স্পর্শ পর্ব-০৭

0
926

#স্পর্শ
#পর্ব_৭
#writer_nahida_islam

খাবার খেয়ে ক্লান্ত শরির নিয়ে রুমে ডুকতে ই দেখে ইফাজ আর সুমি ও তার ভাই বসে বসে গল্প করছে। অতসীকে দরজায় দাড়াতে ইফাজ বললো,

-তুমি অন্যকোথাও গিয়ে ঘুমাও।

অবাক হলাম আমার সাথে এমনটা হতে পারে তা অভাবনীয় ছিলো না। গেস্ট রুমের দিকে যেতে ই দেখলাম, গেস্ট রুমগুলো তালাবদ্ধ। হতাশ হয়ে সোফার রুমের দিকে পা বাড়ালাম। লাইট অফ করে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আমি শুয়ে পড়ার সাথে সাথে ইফাজের মা এসে বললো,

-এমন হাতির মতো শরির নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লে তো সোফা বেশি দিন টিকবে না।অন্য কোথাও গিয়ে শুয়ে পড়।

এমন কথা শুনে সাথে সাথে শোয়া থেকে উঠে বসলাম। উনার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-এখন ফ্লোরে শুয়ে পড়লে ও বলবেন কার্পেট ছিড়ে যাবে।
কথাটা বলে সাথে সাথে কিচেনের বাহিরে শুয়ে পড়লাম। বড্ড গরম তাও সহ্য করতে হবে কিছু তো করার নেই। মনে মনে শুধু এটুকু ই বললাম এমন ভাগ্য যেনো কারো না হয়।

ফ্লোরে শুয়ে পড়তে মনে হলো কয়েকবছর৷ আগের একটা স্মৃতি।
শিউলি আমার বান্ধবী ছিলো। স্কুল শেষে বাড়িতে এসে ই শিউলির সাথে পুতুল খেলতাম। একদিন স্কুল থেকে এসে খেয়ে শিউলিদের বাড়ির গেইটে যেতে ই দেখলাম,
শিখলির বাবা তার মাকে মারতেছে। এটা দেখে আমি চিৎকার করে কান্না করতে থাকি। আমার কান্না শুনে মা বাড়ি থেকে দৌড়ে আসে। এসে চাচার কাছ থেকে চাচিকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসে, সেদিন চাচির সাথে সাথে আমি ও অনেক কেদিছিলাম। আর চাচিকে বলেছিলাম,

–চাচি তুমি চলে যাও না কেনো। এই পাশান মানুষটার কাছে কেনো পড়ে পড়ে মার খাচ্ছো।

চাচি আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলো,
-আমার যে তিনটা ছেলে মেয়ে আছে তাদের ছেড়ে আমি কোথায় যাবো বল।

প্রতিউওরে আমি বলেছিলাম,

–চাচি তুমি কাজ করে খাবে এতো তো তোমার চাচার নির্যাতন সহ্য করতে হবে না।

–এখন তো তোমার চাচার অত্যাচার সহ্য করি তোমার চাচার কাছ থেকে গেলে সংসার ভেঙে দিলে তো পরিবার সমাজ সবার মানুষিক অত্যাচার সহ্য করতে হবে।

চাচির কথাটা শোনে সেদিন কোনো উওর দিতে পারিনি কারণ আমি তো এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি।

এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ বজ্রপাতের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম ভাঙ্গতে ই দেখলাম জানালাগুলো সব খোলা। দ্রুত উঠে গিয়ে জানালা বন্ধ করলাম। দেওয়ালে টানিয়ে রাখা মস্ত বড় ঘড়িটার দিকে তাকাতে ই দেখলাম ঘড়ির কাটাগুলো টিক টিক করে ঘুরছে সময় তখন তিনটা বেজে পঁচিশ মিনিট।

বৃষ্টি বেগ বেড়ে যেতে আমি বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম। বৃষ্টি পাড়ার শব্দ চারিদক মুখরিত। এমন বৃষ্টি দেখলে কোন মানব না ছুয়ে দিতে চায়। তাই আর নিজেকে আটকে না রেখে বৃষ্টি ছুয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
হঠাৎ কেউ আমাকে স্পর্শ করতে ই ভয় পেয়ে গেলাম, পিছনে তাকাতে ই দেখলাম ইফাজ।
-আপনি এখানে,

-অন্য কাউকে আশা করেছিলে বুঝি।

-আমি আপনার মতো না

এটা বলে আবার বাহিরে হাত দিয়ে বৃষ্টির পানি ধরার চেষ্টা করছি।
ইফাজ আমাকে হ্যাচকা টান দিয়ে ওর দিকে ঘুরিয়ে এক হাত দিয়ে আমার দুই গাল চেপে ধরে।
-তুই আমার মতো না মানে কী বুঝাতে চাচ্ছিস।
আমার চোখের পানি ইফাজের হাতে পড়তে ই ইফাজ আমার মুখ ছেড়ে দেয়।

–কিছু ই বুঝাতে চাইনি। তা এতো রাতে আমার কাছে কেনো এসেছেন। স্বামীর অধিকার খাটাতে।

ইফাজ আর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে উওর দিলো,
-টাকা দিয়ে কিনে বিয়ে করেছি।
-বিয়ে না করে পতিতা নিয়ে আসতেন।
সাথে সাথে ইফাজ অতসীকে কয়েকটা থাপ্পড় মারে।

অতসী চিৎকার করে কাদে না শুধু চোখে পানি পড়ছে। চোখের পানি মুছে উওর দিলো,

-বিয়ে করেছেন স্বিকার করতে পারেন না, টাকা দিয়ে কিনেছেন এটা স্বীকার করতে পারেন। তাহলে আমাকে কেনো কিনে আনলেন পতিতা আনতে পারতেন।

-খুব বার বেড়েছে তোর দেখ তোকে এখন কতটা কষ্ট সহ্য করতে হয়।

-কষ্ট সহ্য করতে তো হবে ই কারণ আপনি আমাকে টাকা দিয়ে কিনেছেন।

অতসী নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলো না। দিন কয়েকে যে এগুলো সহ্য হয়ে গিয়েছে।

পাঁচটার দিকে অতসী ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সোজা কিচেনে চলে যায়। কিচেনে গিয়ে নাস্তা বানাতে থাকে। আটটার আগে সকলের নাস্তা রেডি করে ফেলে। অতসী হঠাৎ করে নিচে বসে পড়ে পা টা আর চলছে ই না। কদিন যদি বাবার বাড়ি গিয়ে থেকে আসতে পারতো তাহলে হয়তো শরিরটা একটু ভালো লাগতো।

-ভাবি আপনি ফ্লোরে বসে আছেন কেনো, আপনি কি অসুস্থ।

চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো সুমির ভাই রোহান এটা। রোহান দ্রুত জগ থেকে পানি গ্লাসে নিয়ে অতসীর দিকে এগিয়ে দিলো।
অতসী পানিটুকু খেয়ে হাঁপাচ্ছে। রোহান অতসীর হাত ধরে টেনে উঠালো। উঠিয়ে সোফায় নিয়ে বসালো এটা ইফাজ দেখলো,রোহান ইফাজকে দেখে বললো,

-ভাইয়া ভাবি এতো অসুস্থ তাহলে ভাবিকে দিয়ে কাজ করাচ্ছো কেনো।

ইফাজ অতসীকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-কী অতসী এখন তো মনে হয় রোহানের দেওয়া পানি খেয়ে তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ।

অতসী কতোক্ষন চুপ থেকে আস্তে আস্তে উপরে চলে গেলো। অতসী রুমে যাওয়ার সাথে সাথে ইফাজ ও রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। ইফাজের মুখে সিগারেট ছিলো, সিগারেট এর ধোয়া অতসীর মুখের উপর ছেড়ে বললো,
-রোহানকে তোর ভাল্লাগে।

–রোহান আপনার ভাই হয়।

-তো কী হেয়েছে, আমার থেকে তো বেশি রোহানের জ্বলে।

-আপনার ও তো আমার থেকে বেশি আপনার সুমির জন্য জ্বলে।

ইফাজ হঠাৎ অতসীকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু জড়িয়ে ধরতে ই অতসী পেটের সাইডে যন্ত্রণা অনুভব হতে থাকে। অতসী ইফাজকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেলে।

ইফাজ জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরেছিলো অতসীর পেটে সাইডে।অতসী কান্না করতে করতে বলে,
-আল্লাহ একদিন আপনার বিচার করবে। আমাকে যে কষ্ট দিচ্ছেন। তার থেকে হাজার গুন কষ্ট আপনাকে পেতে হবে।

ইফাজ হেসে রুম থেকে চলে যায়। অতসী দৌড়ে তানিয়া বেগমের রুমে চলে যায়।
-মা আপনার ছেলে আমাকে সিগারেট দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।

তানিয়ে বেগম পানটা মুখে পুড়ে দিয়ে বললো,

–তোমাদের স্বামী স্ত্রী মধ্যে কী হয় না হয় তা আমাকে বলো না। তুমি যদি ভালো হতে তাহলে কী আর আমার ছেলে অমন করতো।এছাড়া এটুকু কষ্ট সহ্য না করতে পারলে স্বামীর সংসার করবে কী করে।

-মা আপনাকে ও বুঝি ইফাজের বাবা এমন জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে পুরিয়ে দিয়েছিলো।

-অতসী।

–চিল্লাবেন না।

–কেন চিল্লালে কী করবি তুই।

এই মহিলা সাপের মতো ফনা তুলেছে। এরা সাপের থেকে ও বিষাক্ত। সাপের বিষ তো তুলা যায়। এই মানুষ রুপি সাপগুলো বিষ পৃথিবীর কোনো প্রান্তে গেলে তোলতে পারবে না।
অতসী রোহানকে খুজে বের করলো, রোহানের ফোন দিয়ে অতসীর মাকে ফোন দিলো,

–হ্যালো, মা আমি অতসী।

অপাশ থেকে অতসীর মা ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করে,
-কী হয়েছে মা তুই কাদছিস কেনো।

-তুৃমি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও মা।

শুধু এটুকু বলে অতসী কল কেটে দেয়। এবাড়িতে কেউ তাকে ফোন দিবে না তা অতসী ভালো করে যানে তাই তো রোহান কে খুজে বের করলো।

অতসী অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলে, ইফাজের সাথে থাকা সম্ভব নয়। অতসী ইফাজকল খুজতে রুমে যায় কিন্তু পায়না। তারপর পুরো বাড়িতে খুজতে শুরু করে কোথাও পায় না। অবশেষে সাদে পা রাখতে ই দেখলো, ইফাজ চা খাচ্ছে আর সুমির সাথে হেসে হসে কথা বলছে,

–আমার একটা কথা ছিলো,

–এখন সামনে থেকে যা পড়ে শোনবো।

–ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিলো।

–বললাম তো সামনে থেকে যা।

–হে আমি সারা জীবনের জন্য সামনে থেকে চলে যেতে চাই, আমি ডিভোর্স চাই।

চলবে,