হিমির নাকফুল পর্ব-০৫

0
2006

#হিমির_নাকফুল(৫ম পর্ব)
লেখাঃ Md. Nazmul Huda

পরক্ষনেই আমার মনে হলো হিমির সেই নাকফুল টা কোথায়? প্রায় বছর খানেক আগে আমি এরকম একটা ডায়মন্ডের নাকফুল হিমিকে দিয়েছিলাম। ভার্সিটিতে যখন হিমি ভালো একটা রেজাল্ট করে তখন হিমি আমার কাছে একটা ডায়মন্ডের নাকফুল আবদার করেছিল। আমি আমার ইনকামের জমানো টাকা দিয়ে হিমিকে এরকম একটা নাকফুল আমি বানিয়ে দিয়েছিলাম তবে আমার জানা মতে এই যে নাকফুল এরকম নাকফুল দ্বিতীয় আর হবে না।

এই যে নাকফুলের ডিজাইন এমন ডিজাইন টা আমি নিজেই চয়েস করে দিয়েছিলাম। আর এই ডিজাইনের সাথে আরও কিছু ডিজাইন আমি অ্যাড করে দিয়েছিলাম যেটা অলংকারের দোকানদার বানাতে হিমশিম খেয়ে ছিল। এবং বেশ কয়েকদিন সময় নিয়ে এই নাকফুল টা দিয়েছিল।

আমি মামা দের কাছ থেকে ভালো কিছু আশ্বাস পেয়ে এবং তারা আমাকে যে আশ্বাস দিয়েছে সেই বিশ্বাসটা নিয়ে আমি হিমির কাছে ছুটে চলেছি। আমি এখান থেকে গিয়ে সর্বপ্রথম হিমির সাথে দেখা করব। কিন্তু তার আগে আমার আরেকটা সমস্যা হলো, আমি যে টাকা ইনকাম করেছিলাম সেই টাকা আমি হিমির বিয়ে উপলক্ষে খরচ করে ফেলেছি। এখন আমার হাতে তেমন টাকা পয়সা নেই। আর এখন আমার টাকা ম্যানেজ করার জন্য আমার কাকাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এবং আমাদের কিছু জমি বিক্রি করে টাকা জোগাড় করতে হবে। আমার মামাবাড়ি থেকে যতই বলুক না কেন তারা টাকার দিক দিয়ে সাহায্য করুক বা অন্যান্য দিক দিয়ে সাহায্য করুক তারপরও আমার তো টাকা ম্যানেজ করতে হবে। সম্পূর্ণ তাদের উপরে ভরসা তো আমি রাখতে পারব না।

আমি তার চাইতে বড় অবাক হলাম যে এতদিন আমার মামাদের সাথে কোন সম্পর্ক ছিল না আমি তাদের বাসায় যাইনি তারাও আমাদের বাসায় আসেন নি কিন্তু তারপরও তারা আমাকে যে আশ্বাস দিয়েছে এবং বলেছে যে তারা আমাকে যে কোন ভাবে সাহায্য করবে। আসলে আমি আজকে অনেকটা খুশি হয়েছি কিন্তু এর চাইতে বেশি খুশি হতাম যদি আমার মা বেঁচে থাকত। তখন যদি তাদের সাথে আমাদের ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হতো তাহলে আমার মাকে সব চাইতে বেশি খুশি করাতে পারতাম। আমার মা ভেবেছিল তিনি বেচে থাকতে হয়তো কোন একদিন তার ভাইয়েরাও সমস্ত অভিমান ভেঙে ভুল বুঝতে পেরে আমাদের সবাইকে আবার কাছে টেনে নিবে। কিন্তু ভাগ্যের এই যে খেলায় আমার মা যখন বেঁচে নেই তখনই আমার মামারা আমাদের কাছে এসেছে।

মামা বাড়ি থেকে রওনা হয়ে অনেক দূর চলে এসেছি সমস্ত ভাবনার মধ্যে থেকে সেদিনের সেই মেয়েটি আমাকে ফোন দেয়….

– হাবিব আপনি কোথায়? আমি আসলে একটা ব্যাপার আপনাকে শেয়ার করতে ভুলে গেছিলাম যেটা আপনাকে শেয়ার করা আমার খুবই জরুরী ছিল। কিন্তু আসলে আমি আসলেই ভুলে গেছিলাম। আচ্ছা আপনি কি আমার সাথে আজকে কোন না কোন ভাবে দেখা করতে পারবেন???

– আমিতো এখন গাড়িতে। আমার গাড়ি থেকে নামতে আরো প্রায় পাঁচ ঘন্টার মত লাগবে।

– আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে আপনি সন্ধ্যার দিকে আসেন আমরা যে লেকে গিয়েছিলাম সেখানেই না হয় আসেন। সন্ধার দিকে সেদিন যে টাইমে এসেছিলেন।

– আচ্ছা ঠিক আছে আমি চেষ্টা করবো। তবে আমি যদি না আসতে পারি তাহলে আমি আপনাকে একটা টেক্সট করে জানিয়ে দেবো।

এসব বলেই তো ফোনটা কেটে দিলাম।কিন্তু আমি আজ বিকেলে তার সাথে দেখা করতে পারবো কিনা জানিনা। কারণ, আমি এখান থেকে গিয়েই আগে আমি আমার বোনের সাথে দেখা করব।

জানিনা মেয়েটি আমাকে কোন ব্যাপারে কি বলবে। কিন্তু একজন অপরিচিত মানুষ আমাকে হেল্প করার জন্য এগিয়ে আসতেছে এটাই অনেক কিছু। কিন্তু হবে এরকম সাহায্য যদি আমি আগে পাইতাম তাহলে হয়তো আজ আমার বোনের জন্য এতটা ক্ষতি হত না। আর আমার বোনের বন্দী থাকতে হতো না।

গাড়ি থেকে নেমে আমি আমার বোনের কাছে গেলাম আমার আর বাসায় যাওয়া হলো না। আমি সেখান থেকে সোজা হিমির কাছে গেলাম। জেলখানায় গিয়ে আমি হিমির সাথে দেখা করার কথা জানালাম কিন্তু আমাকে দেখা করার জন্য কেউ পারমিশন দিলো না। আসলে একজন যাবত জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির কাছে নাকি বারবার যেতে পারে না। তারপরও অনেক রিকুয়েস্ট করে আমি হিমির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমাকে দেখে হিমি দৌড়ে আমার কাছে ছুটে আসলো। হঠাৎ করেই থমকে দাঁড়ালো হিমি। কি না কি ভেবে মাথাটা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। হিমি সামনে গিয়ে আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছি না তারপরও বললাম…..

– বোন আমার তোর কাছে জিজ্ঞেস করবো না তুই কেমন আছিস। আমি জানি তুই যে ভালো নেই। আচ্ছা বোন তুই চিন্তা করিস না আমি তোর জন্য চেষ্টা করতেছি কিভাবে তোকে জেলখানা থেকে বের করা যেতে পারে। তুই আর কিছুদিন অপেক্ষা কর আমি যেকোনো ভাবেই এখান থেকে তোকে আমি বের করবো।তোর এই ভাই এর উপর তো একটু ভরসা রাখ।

– ভাইয়া আমার জন্য তোমার কিছুই করতে হবে না। আমি আরো শাস্তি চাই। আজ আমার জন্য আমাদের মা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। আমি এখান থেকে বের হয়ে কি করবো কার কাছে যাবো? আমি কাকেই বা মা বলে ডাকবো? এর চাইতে যদি আমাকে একবারের ফাঁসি দিয়ে দিতো তাহলে অনেক ভালো হতো। তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলছি ভাইয়া। আমি আসলে তোমাদের জন্য কিছু করতে পারিনি। তোমাদের সমস্ত স্বপ্ন আমি নষ্ট করে দিয়েছি।আমি একটা খুনি আমি আমার মাকে খুন করে ফেলছি। আচ্ছা ভাইয়া আমাদের সংসারটা তো অনেক ভালোই ছিল তাই না? তুমি আমি মা কত সুন্দর ভাবে দিনগুলো পার করতাম। আমাদের যে বাবা ছিল না তা কখনো আমার মনেই পড়েনি। সমস্ত চাওয়া তুমি পূরণ করে দিয়েছো। বাবার অভাব তুমি কখনো বুঝতে দাওনি। তুমি আমার জন্য অনেক কিছু করেছো। শুধু আমার জন্য না আমার মায়ের জন্যেও অনেক কিছু করেছো। নিজের লাইফটা শেষ করে দিয়েছো। পড়াশোনা করতে পারোনি আমাকে মানুষ করার জন্য। এমনকি তোমার বয়স অনেক হয়ে গেছে তারপরও তুমি বিয়ে করোনি। আমাকে বিয়ে দেবে সুন্দর একটা ফ্যামিলিতে। আমার জন্যই নিজের লাইফটা শেষ করে দিয়েছো।ভাইয়া তুমি আর কখনো আমার কাছে এসো না।আমি আর চাই না তোমার কষ্ট হোক।

– তুই জানিস তোকে বের করার জন্য এখন আমাকে অনেক মানুষ সাপোর্ট করে? আমার মামাবাড়ির মানুষ আমাকে কাছে টেনে নিয়েছে। তারা আমাকে বলেছে তোকে এখান থেকে বের করার জন্য যা করার তারা করবে। সমস্ত ধরনের সাহায্য তারা করবে। চিন্তা করিস না। তোর কাছে একটা কথা জানতে চাই তুই আমাকে সত্যি করে বলবি?

– কি জানতে চাও তুমি?

– আচ্ছা তুই তো আমার কাছে একটা ডায়মন্ডের নাকফুল চেয়েছিলি, যেমন ডিজাইনের নাকফুল চেয়েছিলি আমি তেমন ডিজাইনের নাকফুল দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই নাকফুলটা তো তোকে পরতে দেখিনা। সেই নাকফুলটা কোথায়?

– কেন সেই নাকফুলটা দিয়ে কি হবে? সেই নাকফুলটা তো আমাদের ওয়ারড্রব এর মধ্যেই ছিলো এবং উপরের ড্রয়ারের মধ্যেই আছে।আমি চেয়েছিলাম বিয়ের দিন নাকফুলটা আমি ব্যবহার করবো। কিন্তু ভাগ্যের খেলায় হেরে গিয়ে আর সুযোগ পেলাম না।

– আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখন চলে যাচ্ছি। আর, দু একদিনের মধ্যেই হয়তো মামারা তোকে দেখতে আসবে তোর কাছে আসবে।

– কোন দরকার নেই। সেই ছোটবেলা থেকে এত বড় হয়ে গেছি কিন্তু মামারা আজ পর্যন্ত আমাদের কাছে টেনে নিতে পারল না আমাদের ভালোবাসতে পারলো না তারা কিসের জন্য আসবে আমাকে দেখতে? তুমি তাকে নিষেধ করে দিও আর তারা আসলেও আমি তাদের সামনে যাবনা।

– তারা তো তাদের সমস্ত ভুল বুঝতে পেরেছে তোর কথা শুনে তারা অনেক কান্নাকাটি করেছে। এবং তারা আমাকে ভাল একটা আশ্বাস দিয়ে বলেছে যে তোকে এই জেলখানা থেকে বের করবেই। আচ্ছা আমার লেট হয়ে যাচ্ছে আমার বাইরে একটা কাজ আছে। আবার পরে আসবো তোর কাছে আমি।

হিমির কাছ থেকে চলে এসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সন্ধ্যে হতে এখনো প্রায় দেড় ঘন্টা বাকি আছে। আমি সেই মেয়েটি নাম্বারে টেক্সট করে লেকে আসতে বললাম। সেই মেয়েটির জন্য আমি অপেক্ষা করতেছি। সে একটা গাড়ি থেকে নেমে সোজা আমার কাছে চলে আসলো।

– হাবিব কেমন আছেন আপনি? আপনাকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে?

– আমি কেমন থাকতে পারি আপনিই বলুন?

– আচ্ছা আমি আপনার জন্য একটা গুড নিউজ নিয়ে এসেছি সেটা আপনি চাইলে কাজে লাগাতে পারেন।

– জি বলুন আমি অবশ্যই ভালো হলে সেই নিউজটা কাজে লাগাবো।

– অনিক ছেলেটা যে রেস্টুরেন্টে বসে ড্রিংকস করেছিলো সেই রেস্টুরেন্টে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। অথচ পুলিশ সবার কাছে এই সিসি ক্যামেরার ব্যাপারটা হাইড করে গেছে। এবং আমি সিওর অনিককে কে কখন ড্রিংস এর মধ্যে বিষাক্ত পিল মিষিয়ে দিয়েছে, সে সমস্ত কিছু সেই সিসি ক্যামেরার মধ্যে রয়েছে। আপনি জরুরিভাবে অন্য কারো মাধ্যমে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ গুলো সংগ্রহ করবেন। এবং সেই সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ গুলো বের করে আমাকে জানাবেন। আর ঠিক তখনই আমি আপনাকে আমার পরিচয়টা দেবো। এর আগে আমি আপনার কাছে অপরিচিত হয়ে থাকবো। তবে আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন। আমি আপনার জন্য যথেষ্ট পরিমান হেল্প করবো। আপনি হতাশ হবেন না আমি আপনার জন্য চেষ্টা করতেছি হিমিকে কিভাবে বের করা যায়।

মেয়েটির কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম; পুলিশ সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ এর কথাটা গোপন কেন করেছে? বুঝতে পারলাম না গোপন করার কারণ কি। মেয়েটি আমাকে কিছু না বলেই এখান থেকে হুট করে চলে গেলো। একটা মুহূর্ত লেট করলো না। জাস্ট সে এই ব্যাপারটা বলতে এসেছিল।

আমি বাসায় কি ওয়ারড্রব খুলে চেক করলাম কিন্তু কোথাও হিমির সেই নাকফুলটা পেলাম না। তাহলে মামাতো বোনের নাকে যে নাক ফুলটা ওটাই হিমির নাকফুল?

কিছু মামাতো বোন সেই নাকফুলটা কিভাবে পেল।আমার বেশ সন্দেহ হচ্ছে।আমার সাথেই কেনো গেইম খেলা হচ্ছে?নাকি আমিও বিপদের দিকে পা বাড়াচ্ছি……..

[চলবে………]