স্মৃতির শহর পর্ব-০৪

0
469

#স্মৃতির শহর
#পর্বঃ৪
#তানিশা সুলতানা

রং চটা এক তালা একটা বাড়ির সামনে গাড়ি থামায় আদি। রাই এখনো কেঁদেই যাচ্ছে।
আদি সিটবেল খুলে কয়েক মুহুর্তে চোখ বন্ধ করে থাকে।
“কাঁদছো কেনো?
বেশ শান্ত গলায় প্রশ্ন করে আদি। রাই চমকে ওঠে। এভাবে এই প্রশ্নটা একদমই আশা করে নি রাই। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয়। কান্না লুকোনোর চেষ্টা মাএ।
” এন্সার মি
এবার বেশ শক্ত গলায় বলে আদি।
রাই কেঁপে ওঠে।
আদি রাইয়ের দিকে তাকায়।
“আমি চাইছি না বেপারটা জানাজানি হয়ে যাক। আমার সম্মান জড়িয়ে আছে এটার সাথে। লোকে বলবে আদিল চৌধুরীর বিয়ে করা বউ বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট হয়ে এসেছে। কতোটা সম্মানের কথা এটা?
আমার বাবা মা কষ্ট পাবে। কপাল আমার।
এখন না পরছি তোমাকে গিলতে আর না পারছি উগড়ে ফেলতে। পাগল পাগল হয়ে যাচ্ছি।
দুই হাতে মাথা চেপে দাঁতে দাঁত চেপে বলে আদি।
গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে রাইয়ের। ওর জন্য একটা ছেলে কতোটা পবলেমের মধ্যে আছে। এরকম জীবন না হলেও পারতো।

“তোমার বাচ্চাটার ওপর আমার কোনো রাগ নেই। ওর তো কেনো দোষ নেই৷ সব দোষ তোমার। তোমার বোঝা উচিত ছিলো পৃথিবীটা অতোটা সহজ নয় মিস রাইসা ইয়াসমিন।
” যে তোমাকে ভালোবাসবে সে তোমাকে এক পলক দেখার জন্য ছটফট করবে। আর যে তোমার মোহতে আকৃষ্ট হবে সে তোমাকে ছোঁয়ার হাজারটা চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
রাইয়ের মুখের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে বলে আদি। রাই ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে।
” এইটুকু তেই কান্না পাচ্ছে? তাহলে ভাবো আমার বাড়িতে থাকলে প্রতিনিয়ত এই সমস্ত কথার সম্মুখিন হতে হতো তোমায়। কেউ তোমাকে ছাড় দিতো না।
তুমি যতদিন খুশি আমার এই বাড়িতে থাকতে পারো। তোমার প্রেমিক চলে আসলে চলে যেয়ো। বাচ্চাটা ডেলিভারি হয়ে গেলে আমি তোমায় ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেবো।
যতদিন সে না আসবে ততদিন তোমার আর তোমার বেবির দায়িত্ব আমি পালন করবো। কোনো অবহেলা করবো না। ট্রাস্ট করতে পারো।
রাই ফোলা ফোলা চোখে আদির মুখের দিকে তাকায়। অসম্ভব লাল হয়ে গেছে। লাল চোখে পানি টলমল করছে। ঠোঁট জোড়াও কাঁপছে।
দুই হাতে শাড়ির আঁচল খামচে ধরে রাই।
“আর যদি ও না আসে?
থেমে থেমে রিনরিনিয়ে বলে রাই।
আদি তাচ্ছিল্য হাসে।
” যাকে ভালোবেসে সবটা দিলে। আর তার প্রতি এতোটুকু বিশ্বাস নেই? যদি না আসে তাহলে সিঙ্গেল মাদার হতে হবে তোমায়। ভালোবাসার চিন্হটাকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রতিষ্ঠিত করতে লড়াই করবে। এটা শুধুই আমার এডভাইস।
তুমি এবোর্শন করতে চাই
আদি কথাটা শেষ করার আগেই রাই
“নাহহহহহহ বলে ওঠে
চোখ বন্ধ করে নেয়। টুপ করে গড়িয়ে পরে চোখে জমে থাকা অশ্রুকণা গুলো।
আদি একটু হাসে।
“আপনার বোঝা হয়ে বেশি দিন থাকবো না আমি। বাবার বোঝা ছিলাম বলে জোর করে আপনার সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।এবার আপনার বোঝা হয়ে গেছি। খুব তারাতাড়ি চলে যাবো আমি। শুধু কয়েকটা দিন সময় প্রয়োজন আমার।
রাই ধরে আসা গলায় বলে।
” ওকে
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নেমে যায় আদি।

বাড়িটাতে অনেকদিন যাবত কেউ থাকে না। ফলে ধুলোবালিতে ভরপুর। দরজা খুলতেই এক ফাঁলি রোদ ঢুকে পরে বাড়ির ভেতরে সাথে কিছু দমকা হাওয়া। আদির চোখে মুখে ধুলো লেগে যায়।
আদি দুই পা পিছিয়ে আসে।
“তুমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকো। আমি পরিষ্কার করে তোমাকে ডেকে নেবো।
রাইয়ের সামনে লাগেজ রেখে বলে আদি।
” আমিও হেল্প করি আপনাকে?
মাথা নিচু করে বলে রাই।
“নো নিড
বলেই আদি চলে যায়। রাই লাগে জের ওপর বসে।

চৈত্র মাস। এই মাস টায় গরমের সাথে ধুলোর পরিমানটাও বেশি থাকে। বাড়িটা পরিষ্কার করতে গিয়ে আদির মাথার ঘাম পায়ে পরে। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। নতুন বাসায় এসেছে এখানে কিছুই নেই কয়েকটা আসবাবপএ ছাড়া। পাক্কা দুই ঘন্টা সময় লেগে যায় বাড়ি পরিষ্কার করতে। এতোসময় রাই লাগেজে বসে ছিলো।
দুই বার বেশি হয়েছে। দৌড়ে বাড়ির পেছনের গিয়ে বমি করে এসেছে রাই। কিন্তু এখন আর যাওয়ার সময় পেলো না। ওখানেই বমি করে দিলো। বেশ ক্লান্ত রাই। বমি করে নেতিয়ে পরে।
আদি রাইয়ের মাথাটা ধরে ফেলে। দরজার সামনেই বমি করে দিয়েছে। এখন আবার এটা পরিষ্কার করতে হবে।
” এই যে উঠো
রাইয়ের গালে হালকা চাপ দিয়ে বলে। রাই চোখ খুলে সোজা হয়ে বসে।
“ভেতরে গিয়ে কুলি করে চোখে মুখে পানি দাও। যাও
রাই বাধ্য মেয়ের মতো উঠে যেতে নেয়। মাথা ঘুরে ওঠে।
আদি রাইয়ের হাতটা ধরে ভেতরে নিয়ে যায়
ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বমি পরিষ্কার করতে যায়।

বেশ ক্লান্ত আদি। এতোটা পরিশ্রম জীবনে কখনো করে নি। এখন একটু রেস্ট প্রয়োজন। কিন্তু তার জোও আছে? এখন বাজারে যেতে হবে। নাহলে খাবে কি?
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আদি।
একটুখানি বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।

রাই এখন একটু সুস্থ বোধ করছে। আদির জন্য খারাপ লাগছে। বেচারি কতোই না পরিশ্রম করলো আজ।

রাই জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। জানালা দিয়ে একদম রাস্তাটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বাগানে অনেক মানুষের সরগম। এই এক তালা বাড়িতে পাঁচটা ঘর। আর চারটা রুমই ভাড়া দেওয়া। তারাই বাগানে ঘোরাঘুরি করছে। রাইয়ের ইচ্ছে হচ্ছে দৌড়ে ওনাদের কাছে যেতে। গল্প করতে। কিন্তু মন সায় দিচ্ছে না। ইদানীং নিজেকে লুকিয়ে রাখতেই ভালো লাগে রাইয়ের। পৃথিবীটা বড্ড অসয্যনীয় হয়ে গেছে। এতো সুন্দর দুনিয়া এতো সুন্দর সুন্দর মানুষ। সবাই কতো হাসিখুশি। কিন্তু রাই কখনো সুখই পেলো না।
প্রাণ খুলে কখনো হেসেছে কি না জানা নেই। আল্লাহ বোধহয় ওকে কষ্ট পাওয়ার জন্যই দুনিয়ায় পাঠিয়েছে। ভেবেই আলহামদুলিল্লাহ বলে রাই।

ডান হাতটা পেটের ওপর রাখে।
” তোকে কি নাম দেবো? আমার পাপের ফল? না কি ভালোবাসার চিন্হ? আমি যে পারছি না রে। মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমায়। অন্য মেয়েরা কানসিভ করলে পরিবার স্বামী সবাই কতো খুশি হয়। কতো যত্ন করে। আর আমি এমনই কপাল পোরা যে এই টুকু সুখ পেলাম না। একবার চেকআপও করাতে পারলাম না। আমার কপালটা এমন না হলেও পারতো। ঠকালো আমায়। হেরে গেলাম আমি। ঠকে গেলাম মিথ্যে ভালোবাসার কাছে।
আমি যদি সুইসাইড করি তাহলে কি তোর সাথে অন্যায় করা হবে? তুই আমাকে হ্মমা করবি?
হু হু করে কেঁদে ওঠে রাই।

আদি রাইয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলো। আদির চোখের কোনে পানি চলে আসে। হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়।
“ছাড়বে না তোকে বিহান। এর হিসেব তোকে দিতেই হবে।
তারপর চোখ বন্ধ করে নিজেকে স্বাভাবিক করে আদি।
” রেডি হয়ে নাও
আমরা হাসপাতালে যাবো।
গলা ঝেড়ে বলে আদি।
রাই কান্না থামায়।
“যাবো না আমি। এমনিতেই অনেক ঋণ থাকবো। টাকার ঋণটা আমি শোধ করতে পারবো না।
তাচ্ছিল্য হেসে বলে রাই।
আদি রাইয়ের দুই বাহু ধরে নিজের দিকে ঘোরায় রাইকে। রাই চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। রাগে থরথর করে কাঁপছে আদি।
” চিনতে পারো না আমায় তুমি? কি করে ভুলে যেতে পারলে তুমি?

চলবে