সেদিন মুষুলধারে বৃষ্টি ছিল পর্ব-০৭

0
794

#সেদিন_মুষুলধারে_বৃষ্টি_ছিল
part–7
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

ভাঙা মন নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে সেজুতি।রুমটা প্রচুন্ড অন্ধকার। বাতি নেভানো আছে এজন্য হয়তো রুমে আলো নেই বললেই চলে৷ অন্ধকারে সেজুতির গা ছমছমে করছে। সে বালিশে মুখ গুজে ফোপাচ্ছে৷ তার গায়ের উপর মুহিব নিজের একটা হাত তুলে রেখে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সেজুতির চোখে জল। সে বেশ জোড়ে করেই মুহিবের হাতটা সরিয়ে রাখলো। এরপর কাত হয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরালো। রুমের সঙ্গে এডজাস্ট বারান্দা আর বাথরুম। কাত হতেই বারান্দা নজরে এল। সারা শহর জুড়ে অন্ধকার নেমে এসেছে সেই সাথে তার মনেও নেমেছে ঘোর অন্ধকার! আশেপাশের বাড়িতে ও বাতি নেভানো। তারপর ও কোথা থেকে যেন বারান্দায় এক চিলকে কৃত্রিম আলো এসে বারান্দায় রাখা চেয়ারটার ছায়া মেঝতে ফেলছে। সেদিকে দৃষ্টি তার। অসহ্য যন্ত্রণা বুকে পুষে শুয়ে আছে সে। মন ও শরীর ব্যথায় কাতরাচ্ছে।

সেজুতি বারান্দায় পড়া ছায়াটার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগে, এমন বিষাদময় কেন হলো তার জীবনটা? তার কি সুখ কাম্য ছিলো না? সে কি আশা রাখেনি এমন একজনকে পাবে যে কিনা তার প্রতিটা দিনের ভালো-মন্দের খবর রাখবে। বিকেলে হলে তার জন্য তার প্রিয় খাবার মোগলাই কিনে এনে নিজ হাতে পরম যত্নে খাওয়াবে। রাত হলে রুমে মৃদ্যু আলো কিংবা মোমবাতি জ্বালিয়ে গল্প করবে। সেজুতির কাছে খালি গলায় গান গাওয়ার আবদার করবে। সকালে চুপিচুপি ঘুমন্ত সেজুতির গালে ভালোবাসা একে দিবে! মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে! নিজ হাত আদর করে খাইয়ে দিবে! ভালোবেসে আগলে রাখবে। এমনই কাউকে তো সে চায়! কিন্তু মুহিব কেন তাকে বুঝলো না? নাকি সবাই-ই মুহিবের মতো! সব স্বামীই কি মুহিবের মতো? তার উত্তর জানা নেই। এইসব কথা কাউকে না বলা যায়, না প্রশ্ন করা যায়৷ কিছু কিছু কথা থাকে যেগুলো কাউকে মুখ খুলে বলা যায় না। চাইলেও মুখ দিয়ে বলা যায় না।

সেজুতি উঠে বসলো। মুহিবের দিকে তাকালো সে। দেখে মনে হচ্ছে, বেশ আরাম করে ঘুমাচ্ছে মুহিব। সেজুতির ঘৃণা হতে লাগে তার প্রতি৷

“ঘৃণা এমন এক অনুভূতি যা মনের অন্তরালে বসবাস করে! ঘৃণা অনুভূতিটি মানুষের সবচেয়ে আপন হয় কেননা এই অনুভূতিটি কেবল এক সময়কার আপনজনের প্রতিই জন্মায়। ঘৃণা বানানে যুক্তবর্ণ এসে যেমন উচ্চারণে জটিল করে দিয়েছে তেমনি ঘৃণাও কারো জীবনে চলে এলে তার জীবনটা জটিল করে তুলে।”

ফোস করে দম ফেলে ঠোঁটে ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে সে। আজকে তার বিয়ের দ্বিতীয় দিন। এমন সুন্দর এক স্মৃতি তৈরির দিনে এমন বাজে, অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ মুহিবের কাছ থেকে সে আশা করেনি৷ সেজুতি এবারে শব্দ করে কেদে ফেলে৷

কান্নার আওয়াযে মুহিব ঘুমের মধ্যেই বিরক্ত হয়ে ওপাশ ঘুরতে ঘুরতে বলে উঠে, আহা ডিস্টার্ব করিও না তো!

সেজুতি চুপ হয়ে গেল। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে তার। রাতের শেষ অংশ কেটে গিয়ে হালকা সূর্যের কিরণ দেখা দিচ্ছে। ফযরের আযান ও হয়ে গেছে। সেজুতি সবটা সময় বসেই কাটিয়ে দিলো।
আযান শেষ হতেই সে ওযু করতে গেল। এই বাসায় কি জায়নামাজ আছে? কে জানে? খুজে দেখতে হবে। মনে হয় না থাকবে।

সে বাথরুমে গিয়ে বেশ খানিকটা অবাক হলো। বাসার ড্রয়িং রুমটা দেখে মনে হয়েছিলো এখানে কেউ থাকে না। অফিসের মালামাল রাখা হয়৷ কিন্তু বাথরুমে ঢুকে এই ধারণা বদলে যাবে যে কারো বাথরুমে কেউ একজন সানসিল্ক শ্যাম্পু কিনে এনে রেখেছে৷ সঙ্গে ম্যাচিং সানসিল্ক কন্ডিশনার৷ সাবান অর্ধ ব্যবহৃত। একটা ফেস ওয়াশ ও আছে। ব্যাপার টা অদ্ভুত লাগলো তার। এইসব জিনিস কোন বাড়ির বাথরুমে থাকবে৷ এমন অফিস স্টোর রুমে কেন এগুলো সাজানো? ব্যাপার টা মাথায় ঢুকলো না সেজুতির। সে সাবান ব্যবহার করলো না। গোসল সেরে পরনের সালোয়ার কামিজ টাই পড়ে বের হলো।

কারো ব্যবহৃত জিনিস ইউস করতে পছন্দ করে না সে। ওযু করে বের হতেই মুহিব কাত হয়ে তাকে দেখে নিলো।

মুহিবের ঘুম খুবই পাতলা তা সেজুতি এই দুই রাত তার সঙ্গে থেকেই বুঝে গেছে। সামান্য বাতাস বয়ে যাওয়ার শব্দেও মুহিব জেগে উঠে।

মুহিব তাকে প্রশ্ন করে, এতো সকালে উঠেছো কেন?

— নামাজ পড়ব৷ এই বাসায় কোন জায়নামাজ আছে?

মুহিব সেজুতির কথা শুনে অবাক হলো না কিন্তু মনে মনে বলে উঠে, নরকে কেউ ইবাদত করে না।

উত্তরে বলে উঠে, পাশের রুমে বড় বড় কাগজ আছে। ওগুলোর মধ্যে একটা নিয়ে কাজে লাগাতে পারো৷

সেজুতি হাটা ধরলো। মুহিব আগে পিছু ডাকলো।কিন্তু সে সায় দিলো না৷

এতে কিছুটা হতাশ হয় মুহিব। ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সে আর ঘুমানোর চেষ্টা করলো। উঠে বসে সে। এরপর সিগারেট ধরায়। প্রচুন্ড মাথা ব্যথা করছে সে৷ এক কাপ কড়া করে চা খেলে ভালো হত। রান্নাঘরে কি চা-পাতা আছে কি?থাকলে সেজুতি কে এক কাপ চা বানাতে বলা যায়।

সে সিগারেট শেষ করে আবারো শুয়ে পড়ে। সেজুতি আসে না কেন? এতোক্ষনে তো নামাজ শেষ হওয়ার কথা!!

মুহিব আরো দশ মিনিট অপেক্ষা করে নিজেই উঠে পাশের রুমে গেল।

পাশের রুমের সুন্দর করে বেডরুম সাজানো। দামী বিছানা, দামী বেডশীট। এটাচ বারান্দা ও বাথরুম৷

সেজুতি বারান্দার রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হীম শিতল হাওয়া বয়ে যায় মুহিবের গা বেয়ে৷

সে দ্রুত বারান্দায় গিয়ে খুকখুক করে কেশে নিজের উপস্থিতি জানান দিলো। কিন্তু সেজুতির ভাবান্তর হলো না। সে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷

মুহিব বেশ অবাক হলো। সেজুতি চঞ্চল টাইপের মেয়ে। এক জায়গায় বেশীক্ষন থাকে না। আজ কি হলো তার?
সে পেছন থেকে সেজুতির চুল গুলো আস্তে আস্তে সরিয়ে ডান কাধে রাখতে ব্যস্ত হয়ে রিনরিনে আওয়াজে তাকে ডেকে উঠে, সেজুতি?

সেজুতি কেপে উঠে মুহিবের স্পর্শ পেয়ে।

— কি হয়েছে তোমার?

সেজুতি নিশ্চুপ রইল। মুহিব পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলে, মন খারাপ?

সে কাঠ গলায় উত্তর দেয়, নাহ।

— তাহলে কি হয়েছে? বল আমাকে!

সেজুতি তার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। এতে তাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব কমে আসে।

সেজুতি বলে উঠে, ভালোবাসা শব্দটার মধ্যে কি আলো প্রভাব ফেলে? যেমনটা গাছের জন্য আলো প্রভাব ফেলে?

মুহিব তার কথার আগা-মাথা বুঝতে না পেরে বলে উঠে, বুঝলাম না?

সেজুতি কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বলে উঠে, না বোঝার মতোন কিছুই বলি নি তো। আমার মনে হয় ভালোবাসা শব্দের মধ্যে আলো প্রভাব ফেলে। দিনের আলোতে ভালোবাসি বলতে মনের বল দরকার এবং দিনের আলোতে এই শব্দটা অত্যন্ত পবিত্র হয় কিন্তু রাতের আধারে ভালোবাসি শব্দটা বোধহয় সবচেয়ে কুৎসিত।

এরপর সরাসরি মুহিবের দিকে তাকিয়ে বলে, এবং যে কাউকে এই কথাটা রাতে বাতি নিভিয়ে বলা যায় তাই না?

মুহিব সেজুতির কথায় ঘাবড়ে যায়। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না৷

সেজুতির চোখে অশ্রু টলমল করছে সে।

সে ক্লান্ত গলায় বলে উঠে, জুই কে হয় তোমার?

জুইয়ের নাম সেজুতির মুখে শুনে ভুত দেখার মতো চমকালো মুহিব। হুট কিরে গা ঠান্ডা হতে লাগলো। হাত বরফের মতো জমে গেল।

— জুইয়ের সঙ্গে কি অন্যায় করেছো?

মুহিব শুকনা ঢোক গিলে বলে, অন্যায়? কি অন্যায় করব? আর জুই! ওর কথা কিভাবে জানলে তুমি?

— কালকে রাত্ব তুমিই ওনার প্রসঙ্গে কথা বলেছো। কে হয় জুই তোমার? গার্লফ্রেন্ড?

মুহিব শুকনো হেসে বলে, ক্লাস মেট। আমার কাছে সেমিস্টার ফি ধার চেয়েছিলো। আমি দেইনি। ভেবেছিলাম এমনি ধার চাচ্ছে। পরে জানতে পারি মেয়েটা আসলেই অভাবী। আমি টাকা না দেওয়ায় ও ভার্সিটি থেকে ড্রপ আউট করেছে৷ এজন্য আই ফিল গিল্ড।

— তুমি বুঝি চ্যারেটি খুলে রেখেছো? সবার পড়ার খরচ বুঝি তোমার মাথার চিন্তা?

— তুমি কি আমার কথা বিশ্বাস করছো না? (মুহিব)

— করেছি।

আচমকা মুহিব বলে উঠে, সেজুতি! দিন হোক রাত হোক অমাবস্যা হোক, পূর্নিমা হোক বা যেটাই হোক না কেন! ভালোবাসায় কোন কিছুর প্রভাব পড়ে না। ভালোবাসা নদী না যেন শুষ্কতার জন্য শুকিয়ে যাবে। ভালোবাসা হলো মহাসমুদ্র! চিরকাল ধরে রয়ে যায়! নিঃশেষ হয় না।

ভাঙা মন নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে সেজুতি।রুমটা প্রচুন্ড অন্ধকার। বাতি নেভানো আছে এজন্য হয়তো রুমে আলো নেই বললেই চলে৷ অন্ধকারে সেজুতির গা ছমছমে করছে। সে বালিশে মুখ গুজে ফোপাচ্ছে৷ তার গায়ের উপর মুহিব নিজের একটা হাত তুলে রেখে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সেজুতির চোখে জল। সে বেশ জোড়ে করেই মুহিবের হাতটা সরিয়ে রাখলো। এরপর কাত হয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরালো। রুমের সঙ্গে এডজাস্ট বারান্দা আর বাথরুম। কাত হতেই বারান্দা নজরে এল। সারা শহর জুড়ে অন্ধকার নেমে এসেছে সেই সাথে তার মনেও নেমেছে ঘোর অন্ধকার! আশেপাশের বাড়িতে ও বাতি নেভানো। তারপর ও কোথা থেকে যেন বারান্দায় এক চিলকে কৃত্রিম আলো এসে বারান্দায় রাখা চেয়ারটার ছায়া মেঝতে ফেলছে। সেদিকে দৃষ্টি তার। অসহ্য যন্ত্রণা বুকে পুষে শুয়ে আছে সে। মন ও শরীর ব্যথায় কাতরাচ্ছে।

সেজুতি বারান্দায় পড়া ছায়াটার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগে, এমন বিষাদময় কেন হলো তার জীবনটা? তার কি সুখ কাম্য ছিলো না? সে কি আশা রাখেনি এমন একজনকে পাবে যে কিনা তার প্রতিটা দিনের ভালো-মন্দের খবর রাখবে। বিকেলে হলে তার জন্য তার প্রিয় খাবার মোগলাই কিনে এনে নিজ হাতে পরম যত্নে খাওয়াবে। রাত হলে রুমে মৃদ্যু আলো কিংবা মোমবাতি জ্বালিয়ে গল্প করবে। সেজুতির কাছে খালি গলায় গান গাওয়ার আবদার করবে। সকালে চুপিচুপি ঘুমন্ত সেজুতির গালে ভালোবাসা একে দিবে! মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে! নিজ হাত আদর করে খাইয়ে দিবে! ভালোবেসে আগলে রাখবে। এমনই কাউকে তো সে চায়! কিন্তু মুহিব কেন তাকে বুঝলো না? নাকি সবাই-ই মুহিবের মতো! সব স্বামীই কি মুহিবের মতো? তার উত্তর জানা নেই। এইসব কথা কাউকে না বলা যায়, না প্রশ্ন করা যায়৷ কিছু কিছু কথা থাকে যেগুলো কাউকে মুখ খুলে বলা যায় না। চাইলেও মুখ দিয়ে বলা যায় না।

সেজুতি উঠে বসলো। মুহিবের দিকে তাকালো সে। দেখে মনে হচ্ছে, বেশ আরাম করে ঘুমাচ্ছে মুহিব। সেজুতির ঘৃণা হতে লাগে তার প্রতি৷

“ঘৃণা এমন এক অনুভূতি যা মনের অন্তরালে বসবাস করে! ঘৃণা অনুভূতিটি মানুষের সবচেয়ে আপন হয় কেননা এই অনুভূতিটি কেবল এক সময়কার আপনজনের প্রতিই জন্মায়। ঘৃণা বানানে যুক্তবর্ণ এসে যেমন উচ্চারণে জটিল করে দিয়েছে তেমনি ঘৃণাও কারো জীবনে চলে এলে তার জীবনটা জটিল করে তুলে।”

ফোস করে দম ফেলে ঠোঁটে ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে সে। আজকে তার বিয়ের দ্বিতীয় দিন। এমন সুন্দর এক স্মৃতি তৈরির দিনে এমন বাজে, অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ মুহিবের কাছ থেকে সে আশা করেনি৷ সেজুতি এবারে শব্দ করে কেদে ফেলে৷

কান্নার আওয়াযে মুহিব ঘুমের মধ্যেই বিরক্ত হয়ে ওপাশ ঘুরতে ঘুরতে বলে উঠে, আহা ডিস্টার্ব করিও না তো!

সেজুতি চুপ হয়ে গেল। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে তার। রাতের শেষ অংশ কেটে গিয়ে হালকা সূর্যের কিরণ দেখা দিচ্ছে। ফযরের আযান ও হয়ে গেছে। সেজুতি সবটা সময় বসেই কাটিয়ে দিলো।
আযান শেষ হতেই সে ওযু করতে গেল। এই বাসায় কি জায়নামাজ আছে? কে জানে? খুজে দেখতে হবে। মনে হয় না থাকবে।

সে বাথরুমে গিয়ে বেশ খানিকটা অবাক হলো। বাসার ড্রয়িং রুমটা দেখে মনে হয়েছিলো এখানে কেউ থাকে না। অফিসের মালামাল রাখা হয়৷ কিন্তু বাথরুমে ঢুকে এই ধারণা বদলে যাবে যে কারো।

বাথরুমে কেউ একজন সানসিল্ক শ্যাম্পু কিনে এনে রেখেছে৷ সঙ্গে ম্যাচিং সানসিল্ক কন্ডিশনার৷ সাবান অর্ধ ব্যবহৃত। একটা ফেস ওয়াশ ও আছে। ব্যাপার টা অদ্ভুত লাগলো তার। এইসব জিনিস কোন বাড়ির বাথরুমে থাকবে৷ এমন অফিস স্টোর রুমে কেন এগুলো সাজানো? ব্যাপার টা মাথায় ঢুকলো না সেজুতির। সে সাবান ব্যবহার করলো না। গোসল সেরে পরনের সালোয়ার কামিজ টাই পড়ে বের হলো।

কারো ব্যবহৃত জিনিস ইউস করতে পছন্দ করে না সে। ওযু করে বের হতেই মুহিব কাত হয়ে তাকে দেখে নিলো।

মুহিবের ঘুম খুবই পাতলা তা সেজুতি এই দুই রাত তার সঙ্গে থেকেই বুঝে গেছে। সামান্য বাতাস বয়ে যাওয়ার শব্দেও মুহিব জেগে উঠে।

মুহিব তাকে প্রশ্ন করে, এতো সকালে উঠেছো কেন?

— নামাজ পড়ব৷ এই বাসায় কোন জায়নামাজ আছে?

মুহিব সেজুতির কথা শুনে অবাক হলো না কিন্তু মনে মনে বলে উঠে, নরকে কেউ ইবাদত করে না।

উত্তরে বলে উঠে, পাশের রুমে বড় বড় কাগজ আছে। ওগুলোর মধ্যে একটা নিয়ে কাজে লাগাতে পারো৷

সেজুতি হাটা ধরলো। মুহিব পিছু ডাকলো।কিন্তু সে সায় দিলো না৷

এতে কিছুটা হতাশ হয় মুহিব। ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সে আর ঘুমানোর চেষ্টা করলোনা। উঠে বসে সে। এরপর সিগারেট ধরায়। প্রচুন্ড মাথা ব্যথা করছে তার৷ এক কাপ কড়া করে চা খেলে ভালো হত। রান্নাঘরে চা-পাতা আছে কি?থাকলে সেজুতি কে এক কাপ চা বানাতে বলা যায়।

সে সিগারেট শেষ করে আবারো শুয়ে পড়ে। সেজুতি আসে না কেন? এতোক্ষনে তো নামাজ শেষ হওয়ার কথা!!

মুহিব আরো দশ মিনিট অপেক্ষা করে নিজেই উঠে পাশের রুমে গেল।

পাশের রুমেও সুন্দর করে বেডরুম সাজানো। দামী বিছানা, দামী বেডশীট। এটাচ বারান্দা ও বাথরুম৷

সেজুতি বারান্দার রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হীম শিতল হাওয়া বয়ে যায় মুহিবের গা বেয়ে৷

সে দ্রুত বারান্দায় গিয়ে খুকখুক করে কেশে নিজের উপস্থিতি জানান দিলো। কিন্তু সেজুতির ভাবান্তর হলো না। সে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷

মুহিব বেশ অবাক হলো। সেজুতি চঞ্চল টাইপের মেয়ে। এক জায়গায় বেশীক্ষন থাকে না। আজ কি হলো তার?
সে পেছন থেকে সেজুতির চুল গুলো আস্তে আস্তে সরিয়ে ডান কাধে রাখতে ব্যস্ত হয়ে রিনরিনে আওয়াজে তাকে ডেকে উঠে, সেজুতি?

সেজুতি কেপে উঠে মুহিবের স্পর্শ পেয়ে।

— কি হয়েছে তোমার?

সেজুতি নিশ্চুপ রইল। মুহিব পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলে, মন খারাপ?

সে কাঠ গলায় উত্তর দেয়, নাহ।

— তাহলে কি হয়েছে? বল আমাকে!

সেজুতি তার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। এতে তাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব কমে আসে।

সেজুতি বলে উঠে, ভালোবাসা শব্দটার মধ্যে কি আলো প্রভাব ফেলে? যেমনটা গাছের জন্য আলো প্রভাব ফেলে?

মুহিব তার কথার আগা-মাথা বুঝতে না পেরে বলে উঠে, বুঝলাম না?

সেজুতি কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বলে উঠে, না বোঝার মতোন কিছুই বলি নি তো। আমার মনে হয় ভালোবাসা শব্দের মধ্যে আলো প্রভাব ফেলে। দিনের আলোতে ভালোবাসি বলতে মনের বল দরকার এবং দিনের আলোতে এই শব্দটা অত্যন্ত পবিত্র হয় কিন্তু রাতের আধারে ভালোবাসি শব্দটা বোধহয় সবচেয়ে কুৎসিত।

এরপর সরাসরি মুহিবের দিকে তাকিয়ে বলে, এবং যে কাউকে এই কথাটা রাতে বাতি নিভিয়ে বলা যায় তাই না?

মুহিব সেজুতির কথায় ঘাবড়ে যায়। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না৷

সেজুতির চোখে অশ্রু টলমল করছে সে।

সে ক্লান্ত গলায় বলে উঠে, জুই কে হয় তোমার?

জুইয়ের নাম সেজুতির মুখে শুনে ভুত দেখার মতো চমকালো মুহিব। হুট করে গা ঠান্ডা হতে লাগলো। হাত বরফের মতো জমে গেল।

— জুইয়ের সঙ্গে কি অন্যায় করেছো?

মুহিব শুকনা ঢোক গিলে বলে, অন্যায়? কি অন্যায় করব? আর জুই! ওর কথা কিভাবে জানলে তুমি?

— কালকে রাতে তুমিই ওনার প্রসঙ্গে কথা বলেছো। কে হয় জুই তোমার? গার্লফ্রেন্ড?

মুহিব শুকনো হেসে বলে, ক্লাস মেট। আমার কাছে সেমিস্টার ফি ধার চেয়েছিলো। আমি দেইনি। ভেবেছিলাম এমনি ধার চাচ্ছে। পরে জানতে পারি মেয়েটা আসলেই অভাবী। আমি টাকা না দেওয়ায় ও ভার্সিটি থেকে ড্রপ আউট করেছে৷ এজন্য আই ফিল গিল্ড।

— তুমি বুঝি চ্যারেটি খুলে রেখেছো? সবার পড়ার খরচ বুঝি তোমার মাথার চিন্তা?

— তুমি কি আমার কথা বিশ্বাস করছো না? (মুহিব)

— করেছি।

আচমকা মুহিব বলে উঠে, সেজুতি! দিন হোক রাত হোক অমাবস্যা হোক, পূর্নিমা হোক বা যেটাই হোক না কেন! ভালোবাসায় কোন কিছুর প্রভাব পড়ে না। ভালোবাসা নদী না যেন শুষ্কতার জন্য শুকিয়ে যাবে। ভালোবাসা হলো মহাসমুদ্র! চিরকাল ধরে রয়ে যায়! নিঃশেষ হয় না।

সেজুতি বলে উঠে, আমি বাসায় যাব।

— হ্যা। চল।

— তুমি বুঝনি আমি কি বলেছি। আমি আমার বাসায় চলে যাব৷

মুহিব আকাশ থেকে পড়লো যেন। সে বলে উঠে, এইসব কি বলছো? চলে যাবে মানে কি?

— তোমার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না মুহিব। তুমি নিম্ন মানের মানসিকতার পুরুষ। কালকে রাতে আমি বারং করা সত্ত্বেও তুমি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার কাছে এসেছিলে। এমন কা পুরুষের সঙ্গে আমি এক ঘরে থাকতে পারব না৷

সেজুতি শীতল কন্ঠে কথা গুলো বলল যার ফলে মুহিবের গায়ের রক্তও ঠান্ডা হয়ে এলো।

সেজুতি বলে উঠে, আমি তোমাকে ডিভোর্স দিব।

কথাটা বলা মাত্র মুহিব তার গালে সজোরে চড় বসালো। সঙ্গে সঙ্গে সেজুতি ছিটকে পড়ে গেল এবং রেলিঙে তার ঠোঁটের কোণা লেগে, ঠোঁট কেটে রক্ত বের হলো।

সে ঘৃণা ভরা চোখে মুহিবকে দেখতে লাগে।মুহিব রাগে ফুসছে৷

চলবে।