#স্নিগ্ধ_প্রেমের_সম্মোহন
–[পর্ব-২১]
লেখিকা: #সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা
আঁধারে ছেয়ে আছে চারিপাশ! বিশাল আকাশটায় তারাগুলো নিজেদের পসরা সাজিয়েছে। দমকা স্নিগ্ধ বাতাস এসে নড়িয়ে দিচ্ছে স্তব্ধতা ধারণা করা গাছের পাতাগুলোকে! নড়েচড়ে উঠে কিছু সময় বাদে তারা আবারও শান্ত হয়ে যায়। আজ আকাশে চাদের দেখা নেই। অমাবস্যা চলছে প্রকৃতিতে!
পুরো পরিবেশটা একবার দেখে নিয়ে ডানে তাকাই! ঠিক তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে পূর্ব ভাই দাড়িয়ে আছেন। ছাঁদের রেলিঙ ধরে বেশ খানিক ব্যাস্ত ভঙ্গিতে ফোনে কথা বলছেন তিনি!
পেছন থেকে জরীয়ে ধরে যখন তিনি আমায় শাস্তি দেয়ার পায়তারা করছিলেন তখনি ফোন বেজে উঠে তার! শত বিরক্তি নিয়ে ফোন স্ক্রিনে তাকিয়ে ছাঁদের ডান পাশটায় চলে যান তিনি!
প্রশান্তি ভরা শ্বাস ত্যাগ করে প্রকৃতি থেকে বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করি আমি! চলে যাই বা পাশটায়! আধাঘন্টার মতো হবে তিনি একাধারে ফোনে কথা বলে চলেছেন।
পূর্ব ভাইয়ার চোখ ফাঁকি দিয়ে ছাঁদ থেকে বেরোনোর চেষ্টা করতেই সেকেন্ডের মাঝে তিনি আমায় লক্ষ করে ফেলেন! ফোন কানে রেখে কথা বলতে বলতেই আঙ্গুল দিয়ে শাশিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে বলেন!
আমি বাধ্যমতো চুপটি করে বসে পড়ি ছাঁদের দোলনাটায়।
এতক্ষণ পূর্ব ভাইয়াকে ঠিকমতো খেয়াল করেনি। তবে হটাৎই আমার চক্ষুযুগল যেনো অনুমতি ছাড়াই তার দিকে চলে যায়। ড্যাবড্যাব করে স্ক্রল করা শুরু করে তাকে!
কালো রঙের টিশার্ট, কালো ট্রাউজার! ভেজা চুলগুলো কপালে লেপ্টে আছে। সাওয়ার নিয়েছে নিশ্চয়ই। তার অভ্যাস রাতে সাওয়ার নেয়া!
এক হাতে পকেটে গুজে স্টাইল মেরে দাড়িয়ে অন্য হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছেন!
চোখদুটো থমকে যায়। তার এই স্টাইলটার ওপরই আমি তীব্রভাবে দূর্বল! যখন এভাবে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলেন পূর্ব ভাই তখন ইচ্ছে করে অন্যায় কিছু করতে। তার ফর্সাটে গালটায় টুপ করে চুমু খেতে!
তবে পরক্ষণেই নিজ চিন্তায় শ’খানেক গালি দিয়ে ক্ষ্যান্ত হই আমি!
।
হুট করে অনুভব হয় আমার কোল ভারী! বাহির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিচে তাকাতেই দেখি পূর্ব ভাইয়া আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লেন মাত্র!
কিছু সময়ের জন্য ভড়কে যাই!
মাত্রই তো দেখলাম ওখানে দাড়িয়ে কথা বলছেন।এখানে আসলেন কখন?
আমি ইতস্তত বোধ করে বলি,,,
‘ ভাইয়া কি করছেন?উঠুন! আপনার শোয়ার ইচ্ছে হলে রুমে বেডে গিয়ে ঘুমান! ‘
পূর্ব ভাইয়ার কোনো হেলদোল দেখা গেলো না আমার কথায়! বরং এবার তিনি একটা ভয়ংকর কান্ড ঘটালেন। এপাশ ফিরে শুয়ে আমার পেটে মুখ গুজে দিয়ে কোমড় শক্ত করে আঁকড়ে ধরেন!
আকষ্মিক কান্ডে কেমন রিয়াকশন দেয়া উচিত আমার তা বোধহয় ভুলে গিয়েছি!
গলা দিয়ে শব্দগুচ্ছো বের হচ্ছেনা। কন্ঠের খাদ নামিয়ে বলি,,,
‘ পূর্ব ভাইয়া প্লিজ সরুন! কেও দেখে ফেললে কি ভাববে?’
‘ কেও যাতে না দেখে তার জন্যই তো রাত দুটোয় আসতে বলেছি। তোর বাড়ির সবাই ঘুমে পানি! আর দেখলেও বা কি? আমার কিছু আসে যায়না! দেখলে আমার জন্যই ভালো।জলদি তোকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে পারবো। ‘
আমি একটু নড়েচড়ে বসি। দম বন্ধ হয়ে আসছে। হাসফাস করে বলি,,,
‘ আপনি কি কিছু বলতে চান ভাইয়া?এখানে, এতো রাতে ডাকার মানে কি?কিছু না বলার থাকলে আমায় যেতে দিন ঘুম পাচ্ছে! ‘
পূর্ব ভাইয়া কোল থেকে মাথা সরিয়ে উঠে বসেন। ছোট্ট করে একটা শ্বাস ফেলে তার দিকে তাকাই। পূর্ব ভাইয়া আমার দিকেই তাকিয়ে, এক দৃষ্টিতে! গভীর সেই দৃষ্টি! যেনো কত কিছু বলছেন ঐ দুচোখ দিয়ে।
পূর্ব ভাইয়া দোলনায় পিঠ ঠেকান। পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দোলনা ধাক্কা দিয়ে আলতো কন্ঠে বললেন,,,
‘ আই ওয়ানা টু সে সামথিং! ‘
‘ বলুন?’
বুক ধুকপুক করছে। শ্বাস টানতেও যেনো কষ্ট হচ্ছে। কি বলতে চান তিনি? তার এমন বেহাল রূপ আগে কখনো দেখিনি! হুট করেই কেমন হয়ে গেলেন!কি কারণে?
পূর্ব ভাইয়া আমার অনেকটা কাছে ঘেসে বসেন। চোখদুটো তার টলমলে! কি সাংঘাতিক! তিনি কি কাঁদছেন?
আমি অস্থিরতা নিয়ে জিজ্ঞেস করি,,,
‘ ভাইয়া কি হয়েছে? আপনি কাঁদছেন? কিছু কি হয়েছে? আপনাকে হটাৎ এমন দেখাচ্ছে কেনো? ‘
পূর্ব ভাই আলতো হাসলেন। ধীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন,,,
‘ আ’ম ওকে! বাট তোকে এতো অস্থির দেখাচ্ছে কেনো? আমার জন্য চিন্তিত তুই?হু? সে সামথিং! ‘
আমি সামলে নেই নিজেকে। মাথা নাড়িয়ে ‘ না ‘ বলি! এতে তার মুখশ্রীতে হতাশার ছাপ দেখা গেলো কিছুটা!
পূর্ব ভাইয়াকে কিভাবে বলি? তার এই রূপ, এই অবস্থা আমার মনে উথাল পাতাল ঝড় তুলছে।
পূর্ব ভাইয়া ফের বললেন,,,
‘ আজ অমাবস্যা! সোডিয়ামের আলো ছাড়া প্রাকৃতিক কোনো আলো কোথাও নেই। সবার কাছে আজ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির আলো রয়েছে, তবে আমার কাছে… আমার কাছে চাঁদ আছে জানিস? যেই চাঁদের আলোতে উজ্জ্বল আমার চারিপাশ! আলোকিত আমার একান্ত শহর। স্নিগ্ধ আমার মন গহীন, চাঁদটা যে আকাশের চাঁদের চাইতেও বেশ সুন্দর! ইউ নো? আ’ম সো লাকি! কিন্তু চাঁদটা আমায় আগলে নেয়না কখনো। দূরে দূরে পালিয়ে যায় সবসময়। খুজে এনে পাশে রাখতে চাইলেও ফের আমায় ছেড়ে চলে যায়! ‘
কথাগুলো শান্ত কন্ঠে বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তিনি। আমি ভেজা চোখে সেদিকে তাকিয়ে।
তিনি পুনরায় বললেন,,,
‘ চাঁদটা কে জানিস দোল? চাঁদটা তুই! আমার একান্ত চাদঁ। ‘
মাথা নিচু করে ফুপিয়ে কেঁদে দেই! এই সুখ কি আমার প্রাপ্য? পূর্ব ভাই কি আমার? এই সুখানুভূতি কি একান্তই আমার?
এই লোকটা এমন কেনো?
আমার কান্নার আওয়াজ পূর্ব ভাইয়ার কানে যেতে তিনি এক প্রকার উন্মাদ হয়ে উঠলেন যেনো। তার বলিষ্ঠ দুহাত দিয়ে আমার কাছে টেনে নিয়ে দুচোখের পানি মুছে দেন! অশ্রুমাখা চোখ দুটোয় আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে দেন।
উত্তেজিত কন্ঠে উতলা হয়ে বললেন,,,
‘ কাঁদছিস কেনো তুই?কাঁদিস না দোল প্লিজ, ফর গড সেইক! বল কি হয়েছে? খারাপ লাগছে? ডোন্ট ক্রাই! আমাকে কি মেরে ফেলতে চাস? তোর চোখের পানি আমায় মরনযন্ত্রনা দেয়, কষ্ট দিয়ে জর্জরিত করে ফেলে! ক্ষতবিক্ষত করে দেয় ভিতরটা। ‘
পূর্ব ভাইয়ার তুমুল অস্থিরতা আর কষ্টের ছাপে এটেসেটে থাকা চেহারা দেখে কান্না আমার মূর্হতেই থেমে যায়। শান্ত কন্ঠে বলি,,,
‘ কাঁদবোনা! আপনি এতো অস্থির হচ্ছেন কেনো?’
তিনি মুখে কিছু না বলে আমায় জরীয়ে ধরেন। একহাত পিঠে আর অন্যহাত দিয়ে আমার মাথা বুকের মাঝে চেপে ধরেন!
উপলব্ধি করি তার দ্রুত চলা হৃদস্পন্দন এর ধুকধুক শব্দ। হৃদস্পন্দন এর স্পন্দিত হওয়ার শব্দ এতো মধুর হয়?
বাতাসে বাড়ি খেয়ে আমার কর্ণকুহরে ভেসে আসে শান্ত কন্ঠের আওয়াজ।
তিনি বললেন,,,
‘ তোর কান্না আমায় মাত্রাতিরিক্ত কষ্ট দেয়। দহনে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দেয় ভেতরটা! শ্বাস আটকে এসে ছটফট করে হৃদপিণ্ড! তোর কান্না আমার পক্ষে দেখা সম্ভব না। নেক্সট যদি এক ফোঁটা আমার সম্পদ নষ্ট করিস বিনা কারণে তাহলে তোকে কঠিন শাস্তি দিবো। ‘
‘ শাস্তি ‘
পারেন তো শুধু এটাই দিতে, হুহ!
।
কেটে যায় বহুক্ষণ!
আঁধারের পর্ব কাটিয়ে আলোয় ঝলমল করে উঠে চারিপাশ।
পূর্ব ভাইয়া বাহুডোরে বন্ধী থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি তার খেয়াল নেই।
ঘুম ভাঙে কারো চিৎকার শুনে। চট জলদি চোখ খুলে দেখি অরিন চোখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে। পূর্ব ভাইয়ার থেকে নিজেকে ছাড়াতে নিলে তিনি আরো শক্ত করে চেপে ধরেন আমায়!
কাঁদো কাঁদো মুখে তার চেহারার দিকে তাকাতেই দেখি তার চোখযুগল বন্ধ! ঘুমে বিভোর সে! আমি আরেকবার অরিনের দিকে তাকিয়ে তার বুকে একটা ঘুষি দেই!
সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে নেয় তিনি। হকচকিয়ে উঠে বসে উত্তেজিত হয়ে বললেন,,,
‘ কি হয়েছে? ব্যাথা পেয়েছিস? ভয় পেয়েছিস?এভাবে ডাকলি কেনো?’
ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছি তার দিকে।
পূর্ব ভাইয়াকে আমি আঘাত করলাম সে তার প্রতিবাদ না করে আমায় নিয়ে অস্থির?
আমি মুখে কোনো কথা ছাড়া সামনে ইশারা করি। অরিনকে দেখে তিনি কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে থেকে ফের আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,
‘ এর জন্য ডেকেছিস?’
হ্যা! বলতেই তার চোখমুখে দেখা গেলো বিরক্তির লেশ। অরিন চোখ থেকে হাত সরিয়ে নিয়েছে তৎক্ষণাৎ! পূর্ব ভাইয়া বললেন,,
‘ তুই এতো সকালে এখানে?’
অরিন অপরাধী মুখ করে বলল,,
‘ সরি ভাই। দোলকে ডাকতে এসেছিলাম। ডিস্টার্ব করার জন্য সরি ওকে?দোল কে চাচি ডাকছে। তোমরা নিচে চলো, ‘
অরিনের স্বাভাবিক কথায় আম চমকিত!
তার মানে এই মেয়ে আগে থেকেই জানে পূর্ব ভাইয়া আমায় পছন্দ করে! তারজন্যই তাকে নিয়ে যা বলতাম তাতে হেয়ালি করতো অরিন।
আমি উঠে গিয়ে এক মিনিটও ছাঁদে না দাড়িয়ে চলে আসি নিচে।
।
আবরার ম্যানশনে আজ আবারও আসতে হলো!
তবে জানা নেই কতদিন থাকতে পারবো। অরা আপু চলে আসলেই আমি এখান থেকে চলে যাবো বহুদূর!
বাসায় প্রবেশ করতেই বড় চাচি হুড়মুড়িয়ে এসে আমায় জরীয়ে ধরেন। কাঁদো কন্ঠে বললেন,,,
‘ তুই কাল ছিলিনা বাড়িটাকে একদম মৃত্য মনে হয়েছে। আর যাবিনা এ বাড়ি থেকে। মার তাহলে একটাও মাটিতে পড়বে না। ‘
আমি মলিন হাসি দেই!
সবাই কথায় ব্যাস্ত। পূর্ব ভাইয়া আসেননি আমাদের সাথে। তার কাজ পড়ে যাওয়াতে তিনি মাঝেথেই চলে গিয়েছেন।
যাওয়ার আগে ফাজিল লোকটা সবার অগোচরে কপালে চুমু খেয়ে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছেন।
সন্ধ্যা নামতেই তোড়জোড় শুরু হয় অরা আপুকে ওয়েলকাম করার জন্য। এয়ারপোর্টে আমি, অরিন আর পূর্ব ভাইয়া, সায়ান ভাইয়া যাবেন! বাকিরা বাসায় থেকে ওয়েলকাম জানানোর কার্য সমাপ্ত করবেন।
এয়ারপোর্টে,
এনাউন্সমেন্ট হয়ে গিয়েছে প্লেন বিডিতে ল্যান্ড করার। চোখে টলমল পানি নিয়ে চারিদিকে একবার পরখ করে নেই।
কিছুক্ষণ পর জিন্স প্যান্ট, কালো রঙের একটা শার্ট পরিহিত মেয়ে ছুটে এসে পূর্ব ভাইয়াকে জরীয়ে ধরে। পূর্ব ভাইয়া পরে যেতে নিয়েও সামলে নেন নিজেকে। তার চোখমুখে বিরক্তির আভাস!
জরীয়ে ধরা মেয়েটাই হচ্ছে অরা আপু!
অরা আপু হটাৎ পূর্ব ভাইয়ার গলা ছেড়ে গালে চুমু দিয়ে বসেন তার।
উপস্থিত সবাই হতভম্ব!
আমি বহুকষ্টে নিজের কান্না দমন করে সেদিক চেয়ে আছি।
চলবে,
#স্নিগ্ধ_প্রেমের_সম্মোহন
–[পর্ব – ২২]
লেখিকা: #সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা
অরা আপু সবার সাথে হাসিমুখে কথা বিনিময় করছেন। আমি চুপচাপ আড়ালে দাড়িয়ে আছি। অরা আপু কথার তালে হেসে বারবার পূর্ব ভাইয়ার ওপর ঢলে পড়তেই পূর্ব ভাই দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় তার দিকে! তবে আপুর তাতে কোনো হেলদোল নেই।
আমার বেশ অবাক লাগছে পূর্ব ভাইয়ার ব্যাবহারে! তিনি এতোটা শান্ত কেনো? তার তো উচিত অরা আপুকে তুলে একটা আছাড় দেয়া। এতক্ষণে দেয়াও উচিত ছিলো। কিন্তু ভাইয়া তা করেননি একবারও! যখনি অরা আপু তার পাশে ঘেঁসে দাড়ান তখন তিনি কৌতূহল ভরা চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকান! আমার শান্ত দেখে হতাশ হয়ে চুপ হয়ে দাড়িয়ে থাকেন।
তবে এই মৌনতা বেশিক্ষণ টিকে না। পূর্ব ভাই হটাৎ বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠে জোর গলায় বললেন,,,
‘ এখানে আর কথা বলার দরকার নেই অরা। বাসায় চল! ‘
অরা আপু বলল,,,
‘ হ্যা চলো। বাবা মার সাথে কতদিন দেখা হয়না। ‘
সবাই একসাথে এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়ে যায়। অরা আপুর সাথে আমার বেশি কথা হয়নি। দু একটা কথা ছাড়া! ইচ্ছে করছিলো না তার সাথে কথা বলার।
এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়ে পূর্ব ভাইয়ার তার গাড়িতে বসে পড়ে। চোখ দিয়ে আমায় ইশারা করে তার পাশে বসতে। আমি বসতে নেবো তার আগেই অরা আপু এসে ফ্রন্টসিটে বসে বলল,,,
‘ দোলপাখি তুই অন্য গাড়িতে যা ওকে?আমি ফ্রন্টসিটেই বসবো। ‘
বিষন্ন ভরা চাহনিতে তাকাই পূর্ব ভাইয়ার দিকে। তিনি রেগে তাকিয়ে আছেন অরা আপুর দিকে। কিছু বলতে নেবেন তৎক্ষনাৎ অরিন দৌড়ে এসে বলল,,,
‘ পূর্ব ভাইয়া তুমি ড্রাইভিং সিট থেকে নামো প্লিজ? আজকে আমি ড্রাইভিং করবো! ‘
কোনো কথা ছাড়াই পূর্ব ভাইয়া নেমে পড়েন গাড়ি থেকে। অবাক চাহনিতে সেদিকে তাকিয়ে আছি। পূর্ব ভাইয়া তার গাড়িতে কাওকেই ড্রাইভিং করতে দেননা একমাত্র তিনি ব্যাতীত! তবে আজ অরিন একবার বলাতে মেনে নিলো?
অরিনকেও দেখলে ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাড়িয়ে আছে। তবে পরক্ষণে মুচকি হাসি দিয়ে বসে পড়ে ড্রাইভিং সিটে। বিড়বিড় করে বলল,,,
‘ আহা… কত প্রেম! ‘
অরিন পাশেই ছিলো আমার। তাই ওর বিড়বিড় করে বলা কথাটা আমার কানে এসে বাড়ি খায়। আমি চমকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। পূর্ব ভাইয়া এটা করলেন আমার জন্য?
অরিন গাড়ি স্টার্ট দিতেই পূর্ব ভাইয়া আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরেন! ফোন করে কাওকে বাইক আনতে বলে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে রাখেন!
অতঃপর আমার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,,,
‘ অরার আগে তুই বসতে পারলি না? তাহলে তো আর বাইকে যেতে হতো না! ‘
আমি শান্ত স্বরেই তার দিকে তাকিয়ে বলি,,,
‘ যেখানে আমার বসার অধিকার নেই সেখানে আমি অধিকার খাটাই কি করে?’
পূর্ব ভাইয়া অন্যদিকে চেয়ে ছিলেন। আমার কথা শুনে তিনি ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকান। তার চেহারায় রাগের আভাস বিদ্যমান!
তিনি রেগে বললেন,,,
‘ অধিকার? হোয়াট দ্যা হেল? আমার বাড়ি, গাড়ি, এভ্রিথিং, এসবে তুই ব্যাতীত আর কারো অধিকার নেই! আমার ওপর তুই ছাড়া অন্য কারো বসবাস বা স্পর্শ করার অধিকার নেই! আমার হৃদয়ের হৃদমোহিনি তুই ব্যাতীত অন্য কেও হওয়ার অধিকার নেই। আমার সবটা জুরে তুই! তোর বিচরণ, তোর নামে আমার শ্বাস চলে! সেখানে তুই অধিকারের কথা বলছিস ইডিয়ট? ‘
পূর্ব ভাইয়ার কথায় মন গহীনে ছেয়ে যায় ভালো লাগার বার্তা! চারিদিক আন্দোলিত হতে থাকে কিছু ভালো লাগার উৎকন্ঠা!
তবে বাহিরে তা প্রকাশ করিনা। শুধুমাত্র মলিন হেসে অন্যদিকে মাথা ঘুরাই। সেই হাসিটা পূর্ব ভাইয়ার নজরে আসতে দেইনি। নয়তো নিশ্চিত কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে ফেলবেন!
।
কিছুক্ষণ পরই একটা ছেলে পুরো নতুন একটা বাইক নিয়ে এসে হাজির হয়! বাইকটা যে মাত্র কেনা তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
ছেলেটা বাইকটায় চড়ে আসেনি। ছোট একটা ট্রাকে নিয়ে এসেছে । তা দেখে ভ্রু কুচকে আসে আমার। নতুন বাইক কেনারই বা কি দরকার? আর এভাবে আনার মানে কি?অদ্ভুত!
ছেলেটা এসে পূর্ব ভাইয়াকে বলল,,,
‘ স্যার এইযে আপনার ওর্ডার! পাঁচ লাখ টাকা! আপনার পিএ ফোন করে এটাই দিতে বললো।’
পূর্ব ভাই একনজর বাইকটা দেখে ব্যাক পকেট থেকে তার ওয়ালেট বের করে! ক্রেডিট কার্ড বের করে পে করে নিয়ে বাইকের চাবি নিয়ে আমার কাছে আসে। তিনি নিজেই আমায় কিছুটা দূরে দাঁড় করিয়ে রেখে গিয়েছিলেন! কারনটা জানা নেই।
পূর্ব ভাইয়া আমার সামনে আসতেই আমি ফট করে বলি,,,
‘ বাইক কেনার কি দরকার ছিলে পূর্ব ভাই?উবার ডেকে নিলেই তো হতো। বাসায় তো আরো গাড়ি ছিলো। ড্রাইভার আংকেল কে গাড়ি নিয়ে আসতে বললেও তো হতো। শুধু শুধু টাকা খরচ কেনো করলেন?’
পূর্ব ভাইয়া আমার নাক চেপে ধরলেন! আলতো কন্ঠে বলেন,,,
‘ বউ হওয়ার আগেই বউদের মতো আচরণ করা শুরু করে দিয়েছিস?হু? তবে টাকা নিয়ে কিপ্টামি মার্কা কথাবার্তা বলবি না। আই ডোন্ট লাইক দিস! দরকার আছে বলেই বাইক কিনেছি। আর আমার মাথা খারাপ? তোকে উবারে নিবো? তোর স্পর্শ আমার জিনিস ছাড়া অন্য কিছুতে লাগুক তা আমি চাইনা! ‘
পূর্ব ভাইয়ার কথায় হা করে তাকিয়ে আছি!
পরক্ষনে বিড়বিড় করে বলি,,,
‘ পাগল লোক একটা! ‘
পূর্ব ভাই মাথা নিচু করলেন। কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললেন,,,
‘ তোরই জন্য পাগল! ‘
কথাটা বলে আলতো করে কানের লতিতে চুমু দেন তিনি! কেঁপে উঠে পিছে সরে যাই। আশপাশে অনেক মানুষের পদচারণ তবে কেও আমাদের লক্ষ করেনি! ভাগ্যিস বেঁচে গিয়েছি। নাহলে লজ্জায় আমি মরে যেতাম এখানেই!
পূর্ব ভাইয়া বাইকে উঠে আমার ইশারা করে ডাকেন!
আমি শত অস্বস্তি আর একরাশ ভয় নিয়ে এগোই সেদিকে। বাইকে কোনোদিন উঠিনি! ভয় লাগে প্রচন্ড। আজ প্রথমবার উঠতে হচ্ছে তাও পূর্ব ভাইয়ার সাথে।
হেলমেট মাথায় পড়ে নিয়ে বাইকের বেশ কাছে গিয়ে দাড়াই!
বাইকের কাছে যেতেই আঙ্গুল নাড়াচাড়া করতে থাকি। হাসফাস করার এক পর্যায়ে পূর্ব ভাইয়া কিছুটা ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললেন,,,
‘ এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো? জলদি ওঠ! বাসায় যাওয়ার প্লান নেই?না গেলেও আমার সমস্যা নেই। তবে এখানে না দাড়িয়ে অন্য কোথাও চল! ‘
আমি আমতা আমতা করে বলি,,,
‘ ভাইয়া আমি বাইকে উঠবো না! ‘
‘ কেনো?’
আমি কাঁদো কন্ঠে বলি,,,
‘ ভয় লাগে। এর আগে কখনো উঠিনি! যদি পরে যাই?’
পূর্ব ভাইয়া হেসে বললেন,,,
‘ আমি থাকতে তুই পড়ে যাবি?জোক্স অফ দ্যা ডে! ভয় পাওয়ার কিছু নেই। উঠে আমায় পেছন থেকে জরীয়ে ধর, পড়বিনা! ‘
আমি মনে মনে বলি, ‘ সেটাই তো সমস্যা! আপনাকে স্পর্শ করলে যে কাঁপুনি দেয় শরীর। তখন দেখা যাবে কাঁপতে কাঁপতেই পড়ে গিয়েছি ধপাস করে! ‘
পূর্ব ভাইয়া ফের বললেন,,,
‘ কি হলো?উঠবি না?নাকি তোকে ফেলে যাবো?’
আমি দ্বিধা এড়িয়ে উঠে বসি। মাঝখানে দূরত্ব বজায় রেখে ধীরে তার কাঁধে একহাত রাখতেই তিনি বললেন,,,
‘ জরীয়ে ধর! পড়ে যাবি নয়তো। ‘
‘ হুহ্ পড়বোনা। আপনি স্টার্ট দিন। ‘
‘ সিয়র?’
‘ জ্বী! ‘
পূর্ব ভাইয়া বাইক স্টার্ট দেন। তবে স্বাভাবিক এর তুলনায় স্পিড বাড়িয়ে। যার ফলে হুমড়ি খেয়ে তার পিঠে মাথা লেগে যায় আমার। না চাইতেও তাকে জরীয়ে ধরতেই হয়! মনে মনে শ’ খানেক গালি দেই তাকে। তবে সেগুলোকে আদও গালি বলে কিনা জানা নেই!
খানিক বাদে পূর্ব ভাইয়া বললেন,,,
‘ সেই তো জরীয়ে ধরতেই হলো! তো ফাষ্টে এমন করলি কেনো?’
আমি কোনো কথা ছাড়াই চুপচাপ থাকি। নয়তো জবাব দিয়ে দিতাম কঠিন করে। এখন জবাব দেয়ার পরিস্থিতিতে নেই আমি। এমনিতেই ভয়ে ঘেমে একাকার!
চলবে,