সৎ মা পর্ব-১০

0
179

#সৎ_মা (১০)
#সামসুজ্জামান_সিফাত

ভাইয়া আমাকে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারল। আমি কিছু না বলে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমাকে চুপ থাকতে দেখে ভাইয়া নিজেই বলল,”জানিস এই থাপ্পড় টা কিসের জন্য দিয়েছি ?”
আমি মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বললাম।
– এই থাপ্পড় টা দিয়েছি শুধু এতদিন এত বড় একটা কথা চাপা রাখার জন্য।
আমি কিছু বললাম না। ভাইয়া আবার ও বললো,”আচ্ছা শোন, যা হয়েছে এসব ভুলে গিয়ে লেখা পড়া শুরু কর। তারপর না হয় অন্য কিছু করার চিন্তা করবি‌। আর তোর লেখা পড়ার খরচ আমি চালাবো।
আমি বললাম,”আরে না। এখন না, আর কয় টা দিন যাক তারপর ভেবে দেখবো।
– ভেবে দেখা লাগবে না। কালকে ই তুই নরসিংদী গিয়ে তোর প্রয়োজনীয় সব সার্টিফিকেট নিয়ে আসবি‌।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
– মনে থাকে যেন।
– মনে থাকবে।
– আর শোন, কখনো কিন্তু আমাদের পর ভাববি না। আমাদের আপন ই ভাববি। যখন যা লাগে আমাকে বলবি। ঠিক আছে ?
– আচ্ছা।

ভাইয়া বাবা-মাকে নিয়ে কোথায় অন্য ঘরে চলে গেল। আমি ভাইয়ার ফোন টা নিয়ে গেইম খেলছি। হঠাৎ সাথী এলো। এসেই ঘরে কি যেন খুঁজতে লাগলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম,”কি রে কি খুঁজছিস ?”
সাথী বলল,”আমার জন্য কিছু আনোনি ?
– কি আনবো ?
– সবার জন্য ত কাপড় আনলে। আমার জন্য কিছু আনোনি নাকি ?
– না ত। আমি তোর কথা ভুলে ই গিয়েছিলাম।
– কাজ টা ঠিক করোনি ভাইয়া।
বলেই সাথী মুখ ঘুমড়া করে চলে যাচ্ছিল। তখন আমি পেছন থেকে ডাক দিলাম,”এই কোথায় যাচ্ছিস ?”
সে কিছু না বলে চলে গেল। বুঝলাম খুব অভিমান করেছে ওনি। তাই ওনার জন্য আনা শাড়ি আর চকলেট গুলো নিয়ে ওর রুমে আসলাম। দেখি সে মুখ ঘুমড়া করে ই বসে আছে। আমি শাড়ি আর চকলেট গুলো পেছনে লুকিয়ে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সে আমাকে দেখে ই মুখ ঘুরিয়ে নিল। তারপর আমি শাড়ির প্যাকেট টা ওর মাথার উপর দিয়ে দিলাম। সে খুব খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করলো,”এটা কার জন্য ভাইয়া ?”
আমি তার গাল টেনে বললাম,”যাকে দিয়েছি তার জন্য ই।”
সে খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলল,”সত্যি ভাইয়া এটা আমার জন্য ?”
– মিথ্যা বলতে যাবো কেন বলতো ?
– না এমনি।
– পছন্দ হয়েছে কি ?
– পছন্দ হয়েছে মানে খুব পছন্দ হয়েছে।
– বেশি দামী শাড়ি দিতে পারিনি তাই মন খারাপ করিস না।

সাথী আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,”আমি কি তোমাকে দাম জিজ্ঞেস করেছি বা বলেছি যে মন খারাপ করেছি।”
– তা না কিন্তু..
– কিন্তু কি হ্যাঁ ?
– না কিছু না।
– দেখ আর যেন এসব বলতে না শুনি। তুমি খুশি হয়ে যা দিবে তা ই আমার জন্য খুশির ব্যপার।
– আচ্ছা ঠিক আছে। যদি খুশি হস তাহলে তো ভালো ই।
আবার ও চোখ বড় বড় করে বলল,”যদি খুশি হই মানে কি হ্যাঁ ?”
– না কিছু না।
– কিছু না কিছু না কইরো না।
– আচ্ছা ঠিক আছে। তোর জন্য আরও কিছু আছে।
– কি আছে ?

এবার আমি চকলেট গুলো বের করতেই সে খপ করে আমার হাত থেকে চকলেট গুলো নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”এগুলো কি আমার জন্য ?”
আমি তার নাক টেনে দিয়ে বললাম,”তোর জন্য নয়তো কার জন্য আনবো ?”
খুশিতে সে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,”তুমি অনেক ভালো ভাইয়া। জানো তোমার মত…
বলে ই সে থেমে গেল। আমি স্পষ্ট লক্ষ্য করলাম সাথীর মুখ খানা কালো হয়ে গেছে। তখন আমি বললাম,”আমার মত কি ?
– না কিছু না।
– বলবি না তো ?
বলে ই আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। সে এবার বলল,”আসলে তোমার মত আমার আরেক টা ভাই ছিল।”
আমি অবাক হয়ে বললাম,”কোথায় সে ?”
সাথী খুব কষ্টে বলল,”সে এই দুনিয়ায় নেই আর।”

স্পষ্ট দেখতে পেলাম তার চোখের কোণে পানি চলে এসেছে। তাই আর কিছু জিজ্ঞেস না করে তার চোখ মুছে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,”তোর এক ভাই নেই ত কি হয়েছে ? আরেক ভাই এসেছে ত নাকি ? এখন থেকে মনে করবি আমি ই তোর সেই ভাই।”
সে মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যাঁ’ সূচক উত্তর দিল। যেহেতু তার মন খারাপ হয়ে গেছে তাই বললাম,”আচ্ছা আয় আমি তুই আর ভাইয়া মিলে ভাইয়ার মোবাইলে লুডু খেলি।”
– ঠিক আছে চলো।

তারপর তিনজন মিলে কিছুক্ষণ লুডু খেলে রাতের খাবার খেয়ে শুতে চলে এলাম। শুয়ে শুয়ে ভাবছি, ভাগ্যক্রমে খুব ভালো একটা পরিবার পেয়েছি। যাদের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক নেই, তারা আমায় রক্তের সম্পর্কের চেয়েও অনেক বেশি আপন করে রেখেছে। যদি এই পরিবারে জন্মগ্রহণ করতে পারতাম তাহলে হয়তো সবচেয়ে সুখী মানুষ আমি ই হতাম। তবে আফসোস নেই। এখন তো সুখে থাকার একটা ঠিকানা পেয়ে গেলাম। কথায় আছে না, সুখের পরে ই দুঃখ আসে আর দুঃখের পরেই সুখ আসে। আমার সাথে কথাটা একদম ফলে গেল‌। আগে কষ্ট করেছি, আর এখন সুখে আছি। এখন দেখা যাক এই সুখ কতদিন থাকে। কারণ, সুখ বেশিদিন থাকে না। শুয়ে শুয়ে কথা গুলো ভাবছি, হঠাৎ মনে হলো এশার নামাজ পড়িনি। তারাতাড়ি উঠে অযু করে এসে নামাজ পড়ে শুয়ে পড়লাম। শুয়ে দোয়া পড়তে পড়তে ঘুম লেগে গেল।

পরেরদিন ফজরের আযানের সময় ঘুম ভাঙ্গে। উঠে হাত মুখ ধুয়ে অযু করে নামাজ পড়ে নিলাম। তারপর ভাইয়ার সাথে খাওয়া দাওয়া করে ভাইয়ার সাথে দোকানে যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম, কিন্তু এর আগেই ভাইয়া চলে গেল। আমি দোকানের উদ্দেশ্য বের হবো এমন সময় মা সামনে এসে বলল,”সিফাত তোকে সাদ্দাম আজকে কি করতে বলেছিল ?”
– মনে নেই ত।
– তকে আজকে নরসিংদী যেতে বলেছিল কি ?
– হ্যাঁ। কিন্তু আজকে যাবো না।
– কেন ?
– আজকে ভালো লাগছে না।
– তাহলে কবে যাবি ?
– সামনের সপ্তাহে যাবো।
– ঠিক আছে মনে থাকে যেন।
– আচ্ছা।
– আজকে তোর আর দোকানে যেতে হবে না। তুই এক কাজ কর আজকে সাথীর সাথে কোথাও ঘুরা ঘুরি করে আয়।
– ঠিক আছে‌। কিন্তু সাথী কোথায় আছে ?
– গিয়ে দেখ ঘুমায় হয়তো।

চলে এলাম সাথীর ঘরে। ঠিকি সে এখন ঘুমাচ্ছে। আমি চুপচাপ তার মাথার পাশে বসে কানে সুড়সুড়ি দিচ্ছি। কয়েকবার সুড়সুড়ি দেওয়ার পর তার ঘুম ভেঙ্গে যায় আর আমাকে মারতে শুরু করে। আমি তাকে থামিয়ে বললাম,”আমাকে না মেরে হাত-মুখ ধুয়ে এসে খাবার খেয়ে তৈরি হয়ে নে।”
– কেন ?
– আজকে তোকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।
– সত্যি বলছো ভাইয়া ?
– আগে পরে কি মিথ্যা বলেছি নাকি ?
– না ত।
– তাহলে সত্যি বলছি কি না জিজ্ঞেস করিস কেন আবার ?
– আচ্ছা ঠিক আছি আর বলবো না।
– মনে থাকবে তো ?
– না থাকবে না।
– ঠিক আছে মনে থাকতে হবে না যা বলছি তা কর তারাতাড়ি।
– আচ্ছা। তুমি বাহিরে যাও আমি আসছি‌।

আমি সাথীর ঘরে থেকে আমাদের ঘরে চলে এলাম। টেবিলে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া মোবাইল রেখে গেছে। তাই মোবাইল টা নিয়ে পাবজিতে ঢুকলাম। কিছুক্ষণ পাবজি খেলার পর দেখতে গেলাম সাথীর কতটুকু হয়েছে। কিন্তু ওনি দরজা লাগিয়ে যে বসেছে খোলার কোনো নাম ই নেই। আমি দরজায় থাপ্পড় দিয়ে বললাম,”কি রে ছেলে পটাতে যাবি নাকি ?”
ভেতর থেকে সাথী চিল্লিয়ে বলে উঠলো,”দেখ ভাইয়া.”
তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললাম,”কি দেখবো হ্যাঁ ? যেই সময় নিয়ে সাজতেছিস মনে হচ্ছে ঘুরতে নয় বরং জামাই খুঁজতে যাবি‌।”
– এবার কিন্তু সত্যি সত্যি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
পাশের ঘর থেকে মা এসে বলে উঠলো,”বাড়াবাড়ি হবে কেন ? তোর ভাই ত ঠিক ই বলেছে। যতক্ষণ ধরে সাজতাছিস এতক্ষনে দুইটা নতুন বৌকে ও সাজিয়ে আরও কিছুক্ষণ সময় বেঁচে যাবে।”
সাথী এবার মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,”মা তুমি ও ভাইয়ার সাথে যোগ দিলে ?”
আমি বললাম,”যোগ দিতে যাবে কেন ? যা সত্যি মা তা ই বলছে।”
– ঠিক আছে বলো বলো। সমস্যা নেই, সময় আমার ও আসবে তখন আমি বলবো।
– পরের টা পরে বলিস। এখন তারাতাড়ি বের হ। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা হয়ে গেছে আমার।
– তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছে কে ?
– কেউ বলেনি। তারাতাড়ি বের হ তুই‌।
– পারবো না।
– ঠিক আছে তাহলে আমি একা ই ঘুরতে যাই থাক তুই তোর ঘরে ই।
– এই না না ভাইয়া। আসছি আমি।
– তারাতাড়ি আয়।
– ঠিক আছে।

সাথী সাজগোজ করে বের হলে দুজনে মিলে বাড়ি থেকে বের হয়ে একটা রিক্সা ডেকে রিক্সায় উঠে সাথী কে উদ্দেশ্য করে বললাম,”তোর যেই জায়গা টা খুব ভালো লাগে ওখানে ই নিয়ে যেতে বল।”
– ঠিক আছে।

সাথী রিক্সা ওয়ালাকে তার পছন্দের একটা জায়গার নাম বলল। রিক্সা ওয়ালা সাথীর বলা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো।