হঠাৎ প্রণয় পর্ব-০৫

0
203

#হঠাৎ_প্রণয়
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

পঞ্চম পর্ব

পার্লারে সবার আগে আমার সাজটাই শেষ হয়েছে। অথৈ আপুকে এখনো শাড়িই পড়ানো হচ্ছে। একের পর এক কুঁচি আর এদিকে ওদিকে দেয়া ভাঁজগুলো দেখলে যেকোনো কেউ বিয়েতে শাড়ি পড়ার প্ল্যান বাদ দিয়ে স°ন্ন্যা°সী হবে।

আমি পার্লার থেকে বেরিয়ে এসে দেখি অয়ন ড্রাইভারের সাথে আড্ডায় ব্যস্ত। এতোক্ষণ ভালো করে খেয়াল না করলেও এখন দুচোখ ভরে অয়নকে দেখছি। বাঙ্গি রঙের পাঞ্জাবি সাথে নীল রঙের জিন্স পড়েছেন। পাঞ্জাবি হাতা ফোল্ড করে বুকের কাছের বোতামগুলো খুলতে খুলতে আমার দিকে তাকান উনি।

অয়ন আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,
“পুরাই সাদা পে°ত্নী লাগছে। এমন সাদা গাউন কেউ পড়ে?”

কপাল কুঁচকে বললাম,
“তো কি পড়বো?”

উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন,
“বেনারসি পড়বি, লাল বেনারসি। আমি দুচোখ ভরে দেখবো, যেমনটা একটু আগে তুই দেখছিলি।”

আমি হকচকিয়ে উঠলাম। হায় হায়, উনি তবে আমার দৃষ্টিও খেয়াল করেছেন। অয়ন অন্যদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন। দ্রুত পায়ে গাড়ির দিকে আসতে নিলে অয়ন হাত টেনে বললেন,
“চল, ঘুরে আসি।”

অবাক চোখে উনার দিকে তাকাতেই বললেন,
“চোখ পাকিয়ে লাভ নাই। যে বাহিনী ভিতরে গেছে কমপক্ষে ২ ঘন্টার টান লাগবে। এটলিস্ট ১ ঘন্টা তো লাগবেই। বর এসে আবার ফেরত না চলে যায়।”

আমি অট্টহাসিতে ফেটে পড়তেই বলেন,
“তোকে তো পারফেক্ট পে°ত্নী এওয়ার্ড দেওয়া উচিত। এমনে কেউ হাসে? কানের চৌদ্দটা বাজাই দিলি।”

আমি একটু উঁচু হয়ে উনার কান টেনে মুখের কাছে এনে জোরে বললাম,
“এমনভাবে হাসবো যা জীবনেও ভুলবেন না।”

কান চুলকাতে চুলকাতে হাঁটছেন উনি। আমি তাড়াতাড়ি হেঁটে উনার সমান হয়ে উনার একহাত ধরে বললাম,
“ধরে রাখুন, না হলে পড়ে যাবো।”

চোখ সরু করে আমার দিকে তাকালে আমি দাঁত কেলিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই সামনে থেকে আসা এক ছেলে বলল,
“আরে অয়ন যে, কি খবর? আজ অথৈয়ের বিয়ে আর তুই এখানে কি করছিস?”

আমি উনার হাত ছেড়ে দিলাম। অয়ন হাসিমুখে সেই ছেলের সাথে কোলাকুলি করে কুশল বিনিময় করলো। কথায় কথায় বুঝলাম ছেলেটির নাম সোহাগ, অয়নের বন্ধু।

সোহাগ আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই কবে বিয়ে করলি, মামা? খবর নাই, দাওয়াত নাই। সোজা বউ নিয়ে ঘুরছিস।”
“আরে ও আমার বউ না।”
ফিসফিস করে বলল অয়ন।

সোহাগ অয়নের কাছে এসে বলল,
“চলছে নাকি মামা? আন্টিকে বলতে হবে নাকি সোজা আংকেলকে?”

অয়ন আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে সোহাগকে নিচুস্বরে বললেন,
“আমার আন্টির মেয়ে।”

সোহাগের চোখমুখে ফূর্তি দেখলাম,
“মামা, আন্টির মেয়েগুলাই কিন্তু মনে বেশি যেতে চায়। সাবধান থাকিস মামা।”

অয়ন মাথা চুলকে বলেন,
“ফুট এখান থেকে, আর একটা উলটাপালটা কথাও না। আর তুই বিয়েতে যাবি না?”
“আরে বস, না গেলে তোমার উড়ুক্কু মনে খবর বাকিরা পাবে কেমনে। গেলাম মামা।”

আমার সামনে এসে বলল,
“আসছি ভাবী, আমার ভাইটাকে দেখে রাখবেন। একটু রাগি হতে পারে কিন্তু অনেক রোমান্টিক। আপনাকে অনেক…”

আর কিছু বলার আগেই তার মুখ চেপে সরিয়ে দেয় অয়ন। সোহাগ হাসতে হাসতে চলে গেল। যাওয়ার আগে অবশ্য অয়নকে আরো কিছু বলেছে যা আমি শুনিনি।

অয়ন আমার কাছে এসে বলেন,
“চল।”

হাত ধরতেই ছাড়িয়ে নিলাম। উনি কাছে এসে আমার নিচু হওয়া মুখটা তুলে বললেন,
“সোহাগের কথায় কিছু মনে করিস না। ও একটু এমনই।”
“তাই বলে অচেনা একটা মেয়েকে এইভাবে বলবে? এসব কি ঠিক অয়ন, আমার কেমন লাগলো?”

আমার কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বললেন,
“কিন্তু অয়ন? মানে ভাইটুকু বাদ? গুড, আই লাইক ইট।” (ফিসফিসিয়ে বললেন)

একটু সরে দাঁড়িয়ে বললাম,
“কি?”

অয়নও সরে গেলেন। মুচকি হেসে বললেন,
“সামনে যাই?”

কিছু না বলে চুপচাপ উনার পাশে পাশে হাঁটছি। উনি একটু কথা বলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন।

“এমন করছিস কেন? আমার ফ্রেন্ড একটু মজা করেছে, তাই বলে এমন গাল ফুলিয়ে রাখবি?”
“মজা আমিও করতে জানি।”
“তুই তো শুধু গাল ফুলিয়ে ন্যাকামি করতে জানিস, ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে জানিস।”

কপাল কুঁচকে তাকাতেই উনি আমার নাক টেনে বললেন,
“একটু পর যখন সোহাগের সাথে দেখা হবে তখন ইচ্ছামত মজা করিস। প্রয়োজনে ওটাকে ধরে কি°ল দিস, আমার কোনো অসুবিধা নেই।”
“ঠিক তো?”
“পাক্কা।”

বেচারা অয়ন যে নিজের কথায় নিজেই ফাঁ°স°তে যাচ্ছে তা এখনো টের পেয়ে উঠতে পারেনি। যখন টের পাবে তখন অনেকটা দেরি হয়ে যাবে।

ঘন্টাখানেক পর কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলাম সবাই। অয়ন চুপচাপই আছেন, কয়েকবার আমার দিকে তাকালেও আমি উনাকে না দেখার ভান করে আছি।

গেইটের কাছে বড় বড় করে লেখা “Manaf & Authoi Wedding”, নামদুটো দেখে মুচকি হেসে ভিতরে চলে গেলাম। অথৈ আপুকে দেখতে কোনো এক বারবি ডলের মতোই লাগছে।

স্টেজে আপুকে বসিয়ে নানা ভংচং করে ছবি তুলছে সবাই, সাথে তার ফ্রেন্ডরাও পোজ দিতে ব্যস্ত। আমি চেয়ার টেনে বসলাম। চোখদুটো আম্মুকে খুঁজছে, কোথায় গল্পে মজেছে কে জানে।

পাশের চেয়ার টেনে অয়ন বসলেন। আমি উনার দিকে রাগী চোখে তাকালে উনি হেসে বলেন,
“অ°গ্নি°দৃ°ষ্টিতে ভ°ষ্ম হয়ে যাবো।”

মুখ ভেঙচিয়ে বললাম,
“তবে এখানে না বসে অন্য কু°য়ায় পড়ে যান।”

অয়ন ভাই আশেপাশে কিছু খুঁজে বললেন,
“এখানে কু°য়াটা কোথায় পাবো?”

আমার কোনো জবাব না পেয়ে বলেন,
“তখন কি বলছিলি?”
“কিছুনা।”
“আবার রাগ করলি কেন?”

প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
“আজকের পর কি আমাদের আর দেখা হবে না? ৫ বছর আগে একবার আমাদের দেখা হয়েছিল, যদিও তখন এতো ভাব হয়নি। তারপর ৫ বছর ঘুণাক্ষরেও আমাদের দেখা বা কথা হয়নি। আজকের পরও কি আর হবে না?”

অয়ন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,
“না হওয়াটাই হয়তো ভালো, হলেই বি°পদ।”

চশমাটা ঠেলে বললাম,
“কেন? দেখা হলে কি হবে?”
“হয়তো অনেককিছু।”

এমন হেলাফেলা উত্তরে বিরক্ত হলাম। কিছু বলতে যাওয়ার আগেই আম্মু আসলো।

আম্মুকে দেখে অয়ন বললেন,
“আন্টি, আপনার মেয়ে তো এখন পুরো ফিট। বউভাতের অনুষ্ঠান শেষ করেই না হয় যান।”

আম্মু হেসে উনার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“না অয়ন, বাসায় ওর আপু একা আর এমনিতেও কয়েকদিন থেকে ফেলেছি। তুমি ঢাকায় গেলে বরং আমাদের বাসায় যেও। ঠিকানা দিয়ে যাবো।”

অয়ন হাসলেন। ইত্তাজার ডাক শুনে একবার সেদিকে তাকিয়ে তারপর আম্মুকে বলেন,
“আসছি আন্টি?”
“হুম।”

উনি চলে যেতেই আম্মু আমার পাশে বসে বলল,
“চুল এমন বিনুনি পাকিয়ে রাখছো কেন? সব মেয়েরা সুন্দর হয়ে চলাফেরা করছে। তোমার এমন আউলানো অবস্থা কেন?”

আম্মুর চোখ পাকানি ভালোই বুঝলাম। একটা ঢোক গিলে বললাম,
“৫ মিনিটে আসছি।”

তাড়াহুড়ো করে এসে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। পেছন ফিরে তাকালাম না, আম্মুর ওই রাগী চোখজোড়া দেখার সাহস দ্বিতীয়বার হয়নি।

অসুস্থতার জন্য আজকের সাজটা বেশি কিছু দেইনি। মায়েরা বেশি সাজলেও ব°কে আর না সাজলেও ব°কে।

চুল ছেড়ে দিয়ে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগালাম। মেকাপটা একটু ঠিকঠাক করে বেশ ভাব নিয়ে বের হয়ে এসে আম্মুকে বললাম,
“নাও পারফেক্ট?”

আম্মু গম্ভীরসুরে বলল,
“হুম।”

আমি স্টেজের দিকে গেলাম। ছবি তোলার প্রতিযোগিতা এখনো থামেনি। আমাকে হাত টেনে স্টেজে উঠালো সুমি আপু। সব মিলে দল বেঁধে ছবি তুলল, আমার সাথে অথৈ আপুর ছবি তুলল, দুজন-তিনজন-চারজন করে ছবি তুলল। কিন্তু কেউই আমার সিংগেল ছবি তুলে দিলো না।

ছবি তোলার পর্ব শেষে ইত্তাজার হাতে মাইক্রোফোন ধরিয়ে দিলো সবাই, আবার গান শুরু হবে বলেই বুঝলাম। আমি এখনো অথৈ আপুর পাশেই বসে আছি। বাকিরা সবাই স্টেজের একপাশে গানবাজনার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

অথৈ আপু মাথা একটু নিচু রেখেই বলে,
“কিরে তন্নু, আমার ভাই দেখি তোর থেকে চোখই সরাচ্ছে না। তা°বি°জ-টা°বি°জ করলি নাকি?”

আমি চমকে উঠে চোখ বড়বড় করে আশেপাশে তাকালাম। স্টেজ থেকে একটু দূরে অয়ন দাঁড়িয়ে আছেন, তার দৃষ্টি আমাদের দিকেই। আমি দাঁত কেলিয়ে নিচুস্বরে বললাম,
“উনি তোমাকে দেখছে। বোনকে তো আর রোজ রোজ দেখতে পারবে না।”

অথৈ আপু মুচকি হেসে বলল,
“ও ঢাকায় থাকে আর আমি বাসায়। তাই আমাদের রোজ রোজ এমনিতেও দেখা হয় না। ঢাকায় যখন বিয়ে হচ্ছে তাতে তো আরো বেশি দেখা হওয়ার কথা।”
“তোমাকে সুন্দর লাগছে তাই দেখছে।”
“শিউর?”
“হ্যাঁ।”

আমার দিকে তাকিয়ে আপু বলল,
“ভাইয়াকে ডাক দে, দেখি ও বলুক ও কি দেখছে।”
“ওকে।”

হাত দিয়ে এদিকে আসতে ইশারা করলেও অয়নের তেমন হেলদুল দেখলাম না। উনাকে অন্যমনস্ক লাগছে। আপু বলে,
“ভাইয়া কি অন্যমনস্ক হয়ে আমাকে দেখছে?”

ভেংচি কেটে বললাম,
“উনি আকাশ-বাতাস দেখছে। কিন্তু আমাকে দেখছে না। আর না হলে উনি চোখ খুলে ঘুমাচ্ছে মাছের মতো, তাও আমাকে দেখছে না।”

আপুকে মুখ টিপে হাসতেই দেখছি। ইত্তাজার গানের সুর শুনে সেদিকে তাকালাম। আমাদের দিকে তাকিয়েই গান গাইছিল। আমরা তাকাতেই সামনের দিকে চোখ ফিরিয়ে নিলো।

“একটা ছিল সোনার কন্যা
মেঘ বরণ কেশ,
ভাটি অঞ্চলে ছিল সেই কন্যার দেশ
দুই চোখে তার আহারে কি মায়া
নদীর জলে পড়ল কন্যার ছায়া
তাহার কথা বলি
তাহার কথা বলতে বলতে নাও গড়াইয়া চলি।”

গান শেষে সবার সাথে আমিও হাততালি দিলাম। ইত্তাজা যে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো তা আমার চোখ এড়ায়নি।

স্টেজ থেকে নেমে অয়নের কাছে যাবো তার আগেই আমার হাতে পড়লো এক থা°বা। না, না, বাঘ-সিংহের থা°বা না, এটা বিড়ালের থা°বা। মানে সুমি আপুর হাত টেনে ধরলো।

“একটা গান?”
“নো।”

সোজা উত্তর দিকে চলে যেতে চাইলেও যেতে পারলাম না। বর না আসা পর্যন্ত ওরা যাতে বোর না হয় তাই গান গাইতে হবে। এই বরের এতো লেইট হচ্ছে কেন? সেও কি বেনারসি পড়ছে নাকি?

বাধ্য হয়েই মাইক্রোফোন হাতে নিলাম। সুমি আপুকে কানে কানে বললাম,
“একটার বেশি না কিন্তু?”
“ওকে।”

কয়েক সেকেন্ড ভেবে গান শুরু করলাম,
“চুপি চুপি কিছু কথা
বলে যদি ভালবাসা
স্বপ্ন আসে,
দুটি চোখে দুটি তারা
মিটি মিটি জ্বলে যদি
চাঁদ যে হাসে।
এই চোখের দুটি তারায়,
শুধু তুমি যে তুমি
প্রেমী,প্রেমী,প্রেমী,প্রেমী।”

গান শেষ হতে না হতেই দ্রুত স্টেজ ছেড়ে গেলাম।

অয়নের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই কোথা থেকে যেন একদল ছ°ন্নছাড়া বাদর এসে জুটলো। ওহ সরি, এরা অয়নের বন্ধুর দল। চারজন অয়নকে ধরে বলল,
“মামা, কে°চ্চা কতদূর?”

অয়ন চোখ পাকিয়ে ওদের যেতে ইশারা করলেও ওরা যায় না বরং একজন আমাকে বলে,
“ভাবী, অয়ন খুব ভালোবাসে নাকি?”

আমি ভ্রূ নাচিয়ে বললাম,
“ভাবী কেন?”
“ওমা, আমাদের অয়ন না আপনার জা…ন?”
(বেশ সুর করে কথাটা বলল)

অয়ন ধমক দিয়ে বললেন,
“থামবি তোরা? (আমাকে বললেন) তন্বী, অন্যদিকে যা।”

আমি গেলাম না। কপালের চুলগুলো সরিয়ে বললাম,
“অয়ন না আপনাদের মামা? সে হিসেবে আমি আপনাদের মামী। এহেম, হবু মামী।”

বাঁদরগুলোর চোখে খুশির ঝিলিক দেখলাম। অয়ন কপাল কুঁচকে চোখ সরু করে তাকিয়ে আছেন। ওড়নার কোণা আঙ্গুলে পেঁচাতে পেঁচাতে বললাম,
“এখন থেকে সম্মান দিয়ে কথা বলবেন।”

চলে আসার সময় পেছন ফিরে বলি,
“বাই দা ওয়ে, অয়ন কিন্তু খুব ভালোবাসে।”

অয়ন চোখ বড় বড় করে ফেলেছে। আমি হেসে হেসে চলে আসলাম। বন্ধুদের সাথে যে অয়নের কথা কা°টা°কা°টি শুরু হয়েছে তা ভালোই বুঝলাম। যাক গে, তাতে আমার কি?

শান্তভাবে হেঁটে এসে স্টেজের কাছাকাছিই একট চেয়ারে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর অয়ন এসে পাশের চেয়ারে বসে বললেন,
“তা আমার হবু বউ, বিয়ে কবে করছি আমরা?”

আমি ভ্রূ উঁচিয়ে তাকাতেই উনি একটা হাসি দিয়ে বলেন,
“না মানে পরিবার পরিকল্পনাও তো করার ব্যাপারস্যাপার আছে।”

আমি অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম,
“প্লিজ অয়ন ভাই, আমি শুধুই মজা করেছি।”
“অয়ন যখন একবার বলেছিস তখন অয়নই বল না।”

আনোয়ার আংকেলের ডাকে আর কিছু না বলেই উঠে চলে যান উনি। আমি একটু থ মেরে বসে আছি। উনি যে আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছেন তা ভালোই বুঝতে পারছি। কিন্তু এর পরিনতি কি হবে? আদৌ কি পরিনতি হবে নাকি গোধূলির আলোর মতো হারিয়ে যাবে আকাশের অসীমতায়।

বর আসলে গেট আটকে বিশ হাজার টাকা দাবি করলো সবাই। সেখানে কথা কা°টা°কা°টি নয়, একপ্রকার ঝগড়া চলছে। আমারও যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু যাইনি। অয়নকে খুঁজতে খুঁজতে ডাইনিং এ চলে এলাম।

রান্নার লোকদের সাথে কথা বলছেন অয়ন, মনে হলো বেশ রেগে আছেন উনি। কিছু ঘটেছে কিনা জানতে উনার কাছে গেলাম। যতদূর বুঝলাম এটা রাগ না, এটা কাজে তাড়া দেয়ার একটা উপায়মাত্র।

“কিরে তনুশ্রী, খানার গন্ধে এখানেও চলে এলি?”

উনার কথায় বিরক্ত হয়ে চোখ কুঁচকে বললাম,
“মোটেও খানার গন্ধে আসিনি। আপনি রেগে আছেন কেন সেটাই জানতে এলাম।”

অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে আমার হাত ধরে বাইরে নিয়ে এলেন। তারপর বললেন,
“রেগে নেই। তো আপনি এখানে কি করছেন আমার প্রেয়সী?”

তা°চ্ছিল্য করে কথাটা বললেও প্রেয়সী ডাকটা উনার মুখে বেশ লাগলো।

“তো বরের গেট আটকে দাঁড়িয়ে থাকবি না?”

আমি হেসে বললাম,
“না, আমি ভিড় পছন্দ করি না তা তো জানেনই।”

অয়ন মাথা নেড়ে বললেন,
“আচ্ছা, তাহলে থাক। আমার কাজ আছে।”

অয়ন চলে যেতে নিলে তার হাত টেনে ধরলাম। অয়ন আমার দিকে তাকালে আমি একটু ইতস্ততভাবে বললাম,
“একটু কথা ছিল।”
“আমি এখন ব্যস্ত তনুশ্রী। পরে কথা বলবো।”

অয়ন চলে গেল। কিছু তো হয়েছে, অয়নের না আমার হয়েছে। আজ চলে যাবো, এটা ভাবলেই কষ্ট হচ্ছে। খুব কষ্ট পাচ্ছি আমি, বোঝানোর মতো নয় আমার অবস্থা।

খুব নিরিবিলিতেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে গেল। বিদায়টাও আর দশটা বাঙালি বিয়ের মতোই হলো।

আমরাও কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে যাবো, শুধু আমরা না অনেক আত্মীয়ই আজ চলে যাবে। অয়ন সকলের সাথে কথাবার্তা বলছে, তাদের বিদায় জানাচ্ছে। বুঝলাম, খুব একটা গুরুত্ব আমার দিকে নেই।

সিএনজি ডেকে আনা হলো। আম্মু অয়নকে বিদায় দিয়ে এসে সিএনজিতে উঠে বসলো। আমি কথা বলতে চাইলেও অয়ন তেমন একটা কথা বলেনি। হঠাৎ এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে কেন আমাকে?

আসার পথে কথায় কথায় বুঝলাম অয়নের কাছে আমাদের বাসার ঠিকানা দিয়ে এসেছে আমার আম্মাজান। অয়ন কি আসবে বাসায় নাকি বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও তার দেখা পাবো না?

চলবে………….