মন খারাপ লাগছে? এখানে থাকতে ভালো লাগছে না?

অদ্বিতীয়া মাথা নাড়লো,

না! বাড়িতে তো কেউ আমাকে ভালো বাসে না!

সুকান্ত হাসলেন, মনের মধ্যের খারাপ লাগা টা চেপে রেখে বললেন,

কে বলেছে একথা? জানিস সবাই তোর কথা আমি ফিরলেই জিজ্ঞেস করে! আর আমি? আমি তোকে ভালোবাসি না? এটা বলতে পারলি তুই!! তোর জন্যে কতো কষ্ট করে প্রতি শনিবার ছুটে ছুটে আসি!

তুমি এসো না ছোট কা! আমি এখানে ভালো আছি! আমার জন্যে তোমাকে আসতে হবে না প্রতি সপ্তাহে!

একটু অভিমানী গলায় বললো অদ্বিতীয়া, সোমা ওকে বলেছে ওর কাকা ও না থাকলেও এখানে আসবে ঠিক! তাহলে কেনো ওর জন্যে আসে বলে ছোট কা! ও দেখতে চায় ও না বললেও ছোট কা আসে কিনা!

সুকান্ত একটু চুপ করে থাকলেন, ওঠার আগে বললেন,

মন খারাপ করবি না, আমি কিন্তু আবার আসবো শনিবারে!

বলেছি না তোমাকে আসতে হবে না!

একটু জেদের গলায় বললো অদ্বিতীয়া, সুকান্ত অবাক হলেন,

তুই এই ভাবে কথা বলছিস কেনো! আর তোর জন্যে না হলেও আমাকে শনিবারে এমনিতেই আসতে হবে এখানে! তোদের স্কুলের বড়দি একটা অনাথ আশ্রম চালায়, সেখানেও শনিবারে আমার কিছু কাজ থাকে!

তাহলে সোমা ঠিক বলেছিলো! মনে মনেই চমকে উঠলো অদ্বিতীয়া, ছোট কা ওর জন্যে এখানে আসে না! বড়দির অনাথ আশ্রমে আসে বলে ওর খোঁজ নিয়ে যায়। চোখ জলে ভরে আসছিলো ওর, ছোট কার আসা না আসায় আর ওর কিছু আসে যায় না, ও যে কারোর কাছেই বিশেষ মানুষ নয় সেটা আজ ও বুঝে গেছে!

সুকান্ত সত্যিই এই মা হারা মেয়েটির জন্যে ভালো কিছুই করতে চেয়েছিলেন, তাই তাঁর সহপাঠিনী রমার তত্বাবধানে রেখে প্রকৃত মানুষ করার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু তাঁর পক্ষে এটা জানা সম্ভব ছিলো না যে তাঁর অজান্তেই মেয়েটির কাছে বেশ কিছু এমন তথ্য সংগৃহীত হয়েছে যাতে তার এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে কাকা তার জন্যে নয় রমার জন্যেই এখানে আসেন!! সুকান্ত বেরিয়ে যাওয়ার পরে অদ্বিতীয়া ছাদে উঠে এলো, এই মুহূর্তে ওর কারো সঙ্গই ভালো লাগছিলো না।

দিন এগিয়ে চলেছিলো, সে দিনের ঘটনার পরে আশার সান্যাল বাড়িতে পা দেওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। রসিয়ে রসিয়ে বউ কে হাতেনাতে ধরার খবর স্বামী কে দিলেন সান্যাল গিন্নী, প্রতাপ সান্যাল শুনলেন ঠিকই কিন্তু খুব বেশি গুরুত্ব দিলেন না। রতিকান্তর মতো ছেলে যে আশার আলতায় বশ হবার বান্দা নয়, সে তাঁর থেকে বেশি আর কেই বা জানতো!

কিন্তু প্রতাপ সান্যালের ধারণা কে মিথ্যে করেই রতিকান্ত সত্যিই একদম চুপচাপ হয়ে গেলো। এর সঠিক কারণ কারোর জানা না থাকলেও সরলার বশীকরণ এর তত্বই প্রাধান্য পেলো। বাড়ি থেকে বেরোনো, বন্ধুদের বাড়িতে আসা সব কিছুই সরলার জন্যে বন্ধ হয়ে গেলেও রতিকান্তের দিক থেকে কোনো প্রতিবাদ একবারের জন্যেও এলো না। সারাদিন সে দোতলার ঘরে শুয়ে বসে, ছাদে ঘুরে সময় কাটাতো, আর সন্ধ্যে বেলায় সরলার এনে দেওয়া বোতল, গেলাস নিয়ে মদ খেতে বোসতো!

ছেলের ভালো হয়ে থাকা, সুস্থ জীবন যাপন করার চেষ্টা থাকলেও সরযূ তাতে খুশি ছিলেন না। ছেলে, বউয়ের কথা শুনে চললে আখেরে তাঁরই ক্ষতি। বউ, ছেলের সম্পর্ক যত খারাপ থাকবে ততোই তিনি বউ কে দাবিয়ে রাখতে পারবেন। এমনিতেই দাপুটে সরলার কাছে তিনি বিভিন্ন ভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন, সেখানে রতিকান্তর সুস্থ জীবনে ফিরে আসা সরযূ কে সান্যাল বাড়ির ওপরে তাঁর রাশ আলগা হবার চিন্তায় চিন্তিত করছিলো। কিন্তু কিভাবে এই ছেলে কে সরলা বশে এনে ফেললো, সে ব্যাপারে তিনি কোনোই কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। আশা কে তাড়িয়ে কোনো লাভ হয়নি বুঝে এবার বাড়িতে একমাত্র শেষ সন্দেহের ব্যক্তি হিসেবে বামুনের ওপর গিয়েই সন্দেহ পড়লো সরযূর, কোনো প্রমাণ না থাকায় হাতেনাতে ধরার অপেক্ষায় তিনি বউ আর বামুন দুজনের ওপরেই শ্যেন দৃষ্টি রাখতে লাগলেন। সরলা কে তিনি মনে মনে যথেষ্টই ভয় পেতেন, তাই কোনো প্রমাণ ছাড়া এই অভিযোগে বামুন কে তাড়ানোর মতো সাহস দেখানো তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছিলো না।

সরলা একটুও মূর্খ ছিলো না, ছোটো বয়সে বাপ, মা হারিয়ে সে দাদা, বৌদি, ভাই, ভাই বউদের সংসারে রীতিমত গলগ্রহ ছিলো। সংসারে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গেলে ঠিক কি ভাবে নিজেকে সব পরিস্থিতির জন্যে তৈরী রাখতে হয়, তা তার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়েই বুঝেছিলো সরলা। দাদা, ভাই এর সংসারেও কখনো নরমে, কখনো গরমে থেকে সে তার জীবন কাটিয়েছিল, কখন ফোঁস করতে হয় আর কখনই বা মুখ বন্ধ রাখতে হয় সবটাই জানা ছিলো তার। তাকে তার বৌদি, ভাই বউরা যথেষ্টই সমীহ করে চলতো, কোনো রকমে দাপুটে ননদ কে বিয়ে দিয়ে বিদায় করতে পেরে বেঁচেছিল তারা।

এক্ষেত্রেও সরলা নরম, গরমের রীতিই নিয়েছিলো, কখনো শাশুড়ি, স্বামী কে ধমকে, চমকে কখনো বা মুখ বন্ধ রেখে সে তার কাজ গুছিয়ে চলেছিলো, সান্যাল বাড়ি কে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা তার শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিলো। সে জানতো যতক্ষন তার শাশুড়ির পুরনো কাজের লোকজনরা থাকবে ততক্ষন পর্যন্ত সংসারের কর্তৃত্ব পুরোপুরি তার হাতে আসবে না। মায়া অনেক আগেই মরেছিলো, বাকি ছিলো আশা আর বামুন ঠাকুর। বামুন কে তাড়ানোর ইচ্ছে তার খুব বেশি ছিলো না, সে নিরীহ মানুষ, তাকে ধমকে রাখতে পারাই সরলার জন্যে যথেষ্ট ছিলো। আশা কে বিদায় করার পরে সরযূ যেমন বামুনের ওপরে নজর রাখছিলেন তেমনই সরলাও একই কাজ করছিলো, শুধু দুজনের বামুন কে নজরে রাখার কারণ টা ছিলো সম্পূর্ন আলাদা।

ইতিমধ্যেই মাস দুয়েক অতিক্রান্ত হয়েছিল,সেদিন ছিলো রবিবার। সারা সপ্তাহ কোর্ট কাছারি তে ব্যস্ত থাকলেও এই একটা দিন প্রতাপ সান্যাল বাড়িতে দুপুরে খেতে বসেন, রতিকান্ত না হলেও সুকান্ত বরাবরই তাঁর সঙ্গী হন। গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে রতিকান্তও বাবা ভাইয়ের সঙ্গে খেতে বসছিলো, সরলা রান্না ঘরে বসে খাবার বাড়ছিলো, বামুন সে খাবার পরিবেশন করছিলো, আর একটু দূরে একটা উঁচু জলচৌকি তে বসে সরযূ তদারকি করছিলেন। যদিও সরযূ তদারকি না করলেও পরিবেশনে কোনো ব্যাঘাত ঘটতো না, সরলা সব কিছু সুষ্ঠু ভাবেই সেরে নিতো, কিন্তু ওই তদারকি টুকু ছাড়া কিছুতেই সরযূর পক্ষে সম্ভব ছিলো না, কারণ ওটুকুই তাঁর গিন্নীর তকমা ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন ছিলো।

বামুন যখন প্রতাপ সান্যাল এবং তাঁর দুই ছেলের সামনে কাঁসার থালার পাশে তরকারির বাটি সাজিয়ে রাখছিলো তখন সরযূর চোখে পড়লো একটা বাটি তে খানিকটা কালো রঙের কিছু পদার্থ। সরযূ অবাক হলেন, বামুনের দিকে তাকিয়ে বাটি র দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন,

ওটা কি?

বামুন মাথা নাড়লো,

ওই বড়ো বৌমা বানিয়েছেন, ওনাদের দেশের খাবার গেঁড়ি গুগলি!

সরযূ চমকে উঠলেন, তাদের বাড়িতে এসব খাবারের চল কোনো কালেই ছিলো না। সরলা গ্রামের মেয়ে, তার বাপের বাড়ির সংসারে টানাটানি ছিলো বরাবরই, তাই পুকুর থেকে শাক পাতা, গুগলি তুলেই সংসার চলতো। এসব খাবার বিয়ের পরে তার বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো, বনেদী সান্যাল বাড়িতে লুচি, তরকারী, পাঁঠার মাংস, খেতে খেতে একঘেয়ে হয়ে গেলে বাড়ির উঠোনের ছাই গাদার পাশে জন্মানো মান কচু, বামুন কে দিয়ে পুকুর থেকে তুলিয়ে আনা কলমি শাক টুকটাক রান্না করে মুখের স্বাদ বদলাতো সরলা।

কিন্তু সেই স্বাদ বদলানো টুকু তার নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো, সে খাবার সে ভিন্ন বনেদী সান্যাল বাড়ির লোকেরা কখনো ছুঁয়েও দেখেনি, সেও কাউকে কখনো খাবার জন্যে অনুরোধ করে নি। বামুনের রান্না শেষ হয়ে যাবার পরে উনুন খালি পেলে সে শাক ভাজতে বসতো, কচুর ক্ষেত্রে তো রান্না করার প্রয়োজনও পড়েনি কখনো, সে কাঁচা বেটে খেলেই চলতো।

কিন্তু আজকের ঘটনা অন্য রকম ছিলো, সে শুধু যে বামুন কে দিয়ে সেই গুগলি পুকুর থেকে তুলিয়ে এনে ছিলো তাই নয়, রান্নাটাও বামুন কে দিয়েই করিয়েছিল এবং পরিবেশনের সময় সবার পাতে সে খাবার তুলে দিয়েছিলো। সরযূ গুগলি শুনেই ঘেন্নায় নাক কুঁচকে তাকালেন,

ইসস! ছ্যা ছ্যা! এ খাবার মানুষে খায়! ওসব কচু ঘেঁচুই আমাদের বাড়িতে ঢোকেনি কোনোদিনও আর শেষে কিনা গুগলি! কোন ভিখারী বাড়ি থেকে মেয়ে এনেছিলুম রে বাবা! শেষে এদিনও দেখতে হলো!

সরলা তখনো রান্না ঘরের ভেতরে বসে ভাতের থালা গোছাচ্ছিলো, সে বাইরে আসার আগেই সরযূ বামুন কে গুগলির বাটি ফেলে দিতে হুকুম করলেন,

শিগগির বাইরে ফেলে দিয়ে আয়! ছি ছি! যেমন বাড়ির মেয়ে তেমনই তার খাওয়া দাওয়া! কোনো ভদ্রলোকের বাড়িতে এসব খায়, জীবনে শুনি নি বাপু! আর তুই তো জানিস আমাদের বাড়িতে এসব খাবার ঢোকে না, তুই কিছু বলিস নি কেনো?

বামুন চুপ করে রইলো, মুখরা বড়ো বৌমা কে সে যথেষ্ট ভয় পায়। তার নিজেরও এসব রাঁধার খুব বেশি ইচ্ছে ছিলো না তবু খানিকটা বউয়ের ভয়েই সে কাজটা করেছে। তাকে ইতস্তত করতে দেখে সরযূ বিরক্ত হলেন,

কি হলো! কথা কানে যায় না! এখনও দাঁড়িয়ে আছিস যে বড়ো! যা, আগে এসব তুলে ফেলে দিয়ে আয়!

বামুন এগোনোর আগেই মাথায় ঘোমটা দিয়ে শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে সরলা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলো, গুগলির বাটি নিজেই শ্বশুর আর দেওরের পাতের সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে যখন সে উঠে দাঁড়াচ্ছিল তখন সরযূ অবাক হলেন,

ওমা! রতির পাতের সামনে বাটি রেখে দিলে যে! ও এসব খায় নাকি!

সরলা ঘাড় নাড়লো, মৃদু গলায় বললো,

উনিই তো খেতে চেয়েছিলেন! ওনার জন্যেই বানিয়েছিলাম, তাই বাকিদেরও দিলাম!

সুকান্ত বৌদির হাত থেকে গুগলির বাটি কেড়ে নিলেন, তিনি রমার বাড়িতে এসব খেতে অনেকদিন ধরেই অভ্যস্ত ছিলেন, মৃদু হেসে বৌদির দিকে তাকিয়ে বললেন,

আমি খাবো! আমার খুব ভালো লাগে!

রতিকান্ত মুখ নিচু করে খেয়ে যাচ্ছিলো, সে যে সত্যিই খেতে চেয়েছে তা তার মুখের ভঙ্গিতে প্রকাশ পাচ্ছিলো, এখন সুকান্তও খেতে চাইলেন একমাত্র প্রতাপ সান্যাল এসব অখাদ্য কুখাদ্য মুখে তুললেন না! সরযূ কিছুক্ষন দুই ছেলের মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন, সংসার যে তাঁর মুঠোর বাইরে ক্রমশই বেরিয়ে যাচ্ছে তা তিনি স্পষ্টই বুঝতে পারছিলেন। বাড়ির কর্তা সেখানে বসেছিলেন, তাঁর সামনে থাকা সরযূর সাহস বাড়িয়েছিল, সব রাগ তাঁর শেষ পর্যন্ত বামুনের ওপরেই পড়লো,

সংসার আমার! তুই আমার লোক! এরপরের দিন থেকে আমি যা বলবো তার বাইরে অন্য কারো কথায় কোনো রান্না হবে না! এ বাড়িতে থাকতে গেলে আমার কথা শুনে চলতে হবে সবাই কে, যার পোষাবে না সে চলে যেতে পারে!!

বামুনের মুখ শুকিয়ে গেলো, তার তখন শ্যাম রাখি না কূল রাখি অবস্থা। কাকে তোয়াজ করে চললে তার এবাড়িতে থাকা সম্ভবপর হবে সেটা ঠিক করতে না পেরে সে করুন মুখে তাকিয়ে থাকলো। এতক্ষন মাথায় ঘোমটা টানা মৃদু ভাষী সরলা, এই কথার পরে আরো মৃদুভাষী হয়ে শ্বশুর মশাইয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,

এ বাড়িতে দু দুটো উকিল আছেন, তারাই বলুন বাড়ির বউ কে নিজের পছন্দের রান্না করে খাওয়ার অপরাধে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া যায় কিনা! আমি তো কাউকে খেতে জোর করিনি, কেউ যদি নিজে থেকে খেতে চায় তবে আমার দোষ কোথায়? এ আমার শ্বশুরের ভিটে, আমার যা ভালো লাগবে তা আমি করে খাবো, এটুকু কি আমার অধিকার নেই বাবা?

প্রতাপ সান্যাল বিপদে পড়লেন, এইটুকু অধিকার সত্যিই বউয়ের নেই, এটা বলা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিলো না। তিনি তাড়াতাড়ি মাথা নাড়লেন, গিন্নীর রোষ কষায়িত দৃষ্টিকে সম্পূর্ন অগ্রাহ্য করে বললেন,

না না, বৌমা তোমার যা ইচ্ছে রেঁধে খেয়ো! তবে আমাদের বাড়িতে তো এসব আমরা খাইনে, তাই অন্য কারোর পাতে দিওনা!

সরলা মাথা নাড়লো, ঘোমটা কে আরো বিঘৎ খানেক সামনে টেনে এনে মৃদু গলায় বললো,

আমি দিতে চাই নে বাবা! আপনার ছেলে জোর করে চায়! আপনি বরং তাঁকে বারণ করে দিন!

প্রতাপ সান্যাল একটু বিব্রত হলেন, অতো বড় ছেলে কি খাবে, সে ব্যাপারে মতামত দিতে তাঁর বাধলো, আর কোনো কথা না বলে তিনি খাবারে মনোনিবেশ করলেন। খাওয়া দাওয়া পর্ব মিটে যাওয়ার পরে সরযূ গম্ভীর মুখে স্বামীর ঘরে ঢুকে এলেন,

কি সাংঘাতিক মেয়ে! গলায় এক্কেরে মধু ঝরে পড়ছে গো! কে বলবে এই মেয়ের পেটে পেটে এত বিষ! এই করে করেই আমার ছেলেটার মাথা খাচ্ছে গো! আর তোমাকেও বলিহারি যাই! তুমি একটা কথাও কইলে নে! কি সুন্দর বাবা, বাবা করে কাজ হাসিল করে নিলো!

প্রতাপ সান্যাল মাথা নাড়লেন,

কি বলি বলতো! একটু রান্না করে খাবে, তা তোমার অসুবিধেই বা কি? তুমি না খেলেই হলো।

প্রায় তেড়ে উঠলেন সরযূ,

আর আমার ছেলেরা? তারা ওসব অখাদ্য কুখাদ্য খাবে?

ছেলেরা বড়ো হয়েছে, তারা খাবে কিনা তারাই ঠিক করুক!

সরযূ বিস্ফারিত চোখে স্বামীর দিকে তাকালেন, তাঁর স্বামীকেও কি বশ করে ফেললো ওই বউ! এ সন্দেহ তাঁর মনের মধ্যে ক্রমশই দৃঢ় হচ্ছিলো।
ক্রমশ