স্নিগ্ধ প্রেমের সম্মোহন পর্ব-৫৫ এবং শেষ পর্ব

0
2054

#স্নিগ্ধ_প্রেমের_সম্মোহন
#সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা
| শেষ পর্ব |

সময় এবং নদীর স্রোত প্রবাহমান। চোখের পলকে কিভাবে চলে গিয়েছে আরো চারটি মাস খেয়াল নেই বিন্দুমাত্র। সময়ের খাতা থেকে বিয়োগ হলো আরো চার চারটি মাস। কেটে গেলো ১ টি বছর! বিদায় ঘন্টা বেজেছে ২১ সালের।

ইংরেজি নতুন বর্ষ ২০২২ সালকে বরণ করতে ১ সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়েছে তোড়জোড় কানাডায়। রাস্তার দু ধারের গাছগুলোতে মরিচ বাতির আবির্ভাব ঘটেছে। পুরো টরেন্ট কে নতুন করে সাজানোর জন্য উন্মাদনায় মেতে উঠেছে প্রতেক মানুষ। তাদের মতে নতুন বছর আসলে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধ! তবে আমার এসবে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। নতুন বছর ২০ সাল যখন পার হয়ে ২১ সালে পদচারণা ঘটলো কিছুই নতুন ঘটেনি।

তবে এবার নতুন বছরটা নিয়ে আমি সহ অরিন, চাচু মামনি আবরার পরিবারের সবাই এক্সট্রা খুশি। এবার প্রায় ১ বছর পর বাংলাদেশে যাচ্ছি আমরা। নতুন বছর উপলক্ষে এখানে একটা অনুষ্ঠান হয় যাতে ১ সপ্তাহ ছুটি দেয়া হয় সবাইকেই। শুধুমাত্র ডাক্তাররা বাদে। তবে আমি মেডিকেল স্টুডেন্ট হওয়াতে ছুটি পেয়েছি।

.

লিয়াকে কোলে করে বেডে বসিয়ে দিয়ে অরিনকে উদ্দেশ্য করে বলি,

-‘ তোর মেয়ে তোর থেকেও একধাপ বেশি দুষ্টুমি শিখেছে অরিন। এক ঘন্টা আমায় প্রায় জ্বালিয়ে মেরেছে। ‘

অরিন দাঁত বেড় করে হেঁসে বলল,

-‘ দেখতে হবে না কার মেয়ে? দুষ্টু হবে নাতো অভ্রর মতো নিরামিষ মার্কা ভদ্র হবে নাকি?’

-‘ তুই অভ্র ভাইয়ার ইনসাল্ট করছিস?’

-‘ ইনসাল্ট কিসের দোস্ত? যা সত্যি তাই বলছি। ব্যাটা এক নাম্বার নিরামিষ, বহুত ভদ্র এতো শান্ত কে হতে বলছে?তার ওপর সে নাকি আমার প্রেমে পড়ছিলো তাই বিয়ে করছে। বিয়ের দুই বছর কেটে গেলো ট্রাস্ট মি এটা মানি নি। মানে এমন বান্দা প্রেম ভালোবাসা মানে বুঝে নাকি?হুদ্দা ফাউ প্যাচাল মারে। ‘

….

-‘ আচ্ছা তাই নাকি অরিন?’

পুরুষালি গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে অরিন আমি দুজনেই পিছে দৃষ্টি দেই। অভ্র ভাইয়া দাঁড়িয়ে। মুখে গম্ভীর ভাবটা টান টান ভাবে বহমান! রেগে গিয়েছেন সেটা নিশ্চিত। অরিনের দিকে তাকিয়ে দেখি বেচারার মুখ চুপসে গিয়েছে। আমি মিটিমিটি হেঁসে বলি,

-‘ কিরে ভয় পাইছিস?তো, এতক্ষণ বড় বড় ভাষণ গুলো ছাড়লো কে?’

অরিন জড়তা ভাব কাটিয়ে বলল,

-‘ কিসের ভয়, চুপ কর! আমি যা বলছি তাই সত্যি। ‘

আমি মুচকি হেঁসে ‘পরে কথা হবে’ বলে বেড়িয়ে আসি। তাদের একান্ত মূর্হতে ডিস্টার্ব করার ইচ্ছে হলো না। নাহলে অরিনকে আজ ইচ্ছেমতো ধুয়ে দিতাম। অতঃপর রুমে এসে কাবার্ড থেকে এক সেট ড্রেস নিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুম এর দিকে এগোই। ক্লান্ত ভাব এঁটে সেঁটে প্রায় ঝাপটে ধরেছে। সাওয়ার না নিলে শান্তি মিলবে না।

ঝটপট সাওয়ার শেষে বাথরোব পড়ে বেড়িয়ে আসতে বাধ্য হই এক প্রকার। ওয়াশরুম এ নিয়ে যাওয়া ড্রেসগুলো অসাবধানতা বশত ফ্লোরে পড়ে ভিজে টুইটুম্বুর হয়ে গিয়েছে। কাবার্ড থেকে ড্রেস নিয়ে পিছনে ঘুরতেই দৃশ্যমান হয় পূর্বের বড় বড় চোখ করে থাকা দৃষ্টি। সে অবাক হয়ে চেয়ে আছে। আমি ইতস্তত বোধ করে সরে গিয়ে মসৃণ দেয়ালের সাথে মিশে দাঁড়াই। যত যাইহোক পূর্বের সামনে আমি কখনো হাঁটু অব্দি ড্রেস পড়ে আসিনি। তাই লজ্জা, সংকোচ দুটোই কাবু করে নিয়েছে আমায়!

পূর্ব কয়েক কদম এগিয়ে আসলেন। তার চাহনি আমার চোখের মাঝে সীমাবদ্ধ। অদ্ভুত সম্মোহন মূলক চাহনি! তিনি এগিয়ে এসে মসৃণ দেয়ালের দুই পাশে হাত রেখে আমায় এক প্রকার বন্দী করে নিলেন। মাথা নিচু করে একটু ঝুঁকে নিয়ে বললেন,

-‘উফফফ..! বাথরোব এ তোমায় এক্সট্রা হট লাগছে ইউ নো?মন তো চাচ্ছে টুপ করে গিলে খেয়ে ফেলি’

বাঁকা হাসি দেয় পূর্ব। তার ঠোঁটের কোনায় যেনো দুষ্টু হাসিটাও বিদ্যমান। লাগামহীন, লজ্জাজনক কথা শুনে চুপসে যাই তৎক্ষনাৎ! হাত থেকে ড্রেসগুলো শুভ্র রঙের ফ্লোরে পড়ে যায়। পূর্ব হাসলেন ফের! সেই হাসির মধুময় শব্দ কানে এসে বাড়ি খায় আমার। তিনি খানিকটা উবু হয়ে নিচ থেকে ড্রেস গুলো তুলে নিলেন। তার একহাত আমার কোমড়ে রেখে কপালে কপাল ঠেকিয়ে নাকের ডগায় টুপ করে চুমু খায়। ফিসফিস করে বললেন,

-‘ চেঞ্জ করে আসো। নাহলে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারবো না। ‘

হাতে ড্রেসগুলো তিনি ধরিয়ে দিতেই দুইহাত দিয়ে তাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যাই। বুকে হাত দিয়ে লম্বা কয়েক শ্বাস টেনে নিয়ে ক্ষ্যান্ত হই! অস্বস্তি, লজ্জা, সব একসাথে চেপে ধরেছে। পূর্বকে লজ্জা দেয়ার জন্য লজ্জাহীন ব্যাক্তির এওয়ার্ড দেয়া উচিত! ব্যাটা বজ্জাত।

.

পরিপাটি হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হই। তবে তার আগে রুমে উকি ঝুঁকি দিয়ে খেয়াল করি পূর্ব আছে কিনা। তবে তিনি নেই রুমে! বরাবরের মতো ফোনে ব্যাস্ত ব্যালকনীতে গিয়ে। দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে রুমে ঢুকি। এই লোক মেইবি চব্বিশ ঘণ্টাই ফোনের মাঝে ব্যাস্ত থাকেন! যখন আমি না ছিলাম। অভ্র ভাইয়াকে একবার বলতে শুনেছিলাম। আমি পূর্বের লাইফে আসার আগে তিনি কাজ ছাড়া বারতি কোনো টাইম ওয়েস্ট করতেন না। তবে আমি তার লাইফে আসার পর পরিবার সহ পুরো বন্ধু মহল থেকে শুরু করে সবার সাথে টাইম স্পেন্ড করেন।

বেলকনিতে এসে দাঁড়াতে পূর্বের দৃঢ় কন্ঠ কানে এসে বাজে! তিনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

-‘ ঐ কুত্তাটাকে কারেন্ট এর শক দাও আপাতত। আমি আসছি! টুকরো টুকরো করে কাটবো আজকে ঐ *** অদ্রিনকে। ‘

ফোন কেটে দিয়ে দেয়ালে ঘুসি দেয় পূর্ব। আমি আঁতকে উঠে চটপট তার সামনে এগিয়ে আসি। তার আহত হাতটা আঁকড়ে ধরতেই তিনি হকচকিয়ে তাকান। আমতা আমতা করে বললেন,

-‘ কখন এসেছো?’

-‘ যখন আপনি অদ্রিনকে টুকরো টুকরো করার প্লানিং করছিলেন! ‘

-‘ অহ! ‘

পূর্ব এবার নিজের হাতের দিকে তাকায়। বেশি আঘাত লাগেনি। চুলের পানিতে ভিজে যাওয়া আমার ওড়নার একাংশ দিয়ে তার আহত হাতটা আলত করে মুছে দেই। অতঃপর পূর্বের চোখের দিকে গভীর দৃষ্টি মেলে বলি,

-‘ নিজের হাত রক্তাক্ত করার কি দরকার পূর্ব? ওকে আইনের হাতে ছেড়ে দাওনা। এসব খুন করা থেকে দূরে থাকো প্লিজ! ‘

পূর্ব ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকে নিয়ে ঠোঁটের কোনায় মৃদু হাসির রেখা টেনে বললেন,

-‘ খুন কোথায় করি? যার প্রাপ্য যে সাজা তাই তো দেই। আইনের কাছে হস্তান্তর করবো? তাহলে আমি কে? আমি যে গোয়েন্দা বিভাগের সিনিয়র অফিসার ভুলে গিয়েছো?’

আমি কাঠ কাঠ কন্ঠে বলি,

-‘ আপনি আজই রিজাইন লেটার দিয়ে আসবেন। আমার কথাই লাষ্ট পূর্ব! আজই! এসবের মাঝে আর জড়াবেন না প্লিজ। এটলিষ্ট আমার জন্য? ‘

-‘ এতো রিকুয়েষ্ট করার দরকার নেই! তুমি একবার আমায় ভালোবাসা স্বরূপ বলেই দেখো। আমি মানবো তো। আজ রিজাইন লেটার দিয়ে আসবো তবে আগে অদ্রিনকে নিজ হাতে মেরে। যার শরীরে আমি ফুলের স্পর্শ ও লাগতে দেইনা। তাকে অদ্রিনকে আঘাত করেছে লাথি মেরে! এতো সহজে কি করে ছেড়ে দেই? হুম?’

পূর্ব কপালে দু – তিনটে চুমু খেয়ে চলে যায় চট জলদি। সেদিক পানে তাকিয়ে আমার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। তবে আজ আমি চাই। মনেপ্রাণে চাই অদ্রিনের কঠিন শাস্তি হোক! কঠিনতর থেকে কঠিন।

______________

আবরার মঞ্জিলে আমার আগমন ঘটেছে আজ চার দিন হলো। পুরো বাড়িতে আজ উৎসবমুখোর পরিবেশ। আজ রাতে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে বেশ আয়োজন করা হয়েছে প্রথম বারের মতো আবরার মঞ্জিলে! এর আগে এসবে কখনো কেও বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখায়নি। তবে এবার একটু আলাদা খুশি হওয়াতে সবাই থার্টি ফার্স্ট নাইট সেলিব্রেট করার চিন্তা করছে!

কাঁচা ঘুমের রেশটা হুট করে কেটে যায়। বদ্ধ চোখ যুগল টেনে খুলে সামনে তাকাই! পূর্বের ঘুমন্ত চেহারা সব আলসেমি এবং ঘুমুঘুমু ভাব সব কাটিয়ে দিয়েছে প্রায়। সবাই বলে ঘুমন্ত অবস্থায় নারীদের সবথেকে সুন্দর লাগে তবে আমার যে উল্টোটা মনে হচ্ছে! পূর্বকে ঘুমন্ত অবস্থায় আরো অতীব সুর্দশন লাগে যা না দেখলে বোঝা যাবেনা।

বেড হাতড়ে হাতড়ে ফোন হাতে নিয়ে ঝটপট তিন চারটা ছবি তুলে নেই তার। পরিশেষে ফোনটা পাশে রেখে দিয়ে পূর্বের গালে সন্তপর্ণে দুটো চুমু খেয়ে উঠে বসি। নিজের কর্মে আমি নিজে লজ্জিত! বেড থেকে নেমে যেতে নিলে কিছু ফালি কন্ঠস্বর শুনে ফ্রীজ’ড হয়ে যাই মূর্হতে।

-‘ কোথায় যাচ্ছো স্নিগ্ধপরী? আমায় ঘুমন্ত অবস্থায় চুমু খেয়ে আমার পাওনা না বুঝিয়েই চলে যাচ্ছো? নট ফেয়ার জান! কাম টু মি। আই ওয়ান্ট টু কিস ইউট লিপ্স! ‘

বেড থেকে নামানো পা যুগল ফ্রীজ’ড হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। ইশশশ! লোকটা বুঝে ফেলেছে? মাই গড! কি লজ্জা…! চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে কিছু ভাবতে নিলে অনুভূত হয় ঘাড়ে চিনচিন ব্যাথা। তড়িৎ বেগে চোখ খুলতেই দৃশ্যমান হয় পূর্বকে।সে আমার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে রেখেছে। একহাত দিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে বলি,

-‘ আউচ! পূর্ব, কামড় দিচ্ছেন কেনো?’

-‘ কামড় কোথায় দিচ্ছি? এটা লাভ বাইট। ‘

চেখমুখ কুঁচকে তাকে সরিয়ে উঠে দাঁড়াই। পূর্ব হন্তদন্ত হয়ে বললেন,

-‘ ঠোঁট কামড়ে ধরে আমায় পাগল করে এখন পালানোর ধান্দা?নো ওয়ে! কাছে আসো ফাষ্ট! ‘

ডান হাতের কব্জি ধরে টান মেরে তিনি আমায় নিজের ওপর ফেলে দেন। হতবিহ্বল হয়ে বলি,

-‘ প্রবলেম কি?এমন করছেন কেনো? সরুন! ‘

-‘ উঁহু, আগে চুমু খাবো তারপর। ‘

অতঃপর আর কি? পূর্ব ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন নিজের কার্যসিদ্ধিতে। আমার ওষ্ঠদ্বয় নিজের অধর যুগলের মাঝে বন্দী করে নিলেন। প্রথমে কৃত্রিম রাগ দেখালেও তার স্পর্শ সেই কৃত্রিম রাগটাকে মাটি করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললো মূর্হতে।

.

আঁধারের ধাপ চলছে! চারিদিক থেকে ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে। কালো রঙে চারিপাশ টা ঢেকে থাকার হলেও চারপাশে এখন চলছে কৃত্রিম আলোর অধ্যায়। আবরার মঞ্জিলে নতুন বছরের উপলক্ষে বড় চাচা পার্টি থ্রো করেছে। প্রথমত অরিনের তিন বেবির জন্য এবং দ্বিতীয়ত সায়ান ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে তা জানাতে। তৃতীয়ত কারণটা আপাদত আমি আর চাচু জানি মাত্র। বাকি কাওকে জানানে হয়নি! একটু পর বলা হবে। সবার কৌতূহল এর শেষ নেই। তৃতীয় কারণটা কি হতে পারে তা জিজ্ঞেস করে অরিন মুখের ফেনা তুলে ফেলেছে! আমি বড় চাচা শুধু হেঁসেছি। কিন্তু পূর্ব? দ্য রোমান্টিক ম্যান সবার কাছে গম্ভীর। সে তৃতীয় কারণটার প্রতি ইন্টারেস্ট দেখাইনি!

রাত ১১ টা ৫৫ মিনিট। আমার সেই অতী পছন্দের নদীর পাড়ে এসে থেমেছে পাচটা গাড়ি। একটাতে আমি আর পূর্ব! দ্বিতীয়টাতে অভ্র ভাইয়া এবং অরিন, তৃতীয়টায় সায়ান ভাইয়া এবং আরিশা আপু চতুর্থটায় আদ্রাফ এবং জান্নাত এবং সবথেকে শেষেরটায় দ্য সিঙ্গেল ম্যান নীরব!

সবাই কাপল হিসেবে এসেছে। যার কারণ বশত নীরব একা। বেচারার মুখ দেখলে কষ্ট লাগে। আদ্রিনার সাথে ব্রেকাপ হয়ে গিয়েছে ওর।

সবাই গাড়ি থেকে নেমে নদীর পাশে থামানো নৌকায় চড়ে বসি। মাঝি নৌকা চালিয়ে মাঝখানে এসে পড়ে! নৌকার চারিপাশে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা আছে। গোলাপের পাপড়ি সহ অন্যান্য ফুলের বাহার! একদম কর্ণারে রাখা আছে ফানুস। সবার নৌকা একইভাবে সাজানো হলেও আমার এবং পূর্বের নৌকাটা একটু আলাদা ভাবে সাজানো। চারিদিক এ দৃষ্টি দিয়ে সৌন্দর্য বিলাস সময়ে পূর্ব কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,

-‘ রেডি?’

-‘ হু! কয়টা বাজে?’

-‘ ১১ টা ৫৯! ‘

হাতে ফানুস নিয়ে চোখ বন্ধ করে সবাই ছোট্ট করে একটা উইশ করে। অতঃপর সবশেষে হাত থেকে ফানুস টা ছেড়ে দেয়! স্ব-শব্দে সবাই একসাথে বলে উঠলো, ‘ Happy New Year! Welcome 2022’

পূর্ব সহ সবার দৃষ্টি আকাশে। আমি হটাৎ পূর্বের একহাত আমার পেটে আলত করে রাখি। তার কানের কাছে নরম কন্ঠে বলি,

-‘ ফের আগমন ঘটেছে তার! আমাদের বাচ্চাটা আবার ফিরে আসছে আমাদের কাছে পূর্ব। ‘

স্তব্ধ দৃষ্টি পূর্বের! থমকে তাকিয়ে আছে তিনি। এই এক বছরে চিকিৎসা করার পর সুস্থ আমি। এখন বেবি নিলে কোনো রকম সমস্যা হবেনা তা জানিয়ে দিয়েছেন ডক্টর! তিনদিন হলো জানতে পেরেছি আমার ভেতরে বেড়ে উঠছে আরেক অস্তিত্ব!

পূর্ব হটাৎ জরীয়ে ধরে আমায়। ঘাড়ে নিজের মাথা রেখে বললেন,

-‘ ভালোবাসি স্নিগ্ধপরী! যদি তুমি আমায় নিজের স্নিগ্ধ প্রেমের সম্মোহনে সম্মোহীত না করতে সেই সন্ধ্যায় তাহলে হয়তো আমার জীবনটা আজ যতোটা সুন্দর ততোটা সুন্দর হতোনা। আল্লাহর তায়ালার কাছে অনেক শুকরিয়া তিনি আমায় তোমাকে দিয়েছেন। ভালোবাসি! ‘

পূর্ব আমার জীবনের এক বিশাল প্রাপ্তি। একজন মানুষ নিজেকে ছাড়া অন্য কাওকে এতোটা কিভাবে ভালোবাসতে পারে?তা আমি পূর্বকে দেখে বুঝেছি, শিখেছি এবং বিশ্বাস করেছি। আমি চেষ্টা করি পূর্ব কে তার মতো করে তার থেকেও বেশি ভালোবাসতে তবে এটা হয়তো হবার নয়। পূর্বের মতো করে তাকে আদও ভালোবাসতে পারবো কিনা সন্দেহ! কত কিছু সহন করেও তিনি বিনা শর্তে অতী গভীর ভাবে আমায় ভালোবাসেন। অহনের সাথে রিলেশনে ছিলাম এটা পূর্ব জানতেন একশো ভাগ নিশ্চিত আমি। কিন্তু কেনো আমায় তিনি কিছু বলেননি এ নিয়ে অনেকবার প্রশ্ন করেছি। পূর্ব প্রতিবার রহস্য ময় হাসি দিয়ে বলেছেন, ‘ কিছু কথা নাহয় গোপণ থাক। ‘

ব্যাস! আর জানা হয়নি কিছু। পূর্ব বলেননি। আমিও আর জানতে চাইনি। দরকার কি অযথা অতীত টেনে?

পূর্বের বুকে মাথা রেখে চুপ হয়ে যাই। ধুকধুক শব্দ কানে প্রতিফলিত হচ্ছে। মন বলছে সময়টা হাজার বছরের জন্য থেমে যাক এখানে।থেমে যাক……

আমি নরম কন্ঠে বলি,

-‘ ভালোবাসি আমিও! ‘

পূর্ব তার বলিষ্ঠ একহাত আমার পেটে রাখেন। অন্য হাত গলিয়ে দেন পিঠে। মাথায় আলত করে চুমু খেয়ে চোখ বন্ধ করে নেন। স্নিগ্ধ কিছু মূর্হত থাক না উপভোগ্য হয়ে।

***সমাপ্ত***

_______________________________________

[ গল্পটা ছিলো কাল্পনিক। শেষ হলো আজ স্নিগ্ধ জগতের কল্পনার সফর। কাল্পনিক গল্পটাকে আপনারা বাস্তবের সাথে মিলিয়ে তার সৌন্দর্য নষ্ট করবেন না। আই এগ্রি! অনেক ভুল ছিলো গল্পে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

#স্নিগ্ধ_প্রেমের_সম্মোহন গল্পটা আমার লিখা গল্পের দ্বিতীয়তম গল্প। একদম কাচা হাতের লিখা। তাই ভুল থাকাটা কোনো বড় ব্যাপার না! প্রথম দিকের লেখায় অনেকেরই ভুল থাকে এবং থাকবে। ভুল থেকেই তো মানুষ সঠিক জিনিসটা শিখে। এতদিন ধরে চলা গল্পটা কেমন হয়েছে জানাবেন। সাইলেন্ট এবং এক্টিভ রিডার্স সবাই আজ গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।আপনাদের পাঠ্য প্রতিক্রিয়া পাওয়ার আশা করছি।

পূর্ব দোলকে নিয়ে আবারও ফিরে আসবো হয়তো আপনাদের কাছে। তবে তার আগে অন্য কাপল নিয়ে লিখবো। ভালো থাকবেন। ভালোবাসা রইল।আসসালামু আলাইকুম। ❤️]