হঠাৎ বর্ষনের রাতে পর্ব-০৪

0
516

#হঠাৎ_বর্ষনের_রাতে💖
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💖
— পর্বঃ০৪

“একটা রাগী লুক নিয়ে হন হন করে বাড়ির ভিতর ঢুকলো ইরা!’হুট করে মেয়ের এমন লুকিং থেকে বলে উঠল ইরার আম্মুঃ

—“কি হয়েছে?’

“মায়ের কথা শুনে ইরা কিছুটা রাগান্বিত কন্ঠে সোফায় বসতে বসতে বললোঃ

—“দরজা খুলতে এত দেরি কেন হলো সেই কখন থেকে কলিং বেল বাজিয়ে চলেছি…?’

“মেয়ের কথা শুনে ইরার মা শান্ত কন্ঠে ইরার কাছে দাঁড়িয়ে বললোঃ

—“ওই রান্না ঘরে একটু ব্যস্ত ছিলাম…

—“সারাদিন শুধু রান্না ঘরেই থাকো..(রেগে)

—“আরে সামান্য বিষয় নিয়ে রেগে যাচ্ছিস কেন,কিছু কি হয়েছে অফিসে.?’

—“এক গ্লাস পানি দেও তো মা…?’

“উওরে ইরার মা কিছু না বলে সামনেই টেবিলের ওপর থেকে জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে ইরার হাতে দিয়ে বললোঃ

—“এই নে…

“ইরা তার মায়ের হাত থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পুরো পানিটা শেষ করলো!’পানিটা শেষ করতেই ইরার মা আবার মেয়ের হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে টেবিলের উপর রাখলো!’তারপর ইরার পাশে বসে নীরব কন্ঠে বললোঃ

—“এবার বল কি হয়েছে রেগে আছিস কেন?’

—“আর বলো না মা, আজ অফিসে নতুন বস আইমিন আফজাল স্যারের ছেলে বস হিসেবে অফিস জয়েন করেছেন..

—“তো তাতে কি হইছে?’

—“কি হইছে, আর বলো না হয়েছে তো অনেক কিছু মা প্রথমত উনি খুব রাগি দ্বিতীয়ত এতএত রুলস দিয়েছে এখন থেকে অফিস যেতে হলে ওনার সব রুলস মানতে হবে আর তার মধ্যে এক নাম্বার রুলস হলো সকাল নটার মধ্যে অফিস যেতে হবে একমিনিট লেট হলে পানিশমেন্ট দিবে সাথে সময়ের কাজ কাজ সময়ে করতে হবে একমিনিট এদিক সেদিক করা যাবে না…

“মেয়ের কথা শুনে হেঁসে উঠল ইরার মা!’হুট করে মায়ের হাসি দেখে বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠল ইরাঃ

—“তুমি হাসছো আর আমার টেনশন হচ্ছে..

—“এই তো তোকে ঠিক করার জন্য কেউ একজন এসেছে তবে..

—“কিসব বলছো মা আমি আবার বেঠিক কবে ছিলাম..

—“না তুই তো ঠিকের গুরু রোজ দেরি করে অফিস যাস, একদম ঠিক হয়েছে কাল থেকে তাড়াতাড়ি অফিস যাবি…

—“মা তুমি অর্নব স্যারের দলে চলে গেলে..

—“দলে কোথায় গেলাম জাস্ট বললাম…

—😒

“মেয়ের রিয়েকশন দেখে ইরার মা কিছু না বলে হাসতে হাসতে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেল!’আর ইরা রাগে ফুসফুস করতে করতে এগিয়ে গেল নিজের রুমের দিকে!’

“লম্বা সাওয়ার নিতে হবে তাকে!’

____

“নিজের রুমে সাওয়ার নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অর্নব!’পরনে তার ব্লাক পাজামা সাথে ফুল হাতার আকাশী কালার টিশার্ট!’চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে তাঁর,অর্নব হাতে টাওয়াল নিয়ে চুলগুলো মুছতে লাগলো!’হঠাৎই বেলকনির দরজার দিকে চোখ যায় তার,দরজার কাছ দিয়েই একটা লাল রঙের ওড়না পড়ে আছে নিচে!’অর্নব কিছু একটা ভেবে সেদিকেই এগিয়ে গেল!’তারপর নিচে পড়ে থাকা ওড়নাটা উঠিয়ে দেখতে লাগলো সে!’পরক্ষণেই মনে পড়লো তার কাল রাতের কথা কারন ওড়নাটা আর কারো নয় ইরার!’কাল ভুল করে ওড়না ফেলে গিয়েছিল সে!’সকালেই ঘুম থেকে উঠে দেখে অর্নব, ওড়নাটা ভিজে থাকায় কিছু না ভেবেই বেলকনিতেই রাখে অর্নব হয়তো বাতাসে উড়ে নিচে পড়ে গিয়েছিল!’অর্নব কিছুক্ষন ওড়নাটার দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভেবে তার ড্রয়ারের ভিতর ঢুকিয়ে রাখলো!’এমন সময় তার রুমে ঢুকলো তার ছোট বোন ইশা!’ভাইকে ড্রয়ারের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল সেঃ

—“ওখানে কি করছো ভাইয়া?’

“আচমকা কারো ভয়েস শুনতেই হাল্কা চমকে উঠলো অর্নব তাড়াতাড়ি ড্রয়ারটা বন্ধ করে বললো সেঃ

—“কই কিছু না তো তুই আমার রুমে?’

—“আসলে ভাইয়া তোমাকে নিচে সবাই খেতে ডাকছে…

—“ওহ, আচ্ছা তুই যা আমি আসছি…

—“ঠিক আছে ভাইয়া…

“বলেই চলে যায় ইশা!’ইশা যেতেই তাড়াতাড়ি ড্রয়ারের কাছ থেকে সরে আসে অর্নব,,তারপর একবার আয়নার দিকে তাকিয়ে হাতের টাওয়াল টাকে বিছানার ওপর রেখে চলে যায় সে নিচে….

___

“রাত_১১ঃ০০টা….

“মেবাইলে সাথে এলাম ঘড়িতে সকালে তাড়াতাড়ি ওঠার জন্য টাইম সেট করছে ইরা!’কালকে যে করেই হোক তাকে তাড়াতাড়ি অফিস পৌঁছাতেই হবে না হলে রুলসের প্রথমদিনই তাকে পানিশমেন্ট পেতে হবে,যেটা মটেও চায় না ইরা!’এমন সময় ইরার ছোট ভাই দশ বছর বয়সের রায়হান বললোঃ

—“কি করছো আপি…?’

“ইরা রায়হানের দিকে তাকিয়ে বললোঃ

—“তুই এখনো ঘুমাস নি ভাই…

—“আজকে আমি তোমার সাথে ঘুমাবো আপি…

—“আচ্ছা ঠিক আছে,,

“ইরার কথা শুনতেই খুশি হয়ে দৌড়ে চলে যায় রায়হান ইরার কাছে!’তারপর ইরা রায়হান একসাথে শুয়ে পড়লো বিছানায়!’বিছানায় শুতেই রায়হান বললোঃ

—“আপি গল্প শুনাও না কতদিন হলো তোমার গল্প শুনি না…?’

“রায়হানের কথা শুনে কিছুটা বিস্মিত কন্ঠে বললো ইরাঃ

—“ভাই আজকে ঘুমিয়ে পড়ে কালকে গল্প শুনাবো..

—“না আপু আজকেই গল্প শুনবো,তুমি রোজ এক কথা বলো…

—“এখন তোকে গল্প শুনাতে গেলে কাল অফিস যেতে নির্ঘাত দেরি হবে!'(মনে মনে)

—“কি হলো আপু শুনাবে না…

“শেষমেশ ভাইয়ের জোরাজোরি রাজি হয় ইরা গল্প শোনানোর জন্য!’

“প্রায় আধ ঘন্টা পর ইরা রায়হানকে গল্প শুনিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো!’

____

“পরের দিন সকাল ছয়টায় তুমুল বেগে টেবিলের উপর এলাম বাজছে ঘড়িতে!’এলামের শব্দে ইরা লাফ মেরে উঠে বসলো তারপর আশেপাশে কিছুক্ষন তাকিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো ইরা!’এরই মাঝে আবারো এলাম বাজতে শুরু করলো,এবার এলামের শব্দ এতটাই জোরে ইরার কানে বাজছে যে ইরা বিরক্ত হয়ে চোখ বন্ধ করেই এলাম ঘড়িটা ধরে ছুড়ে মারলো নিচে!’সাথে সাথে এলাম অফ…

“এলাম অফ হতেই আবার কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ইরা!’কিছুক্ষন পর আবার তার ফোনটা বেজে উঠল বালিশের কাছ থেকে!’কিন্তু এবার আর ছুঁড়ে মারলো না এলাম অফ করে আবার ঘুমিয়ে পড়লো ইরা!’

.
.

“হঠাৎই অর্নবের বলা ”সকাল নয়টার মধ্যে অফিসে আসতে হবে না হলে পানিশমেন্ট পেতে হবে”–৷ কথাটা মাথায় আসতেই লাফ মেরে উঠলো ইরা!’সামনেই মোবাইলে ৮টা বেজে ৫ মিনিট দেখতেই চেঁচিয়ে উঠলো ইরা তারপর কিছু না ভেবেই তুমুল বেগে ছুটে চললো সে ওয়াশরুমের দিকে!’দশ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে এসে কোনোরকম তৈরি হয়ে রুম থেকে জড়ের গতিতে বেরিয়ে যায় সে!’তারপর মাকে একবার বলেঃ

—“মা এতটা লেট হয়ে গেছে আমায় ডাকবে না…

“এতটুকু বলেই মাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঝড়ের গতিতে বাসা থেকে বের হলো ইরা!’বাহিরে বের হতেও শান্তি মিললো না তার কোথাও রিকশা নেই,,

—“এই একটা রোগ এমনিতে সবসময় রিকশা পাওয়া যায়, কিন্তু যখন লাগে তখন একটাকেও পাওয়া যায় না সবগুলোয় মনে হয়ে বউয়ের সাথে বাসায় বসে ঝগড়া করছে…

“এইরকম আরো কথা বলে বকবক করছে ইরা!’

“এমন সময় ইরার পাশ দিয়ে একটা রিকশা যাচ্ছিল,রিকশা দেখে খুশি হলেও পরক্ষণেই রিকশাওয়ালার মুখ দেখে হাসি গায়েব ইরার
কারন রিকশাওয়ালা যেভাবে রিকশায় বসে ঝিমাচ্ছে মনে হয় রাতে ঘুমায় নি!’অন্যসময় হলে এই লোককে ডাকতো না ইরা কিন্তু এখন তার খুব প্রয়োজন ইরা বেশি কিছু না ভেবে বললো রিকশাওয়ালাকেঃ

—“যাবেন….

—“হুম যামু…

“ইরা বেশি কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি রিকশাওয়ালাকে ঠিকানাটা বলে রিকশায় বসে পড়লো!’কিছুদূর এগোতেই বিরক্ত লাগছে ইরার কারন ভাগ্য করে একটা রিকশাওয়ালা পেয়েছে সে,রিকশাওয়ালা এত জোরে রিকশা চালাচ্ছে যে পায়ে হেঁটে গেলেও এর থেকে আগে পৌঁছাবে ইরা!’ইরা কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললোঃ

—“ভাই আপনি কি একটু জোরে চালাতে পারেন না…

—“এর চেয়ে জোরে চালাইলে আমার বউ মারবে আফা…

“মাথার মধ্যে একটা বাজে কথা আসলো ইরার কিন্তু সেটাকে বের না করে শান্ত কন্ঠে বললো সেঃ

—“আপনার বউ জানবে কেমনে ভাই,একটু তাড়াতাড়ি চালান আমার অফিস যেতে দেরি হবে এমনিতেও দেরি হয়েছে,প্লিজ তাড়াতাড়ি চালান…

—“আচ্ছা আফা..

“এই বলে একটু জোরে চালাতে শুরু করলো রিকশাওয়ালা!’এবার বিরক্তির চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে ইরা!’কিছুটা রাগী লুক নিয়ে বললো সেঃ

—“রিকশা থামান…

—“কি হইলো আফা বেশি জোরে চালাই ফেলছি নাকি…

“এবার তো ইরার মুখ থেকে গালি বেরিয়ে আসার উপক্রম তারপরও যথাসম্ভব নিজেকে কন্ট্রোল করে গাড়ি থেকে নামলো ইরা,তারপর রিকশাওয়ালাকে কিছু টাকা দিয়ে রাগী লুক নিয়েই চলে যায় ইরা!’কিছুদূর এগিয়েই গাড়িতে ওঠে ইরা!’তখন ঘড়িতে প্রায় নয়টার কাছাকাছি বেজে গেছে!’

.

“একরাশ অস্থিরতা নিয়ে গাড়িতে বসে আছে ইরা আজ তাকে পানিশমেন্টের হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না সেটা ভালো মতো বুঝে গেছে ইরা!’কারন সামনেই লম্বা জ্যামের মধ্যে আঁটকে গেছে সে,তারওপর জেরিন কয়েকবার কল করেছে তাঁকে সব মিলিয়ে অস্থিরতা, বিরক্তিতা, সাথে চরম প্রকার দুশ্চিন্তা নিয়ে বসে আছে ইরা!’এইরকম পরিস্থিতি তার পরিক্ষার হলে ঢোকার আগেও পড়তে হয়নি কোনোদিন,এতদিন কাজে যত ফাঁকি দিয়েছে আজ যেন সবাই মিলে সেই ফাঁকির প্রতিশোধ নিতে চাইছে ইরার কাছ থেকে,এই শীতেও ঘামছে ইরা…

“অন্যদিকে,,,

“অফিসে নিজের রুমে ঢুকেই ইরাকে ডাকলো অর্নব কিন্তু ইরার খবর নেই!’এতে বেশ রেগে যায় অর্নব!’

“বেশকিছুক্ষন পর….

“ফাইল হাতে বসে আছে অর্নব!’এমন সময় তার রুমে হতভম্ব হয়ে সরি বলতে বলতে ঢুকলো ইরা!’তারপর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বললো সেঃ

—“স্যার আসবো…?

“ইরার কথা শুনে অর্নব তার মুখের সামনে থেকে ফাইল সরিয়ে রাগী কন্ঠে বললোঃ

—“কয়টা বাজে মিস ইরা….?’

“অর্নবের কথা শুনে কিছুটা অস্থিরতা নিয়ে দৌড়ে যেতে নেয় ইরা অর্নবের সামনে সাথে সাথে নিজের পায়ের সাথে বেজে ধারাম করে পড়ে যায় ইরা একদম অর্নবের ওপর…

“ঘটনাচক্রে ইরার চোখ বড় বড় হয়ে যায় কোনোদিক না তাকিয়েই শুকনো ঢোক গিললো সে সাথে অটোমেটিক মুখ থেকে বেরিয়ে আসে তারঃ

—“আজকে তুই গেছো ইরা,আজকে তোকে পানিশমেন্টের হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না…?’
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!’আর গল্প কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]

#TanjiL_Mim♥️