হিমির নাকফুল পর্ব-৬+৭

0
3627

6+7(শেষ পর্ব)
#হিমির_নাকফুল(৬ষ্ঠ পর্ব)
লেখাঃMd. Nazmul Huda

অপরিচিত সেই মেয়েটির কথা অনুযায়ী আমি সেই রেস্টুরেন্টে গেলাম। গিয়ে সিসি ক্যামেরার ব্যাপারে আমি কথা বললাম। কিন্তু তারা আমাকে কোনো জবাব দিতে পারেনি। দুই দিন পর্যন্ত আমি তাদের কাছে গিয়েছি কিন্তু আমি কোন ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারিনি।

এরই মধ্যে আমার মামারা আমার বাসায় এসে হাজির হয়েছেন। আমার দুই মামা এবং মামিরা এসেছেন। আমার মা মারা যাওয়ার সময় ছোটমামা এসেছিলেন। তার জন্য আমাদের বাসার ঠিকানাটা হয়তো ভুলে যায় নি। প্রথমত আমাদের বাসায় এসে আমাকে হিমির কাছে নিয়ে যেতে বলে। আমি তাদের কথা অনুযায়ী হিমির কাছে নিয়ে গেলাম।

মামাদের নিয়ে হিমির কাছে যাওয়ার পরে মামারা আসলে হিমির সাথে কথা বলতে পারেনি। এমনকি আমাদের সামনে আসেনি। মামারা হয়তো বুঝতে পেরেছে তাদের উপরে হিমি অনেক অভিমান করে আছে। যার কারণে হয়তো কেউই তাদের সামনে আসেনি আর আর একটা কারণ হল হিমির কারণেই আমাদের মা আমাদের পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে সেই কারণেও হতে পারে সামনে কিভাবে আসবে তাই হয়তো তাদের সামনে আসেনি।

আমার মামারা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আর কিছু মনে করেনি। তারা হিমির কাছ থেকে ফিরে এসে আমাদের বাসায় একটা মিটিং এর মত বসালো।ছোট মামার পরিচিত ভালো একটা উকিল আছে।সেই উকিলটাও আমাদের বাসায় এসেছেন।

উকিলের সাথে কথা বলার পরে উকিল আমাদের জানান আমরা কিছু ডকুমেন্ট যদি ম্যানেজ করে দিতে পারি তাহলে সে আমাদের পক্ষ হয়ে লড়তে পারবেন। এছাড়া একেবারে শূন্য হাতে কোন কিছু একটা করা যাবে না।

আমার হাতে এখন কোন ধরনের ডকুমেন্ট নাই।আমি শুধু মামাদের কাছে সেই মেয়েটির বলা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ এর কথাটা জানালাম।

আমার ছোট মামার জরুরী একটা কাজের জন্য তাকে আবার নিজের এলাকায় চলে যেতে হয়েছে। সেইসাথে আমার বড় মামাও চলে গেছে।

সিসি ক্যামেরার ব্যাপারে কিছু বের করতে না পেরে সেই মেয়েটির নাম্বারে আমি কল দিলাম ফোন কয়েকবার বেজে গেল কিন্তু তারপরও ফোন রিসিভ করল না।

রাত দশটার দিকে সেই মেয়েটির নাম্বার থেকে আমার ফোনে একটা ফোন আসে ফোন রিসিভ করার পর সে বলতে লাগল…..

-আপনাকে ফোন দিতে মানা করা সত্ত্বেও আপনি আমায় আমার ফোন দিছেন। আমি তো বলেছি যে আমি আপনাকে ফোন দিব। কিন্তু আপনাকে তো আমি নিষেধ করেছিলাম। তারপরও আমাকে কেন বারবার ফোন দিচ্ছেন। আচ্ছা দেখুন এই খুনের সাথে আমার অনেক বড় একটা কিছু জড়িত আছে আমিও চাইব আপনার বোনের এই খুনের ব্যাপারটা বের হয়ে আসুক।আপনার বোন যদি জেলখানা থেকে বের হয় তাহলে আমি আমার একটা মূল রহস্য খুঁজে বের করতে পারব। আপনার মত আমিও চেষ্টা করতেছি যে অনিক খুন কিভাবে হল।

– আচ্ছা আপনি তো সেদিন আমাকে রেস্টুরেন্টের সিসি ক্যামেরা ব্যাপারটা বললেন। কিন্তু আমি সেই রেস্টুরেন্টে গিয়ে সিসি ক্যামেরার ব্যাপারে কিছু জানতে পারলাম না। এবং তারা আমার কাছে সমস্ত কিছু লুকিয়ে গেছে। আমি বারবার তাদের কাছে গিয়েছি কিন্তু তারা আমাকে কিছুই বলতে পারেনি।

– আপনি কি কোন আইনের সহায়তা নিয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন?

– না আমি একাই গিয়েছিলাম।

– আচ্ছা আপনি কেমন বোকা বলুন তো? আমি সেদিন বলেই দিলাম যে পুলিশ অফিসার এই সিসি ক্যামেরার ব্যাপারটা গোপন করে গেছে সবার কাছে। যেখানে পুলিশ অফিসার জড়িত আছে সেখানে আপনি কিভাবে একা গিয়ে সবকিছু জোগাড় করতে পারবেন? আপনার তো আইনের ব্যবস্থা নিতে হবে তাই না?আইনের সহায়তা নিয়ে রেস্টুরেন্টে যেতে হবে. আপনি একা গেলে তো আপনাকে কখনো কোনদিনও দিবেনা।

– আসলে আইনের পরিচিত তো আমার কেউ নাই. আমার আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু বান্ধব এর ব্যাপারে তো আপনি জানেনই।

– তা না হয় বুঝলাম কিন্তু তারপরও আপনার একা যাওয়া ঠিক হয়নি। যাওয়ার আগে আপনি আমাকে টেক্সট করে জানালেও পারতেন। আমি না হয় কোন কিছুর একটা ব্যবস্থা করে দিতাম।

– কিন্তু আপনি তো সেদিন না করে দিয়েছিলেন। আচ্ছা আমি আপনাকে একটা ব্যাপারে ফোন দিছি। ব্যাপারটা হলো আমার ছোট মামার এক পরিচিত উকিল আছে। অনেক নাম করা উকিল। কিন্তু সে বলতেছে আমাদের কিছু প্রমান তার কাছে হাজির করতে হবে তাছাড়া সে আমাদের হয়ে লড়তে পারবে না।

– হ্যাঁ তা তো অবশ্যই। কোন কেইস নিয়ে কোন ধরনের প্রমাণ ছাড়া একটা আসামির পক্ষে লড়তে যাবে না। আপনি এক কাজ করুন।

– জি বলুন আমি কি করতে পারি?

– অনিক খুন হওয়ার পিছনে পুলিশ অফিসারের হাতে রয়েছে যেটা পুলিশ অফিসার স্বীকার করতেছে না। আসলে অনিকের বাবা অনেক টাকা পয়সার মালিক। সেই টাকার জন্যই আপনার বোন খুব সহজে ফেসে গেছে।

– মানে কি? অনিকের বাবা টাকা পয়সা দিয়ে পুলিশকে হাত করে আমার বোনকে ভাসাবে কেন?

– অবাক হচ্ছেন তাই তো। আসলে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। হিমিকে যখন অনিক বাজে প্রস্তাব দিয়েছিল সেজন্য হিমি অনিকের বাবার কাছে নালিশ করেছে। এবং অনেক কটু কথা বলেছিল। অনিকের বাবা তখন হিমিকে কোন জবাব দিতে পারে নাই। যার কারণে অনিকের বাবাকে অনেক কথা বলেছিল। আসলে আপনার বোন তো আপনাকে কিছু আগে শেয়ার করেনি। কিন্তু আমি অনেক কিছু জেনে শুনে এসব ব্যাপারে জানতে পেরেছি।আপনি হয়তো ভাবছেন আমি কে? আসলে আপনি সময় হলে জানতে পারবেন যে আমি আসলে কে? আমার পরিচয় কি আমি? একটা কিছু না করে আমার পরিচয় আপনাকে দিতে পারতেছি না। আচ্ছা যাইহোক আমি একটু ব্যস্ততার মধ্যে আছি যার কারণে আমি আপনার সাথে কথা বলতে পারতেছি না। তবে আপনি একটু অপেক্ষা করুন সকল রহস্য খুব তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাবে। এবং আমিও এই খুনের রহস্য বের করার চেষ্টা করব।

আমি আসলে মেয়েটির কথা শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছি। সে কি বলতেছে? উনি কিভাবে এইসব কিছু সংগ্রহ করতেছে?তাতে তার লাভ?
এখন আমার বের করতে হবে আমার মামাতো বোনের নাকে যে নাকফুলটা। সেই ফুলটা আসলে সে কোথায় পেয়েছে? কিভাবে পেয়েছে? এই নাক ফুলের মধ্যে হয়তো কিছু একটা রয়েছে। আমার মামারা আমার বোনকে ফাঁসি দিয়ে তারা এখন নাটক করতেছে নাতো?

আমার মা মামাদের কাছে অনেক টাকার সম্পত্তি পায়। হয়তো তারা সেই টাকাটা আত্মসাৎ করার জন্য এমন টা করতে। এখন আমার বোন জেলে পস্তাচ্ছে এই ফাঁকে যদি আমাকে কোন একটা বিপদে ফেলে দেয় তাহলে হয়তো আমার মামারা কোন ঝামেলায় পড়বে না। কিন্তু আমার একটাই প্রশ্ন! তারা তাহলে কেনই বা উকিল নিয়ে আমার সামনে আসবে। কেন আমার বোনকে বের করার জন্য উকিল এর সাহায্য নিবে?

দিন তিনেক আগে আমি আমার কাকাকে ফোন দিয়ে বলেছিলাম একটা জমি বিক্রি করার জন্য। জমিটি বিক্রি করেছে কিনা সেটা এখন আমার জানতে হবে। আমার এই মুহূর্তে অনেক টাকার দরকার আমি আমার কাকাকে ফোন দিলাম….

– আসসালামু আলাইকুম কাকা কেমন আছেন।

– এইতো হাবিব ভালো আছি তোমার কি অবস্থা।

– কাকা আমাদের জমিটা কি বিক্রি করেছেন?আসলে আমার এই মুহূর্তে অনেক টাকার দরকার। জায়গা জমি বিক্রি না করলে আমি আসলে টাকাটা ম্যানেজ করতে পারতেছিনা।

– জমি বিক্রি করা কি এতটাই সহজ একটু সময় তো নিতে হবে তাইনা।

– কিন্তু আমি যে জমিটা বিক্রি করতে চাইতেছি এই জমিটা তো অনেকেই কিনার জন্য অপেক্ষায় আছেন। এবং অনেক আগেই আমাকে জমিটা বিক্রি করার ব্যাপারে বলেছিল। আসলে এত টা দেরি হওয়ার কথা না।

– আচ্ছা তোর কিছু ভাবতে হবে না।আর জমি অন্যকারো কাছে বিক্রি করতে হবে না।আমি দেখি টাকা ম্যানেজ করতে পারি কিনা।

– আচ্ছা আমি কি তাহলে আপনাদের বাড়িতে আসবো।

– হ্যাঁ আসতে পারিস তবে দিন চারেক পরে আয়। আমার তো টাকাটা ম্যানেজ করতে হবে তাই না? আচ্ছা শোন একটা কথা বলি। তুই যে জমিটা বিক্রি করতে যাচ্ছিস এই জমিটা তো তোর বাবার নামে এখানে তো একটা ভেজাল আছে।

– কিসের ঝামেলা এখানে তো আমি কোন ঝামেলাযই দেখতেছি না। আর তাছাড়া আপনারা তো আছেন তাই না? যেখানে যা লাগে সেখানে তো আপনারাই সামাল দিতে পারবেন।তাহলে এটা কি আপনারা ভেজাল কেন মনে করতেছেন।

– আচ্ছা আমি বলে কি এই জমিটা তো বিক্রি করে দিবি তাহলে জমিটা তুই আমাকে দিয়ে দে। জমির যে টাকাটা আসে সেই টাকাটা আমি তোকে দিয়ে দেবো। তাহলে তো আর কোন ঝামেলা হলো না।নিজেদের মধ্যে সবকিছু থাকলো। আর তাছাড়া এই সম্পত্তি তোর দাদার তাই না? আমি আসলে চাই না যে আমাদের সম্পত্তিগুলো বাইরে কারো কাছে বিক্রি করা হোক।

– ঠিক আছে তা না হয় মানলাম। কিন্তু আমার তো এই মুহূর্তে টাকাটা জরুরী। আপনি কি পারবেন সে টাকাটা দিতে? আর যদি না পারেন তাহলে আমার অন্য ব্যবস্থা করতে। আমি তো আপনাদের জন্য আমি কিছুদিন অপেক্ষা করতে পারব না। তাহলে আমার বোনের আরো ক্ষতি হয়ে যাবে।

– আচ্ছা তুমি চিন্তা করিস না কিছু একটা করে ফেলবো।

আমার কাকার সাথে কথা বলতে বলতে সেই মেয়েটি আমার নাম্বারে ফোন দেন আমি কাকার সাথে কথা বলা শেষ করে মেয়েটার কলটা রিসিভ করলাম।

-হাবিব একটা গুড নিউজ আছে সেটা হলো যে পুলিশ অফিসারঃ আপনার বোনেরে কেসটা নিয়েছে সে পুলিশ অফিসার চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছে। পুলিশ অফিসার বড় একটা ঝামেলা করে ফেলছে। আমাদের এই সুযোগে আগাতে হবে এবং এই সুযোগে আমরা বের করতে পারব যে অনিককে আপনার বোন খুন করেছে নাকি অন্য আর কেউ খুন করেছে।

– হ্যাঁ তাহলে আমার আপনার সাহায্য দরকার আপনি আমাকে একটু সাহায্য করেন।

– আমি না হয় সাহায্য করলাম। কিন্তু তার জন্য তো টাকা দরকার। এই মুহূর্তে তাহলে চার লক্ষ টাকা দরকার। আপনি তাহলে টাকাটা ম্যানেজ করুন আর আমিও দেখি কিছু একটা করতে পারি কিনা।

– এই মুহূর্তে চার লক্ষ টাকা কিভাবে সম্ভব?………

[চলবে………]

#হিমির_নাকফুল(৭ম এবং শেষপর্ব)
লেখাঃ Md. Nazmul Huda

পরের দিন আমার মামারা ফ্যামিলি সহ সবাই আমার বাসায় এসে উপস্থিত হয়েছেন। আমি বুঝতে পারলাম না তারা আসলে হুট করে এভাবে আসার কারন কি। আমি তোদের সবাইকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম।

তাদের আসার মূল কারণ আমার মামাতো বোনের হবু হাজব্যান্ড নাকি কোন একটা ঝামেলায় পড়ে গেছে। সেজন্যই তাদের হুট করে আসা।

মূলত আমার মামাতো বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে আরও প্রায় বছর খানেক আগে। আর যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে নাকি বড় পুলিশ অফিসার। আমার মামারা নাকি সেই পুলিশ অফিসারের জোরেই আমার কাছে এসেছিলো। আমার বোনের কেইস নিয়ে লরতে চেয়েছিল।

আমার মনে একটা খটকা লাগলো।গতকাল সেই অপরিচিত মেয়েকে বলেছিল হিমির কেইস যে পুলিশ অফিসার নিয়েছিলো সেই পুলিশ অফিসার বরখাস্ত হয়েছে তাহলে কি এই সেই পুলিশ অফিসার।

আমি আমার মামাতো বোনের কাছে জিজ্ঞেস করলাম যে তার হবু হাজবেন্ডের নাম কি? আমি নামটা শুনে বেশ অবাক হয়ে গেলাম। যে আমার মামাতো বোন বলল আহসান রহমান পুলিশ অফিসার নাকি তার হবু হাজব্যান্ড। চোখ দুটো ছানাবড়া বড় হয়ে গেল আমি কি শুনলাম?

আমার বোনের কেইস এই পুলিশ অফিসারই নিয়েছিল। আমি আমার বড় মামাকে বললাম…

– মামা ও যে পুলিশ অফিসারের বলছে সেই পুলিশ অফিসার আমার বোনের কেসটা নিয়েছে এবং আমার জানা মতে সেই পুলিশ অফিসার আমার বোনকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। আপনারা হয়তো কি ভাববেন জানিনা তবে আমি যেটা বলছি সেটাই সত্য। আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা তবে আমার বোন যে ছেলেটিকে খুনের দায়ে এখন জেলে বন্দী আছে সেই ছেলেটির বাবা অনেক টাকা পয়সার মালিক এবং সেই ছেলেটির বাবা এই পুলিশ অফিসারকে টাকা দিয়ে আমার বোনকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। মূলত আমার বোন অনিকের বাবাকে অপমান করেছিল চরম অপমান করেছিল। অনিকের এসব কার্যক্রমের জন্য। কিন্তু অনিকের বাবা সেখানে কোনো কিছু বলেনি। বরং অনিক খুন হয়ে যাওয়ার পরে আমার বোন হিমি কে ফাসিয়ে দিয়েছে। আর তাছাড়া অনিক ছেলেটা যে রেস্টুরেন্টে বসে ড্রিংকস্ করেছিল এবং যে রেস্টুরেন্টে বসে অনিককে বিষাক্ত ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে সেই রেস্টুরেন্টে ছিল সিসি ক্যামেরা। গোপন সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজগুলো পুলিশ অফিসার সরিয়ে নিয়েছে। যেহেতু সে পুলিশ অফিসার এখন দোষী হয়ে গেছে এবং তার সকল অপকর্মের কথা ফাঁস হয়ে গেছে এখন হয়তো সবকিছু জানতে পারবেন।
আমি এই আহসান রহমান পুলিশ এর ব্যাপারে গতকালই জেনেছি এবং জেনেছিত তার অপকর্মের কারণে সে তার চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়ে গেছে।

– কি বলতেছিস আমার তো সবকিছু মাথায় ঢুকতেছে না!

– হ্যাঁ আমি যেটা বলছি এটাই সত্য। আর খুব তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাবে এবং আমার বেশ ভালো হয়েছে আহসান পুলিশ অফিসার চাকরি থেকে বরখাস্ত। তার সমস্ত অপকর্ম ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারনেই আমার বোন অনায়াসেই মুক্তি পেয়ে যাবে।
মামা আমি আমি মিলির কাছে জিজ্ঞেস করতে চাই ওর ডায়মন্ডের নাকফুল টা পেয়েছে কোথায়।

– ওটা তো আহসান দিয়েছিল মিলিকে। এইতো প্রায় দুই মাস আগে এই নাক ফুলট আমি মিলিকে দিয়েছে।

– কিন্তু আপনি কি জানেন এই নাকফুলটা আসলে কার?

– না আমি কি আমি কিছুই জানিনা।

– নাকফুলটা আমার বোন হিমির। অনেক কষ্টের টাকা দিয়ে বানিয়ে দিয়েছিলাম। এবং এই যে ডিজাইনটা আমি দিয়েছি এই ডিজাইন টা ওটা আনকমন। যেটা সব জায়গা এভেলেবেল পাওয়া যাবে না। যাইহোক আমি এব্যাপারে আপাতত কিছু বলবোনা প্রমাণ আস্তে আস্তে সময় বের হয়ে যাবে।

আহসান রহমান চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার জন্য সবারই মন খারাপ। আমি তাদের সাথে কথা বলতে বলতে সেই মেয়েটি আমাকে ফোন দিয়ে বলল থানায় যেতে।

আমি তড়িঘড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম।আমার জানাতে পর্যন্ত মনে ছিল না মামাদের।যেভাবে বলেছেন সেভাবেই বাসা থেকে বের হয়ে গেছি।

আমি থানায় গিয়ে বেশ অবাক হয়ে গেলাম। এতদিন যে মেয়েটি আমার কাছে অপরিচিত হয়েছিল সেই মেয়েটি একজন পুলিশ অফিসার।তদন্ত পুলিশ অফিসার।

মূলত আহসান রহমান এর নামে অনেক আগে থেকেই রিপোর্ট যাচ্ছিল উপর মহলে। এই আহসান রহমানকে ভালোমতো চেনা জানার জন্য এসব রিপোর্টগুলা যাচাই-বাছাই করার জন্য এই পুলিশ অফিসার মানে যে মেয়েটা আমার কাছে অপরিচিত সে এ ব্যাপারটা নিয়ে তদন্ত করেছে।

মেয়েটি আমাকে হাসতে হাসতে বলে

– হাবিব সাহেব আপনার এখন কেমন বোধ লাগতেছে?আপনার বোন খুব তাড়াতাড়ি জেল থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে। সে আসলেই একজন নির্দোষ মেয়ে।

আচ্ছা আমি আপনাকে অনেকগুলা ডকুমেন্ট দিয়েছিলাম অনিক এর তাই না? জানেন সেই ডকুমেন্ট গুলা আগেই আমি পেয়েছিলাম।

আমি জানতাম আপনার বোন নির্দোষ। কিন্তু তারপরও আমি আপনাকে ঘুরাতে কেন কি হয়েছে জানেন? কারণ নইলে সহজেই আপনি সব গুলিয়ে ফেলতেন। আজ আহসান বেআইনিভাবে মানুষের কাছ থেকে অনেক টাকা কামিয়ে নিয়েছেন এবং সবকিছুই নিজে স্বীকারোক্তি করেছেন।

আপনি একটা ব্যাপার জানলে অবাক হবেন। ব্যাপারটা কি জানেন আপনি?

– না আমি জানতে চাই না। আমি শুধু চাই আমার বোন যাতে খুব তাড়াতাড়ি আমার কাছে ফিরে আসুক।হিমি কখন ফিরে আসবেম

– আহসান রহমান ভেবে বসেছিলেন এক ঢিলে দুই পাখি মারবেন আর এই এক ভাবনার কারনেই ফেসে গেছে।মূলত অনিক ছেলেটি কে খুন করেছে আহসানের বোন। অবাক লাগছে তাইনা?
আসলে অনিক আপনার বোনের কাছ থেকে ডায়মন্ডের নাকফুল টা নিয়েছে জোর করে। আপনার বোন হিমি এই ব্যাপারে কিছু বলে নাই।হিমিকে বিভিন্নভাবেই ব্ল্যাকমেইল করতে ছিল অমিক। হিমি অনিককে টাকা দেয় নি তাই ওর নাকফুল হাতিয়ে নিয়েছে।

তবে হ্যা কিছু কিছু মুহূর্তের অন্তরঙ্গের ছবি ছিল অনিকের কাছে কিন্তু যে ভিডিও গুলো ছিলো সবগুলো অনিকের মেকিং করা। আসলে অনিক হিমির কাছে অনেকদিন ধরে টাকা চেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হিমি কোনো টাকা পয়সা দেয় নি। পরে একপর্যায়ে জোর জবরদস্তি করে হিমির কাছ থেকে অনিক নাকফুলটা নিয়ে নেয়।

আর এই নাকফুলটা নেওয়ার কারণে অনিক খুন হয়েছে। মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করা প্রেম করা এটা ছিলো অনিকের পেশা। অনিক দু’জনকেই ডায়মন্ডের আংটি দেওযরার লোভ দেখিয়ে ছিল। যে লোভের কারণে অনিক খুন হয়েছে। আহসান রহমানের বোনের সাথে অনিকের পরিচয় চার মাস আগে। আর সেই পরিচয় দিয়েই ওদের প্রেম শুরু হয়। আসলে অনিক ছেলেটা বেশ চালাক ছিল বড়লোকের মেয়ে দেখে দেখে প্রেম করতো।যাইহোক ওসব বাদ দিয়ে আমি বলছি আপনি শুনুন।

আপনার বোনের বিয়ের আগের দিন রাতে অনিক আসলেই আপনার বোনকে নাকফুল টা ফেরত দিতে এসেছিল। তবে কারণটা জানি না কোন কারণে অনিক নিজে এসে হিমিকে নাকফুলটা দিতে এসেছিল

আহসান এর বোন ছিল অনেক জেদি।অনিক নাকফুল ফেরত দেওয়ার বিষয়টা আহসানের বোনকে জানিয়েছিলো।এবং আহসান এর বোন অনিকের ব্যাপারে জেনে গিয়েছিলো।এবং আহসানের বোনের সাথেও ফ্লার্ট করেছে।অনিক খুন হওয়ার দিন আহসানের বোনের সাথে অনিকের মিট করার কথা ছিলো।আর সেই সুযোগেই খুন করেছে আহসানের বোন।

যাই হোক সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে। আপনার বোন হিমির কোন দোষ ছিলনা। দোষ ছিলো আহসান রাহমান এর বোনের।সব কিছু প্রকাশ হয়ে গেছে এখন তাদের শাস্তির পালা।

এখন সমস্ত ডকুমেন্ট গুলো কোর্টে জমা দিয়ে দেওয়া হবে। তারপরে আপনার বোন জেলখানার শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে। হয়তো একটু লেট হবে সপ্তাহখানেক থাকতে হবে তার জেলখানার মধ্যে। তারপরে সে মুক্তি পাবে।

জেলখানার সামনে আমরা সবাই মিলে হিমির জন্য অপেক্ষা করতেছি। কখন বের হবে আমার পৃথিবীটা।আমি আমার মামারা আমার মামিরা মামাতো বোন সবাই অপেক্ষায় আছি।অপেক্ষার প্রহর বুঝি শেষ হয় না।

হিমি মুক্তি পেয়ে আমার কাছে ছুটে এসেছে। ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো হিমির সাথে আমার মামারাও কাদছে আমিও কাদছি।

আমি শুধু সেই মহিলা পুলিশ অফিসারটিকে ধন্যবাদ জানালাম। হিমিকে নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম যে সে পুলিশ অফিসারের সাথে কথা বলতে পারেনি।

বাসায় আসার পরে আমার মামাতো বোন সেই নাকফুলটি হিমির হাতে দিয়ে পডরতে বলে। কিন্তু হিমি আর সেই নাকফুলটি নাকে পড়েনি।

আমার মামারা বেশ কয়েকদিন ধরে আমাদের বাসায় রয়েছে কিন্তু হঠাৎ করে আমার ছোট মামার মন পরিবর্তন হয়ে গেলো।সে সবার মাঝেই আমাকে বলে উঠল।

-হাবিব এবং হিমি আমরা তোমাদের সাথে অনেক অন্যায় করে ফেলেছি। আমরা তোমাদের আমাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। যেটা আমাদের আসলে অনেক ভুল ছিল। জানি না তোমরা আমাদের কখনো ক্ষমা করতে পারবে কিনা কিন্তু এই ভুলটা আমি শুধরে নিতে চাই। আমি আমার বোনের মনের কষ্টটা মুছে ফেলতে চাই।হিমি এবং তুমি আমাদের ছেলে মেয়ের মতই। হাবিব তুমি যদি চাও তাহলে তুমি আমার মেয়েকে তোমার সারা জীবনের জন্য জীবনসঙ্গী করতে পারো। আমি জোর করব না। যদি তোমার ইচ্ছে হয় তাহলে তুমি তোমার এই মামার কথাটা মেনে নিবে।

আমি তাদের কাছে সময় নিয়েছিলাম। কিন্তু একপর্যায়ে হিমি আমাকে বলল আমার মামাতো বোন মিলিকে বিয়ে করতে। তারা যেহেতু তাদের ভুলটা বুঝতে পেরেছে এবং তারা নিজের ইচ্ছাতেই বিয়ের প্রস্তাব টা দিয়েছে আমি যেন এই প্রস্তাব মেনে নিয়ে মিলিকে সারা জীবনের জন্য আমার জীবনসঙ্গী করি।

আমাদের বিয়ের দিন মিলির নাকে ওর সেই পছন্দের নাকফুল টা পরিয়ে দেয়। এবং পরিয়ে দিতে দিতে বলতে থাকে…

-নাকফুলটা আমার অনেক ভালোবাসার।ভাইযয়ার কাছে অনেক বড় একটা আবদার করেছি। আমার সেই ভাই আবদার পূরণ করেছে। তাই আমি চাই আমার এই ভালোবাসাটা আমি আমার ভাইয়ের জীবন সঙ্গীর কাছে থাকবে।

তারপরে আমাকে এর চাইতে অনেক ভাল একটা নাকফুল আমার ভাইয়া আমাকে গিফট করবে।তাই না ভাইয়া?হাহা!

#সমাপ্ত