#হারিয়ে_চাইছি_তোমাকে— [২]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
__________________________
-‘ প্রেমে যখন পড়েইছিস তখন তো প্রেম করলে যা করতে হয় সেই সবকিছুই করা দরকার তোর সঙ্গে তাই না বল?’
ঠোঁটের কোনো বাঁকা হাসি রেখে আমার দিকে তাকিয়ে উপরোক্ত বাক্যগুলো নিক্ষেপ করলো আহান ভাইয়া!! আমার চক্ষুদ্বয় উনার বলা বাক্য কর্নদ্বয়ে পৌঁছাতেই কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম! তবুও নিজেকে সংযতো রেখে খানিকটা সাহস জুগিয়ে উনার দিকে অগ্রসর হলাম।
-‘ ফা’জ’লামো পেয়েছেন নাকি আপনি বলেন তো? এসব কি অ’শা’লীন কথাবার্তা বলছেন? দিত্বীয় বার এসব বলবেন না! আর এভাবে তাকাবেন না আমার দিকে।’
আমার কথায় উনি উচ্চস্বরে হেঁসে ওঠলেন যার অর্থ আমার বোধদ্বয় হলো না মস্তিষ্কে! আমিও উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি উনি কি বলে সেটা শোনার জন্য।
-‘ শোন নুড়ি পাথর, আহান তোর মতন মেয়েদের দিকে তাকিয়ে তার অতো মূল্যবান সময় ন’ষ্ট করার মুড বা ইচ্ছে কোনোটাই নেই। আর সবচেয়ে বড়ো কথা তো হলো আমার মিলা থাকতে অন্য মেয়ের দিকে অন্য দৃষ্টিতে তাকানো তো দূর আমি ভাবতেও পারিনা সেটা!’
-‘ মানে? মিলা কে হয় আপনার? যার দিকে তাকালে আর অন্য মেয়ের দিকে তাকাতে ইচ্ছে হয় না!’
-‘ মিলা সেই মেয়ে যাকে আমি ভালোবাসি! মিলা আমার জীবনের প্রেয়সী যাকে দিবশ রজনী মনের মধ্যে লালন করে এসেছি বুঝেছিস এবার? না বুঝলে আরো একটু শুনে নে মিলা কেই আমি বিয়ে করবো!’
আমার কথার শোনার ইচ্ছে হয়তো উনার সত্যিই নেই তাই আমাকে ছাঁদে রেখে চলে গেলো। কিন্তু এদিকে আমার মনের মধ্যে বয়ে চলেছে এক সুপ্ত ঝ’ড়ের আভাস! যার উপলব্ধি কেবল আমিই করতে পারছি। উনাকে ভয় বা উনার থেকে দূরে দূরে থাকলেও মাত্র ক’দিনেই যে আমি তার স্নিগ্ধতার মায়ায় ডুবেছি! যে মায়ার নাম কেবল মাত্র ভালোবাসা নাম দেওয়া যায়! এখন সেই মায়া শুধু নিজের কাছেই রাখতে হবে। কেনো জানি এখন কষ্ট হচ্ছে না বরং বুক চি’ড়ে বেরিয়ে আসলো তাচ্ছিল্যের হাসি।।
তিন ‘দিন পর………………
সকালবেলা ঘুম ভাঙে ফোনের রিংটোনের আওয়াজে। ফোনটা হাতে নিয়ে ঘুমু ঘুমু চোখে দেখতে লাগলাম স্ক্রিনে মুন নামটি ভেসে ওঠেছে আমার বেস্টফ্রেন্ড এর। হয়তো তিন দিন ভার্সিটি কেনো যাইনি সেটা জানার জন্যই তার ফোন। নিজেকে একদম গুটিয়ে নিয়েছি ওই আহান নামক ব্যাক্তিটির থেকে। আজ ক’দিন যাবত শুধু ঘরেই রয়েছি যদি কখনো সখনো ছাঁদেও গেছি কিন্তু ঘর ছেড়ে বাহির হয়নি। বাহির হলেই তো আহান ভাইয়া তার মিলার কাহিনী শোনাবে যা আমার পক্ষে সহনীয় নয়। মা সেদিন বলছিলো আহান ভাইয়া নাকি কোনো একটা জব পেয়েছে! ওনার ভালো সার্টিফিকেটের জন্য নাকি জবটা এত্তো তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে তবে সেটা কিসের জব সেটা আমি শোনার প্রয়াস করিনি। ফোনটি অনবরত বেজেই চলেছে তাই বাধ্য হয়ে ফোনটি রিসিভ করলাম.…….
-‘ কিরে পাঁ’জি মেয়ে! তিন দিন ভার্সিটি আসছিস না কেনো তুই বল তো?? দু’দিন আমার একলা একলা কি করে যে কেটেছে! আজকে যদি না আসিস তো সোজা তোর বাড়ি আসছি।’
-‘ বাড়ি আসতে হবে না। আমিই আসছি।’
-‘ শোন মৃদুলা, আমাদের ভার্সিটিতে পরশু একটা নতুন টিচার জয়েন হয়েছে। কি যে হ্যান্ডসাম!’
-‘ আমি আসছি!’
রেডি হয়ে কিছুক্ষণ পর নিচে নামলাম ডাইনিং টেবিলে খাবার জন্য। তখুনি আহান ভাইয়ার টেবিলটা ফাঁকা দেখতেই মা’কে প্রশ্ন করলাম তিনি কোথায়??
-‘ আহান ভার্সিটিতে গেছে।’
-আমি মৃদু ভাবে মাথা নাড়িয়ে খেতে লাগলাম। ভার্সিটিতে যেতেই মুনের সব কথা শুনতে লাগলাম। পুরো কথা জুড়ে তার একই কথা আমাদের ভার্সিটির নতুন টিচান আহানুল আহম্মেদকে নিয়ে…. মুনের কথার ছেদ ঘটলো বেল বাজার আওয়াজে। তড়িঘড়ি করে ক্লাসের উদ্দেশ্য হাঁটতে লাগলাম ক্লাসে গিয়ে বসলাম। সবার আগে নাকি নতুন টিচারের ক্লাস শুরু হবে তাই বসে রইলাম স্যার আসার অপেক্ষায়…..
নতুন স্যারকে দেখে সবাই হা করেই তাকিয়ে আছে! মুনও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমাকে বলছে
-‘ উফফ কি হ্যান্ডসাম দেখতে না স্যারটা? পুরো রসগোল্লার মতন!’
-‘ রসগোল্লা নারে মুন এই ব্যাটা আমাকে বি’ষ খাওয়াবে!’
স্যার বইয়ের পৃষ্ঠা ওলটাচ্ছে আর এদিকে ক্লাসের প্রায় অর্ধকে মেয়েই উনার দিকে তাকিয়ে আছে! আর আমিতো স্যারকে দেখেই সেই তাকিয়েই আছি আর ভাবছি যার জন্য বাড়ি ছেড়ে ভার্সিটিতে এসেছি একটু শান্তির জন্য সেই অশান্তি একেবারে আমার পিছু পিছু এসে হাজির হলো!
নতুন টিচার আর কেউ নয় স্বয়ং আহান ভাইয়া! এখন বুঝতো পারছি উনাকে সবাই ওনার ডাকনাম মানে আহান বলেই ডাকে তাইতো ওনার সার্টিফিকেটে দেওয়া নাম আহানুল আহম্মেদ এটা মনেই ছিলো না আমার!
এখন নিশ্চয়ই আমাকে দেখতে পেলে আগে আমাকে এসে ধরবে আর নির্ঘাত সবার সামনে অ’প’মান করবে!
আমি বইটা বেশ বড়ো করে মুখের সামনে তুলে ধরেছি যাতে উনি আমাকে দেখতে না পায়।
-‘ হেই স্টুডেন্ট আজকে পিছনের বেঞ্চের থেকে একজনকে কোশ্চেন করবো। উমম এই যে পিছনের তুমি, হ্যাঁ তুমিই দাঁড়াও আর পড়া বলো, ফার্স্টে নিজের নাম দিয়ে ইন্ট্রডিউস করবে দ্যান পড়া বলবে।’
আমি নতজানু হয়ে দকঁড়ালাম, আহান ভাইয়ার দৃষ্টি আমার দিকে। আমি চুপচাপ ভাবে রয়েছি। পড়াও পারি না যার ফলে ল’জ্জা আরো একটু বেশি লাগছে। হঠাৎ মাথাটা একটু উঁচু করতেই সামনে আহান ভাইয়াকে দেখতে পেলাম। উনি বুকে হাত গুঁজে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে তৎক্ষনাৎ আমি আবারো নতজানু হলাম
-‘ হেই স্টু’পিট গার্ল! টিচার কিছু আস্ক করতে হলে আনস্যার দিতে হয় সেটাও কি জানা নেই?’
-‘ মৃদুলা! আমার নাম হচ্ছে মৃদুলা ইসলাম নিরা।’
-‘ ওকে ফাইন! নুড়ি পাথর….
নুড়ি পাথর কথাটি আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললেন যার দরুন আমি ছাড়া অন্য কেউ সেটা শুনতে পেলো না! সেই ছোটোবেলা থেকেই আমার নিরা নামটাকে উনি নুড়ি পাথর বলেন আর আমার মা-ও নুড়ি বলে বলে সেটা আমার ডাকনাম বানিয়ে দিছে… টেবিলে জোরে শব্দের কারনে সেই ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলাম। কর্নকুহুরে পদচারন হলো উনার বিকট শব্দ…
-‘ এবার পড়া বলো… লেট’স স্টার্ট নাউ ফাস্ট!’
-‘ আমি পড়া শিখে আসিনি।’
মাথা নতজানু হয়ে বললাম। পুরো ক্লাস জুড়ে হাসির রোল পড়ে গেলো আমি বুঝতে পারলাম না সবাই তো পড়া শিখে আসে না তাহলে এতো হাসছে কেনো?’
-‘ পড়া শিখে আসো নি কিন্তু এভাবে জিন্স, টপস, ঠোঁটে লিপস্টিক, খোলা চুলে বেশ সেজেগুজে ভার্সিটিতে চলে এসেছো তাই না?’
এবার বেশ অ’প’মা’নবোধ হলো। উনি আমার সাজের দিকে নজর দিচ্ছেন কেনো?
-‘ বেশ করেছি সেজে এসেছি তাতে আপনার কি? মেয়েরা সাজবে না তো কি আপনি সাজবেন? তো সেজে আসুন না আমার মতন করে! তারপর দেখবেন কেমন জো’কা’র লাগে
-‘ হয়াট!’
উনার ধ’ম’কে বুঝতে পারলাম রা’গে’র মাথায় কি বলে ফেলেছি। কিছু বলার আগেই তৎক্ষণাৎ উনার জবাব উনার পুরো ক্লাস আমাকে বাহিরে কা’নে ধরে থাকতে হবে!
বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম ক্লাসের বাহিরে। আর উনি ক্লাস করছেন। আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে ও বেশ দেখতে পেলাম উনার দিকে প্রায় অনেক মেয়েরাই তাকিয়ে আছে! থাকুক তাতে কি? আমি প্রচুর রা’গ নিয়ে বাহিরেই দাঁড়িয়ে রইলাম। উনার ক্লাস শেষে যাবার সময় আমাকে কানে কানে বললেন
-‘ সেদিন বাড়িতে খুব সাহস হয়েছিলো না তোর?? এবার দেখ তোর কি অবস্থা করি আমি।’
আমি চুপচাপ মুনের পাশে গিয়ে বসলাম।
-‘ তুই এভাবে বললি কেনো উনাকে?’
-‘ সাজ নিয়ে বলছিলো রা’গ ওঠেছিলো প্রচুর!’
-‘ তুই জানিস উনি তিন দিন জয়েন করার পর থেকে প্রায় সবাই-ই পড়া শিখে আসে। না হলে উনি প্রচুর ভ’য়া’বহ শা’স্তি তো দেয়ই আবার ল’জ্জাও দেয়!’
-‘ হুম। আমার এখন মুড নেই ক্লাস করার।
তুই বিকেলে পাড়াগুলো দিয়ে দিস।’
যাও এসেছিলাম একটু শান্তিতে ক্লাস করবো বলে তাও হলো না! তাই এক সমান রা’গ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য হাঁটছি ঠিক এমন সময় আমার সামনে এসে দাঁড়ালো সামাদ ভাইয়া!
-‘ মৃদুলা চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিই। বেশ গল্পও করা যাবে তোমার সঙ্গে কতোদিন কথা হয় না।’
-‘ আপনার কথা আপনি রাখুন!’
রা’গে’র চোটে সামাদকেও ভুলভাল বলে বাসায় পৌঁছালাম। না হলে উনি আজকে কানের পো’কা নড়িয়ে দিতেন! দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেই আগে শুনতে পেলাম
-‘ হ্যাঁ আহান জব করছে এখন আর মৃদুলারও বিয়ের বয়স তো হয়েছে এবার ওদের চারহাত এক করে দেবার সময় এসেছে!’
প্রথমে ভার্সিটি গিয়ে আহান ভাইয়ার অ’প’মা’ন তারপর তার শা’স্তি তারপর সামাদ আর এখন সেই আহানের সঙ্গে বিয়ের কথা পাকা করছে আমার বাড়ির লোক! এটা কিছুতেই হতে পারে না! উনি অন্য একজনকে ভালোবাসে তারপরে যে লোকটা আমাকে সবসময় হে’ন’স্তা করে তার সঙ্গে সারাজীবন থাকা উঁহু! পসিবল নয় এবার মুখ খুলতেই হবে। কিছু শব্দের কারনে পিছু ঘুরে দেখি এই আহান ব’জ্জা’ত আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে! না বাড়িতে শান্তি না ভার্সিটিতে শান্তি এখন আমার পিছে য’মের মতন দাঁড়িয়ে আছে! থাকুক তবুও আমি এই বিয়ের একটা হেস্তনেস্ত করবোই! যা একটু মায়া লেগেছিলো তাও কেটে গেছে উনার অ’প’মানে!
-‘ নুড়ি পাথর যা বলবি ভেবে চিন্তে বলিস কিন্তু দেখিস রা’গের বশে না উল্টোপাল্টা কিছু করিস।’
সত্যিইতো উনার জন্য আমার মনে তো অনুভুতি আছে আবার উনি যে আমাকে পদে পদে হে’নস্তা করে সেগুলোর কি করবো?
#চলবে