সৎ মা পর্ব-০৭

0
201

#সৎ_মা (০৭)
#সামসুজ্জামান_সিফাত

বাবা আমাকে কিছুক্ষণ বুঝিয়ে সুজিয়ে চলে গেল। আমি আর কিছু বললাম না। ঘরে ভালো লাগছে না তাই বাড়ি থেকে বের হয়ে দোকানে চলে এলাম। বাবার সাথে দোকানদারি করতে করতে রাত এগারোটা বেজে গেছে। বাবা আমাকে বলল,”সিফাত তুই বাসায় চলে যা আমি আজকে দোকানেই থাকবো।”

আমি কিছু না বলে দোকান থেকে বের হয়ে বাড়ি চলে এলাম। ঘরে ঢুকতেই মা জিজ্ঞেস করল,”কি রে তুই একা কেন ? তোর বাবা কই ?”
আমার এই মহিলার সাথে কথা বলতেই কেমন যেন লাগছিল। তবুও বিরক্ত নিয়ে বললাম,”বাবা আজকে বাড়ি আসবে না।”
– বাড়ি আসবে না কেন ?
– আমায় এত কিছু বলেনি।

আর কিছু না বলে আমি আমার ঘরে এসে পড়লাম। পেটে ক্ষিদে লেগেছে তবুও খাবো না। কারণ, এই মহিলাকে ই ওইদিন থেকে সহ্য হয় না খাবার দূরে থাক। কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি করে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ পড়ে ভার্সিটির জন্য তৈরি হয়ে দোকানে চলে এলাম। বাবা এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। আমি ডেকে বাবাকে ঘুম থেকে উঠালাম। বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করলো,”কি রে এত সকালে ই দোকানে এলি ?”
আমি বললাম,”কিছু টাকা লাগবে আমার।”
– কত লাগবে ?
– হাজার খানেক দাও।
– এত টাকা দিয়ে কি করবি ?
– দরকার আছে।

বাবা কিছু না বলে একটা এক হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দিল। আমি টাকা টা নিয়ে হোটেলে গিয়ে খাবার খেয়ে নিলাম। ভার্সিটি যেতে আর ভালো লাগছিল না তাই একটু ঘুরা ঘুরি করে বাড়ি চলে এলাম। বাড়ি এসে ঘরে ঢুকতেই আকাশ থেকে পড়লাম। কারণ, ওই মহিলা আজকে আমার রুমে এসে পরকিয়া করছে। কিছু না বলে আমি দু’জন কে ই একটা করে থাপ্পড় দিয়ে অপরিচিত লোকটিকে ধরে বাড়ির বাহিরে নিয়ে এলাম। বাড়ির বাহিরে এনে ই মার শুরু করলাম। মারের চোটে লোকটির কয়েক জায়গায় কেটে গেছে। তারপর ছেড়ে দিয়ে বললাম,”তোকে যেন আর কখনো আমাদের বাড়ির ত্রিসীমানায় না দেখি।” সে বলল,”আমি ত্রিসীমানায় কেন একদম তোর ঘরে ইং যাবো কিন্তু তুই ই তোর বাড়ির ত্রিসীমানায় থাকতে পারবি না সেই ব্যবস্থা করে দিব আমি।”
– দেখা যাবে।
– দেখা যাবে না, তুই দেখে ও মিলিয়ে নিস আজকেই তোর এই বাড়িতে শেষ দিন।
– একটা প্রবাদ আছে না, ‘শকুনের দোয়ায় গরু মরে না’ শুধু এই প্রবাদ টা মনে রাখিস।
– তোর প্রবাদ তুই ই মনে রাখ, আর আমার কথা গুলো মিলিয়ে নিস।

লোকটি চলে গেল। আমি বাড়ি চলে এলাম। বাড়ি এসে মাকে কিছু না বলে ঘরে এসে কাপড় পাল্টে নিলাম। না আজকে ও বাবাকে বলতে হবে। আর দেরি না করে বাড়ি থেকে বের হয়ে দোকানে চলে এলাম। বাবা আমায় কিছু বলল না তাই আমি নিজেই বললাম,”বাবা, মা আজকে আবার একি কাজ করেছে তা ও আবার আমার ঘরে।”
বাবা বলল,”কি বলছিস ?”
– হ্যাঁ।
– আচ্ছা তুই বাড়ি যা আর তোর মাকে কিছু বলিস না আমি আসতাছি একটু পর।
– ঠিক আছে।

আমি বাড়ি চলে এলাম। অনেকক্ষণ হয়ে গেল বাবা বাড়ি আসেনি। আমি বাবার অপেক্ষায় বসে আছি‌। সন্ধ্যা হয়ে গেল কিন্তু বাবা এলো না। অবশেষে রাত নয়টার দিকে বাড়ি এলো। বাড়ি এসে সোজা আমার রুমে এসে আমাকে তিনটি থাপ্পড় মারলো। আমি কিছু বুঝতে পারলাম না আমাকে মারলো কেন। আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগে ই বাবা বলল,”তোর কাছ থেকে এমন কিছু আশা করিনি আমি।”
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”আমি কি করেছি ?”
বাবা আবার ও থাপ্পড় দিয়ে জিজ্ঞেস করল,”তুই জানিস না তুই কি করেছিস ?
– আমি জানলে কি আর তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম নাকি ?
– নিজে ই তোর মা কে খরিদ্দার এনে দিস আবার তুই ই গিয়ে আমার কাছে নালিশ করিস।
– কি বলছো তুমি এসব ?
– যা সত্যি তা ই বলছি। জানিস আজকে তোর জন্য আমাকে কতটুকু অপমানিত হতে হয়েছে ?
– আমার জন্য অপমানিত হবে কেন ?
– তুই যেই খরিদ্দার এনেছিস সেই খরিদ্দার তুই দোকান থেকে বের হয়ে যাবার পর দোকানে গিয়ে আমাকে সব সত্যি কথা বলে তারপর অপমান করেছে।
– আমি আনিনি বাবা…

আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাবা আমার গালে সজোরে থাপ্পড় মেরে বললো,”তুই তোর এই পাপি মুখে আমাকে বাবা বলে ডাকবি‌ না। আর এখনি তুই বাড়ি থেকে বের হয়ে যা নয়তো আমি কি করবো নিজে ও জানি না।”
আমি বললাম,”বিশ্বাস করো আমি আনিনি ওই লোককে।”
– তোর একটা কথা ও শুনতে চাইনা আমি। বের হয়ে যা বাড়ি থেকে।
– ঠিক আছে যাচ্ছি তবে একটা কথা শোন, একদিন সব কিছু জানবে বুঝবে আর আমাকে খুঁজবে কিন্তু সেদিন আমাকে আর পাবে না। তখন নিজে ই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। আর শোন বাবা, সত্যি টা যাচাই করে দেখার চেষ্টা করো। যাইহোক আমি চলে যাচ্ছি, ভালো থেকো তুমি আর একটা অনুরোধ, আমার বোন টাকে মানুষের মত মানুষ করার চেষ্টা করো তারপর ভালো দেখে একটা বিয়ে দিয়ে দিও। আর সত্যি টা জানার পর অযথা আমাকে খোঁজার বৃথা চেষ্টা করো না।

আর কিছু না বলে বা কিছু শোনার অপেক্ষা না করে কিছু না নিয়ে ই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম। বের ত হয়েছি ঠিকি কিন্তু এখন কোথায় যাবো ? কি করবো ? মাথায় কয়েক প্রকার চিন্তা। তার উপর আবার এখন রাত। মাথা টা কাজ ই করছে না। রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর ভাবছি কি করি ? কোথায় যাই ? না আগে মায়ের কবরে যেতে হবে তারপর যেখানে যাই যাবো। তাই আবার পেছনে ফিরে হাঁটা ধরলাম। হাঁটতে হাঁটতে মায়ের কবরের কাছে চলে এলাম। মায়ের ঠিক মাথার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে মায়ের কবর স্পর্শ করে বলতে লাগলাম,”মা তুমি তো দেখেছো হয়তো আমি নির্দোষ। বাবা তা বুঝেনি। মা, বাবা আজকে আমায় বাড়ি থেকে বের করে দিল। বাবা একটা বার সত্যতা যাচাই করতে চায়নি। দেখছো মা, আজকে তুমি নেই বলে তোমার এই নির্দোষ ছেলেটার উপর মিথ্যা অপবাদ চাপিয়ে দিয়ে বাবার কাছে ছেলেকে খারাপ বানিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিল। মা হয়তো আর কখনো তোমার কাছে আসা হবে না তাই তোমার কাছে দোয়া চাই, তুমি দোয়া করো আমি যেন যেখানেই থাকি না কেন সব সময় যেন সুস্থ থাকতে পারি আর মানুষের মত মানুষ হতে পারি। তুমি দোয়া করো যেন তোমার নির্দোষ ছেলেটা যেই জীবন সংগ্রামে নামতে চলেছে সেই জীবন সংগ্রামে যেন জয়ী হতে পারে।”

কখন যে চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে লাগলো বলতে পারবো না। শার্টের হাতা দিয়ে চোখ জোড়া মুছে নিয়ে মায়ের মাথা বরাবর একটা চুমু খেয়ে উঠে পড়লাম। মায়ের পায়ের কাছে গিয়ে কবর টা সালাম করে কবর স্থান থেকে বেরিয়ে অন্ধকারে হাঁটতে শুরু করলাম। এমনি অমাবস্যার রাত তার উপর আবার আমার উপর নেমে এলো নতুন অমাবস্যা। রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছি আর দুচোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ে যাচ্ছে।

প্রায় দেড় ঘন্টা হাঁটার পর পা দুটো যেন অবস হয়ে এলো। আর হাঁটতে পারছি না। কোথাও যে বসবো সেই ব্যবস্থা ও নেই। অনেক কষ্টে হেঁটে চলেছি। অবশেষে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে। কিন্তু আগামী এক ঘন্টার মধ্যে কোনো ট্রেন আসবে না। তার মানে একটা ঘন্টা বসে থাকতে হবে। রেল স্টেশনের পাশে একটা দোকান দেখতে পেলাম। দোকান থেকে বিশ টাকা দিয়ে দুইটা রুটি পনেরো টাকা দিয়ে এক হালি কলা আর পনেরো টাকা দিয়ে একটা পানির বোতল কিনে খেয়ে নিলাম। তারপর পকেটে হাত দিয়ে দেখি পকেটে ১১০০ টাকা আছে। যা করার এই টাকা দিয়ে ইং করতে হবে।