আমাদের কুঁড়েঘর পর্ব-১৪(শেষ পর্ব)

0
471

#আমাদের কুঁড়েঘর
Sumon Al-Farabi
#শেষ_পর্ব

প্রিয়ন্তীর সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় যখন বাসা থেকে বের হলো তখনই জাহিনের চোখ কপালে উঠে গেলো। নেহা বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।
– আপনি এখানে কেন?
– আমার মেয়ের সাথে দেখা করতে আসছি আর তুমি নাকি আমার বাবকে অপমান করছো মানুষের সামনে ।
– আজব তো যার মান নাই তার আবার অপমান হয় কিভাবে?
– তুমি কিন্তু এখন বেশিই বলছো।
– কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি কম বলছি আরও কিছু বলা উচিত । যাই হোক মানহা আপনার সাথে দেখা করবে না।
– এটা কি মানহা বলছে?
– মানহা বলেনি তবে আমি বললাম । কারণ আমি তাকে আপনার সংস্পর্শে আসতে দিতে চাই না৷
– মেয়েটা কিন্তু আমারও।
– হ্যাঁ আপনার গর্ভে ছিলো । এটা তো আমি কখনো অমান্য করিনি তাই না। এখানে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না কেউ দেখে নিলে সমস্যা হবে । প্লিজ চলে যান।
– আমি তো মানহার সাথে দেখা করেই যাবো।
– জিদ করবেন না। বাসার সবার সাথে ও অনেক সুন্দর একটা সময় কাটাচ্ছে আমি চাই না আপনাকে দেখে ওর মন খারাপ হয়ে যাক।
– তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছো! আমায় দেখলে মানহার মন খারাপ হবে?
– অনেকটাই।

নেহা তবুও জোর করে বাসার ভিতরে যেতে চাচ্ছে ।
– আচ্ছা ঠিক আছে আমি আজ চলে যাবো তারপর ওখানে এসে মানহার সাথে দেখা করে যাবেন তবুও এখানে দয়া করে সিনক্রিয়েট করবেন না।
নেহা কিছু না বলে চলে গেলো। এ মেয়ের হাত থেকে কিভাবে মানহাকে সেইভ করা যায় সেটাই জাহিনের মাথায় বাসা বাঁধলো ।

পার্কে এসে একটা বেঞ্চে বসে নেহার কথা চিন্তা করছে জাহিন। হঠাৎই তার নজর পড়লো এক রমণীর দিকে। নীল শাড়ি নীল চুড়ি কিন্তু কপালের টিপটা কালো। এক নজর দেখেই মনে হচ্ছে স্বর্গ থেকে কোনো পরী পৃথিবীতে নেমে আসছে । মুহুর্তে সকল ভাবনা মাথা থেকে দূর হয়ে গেলো।
– এভাবে কি দেখছেন?
প্রিয়ন্তী তার সামনে চলে আসছে কিন্তু জাহিন তখন ও তাকিয়ে আছে । প্রিয়ন্তীর কথায় জাহিন কিছুটা লজ্জা পেলো।
– কই কিছু না তো।
– কেমন লাগছে আমায়?
– মায়াবী।
– শুধুই মায়াবী, সুন্দর না!
– মায়াবীর থেকে সুন্দরের মূল্য বেশি হয়ে গেলো আপনার কাছে?
– আপনার কাছে কোনটা বেশি দামী?
– মায়ায় আটকে গেলে মানুষ সারাজীবন থেকে যায় কিন্তু সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলে কোনো এক সময় সৌন্দর্য বিলিন হয়ে যায় তখন মানুষের মুগ্ধতা ও কেটে যায় তখন মানুষের বিচ্ছেদ ঘটে ।। মানুষের সৌন্দর্য ক্ষণস্থায়ী কিন্তু কেউ মায়ায় আটকে গেলে তার কাছে প্রিয় মানুষটা সারাজীবন বিশ্বের সেরা সুন্দরী থাকবে ।
– তাহলে মায়াবীই ঠিক আছে । এই মায়ায় কি আপনাকে আটকানো যাবে?
– আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন?
– কেন?
– এটা তো সম্ভব নয়। আপনি কোথায় আর আমি কোথায়।
– কেন?
– আপনার পরিবার কখনো এটা মেনে নিবে না ।
– আমার পরিবার তো আর আমার সংসার করবে না। আমার সংসার আমি করবো । তাছাড়া আমি আমার পরিবার কে মানিয়ে নিয়েছি।
– আপনার এমন পাগলামির কারণ কি? আমাদের পরিচয় হবার তো খুব বেশি দিন হয়নি তাছাড়া আপনি ভালো করে আমায় চিনেন ও না।
– আমি নিজেও ঠিক জানিনা। মানহার থেকে আপনার গল্প শুনতাম। বাপি এটা করতো বাপি এমন টা কখনোই করে না। বাপি এভাবে এটা করে । মেয়েটা সারাদিন এগুলো বলতো তখন থেকেই আপনাকে একটু একটু করে ভালো লাগা শুরু । তারপর সব থেকে বড় কারণ হচ্ছে মানহার সাথে সময় কাটাতে আমার অনেক ভালো লাগে। তাই আমি এখন শুধু এটা জানি আমি মানহার আম্মু হবো।
– এমন পাগলামি করলে তো সম্ভব নয়। আপনি জানেন আমি কেন বিয়ে করতে চাই না?
– কেন?
– এর একমাত্র কারণ হচ্ছে মানহা। আমি চাই না নতুন কেউ এসে তাকে অবহেলা করুক । আজ হয়তো আপনার ওকে ভালো লাগছে কিন্তু কাল ভালো লাগতে নাও পারে।
– আমার মনে হয় না এমনটা কখনো হবে ।
– মানুষের মনের পরিবর্তন হতে সময় দরকার পড়ে না ।
– আমি আমার দিক থেকে ঠিক থাকলেই তো হচ্ছে । কথা দিচ্ছি কখনো মানহার বিন্দু মাত্র অবহেলা করবো না।
– আপনি বুঝতে পারছেন না আমার একবার বিয়ে হয়েছে ডিভোর্স হয়ে গেছে একটা ছোট্ট মেয়ে আছে এসব শুনে আপনার পরিবার মেনে নিবে না।
– আমার পরিবারকে আমি ম্যানেজ করবো । আপনি কি চান মানহা মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হোক?

জাহিম কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলো। এরপর কি যেন ভেবে বললো- আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যদি আমার ব্যাপারে সব কিছু জানিয়ে আপনার পরিবারকে রাজি করাতে পারেন তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই।
প্রিয়ন্তীর দুচোখে খুশির আভা। প্রিয়ন্তী তৎক্ষনাৎ কাকে যে কল দিয়ে বললো- উনি রাজি হয়ে গেছে ।
– আপনি কাকে কল করলেন?
– আপনার আব্বু কে।
– মানে আব্বু জানতো আপনি আমার সাথে দেখা করতে আসছেন?
– হুম । উনি তো সব জানে। আপনি যখন দেখা করতে চাইছেন আমি তখনই ওনাকে জানাইছি। আপনার সাথে দেখা করতে আসতে ভয় করছিল যদি বকাবকি করেন কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে যাবপন ভাবিনি। পুরুষ মানুষ তো একটু রেগে গেলেই চেচামেচি শুরু করে
– প্রকৃতি পুরুষ যারা তারা কখনোই কোনো নারীর সাথে কড়া গলায় কথা বলে না। তাহলে আপনি যাদের চিনেন তারা কেউ প্রকৃত পুরুষ হয়ে উঠতে পারে নি এখনো।
– আপনার এই দিক টা আমায় খুব আকর্ষন করে আপনি ধীরে ধীরে কথা বলেন।
– মানুষ দূর থেকেই সুন্দর তার যত কাছে যাবেন যত জানবেন তার সম্পর্কে ততই সে আপনার কাছে তেতো হবে ।
– হুম ।
– আকাশ খারাপ করছে আমাদের বাসা কাছেই হবে চলুন নয়তো এতো সুন্দর করে সেজে এসেছেন সব ভিজে যাবে।
– হুম ।

প্রিয়ন্তী জাহিনের বাইকের পিছনে উঠে বসলো। বাইকে থাকতেই জাহিন নেহার ব্যাপারে সব কিছু বললো প্রিয়ন্তী কে। এমনকি আসার সময় তার সাথে দেখা হওয়ার বিষয়টাও।
এসব নিয়ে কথা বলতে বলতেই তারা জাহিনের বাসায় চলে আসলো । বাসার ঢোকার কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টি নামতে শুরু করলো।
জাহিন খেয়াল করলো প্রিয়ন্তী এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকছে না।
– কি হয়েছে আপনার এমন ছটফট করছেন কেন?
– এমনি কিছু হয়নি তো।
– বৃষ্টিতে ভিজবেন?
প্রিয়ন্তী বুঝি এটা শোনার অপেক্ষায় ছিলো।

ঠিক তার পরের দিন প্রিয়ন্তীর বাসা থেকে কয়েকজন এসে জাহিন আর প্রিয়ন্তীর বিয়ে ঠিক করে । সেদিন বিকেলেই থানা থেকে পুলিশ এসে জানায় নেহা জাহিনের বিরুদ্ধে মামলা করছে মানহা কে তার থেকে দূরে রাখার জন্য ।
একই দিনে দুটো ঘটনা। সবাই থানার বিষয়টা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত না। কারণ মানহা তার বাপির কাছেই থাকবে ।

এখন রাত প্রায় বারোটা।
জাহিনের ফোনে প্রিয়ন্তী কল দিছে।
– কি করছেন?
– এতো রাতে মানুষ কি করে?
– মানহা ঘুমিয়ে গেছে?
– হুম ।
– জানেন খুব চকলেট খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু এতো রাতে বাইরে যেতে দিবে না।
– যখন বাইরে যেতেই দিবে না তখন ইচ্ছে করে কেন শুনি।
– ইচ্ছে কি আর সময় অসময় বোঝে?
– ঘুমাবেন কখন?
– ঘুম আসছে না জন্যই তো কল দিলাম।
– আচ্ছা ঠিক আছে আমি আপনাকে একটু পরেই কল দিচ্ছি ঘুমাবেন না কেমন!
– আচ্ছা ঠিক আছে ।

প্রায় ৪৫ মিনিট পড়ে জাহিন প্রিয়ন্তীর মোবাইলে কল দিলো। প্রথমবার কেটে যাওয়ার পর দ্বিতীয় বার রিসিভ করলো।
– ঘুমিয়ে গেছেন নাকি?
– একটু চোখ বুজে আসছে।
– বাসার সামনে বের হতে পারবেন?
– কেন?
– বের হলেই দেখতে পারবেন ।
– আপনি বাসার সামনে?
– হয়তোবা ।

প্রিয়ন্তী দৌড়ে বাসার সামনে আসলো। জাহিন বাসার সামনে চকলেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে ।
– এতো রাতে আপনাকে এখানে আসতে কে বলছে?
– যে মানুষটা আমার সংসার টাকে আবার গুছিয়ে নিবে তার এতটুকু ইচ্ছে তো পূর্ণ করতেই পারি।
– আপনি সত্যি অনেক ভালো ।
– হয়তো বা।
– একটা ইচ্ছে পূর্ণ করবেন?
– আপনার সকল ইচ্ছে পূর্ণ করার দায়িত্ব দিচ্ছেন যখন তখন বলুন কি ইচ্ছে
– আমায় প্রপোজ করবেন?
– আমি তো সেভাবে কখনো প্রপোজ করিনি কাউকে।
– যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই করুন ।
জাহিন হাঁটুর উপর দাঁড়িয়ে চকলেট গুলো প্রিয়ন্তীর দিকে এগিয়ে দিলো।
– প্রিয়, আমার অগোছালো জীবনটা কে আবার নতুন করে গুছিয়ে দিতে আমার জীবনে আপনার আগমন কে আমি শুভেচ্ছা জানাই। আপনার সব অপূর্ণ স্বপ্নকে পূর্ণ করে দিতে চাই। জীবনের পথে শেষ অব্দি একসাথে হাঁটতে চাই। আপনি শুধু শক্ত করে হাটতা ধরে রাখবেন হাজার বিপদেও আপনার হাতটা কখনোই ছাড়বো না। হবেন কি আমার জীবন পথের সঙ্গী?

প্রিয়ন্তী জাহিন কে তুললো।
– কিছুটা রোমান্টিক ও আছেন।
– একটু একটু।
জাহিনের হাত থেকে চকলেট নিয়ে জাহিনকে জড়িয়ে ধরলো প্রিয়ন্তী । জাহিনের উত্তাল সমুদ্রের মতো মনটা নিমিষেই শান্ত শীতল নদীতে রুপ নিলো।

The End

কিছুদিনের মধ্যেই এর সিজন ২ দিবো সেখানে নেহার আর জাহিনের কাহিনী তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ ।