#স্পর্শ
#পর্ব_৮
#writer_nahida_islam
–আমার একটা কথা ছিলো,
–এখন সামনে থেকে যা পড়ে শোনবো।
–ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিলো।
–বল্লাম তো সামনে থেকে যা।
–হে আমি সারা জীবনের জন্য সামনে থেকে চলে যেতে চাই, আমি ডিভোর্স চাই।
ইফাজ কথাটা শুনে অট্টহাসি দিলো। চা টা শেঢ করে বললো,
–পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে দাও আমি ডিভোর্স দিয়ে দিবো।
-এতো টাকা আমি পাবো কোথায়।
-কেনো তোমার বাবাকে বলো।
-আমার বাবার এতো টাকা থাকলে আপনার মতো এতো খারাপ একটা মানুষের হাতে আমাকে তুলে দিতো না।
ইফাজ রেগে চিৎকার দিয়ো বললো,
-অতসী।
অতসী আর পিছন ফিরে না তাকিয়ে দাদিমার রুমে চলে যায়। অতসী দৌড়ে গিয়ে দাদিমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়।
দাদিমা বেশ ভয় পেয়ে যায়। তাও অতসীকে কিছু বলেনা। কান্না করুক। কান্না করলে নিজেকে অনেকটা হালকা লাগবে।
কিছুক্ষন পর অতসী শাড়িটা সাইড থেকে সরিয়ে দাদিমাকে দেখায়। দাদিমা পোড়া দাগটা দেখে অতকে উঠে। ফর্সা শরীরে দাকটা যে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
–ইফাজ তোকে এভাবে আঘাত করেছে।
অতসী মাথা নাড়িয়ে মুখে আঁচল গুঁজে কান্না শুরু করে দেয়। হাবিবা বেগম অতসীর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
–কাদিস না বোন। ধৈর্য ধর। আল্লাহ তায়া’লা পবিত্র কুরআনে বলেছে, হে বিশ্বাসীগন তোমরা ধৈর্য ধারণ করো এবং ধৈর্য ধারণ প্রতিযোগিতা করো(সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ২০০)
-দাদিমা মানুষ এতো পাষাণ কীভাবে হতে পারে।
-তোর শ্বাশুড়ি তানিয়া এর থেকে জঘন্য মানুষ আর হতে পারে না। খুব লোভি মানুষ। আমার নামে আমার বাবা পাচতলা একটা বাড়ি লিখে দিয়ে গিয়েছে। এই বাড়িটার জন্য শুধু আমার সাথে ভালো ব্যবহার করছে নয়তো কবে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতো। কদিন আমাকে বিভিন্ন ভাবে বাড়িটা লিখেয়ে নিতে চেয়েছে। কিন্তু আমি দেইনি।
-দাদিমা তোমার সাথে ও উনি এমন করে।
-যদি সুযোগ পেতে তাহলে করতো। আমার নাতি নাতনিদের জন্য পারে না। এই মেয়েকে বিয়ে করার সময় পই পই করে তোর শ্বশুরকে বাড়ন করেছিলা। কিন্তু তোর শ্বশুর আমার কথা শুনেনি।
-বাবা কী ভালেবেসে বিয়ে করেছে।
-নাহ্। আমার ছেলে ইমরুল। বড্ড ভালো ছেলে ছিলো হঠাৎ তানিয়ার বড় বোন। ইয়াসমিনকে দেখে ভালো লাগে। যখন ইয়াসমিনকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় তখন ইয়াসমিন রাজি হয়ে যায়। তোর শ্বশুরের সময়ে ইয়াসমিন খুব স্টাইলিশ মেয়ে ছিলো। ও সব সময় সেজেগুজে থাকতো। কখনো ঠোটে লিপটিক হাতে একগুচ্ছ চুড়ি ছাড়া দেখিনি। ইয়াসমিনের বাবা ছিলো এই এলাকার চেয়ারম্যান।
আমি যখন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ইয়াসমিনের বাবা কাছে যাই, উনি সরাসরি না করে দেয়। ইমরুলের কাছে উনি মেয়ে বিয়ে দিবে না। তখন তোর দাদাশ্বশুর মারা গিয়েছিলো। আমাদের ফ্যামিলি ক্রাইসিস চলছিলল। আমি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ই ইয়াসমিনকে তোর নানা শ্বশুর বিয়ে দিয়ে দেয়।
এতে ইমরুল ক্ষিপ্ত হয়ে বলেছিলো, আমি এই চেয়ারম্যানের তিন মেয়ে থেকে এক মেয়েকে বিয়ে করবো ই। তানিয়া আগে থেকে ই ইমরুলকে পছন্দ করতো। তাই ইয়াসমিন বিয়ে কদিনের মধ্যে ই ইমরুল তানিয়াকে বিয়ে করে ফেলে।
কিন্তু তানিয়ার সাথে বনিবনা কখনো ভালো হতো না ইমরুলের। সব সময় মানুষিক অশান্তিতে রাখতো ইমরুলকে। হঠাৎ একদিন আমার ইমরুল আমাদের ছেড়ে কোথায় চলে গেলো তা আর কখনো কেউ খুজে পেলাম না।দেখ তো একদিন আমাদের চলার মতো টাকা পর্যন্ত ছিলো না তখন আমরা খুব সুখে ছিলাম।যখন ই টাকা পয়সার হাতে আসতে শুরু করলো সংসারটা ও চমার অশান্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো।
হাবিবা বেগম কথাগুলো বলে কাদছে। অতসী খুব মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনলো। কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
-দাদিমা আমাকে বাবার ছবি দেখাতে পারবে।
-কেনো পারবো না৷ তুই বস আমি ছবি নিয়ে আসছি।
অতসীকে বসিয়ে। খাটের নিচ থেকে একটা সুটকেস বের করে। উপরে খুব ময়লা জমে আছে। অতসী উঠে গিয়ে ময়লাগুলো পরিষ্কার করে দিলো। হাবিবা বেগম চাবির গোছা বের করে চাবি দিয়ে সুটকেস খুললো,
অতসীকে বের কর একটা এলবাম দিলো,
প্রথম পাতা খুলতে ই দাদিমা বললো,
–এটা তোর দাদাশ্বশুর।
অতসী হেসে বললো,
-বেশ মানিয়েছেন তোমাদের দুজনকে। কি সুন্দর কাপল পিক তুলেছো। কিন্তু ছবিটা সাদাকালো।
হাবিবা বেগম হাসি দিয়ে পড়ের পাতা উল্টিয়ে বললো,
-এ হলো তোর শ্বশুর।
অতসী মন দিয়ে দেখলো। খুব স্মার্ট উনি। একটা পেন্ট পড়া তাও আবার অনেক লুস। কিন্তু টাকনোর উপরে। মাথায় টুপি দেওয়া।
অতসী হাসি দিয়ে বললো,
-অনেক আগের ছবি তাই না দাদিমা। তাও এটা রঙ্গিন।
হাবিবা বেগম আরেকটা পাতা উল্টাতে ই একটা মেয়ের ছবি বের করে দেখালো,
-এটা হলো ইয়াসমিন।
অতসী ছবিটা দেখে থমকে যায়। উনি দেখতে অনেক সুন্দর। ছবিটার উপর হাত বুলিয়ে অতসী জিজ্ঞেস করে,
-আচ্ছা দাদিমা এখন ইয়াসমিন আন্টি কোথায়। উনাকে তো একবার ও আসতে দেখলাম না।
-ইয়াসমিনের বিয়ের ছয়মাস পর ই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আগুনে পুড়ে মারা গেছে।
নতুন বউ কোথায় গো তুমি। সারা বাড়ি খুজে আসলাম। রানুকে দেখে অতসী উঠে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কেনো কী হয়েছে।
-তোমার মা এসেছে।
অতসী একমুহূর্তে জন্য না দাড়িয়ে দৌড়ে নিচে চলে যায়। অতসী তার মাকে জড়িয়ে ধরে ইচ্ছে মতো কান্না করে।
-মা আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।
-কী হয়েছে আগে বল তো।
-আমি এখানে থাকলে ওরা আমাকে বাচতে দিবে না মা।
-অতসী কী হয়েছে খুলে বলবি তো।
তানিয়া বেগম হাসি দিয়ে এসে বললো,
–বুঝেন ই তো আজকালের ছেলে মেয়ে। দুজনের মধ্যে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে এর জন্য অতসী এমন করছে।
-মা আমি চলে যাবো বললাম তো।
-অতসী বস এখানে।
–শুনেন আপা আপনার মেয়েকে একটু বুঝান স্বামী স্ত্রী মধ্যে এমন একটু আধটু কথা কাটাকাটি হয় ই তাই বলে কী চলে যেতে হবে নাকি।
এটুকু বলে ই তানিয়া বেগম চলে গেলো। অতসীর মা অতসীকে টেনে এনে সোফায় বসালো। তারপর আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করলো,
-ইফাজের সাথে কী রাগারাগি হয়েছে।
-মা রাগ তো সবার সাথে করা যায় না।
-তাহলে কী ইফাজ বকা দিয়েছে।
-মা শুনো আমি এতো কিছু বলতে পারবো না। আমি এই সংসার করতে চাই না আমার ডিভোর্স লাগবে।
-অতসী…
–মা জোড়ে চিৎকার কেনো করছো।
– তুই জানিস তো তোর বাবা অসুস্থ।
–তো কী আমি এখানে ওদের অত্যাচারে পাচে মরবো নাকি।
-কতো কষ্ট করে বিয়েটা দিয়েছি বিয়ের কদিন পার না হতে ই ডিভোর্সের কথা কেনো বলছিস মা।
অতসী শাড়ি সাইডে সরিয়ে পোড়ে ফেলা জায়গাটা দেখালো,
-মা এটা দেখে ও তুমি বলবে এখানে থাকার জন্য।
অতসীর মার সাথে সাথে ইাফাজকে ডেকে সামনে আনে,
-ইফাজ আমার মেয়েটা খুব আদর করে বড় করেছি তুমি এটা কী করেছো।
ইফাজ কোনো উওর দিচ্ছে না মাথা নিচে করে দাড়িয়ে আছে।
-উওর দিচ্ছো না কেনো। আমার পায়ে ধরে আমার মেয়েকে বিয়ে করেছো। এতোটা অত্যাচার করবে জানলে তোমার হাতে কখনো মেয়েকে তুলে দিতাম না।
–আসলে মা আমি তখন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। শেষ বারের মতো মাফ করে দিন আর কখনো এমন হবে না।
ইফাজকে অতসীর মা অনেক কথা বললো। ইফাজ এমন ভাবে ক্ষমা চাচ্ছে ক্ষমা না করে ও কোনো উপায় নেই।
অতসীকে সামনে নিয়ে অতসীর মা বসে আছে।
-মারে জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে জীবনে একবার ই হয়। এই সংসারটা ভেঙ্গে গেলে কলঙ্কটা তোর গায়ে মাখবে। ইফাজ ছেলে মানুষ সে আবার বিয়ে করে নিবে। কিন্তু তোর যদি বিয়ে হয় ও তাও সারাজীবন শুনতে হবে তোর আগে বিয়ে হয়েছে। আর সামাজের মানুষ ই বা কী বলবে। তুই একটু মানিয়ে নে মা।
-মা আমি আর তো বিয়ে করবো না, লেখাপড়া করবো, নিজের পায়ে দাড়াবো, চাকরি করবো তোমাদের অনেক সুখে রাখবো দেখো। আমি জীবনে কখনো বিয়ে করবো না। নিয়ে যাও না মা তোমার সাথে।
চলবে,