সৎ মা পর্ব-০৯

0
201

#সৎ_মা (০৯)
#সামসুজ্জামান_সিফাত

মালিক চলে গেলে সাদ্দাম ভাই আমাকে সব জিনিসের দাম বলে দিল। আমার তেমন সমস্যা হলো না। কারণ আগে ও নিজের দোকান চালিয়েছি। আমি সাদ্দাম ভাইকে বললাম,”আচ্ছা মালিকের নাম কি ভাই ?”
সাদ্দাম ভাই বলল,”শাহেদ।”
– ওনি যে বললেন মোবাইলের দোকানে যাবে, মোবাইলের দোকান কি ওনার নিজের নাকি ?
– হ্যাঁ। আচ্ছা ভালো কথা তোমার বেতনের কথা ই ত বলা হয়নি।
– আরে ওসব বলতে হবে না।
– তবুও বলি, তোমার বেতন মাসে পনেরো হাজার টাকা। আর একটা কথা তোমাকে থাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তুমি আমার বাড়ি থাকতে পারবে।
– আরে না, আমি থাকার জায়গা খুঁজে নিবনি।
– বেশি কথা বলো না।
– আরে ভাই বেশি কথা বললাম কই ? আমি থাকলে ত পরে আপনার অসুবিধা হবে।
– ভাই ই যেহেতু ডেকেছো সেহেতু আর বেশি কথা বলো না। আর আমার কোনো অসুবিধা হবে না।

আমি আর কিছু বলিনি। সারাদিন দোকানে ভালো ই বেচা কেনা করলাম দুজনে। রাত এগারোটার দিকে দোকান বন্ধ করে আমি সাদ্দাম ভাইয়ের সাথে ওনার বাড়ি চলে এলাম। বাড়িতে ওনার বৃদ্ধ বাবা-মা আর আর একটা ছোট বোন আছে। জনি আমাকে বললো ওনার সাথে ওনার রুমে থাকতে। আমি ওনার কথায় রাজি হয়ে গেলাম। সাদ্দাম ভাইয়ের সাথে ওনার রুমে এসে ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম,”আচ্ছা ভাই আপনি বিয়ে করেন নাই নাকি ?”
সাদ্দাম ভাই বললেন,”করেছিলাম রে ভাই।”
– তাহলে ভাবি কোথায় ?
– কেন ?
– না আমাকে আপনার সাথে থাকতে বললেন তাই জিজ্ঞেস করলাম।
– আর বলোনা ভাই তোমার ভাবি আমাকে ফাঁকি দিয়েছে।
– কি রকম ?
– পরে বলবনে একসময়। এখন আমার সাথে হাত মুখ ধুয়ে খেতে আসো।
– না ভাই এখন খাবো না আমি।
– বেশি কথা বলো না। দুপুরে শুধু রুটি আর কলা খেয়েছো সকালে ত মনে হয় খাওনি। আর তাছাড়া তোমাকে নিয়ে আসবো বলে মাকে বলে ভালো মন্দ রান্না করিয়েছি।

কোনো কথা না বাড়িয়ে সাদ্দাম ভাইয়ের সাথে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে খেতে আসলাম। তারপর সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করে আমি আবার সাদ্দাম ভাইয়ের সাথে ওনার রুমে চলে এলাম। সাদ্দাম ভাইয়ের পরিবার টা খুব ই ভালো। ওনারা আমাকে পর ভাবেনি। আর সাদ্দাম ভাইয়ের বাবা- মা ত আমায় নিজের ছেলে ই বানিয়ে দিলেন। ওনার বোন সাথী দেখতে ভারি মিষ্টি মেয়ে। সে নাকি এবার ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ে। সাদ্দাম ভাই মশারি টানিয়ে বলল,”সিফাত সকালে আবার উঠতে হবে, ঘুমিয়ে পড়ো।”
আমি “ঠিক আছে” বলে শুয়ে পড়লাম।

পরেরদিন সকালে সাদ্দাম ভাই ডেকে ঘুম থেকে তুলে দিল। দেখি বেলা হয়ে গেছে অনেক। সাদ্দাম ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম,”ভাই বাজে কয়টা ?”
ওনি ফোনে সময় দেখে বললেন,”ছয়টা সাইত্রিশ বাজে।”
– আজকে তাহলে আর ফজরের নামাজ পড়া হলো না।
– আমার মনে ছিল না তুমি যে নামাজ পড়। আর তাছাড়া আগের রাতে মনে হয় ভালো করে ঘুমাতে পারোনি তাই আর ডাকিনি।‌ আচ্ছা যাও হাত মুখ ধুয়ে আসো।
– ঠিক আছে।

হাত মুখ ধুয়ে এসে আমি আর সাদ্দাম ভাই খাওয়া দাওয়া করে দোকানে চলে এলাম। সারাদিন দোকানদারি করে রাত এগারোটায় দোকান বন্ধ করে চলে এলাম।

আস্তে আস্তে কেটে গেল এক মাস। এই এক মাসে সাদ্দাম ভাইয়ের পরিবারের সাথে একদম ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছি। এখন সাদ্দাম ভাইয়ের বাবা-মাকে আমি বাবা-মা বলে ই ডাকি অবশ্য ওনারা ই আমায় সেই অনুমতি দিয়েছে। সাদ্দাম ভাইকে ও এখন শুধু ভাইয়া বলি ও তুমি তুমি করে বলি আর ওনি আমায় তুই তুই করে বলে। আমাকে তুই তুই করে বলতে আমি ই বলেছি। কারণ আমি ওনার অনেক ছোট। সাথী ও আমায় নিজের ভাইয়ের মত ই দেখে আমি ও নিজের বোনের মত ই দেখি। শহর টা ও মোটামুটি ভালো ভাবেই চিনেছি।

আজকে দোকানে আসার একটু পর শাহেদ ভাই (দোকানের মালিক ) আসলো। ওনি আমার হাতে ত্রিশ টা নতুন পাঁচশো টাকার নোট দিয়ে ভাইয়ার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেছেন। ভাইয়া বেতন পেয়েছে আরও নয় দিন আগে। তখন আমাকে কিছু নতুন কাপড় কিনে দেন। এর আগে আমি ভাইয়ার কাপড় ব্যবহার করতাম। আজকে নিজের কামাইয়ের প্রথম বেতন টা হাতে পেয়ে খুব খুশি লাগছে। যা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। ভাইয়াকে বললাম,”ভাইয়া আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি তুমি দোকান সামলাও।”
– কোথায় যাবি ?
– এসে বলবো।
– ঠিক আছে সাবধানে যাস কিন্তু।
– আচ্ছা।

দোকান থেকে বের হয়ে মার্কেটে এসে বাবা জন্য একটা পাঞ্জাবী আর লুঙ্গি, মায়ের জন্য একটা শাড়ি, ভাইয়ার জন্য একটা পাঞ্জাবী আর দুইটা গেঞ্জি, সাথীর জন্য একটা শাড়ি আর কিছু চকলেট কিনলাম। আর আমার জন্য তিনটা গেঞ্জি কিনে দোকানে চলে এলাম। আমার হাতে এসব দেখে ভাইয়া জিজ্ঞেস করলো,”কিরে এসব কি ?”
আমি বললাম,”রাতে দেখিও।”
– এখন ই দেখি।
– না এখন না।
– আচ্ছা। আর রাতে তোর সাথে কিছু কথা আছে।
– আচ্ছা।

আজকে সন্ধ্যার দিকে ই ভাইয়া শাহেদ ভাইকে ফোন করে ছুটি নিয়ে দোকান বন্ধ করে আমাকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে। বাড়ি এসে আমি আগে, বাবাকে পাঞ্জাবী আর লুঙ্গির প্যাকেট দিয়ে দিলাম তারপর মাকে শাড়ির প্যাকেট টা দিয়ে দিলাম। সাথি বসে পড়তেছিল তাই তাকে আর বিরক্ত করিনি। ঘরে এসে ভাইয়াকে পাঞ্জাবী আর গেঞ্জি দিয়ে দিলাম। প্রথমে ওরা কেউ ই নিতে চায়নি। আমি এক প্রকার ব্ল্যাক মেইল করে ই ওদের জিনিস গুলো দিলাম। সবাই খুব খুশী হয়। এখন শুধু সাথীর জিনিস গুলো বাকি রইল। ঘরে বসে আমি ভাইয়ার মোবাইল টিপছি এমন সময় ভাইয়া এসে বলল বাবা-মা ডাকছে আমায়। ভাইয়াকে সাথে নিয়ে ই বাবা-মায়ের কাছে এলাম। বাবা বলল,”বস সিফাত। তোর সাথে কিছু কথা আছে।”
আমি বললাম,”হ্যাঁ বাবা বলো।”
– আমরা চাইছিলাম কি তুই লেখা পড়া কর।
– না বাবা।
পাশ থেকে মা বলে উঠলো,”আজকে যদি তোর নিজের বাবা-মা বলতো তাহলে কি তুই না করতি ?”

নিজের বাবা-মা শুনতেই বুকটা ছ্যাত করে উঠলো। এই কয়দিন আমার ভাবনায় ই আসেনি ওরা যে আমার আসল বাবা-মা নয়‌। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি বের হয়ে গেল। মা আমার হাত ধরে বলল,”সিফাত বাবা, আমায় ক্ষমা করে দে। আমার মনে ছিল না তাই বলে ফেলছি।”
আমি বললাম,”আরে কি করছো ? মা কখনো ছেলের কাছে ক্ষমা চায় নাকি ? আর এসব সমস্যা নেই। আচ্ছা লেখা পড়ার কথা আমি আজকে কিছু বলতে পারবো না আমাকে কিছুদিন ভাবার সময় দাও তারপর বলবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে বলিস।

আর কিছু না বলে আমি রুমে চলে এলাম। ভাইয়া ও আমার পেছন পেছন আসলো। এসে বলল,”এক কাজ করতে পারিস, তুই নরসিংদী থেকে ঘুরে আসতে পারিস।”
– না ভাইয়া। বেঁচে থাকলে কখনো নরসিংদী যাবো না আর।
– কেন ?
– নরসিংদী আমার জন্য বিষাক্ত হয়ে গেছে।
– কি এমন হয়েছে যে নরসিংদী তোর জন্য বিষাক্ত হয়ে গেছে ?
– হয়েছে যা হবার।
– বল শুনি।
– পরে এক সময় বলবনি।
– সব ই পরে পরে করিস এখন বল।

আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মাথাটা নিচু করে বললাম,”একটা কথা তোমরা ভুল জানো।”
– কি কথা ?
– আমার বাবা বেঁচে আছে।
– তাহলে মিথ্যা বলেছিলি কেন ?
– বেঁচে আছে ঠিক ই কিন্তু আমার জন্য না তাই বলেছিলাম।
– কেন কি হয়েছিল ?

আমি ভাইয়াকে ছোট বেলা থেকে শুরু করে সব কিছু বললাম।‌ ভাইয়া আমার কথা শুনে চুপ করে কি যেন ভাবছে। দরজার কাছে দেখলাম বাবা-মা দাঁড়িয়ে আছে। ওনাদের চোখে পানি।