হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব-০৮

0
304

#হারিয়ে_চাইছি_তোমাকে– [৮]
#নিহা (মুনিয়া)
_______________________

ঘড়ির কাটা জানান দিলো সকাল সাতটা বাজে। নিলা ড্রাইভ করছে আমার সঙ্গে পেছনের সিটে বসে আছে আহান। মনটা আকুপাকু করছে জানার জন্য। আমাদের দু’জনের ফোনই আমার হাতব্যাগে রয়েছে। নতুন বাসায় আসার পর চার্জার খুঁজে পায়নি যার দরুন ফোন দু’টি বন্ধ হয়ে আছে কালকে রাত থেকে যাবত! যদিও বা আমরা ঠিকমতন পৌঁছেছি সেই খবরটুকু বাড়িতে দেওয়া হয়েছে। সকলের সঙ্গেই কথা হয়েছিলো কালকে বিকেলবেলা। তখন অব্দি তো সব ঠিকই ছিলো তাহলে এই সকালবেলা হলো টা কি!
নিলা গাড়িটা কোনো চেনা পথের দিকে নিয়ে যাচ্ছে না!বারংবার প্রশ্ন করা সত্বেও মেয়ের একই জবাব, “গেলেই দেখতে পাবে এখন অযথা টে’ন’শন করো না!”
গাড়ির কাচ নামিয়ে সিটে বসে রয়েছি। বাহির থেকে শান্ত বাতাস এসে গাঁয়ে দোলা দিয়ে যাচ্ছে যদিও বা আমি চুপটি করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি তবুও চোখের দৃষ্টি বাজছে আহানের দিকে! আহান তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে সেটা আমি বেশ ভালোই উপলব্ধি করতে পারছি। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে চুপ করে বাইরের দৃশ্য দেখায় মনস্থির করলাম…..
(আমি ব্যাতীত আমার গল্প অন্য কোনো গ্রুপ বা নিজেন টাইমলাইনে পোস্ট করা নিষেধ! কার্টেসি সহও)

হঠাৎ গাড়ি এসে থামলো একটা হাসপাতালের সামনে!
ইতিমধ্যেই কেটে গেছে অনেক খানি সময়। সাতটা থেকে বেলা দশটা বেজে গেছে! হাসপাতালে সামনে ঢুকতেই ধক করে ওঠলো বুকটা! এতোক্ষণ খেয়াল না করলেও এখন বুঝতে পারছি এই হাসপাতাল টা তো আহানের বাসার সবচেয়ে কাছের হাসপাতাল টা! লতা মানে আহানের ছোটো বোন ওর যখন একবার অ’সু’খ হয়েছিলো তখন এখানেই ভর্তি করিয়েছিলো! তার মানে কারোর কি কোনো কিছু হয়েছে! এরই ভিতরে নিলা ভেতরে চলে গেলো হন্তদন্ত হয়ে। এদিকে আহান আমার হাতটা শক্ত করে উনার মুঠোয় পুরে নিলো!

-‘ মৃদুলা! নিলা এভাবে হাসপাতালে নিয়ে এলো কেন বলতো? সব ঠিক আছে তো?’

-‘ চিন্তা করবেন না! কিচ্ছু হবে না!’

উনাকে বলে তো দিলাম কিচ্ছু হবে না এদিকে আমার নিজেরই মনের ভেতর কেমন কেমন লাগছে।
একটু ভেতরে যেতেই চাচ্চু, দাদি, মা, বাবা সবাইকে দেখতে পেলাম। লতা সমানতালে কেঁদে যাচ্ছে! আমাদের দু’জন কে দেখেই চাচ্চু আগে আহানের কাছে এসে দাঁড়ালো।

-‘ সেই কালকে রাত থেকে ফোন করছি! কি হয়েছে তোদের দু’জনের ফোনে? ফোন কেনো তুলিস নি?’

-‘ বাবা চার্জার নিতে ভুলে গেছিলাম। তোমাদের সঙ্গে কথা বলার পরই ফোনে চার্জ ছিলো না। কিন্তু কার কি হয়েছে হাসপাতালে কেনো তোমরা? নিলা কোনো কিছু না বলে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। তোমরা সবাই-ই তো আছো কিন্তু মা! মা কোথায় আব্বু?’

-‘ তোর মা আইসিইউতে শুয়ে আছে! কালকে রাত্রেবেলা বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আ’ঘাত পায়! প্রচুর র’ক্তক্ষরন হয়েছে! হাসপাতালে পৌঁছাতেই ডাক্তার বলে দিলো অতিরিক্ত র’ক্ত’ক্ষ’রন হবার কারনে তোর মা এখন আ’শংকা’জ’নক অবস্থায় আছে!’

ধপ করে বসে পড়লো আহান! যার গোটা দুনিয়া জুড়ে মা’ই ছিলো সে মা এখন আইসিইউর বেডে! উনাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে কতোটা কষ্ট পাচ্ছে চাচীর জন্য! চাচী খুব ভালো মানুষ ছিলেন কখনো কারোর মনে কষ্ট দিয়ে কোনো কথা বলেনি আর আজকে চাচীর এই অবস্থা! ভাবতেও কান্না চলে আসছে। আমি দ্রুত বেগে আহানের কাছে গেলাম। আহানকে মাটি থেকে তুলে বসালাম। চারদিকে শুধু কান্নার আওয়াজ! কিছুক্ষণ বসে থাকবার পরেই ডাক্তার বেরোলো। ডাক্তার বেরোতেই আহান হন্তদন্ত হয়ে পড়লো।

-‘ আমার মা কেমন আছে? উনি সুস্থ হয়ে যাবে তো ডাক্তার? ‘

-‘ কুল ডাউন! উনি এখন ঠিকআছে তবে র’ক্ত’ক্ষ’রন হবার কারনে উনি একটু দুর্বল আছে। উনাকে কালকে বিকেলেই ছেড়ে দেওয়া হবে আপাততো উনি বিশ্রাম নিক।’

ডাক্তারের কথা শুনে সবাই সস্তির নিশ্বাস নিলেন! বি’পদ কেটে গেছে মা’থার উপর থেকে। আযানের শব্দ ধ্বনি কানে পৌঁছাতেই আহানকে পাঠিয়ে দিলাম মসজিদে। সেই কাল রাত থেকে উনারা হাসপাতালে ছুটোছুটি করছেন এখনো অব্দি না খেয়ে!

-‘ লতা চল তো বাসায় যাই একটু। নামাজ পড়ে সবার জন্য রান্না করে নিয়ে আসতে হবে তো। ‘

লতা নাক মুখ মুছে আমার সঙ্গে রেডি হয়ে গেলো। বাড়িতে পৌঁছাতেই নামাজ পরে রান্না সেড়ে নিলাম। গোসল করে লতাকে খাইয়ে দিয়ে নিজে সহ রেডি হয়ে হাসপাতালে রওনা দিলাম। হাসপাতালে গিয়ে দেখলাম চাচির জ্ঞান ফিরেছে সবাই ওখানেই বসে আছে।

-‘ কেমন আছো চাচি?’

চাচি আমার দিকে ফিরে তাকালেন মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে।

-‘ চাচি কেনো? মা বলতে কি অসুবিধা আছে?’

-‘ মৃদুলা কোথায় গেছিলি তুই?’

-‘ চাচা তোমরা সবাই তো না খেয়ে রয়েছো সেই কাল রাত থেকে! তাই একটু যা পারি অল্প করে রান্না করে এনেছি চাচির জন্য। বাহিরের খাবার চেয়ে চাচি বাড়ির খাবার খেলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে পড়বে। তোমরা বরংচ মা’কে নিয়ে বাড়িতে যাও বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও।’

-‘ কিন্তু আহানের মা?’

-‘ আরে আমি বললাম তো আমি আছি। আমি খাইয়ে দিচ্ছি। ‘

ঠেলেঠুলে সবাইকে বাড়িতে পাঠালাম। আমি গিয়ে বসলাম চাচির কাছে। চাচির জন্য চিকেন স্যুপ এনেছি। চাচির পিঠের পিছন দিক দিয়ে বালিশে হেলান দিয়ে উঠালাম। চামচে করে খাইয়ে দিচ্ছি চাচিকে। চাচিও সবটুকু খেয়ে নিলো তারপর রুমাল দিয়ে চাচির মুখ মুছিয়ে দিলাম….

-‘ ভাগ্য করে তোর মতন পুত্রবধূ পেয়েছি।’

-‘ হয়েছে এতো প্রশংসা করতে হবে না। তুমি এবার একটু ঘুমাও তো এবার।’

চাচিকে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। এদিকে আহান বুকে হাত গুঁজে নিরব দর্শক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কি সুন্দর সেই চাহনি যেনো অনেক কিছু বলে দিতে চায়।

-‘ বাড়িতে যাননি কেনো? খাবেন নাা কোনো কিছু?’

-‘ খাবো এক সময় তুই ব্যাস্ত হস না।’

-‘ ব্যাস্তর কিছু নেই আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি আপনি খেয়ে ফেলুন। এতোক্ষণ না খেয়ে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে যাবেন তারপর কি হবে?’

-‘ কি হবি আর? তুই আমার সেবা করবি!’

-‘ তার আগে খেয়ে তো নিন।’

-‘ ভালো লাগছে না খেতে।’

-‘ ইচ্ছে না হলেও খেতে হবে। খাবার যেনো সবটুকু শেষ হয়।’

একটু আগে তরকারিতে লবন দেখতে গিয়ে একটু চিংড়ি মাছ খেয়েছিলাম অমনি এর্লাজি শুরু হয়ে গিয়েছে তাই দেরি না করে ওষুধ আনতে গেলাম।
ওষুধ এনে চাচির কেবিনে গেলাম আহান খেয়েছে কি-না দেখতে! গিয়ে দেখলাম নিলা বসে রয়েছে আহানের সামনে। আহানের প্লেট যেরকম দিয়ে গেছি তেমনই আছে একটুও খাননি উনি!

-‘ আহান! খেয়ে নাও তো। বারবার বলছি।’

-‘ জোর করবে না নিলা।’

-‘ জোর তো করবোই! তুমি খাবে না তো ঠিক আছে আমি খাইয়ে দিচ্ছি। ‘

মেনে নিতে পারলাম না আর! যতো যাই হউক স্বামী হয় উনি আমার উনাকে অন্য মেয়ে খাইয়ে দিবে সেটা তো মানতে পারি না!

-‘ স্বামী যখন আমার তো আমি-ই খাইয়ে দিচ্ছি! আপনাকে অতো কষ্ট করতে হবে না!’

নিলাকে কিছু বলার অবকাশ না দিয়ে মৃদুলা খাবারের প্লেটটি হাত কেঁড়ে নিয়ে নিজে হাতে খাইয়ে দেবার জন্য খাবারের গ্রাস তুলে ধরলো আহানের সামনে।!’

-‘ এবার কি আপনি হা করবেন নাকি আমি হা করাবো আপনাকে সেদিনের মতন? ‘

আহান মুচকি হাসলো! বুঝতে পারলো তাদের সম্পর্কের উন্নতি ঘটছে আস্তে আস্তে! আহানের নুড়ি পাথরও আহানকে নিয়ে ভাবে…..

আহান খাবার খাচ্ছে। নিলা দাঁড়িয়ে আছে।

-‘ তুই খেয়েছিস?’

মৃদুলা আমতা আমতা করলো।

-‘ হ্যাঁ খখখেয়েছি তো। ‘

-‘ মিথ্যা বলবি না একদম! তুই খেলি কখন? আমি জানি কেউ অসুস্থ হলে তুই খেতে পারিস না ভালো মতন। আর তুই বলে দিলি খেয়েছিস আমি বিশ্বাস করবো? আমি তোর চোখ পড়তে পারি নুড়ি পাথর! তোর চোখ বলে দিচ্ছে তুই মিথ্যা বলছিস!’

মৃদুলা ধরা খেয়ে চুপ করে রইলো। মৃদুলার কাছে আর অন্য উপায় ছিলো না আগের খাবারগুলো আহান খায়নি বলে ওগুলো ঠান্ডা হয়ে ভাত পানি ছেড়ে দিয়েছিলো তাই নতুন করে মৃদুলা আহানকে ভাত বেড়ে দেয়। এখানে আহানেরই খাবার আছে এতে মৃদুলা ভাগ বসাবে কি করে? সে যদি আহান কে বলতো সে কিছু খায়নি তো আহান নিজেরটা খেতে বলতো ওকে যা মৃদুলা করতো পারতো না……

-‘ হা কর!’

-‘ আরে আপনি কি করছেন? আপনি খান তো আমি বাসায় গিয়ে খাবো।’

-‘ ভালো কথা বলছি হা কর!’

আহান নিজে মেখে খাইয়ে দিলো মৃদুলাকে। মুখের সামনে তুলর ধরে রাখা গ্রাস মৃদুলা ফেরাতে পারলো না! মৃদুলা কি ভেবে নিলার দিকে তাকিয়ে চোখ মা’রলো!

-‘ আহান আমি আন্টিকে দেখতে এসেছিলাম তো এবার যাচ্ছি! ‘

নিলা চলে গেলো! মৃদুলা তৃপ্তির হাসি হাসলো। এই সময়টুকু এখন শুধুই আহান আর তার নুড়ি পাথরের!

#চলবে

[ আল্লাহকে স্মরন করুন,পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করুন, আসসালামু আলাইকুম সবাইকে]