হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব-০৭

0
271

#হারিয়ে_চাইছি_তোমাকে–[৭]
#নিহা (মুনিয়া)
___________________

নিলা নুডুলস অর্ডার করলো। আমাদের খাবার আগে এসে পড়েছে। নিলা অপেক্ষা করছে কখন ওর খাবার আসবে। ওয়েটার হয়তো ভুল করে এখানে আস্ত চিকেন দিয়ে গেছেন। কিন্তু আমি সেই চিকেন নিজের কাছে নিলাম খাবার জন্য।

-‘ তুই চিকেনটা রেখে দে। এটা অন্য কারোর!’

-‘ বিল দিয়ে দিলেই হলো।’

আহানের সঙ্গে কথা বলা শেষ করে যেই না আমি চিকেনটা কা’টতে ছু’ড়ি নিয়েছি হাতে ওমনি হাত ফসকে ডান হাতের দু’টো আঙুল কে’টে গেল!’

সঙ্গে সঙ্গে আহান নিজের টেবিল ছেড়ে এসে কোথায় যেনো গেলো। আমার এতে মনঃক্ষুণ্ন হলো! আমার চো’ট লেগেছে অথচ তিনি কোথায় চলে গেলেন! একটু সময় অতিবাহিতো হবার পরেই আহান তড়িঘড়ি করে এসে আমার পাশে বসলো। আমার ডান হাতটি অতি সাবধানে টেবিলে রাখলো। আমি তখনো বা হাত দিয়ে ডান হাত চে’পে ধরে রেখেছি। উনার পাশে ফাস্ট এইড বক্স দেখতে পেলাম। এটা আনার জন্যই তখন গেছিলেন হয়তো। উনি খুব সযত্নে আমার আঙুলে ব্যান্ডেজ করে দিলেন…

-‘ হলো তো! মানা করেছিলাম শুনলে কি হতো তোর? কতোখানি র’ক্ত বেরিয়ে গেলো ইশশ! এমনিতেই তুই চিকুন তারপর আবার এতো র’ক্ত বেরিয়ে গেলো! ‘

-‘ রা’গ করছেন কেনো? আমি ইচ্ছে করে করিনি তো।’

-‘ এবার চুপ কি করবি নাকি আমি করাবো?’

আমি চুপ করে গেলাম। ওদিকে নিলা আমাদের এসব কাহিনী বসে বসে দেখছে। পারছে না কোনো কথা বলতে। চুপচাপ নিজে নিজে খাচ্ছে। বেশ হয়েছে! এদিকে আমাদের খাবারও চলে এসেছে। আহান মাছ ভাতই অর্ডার করেছে কারন রাত্রেবেলা ও ওসব ভারী খাবার খায় না! আহান একটা প্লেটে ভাতের সঙ্গে তরকারি মেখে আমার মুখের সামনে ধরলেন!
উনার এহেনো কান্ডে আমি তাজ্জব! আশেপাশের বেশ কয়েকজন মানুষই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আহানেন যেনো সেদিকে কোনো ভাবান্তরই নেই! উনি নিজের মতন করে কাজ করে চলেছেন।

-‘ খেয়ে উদ্ধার করবি আমায়?’

-‘ আমি খেতে পারবো তো!’

-‘ হাতটা যে কে’টে গেছে মনে নেই?’

আমি আর কথা না বলে খেতে লাগলাম উনার হাতে। আমি ঝাল কোনো কিছু খেতে পারি না তারউপর উনি মাছের ঝাল দিয়ে ভাত মেখেছেন! ঝালের চোটে ভেতরটা পু’ড়ে যাচ্ছে এমন অবস্থা তবুও মুখ দিয়ে উনাকে বারন করছি না! খুব তৃপ্তি লাগছে উনার হাতে খেতে পেরে। স্বামীর হাতে প্রথম খাওয়ার সৌভাগ্য! এমন সুন্দর মুহুর্তে আর বাঁধা দিতে চাইনি। খাবা খাইয়ে দেোর মাঝখানে কয়েকবার উনার আঙুল কে’টে দিলাম দাত দিয়ে উনি সেখানেও কিছু না বলেই চুপচাপ মুহুর্তের মধ্যেেই সবটুকু খাবার খাইয়ে দিলেন উনি আমাকে। নিজেও খেয়ে নিলেন। খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। নিলারও খাওয়া শেষ নিলা না-কি আমাদের সঙ্গে এক গাড়িতে যাবে তাই বসে ছিলো। আমরা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে পড়েছি… একটু হেঁটে যাচ্ছি সামনের দিকে গাড়ির কাছে…
এদিকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অপরদিকে সেই মাছের ঝালের ঝাল লেগে আছে মুখের ভেতর! সব মিলিয়ে কি যে নাজেহাল পরিস্থিতি তে পড়েছি কেবল আমিই টের পাচ্ছি!

-‘ একটু অপেক্ষা কর আমি আসছি।’

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আহান কোথায় একটা চলে গেলো! রাস্তার ওদিকটা অন্ধকার বলে কিছু দেখতে পারছি না আপাততো দাঁড়িয়ে আছি এক ঠায়।

-‘ নে এটা খেয়ে ফেল!’

আমার হাতে একটা আইসক্রিম গুঁজে দিলো আহান! বরাবরের মতনই আমি অবাক! আশ্চর্য মানুষতো নিলা এসেছে আর উনি নিলার সঙ্গে ভালো করে কথাও বলছেন না! কিন্তু এদিকে তিনি নিজের মুখেই আমাকে বলেছিলেন উনি নিলাকে ভালোবাসেন। যে কেউ দেখলে বলবে উনি নিলাকে নয় আমাকে ভালোবাসেন! কিন্তু আদৌও এটা সত্যি কি? আহান আইসক্রিম আনলো তাহলে সে কি কোনোভাবে বুঝেছে আমার ঝাল লেগেছে?

-‘ আপনি এটা কেনো আনলেন? ‘

-‘ আমি সবকিছুই বুঝতে পারি। মাছের ঝাল খেতে পারিস না বললেই তো জোর করে খেলি কেনো?’

-‘ আপনি খাইয়ে দিয়েছিলেন তাই!’

মুখ ফসকে বলে ফেললাম! পরক্ষণেই কথা ঘুরিয়ে নিলাম। হাতে থাকা আইসক্রিম টি খেতে লাগলাম। চোখ আটকে গেলো নিলার দিকে। এ’দিকেই আসছে আমাদের সঙ্গে একসাথে যাবে বলে। নিলা এগিয়ে আসলো গাড়িতে আহানের পাশে সিটে বসতেই আহান গম্ভীর গলায় নিলাকে পিছনের সিটে আমার সঙ্গে বসতে বললেন। গাড়িতে নিরবতা ছাড়া কিছুই নেই। আহান মন দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন আমি বসে রয়েছি চুপচাপ আর নিলা মোবাইলে কিছু একটা করছে। গাড়ি এসে পৌঁছালো নিলার বাসার সামনে। নিলা আহানের হাত নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে বিদায় দিলো।

-‘ তুই একটু বোস পাঁচ মিনিট পর আসছি।’

বলেই আহান নিলার পিছু পিছু চলে গেল! নিশ্চয়ই এমন কিছু করবে যা আমার সামনে সম্ভব নয় সেই কারনেই উনি আড়ালে চলে গেলেন! এইতো একটু আগে কি সুন্দর করে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছিলেন কেনো জানি মাঝে মাঝে আমার প্রতি উনার এতোটা কেয়ার দেখে মনে হয় উনিও হয়তো আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু প্রতিবারের মতনই উনি এবারও আমার ভাবনাটাকে দীর্ঘ সময়ে পরিনত হতে দেয়নি। উনি কি বুঝতে পারেন না উনি এখন আমার স্বামী! উনি অন্য মেয়ের সঙ্গে আলাদা কিছু করলে আমি তাতে কষ্ট পাই? হয়তো বুঝেন না কারন উনার তো ভালোবাসার মানুষ আছে। আফসোস!আমি যাকে ভালোবাসি সে অন্য কারোতে মত্ত!…

-‘ তোমাকে আর কতোবার বলবো নিলা এভাবে মৃদুলার সামনে যখন তখন জ’ড়িয়ে ধরা এসব কিছু করবে না তুমি? ভুলে যাও কেনো তোমাকে মিলা বলেছি শুধুমাত্র পাঁচ বছর আগেন ঘটনার জন্য! আমি মৃদুলার মুখ থেকে শুনতে চাই ও আমাকে ভালোবাসে কিনা! পাঁচ বছর আগের ঘটনান পুনরাবৃত্তি করাতে চাই না আমি তাই তোমার সাহায্য চাইছি। তুমি এমন কিছু করো না আর!’

-‘ তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো! সবটা স্বীকার করার জন্য আগে মৃদুলাকে উপলব্ধি করাতে হবে ও কি আদৌ তোমাকে চায় নাকি না! ও যদি তোমাকে ভালোবাসে তো ওর জে’লা’সি হবে আর নিজ থেকেই সবটা স্বীকার করবে। ‘

-‘ সে যাইহোক! তুমি আমাকে এভাবে জ’ড়িয়ে ধরবে না! মৃদুলা আমাকে ভালোবাসুক বা না বাসুক! এখন ও আমার স্ত্রী আর ওকেই আমি ভালোবাসি!’

নিলা দাঁড়িয়ে রইলো আহানের যাবার পানে। সে কি করবে? কেনো জানি তার আহানের সঙ্গে সময়গুলো কাটাতে বেশ ভালো লাগে। আহানের কথাগুলোর মানে বুঝতে পেরে মা’থা থেকে আহানকে বাদ দিয়ে চলে গেলো বাড়ির ভেতর….

আহান নিলার কাছ থেকে চলে গিয়ে মৃদুলার কাছে গেলো। যাবার সময় গাড়ি লক করে গেছিলো যার দরুস মৃদুলা গাড়ির ভেতর থেকে বেরোতে পারেনি। আহান গাড়ির ভেতরে ঢুকে গাড়ি স্টার্ট দেয়। মৃদুলা কিছু না বলায় সে-ও কিছু বলেনি। দু’জনের মধ্যে সিরবতা বিরাজমান রেখে একসময় বাড়িতে পৌঁছে গেলো।

-‘ আপনি শুয়ে পড়ুন বিছানা করাই আছে। আমি একটু পড়ে আসছি।’

-‘ আসছি বললে হবে না তুই এখুনি আয়!’

আহানের কথার উপর আর কিছু না বলে মৃদুলা আহানের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো! মাঝখানে কোলবালিশ নেই কিন্তু মৃদুলা আহানের থেকে দুরত্ব বজায় রেখে দিলো বেশ অনেকখানি। আহান সেই দুরত্ব ঘুচিয়ে মৃদুলার পেটের উপর এক হাত দিয়ে জ’ড়িয়ে ধরে চোখ বুজলো! আজকে আর বারন করতে ইচ্ছে করলো না! অবাধ্য মন আহানের স্পর্শ অনুভব করতে লাগলো।
…………………………….

সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে রান্না করার জন্য কোনো বাজার পাতি নেই ঘরে! সেইজন্য বাজারে যাবার জন্য দরজা খুলেছি ওমনি নিলা হন্তদন্ত হয়ে আমাদের রুমে চলে আসলো! আমি তো পুরাই টাস্কি! এই মেয়ে কি সকালবেলাই চলে এসেছে কোনো লজ্জা নেই! আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই তড়িঘড়ি করে আমাদের রুমে ঢুকলেন।

-‘ আহান জলদি ওঠো! তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আমার সঙ্গে গাড়িতে বসো!’

আমি তাজ্জব! হলোটা কি? হুট করে এসব কি বলছে এই নিলা! আহান ঘুম ঘুম চোখে ওঠলো। নিলার কথা পুরোটা শুনেই রে’গে গেলো!

-‘ কি বলছো কি সকালবেলা? ‘

-‘ যা বলছি তাড়াতাড়ি করো! নইলে বি’পদ হবে!’

আহান প্রতুত্তর করবে ওমনি নিলার ফোনে একটা কল আসলো! নিলা কাঁদতে লাগলো! আমরা দু’জন কিছুই বুজতে পারছি না! নিলা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে ওঠলো

-‘ আহান! আর কিছু বলার সময় নেই। তাড়াতাড়ি আসো।’

মেয়েটা আবারো হুট করে গাড়িতে চলে গেলো। এদিকে আহান কোনোমতে ফ্রেশ হয়ে চললো গাড়িতে। আমাদের দু’জনেরই খুব চিন্তা হচ্ছে! হলো কি নিলার হঠাৎ করে?

#চলবে?

[আল্লাহকে স্মরন করুন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করুন, আসসালামু আলাইকুম সবাইকে]