হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-০৮

0
542

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৮

ব্যবহারটা কেন জানি খুব রহস্যময় মনে হল। তাই ঘটনা যেন উদঘাটন করতে পারি সেজন্য ঘুমের ভান ধরে শুয়ে রইলাম। খালা আমার রুমে এসে রুমের লাইটটা জ্বালাল। আমি লাইট জ্বালানোর পরও ঘাপটি মেরে শুয়ে রইলাম। খালা লাইট জ্বলিয়ে আমার কাছে এসে আমাকে ডাকতে লাগল। খালার ডাকে সাড়া দিব কিনা বেশ দুটানায় পড়ে গেলাম। তবে কেন জানি না মনে হলো এখন সাড়া দিলে বিপদে পড়তে পারি। তাই ঘুমঘুম ভাব নিয়েই শুয়ে রইলাম। খালা আমাকে কতক্ষণ নেড়ে চেড়ে লাইটটা বন্ধ করে রুমে থেকে চলে গেল। পুরো বাড়ি তখন অন্ধকার অথচ খালার ফিসফিসের আওয়াজ আমার কানে আসছে। আমি আস্তে আস্তে উঠে পা টিপে টিপে দরজার সামনে গেলাম। দরজার কাছে গিয়ে আমি হালকা উঁকি মেরে দেখলাম একটা ছেলে খালার সাথে কথা বলতেছে।ড্রয়িং রুমটা অন্ধকার হওয়ায় মুখটা এত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না।খেয়াল করলাম খালা ছেলেটাকে নিয়ে নিজের রুমে গেল। রহস্যময় লাগল বিষয়টা। আমিও পা টিপে টিপে খালার রুমের পাশে দাঁড়ালাম। ছেলেটা ফিসফিস করে কথা বলছে তাই ছেলেটার কথা এত স্পষ্ট শুনতে পারছিলাম না। তবে খালা একটু আওয়াজ করেই কথা বলছে। ছেলেটা হয়ত বলেছিল দরজাটা লক করে দিতে। খালা অট্ট হাসি দিয়ে বলল-

– ধুর পাগলা ঐ মেয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে দরজা লক করতে হবে না। তুই তোর কাজ চালা। আয় আমার কাছে আয়।

আরও কতগুলো নোংরা কথা যেগুলো আমার মুখ দিয়ে আসছে না। আমি বিষয়টা আন্দাজ করতে পারলেও পুরোপুরি পরিষ্কার হতে পারছিলাম না। তাই আস্তে করে খালার রুমে উঁকি মারলাম। উঁকি মেরে যা দেখলাম তা দেখে আমি চমকে গেলাম। খালা ঐ ছেলেটার সাথে কুকর্ম করছে। তবে ঘরের আলো কম হওয়ায় ছেলেটার মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না।আমি চুপ করে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। আর ভাবতে লাগলাম ঐ ছেলেটা কে? এতদিন খালুর কথা আমার মনে না আসলেও আজকে প্রশ্ন জাগল খালু কোথায় আছে। খালার কি কোন ছেলে মেয়ে নাই। এসব ভাবতে ভাবতে এক ঘন্টা পার হলো। ছেলেটা এক ঘন্টা পর বের হয়ে গেল। আমি সারারাত ছটফটাতে ছটফটাতে কাটালাম। যে মহিলাকে আমি মায়ের চোখে দেখেছিলাম সে মহিলার এমন কুকর্ম মানতেই পারছিলাম না। সকালে উঠেই খলার কাছে গেলাম তবে চেহারাটা প্রতিদিনের মতই স্বাভাবিক রাখলাম। যাওয়ার সাথে সাথে খালা বলল-

– কি গো মা ঘুম হয়েছে?

খালার এমন কথা শুনে ঘৃনায় গা জ্বলে গেলেও নিজেকে সংবরণ করে খালাকে বললাম-

– হ্যাঁ।

খালা বলল এদিকে আসো তোমার চুলে তেল দিয়ে দেই। আমি ও চুলে তেল দেওয়ার জন্য খালার পাশে গিয়ে বসলাম। খালা চুলে তেল দিতে থাকল।এসময় খালাকে হুট করে প্রশ্ন করে বললাম-

– খালা বাসায় আসার পর থেকে আপনাকে দেখছি।খালুকে দেখলাম না। খালু কোথায়? আপনার কি কোন ছেলে মেয়ে নেই?

এ বলে খালার মুখের দিকে তাকালাম। খালা আমার এরকম প্রশ্নে মোটেও প্রস্তুত ছিল না সেটা খালার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছিল। খালা অপ্রস্তুত গলায় বলল-

– আমি তো বিয়ে করেছিলাম অনেক আগে। বিয়ের এক বছর পরেই তোমার খালু মারা যায়। বাচ্চা কাচ্চা হয় নি। তারপর থেকে নিলয়ের কাছে থাকি। নিলয়েরও কেউ নেই। নিলয়ের বাবা মা নিলয়রে জন্মের পরেই মারা যায়। তাই আমি নিলয়ের কাছেই থেকে যাই। তবে পুরোপুরি মানুষ করতে পারি নি ছেলেটাকে।

এ বলে খালা হুহু করে কাঁদতে লাগল। আমি খালাকে মিথ্যা শাত্ত্বনা দেওয়ার ভান করে বললাম-

– খালা কাঁদবেন না। আমরা আছি তো।
সারাদিন কোনরকমে কাটল রাতে খালা দুধ নিয়ে আসলো। আমি দুধটা খেলাম। খেয়াল করলাম দুধটা খাওয়ার পর খুব ঘুম আসতেছিল।আমার মাথায় প্রশ্ন জাগল গতকাল আমি দুধ খাইনি তাই আমার তেমন ঘুম হয়নি। আর আজকে দুধ খাওয়ার পর থেকেই ঘুম ঘুম লাগছে। তাহলে কি খালা দুধে কিছু মিশিয়ে দেয় যাতে করে আমি তার কুকর্ম ধরতে না পাড়ি। এসব ভেবতে ভাবতেই আমি ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে খালার ডাকে ঘুম ভাঙ্গল। খালা বলতে লাগল-

– কী গো মা আর কত ঘুমাবে উঠো?

এ মহিলাকে ঘুম থেকে উঠে দেখতে খুব বিরক্ত লাগছিল। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম-

-হ্যাঁ খালা উঠতেছি।

আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে গেলাম। খেয়াল করলাম খালা খাবার নিয়ে বসে আছে।প্রতিদিনের মতো সেদিন ও আমাকে জিজ্ঞেস করল-

– রাতে ঘুম ভালো হয়েছে তো?

সেদিনও সারাটাদিন আমার অসহ্য ছটফটানিতে কাটল।রাতের বেলা আমার নজর ছিল খালার উপর। আমি জানতাম খালা দুধ নিয়ে আসবে। আমার ধারণা খালা দুধে কিছু মিশায়। তাই আমি খালাকে একটু নজরে রাখলাম। রাত ঠিক দশটা বাজে খালা গেল আমার জন্য দুধ বানাতে আমিও চুপি চুপি রান্না ঘরের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম খালা প্যাকেট থেকে তিনটা ট্যাবলেট দুধে মিশিয়ে নাড়তে থাকল। আমার বুঝতে বাকি রইল না খালা দুধে ঘুমের ঔষধ মিশাচ্ছিল। খালা বুঝে উঠার আগেই আমি সে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলাম।খালা প্রতিদিনের মত আমার রুমে এসে দুধ খেতে বলল।আমি খালাকে বললাম-

– খালা রেখে যান আমি একটু পর খাব আমার এখন গা গুলাচ্ছে।

– আমি রেখে যাচ্ছি খেয়ে নিও।আমি এসে কিন্তু দেখে যাব। নিলয় ও ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করবে খেয়েছ কী না।

– আরে খালা চিন্তা করবেন না। আমি কতক্ষণ পর খেয়ে নিব।

খালা আমার কথা শুনে রুম থেকে চলে গেল।আমি সুযোগ মত দুধটা বাথরুমে ফেলে দিলাম। খালা কিছুক্ষণ পর এসে বলল-

– কি গো মা দুধটা খেয়েছ।

আমি ঘুমঘুম চোখের ভাব নিয়ে খালাকে খালি গ্লাস দেখিয়ে বললাম-

– এই যে খালা খেয়ে নিয়েছি। আমার এখন ঘুম পাচ্ছে।

খালা হাসতে হাসতে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল-

– তুমি ঘুমাও মা।

বলেই খালা খালি গ্লাসটা নিয়ে চলে গেল। আর আমি ঘুমের ভান ধরে শুয়ে রইলাম। আগের রাতের মতই কিছুক্ষণ পর একটা ফিসফিসের আওয়াজ পেলাম।আওয়াজটা পেয়ে আমি একদম মরার মত পড়ে রইলাম। গত রাতের মত খালা আমার রুমে আসলো।একইভাবে চেক করল আমি ঘুমিয়েছি কিনা। তারপর লাইট টা বন্ধ করে চলে গেল। আমি কিছুক্ষণ এভাবে শুয়ে রইলাম।তারপর আস্তে আস্তে খালার রুমে গেলাম।আজকে খালার রুমে লাইট জ্বলানো ছিল। আমি একটু খুশি হলাম এটা ভেবে যে আজকে ছেলেটার মুখ আমি দেখতে পারব। এ ভেবে আমি যখন উঁকি মারলাম আমি ছেলেটাকে দেখে চমকে গেলাম। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। এভাবে আমি কিছু দেখব তা কল্পনাও করতে পারে নি। কারণ ছেলেটা আমার স্বামী নিলয় ছিল। নিজেকে সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। তবুও নিজেকে সামলে নিজের রুমে চলে আসলাম।আর ভিতরটা তখন পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছিল। নিলয় তার খালার সাথে এমন করছে। আর খালাও কেমন নিজের বোনের ছেলের সাথে ছিঃ। মহিলার মিষ্টি মুখের আড়ালে এত ঘৃনিত একটা রুপ আছে ভেবেই যেন গা গুলিয়ে যাচ্ছিল। ঘৃনায় মনটা বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছিল।আদৌ কি নিলয়ের খালা ঐ মহিলা নাকি অন্য কিছু।আমার সন্দেহের মাত্রাটা বেড়ে গেল। তবে এখন না জেনে চিল্লাচিল্লি করা ঠিক হবে না,কারণ এর আগে এসব করে অনেক আঘাত পেয়েছি। ইশ! কতটা কষ্ট যে হয়েছিল সেদিনের কথা মনে হলে এখনো বুকটা ফেটে যায়। সারারাত কি যে ছটফটানিতে কেটেছে আমি বলে বুঝাতে পারব না। এক বিন্দু ঘুমও চোখে আসে নি। সকালে খালা এসে আমাকে ডাক দিল কী গো মা বলে।খালার মুখটা দেখে এত ঘৃনা হচ্ছিল যে বলে বুঝাতে পারব না। তবুও নিজেকে সামলে নিলাম।শুরু হল আমার নতুন যন্ত্রণা। প্রতিদিন খালা দুধ দিয়ে যেত আর আমি দুধ না খেয়ে ফেলে দিতাম আর নিলয়কে খালার সাথে নোংরা ভাবে আবিষ্কার করতাম। কেটে গেল পনেরদিন। আমার সহ্যের সীমা চলে গিয়েছিল। আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। তাই একদিন নিলয় আর খালাকে হাতেনাতে রুমের মধ্যে ধরে ফেলি।তারা আমাকে এভাবে দেখে বেশ চমকে গেল।তারা তো ভেবেছিল আমি ঘুমিয়ে গিয়েছি।কিন্তু তারা তো এটা জানত না যে আমি দুধটা না খেয়ে ফেলে দিতাম। তারপর…

চলবে?