সে আমার শরৎফুল পর্ব-১০+১১

0
93

#সে_আমার_শরৎফুল #পর্ব_১০

#আরশিয়া_জান্নাত

শীতের সকালে রোদে বসে রোদ পোহানোর মজাই আলাদা। রুমি মোড়া আর টি-টেবিল পেতে রেখেছে উঠোনে। তারা রোদে বসেই সকালের নাস্তা করবে। ছিটা, গরুর গোশতের কালাভুনা আর দুধ চিতুই করেছে রুমানা। রুমির দুধ চিতুই অনেক প্রিয়। তাই আজ একটু বেশিই আনন্দিত। একটু পরপর ভাইকে তাড়া দিচ্ছে নাস্তা খেতে আসতে। ইরহাম আজ সকাল সকাল ল্যাপটপে বিজি। কিসব টাইপ করেই যাচ্ছে অবিরাম ধারায়। রুমি অস্থির হয়ে উঠে। অবশেষে ইরহাম উঠে আসে, টেবিলে দুধ চিতুই দেখে বললো, ওহ এই হলো রহস্য! এজন্যই আজ নাস্তা খাওয়ার জন্য এতো তাড়া।

রুমানা সবার পাতে গোশত আর ছিটা পিঠা দিলো। ছোট বাটিতে দুধ চিতুই দিয়ে সবার সামনে রাখলো। রুমি শুরুতেই দুধ চিতুই খেলো। মুখে নিয়ে চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে লাগলো দুধের মিষ্টতায় ডোবা নরম চিতুই। আহ এ যেন অমৃত!
মা অনেক মজা হয়েছে। তুমি এতো মজা করে এটা বানাও না! আমি জান্নাতে গেলে সবার আগে বলবো আল্লাহ আমাকে দুধ চিতুই দাও, আমি শুধু দুধ চিতুই খাবো,,,

ইরহাম বলল, আমি তো গরুর মাংস চাইবো। কালাভুনা, কষা গোশত, আলু গোশত, গরুর নলি গরুর গোশতের আইটেম চেয়েই তো কূল পাবো না!

সকাল সকাল কিসব শুরু করলি তোরা! যেন নিশ্চিত হয়ে গেছিস জান্নাত পাবি! আমলনামার খবর নাই এনারা কি খাবে তা নিয়ে ভাবছে।

মা নিয়্যত অনুযায়ী বরকত বুঝলে। পৃথিবীতে আল্লাহ তার দয়ার মাত্র ১% দিয়েছেন। এতেই আমাদের মাঝে এতো মায়া মোহাব্বত ভালোবাসা। চিন্তা করো তার দয়ামায়ার পরিমাণ কেমন! এই দয়া দেখানোর পরও যদি জান্নাত না পাই তবে তো আমরা দূর্ভাগার ও শেষ পর্যায়ের! আমার বিশ্বাস তিনি আমাদের দয়া দেখিয়ে জান্নাত দিয়ে দিবেন। ভয় লাগে খালি কবরটাই। আমার মতে কবরের চেয়ে ভয়ঙ্কর কিছু নাই। ওটা পার করতে পারলেই বাকি পথ আসান ইনশাআল্লাহ…

কবরকে ভয় পাস ইরহাম?

হুম। ওটাকেই সবচেয়ে বেশি ভয় লাগে,,

তোর বাবাও সেই কবরেই একা পড়ে আছেন, তার ও হয়তো ভয় করছে!

আমার বাবার কবর বেহেশতের বাগান হয়ে গেছে মা।

কে বলেছে?

আমি বলেছি। উনাকে আমি কখনো ফরজ নামায কাযা করতে দেখিনি। কাউকে গালিও দেন নি। উচ্চবাক্যে কথাও বলেননি। নরম দিলের সহজসরল মানুষদের জন‌্য জান্নাত ওয়াজীব হয়ে যায়। কবরের পোকা বিচ্ছু তৈরি হয় গালি থেকে, মানুষের মনে কষ্ট দিলে, অশ্লীলতায় লিপ্ত হলে। তাই বলতে পারি আব্বা ভালোই আছেন। আল্লাহর কাছে তার নেক বান্দা ভালোই থাকেন।

ঠিক বলেছ ভাইয়া, আমিও এটা মনে করি।

রুমানা মুচকি হেসে বললেন, আল্লাহ যেন তোদের মনের বিশ্বাস কবুল করেন। উনি যেন সত্যিই ভালো থাকেন,,,,,

তৃণার বাবা গম্ভীর মুখ করে বসার ঘরে বসে রইলেন। তার সামনেই ওয়াসি আর তাহমিনা বসে আছেন।

কি হয়েছে বলবেন তো? এমন মুখ ভার করে বসে আছেন কেন?

তাহমিনার কথায় ওয়াজেদ সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, তোমাকে বলেছিলাম মেয়ের পছন্দের কেউ আছে কি না খোঁজ নিতে। তুমি তখন পাত্তা দাও নি।

তৃণা কি কিছু বলেছে!

ওয়াসি বললো, বাবা কি হয়েছে খুলে বলুন।

ওনারা খোলাসা করে কিছু বলেনাই। তবে রফিকের কাছে শুনেছিলাম তাদের উদ্দেশ্য ছিল আকদ করে যাওয়ার। কিন্তু ছাদ থেকে আসার পর মৃদুল মত পাল্টেছে। যদিও না বলেনি। তবে হ্যাঁ ও বলেনি। যেখানে তারা সবাই রাজিই ছিল বলতে গেলে, সেখানে পেছানোর মানে কি ধরতে পারছো না?

তাহমিনা বললো, কিন্তু ওকে দেখে তো মনে হয়না তেমন কিছু আছে। ও অন্যদের মতো না। চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে। আমাকে না বলুক ওয়াসিকে হলেও বলতো। কি রে ঠিক বলছি না?

ওয়াসি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। পরক্ষণে বললো, আব্বু ওর যদি এখানে মত না থাকে আগানো ঠিক হবেনা। কেউ থাকুক না থাকুক ওটা পরের ব্যাপার। ও যদি সম্মতি না দেয় তবে বিয়েটা আপাতত বাদ দিন। পড়াশোনায় আছে করতে থাকুক।

আমি তো সবাইকে আনি না ওয়াসি। এই সমন্ধটা পছন্দ হয়েছিল তবুও বাসায় আনার আগে তোমার মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করেছি। আমার একটাই মেয়ে ওকে নিয়ে আমার কল্পনা জল্পনা কম নয়। আমরা বললে হয়তো ও বলতে চাইবেনা। তুমি বরং ওকে জিজ্ঞাসা করে দেখো। ও কি বলতে চায় শুনি আগে। তারপর দেখা যাবে।

আচ্ছা!

তৃণা ছাদে বসে আছে, মনটা বিষন্নতায় ঘেরা বলা বাহুল্য। ও জানে এখন ওকে জবাবদিহি করতে হবে। ওর পরিবার কৈফিয়ত চাইবে। কি বলবে সেটা সে জানেনা। তার ইচ্ছে করছে এই সময়টা দ্রুত পার করিয়ে দিতে। এই দমবন্ধকর সময়টা তার অসহনীয় লাগছে। তামজিদ ধীর পায়ে বোনের পাশে বসে বলল,আপুনী? তোর কি মন খারাপ?

তৃণা ম্লান হেসে বলল, ছোটু একটা গান‌ শুনবি?

তামজিদ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। তৃণা চোখ বন্ধ করে গান গাইতে লাগলো,

আমি আবার ক্লান্ত পথচারী,
এই কাঁটার মুকুট লাগে ভারী,

গেছে জীবন দুদিকে দুজনারই,
মেনে নিলেও কি মেনে নিতে পারি!

ছু্ঁতে গিয়েও যেন হাতের নাগালে না পাই

এভাবে হেরে যাই,যেই ঘুরে তাকাই
কেমন যেন আলাদা আলাদা সব।

আলগা থেকে তাই, খসে পড়েছি প্রায়
কেমন যেন আলাদা আলাদা সব……….

৩মাস পর,,
রূপা বেশ সুন্দর করে লাল,সাদার কম্বিনেশনের শাড়ি পড়েছে। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি,খোপায় আর্টিফিশিয়াল ফুলের মালা।চোখে খুব সুন্দর করে লাইনার আঁকা। সাজার ক্ষেত্রে রূপার তুলনা হয়না। ও খুব সুন্দর করেই সাজতে পারে। আজকে নববর্ষ উপলক্ষে ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান হবে। এ বছর আলপনা আঁকার দায়িত্ব রূপাদের ডিপার্টমেন্ট পেয়েছে। গত কাল বেশ হৈ হৈ করেই আলপনা এঁকেছে ওরা, তবে রাতে টের পেয়েছে কোমড় আর হাঁটুর কি ব্যথা!
সে যাই হোক এখন সে সেজেগুজে একদম প্রস্তুত। হাতে ব্যাগটা নিয়েই ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে বের হবে এমন সময় তৃণাকে দেখে বিরক্তস।বরে বলল, এ কি তৃণা তুই এখনো তৈরি হস নাই! কি করছিলি এতক্ষণ!

তৃণা ভাবলেশহীন গলায় বলল, আমার এসব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বোর লাগে। তুই যা, আমি যাবো না।

মানে কি এসবের! আমরা সবাই একরকম শাড়ি কিনেছি আজ পড়ে ছবি তুলবো বলে। আর তুই এখন বলছিস বোর লাগে! এতো কথা শুনবো না উঠ রেডি হ।

সত্যি বলছি দোস্ত ভালো লাগছে না। বিরক্ত করিস না।

কোনো একটা ওকেশন এলেই তোর এসব করতে হয়। এই জিনিসটা আমার একদম অসহ্য লাগে। বসন্ত জয়ন্তিতেও এই গোঁ টা ধরেছিলি। কিছু বলিনি। আজকে সেটা রিপিট করলে খুব খারাপ হবে বলে দিচ্ছি।

তৃণা চেয়ার থেকে উঠে খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লো। বালিশে মাথা গুঁজে বলল, আমার কিছু ভালো লাগেনা রূপা। আমি বোধহয় মরে গেছি। আনন্দ উল্লাস সব পানসে লাগে। এমন কেন হয় বলতে পারিস!

রূপা খানিকটা নরম হয়ে বলল, দোস্ত জীবনে সবসময় আনন্দ থাকবেনা, একদিন রোদ উঠবে তো একদিন বৃষ্টি নামবে। আমাদের কাজ হলো সময়টা উপভোগ করা। তুই যদি গুটিয়ে থাকিস সব আরো খারাপ হবে। মেয়েদের মন খারাপ ভালো করার সবচেয়ে প্রাচীন মাধ্যম হলো সাজগোজ করা।একদম নিজের মনমতো আয়নার সামনে বসে সাজ। দেখবি অন্যরকম লাগবে।

অগত্যা তৃণা শাড়িটা গায়ে জড়ালো। আয়নার সামনে বসে নিজেকে সাজালো। তানজিনা, ঊর্মি ওদের রুমে এসে বলল, তোদের হলো? চল বের হই।

সবাই একসঙ্গে বের হলো। হলের সামনের শিউলি গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে একদফা ফটোসেশন ও হলো।

দোস্ত আমিতো সুপার এক্সাইটেড, আজকে চিরকুট ব্যান্ড আসবে। ওহো সুমি আপার যে গলা, আহারে জীবন আহা জীবন জলে ভাসা পদ্ম যেমন,,,, আমার তো ইচ্ছে করছে এখনি দৌড়ে গিয়ে সেলফি নেই।

ঊর্মির কথা শুনে তানজিনা বললো, সবচেয়ে বেশি মজা হবে তাহসান আসলে। গতবার যখন এসেছিল আমি দেখতে পারিনাই। এবার আমি স্টেজের কাছাকাছি দাঁড়াবো যেমনে পারি।

এই প্ল্যান নিয়ে এতো দেরিতে বের হইছোস? দেখ গিয়ে পেছনেও জায়গা পাস কি না!

আরেহ তুই কি আমাকে কাঁচা খেলোয়াড় ভাবিস? অয়ন ভাইদের বলে রেখেছি। উনারা আমাদের জন্য ব্যবস্থা করে দিবেন নো ওয়ারিস।

রূপা ফোন বের করে কাকে যেন টেক্সট করলো। তারপর ক্যাম্পাসের সামনে পৌঁছাতেই বললো, তোরা ভেতরে যা আমি আসছি।

সবাই ভেতরে যেতেই রূপা ফোন কানে তুলে বলল, হ‌্যালো? কোথায় তুমি? আমি ক্যাম্পাসের সামনে আছি। জলদি আসো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই মুহতাসিম এসে হাজির হলো। রূপা তাকে দেখেই হাসলো। মুহতাসিম তার দিকে তাকিয়ে বললো, মাশাআল্লাহ! আজ দেখি হুরপরী দিনে দুপুরে পৃথিবীতে নেমে এসেছে! উফফ মরে গেলাম,,,,

একদম নাটক করবে না। ঢং!

সত্যি বললেই নাটক!

নয়তো কি!

এমন অপ্সরার মতো প্রেমিকা যার তার কর্মকান্ড নাটক মনে হওয়া অস্বাভাবিক না!
তারপর লাল গোলাপটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এই গোলাপটা আপনার জন্য!

রুপা লাজুক চাহনীতে গোলাপটা নিয়ে বলল, থ্যাঙ্কস। মুহতাসিম মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তার দিকে। মেয়েটা দেখতে এতো মিষ্টি কেন?

চলবে,,,,

#সে_আমার_শরৎফুল #পর্ব১১

#আরশিয়া_জান্নাত

ঊর্মি চারদিকে তাকিয়ে বলল, কি রে রূপা এখনো আসেনি যে!

কি জানি। বললো তো চলে আসবে। দেখ গিয়ে কার সাথে আড্ডা দিতে বসে গেছে।

আসলেই বিশ্বাস নাই, ও যেখানেই যায় গল্পের আসর বসাই দিতে পারে।

তৃণা ফোন হাতে নিয়ে বললো, দাঁড়া কল করে দেখি। কল আর দিতে হলো না রূপা এসে হাজির।

কি রে কই ছিলি এতোক্ষণ?

ঐ একজনের সাথে কথা বলছিলাম।

তানজিনা বলল, বলছিলাম না আড্ডায় বসে গেছে!

উফফ ভাই কি গরম ফ্যান দিলো না ক্যান? মেকাপ তো সব গলে গলে পড়বে মনে হচ্ছে!
তোর হাতের কার্ডটা দে বাতাস করি।

নে

রূপা বাতাস করতে করতে চারদিকে তাকালো একটু দূরেই মুহতাসিম দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। রূপা হেসে সামনে ফিরলো।

অনুষ্ঠানের মাঝেই তৃণা আর তানজিনা বের হয়ে এলো। এতো সামনে থেকে বাদ্যযন্ত্রের শব্দে মাথা পুরা হ্যাং হয়ে গেছে। রীতিমতো মাথাব্যথা করতে শুরু করেছে। আপাতত কড়া করে এক মগ কফি না খেলেই নয়। সেই উদ্দেশ্যেই তারা ক্যান্টিনে যাচ্ছে। তানজিনা কফি নিয়ে মাঠের পাশের বেঞ্চিতে এসে বসলো।

কফিতে চুমুক দিয়ে তৃণা বলল, মানুষ কিভাবে যে হাই বিটের মিউজিক শুনে। আমার তো মাথা ধরে গেছে জাস্ট। গান হবে ক্লাসিকাল। নরম ধাচের শ্রুতিমধুর। যা শুনতেও আরাম।

ঐসব গান এসব ওকেশনে চলে না রে।

হুম জানি। তাইতো এভয়েড করি।

সামনের মাসে সুন্দরবন যাওয়া লাগবে। টাকা জমা দিয়েছিস?

নাহ, আব্বুকে বলতে ভুলে গেছি। দেখি জানাবো।

তুই এবার বাড়ি থেকে ফেরার পর অন্যরকম হয়ে গেছিস। কিছু কি হয়েছে!

তৃণা কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললো, আচ্ছা তানজু একটা কথা বল তো, ধর তোর কাছে ২টা অপশন। ১টা একদম পারফেক্ট। ছেলে ডাক্তার, পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড ও দারুণ। পরিবারের সবাই তোকে পছন্দ করেছে। তোর পরিবারো রাজী। আরেকটা অপশন হলো এমন একজন মানুষ যার সঙ্গে তোর হঠাৎ পরিচয় হয়েছে। সে এখনো স্টুডেন্ট। তেমন পাকাপোক্ত অবস্থানে এখনো পৌঁছায়নি, তার উপর সবেই পিতৃবিয়োগে সংসারের ভার আপাতত তা কাঁধেই। সে তোকে পছন্দ করে কি না তুই জানিস না। বা তুই নিজেও তাকে ওরকম কিছু ভাবছিস কি না পরিষ্কার না তুই এখন কোন অপশন টা চুজ করবি?

একদম সিম্পল তৃণা, যার সান্নিধ্যে শান্তি লাগে তাকে চুজ করবো। তোকে প্রথমে বের করতে হবে কার কাছে তুই আরামবোধ করিস, বা কার সঙ্গে কথা বলতে তোর অস্বস্তি হয় না।এখানে অন্য সব যুক্তিতর্ক বাদ দিয়ে জাস্ট মানুষটাকে জাজ কর। একটা কথা কি জানিস আমরা চারদিকে ভাবতে গেলে আসল শান্তির খোঁজটা পাই না। বাহ্যিকভাবে হয়তো একজন খুব পারফেক্ট অপরজন তার কাছেকিনারেও নেই। কিন্তু দেখা যায় শূন্য মানুষটাই আমাদের আসল শান্তির নীড়! আবার উল্টোটাও হতে পারে।

তৃণাকে নিরব থাকতে দেখে তানজিনা বলল, তৃণা আমার মনে হয় তুই ইরহাম ভাইয়াকে পছন্দ করিস!

এমন কেন মনে হলো তোর?

তুই যদি তাকে পছন্দ না করতি বিয়ের সমন্ধ আসতেই তুলনা করতি না। বা তাকে অপশনেই রাখতি না। তোর মনের কোথাও না কোথাও ইরহাম ভাইয়ের সাথে ডাক্তার সাহেবের তুলনা চলছে। এটা কিন্তু এইদিকেই নির্দেশ দিচ্ছে।

কিন্তু এটার কি যুক্তি আছে? উনার মনে হয়তো তেমন কিছুই নেই, আমিই আগ বাড়িয়ে অনুভূতি পুষছি!

অনুভূতি জন্মানোর জন্য কোনো রুলস রেগুলেশন আছে নাকি! কে কার প্রতি কখন অনুভূতিপ্রবণ হয়ে উঠবে কেউ জানে? প্র্যাক্টিক্যালি ভাবলে দেখবি ডাক্তার সাহেব তোর জন্য একদম পারফেক্ট। কোনোদিকেই প্যারা নেই। তুই আরামছে তাকে বিয়ে করে সুখী হতে পারবি। অথচ তুই ওতে খুশি না। বরং তোর মন চাইছে ইরহাম ভাইকে বেস্ট অপশন কল্পনা করতে। তুই মুখে তার লিমিটেশনের কথা বলছিস, বলতে গিয়েও তোর মন খারাপ হচ্ছে। তোর মন বলছে এই জিনিসগুলো না থাকলে তুই উনাকে চুজ করতে পারতি। এর মানে কি দাঁড়ায়?

আমার এখন কি করা উচিত?

কিছু করার নেই। গল্পটা যিনি লিখছেন তার উপর ভরসা করে ভাবনা ছেড়ে দে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের জীবনে যা ঘটে সব উনার মর্জিমতোই ঘটে। তোহ প্যারা নিস না চিল থাক।

তোকে অনেক ধন্যবাদ রে।তুই কি সুন্দর করে আমায় বোঝালি।

তৃণা!

হুম?

তুই কি ইরহাম ভাইকে আসতে বলেছিস?

নাহ তো! কেন?

উনি ক্যাম্পাসে এসেছেন।

তৃণা দ্রুত ফোনটা হাতে নিয়ে নিজের চেহারা দেখে নিয়ে অস্থিরভাবে চারদিকে তাকাতে লাগলো। কোথায় ইরহাম?

তানজিলা হোহো করে হেসে বললো, এরপরো বলবি তুই উনাকে পছন্দ করিস এ নিয়ে কনফিউশন আছে?

তৃণা ওর হাতে চড় দিয়ে বললো, তুই আস্ত ফাজিল। হঠাৎ রূপা আর ঊর্মি দৌড়ে এসে বলল, তোরা এখানে। আমরা এতোক্ষণ তোদের খুঁজতে খুঁজতে শেষ। তৃণা তুই কেমন রে ফোন অফ করে বসে আছিস! ইরহাম ভাইয়া তোকে সেই কখন থেকে কল করছে। ধরবি না?

তৃণা ফোন ধরতেই বুঝলো ফোন অফ হয়ে আছে সে এতোক্ষণ খেয়ালই করেনি। তানজিলা বলল, তোকে কে বলেছে ইরহাম ভাইয়া কল করছে?

ইরহাম ভাইয়া নিজে বলেছেন। ঐ তো উনি আসছেন।

তৃণা চমকে পেছনে তাকালো। সত্যিই ইরহাম এসেছে!

সাদা পাঞ্জাবি কনুই অব্দি ফোল্ড করা, সাথে ব্লু জিন্স, ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেশ। চুলগুলো একটু এলোমেলো, বুকের মাঝে সানগ্লাসটা ঝুলছে। রোদের প্রভাবে মুখটা হালকা লালচে হয়ে আছে। তৃণার মনে হলো এই উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের ছিপছিপে রোগা পুরুষটাই তার হৃদয় হরণ করেছে! খুব কঠিন ভাবেই করেছে।

হেই তৃণা! শুভ নববর্ষ, কেমন আছেন আপনি?

শুভ নববর্ষ,,, জ্বি ভালো আপনি?

উমম ভালোই আছি। ভালো না থাকলে কি এতো দূর আসতে পারতাম?

তাও ঠিক। বসেন কফি অর্ডার দেই,

আমি কফি পছন্দ করি না। দুধ চা হলে রাজি আছি।

আচ্ছা বেশ।

তৃণা যেতে নিলে তানজিনা বললো তোরা গল্প কর আমরা গিয়ে আনছি।
বলেই ওরা চলে গেল। তৃণা চুপচাপ বেঞ্চিতে বসলো। ইরহাম কলারটা একটু পেছনে ঠেলে বলল, এপ্রিল মাসের রোদটা বেশি ঝাঁজালো। কি গরম পড়ছে আজ!

তৃণা হাতে থাকা হাতপাখার শেইপের কার্ড যেটা বৈশাখি উপলক্ষে বিলি করা হয়েছিল তা দিয়ে বাতাস করতে লাগলো। ইরহাম হেসে বলল, আপনাকে একদম বাঙালি বৌ মনে হচ্ছে। আগের সিনেমাতে যেমন দেখাতো ডালা শাড়ি পড়ে একহাতে ঘোমটা টেনে ধরে আরেকহাতে বরকে হাতপাখা করতে থাকা বাঙালী বধূ। সম্পূর্ণ ঐরকম না হলেও অনেকটাই সাদৃশ্য আছে কি বলেন?

তৃণা হেসে বললো, আপনার বুঝি তেমন মেয়ে পছন্দ?

যুগের ধারা বদলেছে, এখন হাতপাখা লাগেনা। ফ্যান ছেড়ে দিলেই হয়। তাই স্ত্রীরা আর হাতপাখা নিয়ে বসে না। তবে,,,

তবে?

তবে পাশে বসে তদারকি করা, বরের পাতে এটা ওটা তুলে দিতে বসে থাকবে। ঐরকম মেয়ে আমার পছন্দ!

এটা তো সব মেয়েরাই করে, ভিন্ন কি?

সবাই করে না হয়তো। আমার কাছে এটা খুব বিশেষ মনে হয় এই আর কি!

আচ্ছা। তা হঠাৎ এখানে এলেন যে? কোনো ফ্রেন্ডের সাথে এসেছেন বুঝি?

ইরহাম সাবলীল গলায় বললো, নাহ। আপনার সঙ্গে দেখা করতে এলাম। আপনার তো কোনো খোঁজখবর নেই। তাই ভাবলাম যাই গিয়ে দেখে আসি। তাছাড়া বইগুলোর রিভিউ ও জানার ছিল!

হ্যালো আম্মু, আস্সালামু আলাইকুম

ওয়ালাইকুমুস্সালাম। কেমন আছিস?

ভালো তুমি?

ভালো। কি করিস?

এইতো বসে আছি। তুমি কি করো? তামজিদ কোথায়?

পরোটা ভাজছি, তামজিদ পড়ছে।

ওহ। আম্মু আমার সুন্দরবন যাওয়া লাগবে। টাকা পাঠাতে বলিও আব্বুকে।

কবে যাবি?

মে মাসের শুরুতে।

বৈশাখ মাসে সুন্দরবনে কেন! এসময়ে কালবৈশাখির ভরসা আছে? তোদের টিচাররা কি ভুলে গেছে এটা!

বনে তো ২দিনের জন্য যাবো। এর আগে আবহাওয়ার আগাম বার্তা দেখেই যাবে। আবহাওয়া খারাপ হলে ডেট আগপিছ করবে। তুমি টেনশন নিও না।

তুই সুন্দরবন গেলেই আমার মাথা খারাপ হয়। ঐখানেই কেন যেতে হয় তোকে! গতবার গেলি আর বাঘের তাজা ছাপ দেখেছিস। শুনেই তো আমার গা ছমছম করে। ঐসবে না গেলে হয় না?

আমি একা যাচ্ছি না আরো ৩০জন মেয়ে আছে, ছেলেরাও আছে অনেক। তাছাড়া ডিপার্টমেন্টের স্যার ম্যাম, ফরেস্ট গার্ড সবসময় থাকছ আমাদের প্রটেকশন দিতে। তুমি এতো ভয় পেও না।

কি আর করার ভাগ্যে যা আছে হবেই। তোর আব্বুকে বলবো টাকা পাঠিয়ে দিতে।

আচ্ছা।

হ্যাঁ রে তাজু তোকে মৃদুল কল করেছে?

কেন?

তোর বাবার থেকে ফোন নাম্বার নিলো শুনলাম। তাই জিজ্ঞাসা করছি।

কই ফোন করেনি তো।

ওহ।

আচ্ছা রাখি মা। পরে কথা হবে

আচ্ছা আল্লাহর হাউলা। সাবধানে থাকিস।

তৃণা মনে মনে ভীষণ বিরক্ত হলো। ফোন নাম্বার দিতে গেল ক্যান উফ!

চলবে,,