সেদিন ছিল পূর্ণিমা পর্ব-০৫ এবং দ্বিতীয় অংশ

0
335

| সেদিন ছিল পূর্ণিমা |
| পর্ব:- ০৫ দ্বিতীয় অংশ |

অবন্তীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পেটের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে সে আবারও অজ্ঞান হয়ে গেছে। সাজু আর কিবরিয়া দুজন মিলে ওদের বাসার সামনে গিয়ে তামান্নার কাছেই জানতে পারে। তারপর হাসপাতালে নেবার ব্যবস্থা করেন সাজু। তামান্না নিজেও এসেছে, তার সঙ্গে তাদের ফ্ল্যাটের আরেকটা মেয়ে আছে।

একটু আগে অবন্তীর জ্ঞান ফিরেছে। সাজু তার সঙ্গে কথা বলতে যাবে। কিন্তু তার আগে তামান্না নামের এই মেয়েটাকে বাসায় পাঠানো উচিৎ। বেচারি গার্মেন্টসে চাকরি করে, রাতে ঘুমাতে না পারলে সকালে চাকরিতে যেতে পারবে না।

সাজু তামান্নাকে বললো,

” আপনি বাসায় চলে যান, কালকে সকালে তো আপনার ডিউটি আছে। আমি রাতটা নাহয় এই হাসপাতালেই কাটাবো। ”

” কিন্তু আপনাকে শুধু শুধু…! ”

” সমস্যা নেই, আমার তো দিনের বেলা কোনো তাড়া নেই। তাছাড়া রাত প্রায় দুইটা বেজে গেছে। কিছুক্ষণ পর সাহরির সময় হয়ে যাবে। ”

” ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আপনিও বিপদে পড়ে গেলেন সাজু ভাই। ”

” সেটা তো আপনিও পড়েছেন। যাইহোক, এখন তর্ক বির্তক না করে বাসায় ফিরে যান। আমার বন্ধু বাইকে করে আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে। ”

কিবরিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
” তুমিও বাসায় চলে যাও বন্ধু, সকালে তোমারও তো ডিউটি আছে। তাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে তুমি বাসায় ফিরে যাও। সকালে অফিসে যাবার আগে একবার এসো। ”

তামান্না অবশ্য কিবরিয়ার সঙ্গে গেল না। তার সঙ্গে আরেকটা মেয়ে এসেছে, তাকে নিয়ে সে হাসপাতালের সামনে থেকে একটা সিএনজি নিয়ে চলে গেল। যাবার সময় অবন্তীর মোবাইলটা সাজুর কাছে দিয়ে গেল।

তারা সবাই চলে যাবার পরে সাজু ভাই অবন্তীর কাছে গেলেন। বড় ডাক্তার আগামীকাল সকালে আসবে। জরুরি বিভাগ থেকে আপাতত চিকিৎসা চলছে। সাজুকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল অবন্তী, সাজুর সঙ্গে এটাই তার প্রথম দেখা।

– কেমন আছেন?

– পেটে ব্যথা করছে খুব।

– রাতটা পার হলেই ব্যবস্থা করা হবে। একটু সহ্য করুন, কিছু খাবেন?

– না খাবো না।

– ডাক্তার সন্দেহ করছেন পেটের মধ্যে সম্ভবত ছোট টিউমার সৃষ্টি হয়েছে। রক্ত জমাট বেঁধে এটা নাকি হয়ে থাকে। আমার পরিচিত এক বন্ধুর স্ত্রীর এরকম হয়েছিল।

– তিনি কি বেঁচে আছেন?

– হ্যাঁ। একটা অপারেশন করতে হয়েছে। সম্ভবত আপনাকেও করতে হবে।

– বলেন কি? কতো টাকা লাগবে?

– জানি না, সবকিছুই অনুমান করা। আগামীকাল বড় ডাক্তার অসুক তারপর পরীক্ষা করে দেখা যাবে কি করতে হবে।

– অপারেশন করতে হলে আমি টাকা পাবো কোথায়? আমার গ্রামের বাড়ি থেকে বাবারও ক্ষমতা নেই টাকা দেবার।

অবন্তী কাঁদতে লাগলো। নিজের মনে বলতে লাগলো নানান কথা। সে সুযোগ চায়, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এসেছে ঢাকা শহরে। পেটে ব্যথা অনেকদিন ধরে ছিল কিন্তু কখনো এরকম কিছু সন্দেহ করেনি। শহরে এসে একটার পর একটা বিপদ তাকে ঘরে ধরেছে।

সাজু বললো,
– যদি অপারেশন করতে হয় চিন্তা করবেন না। আল্লাহ যেকোনো একটা ব্যবস্থা করে দেবেন।

★★★

সাজুর ধারণা সত্যি ছিল। টগরকে তারা মারেনি। গুদামঘরের মতো একটা আবদ্ধ ঘরে টগরকে রাখা হয়েছে। সেদিন রাতে টগর যখন তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসে তখন সামান্য বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

সিরাজ নামের যে ভদ্রলোকের কথা হাসপাতালে বলেছিল সেই লোক মূলত এলাকার মোটামুটি এক নেতা। টুকটাক দলীয় জোটের সঙ্গে জড়িত আছে, নিজের হাতে কিছু ছেলেরা আছে। তাদের দিয়ে এলাকার মধ্যে মোটামুটি ক্ষমতা দেখিয়ে বেড়ায়।

টগর যখন দেখা করতে আসে তখন তিনি ছিলেন চায়ের দোকানে। টগর আসার পরে তাকে নিয়ে চলে আসেন পুরনো এই বাড়ির মধ্যে। তারপর সেখানে এসে প্রথমে সিরাজ বলে,

– দে প্যাকেট।

– প্যাকেট ওই মেয়ের কাছে নাই ভাই।

– মিথ্যা কথা, যাকে দিয়ে মাল আননইছি সে নিজের হাতে ওর ব্যাগে রাখছে।

– কিন্তু ভাই আমি ভালো করে জিজ্ঞেস করলাম সে এসব কিছু জানে না।

– মিথ্যা বলে মিথ্যা, তুই যেভাবে পারিস তার কাছ থেকে ওটা আমার কাছে এনে দিবি। নাহলে কিন্তু ওই মেয়েকে আমি শেষ করে দেবো।

– ভালো আমি যতটুকু জানি ততটুকু বলছি। গরীব মেয়ে, চাকরির জন্য শহরে এসেছে। এমন দুই নাম্বারি মালপত্র সরানোর মতো মানসিকতা তার মধ্যে নাই।

– তুই আমাকে জ্ঞান দিস? ওখানে সব মিলিয়ে কুড়ি লাখ টাকার বেশি মালামাল আছে।

– বলেন কি ভাই, এতো টাকা?

– নাহলে কি আমি শুধু শুধু মরিয়া হয়ে আছি?

– কিন্তু ভাই তার কাছে নাই।

– বুঝতে পারছি। মেয়েটাকেই তুলে আনতে হবে। তখন আমার সামনেই তাকে জিজ্ঞেস করবি।

– না তাকে এখানে আনবেন না সিরাজ ভাই। তাহলে কিন্তু আপনাকে যে সম্মান করি সেই সম্মান আর করবো না।

ব্যাস, এতটুকু যথেষ্ট। টগরকে তাই হাত-পা বেঁধে আটকে রাখা হয়েছে। এছাড়া গতি নেই। আজ প্রায় তিনদিন ধরে টগর এখানে বন্দী।

★★★

সাহরির সময় হয়ে গেছে। অবন্তী ঘুমাচ্ছে, সাজু সাহরি খাবার জন্য নিচে নামলো। হাসপাতালে ঢোকার সময় সামনে একটা রেস্টুরেন্ট দেখে এসেছে। ভালো কিছু খাবার পাওয়া গেলে তো ভালো। নাহলে রাস্তার পাশে চায়ের দোকান নিশ্চয়ই খোলা আছে, কারণ এটা ঢাকা শহর।

রেস্টুরেন্টে বসে সাজু ভাত পার্সেল করে নিল। অবন্তী একা একা আছে তাই এখানে বসে খাবার খেয়ে সময় নষ্ট করা যাবে না। খাবার নিয়ে বিল দিয়ে বের হবার সময় সোহাগের সঙ্গে দেখা।

সাজু যেহেতু তার ছবি দেখেছে তখন সঙ্গে সঙ্গে চিনতে পারলো। সাজু থমকে গিয়ে বললো,

– আপনার নাম কি সোহাগ?

– হ্যাঁ কিন্তু কে আপনি?

সর্বনাশ। সাজু দ্রুত হাসপাতালে চলে গেল। সোহাগ যেহেতু আছে সুতরাং সেই তার সঙ্গে আরো লোকজন আছে। সাজু অবশ্য ভালো করে দেখে এসেছে অবন্তীর কেবিনের খানিকটা সামনে সিসি ক্যামেরা আছে।

কেবিনের সামনে এসে সাজু দেখে দরজা খোলা। যাবার সময় সে দরজা বন্ধ করে গেছে। দরজা দিয়ে ভিতরে তাকিয়ে দেখে ভিতরে বেডের উপর কেউ নেই। শূন্য বিছানা পরে আছে।

চলবে….

~~~ মো: সাইফুল ইসলাম