হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব-০১

0
630

#হারিয়ে_চাইছি_তোমাকে
#লেখিকাঃমুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
#পর্ব ১

যাকে য*মের মতন ভয় যাকে দেখলেই আমার কাঁপা-কাঁপি অবস্থা শুরু হয়ে যায় শেষমেষ কিনা সেই আহান ভাইয়াই আমার স্বামী হবে এটা ভাবতেই মনে হচ্ছে আমি শেষ! যেই চাচাতো ভাইয়ের হাত থেকে বাঁচতে আমি নিজের বাড়ি থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াই আজকে সেই চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গেই আমার বিয়ের কথা বার্তা ঠিক হচ্ছে শুনতে পেলাম! কলেজ থেকে ফিরেই ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই কথাগুলো শুনতে পেলাম। চাচ্চু আমাকে দেখেনি বিধায় আমি চুপচাপ নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলাম। আমাকে বাড়িতে আসতে দেখে উনারাও আলোচনা বন্ধ করে অন্য কথায় মনোনিবেশ করলো….

রুমে ঢুকেই আগে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে হাঁ’পা’তে লাগলাম! একে-তো কলেজ থেকে এসেছি স্যারের ব*কা খেয়ে মুডটাই খা’রা’প হয়ে আছে তার উপর আবার চাচ্চুদের এই আলোচনা! কিন্তু এটা যদি সত্যি হয় তো আমি নিশ্চিত ওই আহান ভাইয়ার থা’প্প’ড় খেতে খেতেই ম’রে যাবো কোনো একদিন! আহান ভাইয়া বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশে এসেছেন। উনাদের নিজেদের বাড়ি আছে কিন্তু উনারা আমাদের বাসায় এসে ওঠেছেন এক সপ্তাহ আগে কারন আমাদের সঙ্গে দাদি থাকে বলে। আসলে আমি আব্বু আম্মু, আমার ছোটো বোন আমরা চারজনে একসঙ্গে থাকি বলে দাদি আমাদের সঙ্গে থাকে….
এই এক সপ্তাহের ভেতরই আহান ভাইয়া বাড়িতে এসে আমার জীবনটা একেবাড়ে তে’জ’পা’তা করে দিয়েছে এরূপ অবস্থা! আমি উনার সামনে গেলেও বকবে, যদি বাহিরে ঘুরতে যাই তাও বকবে, আবার কোনো সময়তো বেহুদাই থা’প্প’ড়’ও মারে আমাকে! মাঝে মাঝে ভেবে কূল পাই না আমার গালটা কি উনি সরকারী গাল পেয়েছে নাকি যে যখন খুশি তখুনি মা’র’বে?
কিন্তু মনের প্রশ্ন মনেই রেখে দিই কাউকে না বলে কারন আর তো মাত্র ক’টা দিন তারপরেই তো তারা চলে যাবে। এ-কটা থাকুক আমি আর অ’শা’ন্তি বাড়াতে চাই না আর তাই চুপ করে ওনার সব থা’প্প’ড় সাদরে গ্রহন করি!

কিন্তু আপাততো এসব কথা বাদ দিয়ে মাথায় একটাই কথা ঘুরছে এই বিয়ে তো দূরের থাক এই বিয়েটার আলোচনাও হতে দেওয়া যাবে কোনোখানে আর বিয়েটা যেহেতু আহান ভাইয়ার সঙ্গে হবে তাই উনার সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে সেই উদ্দেশ্যই গেছিলাম উনার রুমে। রুমে গিয়ে দেখি উনি নেই ভাবলাম একটু অপেক্ষা করি। রুমটা খালিই পড়ে থাকতো তবে আমি সবসময়ই গুছিয়ে রাখতাম কিন্তু নজর করে দেখলাম পুরো রুমে যা তা অবস্থা করে রেখেছেন তিনি। হঠাৎই আয়নার দিকে চোখ পড়তেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম ওখানে আহান ভাইয়ার একটা ছবি রাখা আছে ছবিটাতে উনাকে কি পরিমান যে ক্যা’ব’লা দেখাচ্ছিলো যা বলার বাহিরে! তখুনি পিছন থেকে ডাক…..

-‘ কি ভেবেছিস তুই? তোর শ’রীর, ভেজা চুল, এসব রূপ দেখিয়ে আমাকে ভো’লা’বি? সেই জন্যই আমার রুমে এসে ওড়না ছাড়া আয়নার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছিস? মাথার তারগুলো কি ছিড়ে গেছে? নাকি পা’গ’ল টাগল হয়েছিস!’

-‘আরে আহান ভাই আমার কথা তো শুনুন আপনি ভূল ভাবছেন আমাকে। থাক ভূল তো আমারি যে আপনাকে বোঝাচ্ছি! আপনাকে কি বলছি আসলে যে যেমন সে অন্যকে ভাবেও সে-রকম!’

আর কিছু বলতে পারলাম না ওমনি থা’প্প’ড় খেয়ে খাটের মাঝখানে পড়ে রয়েছি! এই থা’প্প’ড়’টি আর কেউ নয় আহান ভাইই মেরেছে আমাকে। আমি প্রশ্নবিদ্ধ চেহারায় উনার দিকে তাকিয়ে রয়েছি।

-‘ সবে তো এক থা’প্প’ড় দিয়ে খাটের উপর ফেলেছি যদি আর একটাও বেশি কথা বলেছিস তো এবার ছোটো চাচার সামনে গিয়ে তোর এই কী’র্তি কলাপ ফাঁস করতে বিন্দু পরিমানও সময় নেবো না বুঝেছিস?’

আমি লজ্জায় অ’প’মা’নে বের হয়ে গেলাম উনার রুম থেকে যাবার সময় আহান ভাইয়ার বি’রক্তিকর দৃষ্টি আমার চোখ এড়ালো না….

💞💞💞

দুপুরবেলা সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে ভাত খাচ্ছে। আমাকে ডাক দেওয়া হয়েছে আমি যাইনি কারন গেলেই ওই আহানের মুখ দেখতে হবে যে!
মন খা’রা’প করেই রুমে বসে ছিলাম। মা খাবার দিয়েছিলো কিন্তু খেতেই ইচ্ছে হচ্ছিলো না। আমার রুমের পাশ কেটে আহান ভাইয়া রুমে যায় হঠাৎই সে দরজায় এসে দাঁড়ালো।

-‘ নুড়ি শোন, পাঁচ মিনিটের ভেতর আমার রুমে আসবি কোনো কথা না বলে বুঝেছিস?’

উনার কথা আমার কর্নকুহুরে প্রবেশ করার আগেই উনার হাতে থাকা প্লেটে চোখ গেলো। প্লেটটি ঢাকা দেওয়া রয়েছে কৌতুহল বশত উনার পিছু পিছু গেলাম উনার রুমে। উনার রুমে যেতেই উনি দরজা বন্ধ করে দিলেন! আমি ভ’য়ে দরজার দিকে আসতেই উনি আমার হাত চেঁ’পে ধরলেন! উনার এহেনো কান্ডে আমি আরো ভ”য় পেয়ে গেলাম।

-‘ দুপুরে খেতে যাসনি কেনো নিচে?’

-‘ সেটা আমার ব্যাপার! আপনাকে দেখতে হবে না।’

-‘ তো নিচে যাস নি। চাচি খাবার দিয়েছে সেটা খেলি না কেনো?’

-‘ আমার খেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না তাই খাইনি। তাতে আপনার এতো সমস্যা কোথা থেকে আসছে বলুন তো? চলে যান আপনি রুম থেকে।’

-‘ খুব কথা হয়েছে না তোর? তোর এই কথা কি করে বন্ধ করতে হয় সেটাও আমি ভালো করেই জানি বুঝেছিস?’

আমি কিছু বলবো তার আগেই আহান ভাইয়া আমাকে জো’র করে চে’পে ধরে ভাত মুখের ভেতর পুরে দিলো! ভাত যতোটা না দিয়েছে মুখের ভেতর তার চেয়ে দ্বিগুন পরিমান ভাত আমার গালে লেপ্টে রয়েছে!….

-‘ খুব কথা বলছিলিস না? নে এইবার বেশি করে কথা বল নুড়ি পাথর!’

আমি আর কিছু বলার অবকাশ পেলাম না উনি চলে গেলেন দরজা ধারাম করে বন্ধ করে! আমি ফ্রেশ হয়ে খাটে এসে বসলাম কিছুক্ষণ ফোন চালিয়ে বাহিরে গেলাম। বাহিরে যেতেই আমার বোন ইতুর দেখা পেলাম। ইতুর কাছে গেলেই ও এখন বায়না ধরবে ওর সঙ্গে পুতুল খেলতে মেয়েটা এইটে পড়ে তবুও তার পুতুল খেলার বদঅভ্যেস গেলো না! আর সে একলা নয় তার সঙ্গে আমাকেও খেলতে হবে তাই ও আমাকে দেখার আগেই আমি ছাঁদে ওঠলাম।
ছাঁদে ওঠতেই এক রাশ দমকা হাওয়া আমাকে ছুঁয়ে দিয়ে গেলো পরম আবেশে। হঠাৎই ছাঁদের আরেকদিকে নজর গেলো সেখানে আহান ভাইয়ার দেখা পেলাম। তিনি পরম সুখে সুখটান দিয়ে যাচ্ছে! মানে যাকে বাংলা ভাষায় বলে সি’গা’রে’ট খাওয়া! ছিহঃ এই ব্যাটা কিনা আমার জামাই হবে? যে সি’গা’রে’ট খায়!
ভাবতেই মনে হচ্ছে এখুনি উনার সি’গা’রে’টটি ফেলে দিই….

ছাঁদ থেকে চলে যাচ্ছিলাম ঠিক তখুনি দুপুরের ঘটনা মনে পড়তেই মাথায় চড়া দিয়ে ওঠলো দু’ষ্টু বুদ্ধি! সঙ্গে সঙ্গে ফোন বের করে ভিডিও করে নিলাম উনার সুখটান দেবার দৃশ্য! মুখে চওড়া হলো তৃপ্তির হাসি। মনের সুখে ছাঁদ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম ঠিক তখুনি শুনতে পেলাম উনি কারো সঙ্গে কথা বলছে। পা টিপে টিপে কোতুহল মেটাতে উনার পিছু গিয়ে দাঁড়ালাম।

-‘ আরে বে’বি কুল ডাউন! তুমি এতো হা’ই’পা’র হচ্ছো কেনো বলোতো? আর ক’টা দিন তারপরেই তো আমি এক্কিবারে তোমার কাছে চলি আসবো তাই না বলো? এখন এতো রে’গে যেও না।’

আমি স্পষ্ট করে উনার কথা গুলো শুনতে পেলাম। তার কথা শুনে বোঝার বাকি রইলো না উনি উনার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে কথা বলছে! উনার গার্লফ্রেন্ড আছে সেটা ভাবতেই কেমন জানি খা’রা’প লাগা কাজ করলো বুকের ভেতর! কেনো জানি আপনা আপনি চোখ থেকে নোনা জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো! মনের ভেতর অন্যরকম অনুভূতির সম্মুখীন হচ্ছি যেনো উনার গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে!
হঠাৎই উনি আমার দিকে ফিরে তাকালেন আমাকে কাঁদতে দেখে উনি হাসতে লাগলো.……

-‘ কিরে? কাঁদছিস কেনো এভাবে আমার পিছু দাঁড়িয়ে? হা করে আমাকে দেখছিস যে প্রেমে টেমে পড়লি নাকি আমার?’

-‘ হ্যাঁ তাই তো মনে হচ্ছে!’

আমার মুখ থেকে অটোমেটিক বেরিয়ে আসলো! সঙ্গে সঙ্গে উনি আমার দিকে কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে।

-‘ আপনি কাছে আসছেন কেনো? দূরে যান!’
উনার ঠোঁটে বাঁকা হাসি আমি বুঝতে পারলাম না এর মানে! গার্লফ্রেন্ড থাকতে আমার কাছে আসছে কেনো?

চলবে।