হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব-০৩

0
351

#হারিয়ে_চাইছি_তোমাকে—[৩]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
_______________________

-‘ ইশশ! কি যে বললেন না আপনি আহান ভাইয়া? এরকম বিষয় নিয়ে আমি কি রা’গ করে কথা বলতে পারি উনাদের সঙ্গে?’

-‘ মানে কি বলছিস!’

-‘ মানে আমি এখন প্রচুর লজ্জা নিয়ে ওদের সামনে দিয়ে যাবো এমন ভাব বুঝছেন? ‘

-‘ এক থা’প্প’ড়ে দাত যতোগুলো আছে সবগুলো ফেলে দিবো বুঝতে পেরেছিস নুড়ি পাথর! তোর সাহস কি করে হয় আমাকে বিয়ে করার কথা ভাবার? ভার্সিটিতে যে শা’স্তি দিয়েছিলাম তা ভুলে গেছিস নিশ্চয়ই? তার জন্য এসব বলছিস? থা’প্প’ড় খেলে সব মনে পড়ে যাবে। ‘

বড়ো বড়ো পদচারন ফেলে তিন স্থান ত্যাগ করলেন! আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে শুনে গেলাম উনার বলা শেষ বাক্য গুলো! তিনি যখন আমার পেছন ফিরে ডাক দিয়েছিলেন তখন ভেবেছিলাম হয়তো তার মনে আমার জন্য কোনো অনুভুতির জন্ম নিয়েছিলো কিন্তু পরক্ষণেই আমার সেই ভাবনা এক মুহুর্তে ধূলিসাৎ করে দিয়ে উনি হনহনিয়ে চলে গেলেন। আমিও নিজের রুমে গেলাম। রুমে গিয়েই নিজের আনমনে ভাবতে লাগলাম আসলেই কি উনি আমাকে বরাবরের মতনই অপছন্দ করেন শুধু? একটুও অন্য চোখে দেখে না!
হয়তো হবে কারন তার তো মিলা আছে।

সারাদিন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পার করলাম সেদিন রাত্রেবেলা কেবল একটু পড়েছি তারপর আবার ঘুম।
সকালবেলা ভার্সটি সেড়ে দুপুরে বাসায় আসলাম। আজকে আহান ভাইয়া আমাকে কিছু করতে পারেনি আজকে আমি ধৈর্য্য ধরে উনার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি!
বাসায় আসতেই আবারো দেখতে পেলাম কালকের মতন সবাই ড্রয়িং রুমে বসে বৈঠকখানা জুড়েছে….

-‘ মৃদুলা তুই একটু তোর মায়ের সঙ্গে রুমে যা তো। তোর মা তোকে রেডি করে দিলে আসিস। ‘

-‘ কিন্তু আব্বু রেডি করবে কেনো? ‘

-‘ তোকে যা বলেছি সেটা কর!’

আব্বুর কথার পৃষ্ঠে কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ ভাবে চলে গেলাম মায়ের সঙ্গে।

-‘ মা হচ্ছে টা কি এসব!’

-‘ ওখানে গেলেই জানতে পারবি!’

অনেকখানি প্রয়াস করেও মায়র মুখ থেকে একটা বাক্যও বের করতে পারলাম না! নিরাশ হয়ে ব্যথিত মন নিয়ে মায়ের সঙ্গো ড্রয়িং রুমের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। মা আমাকে সোফায় বসালেন! তৎক্ষনাৎ আমার দৃষ্টি গিয়ে আবদ্ধ হলো আমার পাশে বসো থাকা মানবটির দিকে….. আহানের সর্বঙ্গজুড়ে রয়েছে একটি সুন্দর শেরওয়ানী যা সাধারনত বিয়েতে পরিধান করা হয়। উনি কেমন নিথর দৃষ্টি মেলে আমার দিকে এক পলক তাকালেন আমার বোধদ্বয় হলো না সেই দৃষ্টির মানে। হঠাৎ আব্বু আমাকে একটা পেপারে সাইন করতে বললেন….

-‘ চট জলদি এই কাগজগুলোতে সই করে দাও তো মৃদুলা!’

-‘ আব্বু এগুলো কিসের কাগজ?’

-‘ এটা বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার! আহান অনেক আগেই সই করে দিয়েছে এবার তোমার পালা চুপচাপ সইগুলো করে দাও তো দেখি!’

আব্বুর কথা শুনে মাথায় এখনি চ’ক্কর কাটছে! আজকে আমার বিয়ে অথচ আমিই কিনা জানি না কতো সুন্দর না? তার চেয়ে বড়ো কথা আহান ভাইয়া কি করে এই বিয়েতে রাজি হলো যেখানে উনি মিলাকে ভালোবাসেন? মাথার উপর সবটা গড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমি বুঝতেও পারছি না! এইজন্যই আমাকে লাল শাড়ি আর আহানকে শেরওয়ানী পড়ানো হয়েছে…

-‘ মৃদুলা মা তুই সইটা করে ফেল বুঝলি তো? তারপরে তো আমাদের বেরোতে হবে কালকেই অনেক কাজ আছে বুঝলি তো?’

-‘ কিন্তু চাচ্চু শোনো আমার কথা….

-‘ বুঝতে পেরেছি তুই ভ’য় পাচ্ছিস তো। ওসবের কিছু না আমি আর তোর চাচী মিলে তোকে একদম মেয়ের মতন করে রাখবো।’

কাউকে বোঝাতে পারলাম না আমি। অতঃপর সইগুলো করে দিলাম রেজিস্ট্রি পেপারে আর আমি হয়ে গেলাম ওই আহান ভাইয়ার বউ! একদিকে তো আমার বেশ খুশিই লাগছে কারন আমি তো উনাকে চাইতাম নিজের করে সে হিসাবে আনন্দ হচ্ছে কিন্তু আমি তো উনাকে এভাবে চাইনি কখনো। উনি তো অন্য কারোর! অন্য কাউকে ভালোবাসে উনার মনে বিচরন করছে অন্য কারোর পদচাারন জানিনা সেই মনে আমার স্থান হবে কিনা? তবে বিয়েটা যেহেতু হয়েছে আমার দিক থেকে আমি সবটা মানিয়ে নিবো!

-‘ আলহামদুলিল্লাহ এবার সকলে মিষ্টি মুখ করুন। ‘

-‘ হ্যাঁ মিষ্টি মুখ করো সবাই। ‘

-‘ মৃদুলা শোন, আজ থেকে তুই আইনত আহানের বউ! বিয়েটা আমরা ধুমধাম করেই দিতাম কিন্তু তোর চাচ্চুরা কালকেই চলে যাবে রে। আর চারিদিক থেকে তোর এতো সমন্ধ আসছে উনারা ভেবেছেন আমি তোকে যদি অন্য কারোর হাতে তুলে দিই সেই ভ’য়েই আজকে রেজিস্ট্রি ম্যারেজটা করে রাখলো। তবে চিন্তা করিস না মাস দু একের ভেতর আমরা পাড়া পড়শী সবাইকে জানিয়ে ধুমধাম করে তোদের বিয়ে দিবোনে…..

আমি কিছু না বলে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলাম!তবে উনি কেনো এই বিয়েটা চুপচাপ করে নিলেন সেটা নিয়ে সকালে কথা বলতে হবে। উনি তো অন্য একজনকে ভালোবাসে তাহলে? কথা তো কালকেই বলতে হবে এটা নিয়ে! এইসব বিয়ের ঝা’মে’লা পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে! ক্ষিদে সহ্য করার ক্ষমতা আমার একদমই নেই তাই টেবিল থেকে খাবার নিয়ে একদম রুমে চলে গেলাম! পুরো বিয়ে বাড়িরই খাবার আয়োজন হয়েছে কয়েকজন ব্যাক্তিও এসেছে আমাদের বাড়িতে…..
আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আগে খেতে লাগলাম যা হবার তো হয়েই গেছে এবার আমি আগে খেয়ে নিই তারপর বাকি সব দেখা যাবে…..

-‘ এমন রা’ক্ষ’সীর মতন খেয়ে যাচ্ছিস ক’বেলা খাসি নি তুই?’

খাওয়া থেমে গেলো উনার কথায়! অসম্ভব বিষম খেলাম উনার কথা শুনে। কাশি থামছেই না! হাতড়াতে লাগলাম পানির গ্লাস কিন্তু পানি তো আনিইনি। তৎক্ষনাৎ মুখের সামনে পানির গ্লাস ধরা দেখতে পেয়ে এক ঢোকে সবটুকু পানি খেয়ে নিলাম!

-‘ পানিটাও কি আস্তে ধীরে খেতে পারিস না তুই?’

-‘ এই আপনাকে কে বলেছে আমার রুমে আসতে? হ্যাঁ কে বলেছে? বেরিয়ে যান এক্ষুনি বলছি। সেদিন তো খুব বড়ো মুখ করে বলেছিলেন আমি মিলাকে ভালোভাসি তাহলে কোথায় গেলো আপনার সেই ভালোবাসা! ‘

-‘ আমার ভালোবাসা আমারই আছে! তোর মো’টা মা’থায় ঢুকবে না!’

দরজাখানি ধরাম করে বন্ধ করে দিয়ে চলে গেলেন। এদিকে আমি নিশ্চিন্ত মনে খেয়ে দেয়ে একটা ঘুম দিলাম।
ঘুমের ভেতর অনুভব করলাম আমার গালে কারোর হাতের স্পর্শ! তৎক্ষনাৎ চোখ খুলেই দেখতে পেলাম আহান ভাইয়া একটা পাতলা স্যান্ডো গেঞ্জি আর পড়ে আমার গালে ধরছে!

-‘ আপনার উদ্দেশ্য টা কি বলুন তো? এভাবে আমার কাছে এসেছেন কেনো? লজ্জা করছে না আপনার? আর আপনি আমার রুমেই বা কেনো।’

-‘ তোর সঙ্গে বা’সর করতে আসিনি ই’ডি’য়েট!’

-‘ তাহলে কি করতে এসেছেন?’

-‘ আমরা তো কালকে চলে যাবো তাই আমার বাবার মহান আবদার আজকে রাতটা তোর সঙ্গে থাকতে হবে বুঝেছিস!’

-‘ হ্যাঁ বুঝেঝি এবার থাকুন না আপনি কি হয়েছে? ওই যে টেবিল আছে ওখানে বসুন আমাকে ঘুমাতে দিন।’

আমার কথা শুনে উনি বেশ রে’গে গেলেন! আমার দিকে তে’ড়ে আসলেন…..

-‘ থা’প্প’ড় কি বিয়ের প্রথম রাত্রেও খেতে চাস নাকি? আমার কোনো সমস্যা নেই তাতে।’

-‘ ঠিকআছে ঠিকআছে আপনি শুয়ে পড়ুন খাটে!’

এই বলে আমি উঠে দাঁড়ালাম আর উনি খাটের মধখানে বেশ বড়ো করে কোলবালিশটা টেনে দিলেন।

-‘ নুড়ি পাথর যদিরে ভুলেও এই কোলবালিশেন বর্ডার পার করেছিস বা একটুও কাছে এসেছিস তাহলে দেখিস কি হয় তোর!’

উনি ঘুমিয়ে পড়লেন। কিন্তু আমার ঘুম আসছে না। আমি ওয়াশরুমে যেয়েও গেলাম না কারন লাইটটা খারাপ হয়ে গেছে ওয়াশরুমের! বাধ্য হয়ে বারান্দায় শাড়ি চেঞ্জ করতে লাগলাম। শাড়ি খুলে একটা টপস আর প্লাজু পড়েছি ওড়নাটা নেবার জন্য যেই না পিছু ঘুরেছি ওমনি আহান ভাইয়া আমার দিকে তার অ’গ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে!

-‘ বিয়ে করলাম আমি। বউ আমার। আমি এখনো অব্দি কিছু করলাম না। আর তুই কিনা সবকিছু লোকজনদের দেখিয়ে বেড়াচ্ছিস! ‘

-‘ কি সব বা”জে বলছেন? মা’থা আ’উট হয়ে গেছে নাকি?’

-‘ নেহাত আজকে বিয়ের প্রথম রাত নতুবা দেখতি থা’প্প’ড় কাকে বলে! ওই দেখ পাশের বিল্ডিংয়ে আলো জ্বলছে আর এই বারান্দায় আলো জ্বলছে! পাশের বিল্ডিংয়ে যে কতোগুলো ছেলে থাকে সেটা তুই জানিস না তুই বারান্দায় এসেছিস চেঞ্জ করতে!’

-‘ তো কি করবো? ওয়াশরুমের লাইট খারাপ হয়ে গেছে! আর রুমে তো আপনি আমি আপনার সামনে ড্রেস চেঞ্জ করবো নাকি?’

-‘ আহারে! বউ আমার! বউয়ের সবকিছু আমার আর আমি দেখতে পেলেই দোষ তাই না?’

-‘ আপনি ঘুমাতে যান!’

-‘ না! তোর আমার সামনে ড্রেস চেঞ্জ করতে অসুবিধা যেখানে আজকে আমাদের বিয়ে হয়েছে! আর লজ্জাবতী এখন যে এই টপস পড়েছেন ওড়না বাদে এখন কিছু না? ‘

সঙ্গে সঙ্গে তাকালাম নিজের দিকে সত্যিই তো! ইশ লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে! ওড়না হাতড়াতে লাগলাম জলদি করে

-‘ হয়েছে আর ওরনা লাগবে না! ঘুমাতে চল!’

উনি শুয়ে পড়লেন আর আমি শুয়ে শুয়ে উনার গু’ষ্টি উদ্ধার করছি! খুব রাগ হচ্ছে কেনো জানি ওভাবে না বললেও তো পারতেন নাকি? হঠাৎই নিজের উপর কারো শরীর অনুভব করলাম! চোখ খুলে দেখি আহান ভাইয়া! আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আমার ঠোঁট দু’টো নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলেন!
আমি অবাক হয়ে আছি উনার কর্মকান্ডে! কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে উনি নিজের জায়গায় চলে গেলেন শুতে!
আর এদিকে আমি হতভম্ব!

-‘ আমার নামে আর একটা কিছু বলেছিস তো দেখিস! এখন শুধু ট্রেলার দেখিয়েছি তারপরে সোজা সিনেমা দেখাবো! কি মিন করেছি বুঝতে পারলে চুপচাপ ঘুমা। আর যদি সিনেমা দেখতে চাস তো আমি আসছি!’

-‘ না, না, না, কোনো সিনেমা দেখাতে হবে না আমি ঘুমাচ্ছি!’

এই লোক দেখি বিয়ের প্রথম রাতেই কিসব করছে আর না জানি বাকি দিন কি করে আমার সঙ্গে! তবে মসের মধ্যে ভালো লাগাও কাজ করছে হাজার হউক নিজের স্বামী ভালোবাসার মানুষের থেকে প্রথম স্পর্শ। মনে হচ্ছে আসিও গিয়ে উনাকে একটু ট্রেলার দেখাই কিন্তু নিজেকে বুঝালাম নুড়ি,আপাততো সিনেমা দেখতে না চাইলে ঘুমিয়ে পড়! যা ট্রেলার দেখালো সেটাই যথেষ্ট!

#চলবে