স্মৃতির শহর পর্ব-০৩

0
543

#স্মৃতির শহর
#পর্বঃ৩
#তানিশা সুলতানা

খুব কায়দা করে শাশুড়ীকে বুঝিয়ে ভার্সিটিতে যায় রাই। ঘরোয়া ভাবে হয়েছে বিয়েটা তাই আর কোনো রিসেপশনিস্ট হচ্ছে না। এখনো অহিকে বলা হয় নি প্রেগন্যান্সির কথা। কি করে বলবে? অহি যতই ভালো বান্ধবী হোক না কেনো আদির বোন তো।
মাথাটা ঝিমঝিম করছে রাইয়ের। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।
যেভাবেই হোক বিহান অব্দি পৌঁছাতেই হবে।
সুতি থ্রি পিছ পরে আছে রাই। ওড়না দিয়ে খুব ভালোভাবে মাথাটা ঢেকে রেখেছে। বোরকা নেই এই বাড়িতে। রাই কখনোই বোরকা ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হয় না। কিন্তু এখন নেই বলেই এই অবস্থা।
শশুড় মশাই পাঁচশো টাকা দিয়েছে। রাই দোকান থেকে মাক্স কিনে নেয়
তারপর পা বাড়ায় বিহানের বাড়ির দিকে।

বিহান আর রাইয়ের সম্পর্কটা বেশি দিনের নয়। পাঁচ মাস হবে হয়ত। খুব ভালোবেসে ফেলেছে এই পাঁচ মাসে বিহানকে। বিহানও খুব কেয়ার করতো রাইকে।
খুব সাধারণ পরিবারের মেয়ে রাই। মা নেই খুব ছোট বেলায় রাইকে একা করে চলে গেছে। সৎ মা কখনোই ভালোবাসতো না রাইকে। খুব অবহেলায় আনাদরে বড় হয়েছে রাই। ভার্সিটিতে ওঠার প্রথম প্রথমেই বিহানের সাথে পরিচয়। খুব ভালোই চলছিলো সব।
হঠাৎ একদিন অহির বার্থডেতে রাই যায়। পার্টি শেষ করতে অনেক রাত হয়ে যায়। ভুল ভাল কিছু খেয়ে নেয়।
তারপর কিছু মনে নেই। সকাল বেলা নিজেকে বহনের বাড়িতে পায়। বিহান রাইয়ের পাশে এলোমেলো হয়ে শুয়ে ছিলো। রাইয়ের আরও বুঝতে বাকি ছিলো না ওর সাথে ঠিক কি হয়েছে। সেদিন খুব কেঁদে ছিলো রাই।
রাইয়ের কান্নার শব্দে বিহান জেগে গেছিলো। রাইয়ের পায়ে ধরেও হ্মমা চেয়েছিলো।

ভাবতে ভাবতে বিহানের বাড়ির সামনে এসে পৌছায় রাই। কিন্তু দরজায় বড় একটা তালা ঝুলছে। চোখ বন্ধ করে দরজার সামনে বসে পরে রাই। পা দুটো আর চলছে না।
“কোথায় যেতে পারে বিহান?

বসে থাকলে চলবে না। ভার্সিটিতে যেতে হবে ক্লাস মিস দেওয়া যাবে না। প্রাইভেট পরা হয় না। ক্লাস থেকেই পড়া সংগ্রহ করে পড়তে হবে।
চোখ বন্ধ করে বুক ফুলিয়ে শ্বা নিয়ে উঠে দাঁড়ায় রাই। আবার বড় বড় পা ফেলে ভার্সিটিতে যায়।
একটা সাইড ব্যাগ কিনে নেয় সাড়ে তিনশো টাকা দিয়ে তারপর খাতা কলম কিনে ক্লাসে যায়।

মনোরঞ্জন স্যারের বদলে নতুন স্যার ক্লাসে আসবে। অহি আজকে ভার্সিটিতে আসে নি৷ রাই এক পাশে গিয়ে বসে।
সবাই আলোচনা করছিলো নতুন স্যার আসবে। কেমন হবে নতুন স্যার? এসব আলোচনা চলছিলো। আর রাই বসে বসে বিহানের কথা ভাবছিলে। এভাবে কোথায় হারিয়ে গেলো?

ভাবনার মাঝেই নতুন টিচার চলে আসে। আদিম নতুন টিচার। রাই একটুও অবাক হয় না। হতেই পারে টিচার।
আদিই একটু অবাক হয়। এভাবে নিজের হাজব্যন্ডকে টিচার রুপে দেখলো অথচ চমকালো না? আজব মেয়ে তো এটা।

রোল কল করার পরে আদি রাইয়ের সামনে এসে দাঁড়ায়। কিছুটা ভরকে যায় রাই। উঠে দাঁড়ায়।
” কিছু বলবেন স্যার?
মাথা নিচু করে বলে।
আদি গত ক্লাসে স্যার যে টপিকটা নিয়ে আলোচনা করেছিলো। সেটাই রাইকে ধরে।
রাই মাথা নিচু করে হাত কচলায়৷ কারণ রাই পড়ে নি।
“পড়াটা বলুন মিস
ধমক দিয়ে বলে আদি।
” আসলে স্যার আমি বলতে পারবো না
রিনরিনিয়ে বলে রাই।
“কেনো পারবেন না?
বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে বলে আদি।
“আমি বাসায় পড়ার সময় পায় নি।
” কেনো?
“একচুয়েলি আমার বিয়ে হয়ে গেছে আমি আমার বরের
আদি রাইকে হাত উঁচু করে থামিয়ে দেয়।
” আপনি বরের সাথে ছিলেন না কি বফের সাথে ছিলেন এটা শুনতে আমরা কেউই আগ্রহী নই। ঘটা করে বলার কিছু নেই৷ আর এটা কোনো এক্সকিউজ না। ফাঁকি বাজি দুরে গিয়ে করবেন। আমার ক্লাসে একদমই নয়।
চোখ পাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলে আদি।
পুরো ক্লাসের সবাই হেসে ফেলে। রাই অপমানে মাথা নিচু করে থাকে।
এভাবে না বললেও পারতেন উনি
“সিট ডাউন
আর হ্যাঁ নেক্সট টাইম থেকে বরের গল্প শোনাতে আসবেন না।
রাই মাথা নিচু করে বসে পরে।

ছুটির পরে আর কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা বিহানের বাড়িতে যায়। এখনো তালা ঝুলছে। রাই জানালা দিয়ে একবার রুমের ভেতর উঁকি দেয়। এই রুমটাতেই আছে কিছু বাজে স্মৃতি। এই পুরো শহরটাতেই আছে জীবন ছারখার হওয়ার গল্প। এই শহরটার নাম #স্মৃতির শহর। যে স্মৃতি গুলো চাইলেও মুছে ফেলা যাবে না। ভুলে যাওয়া যাবে না। সারাজীবন কুড়ে কুড়ে খাবে। এক বুক হতাশা নিয়ে রাই বাড়ি ফিরে যায়।

🥀🥀🥀
বিকেলে বাড়ি ফেরে রাই। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। চৈত্র মাস। ভাপসা গরম সব সময় লেগেই থাকে। লম্বা শাওয়ার নিয়ে রুমে এসে দেখে আদি লাগেজ গোছাচ্ছে।
রাইয়ের আত্মা কেঁপে ওঠে। এখন কি এই লোকটা আমাকে বাড়িতে রেখে আসবে? মামনি তো মেরেই ফেলবে আমায়। কি করবো এখন আমি?
দুই হাতে মুখ ঢেকে কান্না চেপে রাখার চেষ্টা করে রাই।

” ভাইয়া তুই কি শুরু করেছিস বল তো? কেনো পাগলামি করছিস?
অহি রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে।
“বোন তুই কোনো কথা বলবি না৷ থাকবো না এখানে আমি।
রাই এবার বুঝতে পারে। রাইকে তাড়াতে পারবে না বলে উনি নিজেই বেরিয়ে যাচ্ছে।
” তুই যাবি যা
কিন্তু রাই তোর সাথে কোথাও যাবে না।
সোজাসাপ্টা বলে দেয় অহি।
আদি অহির কথায় (তানিশা সুলতানা) পাত্তা দেয় না। চোখ পরে রাইয়ের দিকে৷ মুহুর্তেই মেজাজ বিগড়ে যায় আদি।
“এই মেয়ে তোমার কোনো কমনসেন্স নেই? পাগল তুমি? তোমার মাথায় ব্যান্ডেজ করা খেয়াল ছিলো না তোমার? মনটা সব সময়ই খালি প্রাক্তনের কাছে ফেলে রাখেন?
ধমকে বলে আদি। রাইয়ের চোখে এখন পানি টলমল করছে। সব সময় ধমক কেনো দেয়?
” এভাবে একদম ধমক দিবি না ওকে।
চোখ পাকিয়ে বলে অহি।
“আমাকে না বলে ওকে বল না খেয়াল কোথায় থাকে?
জলদি রেডি হতে বল ওকে
বলেই আদি বেরিয়ে যেতে নেয়।
” রাই কোথাও যাবে না
অহি সোজাসাপ্টা বলে দেয়। (তানিশা সুলতানা)
আদি দাঁড়িয়ে যায়। কয়েক পা পিছিয়ে রাইয়ের মুখোমুখি দাঁড়ায়।
“আপনি আমার সাথে যাবেন? ইয়েস ওর নো
বেশ শান্ত গলায় বলে আদি।
রাই কি বলবে বুঝতে পারছে না। ওনার সাথে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? যদি মেরে গুম করে দেয়। তখন? নিশ্চয় মেরে ফেলার জন্যই নিয়ে যাবে
” ইয়েস ওর নো
মেঘের মতো গর্জন দিয়ে বলে আদি। রাই অহি দুজনই কেঁপে ওঠে।
“যাবো
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ফেলে রাই। আদি বাঁকা হাসে।
” ভাইয়া এটা ঠিক করছিস না তুই?
জেদ ধরে বলে অহি।
আদি রাইয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে।
“আসছি
রাই চমকে ওঠে। আসছি মানে কি?
হাঁটতে শুরু করে আদি। রাই অহির দিকে অসহায় ফেস করে তাকায়৷ চোখে টলমল করা পানি গড়িয়ে পরে।
” ভাইয়া ওকে চেঞ্জ তো করতে দিবি।
কে শোনে কার কথা।
বেরিয়ে যায়।
“আদি এটা কি পাগলামি হচ্ছে?
পাগল হয়ে গেছো তুমি?
আদির মা আদির পেছন পেছন আসতে আসতে বলে।
আদি একবার পেছন ঘুরে তাকায়ও না। রাইদকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে বসে চলে যায়। পেছন থেকে অনেকেই ডাকতে থাকে আদিকে। রাই জানালার গ্লাস দিয়ে বাইরে দিকে তাকিয়ে থাকে।
এই মানুষ গুলোর সাথে ভালোভাবে পরিচয়ই হলো না। আগেই বিচ্ছেদ হয়ে গেলো। ভালোভাবে উপভোগ করাই হলো না শশুড় বাড়ি।

চলবে