হবে কি আমার পর্ব-০১

0
4649

#হবে_কি_আমার💞
#সূচনা পর্ব
#writer_Ruhi_mondal

বিয়ে বাড়ির ভরা আসরে মুঠোভর্তি সিঁদুর নিয়ে, কোণের সিঁথি রাঙিয়ে দিল,বর যাত্রীর সাথে আগত এক বরযাত্রী “অরিন্দম!”এমন একটা কাজে চমকে উঠে বিস্ফোরিত ভাবে সবাই অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে আছে,,গা ভর্তি সোনা পরে মণ্ডপে বর সেজে বসে থাকা বর হা করে বুকে হাত দিয়ে বসে আছে,, মনে হচ্ছে যেন তার এক্ষুনি হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা যাবে অবশ্য মারা গেলেও কোনো ক্ষতি নেই কারণ তার মরার সময় হয়ে এসেছে,, আজ্ঞে হ্যাঁ কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও সত্যি,, কারণ বর সেজে বসে থাকা ব্যক্তিটির, আর বিয়ে করার বয়স নাই, পঁয়ষট্টি কাছাকাছি বয়সে পড়েছেন কিছুদিন পরে হয়তো পটল তুলবেন, কিন্তু এই বয়সেও তিনি বিয়ে করতে চান,, কথায় বলে না টাকা থাকলে সে সব পাবে, এখানে ঠিক তাই হতে যাচ্ছিল, “অনু” অর্থাৎ বিয়ের কনে তার বয়স সবে মাত্র 15,, মা বাবা ছোট বেলায় ইহলোক ত্যাগ করেছেন, মামা মামির কাছে অবহেলায় বড় হওয়া,, দেখতে শুনতে খুবই ভালো!যে কারোই পছন্দ হয়ে যাবে!! অনুর মামী অলকা দেবী টাকার লোভে ছোট্ট মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে দিতে চাইছিল। কিন্তু শেষরক্ষা আর করতে পারলেন না, অরিন্দম সবকিছু ওলট-পালট করে দেয়!!

_____________

___________

অরিন্দম বিয়ে বাড়িতে আসতে চাইছিল না কারণ তার এত বয়সে একটা বুড়ো লোক বিয়ে করবে শুনেই তার যেন কেমন লাগছিলো,কিন্তু তার বন্ধুর কথা রাখতেই বন্ধুর মামার বিয়েতে আসতে হয়েছে তাকে!! বিয়ে বাড়িতে এসে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য যখন সে পা বাড়াচ্ছে একটা রুমের সামনে থেকে যাওয়ার সময় সে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে থেমে যায়, তারপর একটু একটু করে দরজার কাছে গিয়ে সে যা দেখলো তাতে সে পুরো চমকে উঠেছিল,,কারণ তখন অনুর মামী অনুর চুলের মুঠি ধরে থাস থাস করে চড় মেরে বলছিল,,,

____________”বিয়ে করবি না তুই? বিয়ে করবি না? তোর ঘাড় করবে, মুখপুরি মরিস না কেন? তোর মা-বাবার সাথে তুই তো চলে যেতে পারতিস আমাদের ঘাড়ে চেপে বসে আছিস! সারা জীবন কি মামার ঘারে বসে খাবার শখ তোর?

অনু অনেক কষ্টে নিচে বসে মামীর পায়ে ধরে বলছিল,,

________”মামী তুমি আমাকে ঐ বুড়ো লোকটার সাথে বিয়ে দিও না,,দোহাই তোমার মামী! আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, প্রতিদিন যা কাজ করি তার থেকে বেশী কাজ করব সংসারে, ভোরের আলো ফোটার আগেই নিয়মিত উঠে যাব এবার থেকে,,, রান্না টাও আমি শিখে নেব,, আর তুমি চাইলে আমি দিনে একবার খেয়ে থাকবো,, তবুও তুমি আমায় ওই বুড়োটার সাথে বিয়ে দিয় না!”

অনুর মামী তখন লাথি মেরে নিজের পায়ের কাছে থেকে সরিয়ে বাইরে চলে এসে বলল,,,

__________তোর মতো মুখপুরি কে আমি এ বাড়ি থেকে বিদায় করেই শুনবো!! এ বাড়িতে আজ তোর শেষ দিন!

“আর অনু এদিকে চিৎকার করে কেঁদে যাচ্ছে আর মামীকে কাছে আর্তনাদ করেই যাচ্ছে!!”

____________

বিয়ে , সংসার, স্বামী এসব কিছুই সম্বন্ধে কোনো ধারণা নেই অনুর,, সে পাঁচ বছর বয়স থেকেই এই বাড়িতে আছে, কোনদিন বাড়ির উঠানের পাঁচিল টপকে বাইরের কারো সাথেই কথা বলে নি কোনোদিন!!! কোনো বন্ধু নেই তার,দাদু যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন একটু হলেও আদর পেত, একটু পড়াশোনা করত,, কিন্তু তিনি ও অনুকে একা ফেলে স্বর্গে পারি জমালেন,তখন অনু সাত বছর বয়স ছিল!! তারপর থেকেই আরো অত্যাচার শুরু হল,, কোন দিন একটু টিভিও দেখেনি,,, যদিও দেখত লুকিয়ে লুকিয়ে,,তার বাইরের জগত সম্পর্কে ধারণা নেই বললেই চলে,একটা পাঁচ বছরের বাচ্চাদের মন-মানসিকতা যেমন অনুর ও ঠিক তেমনি হয়ে আছে, স্বামী, সংসার ,ভালোবাসা, এই সব কিছুরই থেকে অনেক দূরে সে, নিতান্তই একটা অবুঝ মেয়ে, সবে মাত্র তিন মাস আগেই ওর প্রথম মেয়েলি সমস্যা দেখা দেয়,প্রথম দিনের পেটে যন্ত্রণা মামীর কাছে ছুটে গেলে মামীর সব বুঝে ওর অবস্থা দেখে বলতে লাগলো,,,

_________”এতদিন ঘাড়ে চেপে আছে এখন আবার একটা নতুন সমস্যা নিয়ে বসলো!”

সেদিন পেটের ব্যথায় অনু শুয়ে ছিল তার মামী গিয়ে চুলের মুঠি ধরে তাকে তুলে বলে,,,

_______ নবাবের বেটি সারাদিন শুয়ে থাকবি কোনো কাজ নেই বসে বসে গিলবি?

অনু তখন যন্ত্রণায় কাতর কন্ঠে বলেছিল ,,

_______ “মামী আমার খুব পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে আমি এখন উঠতে পারছিনা আমি পরে সব কাজ করে দেবো,কিন্তু তার মামী তার কোনো কথাই শুনেনি অনুকে যন্ত্রণা নিয়ে বাসন মাজতে হয়েছিল!”

_____________

অরিন্দম বাইরে থেকে এতক্ষণ সব দেখছিল, ওর বুকটা যেনো কেমন করে উঠল ওই মেয়েটার মায়াময় মুখটা দেখে!!অরিন্দম মন্ডপের কাছে ফিরে এসে তার বন্ধুর সাথে এই নিয়ে আলোচনা করতে থাকে, অরিন্দমের বন্ধু দ্বীপ বলে,,,

______ যা হচ্ছে হতে দে এই জায়গায় আমরা পারবো না কিছু করতে।। এটা গ্রাম আমাদের কলকাতা শহর নয়, এখানে আমরা আটকাতে গেলেই গ্রামের লোকেরা আমাদের চেপে ধরবে!

কথাটা শুনে অরিন্দম রাগ হল সে পুলিশকে ফোন করতে চাইলে, দ্বীপ তাকে আটকে দিয়ে বলে যে,

_________”আজ যদি বিয়ে না হয়, তাহলে মেয়েটাকে তার মামী হয়তো মেরে ফেলবে, কারণ মেয়েদের বিয়ে ভেঙে যাওয়া মানে লগ্নভ্রষ্টা হওয়া।

অরিন্দম যেনো স্তব্ধ হয়ে গেল তার মাথা কাজ করার বন্ধ করে দিয়েছে শুধু বারবার মেয়েটার কান্না মাখা মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে কিন্তু কেনো এমন হচ্ছে বুঝতে পারছে না সে ,অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে আর আটকে রাখতে না পেরে সিঁদুর দানের সময় মন্ডপে উঠে গিয়ে কোনো কিছু না ভেবে অনুকে সিঁদুর পরিয়ে দেয়!!

______________

______________

অনুর মামী অলকা দেবী , মণ্ডপে তেরে গিয়ে অরিন্দমের সামনে দাঁড়িয়ে কর্কশ গলায় বলতে থাকে,,

_______”এই ছেলে তোমার সাহস কী করে হলো এমন একটা কাজ করার? আর কী করে তুমি ওকে সিঁদুর পরিয়ে দিলে?,

অরিন্দম চুপ করে আছে কি উত্তর দেবে ও সেটাই খুঁজে পাচ্ছে না!

অরিন্দম কে চুপ থাকতে দেখে অলকা দেবী অনু্র সামনে গিয়ে অনুকে বলতে থাকেন,,

_______সব কাজসাজি তোর তাই না মুখপুরি!! বল কবে থেকে এসব চলছে, ভাবলাম বাড়ির বাইরে যায় না ভাল মেয়ে হয়তো, কিন্তু না এতো দুশ্চরিত্রা, অনু এতক্ষন কারো দিকে তাকায় নি মাথা নীচু করে ছিলো এমনকি এখনো অরিন্দম কেও দেখে নি, মামীর মুখে এমন কথা শুনে হঠাৎ করে চমকে মামীর দিকে তাকায়, দুশ্চরিত্রার কথায় অর্থ না জানলেও সে, তবুও তার খারাপ লাগলো কথাটা!!!

অলকা দেবী অনুকে তাকাতে দেখে ওর চুলের মুঠি ধরেতে যাবে তার আগে অরিন্দম অলকা দেবীর হাত ধরে নিয়ে আরো জোড়ে চিৎকার করে বলতে থাকে,,,

______ “ব্যাস অনেক বলেছেন আপনি আর একটাও কথা বলবেন না, আপনি কিসের ভিত্তিতে ওকে দুশ্চরিত্রা বলছেন? আর এত ভাল মন্দ গালাগাল কি করে দিচ্ছেন? আপনি মানুষ না অন্য কিছু?এইটুকু একটা মেয়েকে ওরকম একটা বৃদ্ধার সাথে শুধু মাত্র কয়েকটা টাকার জন্য বিকিয়ে দিচ্ছেন, ছিঃ আপনার লজ্জা করেনা?”

অলকা দেবী তেলেবেগুনে রেগে তারপর চোখ গোল গোল করে রাগী গলায় বলতে থাকে,,,

_____”এই বেয়াদব ছেলে তোমার সাহস কি করে হচ্ছে আমাকে এত কথা শুনানো? কোথাকার কে তুমি হুট করে এসে এরকম একটা কাজ করলে, তার ওপর এই মেয়ের জন্য এতো কথা শোনাচ্ছে কে হয় এই কালনাগিনী তোমার কী সম্পর্ক তোমার সাথে?

অরিন্দম যেন আরও রেগে গেলো জোরে চিৎকার করে বলল,,

________”ও আমার স্ত্রী হয় একটু আগে আমি অগ্নি সাক্ষী রেখে ওকে সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে বিয়ে করেছি, শুনেছেন ও স্ত্রী হয় আমার, আর আপনি আমার স্ত্রীকে দুশ্চরিত্রার বলতে পারেন না , আপনার কোন অধিকার নেই সেটা বলার!!

অলকা দেবী আঁতকে উঠে এমন কথা শুনে সে তো টাকার লোভে মেয়েটা কে বিদায় করতে চেয়েছিলেন কিন্তু এই ছেলে বিয়ে করায় তার সমস্ত প্ল্যান ভেস্তে গেল !!!! অলকা দেবী আরো কিছু বলতে যাবে তার আগে অরিন্দম বলে ওঠে,,,

_____ আপনারা মানুন আর নাই মানুন ওকে যেহেতু আমি বিয়ে করেছি সেহেতু ও আমার সাথেই থাকবে এবার থেকে,, কথাটা শুনে অনু এই প্রথমবার অরিন্দম এর দিকে তাকায় অরিন্দম চোখ মুখ লাল করে অলকা দেবীর সাথে কথা বলছে,ওর মামা দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখছে, সে কোন কালেই তার বউয়ের মুখের উপর কথা বলার সাহস পায় না!!

অনু যেন এতক্ষণ ধরে আর সহ্য করতে পারছে না কিছু ,,তার যেন সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে দাঁড়িয়ে থাকা শক্তি যেন হারিয়ে ফেলছে হঠাৎ করেই চোখের সামনে সব ঝাপসা হতে লাগলো, অরিন্দম অলকা দেবীর সাথে কথা বলে অনুর দিকে তাকাতেই দেখলো সে ঝিমাঝে অরিন্দম অনুকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অনু জ্ঞান হারিয়ে ঢোলে পরলো অরিন্দমের বুক।।।

#চলবে