স্মৃতির শহর পর্ব-০৫

0
475

#স্মৃতির শহর
#পর্বঃ৫
#তানিশা সুলতানা

হাসপাতালের করিডোরে বসে আছে রাই। ভেতরে ডাক্তারের সাথে কথা বলছে আদি। ডাক্তারই রাইকে বাইরে বসতে বলেছে। এটা নিয়ে রাইয়ের মনে এক রাশ ভয় এসে ভর করেছে। আদি যদি ডাক্তারকে বলে বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলতে।
রাই বসে থাকতে পারে। লুকিয়ে দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

“মাহি কিছু বলছিস না কেনো? কতোখন বসে থাকবো।
ডাক্তার মাহি আদির ফ্রেন্ড।
” বিহান এসেছিলো এখানে।
মাহি গম্ভীর গলায় বলে
“তো
” সবটা বলেছে।
“কোন সবটা?
“বাচ্চাটা বিহানের।
আদি হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়।
” আদি আমি বলছি তুই বাচ্চাটা নষ্ট করে দে। নাহলে দেখবি কিছুদিন পরে এসে বিহান দাবি করবে। আর রাইকেও নিয়ে যেতে চাইবে। তুই জানিসই বিহান তোর সব পছন্দের জিনিস ভালোবাসার জিনিস গুলো নিয়ে নেয়। তাছাড়াও
রাইয়ের রক্ত শূন্যতা আছে। খুব রিক্স হয়ে যাবে রাইয়ের জন্য। সবে দুই সপ্তাহ চলছে।
আদি কপাল টানটান করে মাহির দিকে তাকায়।
“যা হবে পরে দেখা যাবে। বেবিটাকে আমার খুব দরকার। বেবি মেরে ফেলার কথা আর কখনো বলবি না। আর রইলো বাকি বিহান
রাই চাইলে ওর সাথে চলে যেতেই পারে। আমি কিচ্ছু বলবো না। যেমন বলেছিলাম না ওরা রিলেশনশিপ এ যাওয়ার সময়।
“এতে রায়ের দোষ কোথায়? আশ্চর্য
” সবটুকু দোষ ওই স্টুপিটটার। একটু কেয়ারফুলি থাকতে পারলো না?
“অযথা রাগ করছিস আদি।
মাহি আদির হাতের ওপর হাত দিয়ে বলে।
” রাই একটা ভুল করেছে বলে ওকে কখনোই অসম্মান করিস না৷ মেয়েটা বড্ড অভাগা। অন্তত তুই একটু বুঝিস ওকে।
“আসছি

আদি বেরিয়ে যায়। মাহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। দরজার সামনেই রাইকে দেখতে পায়। রাই আমতা আমতা করে। আদি রাইকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। রাই ডাক্তার মাহির দিকে তাকায়। উনি রাইদকে চিনে কি করে? রাইতো এই প্রথম দেখছে ওনাকে। তাহলে? কি করে চিনে?

আদি মাহি বিহান তিনজন ভালো বন্ধু ছিলো। এক সাথে বড় হয়েছে পড়ালেখা করেছে। বিহান আবার আদির চাচাতো ভাই।

🥀🥀🥀🥀
দিনটি ছিলো শুক্রবার বার ২০১০। রাইয়ের মা মারা যায়। দীর্ঘ দিন ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকার পরে মারা যায়। রাই তখন খুব ছোট। দশ বছর হবে হয়ত। আদি তখন আঠারো বছরে সবে পা দেবে। খাটিয়াতে শুয়িয়ে রাখা মায়ের লাশের বুকে মাথা রেখে রাই হাউমাউ করে কাঁদ ছিলো। কেউ উঠাচ্ছিলো না রাইকে। সবাই ব্যস্ত ছিলো লাশ টাকে গোরস্থানে কবর দেবে না কি বাড়ির পাশে এটা নিয়ে ঝগড়া করতে।
রাইয়ের বাবা কিছুতেই বাড়ির পাশে কবর দিতে দেবে না। কারণ তার না কি কবর দেখলে ভয় করে। অথচ তাকেও একদিন এই সাড়ে তিন হাত কবরেই ঘুমতে হবে।

আদি অহিকে নিয়ে এসেছিলো। রাইকে এই ভাবে কাঁদতে দেখে দৌড়ে রাইয়ে কাছে যায়। টেনে তুলে লাশের বুক থেকে৷ নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে নেয়। সেই ছিলো প্রথম স্পর্শ। প্রথম অনুভূতি। প্রথম ভালোবাসার সূচনা। লাঘব এট ফাস্ট সাইড।
তখন পর্যন্ত মুখটাও দেখে ছিলো না। পিচ্চিটা ভরসার একটা বুক পেয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলে। হয়ত ওই পিচ্চি মেয়েটা বুঝে গেছিলো তার সুখের দিন শেষ।

অনেক ঝগড়ার পরে রাইয়ের মাকে বাড়ির পাশেই কবর দেওয়া হয়েছিলো। রাই অহিকে বলেছিলো তাকে ছেড়ে না যেতে কিন্তু অহি নিরুপায় ছিলো। অহির মা রায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলো তিনদিন পর এসে রাইকে নিয়ে যাবে।

দ্বিতীয় দিনই রায়ের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে নিয়ে আসে। ছোট্ট রাই তখন সারাদিন মায়ের কবরের পাশে বসে থাকতো। আদি রোজ নিয়ম করে তখন বার দেখতে আসতো রাইকে৷ দুর থেকেই দেখতো। রাইয়ের চোখের পানি ওর ভেতরটা ছারখার করে দিতো তাই আর কাছে যেতো না।
তিনদিন পরে রাই একাই চলে আসে অহিদের বাড়িতে। আদি তখন বই পড়ছিলো। রাই পা টিপে আদির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
“ভাইয়া
নাক টেনে বলে। এই প্রথমবার প্রিয়তমা আদির সাথে কথা বলতে এসেছে। আদি ফট করে বই বন্ধ করে ফেলে। পুরো মনোযোগ দিয়ে তাকায় রাইয়ের দিকে। চুল গুলো ঝুঁটি বাঁধা। সাদা একটা ফ্রক পরা। ফ্রকটায় কাঁদা লেগে আছে। নিশ্চয় মায়ের কবর জড়িয়ে ধরে ছিলো।
” বলো
রাইয়ের দুই গালে হাত দিয়ে বলে আদি।
“অহি কোথায়?
ঠোঁট উল্টে বলে।
” ও তো বাবা মায়ের সাথে তোমাদের বাড়িতে গেছে।
“ওহহহ
রাই মন খারাপ করে বলে।
” তোমাদের বাড়িতে আজ এতো মেহমান তুমি এখানে?
রাই কিছু বলে না।
“কিছু খেয়েছো?
রাই উওর দেয় না।
আদি মুচকি হাসে। রাইদকে কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে দেয়।
” তুমি বসে থাকো। আমি তোমার জন্য নুডলস বানিয়ে আনি।
মাথায় হাত বুলিয়ে বলে আদি।
রাই মাথা নারায়। মা চলে যাওয়ার পরে ঠিকমতো খাওয়া হয় নি। কেউ রাইদকে জিজ্ঞেস করে না খেয়েছে কি না?
আজ সকাল থেকে কিছুই পেটে পরে নি। বাবাকে একবার বলেছিলো খিধে পেয়েছে। বাবা কথাই বলে নি।

ঝটপট আদি নুডলস বানিয়ে এনে রাইয়ের সামনে বসে। খুব যত্ন করে খাইয়ে দেয়।
“তুমি খাবে না?
রাই জিজ্ঞেস করে।।
” তুমি খাইয়ে দেবে?
আদি আবদার করে।
রাই খিলখিল করে হেসে ওঠে। ছোট ছোট হাত দিয়ে আদির মুখে খাবার তুলে দেয়।
“তুমি আমার বন্ধু হবে?.
রাই হাত এগিয়ে দিয়ে বলে।
আদি রাইয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে।
“, বন্ধু না তোমার বর হবো।
রাই আবার খিলখিল করে হাসে।

🥀🥀🥀🥀
“যাবো না আমরা?
রায়ের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বের হয় আদি। রাইয়ের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসে।
” আমার কথা তোমার মনেই নেই। কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে তোমার আছে। পুরো এটা শহর জুড়ে ছিলো আমাদের খুনসুটি। আর তুমি সবটা ভুলে গেলে?
কি করে সম্ভব?
মনে মনে বিরবির করে আদি।
রাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আদির দিকে।

“কিছু বলবেন?
রাই বলে।
” নাহহহ
আদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। রাইয়ের মনে একটা প্রশ্ন এসে হানা দেয়। আদির চোখ জোড়া এতো চেনা চেনা কেনো লাগে? মনে হয় এই চোখের দিকে তাকিয়ে রাই অনেক গুলো রাত কাটিয়েছে। এটা কি করে সম্ভব? না কি মনের ভুল?

“বিয়ে করে ফেসে গেছেন বলে দয়া দেখাচ্ছেন। অবশ্যই আমি এই ঋণ শোধ করার চেষ্টা করবো।
রাই বলে।
” শোধ তো করতেই হবে। কড়াই গন্ডায় হিসেব নেবে আমি। ছেড়ে দেওয়া মতো ভালো মানুষ আমি না।
রাই ভেংচি কাটে।
“ডাক্তার আমাকে চিনে কি করে? আমি তে ওনাকে চিনি না?
” আমি কি করে জানবো? এমন ভাবে বলছো যেনো আমি ছোট থেকে বড় করে করেছি তোমাকে? ইডিয়েট

“লাটসাহেব একটা। ভালো ভাবে বললে কি হতো?
বিরবির করে বলে রাই।

চলবে