হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব-০৪

0
328

#হারিয়ে_চাইছি_তোমাকে—[৪]
#নিহা (মুনিয়া)
_______________________

সকালবেলা ঘুম ভাঙতেই দেখতে পেলাম আহান ভাইয়া কি সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে! কতোটা সৌন্দর্য ফুটে ওঠেছে উনার পুরো মুখশ্রী জুড়ে! এখন কতোটা শান্ত শিষ্ট আর মায়াবী লাগছে উনাকে! আমি খাট থেকে নেমে নামাজটুকু পড়ে নিলাম। নামাজ পড়ে খাটে বসতেই আহান ভাইয়া আমার হাত ধরে ওঠলেন!

-‘ নামাজ পড়া শেষ তো এবার চুপচাপ শুয়ে পড়!’

-‘ আপনি পড়বেন না নামাজ?’

-‘ তোর কি আমাকে কু’ম্ভ’কর্ণ মনে হয় তোর মতন? আমি আরো এক ঘন্টা আগেই নামাজ পড়া শেষ করে আবার শুয়েছি অথচ তুই টেরই পাসনি!’

-‘ তো এবার আপনি ঘুমান!’

-‘ কালকের সিনেমার শ্যুট কিন্তু এখনো করতে পারি নুড়ি পাথর! সিনেমা দেখতে চাইলে বসে থাক আমি ওঠছি!’

-‘ একদম না! আমি শুয়ে পড়ছি!’

আমার চোখ খুললো যখন ঘড়ির কাটায় সাতটা বাজলো! একটা থ্রিপিস পড়ে মাথায় ঘোমটা খানি টেনে তড়িঘড়ি করে নিচে নামতেই দেখতে পেলাম চাচ্চুরা রেডি হয়ে নিচে নামছে! আমাকে দেখতে পেয়ে দু’জনই মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। মায়ের ইশারায় সালাম করলাম তাদের!

-‘ মৃদুলা মা আমরা চলে যাচ্ছি বুঝলি? আহান এখানে থাকবে। তারপরেই তোদের দু’জনের ধুমধাম করে বিয়ে হবে। আমার ছেলেটাকে দেখে রাখিস একটু। ও নিজেও যেতে চেয়েছিলো কিন্তু আমরাই বললাম তোরা দু’জনে যেভাবে টোনা টুনির মতন করিস আহান বরং এখানে ক’দিন থাকুক! তোর সঙ্গে সম্পর্কটাও মানিয়ে নিয়ে মসৃন করে তুলবে আর আহানের দাদিমার কাছেও থাকতে পারবে।’

আমি বিনিময়ে মাথা দুলালাম। চাচ্চু আর চাচীমা চলে গেলেন! আমি তাদের এগিয়ে দিলাম রোড পর্যন্ত আমার সঙ্গে আহান ভাইয়াও ছিলো।

-‘ চলুন না একটু ঘুরে আসি সকাল সকাল! ‘

-‘ সা’হ’স তো তোর খুব বেড়েছে দেখছি নুড়ি পাথর! চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে পড়া রেডি কর একটু পর ভার্সিটি যেতে হবে।’

-আমি কথা না বাড়িয়ে রুমে চলে গেলাম! আমি ভুলে যাই বোধহয় মাঝে মধ্যে উনার মনে অন্য কারোর বিচরন আছে যেখানে আমার স্থান বিন্দুপরিমানও নেই! একরাশ মন খা’রাপ নিয়ে রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য রেডি হলাম। হঠাৎই আমার রুমে আহান ভাইয়া আসলেন…….

-‘ এখন থেকে এসব টপস জিন্স পড়তে হবে না তোকে তুই হয় থ্রিপিস পড়বি না হয় বোরখা পড়বি! নাউ চয়েজ ইট’স ইউর নুড়ি পাথর!’

আমার ত’র্ক করতে ভালো লাগলো না বিধায় চুপচাপ ভাবে থ্রিপ্রিস পড়ে রেডি হয়ে নিলাম। নিচে যেতেই দাদিমা চে’পে ধরলেন তার নাতির সঙ্গে একসঙ্গে ভার্সিটিতে যেতে। কালকে জানাজানি হয়ে গেছে আহান আমার ভার্সিটিতেই জয়েন হয়েছে। আমি দাদিমার কথায় চুপচাপ শুনে যাচ্ছি! একরাশ রা’গ পু’ষে রয়েছে মনের ভেতর আহানকে নিয়ে কি এমন হতো সকালবেলা একটু হাঁটতে গেলে? এখন প্রায়ই উনার প্রতি আমার ভ’য়টা কেটে যাচ্ছে তাই অবচেতন মন একটু আব্দার করেছিলো উনার কাছে উনি সেটা রাখলেন না তাই উনার প্রতি রা’গের মাত্রাটা অতি পরিমানে বেড়েই যাচ্ছে!
কিন্তু পরক্ষণেই যখন মনে পড়ে উনি অন্য কারোর প্রতি আসক্ত তখন রা’গের বদলে একরাশ খা’রা’প লাগা কাজ করে মনের ভেতর। আমি বসে আছি রেডি হয়ে সিড়ি বেয়ে আহান নামছে পড়নে সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট, চোখে কালো রঙের সানগ্লাস আর হাতে একটা ওয়াচ প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে রেখেছে অতি সন্তপর্নে! দেখতে বেশ লাগছে উনাকে কোনো হিরোর থেকে যেনো কম নন তিনি। আমার দৃষ্টি গিয়ে আবদ্ধ হলো উনার দিকে! কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ধ্যান ভাঙলো হাতের তুড়িতে! উনাকে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে তু’ড়ি বাজাতে ল’জ্জা পেলাম বেশ করে….

-‘ আমি জানি আমি সুন্দর তাই বলে এতো চেয়ে থাকতে হবে না! নিজের বউ-ই যদি ন’জর লাগিয়ে দেয় আর বাকি মেয়েরা কি করবে?’

উনার বাক্যগুলো আমার কানে শ্রবন করতেই মুহুর্তের মধ্যে আরো একরাশ ল’জ্জা এসে ভীড় করলো! কিন্তু ভুলে গেলে তো চলবে না আমি উনার উপর রে’গে আছি!

-‘ আহু দাদুভাই তুই মধু কে নিয়ে ভার্সিটিতে নিয়ে যা!’

-‘ দাদি আমি মৃদুলা মধু বলবে না আর!

-‘ ওতো কঠিন নাম ভালো লাগে না বাপু তুই আমার মধু-ই!’

ছোটোকাল থেকে দাদি আমার নামটাকে পাল্টে ফেলে মৃদুলার জায়গায় মধু বলে ডাকে শর্টফ্রমে আমি বারন করা সত্বেও আর আহানকে আহু!

-‘ চল দেরি হয়ে যাচ্ছে! ‘

আহান ভাইয়ার কথায় বাড়ি থেকে বেরোলাম। ভার্সিটিতে যাওয়ার মাঝপথেই উনি মোটরসাইকেল থেকে আমাকে নামতে বললেন। আমি একরাশ আগ্রহ নিয়ে আছি উনি এমনটা কেনো করলো তা জানার জন্য!

-‘ শোন নুড়ি পাথর, আমি চাই না তোর আর আমার বিবাহিত সম্পর্ক টা কেউ জানুক বুঝলি? এতে ভার্সিটিতে তোর পড়ালেখা এবং আমার ক্যারিয়ার দু’টোই দা’গ পড়তে পারে! লোকে বলবে তুই আমার বউ হস বলে তোকে মার্কস বেশি দিই বা তোকে প্যাম্পার করি তাই এসব থেকে নিজেকে দূরে রাখতেই এই সিদ্ধান্ত বুঝলি তো?’

-‘ তো সোজা সাপ্টা বলে দিন এখন কি করতে চাইছেন?’

-‘ তুই চলে যা! ‘

-‘ মানে?’

-‘ মানে এখান থেকে ভার্সিটি দশ মিনিটের পথ তুই রিকশা নিয়ে চলে যা! লোকে আমাদের এক সঙ্গে দেখে ফেলবে!’

ব্যস উনি চলে গেলেন উনার মতন করে…..
আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। খুব কষ্ট হচ্ছে বুকের ভেতরে! উনি আমাকে ভালো নাই বাসেন কিন্তু আমার মনের এক কোনে হলেও তো উনার বিচরন করে! এতোই সমস্যা উনার আমাকে বউ বলে পরিচয় দিতে! অবশ্য যে কিছুদিন আগে আমাকে নিজের কাজিন পর্যন্ত বলেনি কারোর সঙ্গে সেখানে বউ বলে ডাকা তো একপ্রকার আশাহীন ব্যাপার!

ভার্সিটিতে গেলাম রিক্সা করে আহান ভাইয়ার পুরো ক্লাস জুড়ে একটাও কথা বলিনি আর না উনি আমাকে কিছু বলেছেন! উনি শুধু কয়েকজনকে পড়া বলতে বলেছেন ব্যস বাকি সময় লিখতে দিয়ে নিজে চুপচাপ বসে ছিলো হয়তো চাচ্চুরা চলে যাবার কারনে মনে খা’রা’প! একে একে সবগুলো ক্লাস শেষ করে বাড়িতে যাবার জন্য রিক্সা ধরে এগোচ্ছি ঠিক তখুনি একটা মোটরসাইকেল আরোহী রিক্সার সামনে এসে দাঁড়ালো!
হেলমেট পরিহিতো অবস্থায় ও যে ছেলেটি আহান ভাইয়া তা চিনতে আমার একটুও অসুবিধা হলো না!

-‘ রিক্সা থেকে নেমে পড়!’

-‘ আমি যেতে পারবো!’

-‘ থা’প্প’ড় কি এই রাস্তায়ই মারবো?’

ভাড়া চুকিয়ে নামলাম রিক্সা থেকে। উনি যেরকম মানুষ বলা তো যায় না সত্যিই আমাকে মা’র’বে!

-‘ কেনো নামালেন আমায়?’

-‘ সা’ধে কি তোকে পা’গ’ল বলি!’

-‘ মানে কি?’

-‘ মানে হলো এই যে তুই এখন আলাদা আলাদা যাবি তো দাদি বাড়ির সবাই কি বলবে? প্রতিদিন এই জায়গায় আমি তোকে নামিয়ে দিবো আর ভার্সিটি শেষ অপেক্ষা করবো রিক্সা থেকে নামবি এখানে বুঝেছিস?’

-‘ ওকে কি বোঝাচ্ছো তুমি? আগে বলো আমাকে এভোয়েড কেনো করছো গতো তিনদিন ধরে?’

আহান ভাইয়ার পিছন থেকে একজন অতি মাত্রায় ম’য়দা মাখা সুন্দরী বেরিয়ে আসলেন! আমি কৌতুহলী হয়ে তাকিয়ে রয়েছি।

-‘ নিলা তুমি ভুল বুঝছো? আসলে এ দু’দিন বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এসব বাদ দাও তো বলো কেমন আছো তুমি?’

মেয়েটি হয়তো অতি মাত্রায় আধুনিক! সঙ্গে সঙ্গে আহানের গ’লা জ’ড়ি’য়ে ধরলো আহান ভাইয়াও ওই মেয়ের পিঠে হাত দিয়ে সম্মতি জানালেন! উনাদের দু’জনের মাঝখানে আমি এসব দেখে যেনো নিরব দর্শক হয়ে গেছি… খুব খারাপ লাগছে মনে হচ্ছে এক্ষুনি গিয়ে ওই মেয়েকে কয়েকটা থা’প্প’ড় দিয়ে দিই!

-‘ হু ইজ লেডি? উমম আই থিংক আমি ওকে দেখেছি! ইয়াহ! ও তো মৃদুলা তোমার কাজিন রাইট?’

-‘ হ্যাঁ ওই মৃদুলা!’

-‘ উনি কে আহান ভাইয়া? আমাকে চিনলেন কীভাবে?’

-‘ আমি বলছি আমি আর আহান লন্ডনে একসঙ্গে থেকেছি! আমি আর ওর পরিবার এক সঙ্গেই এসেছি কিন্তু এখানে এসে ওকে খুঁজে পাইনি। লন্ডনে থাকতে আহান আমাকে তোমাদের পুরো ফ্যামিলি ফটো দেখিয়েছিলো তখন দেখেছি আর এখন তোমাকে দেখেই চিনতে পেরেছ!’

-‘ ওহ্! তা আহান ভাইয়ার সঙ্গে আপনার কি সম্পর্ক আপু?’

-‘ সেটা না হয় আহানই বলবে!’

-‘ আরে নুড়ি তোর মনে নেই আমি যে আরো আগে বলছিলাম নিলার কথা? ‘

আমি মনস্থির করলাম। মনে করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। মস্তিষ্কে হা’না দিলো মিলা নামটি!

-‘ ওই যে মিলার কথা? কিন্তু ইনি তো নিলা!’

-‘ কা’ন শুনতে যেমন ধান শুনিস তেমনি নিলাকে মিলা শুনেছিস! ‘

-‘ এসব বাদ দাও তো। আচ্ছা মৃদুলা তুমি শোনো আহান আমার অনেক কিছু। এক কথায় শর্টফ্রমে বলতে গেলে ও আমার বি এফ হয় বুঝছো?’

-‘ বি এফ এর পূর্নরূপ যে বয়ফ্রেন্ড সেটা কেই বা না বুঝে? আপনারা কথা বলুন আমি যাচ্ছি! ‘

এবার আর আহান ভাইয়াকে একটুও সুযোগ না দিয়ে চলে গেলাম আমি বাড়ির দিকে! তাহলে এই সেই নিলা যার কথা তিনি সেদিন বলছিলো সেই নিলাই উনার মনের দিবস ও রজনীতে আছেন! এইজন্য ওই মেয়েটা উনাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছিলেন! এবার সবটা পরিষ্কার আমার কাছে। বাবা মা বলছিলো না আরো ক মাস পরে অনুষ্ঠান করে বিয়ে দিবে এখন দেখছি তা হতে দেওয়া যাবে না! যার মনে আমার জন্য কোনো জায়গাই নেই আছে অন্য নারীর পদচারন তাকে জোর করে আটকে রাখার কোনো মানেই হয় না!’

#চলবে