স্মৃতির শহর পর্ব-০২

0
640

#স্মৃতির শহর
#পর্বঃ২
#তানিশা সুলতানা

হাঁটু মুরে বসে অঝরে কেঁদে যাচ্ছে রাই। কিভাবে বাঁচবে ও? কি পরিচয় দেবে বাচ্চাটার?
ওই লেকটাকেই বা কি বলবে?
নাহহ বিহানকে জানাতেই হবে?
চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ায় রাই। জোরে জোরে বার কয়েক শ্বাস ফেলে বড়বড় পা ফেলে রুমের দিকে অগ্রসর হয়।
আদি এখনো একই ভাবে ফোন দেখছে। রাই তোষকের নিচ থেকে ফোনটা বের করে কল দেয় বিহানের নাম্বারে। কিন্তু কল ঢুকছেও না আবার বন্ধ বা ব্যস্ত কিছুই বলছে না।
এটা কিভাবে সম্ভব?
অনবরত কল করেই যাচ্ছে রাই। কিন্তু লাগছেই না কল টা।
ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে রাই। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
“বিহান আই নিড ইউ? কোথায় তুমি?
বিরবির করে বলছে।
দাঁতে দাঁত চেপে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে আদি। ইচ্ছে করছে কাচা চিবিয়ে খেতে। বিহান বিহান করে যাচ্ছে অনবরত। কি আছে ওই বিহানের মধ্যে যা আদির মধ্যে নেই?

আদি উঠে এসে রাইয়ের সামনে হাঁটু মুরে বসে।
” এই মেয়ে তোমার পবলেম কি? এভাবে নেকামো করছো কেনো?
চোয়াল শক্ত করে বলে আদি।
“আমি প্রেগন্যান্ট
মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে বলে রাই।
সাথে সাথে আদি রাইয়ের গালে কষিয়ে একটা চর মারে। টাল সামলাতে না পেরে পরে যায় রাই। খাটের পয়ার সাথে মাথা লেগে যায়।
রাগে হাত পা কাঁপছে আদির।
” তোকে ছাড়বো না আমি বিহান। চিনিস না তুই আমায়?
বিরবির করে বলে আদি।
রাইয়ের মনে হচ্ছে দুনিয়াটা ঘুরছে। চোখে ঝাপসা দেখছে। ঝাপসা চোখে আদির দিকে তাকায়। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে লোকটার?
আত্মা কেঁপে ওঠে রাইয়ের। ঝাপসা ভাবটা নিমিষেই গায়েব হয়ে যায়। কাঁদার সাহস পাচ্ছে না। গালটাতে খুব ব্যাথা করছে সাথে মাথায়ও ব্যাথা করছে। মনে হয় কেটে গেছে। দুই হাতে মুখ চেপে ধরে সোজা হয়ে বসে।
আদি উঠে যায়। পড়ার টেবিলের ডয়ার খুলে একটা ঔষুধ বের করে। সাথে এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে রাইয়ের সামনে বসে।
“এটা খেয়ে নাও
রায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে আদি।
রাই ভীত চোখে তাকায় আদির দিকে। বাচ্চাটা নষ্ট করার ঔষধ দিচ্ছে না তো লোকটা? কিছুতেই খাওয়া যাবে না এই ঔষধ। বাচ্চাটা রাইয়ের। কোনো হ্মতি হতে দেবে না বাচ্চাটার।
” কথা কানে যাচ্ছে না? এটা খেয়ে নে।
শক্ত গলায় বলে আদি।
রাই এবার হু হু করে আদির পা জড়িয়ে কেঁদে ওঠে।
“প্লিজ আমার বাচ্চাটাকে নষ্ট করবেন না।
অস্ফুরণ কন্ঠে বলে।
আদির চোখ বন্ধ করে দুই আঙুল দিয়ে কপাল ঘসে।
হাতের গ্লাসটা খাটের ওপর রাখে।
রাইয়ের পাশে বসে।
দুই হাত দিয়ে রাইয়ের মুখটা তুলে ধরে। কান্না করতে করতে চোখের পাপড়ি ভিজে গেছে।
খুব যত্ন করে রাইয়ের চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।
” বাচ্চার কোনো হ্মতি হবে না। এটা খেয়ে নাও। আমাকে রাগিও না।
বলেই মুখ টিপে ঔষধটা মুখে পুরে পানি ঢেলে দেয়। খেয়ে নেয় রাই।
আদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“ইডিয়েট একটা
বলে উঠে বেলকনিতে চলে যায়।

রাই চোখ মুখ মুছে নেয়৷ এখন বেশ কিছুটা ভালো লাগছে।
লম্বা হয়ে খাটে শুয়ে পরে ভাড়ি বিয়ের শাড়িটা পরেই। আর বসে থাকা সম্ভব না। এমনিতেই বেশ ক্লান্ত। কিন্তু বিহান কোথায়? এই তো রায়ের বিহানকে খুব প্রয়োজন।
ফোনটা হাতে নিয়ে আবারও কল দিতে থাকে বিহানকে। কিন্তু কল ঢুকছেই না।

আদি দেয়াল ঘেসে বসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।
ভালোবাসার মানুষটি এতোটা কাছে থাকার পরেও মনটা বিষিয়ে যাচ্ছে। নিজের হাতে ভালোবাসাকে খুন করতে ইচ্ছে করছে।
” এতোটা নিচে কি করে নামতে পারলো রাই? জাস্ট কয়েক দিনের রিলেশনে নিজের সম্মানটাও দিয়ে দিলো?
এটা আমার রাই হতেই পারে না। আমার রাই এতোটা অপবিত্র হতেই পারে না।
চোখ দুটো ভিজে ওঠে আদির।
ধোয়াসার মধ্যে রয়ে গেছে।

আদির ফোনটা বেজে ওঠে। স্কিনে বিহান নামটা দেখে হাত মুঠ করে ফেলে আদি। কলটা রিসিভ করে কানে নেয়।
“কেমন রোমান্স করছিস বউয়ের সাথে? জানতে কল করলাম।
আদি দাঁতে দাঁত চাপে।
” কি রে কথা বলছিস না কেনো? নিশ্চয় তোর বউ ওপপপপ সরি আমার প্রেমিকা তোর দিকে ফিরেও তাকায় নি? তাকাবেও না।
ওহহ হো বলতে তো ভুলেই গেছিলাম তোর বউয়ের সাথে কিন্তু আমার বাসরটা আগেই হয়ে গেছে।
হো হো করে হাসতে থাকে বিহান।
আদি আকাশের থালার মতো চাঁদ টার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে।
“বিহান তুই জিতে গেছিস। তবে এমনটা না করলেও পারতিস। আফসোস করবি একদিন। আর আফসোস করবে তোর ওই রাই।
চোয়াল শক্ত করে বলে আদি।
” রাই মরে গেলেও আমার কিছু যায় আসে না৷ আমার যা পাওয়ার ছিলো পেয়ে গেছি। নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা। আর তোর বউকে বলে দিস আমায় যেনো কল দিয়ে বিরক্ত না করে।

আদি ফোনটা আছাড় মারে। দেয়ালে পর পর কয়েকটা ঘুসি দেয়। হাতটা থেতলিয়ে যায়।

🥰🥰🥰

“বিহান আপনি এসেছেন
বলেই এক লাফে উঠে বসে রাই। আদি রায়ের থেকে কিছুটা দুরে বসে ল্যপটপে কাজ করছিলো। রায়ের মুখে আবার বিহান নামটা শুনে আবার মেজাজ বিগড়ে যায়। হাতের ল্যাপটপটা দেয়ালে ছুঁড়ে মারে। সাথে সাথে ভেঙে গুড়িয়ে যায়। ভাঙা ল্যাপটপের এক টুকরো রাইয়ের দিকে ছুটে আসে। কপালে ব্যাথা পাওয়ার জায়গা লাগে। সাথে সাথে আহহহ বলে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে রাই।
আদি সেদিকে এক পলক তাকিয়ে গটগট করে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়।
রাই কপালে হাত দিয়ে বুঝতে পারে কেটে গেছে। সেখান থেকে রক্ত ঝড়ছে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে রক্তপা মুছে নেয়। চোখ খুলতেই দেখতে পায় দরজার কাছে লাগে জটা।
রাই উঠতে নিতেই গা গুলিয়ে আসে। মুখ চেপে ধরে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

দুই বার বমি করে ব্রাশ করে বের হয় রাই। লাগেজ খুলে লাল রংয়ের একটা সুতি কাপড় নিয়ে পরে নেয়।
চলার শক্তি পাচ্ছে না। কপাল থেকে রক্ত পরা কমছেই না। চুয়িয়ে চুয়িয়ে রক্ত পরেই যাচ্ছে।
” এভাবে বসে থাকলে চলবে না। ভার্সিটিতে যেতে হবে। বিহানকে খুঁজতে হবে।

“কি রে পেত্নী উঠে গেছিস?
অহি আদির বোন রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে।
রাই ক্লান্ত শুষ্ক ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে হাসার চেষ্টা করে। অহির মুখে সব সময় এক চিলতে হাসি লেগেই থাকে। রাইয়ের এক মাএ প্রাণের প্রিয় বান্ধবী। এই একটা মানুষ যে রাইকে বোঝে। রাইদকে সম্মান করে। ভালোবাসে। ছোট থেকেই এক সাথে বড় হয়েছে।

” কি রে তোর কপালে কি হয়েছে? রাইয়ের কপালের দিকে চোখ পড়তেই অহির হাসি মুখ চুপসে যায়। এক ছুটে রাইয়ের কাছে এসে বিচলিত হয়ে বলে।
রাই মাথা নিচু করে ফেলে। বোনের কাছে ভাইয়ের বদনাম করবে?
“রুমের এই অবস্থা কেনো? ভাইয়া কোথায়? আমার ভাইটা আর মানুষ হবে না। ও তো নিজেই তোকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলো। তাহলে এখন রাগ দেখাচ্ছে কেনো?
ডয়ার থেকে ফাস্টএইডবক্স বের করতে করতে বলে অহি।
রাই কিছু বলে না। শুধু তাচ্ছিল্য হাসে।
আদির এই রকম ব্যবহারের জন্য রাইয়ের রাগ হচ্ছে না। এটা স্বাভাবিক। নিজের বিয়ে করা বউ প্রেগন্যান্ট শুনলে যে কোনো ছেলেই এমন রিয়েক্ট করবে। ভাগ্য ভালো আদি এখনো রাইকে এই বাড়িতে থাকতে দিয়েছে।

অহি খুব যত্ন করে রাইয়ের কপালেটা স্যাভলন দিয়ে মুছে দেয়।
” আমি আছি তো সব ঠিক করে দেবো।
অহি রাইয়ের দুই গালে হাত দিয়ে ভরসা দিয়ে বলে।
“খুব বড় ভুল হয়ে গেলো অহি
বলেই কেঁদে ওঠে রাই।
” তুই কেনো আমাকে পালাতে দিলি না। আমি পালিয়ে গেলে এসব ফেস করতে হতো না। এখন কি করবো আমি?

চলবে