হাতে রেখো হাত পর্ব-১১+১২

0
146

#হাতে_রেখো_হাত (১১)

বি*ষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে গাছ গুলো সব শুকিয়ে গেছে। ঘন জঙ্গল ছিল সেখানে। তার পাশেই তৈরি করা হচ্ছিল ফ্যাক্টরি। যা দেশের কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলত। অনেক অনেক সার উৎপাদন করা হতো সেখানে। প্রায় পঞ্চাশ কোটি টাকার রাসায়নিক পদার্থ ক্ষতি হয়েছে। খবরটা এলো ঘটনার এত দিন পর। এমন এক গ্যাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল যার ফলে একটু একটু করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুরুতে এই বিষয়ে অবগত ছিল না কেউ ই। ল্যাবে পরীক্ষার পর বিষয়টি জানানো হয়েছে। মিডিয়ায় এসব নিয়ে চর্চা চলছে। প্রতিটি চ্যানেল ব্যস্ত নিউজটা জানাতে। খবর দেখছিলেন আনিসুল সাহেব। তিনি বিশেষ কিছু জানতেন না।আবরাজ কাজ শেষে ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে পরেছিল এইটুকুই জানতেন। কিভাবে কি হলো কোথায় হয়েছে এসব কাউকেই জানানো হয় নি। অনেকটা গোপনেই কাজ শেষ করেছেন পুলিশ প্রশাসন। ভদ্রলোক ঘেমে নেমে একাকার। স্ত্রীকে ডাকলেন “রেবেকা,রেবেকা, কোথায় তুমি।”

স্বামীর ডাকে এক প্রকার ছুটে এলেন ভদ্রমহিলা। বিচলিত আনিসুল সাহেবের মুখ দেখে বললেন “কি হয়েছে তোমার! শরীর খারাপ লাগছে। ডাক্তার ডাকব?”

“আবরাজ কোথায়?”

“ওকে নিয়ে বেরিয়েছে রুস্মি, রুবি।”

“এখনি ফোন করে, আসতে বলো।”

“কেন?”

“আহ কথা বলিও না তো। এখনি বলো আসতে।”

স্বামীর মুখের ভঙ্গিমা দেখে ফের প্রশ্ন করার সাহস হলো না ওনার। রুস্মিকে ফোন করা হলো। রুস্মি জানায় ওরা এসেই গেছে। মিনিট খানেক এর মাঝে চলে এলো ওরা। রুস্মিরা ঘরে প্রবেশের পূর্বেই আনিসুল সাহেব উঠে এলেন।
“কি হয়েছে বাবা?”

রুস্মির প্রশ্নকে অবজ্ঞা করে আরাজকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন
“কথা আছে তোমার সাথে।”

মৌন রইল আবরাজ। ভেতরে এসে বসল। রেবেকা বেগম চুলা নিভিয়ে সভায় যোগ দিলেন। চোখে মুখে হাজারো চিন্তা।
“তোমার অসুস্থ হওয়ার কারন কি ছিল আবরাজ? ”

“বিশেষ কিছু নয় চাচা।”

“মিথ্যে বলবে না দয়া করে।”

“ওটা কেবল এ*ক্সি*ডেন্ট।”

“বি*ষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে তোমার শরীর অসুস্থ হয়েছিল তাই না?”

আনিসুল সাহেবের চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো। ঘরে থাকা প্রতিটা মানুষের ভ্রু বেঁকে গেছে। রুবি প্রায় বিরক্তি নিয়ে চেয়ে। এসব ফালতু কথা শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তবে ঘটনাটা কোনো ছোট নয়। তাই ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। “বাবা আমি বুঝতে পারছি না কি বললে তুমি।”

“পুলিশ তোমায় জঙ্গলের রাস্তায় পেয়েছে তাই না?”

মাথা নাড়ালো আবরাজ। আনিসুল সাহেব হতাশ হলেন। আবরাজের নিকটবর্তী হয়ে দু চোখ বন্ধ করে বললেন “তোর বাবার সাথে আমি অন্যায় করেছি। তাই হয়তো তোর প্রতি খারাপ লাগাটা বেশি। তুই আমার র*ক্ত। তোর জন্য সত্যিই মায়া হয় আমার। যা তা হতে পারত। তুই কেন জানালি না আমাদের? খুব সামান্য বলে চালিয়ে দিলি সবটা! আরও বেটার ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন ছিল। সত্যিই আমি তোর নামে মাত্র চাচা।”

স্পষ্ট কণ্ঠটা ক্রমশ ভেঙে আসছে। ভীষণ খারাপ লাগছে আবরাজের। মূলত সকল ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে চায় ও। তাই অফিসার আবুলকে রিকোয়েস্ট করছিল পুলিশ প্রশাসন কিংবা নিজের লোক কাউকেই যেন এসব না জানানো হয়।

.

দুদিন পরের ঘটনা। একটা অনাকাঙ্খিত খবরে বদলে গেল পরিবেশ। ক্লাস নাইনে পড়ুয়া রুবি পালিয়ে গেছে। তাও নিজের ক্লাইমেটের সাথে। বিষয়টা খুব দ্রুত ছড়িয়ে গেল স্কুলে। খবর এলো দুপুরে। রেবেকা বেগম ফোনের এপাশ থেকে চেচামেচি করছেন “কি সব উল্টাপাল্টা কথা। আপনারা পাগল হলেন। আমার মেয়ে এমন না। পালাবে কেন শুধু শুধু। আমরা যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছি ওকে। কাউকে পছন্দ হলে বললেই হতো। তাছাড়া কি এমন বয়স ওর।”

ওপাশ থেকে তেমন কিছু জবাব এলো না। সি সি টিভি ফুটেজ তেমনটাই বলছে। ঘটনাটা স্কুলের উপভোগের বিষয় হিসেবে চলতে লাগল। রেবেকা বেগম স্বামীকে খবর দিলেন। আনিসুল সাহেব কাজের জন্য অন্য জেলায়। তিনি খোঁজ নিতে বললেন। আবরাজ ট্রেরেসে ছিল। ঘটনাক্রমে চলে এসেছে। রেবেকা বেগম কুল কিনারা পাচ্ছেন না। সমানে কেঁদে যাচ্ছেন।
“চাচি আমি দেখছি, আপনি কান্না করিয়েন না। আসেন আমার সাথে। আগে ওর স্কুলে যেতে হবে।”

স্কুলে যাওয়ার পথে সীরাতের সাথে কথা হলো আবরাজের। মেয়েটা বুদ্ধিমতী। তাছাড়া প্রশাসনের সাথেও যোগাযোগ ভালো। রুবি মেয়ে মানুষ। অনেক ঘটনাই থাকতে পারে। রেবেকা বেগমের যা অবস্থা তাতে তিনি বিশেষ কিছু করতে পারবেন না। সীরাত কাছেই থাকে। খুব দ্রুতই চলে এসেছে। আবরাজরা গাড়ি থেকে নামতেই তিনজন স্কুলের ভেতরে চলে এলো। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে নিজের ক্লাসমেটের সাথেই স্কুল থেকে পালাচ্ছে রুবি। সাথে আছে কাপড়। এটা থেকেই ধারনা করা হচ্ছে দুজন পালিয়ে গেছে। রেবেকা বেগম কান্নাভেজা কণ্ঠে ফের চেচালেন। রাগান্বিত স্বরে স্কুল কতৃপক্ষককে দোষারোপ করলেন। স্কুলের হেডস্যার বিপাকে পরলেন। “শান্ত হোন ম্যাডাম। স্কুল কতৃপক্ষের কোনো দোষ নেই। দেখুন আপনার মেয়ে স্ব ইচ্ছায় পালাচ্ছে।”

“আপনাদের গার্ড কি করে। স্কুলে মেয়ে পাঠাই, নিরাপত্তা নাই কোনো।”

“ম্যাডাম আপনি বুঝার চেষ্টা করেন। এখানে গার্ডের কি দোষ। গার্ড তো টহল দিচ্ছিল। ওরা তো পেছনের গেট দিয়ে পালিয়েছে। হয়ত আগেই পালাতো। তবে স্কুলে আসা যাওয়া করে পার্সোনাল গাড়ি দিয়ে। সেই জন্যই স্কুল থেকে পালিয়েছে যাতে ধরতে না পারেন। আমরা বিষয়টা লক্ষ্য হতেই দ্রুত খবর দিয়েছি।”

রেবেকা বেগম শুনছেন না কোনো কথা। রুবি ছোট। এই বয়সে নানা রকম চিন্তা কাজ করে। মেয়েটা কি করছে কে জানে। রুবির ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই রেবেকা বেগমের মাথা খারাপ। দুজন ম্যাডাম সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সীরাত বলল “স্যার, ছেলের ফ্যামিলিতে খবর দেওয়া হয়েছে?”

“জী। এখনি চলে আসবে।”

আবরাজ আর সীরাত একে অপরের দিকে চাইল। দুজনেই কুল পাচ্ছে না। রুবি নিজ ইচ্ছেতে বের হয়েছে। এখানে ছেলের একা দোষ নেই। ঘটনা ক্রমশ জটিল লাগছে। আবরাজ বলল “রুবির ক্লাসমেট দের সাথে কথা বলতে চাই। আপনারা পুলিশে ইনফর্ম করেছেন তো?”

“পুলিশ, না মানে আসলে বুঝতেই পারছেন স্কুলের ইমেজের ব্যপার।”

সীরাত তেঁতে উঠল “মানুষ আপনারা! একটা মেয়ের লাইফ রিস্কে আছে। আর আপনারা পরে আছেন স্কুলের ইমেজ নিয়ে। ফাইন আমরাই দেখে নিচ্ছি।”

সীরাত আর আবরাজ বেরিয়ে এলো। রুবিকে নিয়ে ভীষণ চিন্তা হচ্ছে ওর। রুবির ক্লাসমেটদের সাথে কথা বলে যতটুকু জানা গেল তা হচ্ছে ছেলেটার নাম
সুজিত। পড়াশোনায় তেমন ভালো না। তবে রুবির সাথে বেশ ভাব। বেশ কিছুদিন ধরে মেলামেশার পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছিল।

সীরাত কাছের থানাতেই খবর পাঠায়। মিনিট দশেকের মাঝেই এসে পরে তারা। স্কুলের বাচ্চারা ভয়ে তটস্থ। বিশেষ করে রুবি আর সুজিতের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা। সুজিত সম্পর্কে বাজে কোনো রেকর্ড নেই। অল্প বয়সী ছেলে। সব মিলিয়ে জটলা বিঁধে যায়। সুজিতের বাবা মা আসেন। ক্লাসি ফ্যামেলি। দুজনেই হেড স্যারকে হুমকি দিলেন। এমনকি বললেন রুবি নামক মেয়েটিকে দেখে নিবে। সত্যি বলতে তাদের আচারণ একদিকে যেমন উগ্র ছিল অন্যদিকে স্বাভাবিক ই ছিল। কোনো বাবা মা নিজ সন্তানের বিরুদ্ধে কথা শুনতে পারেন না। তারা পেঁচিয়ে হলেও অন্যের দিকে দোষ ঠেকায়। আবরাজ শান্ত আর নীরব কণ্ঠে বলল “ছেলের জন্য নিশ্চয়ই চিন্তিত আপনারা। আমার বোনের জন্যও আমরা চিন্তিত। রাগারাগি ঝগড়া করে বিশেষ লাভ হবে না। একটা সমাধান বের করতে হবে। ওদের খুঁজতে হবে।”

সুজিতের বাবা পূর্ণ নজরে তাকালেন। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা কে অসাধারণ বলা চলে। কণ্ঠে ভদ্রতা। একটা বিনয়ী ভাব রয়েছে। তবু নিজের প্রভাব জানান দিতে পাত্তা দিলেন না তিনি। অফিসারের সাথে কথা বলতে লাগলেন। সীরাত অনেক সময় যাবত ফোনে কথা বলছিল। কথা শেষে আবরাজের কাছে এসে চাপা কণ্ঠে বলল “একটা সমস্যা হয়ে গেছে। দ্রুত বের হতে হবে আমাদের।”

চলবে….
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

হাতে রেখো হাত (১২)

হসপিটালের করিডোর দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটছে সীরাত ও আবরাজ। দুজনের মুখাশ্রীতেই এক গম্ভীর ভয়ার্ত ভাব ফুটে উঠেছে। রিসিপশনে বসে থাকা মেয়েটা প্রায় বিচলিত হয়ে বলল “আপনারা সুজিতের গার্ডিয়ান?”

সীরাত চটপট জবাব দেয়। “জী। ওকে কোথায় নেওয়া হয়েছে।”

“আমার সাথে আসুন।”

সীরাত আর আবরাজ যাচ্ছিল। ওমন সময় কলটা এলো। আবরাজ পিছে পরে গেল। রুশ্মি কল করেছে।

“রুবির কোনো খোঁজ পেয়েছ?”

“শান্ত হও রুশ্মি। পাই নি তবে পেয়ে যাব।”

“এমন পরিস্থিতিতে শান্ত কি করে হব। আমার মাথা কাজ করছে না। মা সবে ফোন করে জানিয়েছে আমায়। আমি এখনও ভার্সিটি থেকে বের হতে পারি নি। হাত পা অবশ হয়ে আসছে। রুবি ছোট মানুষ, স্বভাব আর জ্ঞানে বড় কাঁচা। না জানি কি অবস্থায়!”

“রুশ্মি! কেঁদে লাভ হবে বলতে পারো? তুমি বরং চাচির কাছে যাও। আমি দেখছি।”

কান্না থামায় রুশ্মি। “তুমি কোথায়?”

তৎক্ষণাৎ উত্তর দিতে পারল না আবরাজ। একটু ভেবে নিয়ে বলল “রেল স্টেশনের দিকে যাচ্ছি।”

“আমি বুঝতে পারছি না কি করব।”

“চাচির কাছে যাও। তোমার সাপোর্ট টা ভীষণ জরুরী।”

আই সি ইউ রুমে শুয়ে আসে সুজিত। মুখে অক্সিজেন মাস্ক। ছেলেটার গঠন বেশ ভালো। হাতের বেশি গুলো ফোলা। বোঝা যায় নিয়মিত জিম করে। এমন ছেলেটা যখন হসপিটালের বেডে জীবন মরণের লড়াই করে তখন বলতেই হয় নিশ্বাসের ভরসা নেই। আবরাজ প্রবেশ করতেই ব্যথা নিয়ে তাকায় সীরাত। সুজিতের এই অবস্থা ওকে দ্বিধায় ফেলে দেয়।

“ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হবে।”

“ওর বাবা মা যখন জানতে পারবে তখন কি হবে আমি সেটাই ভাবছি।”

“ভাবলে আদৌ কি সমাধান হবে? যা হবার হবে। আগে সুজিতের বেঁচে উঠা দরকার। তাছাড়া আমরা জানি না রুবি কোথায়, কী অবস্থায়! ভাবতে পারছ কত ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।”

নিরুত্তর আবরাজ। দুজনে করিডোর দিয়ে হেঁটে চলেছে। আবরাজের মুখের একাংশ বার বার ফুলে ফেপে উঠছে। মনে হচ্ছে রাগের চোটে ভ*স্ম করে দিবে সব।

সারাদিনব্যাপী খোঁজার পর বাড়ি ফিরে আবরাজ। আনিসুল সাহেব ব্যবসায়ীক কাজে দেশের বাহিরে। টিকেট পান নি বিধায় আজ আসতে পারছেন না। তবু পরিচিত বড় বড় আইনের লোকদের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। মাথায় হাজার চিন্তা। আবরাজের শুষ্ক মুখ দেখে ফের কেঁদে ফেললেন রেবেকা বেগম। মা কে সান্ত্বনা দেবার শক্তি নেই রুশ্মির। কেঁদে কেটে সে নিজেও চোখ মুখের হাল করেছে বেহাল। আবরাজ বসল পাশে। মাথাটা ব্যথায় ফেঁটে যাবে যেন।
“চা করে দিব?”

“না,থাক। চাচি কে খাওয়াতে হবে কিছু। না হলে অসুস্থ হয়ে যাবে।”

“বুয়া এসেছিল,মা চলে যেতে বলেছে। রান্না হয় নি আজ।”

“খাবার এনে দিচ্ছি।”

“ঠিক আছে।”

সবে এসেছে আবরাজ। একটা ক্লান্তির শ্বাস ফেলে উঠতেই রুশ্মির ডাক আসে
“শোনো।”

“হু?”

“আমি ও আসি?”

অন্যসময় হলে আবরাজ বারন করত। তবে আজ নীরব রইল। যাওয়ার পূর্বে মা কে ঘরে পৌছে দিল রুশ্মি। ভদ্রমহিলার শরীরে যেন শক্তি নেই। রুগ্ন চেহারায় হুট করে নেমে আসা জল অনেকটাই বেমানান। অথচ এই জলের ক্লান্তি নেই। নেই কোনো অবকাশ।

.

সুজিতের বাবার নাম সুফিয়ান করিম। ভদ্রলোকের পাওয়ার আছে। নামীদামি সব বিজনেসে শেয়ার থাকাতে লোকজন ও চিনে ভালো। আবরাজ আর সীরাত বলেছিল সুজিতের ঘটনা যেন এখন না জানানো হয়। যদিও এটা অন্যায় তবু এই নিয়মেই চলছিল চিকিৎসা। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। ঘটনার চব্বিশ ঘটনা পেরানোর পূর্বেই সুফিয়ান করিমের কাছে খবর পৌছে গেল। তখন সীরাত আর আবরাজ রুবিকে খোঁজাতে মত্ত। ওমন সময় এলো কলটা। সুফিয়ান করিম হসপিটালে এসেছেন। এক প্রকার ভাঙচুর শুরু করে দিয়েছেন। ওনার ভাষ্যমতে এই হসপিটাল অযোগ্য। তাছাড়া ছেলেটা হসপিটালের বেডে শুয়ে। বাবা মা কে না জানানোটা অন্যায় নয় বরং পাপ। ডাক্তাররা তবু রিকোয়েস্ট করল। এই অবস্থায় টানাটানি ঠিক নয়। চিকিৎসা চলছে। যদি কোনো প্রকার ক্রুটি লক্ষ্য হয় তখন আরও টেক কেয়ার করা হবে। এসব ছেলে ভোলানো কথায় রাজি নন তিনি। ছেলেকে এক সেকেন্ডের জন্যও রাখবেন না স্বস্তার এই হসপিটালে। খবর গুলো শুনে সীরাত তৎক্ষণাৎ চলে এলো। সুফিয়ান করিমের সামনে আসতেই ক্ষোভটা মেটালেন। “তোমার সাহস কি করে হয় আমার ছেলের খবর আমার থেকে লুকানোর।”

“স্যার প্লিজ শান্ত হোন।”

“আই সি ইউ রুমে আমার ছেলে। আর তুমি বলো শান্ত হতে।”

“আমি বুঝতে পারছি বিষয়টা তবে দেখেন ঘটনা ছোট নয়।”

এবার চোটে গেলেন সুফিয়ান করিম। সীরাতের দিকে লাল চোখে তাকিয়ে বলে দেখে নিবে সবাইকে। যত দূর যাওয়ার প্রয়োজন যাবেন তিনি। ক্রমশ জটিল হচ্ছিল পরিস্থিতি। সীরাত বুদ্ধি খাটায়।
“আপনি কি মনে করেন পুলিশ প্রশাসন আপনার ছেলের পক্ষে যাবে? ভিকটিম কিন্তু এখনো নিরুদ্দেশ।”

“ঐ মেয়েটা ভিকটিম? ফালতু মেয়ে। ভিকটিম তো আমার ছেলে। হসপিটালের বেডে মৃ*ত্যুর সাথে লড়াই করছে আমার বাবা।”

ভেঙে পরলেন ভদ্রলোক। সীরাত বুঝে সবটা। তিনি একজন বাবা। সেই দিক থেকে ওনার আচারণ এক চুল পরিমাণ অযাচিত নয়। তবে পরিস্থিতি কি তা জানে না সীরাত। সবটা সামনে না আসা আবধি কিছু করা যাচ্ছে না।

ফুটেজ দেখতে দেখতে আচমকা চেচিয়ে উঠল আবরাজ। “স্টপ,ভিডিওটা পজ করেন।”

ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখে আবরাজ। রুবিকে চিন্তে অসুবিধা হয় না। সাথে সুজিত ও রয়েছে। ডিটেলস নিয়ে তৎক্ষণাৎ বাস স্টপ আসে আবরাজ। রাস্তায় সীরাতকে জানানো হয়েছে ঘটনা। সীরাত ওর পরিচিত এক পুলিশ আঙ্কেলকে ফোন করে জানায় সবটা। পুলিশ বাস স্টপে আসে। আবরাজ কে সাথে নিয়েই বাস স্টপের এন্ট্রি চেক করে। ঢাকা টু চট্টগ্রামের দুটো টিকেট কাঁটা হয়েছিল সোমবার সন্ধ্যার। একই সময়ে আরও আট চল্লিশ জন যাত্রী বাস টিকেট কেটেছে। এন্ট্রি চেইক করে জানা যায় দুজন যাত্রীই ঢাকা টু চট্টগ্রাম গিয়েছে। যদি তেমনি হয়ে থাকে তবে সুজিতের আ*হত দেহ ঢাকায় এলো কি করে!

রাতে ফিরে নি আবরাজ। চোখে ঘুম নেই রুশ্মির। বোনের চিন্তায় নাজেহাল। তার উপর প্রিয় মানুষটি এধার ওধার ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঠিকানাহীন ব্যস্ত শহরে।রুশ্মি চাইলেও সঙ্গ দিতে পারছে না। বাসায় মা কে ফেলে রেখে এক চুল ও যাওয়া সম্ভব না। রুশ্মির শুকিয়ে যাওয়া চোখে ফের জল নামে। হাতের তালুতে মুছে কল করে।

“কোথায় আছো তুমি?”

“সীরাতের সাথে আছি রুশ্মি। কিছু প্রয়োজন?”

“না আসলে মা বলছিল তোমার কথা। ফিরবে না কাল?”

“মনে হচ্ছে পারব না। জানোই তো সুজিতের বাবা খুব রেগে। অবশ্য ওনার জায়গায় আমি হলেও তাই করতাম।”

“রুবি কে কি পাব না আমরা?”

“এমন বলতে নেই। নিশ্চয়ই পাব রুবিকে।”

ফুপিয়ে উঠে রুশ্মি। মেয়েটার স্বভাবে কান্না নামক শব্দটি অস্তিত্বহীন প্রায়। সেই মেয়ে যখন কান্নায় ডুবে যায় তখন বলতে বাকি থাকে না কতখানি যন্ত্রণা যাচ্ছে। আবরাজ সান্ত্বনা দিতে পারল না। সীরাত খাবার নিয়ে এসেছে। আবরাজ কে চুপ থাকতে দেখে বলল “কে?”

“রুশ্মি।”

এখনো কাঁদছে রুশ্মি। নীরব এক গুমোট কান্না। সীরাত শ্বাস ফেলল। রাত প্রায় দুটো বাজে। “রুশ্মি! ঘুমাও নি এখনো?”

“ঘুম আসবে কেমন করে!”

“সুস্থ থাকতে হবে রুশ্মি। তুমি এভাবে ভেঙে পরলে বাকিরা ঠিক থাকবে কি করে।”

উত্তর করে না রুশ্মি। সীরাত আরও বলে “ঘুমানোর ট্রাই কর। আবরাজকে সকালেই পাঠিয়ে দিব।”

রুশ্মি কিছুটা অপ্রস্তুত বোধ করে। কল রাখতেই আবরাজ বলে “কি বললে তুমি?”

“বললাম তোমাকে পাঠিয়ে দিব সকালে।”

“মানে! তুমি কি একা যাবে চট্টগ্রাম?”

“হুম।”

“কিন্তু সীরাত।”

“শোনো, মনের অসুখ করেছে রুশ্মির। তুমি না গেলে সারবে না। আমি পারব সবটা সামাল দিতে।”

চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ