#হবে_কি_আমার💞
#writer_Ruhi_mondal
#পর্ব_24
হ্যাঁ ভালোবাসি!!
খুব খুব ভালোবাসি,,আর সারাজীবন ভালোবেসে যাবো,আর একসাথে এভাবেই থাকতে চাই।।
রেস্টুরেন্টে বসে অনু কথাটা অনুরাগকে বলল,, অনুর চোখে মুখে খুশির ঝলক, তার মুখে অমানবীয় হাসি লেগে আছে, তাকে এখন দেখলে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি মনে হবে, কিন্তু অনুরাগে চোখ ছল ছল করছে, ও কোথাও না কোথায় জানত এইটাই হওয়ার ছিল, কিন্তু তবুও মানতে পারিনি, কিন্তু আজ অনুর মুখ থেকেই স্পষ্ট শুনে ওর বুকটা কেঁপে উঠল, অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে তার, বসে থাকার শক্তি পাচ্ছে না আর অনুর সামনে, যেন মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে তার দু চোখ দিয়ে অশ্রুকণা ঝরে পড়বে,,,, ক্লাস শেষে ওরা চারজন রেস্টুরেন্টে এসেছে খেতে, মিলি খেতে আর ফোন দিতে ব্যস্ত, তিশা ও চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে,খাওয়ার শেষে অনুরাগ হঠাৎ করে অনুকে জিজ্ঞাসা করল,
________আচ্ছা তুই কি তোর বরবাবুকে ভালবাসি?
অনু প্রথমে একটু অবাক হলেও, পরমুহূর্তে মুখে হাসি রেখে, অনুরাগ কে বললো তার বরবাবু কে কতটা ভালোবাসে সে, কথাটা শুনে অনুরাগের মন আরো ভেঙে গেল,,
তিশা করুন দৃষ্টিতে অনুরাগের দিকে তাকিয়ে আছে, কারণ ওই একমাত্র জানে যে অনুরাগ অনুকে ভালবাসে, অনেক বোঝাবার চেষ্টা করেছে ও অনুরাগকে কিন্তু সে বোঝেনা, অনুরাগ কথাটা শুনেই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল,অনু খেতে ব্যস্ত, তিশা অনুরাগ এর পিছনে গেল,
অনুরাগ রেস্টুরেন্টে পার্কিং এরিয়া একটা ফাঁকা জায়গায় গিয়ে মাথা চেপে ধরে বসে, তিশা দূর থেকে অনুরাগ কে এমন অবস্থা দেখে চোখটা ঝাপসা হয়ে উঠে,নিজেকে সামলে এগিয়ে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখে ,,,, অনুরাগ ওপর দিকে তাকিয়ে দেখে তিশা, তিশা কিছু বলতে যাবে তার আগে অনুরাগে ওকে জাপটে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে,
তিশা ফ্রিজড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হাত-পা তার কাঁপছে, কাঁপা কাঁপা হাতে অনুরাগের পিঠে হাত দিয়ে নরম সুরে বলল,,,,
________” অনুরাগ প্লিজ!”
অনুরাগ কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো,
_______”আমার সাথে এমন কেন হলো তিশা? কেনো হল আমার সাথে এটা, ওকি কোনদিনই বোঝো নি যে আমি ওকে কতটা ভালোবাসি!”
তিশা অনুরাগ কে ওর কাছ থেকে ছাড়িয়ে সামনের বেঞ্চে বসায় তারপর নিজে পাশে বসে শান্ত গলায় বলল,,
__________তোর সাথে এটা কেন হল তুই কি সেটা জানিস না? সব উত্তর তোর কাছেই আছে,, তুই যেনে শুনে এই পথে পা বাড়িয়েছিস,,,তুই যেহেতু আড়াই বছর আগে থেকেই জানিস যে অনু বিবাহিতা তারপর ওই মুহূর্ত থেকে ওকে ভোলার চেষ্টা করতে হতো তোকে, কিন্তু না, তুই একটা ভুল ধারণা মনের মধ্যে রেখেছিস,, কিন্তু দেখ তু্ই তার প্রমাণ পেয়ে গেলি তো,অনু নিজের মুখে বলল ও শুধু ওর বরবাবুকেই ভালবাসে ওর মনে অন্য কেউ কোনদিনও জায়গা করে নিতে পারবে না, সেটা তোর বোঝা উচিত।
অনুরাগ আশাহত দৃষ্টিতে তিশার দিকে তাকিয়ে বলল,,
________”কিন্তু আমি ওকে ভালোবাসি!”
____তুই ওকে ভালবাসিস কিন্তু ও তোকে ভালবাসে না, আর ওর পক্ষে সেটা সম্ভবও নয়, ওর অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ ওর স্বামী আর কারোর না, সেটা তুই মেনে নিতে বাধ্য।
তিশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে অনুরাগে চোখের জল মুছে দিতে দিতে বলল,
________ভালবাসলে যে তাকে পেতেই হবে এমন তো কোথাও লেখা নেই,,, সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না,,,,আর সেটা সম্ভব ও না, তুই অন্তত অনুর খুশির জন্য ওকে ওর মতো থাকতে দে, যাকে তুই ভালবাসিস, তার ভালোতেই বাস করতে শেখ, তুই এমন কিছু করিস না যাতে ও কষ্ট পাক,,,, ওর ভালোর জন্যই না হয় তুই তোর ফিলিংস টা মনের মধ্যেই রেখে দে, নতুন করে জীবন শুরু কর,,, বলবনা যে ওকে ভুলে যা, ওকে তোর মনের ছোট্ট একটা কৌটায় মধ্যে বন্দি করে,, নতুনভাবে জীবন শুরু করার চেষ্টা কর।
অনুরাগ চুপ করে তিশার কথাগুলো শুনছে, ও জানে ও অনুকে কখনো পাবে না, আর ও অনুর পথের বাধা ও হবে না,, কখনো না,অনুর খুশিতেই ও খুশি।।
_________________
রাস্তায় এলোমেলোভাবে গাড়ি চালাচ্ছে অরিন্দম, চোখ মুখ লাল না হলেও, তার মুখটা পুরো শুকনো হয়ে আছে,, কিছু বিড়বিড় করে বলছে সে, কিছুতে কিছু হিসাব মিলছে না তার, যা দেখল যা শুনলো সেটা সত্যি, নাকি সবই ভুল,হঠাৎ গাড়িটা থামিয়ে গাড়ি স্টিয়ারিংয়ে মাথা ঠেকিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো, কিছু গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবছে সে, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো,সিটে সোজা হয়ে বসে ফোনের স্ক্রিনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো, ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতে ওপাশ থেকে অনু বলল,
______ কি হল তুমি কখন আসবে? আমি অনেকক্ষণ থেকে ওয়েট করছি।
অরিন্দম তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,
_____” আসছি!”
অরিন্দম কিছুক্ষণের মধ্যে ক্যাম্পাসে বাইরে পৌঁছে গেল,অনু সবাইকে বিদায় দিয়ে উঠে বসে, কিন্তু অরিন্দম কিছু বলছে দেখে ও বলল,
_________” কি হল সিটবেল্ট ঠিক করে দেবে তো,
অরিন্দম ওর দিকে না তাকিয়ে পরিয়ে দিল,
অনু ভালো করে অরিন্দমের দিকে খেয়াল করে দেখল চুলগুলো কেমন উস্কখুস্ক হয়ে আছে, মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে তাই সে কপালে হাত দিয়ে দেখে বলল,
________”তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেন?ঠিক আছো তো?”
অরিন্দম গম্ভীর গলায় বলল,
________”আজ কেমন ক্লাস হল সারা দিনই ক্যাম্পাসে ছিলে!”
অনু মুখে হাসি রেখে বলল,
_________ ক্লাস খুব ভালো হয়েছে, ক্যাম্পাসেই ছিলাম শুধু লাঞ্চ টাইমে পাশে রেস্টুরেন্টে গিয়ে ছিলাম,
অরিন্দম আবার বলল,
______ “কেনো ক্যান্টিন?”
_______”ক্যান্টিনের খেতে রোজ ভালো লাগে না, রেস্টুরেন্ট এ গেলে মন ভালো হয়ে যায়।”
অরিন্দম একটা ও তাছিল্য হাসি দিল, যার অর্থ অনু বুঝতে পারল না।
______________________
অনু রাতে ডিনার করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে চ্যাটিং করছে তিশার সাথে,বাড়িতে আসার পর থেকে অরিন্দম ভালো করে কথা বলে নি ওর সাথে, তাই ও ভাবছে হয়ত অফিসের চাপ আছে ওই জন্য একটু ডিস্টার্ব আছে তাই ও আর বিরক্ত করেনি, মনোযোগ দিয়ে তিশার সাথে একটু ইম্পরট্যান্ট কথাই বলছে তখনই হঠাৎ করে পেছন থেকে অরিন্দম জড়িয়ে ধরল,,
অনু বিরক্ত হয়ে বলল,
________”সব সময় এমন জড়িয়ে ধরবে না তো বিরক্ত লাগে, ছাড়ো!”
কথাটা শুনে অরিন্দমের হাতের বাঁধন আলগা হয়ে গেল, অনু হাত ছাড়িয়ে দিয়ে ছাঁদে চলে যায়,, অরিন্দম শক্ত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রুমে এসে শুয়ে পড়ে ,,
বেশ কিছুক্ষণ পর অনু এসে দেখে যে অরিন্দম চোখ বুঝে শুয়ে আছে,অনু অরিন্দমের কপালে ভালো করে হাত দিয়ে দেখে শরীর টরির খারাপ করলো না তো, কারণ অরিন্দম এমন করে না, ওকে ছাড়া ঘুমায় না,, কপালে হাত দিয়ে দেখল ঠিকই আছে,তারপর ভাবলো ঠিক অফিসে হয়তো বেশি চাপ ক্লান্ত হয়তো খুব,,, কিছু না বলে ও পাশে শুয়ে পড়লো, কিছুক্ষণ পর ফোন রেখে বালিশে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে,অনেকটা সময় পর অরিন্দম অনুর দিকে ঘুরে দেখে সে ঘুমিয়ে গেছে অরিন্দমের এখন সত্যিই খুব কষ্ট হচ্ছে,,কারন এই সাড়ে তিন বছর অনু ওকে জড়িয়ে না ধরে ঘুমায় নি কখনো।। কিন্তু ও আজ এতটা রুড বিহেভ করছে, অরিন্দমের অজান্তেই চোখের কোনে জল জমে গেল, এই কি তার সেই পুচকি বউটা যে ওকে জড়িয়ে ধরার জন্যে কেঁদে কেঁদে একাকার করে দিত, আজ সে এতটা পরিবর্তন , অরিন্দমের বুকে অসহ্য বেদনা শুরু হয়ে গেছে, হাতের কোনুই দিয়ে চোখের জল মুছে অনুকে টেনে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে, অনুও এক হাতে অরিন্দম কে জড়িয়ে ধরে আরও গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়, কিন্তু অরিন্দমের চোখে ঘুম নেই, তার মনে না চাইতে ও অবিশ্বাসের বীজ গেঁথে চলেছে।
#চলবে
#হবে_কি_আমার💞
#writer_Ruhi_mondal
#পর্ব_25
অনুর আজ ঘুম ভেঙেছে অনেক আগেই, আজ সান্ডে, ওর ক্লাস নেই অরিন্দমের ও অফিস ছুটি,ও তাড়াতাড়ি উঠে রান্নার মাসিমার হাতে হাতে একটু কাজ করছে একটু রান্না শেখার জন্য,তার কিছুক্ষণ পর দু মগ কফি অরিন্দমের আর ওর জন্য নিয়ে রুমের দিকে যেতে নিলে দেখল অরিন্দম ডাইনিং টেবিল এসে বসে আছে, অনু হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে বললো,
________”গুড মর্নিং বরবাবু!”
অরিন্দম অনুর দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার ফোনের দিকে তাকিয়ে নিল,অনু মুখ ফুলিয়ে অরিন্দমের পাশে গিয়ে বসে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
_________”তোমার কি হয়েছে বলোতো?” কাল থেকে আমার সাথে কথা বলছো না ভালো করে,,আর তোমার চোখটা লাল হয়ে আছে কেনো? কাল রাতে ভাল ঘুম হয়নি?”
কিন্তু অরিন্দম অনুর সাথে কোন কথা বলছে না চুপ করে কফির মধ্যে চুমুক দিচ্ছে।
অনু এবার একটু রেগে গেল, রেগে গিয়ে দাঁড়িয়ে অরিন্দমের মাথার চুল মুঠো করে ধরে টানছে আর বলছে,,
________” কি হল তোমার? কথা বলছো না কেন আমার সাথে!”
অরিন্দম বিরক্ত হয়ে অনুর হাত ছাড়িয়ে বলল,
_______ ভালো লাগছে না আমার একা থাকতে দাও, বলেই রুমে চলে যায়।
অনু মুখ গোমড়া করে কিচেনের দিকে পা বাড়ায়,
________
________________
সারাদিন এদিক সেদিক করে কেটে গেল কিন্তু অরিন্দম ওর সাথে ভালো করে কথা বলেনি,ও অনেক বার গিয়ে মুখ ফুলিয়ে চলে এসেছে, তারপর আর ও রাগ করে কথা বলেনি, আর রুমে যায়নি,,,,
বসে বসে বোরিং লাগছিল তাই তিশার সাথে ফোনে কথা বলতে লাগলো,
ওপাশ থেকে তিশা কিছু বলতে,
অনু তিশাকে ভালো করে বুঝে বলল,
____ অতীত নিয়ে কেউ বাঁচে না,জীবনে নিজেকে খুশি করতে গেলে বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে এগোতে হবে, ছোটবেলার প্রেম ভালোবাসা গুলো একটা আবেগের পরিণত হয়, ওসব কিছু দিনের মোহ,, এক সময় সেই মোহ কেটে যায়, আর বড় হয়ে বুঝতে শিখে যাকে ভালবাসবে সেটাই ভালোবাসা, আর ভালো তাকেই ভাসা উচিত যে তোমাকে ভালোবাসে, আর আমি জানি অনুরাগ খুব ভাল ছেলে, ও ওর বউকে খুব ভালোবাসবে, বলে অনু হেসে দেয়,
তিশা অনুকে বলেছে যে ও অনুরাগকে ভালোবাসে, কিন্তু তিশা অনুকে বলেনি যে অনুরাগ অনুকে ভালবাসতে,ও বলেছে অনুরাগ অন্য কাউকে ভালোবাসে কিন্তু সে তাকে ভালোবাসে না, তাই অনু ওদের মধ্যে সব ঠিক করার জন্য তিশার সাথে প্ল্যান করছে!
______________________
______________
খুব স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে অরিন্দম, চোখ থেকে টপটপ করে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে, ও পুরোপুরি ভেঙ্গে পরেছে, বুঝে নিয়েছে অনু আর তার কাছে থাকবে না,কারণ সেই দিন রেস্টুরেন্টে অনুর মুখ থেকে ভালবাসি কথাটা শুনে ও বেরিয়ে এসেছিল রেস্টুরেন্ট থেকে, তবুও নিজেকে বোঝাচ্ছিল হয়তো ও ভুল শুনেছে,,কিন্ত আজ অনুর ফোনের বলা কথা গুলো সব শুনেছে ও, শুনে ওর পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেছে,,,অনুরাগ তার বউ কে খুশি রাখবে,,, ছোট বেলার ভালোবাসা সব মোহ,,,,,ওর সাথে তো অনুর ছোট বেলায় বিয়ে হয়েছে, বড়ো হয়ে অনু এখন বিয়েটাকে ভুল ভাবছে,,ওর কাছে অনু খুশি না?
ও এক মুহুর্ত বাড়িতে না থেকে বেরিয়ে এসেছে, ভীষণ কান্না পাচ্ছে ওর, নিজেকে আজ পুরো নিঃস্ব লাগছে, বেঁচে থাকার কোন ইচ্ছা নেই আর সব শেষ সব।
_____________________
_______________
ঘড়িতে এখন রাত বারোটা, অনু সুন্দর করে সেজেছে, শাড়ি ও পরছে,সেই ঘটনার পর থেকে শাড়ি পড়তে ভয় পেত, অরিন্দম অনেক বুঝিয়ে লাভ হয়নি, কিন্তু আজ ও নিজে থেকে পরেছে,, একটা নীল শাড়ি,, অরিন্দমের পছন্দের,,, আজ যে সে তার বরবাবুকে সারপ্রাইজ দিতে চায়, নিজের মনের সব কথা বলতে চায়, বলতে চায় সে কতটা চায় তাকে,, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কে আর এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় সে,, কিন্তু অরিন্দমের আশায় কোন নাম নেই, ফোনে রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না, বিয়ে এত বছর পর এই প্রথম অরিন্দম এত দেরি করে বাড়ি ফিরছে!
___________
____________________
হঠাৎ বাড়ি কলিং বেল বেজে উঠল, অনু ড্রইংরুমে বসে ছিল, হঠাৎ শব্দে চমকে উঠলো, কলিং বেল আবার বেজে উঠল, অনু ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো, কারণ অরিন্দম বাইরে থেকে আগে ওকে ফোন করে তার পর কলিং বেল বাজায়, কিন্তু আজ, অনু ভীষণ ভয় করছে বিশালের কথা মনে পড়ছে,কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা নিয়ে অরিন্দমের নাম্বারে ডায়াল করে, রিংয়ের শব্দ দরজার ওপাশ থেকে পায়, স্বস্তির শ্বাস ফেলে, খুশি হয়ে দৌড়ে গেল দরজা খুলতে,,সে মনে মনে ঠিক করে রেখেছে আজ তার বরবাবু আচ্ছামত বকা দেবে এত দেরি কেউ করে, সে কি জানে না সে একা থাকতে ভয় পায়,, মনে মনে খুশি হয়ে সে যখন দরজা খুলে তার মনের কথা গুলো বলতে যাবে তার হাসিমুখ দরজা খুলে সামনের দিকে তাকিয়েই হাসি মুখটা নিভে গেল,,,, অরিন্দম কে দেখে,,,,এমন অবস্থা কি করে হলো?
_________ কারণ অরিন্দম দাঁড়িয়ে আছে এলোমেলো ভাবে, ডান হাতের শার্টের ফোল্ড কিছুটা নেমে গেছে বা হাতেও এলোমেলো হয়ে আছে, শার্টের উপরের দুটো বোতাম খোলা,,,সাদা শার্ট ভিজে কেমন হয়ে গেছে,,,চুলগুলো উসকো খুসকো, ডান হাতে মদের বোতল,,, ঢুলু ঢুলু চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে,,,,,অনু অরিন্দম কে এমন অবস্থায় দেখে আতৎকে উঠলো, যে ছেলে কখনো স্মোক করে না সে আজ ড্রিংক করেছে তাও আবার এত পরিমাণে,,,,,অনু অরিন্দম কাছে এগিয়ে ওকে ধরতে যাবে অরিন্দম হাতের ইশারা করলো যেনো তাকে না ধরে, তারপর জড়ানো গলায় বলল,,
_______ আমি ঠিক আছি, তোমাকে ধরতে লাগবে না, ঠিক আছি আমি, আমার স্পর্শ তোমার ভালো লাগবে না!
অনু অরিন্দমের এমন অবস্থায় কেঁদে দিল তারপর আবার এগিয়ে গিয়ে বললো,,
________”কি হয়েছে তোমার বরবাবু? তুমি এমন করছো কেনো? বলে ধরতে গেলে অরিন্দম হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে,, টলমল পায়ে ড্রইংরুমে এল, ঢলে পড়ে যেতে নিলে অনু জোর করে এগিয়ে গিয়ে দুহাতে দু কাঁধ শক্ত করে ধরে নেয়,তখনি অরিন্দম এক ধাক্কায় নিজের কাছ থেকে অনুকে সরিয়ে দেয়, অনু ছিটকে পড়ে সোফা কাছে সোফার কর্নারে লেগে মাথাটা সামান্য কেটে যায় আহত দৃষ্টিতে অরিন্দম দিকে তাকায়।
অরিন্দম চিৎকার করে বলে,,
________একদম আলগা পিরিত আমাকে দেখাতে আসবে না, আমার চাই না কাউকে, আমি নিজেকে সামলে নিতে পারব, তুমি যাও তোমার প্রেমিক পুরুষের কাছে, সে তোমাকে আমার কাছে দেখলে কষ্ট পাবে,
তারপর হালকা হেসে বলল,
___________আমার ছোঁয়ায় তুমি অপবিত্র হয়ে যাবে, আমার কাছে থাকার তোমার কি প্রয়োজন, আমার কাছে তোমার সব প্রয়োজন শেষ,,,,, তুমি বড় হয়েছ স্বাধীন হয়েছে, ভালো-মন্দ বুঝতে শিখেছো, ভালোবাসার মানুষ বুঝতে শিখেছে, আমি কে তোমার? আমি কেউনা,, কেউনা আমি তোমার,, বলে টলমলে পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গেলে প্রথম ধাপে পড়ে যায় অনু হূহূ করে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে গিয়ে অরিন্দমের পাশে বসে ওকে তুলতে থাকে কিন্তু অরিন্দম সব ভার ছেড়ে দিয়েছে, অনু অনেক কষ্ট অরিন্দম কে ফ্লোরে বসায় তারপর অঝোরে কেঁদে ওঠে,,
_________ অরিন্দম তাকে সন্দেহ করে সেটা ভাবতেও পারিনি ও কখন। কিন্তু কাকে নিয়ে সন্দেহ করে,আর কেনোই বা? ও তো কখনো অরিন্দম কে ছাড়া কাউকে নিজের ভাবেনি, ওর কাছে তো অরিন্দম সব, অরিন্দম কে ছাড়া ওতো কখনো নিজেকে কল্পনাও করেনি,, ওর পুরো পৃথিবী ওর বরবাবু,আর সে কিনা আজ কি সব বলছে?
অরিন্দম অনু গালে হাত দিয়ে আবেশি কন্ঠে বলল,
__________”তুমি কাঁদছো কেন বউ? প্লিজ চুপ করো! তোমার সুখে আমি বাধা হবোনা! আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলাম! তুমি যাও তোমার প্রেমিক পুরুষের কাছে!”
অনু কাঁদতে কাঁদতে জোরালো কন্ঠে বলল,
___প্লিজ তুমি চুপ করো,, আমি কোথাও যাবো না তোমাকে ছেড়ে,, তুমি আমার একবার কথাটা শোনো।
ততক্ষণে অরিন্দম ওর কোলে ঢলে পড়েছে, অরিন্দম অনুকে জড়িয়ে ধরে ওর পেটে মুখ গুঁজে জোরালো কন্ঠে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,,
_________আমি কি দোষ করেছি বউ?তুমি আমাকে এত বড় শাস্তি দিলে! আমি তো কোনদিন কোনো কিছু জন্য তোমার কাছে জোর করিনি! আমিতো নিঃস্বার্থভাবে তোমাকে ভালবেসেছি , শুধুই ভালোবেসেছি,,, কিন্তু তুমি? তুমি আমাকে একটু ও ভালবাসতে পারলে না কেন? আমি কি একটু ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই তোমার? আমি কি এতটাই খারাপ?আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায় না?
অনু হূ হূ করে কেঁদে চলেছে সে যে নিজের অজান্তেই অরিন্দমের মনের কষ্ট দিয়ে ফেলেছে কি করে তার কষ্ট কমাবে?
অরিন্দম আবার কাঁদতে কাঁদতে বলল,,
________বউ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, প্লীজ তুমি আমাকে ছেড়ে যেওনা, প্লিজ তুমি আমাকে আর মেরে ফেলো না,
অরিন্দমের কথা বলতে পারছে না তার কন্ঠ জড়িয়ে যাচ্ছে,,সে আবার বলল,,
________আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে খুব, আমি যে আর নিতে পারছি না, আমি এই মৃত্যু যন্ত্রণা সহ্য করতে আর পারছিনা, প্লিজ তুমি যদি যাও আমাকে মেরে ফেলে দিয়ে যাও, আমি বেঁচে থাকতে আমার চোখের সামনে তুমি অন্য কারোর হাত ধরে যেও না,,,, কিছুটা থেমে আবার কাঁদতে কাঁদতে বলল,,
____আমার সেই ছোট্ট অবুঝ বউ টাকে যে আমি বড্ড ভালোবাসি,সে ও আমাকে খুব ভালোবাসত,, সে কি বলতো জানো? বলতো বরবাবু আমি তোমাকেই ভালোবাসি তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না,, আমার তোমাকে ছাড়া ভালোই লাগে না,,, আমার তাকে ফিরত চাই,, তুমি পারবে আমার কাছে তাকে ফিরিয়ে আনতে। বলো পারবে?বলে অরিন্দম বুক ফাটা কান্না কেঁদে উঠলো।।
#চলবে