হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে ছিলে পর্ব-২৪+২৫

0
363

উপন্যাস :হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে ছিলে।

কলমে: চন্দ্রা।

পর্ব:২৪

জেলা শহর থেকে খানিকটা দূরের একটা মফস্বল এলাকা।ধরি,সে স্থানের নামটা কাটোয়া । নিকটবর্তী শহরে যারা স্বল্প বেতনের চাকুরী করেন তাদের জন্য স্বল্প খরচের আবাসিক ভবনের অভাব নেই এই কাটোয়ায়। সে হোক ইট পাথরের তৈরি বহুতল ভবন কিংবা ইটের দেওয়ালের টিনসেড ঘড়।

মেইনরোড থেকে খানিকটা দূরে এগিয়ে গিয়ে একটা দোতলা ভবনের উপর তলার দুইরুম বিশিষ্ট ঘড়। এখানে এতটাই প্রসস্থ পথটা, একমাত্র বাইসাইকেল ছাড়া কিছুই ঢোকার জো নেই। একমাত্র অতি দায়ে না পরলে কেউ এই গলি মুখো হয় বলে মনে হয়না।গলির পাশ দিয়ে অপরিচ্ছন্ন জলীয় নালা থেকে গল গল করে হাওয়ায় ভাসে নাক ঝাঁঝালো দম আটকানো গন্ধ। তবুও সেটা বিলাসবহুল এলাকা খাতায় সবার উপরে আছে। এখানে যারা ভাড়া নিয়ে বা নিজস্ব বাড়িতে থাকেন কেউই ছা পোষা লেভেলে পরেন না কিন্তু ঐ যে রাস্তায় গলিত লাশের গন্ধ এড়িয়ে নাকে রোমাল চেপে পাশ কাটিয়ে গা বাঁচানো বাঙালির স্বভাব কি না? আবার কারো বাড়িতে বৌ, শাশুড়ির একান্ত ব্যক্তিগত কোন্দল দেখতেও বাঙালির আগ্রহের শেষ নেই।তো আসল কথায় আসা যাক,,,সেই দোতলা বিশিষ্ট ভবনের উপর তলার দুইরুম বিশিষ্ট বাসাটিকে কবুতরের খোপের সাথে তুলনা করা চললেও আধুনিক এবং মানসম্মত রুচির পরিচয় অবশ্যই বহন করে।দরজা খুলতেই দামী দামী ফার্নিচার চোখে পরবে।যা অভিজাত শ্রেণীর লোকে ছাড়া ব্যবহার করে না।হালকা গোলাপী দরজার ভেতরে দামী পালঙ্কে অর্ধ নগ্ন হয়ে শুয়ে আছে এক রমনী।বয়স হয়তো পয়ত্রিশের কাছাকাছি বা তারও কম কিন্তু প্রথম দেখায় পঁচিশের বেশী ভাবা সম্ভব নয় সৌন্দর্যের পূজারী কোনো ব্যক্তির।সে উঠে বসতেই একঝটাকায় নিজের নগ্ন বুকের উপর ফেলে দেয় পাশে থাকা পুরুষটি।ধীরে ধীরে দুজনে মাতে অবাধ্য নিষিদ্ধ প্রেমে।ঠিক প্রেম বললে ভুল হবে। পরকীয়া ই এই সম্পর্কের সঠিক নাম করণ। সময়ের ব্যাবধানে আত্মতৃপ্তির শেষ পর্যায়ে আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে বিছানায় শরীর ছেড়ে দেয় দুজনেই।

কিছুক্ষণ অতিবাহিত হয়েছে এরই মধ্যে,, বেডরুমের লাগোয়া বাথরুম থেকে বেরিয়ে পুরুষ টি নিজের স্যান্ড পরিহিত শরীরে শার্ট পরতে পরতে বললো ব্লাঙ্কেটে ঢাকা নারীকে,,অর্পিতা উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।

ব্লাঙ্কেট সহ নড়ে ওঠে অর্পিতা। আড়মোড় ভেঙে বলে হাই তুলে,,,,তুমি কি আজ চলে যাবে রঘু?

হুম যেতেই হবে। অনেক কাজ আছে আমার।আগে ফ্রেশ হয়ে এসো তোমাকে পৌঁছে দিয়ে যাবো হাসপাতালে।শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ভাজ করে নেয় রঘু।মুখে ঝলমল করছে শারীরিক তৃপ্তির আলোক রশ্মি।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে বসে অর্পিতা।পাশে থাকা তোয়ালে জড়িয়ে নেয় সম্পূর্ণ বিবস্ত্র দেহে।মেঝে থেকে অন্তর্বাস গুলো কুড়িয়ে নিয়ে ঢুকে পরে ওয়াশ রুমে।
কিছুক্ষণ পর অন্য তোয়ালে জড়িয়ে লাস্যময়ী মোহময় জল চিকচিকে শরীরে দাঁড়ায় বড়ো সাইজের ড্রেসিং টেবিলের সামনে।পশমহীন সুন্দর সুগঠিত পা দুখানির হাঁটুর উপর অব্দি তোয়ালে।সামনে থরে থরে সাজানো দেশী বিদেশী সব প্রসাধনী সামগ্রী।একটু একটু করে যত্ন করে নিজের এই কোমল শরীরে মাখবে অর্পিতা।এমন রূপে ঘোর লাগে রঘুনাথের।সোফা থেকে উঠে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে অর্পিতাকে,মুখ ডোবায় উন্মুক্ত কাঁধে।
গ্রামের দরিদ্র ফ্যামিলি থেকে উঠে আসা অর্পিতা, কোনোরকমের এস, এস, সি টপকানোর পরে সরকারী খরচে নার্সিং পড়েছিলো বেশ আগে।সেই সুবাদে সরকারী হাসপাতালের সিনিয়র নার্স এখন। কিন্তু উচ্চাভিলাসী অর্পিতা ঐ অর্থে খুশি ছিলো না।তার স্বপ্ন বড়লোক হওয়া। বিভিন্ন ডঃ দের সাথেও তার অনৈতিক সম্পর্ক ছিলো কিন্তু বিয়ে করেনি কেউই।ফুলে ফুলে মধু খেয়ে বেড়ানো ভ্রমর কি কখনো বাসা বাঁধে? অবশেষে বছর দুই আগে কপাল খুললো তার।পেলো রঘুনাথকে। সেদিন রঘুনাথ কোন এক নেতাকে নিয়ে এসেছিলো ব্লাড টেস্ট করাতে।সেই থেকেই পরিচয় রঘুনাথের সাথে।আস্তে আস্তে শরীর দেখিয়ে এমন বশে করে নিয়েছে রঘুনাথকে সে এখন অর্পিতা ছাড়া কিছুই বোঝে না।মামা, মামির সংসারে রাজার হালে মানুষ হলেও মাতা,পিতা হারা রঘুনাথ নিজের একটা নিজস্ব দুনিয়ার স্বপ্ন দেখেছিলো স্ত্রী জয়াকে নিয়ে।সেই স্ত্রীকে দিনের পর দিন ঠকাতেও তার বিবেকে বাঁধে না একটুও শুধুমাত্র এই অবৈধ পরকীয়া সম্পর্কের জন্য।রঘুনাথের বিবেককে জাগতে দেয় না অর্পিতা। নিজের সুন্দর সুগঠিত ফিগার আর বাকপটুতায় নিখুঁতভাবে বেঁধে ফেলেছে রঘুনাথের মতো অমন নম্র, ভদ্র,সচ্চরিত্র রঘুনাথকে।যার এখন আর চরিত্র বলে কিছুই অবশিষ্ট নেই।
রঘুনাথ তার কাজ করেই চলেছে। রুপের নেশায় আসক্ত মাতাল রঘুনাথকে আয়নার প্রতিবিম্বে দেখে ঠোঁটের কোনে কুটিল হাসি ফুটে উঠল অর্পিতার।হ্যা সে পেরেছে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে।অনেক দিয়েছে রঘুনাথ তাকে।টাকা,পয়সা,সোনার গহনা ইচ্ছে মতো বাগিয়ে নিয়েছে অর্পিতা।এখন শুধু ঐ টাকা ওয়ালা মানুষটাকেই কাগজে কলমে নিজের নামে করে নেওয়া বাকী। এখনি মোক্ষম সময় ব্রহ্মাস্ত্র নিক্ষেপ করার নইলে কূলে এসে তরী ডুববে।

সুইটহার্ট,,, তুমি আমাকে ভালোবাসো তো?সত্যি করে বলো না?ন্যাকামির সেরা যাকে বলে।

হ্যা ভালো বাসি।সত্যিই ভালো বাসি।ঘোরলাগা কন্ঠে বলে রঘুনাথ।

আমরা বিয়ে কবে করছি বলো?আর দূরে দূরে থাকা ভালো লাগে না।নাকি সুরে বলে অর্পিতা।

করবো তো বিয়ে। নির্বাচনটা হয়ে যেতে দাও।আমরা তো কাছাকাছি ই আছি।

তাহলে তোমার বউকে ডিভোর্স দিয়ে দাও!শেষ অস্ত্র ত্যাগ করে অর্পিতা।

অর্পিতার শরীরে বিচরণ করা হাতটা কেঁপে উঠল রঘুনাথের।ঘোর কাটে তার। বুকের ভেতর কেউ যেনো লোহার রড ঢুকিয়ে দিলো এইমাত্র।

নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় অর্পিতাকে,,,,
জয়াকে ডিভোর্স দিলে ও কোথায় যাবে?ও থাকুক না ওর মতো। তুমি এখানেই থাকবে। নতুন যে জমিটা কিনেছি ওখানেই তোমাকে প্রাসাদ গড়ে দেবো।বিয়ের পর দুজনেই থাকবো সেখানে। অর্পিতাকে মানানোর চেষ্টা করে রঘুনাথ।
অর্পিতার মনে খুশির দামামা বেজে ওঠে। রঘুনাথ তার প্লান অনুযায়ী চলছে। মানুষ যখন অতিরিক্ত পুলকে থাকে বা অধিক আনন্দিত হয়ে পরে তখনি সে আবেগের বশে ভুল করে বসে।অর্পিতাও করলো সেই রকম একটা ভুল,,,,

বলছিলাম কি,, আমাদের পেছনে যে শত্রু লেগেছে। সেদিন আমাকে যা না হয় তাই বলে গেলো তার কি কোনো সাজা তুমি দিতে পারবে না রঘু??রঘুনাথের শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতেই বললো অর্পিতা।

রঘুনাথের দৃষ্টি স্থির হয়ে ভ্রু কুঁচকে আসে,,,

কার কথা বলছো তুমি?সেই ছেলেটাকে তো হাত ভেঙে দিয়েছি।ওর সাজা দেওয়া হয়েছে।

না না,,যে আমাকে আমারই বাসায় দাঁড়িয়ে এতবড়ো অপমান টা করলো তার শাস্তি চাই কঠিন শাস্তি যাতে ভুলেও আর আমার সাথে লাগতে না আসে।

তুমি রিতির কথা বলছো?ও আর আসবে না।নিরস কন্ঠ রঘুনাথের।

কঠিন হয়ে ওঠে অর্পিতার চোখ মুখ,,

না আসলে ভালো।আর যদি কোনোদিন এসেই পরে তো ওকে ফিরে যেতে দেবো না আমি। মেরে এইখানেই গুম,,
কথাটা সম্পূর্ণ করার সুযোগ হয়ে ওঠে না অর্পিতার তার আগে ছিটকে পড়ে বারি খায় দূরে সোফার সাথে।বুঝে উঠতে পারে না কি ঘটে গেলো। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে খানিকটা দূরে দাঁড়ানো রঘুনাথের দিকে।শক্ত করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্পিতার দিকে। একটু আগে পরম আবেগে বা শারীরিক চাহিদার কারনে যে ফর্সা গাল আদরের ফলে লালচে হয়েছিলো সেখানে এখন শক্ত সামর্থ্য হাতের চারটি আঙুলের ছাপই ফিঙ্গার প্রিন্টের মতো জ্বলজ্বল করছে।

হেঁটে এসে টেনে তোলে অর্পিতাকে।ডান হাতে টুঁটি চেপে ধরে রঘুনাথ মিনিট খানেক আগেও যেখানে সোহাগের অত্যাচার চলছিলো।এখন সেখানে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে পিষে ফেলতে চায়। জিহ্বা টা বের করে টেনে ছিঁড়ে ভাগাড়ের কুকুর দিয়ে খাওয়াতে পারলেই শান্তি লাগতো।চোখ দুটো উল্টে দিগুন হয়ে আসে অর্পিতার।ছাড়া পেয়ে হাঁফাতে থাকে হাঁপানির রোগীর মতো। রঘুনাথ কিছুতেই শান্ত হতে পারে না, অর্পিতার মুখ চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,তোর সাহস কি করে হয় আমার বোনের মৃত্যুর কথা মুখে আনিস?তোর মতো ছেলে ভুলানো দুই টাকার মেয়ে আমার বোনকে মারবে?রিতি ঠিকই বলেছিলো কাল, টাকার জন্যে তোর মতো মেয়ে যার তার বিছানায় যেতে পারে। আমার বৌকে ডিভোর্স দিতে বলিস না তুই?শুনে রাখ,,আমি ডঃ প্রতুল নই।তোর কথা শুনে আমার স্ত্রীকে ছাড়তে পারবো না।যদি ইচ্ছা হয় থাকবি আমার সাথে না হয় এই বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে মরবি গিয়ে কর্মজীবী হোস্টেলে।এই যে মসৃন দেহের বড়াই করিস ভুলে যাসনা সেটা আমার টাকায়। অর্পিতার নগ্ন বাহুতে নখের আঁচড় কেটে বলে রঘুনাথ।
একটা কথা শুনে রাখ টাকা থাকলে তোর চেয়ে হাজার গুণ বেশি সুন্দরী রঘুনাথের শয্যা সঙ্গিনী হতে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। নেহায়েৎ মায়ায় পরে গিয়েছি তোর।

অর্পিতা কাঁশতে থাকে, চোখ দিয়ে তার জল ঝরছে আঝোরে।রঘুনাথের এমন রুদ্র মূর্তি আগে দেখেনি সে।এত কিছুর মাঝেও একটাই ভাবনা প্রতুলের কথা কি করে জানলো রঘুনাথ?আরো কিছু কি জেনে গেছে সে?না না এভাবে সব স্বপ্ন ধুলিসাৎ হতে পারে না। অর্পিতা সুর তুলে কাঁদতে থাকে,কষ্টটা তার শরীরে নয়,মনের মধ্যে।এই আরাম আয়েশ এর জীবনে ভাটা পরার সম্ভাবনার শোকে কাতর সে।

*******
রাতের খাওয়া শেষ হলো সবে।রিতি নিজের মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে এক দুপা করে উঠে যায় ছাদে। ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ালো।কয়েকটা জরুরী কল করার আছে। আজকাল ছাদের আলোটা জালায় না কেউ।

হঠাৎ চিলেকোঠার ছাদ থেকে কারো বাক্যালাপ কান খাড়া করে শোনে রিতি।চিনতে অসুবিধা হয় না।দাদাভাই আর বিরূপাক্ষ কি একটা ব্যাপারে কথা বলছে,,,

কতদিন তোর সাথে এভাবে একাকী দাঁড়ানো হয়না বলতো দাদাভাই?বললো বিরূপাক্ষ। ট্রাউজারের দুই পকেটে দুটো হাত তার ,দৃষ্টি দূরের ঐ নক্ষত্র মন্ডলীতে আবদ্ধ।

তুই নিজেই তো দূরে দূরে থাকিস রূপ!আমাদের সময় দেওয়ার সময় কোথায় তোর?

সে তো ঠিকই কিন্তু তুইও আজকাল অনেকটা বদলে গিয়েছিস।একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বিরূপাক্ষ।

হুম,,, মানুষ কি সব সময় এরকম থাকে, নাকি থাকতে পারে বলতো? ভীষণ হতাশার আভাস রঘুনাথের গলায়।তো বল কি বলতে ডেকে আনলি?বিরূপাক্ষের মুখের দিকে তাকায় রঘুনাথ।

তোর সাথে কিছু জরুরী কথা আছে দাদা ভাই। আগে বল আমাকে তুই সাপোর্ট করবি?

আগে বলতো ?তারপর দেখি কি করবো?বিরস মুখে বলে রঘুনাথ। এমনিতেই অর্পিতার ঘটনায় মেজাজটা অত্যধিক তেতে আছে তার।

তুই একটু বাবা,মাকে বুঝিয়ে বলনা,আমি রিতিকে মানতে পারবো না কখনো। শুধু শুধু প্যারাময় করছে আমার জীবনটা।আমার কি নিজস্বতা বলতে কিছুই থাকতে নেই। কতদিন বাদে দেশে আসলাম।ঘুরবো ফিরবো, কদিন বিশ্রাম নিয়ে কিছু একটা করতে চাই।সে ব্যবস্থাও করা হয়ে গেছে কিন্তু এভাবে যদি ঐ মেয়েটা সব সময় সামনে ঘোরে ফেরে তাহলে তো আমার ভালো লাগবে না দাদাভাই।
এতক্ষণ প্রতিক্রিয়া হীন থাকলেও রঘুনাথ সিরিয়াস হয় এবার,,,

কি সমস্যা তোর বলনা ভাই?রিতি কোন দিক দিয়ে অযোগ্য তোর? একটু মানিয়ে দ্যাখ,,আর কোনো দ্বিধা থাকবে না।

সম্ভব নয় দাদাভাই,,,ওকে ছাড়তেই হবে আমাকে। দৃঢ়তার সাথে বললো বিরূপাক্ষ।

তুই জানিস না ও তোকে কতটা ভালোবাসে।মুখে বলে না ঠিকই কিন্তু ওর অন্তরে তোর বসবাস তা বুঝিসনি এতদিনেও। মেয়েটা বাঁচবে না তোকে ছাড়া বিশ্বাস কর।তুই দেখসনি,,তোর এই অসুস্থতায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে কে? নিজের খাওয়া ঘুম ছেড়ে শুধু তোর কাছে পরে থেকেছে হাসপাতালে?

সরি ,,দাদা ভাই, তোরা চিনতে পারছিস না ওকে। অনেক স্নেহ করিস তো তাই!ও পরে আছে শুধু আমাদের এই অর্থ সম্পত্তির লোভে।আড়ালে আবডালে দ্যাখ কার কার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।ও মেয়ে গাছের ও খাবে আবার তলারও কুড়োবে।

রঘুনাথ থমকে যায়,,চমকে ওঠে ভীষণ ভাবে।যেনো বিশ্বাস হয়না কথাটা বিরূপাক্ষ বলেছে তাও রিতির মতো শুদ্ধ পবিত্র একটা মেয়ের সম্পর্কে।

কি বললি আরেকবার বল?বিরূপাক্ষের সামনে দাঁড়ালো রঘুনাথ।

যা বলেছি সত্যি বলেছি।রিতিকে আমি মানিনি আর মানতেও পারবোনা।মরুক বাঁচুক কিচ্ছু আসে যায় না আমার।ওর পথ ও খুঁজে নিক।

রঘুনাথের হাতটা আজ ভীষণ অবাধ্য হয়ে উঠেছে।কোনো কিছুই পরোয়া করছে না। দুপুরে অর্পিতার গালে উঠেছিলো আর এখন বিরূপাক্ষের গালে।
বিস্মিতি বিরূপাক্ষ নিজের আঘাত প্রাপ্ত গালটাতে নিজের হাত রাখে,,, দাদাভাই,,,তুই আমাকে মারতে পারলি?

রঘুনাথের ক্রোধাচ্ছন্নতা কেটে যায় মুহুর্তেই। নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে সময় লাগে না। ভাইয়ের দু কাঁধে দুহাত রেখে মনস্তাপে ভেঙে পরে,,,

এই ভাই,,দ্যাখ আমি এমনটা করতে চাইনি।আসলে আমি দিন দিন ক্যমন যেনো হয়ে যাচ্ছি। ভুল হয়ে গেছে আমার। রঘুনাথের চোখের কার্নিশে জল জমেছে।

বিরূপাক্ষ আস্তে রঘুনাথের হাত দুটো নামিয়ে দেয় নিজের কাঁধ থেকে,,, স্বাভাবিকভাবেই বলে,,,একটা পরের মেয়ের জন্য তুমি নিজের ভাইয়ের গায়ে হাত তুললে? তুমি এতোটা বদলে গেলে দাদা ভাই?আমি ভেবেছিলাম কেউ না থাকলেও আমার দাদাভাই কখনো আমার কাঁধ ছাড়বে না।

রঘুনাথ চোখ বন্ধ করে লম্বা করে শ্বাস নেয়,,কি করে বুঝাবে এই নির্বোধটাকে?রিতি, বিরূপাক্ষ দুজনই যে তার প্রাণাধিক প্রিয়।কারো দুঃখ নিজের চোখে দেখতে পারবে না সে,,

তুই ভূল বুঝিস না রূপ।আপন,পর এসব তো প্রচলিত কথা মাত্র, ভালোবেসে পরকে আপন করা যায় ঠিকই কিন্তু আপন কখনো পর হয় না জানিস তো?ওকে আমি ছোট থেকে নিজের হাতের তালুর মত চিনি,জানি।আমি তোদের দুজনেরই দাদাভাই।এর বেশি কিচ্ছু জানি না।হাতের পাঁচ টা আঙুল যেমন সমান নয় কর্মের গুরুত্বেও তাদের বিশাল ব্যবধান কিন্তু কেটে গেলে যন্ত্রণাটা যে একই রকম হয়।

ঠিক বলছিস তো দাদাভাই?বিরূপাক্ষের সুরটা হেয়ালীর মতো ঠেকে।

ওদিকে রিতি লোহার সিঁড়ির তিনধাপ উঠেছিল। কিন্তু এখন দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। বুকের ভেতর চাঁপা ব্যাথা।এখনি মন খুলে কাঁদতে না পারলে বুকটা হয়তো ফেটে ভেঙে যাবে তার।
কোনো রকমে সিঁড়ির হাতল হাতরে নেমে আসে নিচে।
কোথাকার কোন জরুরী কলে কথা আর কোথায় একাকী তাঁরা ভরা রাতের আকাশ উপভোগ করা, চুলোয় যাক সব।জীবন বাঁচানো জরুরী হয়েছে তার,সেটা করতে হলে অবশ্যই একা বসে মরা কান্না কাঁদাটা বিশেষ জরুরী হয়ে পরেছে।হ্যা মরা কান্নাই বটে, এই কয়েক দিনে বিরূপাক্ষের প্রতি যে প্রেমাবেগঘন অনুভূতিরা জটলা পাকিয়ে ছিল হৃদয়ের পাশ ঘেঁষে তাদের তো নির্মম মৃত্যু ঘটলো এখনি।স্বামী সোহাগী হয়ে যে ঘড় বাঁধার স্বপ্নটা দানা বেঁধেছিল মনের ভেতর তার মৃত্যু হলো মনের অন্ধকুঠিরেই। নিজের কানকে যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না রিতির। বিরূপাক্ষ তাকে ছেলে পটানো মেয়ে ভাবে?এত অপমান,,এযে মৃত্যুরই নামান্তর রিতির জন্য। কিন্তু রিতির ভেতরে দ্বৈত সত্তা কাজ করছে।মনটা তার দু ভাগ হয়ে দু’টো দল গড়েছে।একটা দল বিরূপাক্ষের দেওয়া অপবাদের ঘোর বিরোধী হয়ে বৃথা আস্ফালন করছে,অপর দল মুচকি হেসে বলছে, বিরূপাক্ষ সেতো সত্যবাদী যুধিষ্ঠিরের মত,এমন মিথ্যা বাক্য মুখেও আনতে পারে না।এমটা হলে তার আচার আচরণে বোঝা যেতো না?রিতি আর পারে না।ভাবনারা মৃত্যু শয্যায় তার।

তোর বিশ্বাস হয় না আমার কথা?বললো রঘুনাথ।

হ্যা হ্যা খুব বিশ্বাস হয়। তুই রিতিকে স্নেহ করিস, ভালো বাসিস। আমিও আমার বৌদিদিকে শ্রদ্ধা করি ভালো বাসি একদম মায়ের মতো। বাইরের কেউ আমার সেই বৌদিদির ভালোবাসার ছোট্ট পৃথিবীটা নিজের করে নিতে চাইবে আর তুই আমার বৌদিদিকে নিঃস্ব করে তার একান্ত একার পৃথিবীটা ঐ আর্থলোভী মেয়াটাকে লিখে দিতে চাইবি সেটা কি আমি মানবো বল?

রঘুনাথের কোন প্রতিক্রিয়া দেওয়ার শক্তিই যেনো নেই।তারমানে অর্পিতার কথাটা রূপ ও জেনে গেছে?এ লজ্জা লুকাবে কোথায় রঘুনাথ।ছোট ছোট ভাই বোনের কাঠ গড়ায় আজ দাঁড়িয়েছে সে।তাও যে সে মামলা নয়, চরিত্র হীনতা ‌ছি:ছি:!নিজেকেই ধিক্কার দেয় রঘুনাথ।

তাহলে রিতির সম্পর্কে তোর ঐ কথাগুলো মিথ্যা ছিলো?অনেক কষ্টে কথাগুলো বললো রঘুনাথ।

বিরূপাক্ষের ঠোঁটের কোনে বিশ্বজয়ীর রহস্যময় হাসি।

সে সব পরে হবে।আগে তোর আর তোর অর্পিতা ম্যাডামের ব্যাপারটা শেষ করি না?
শোন তুই বড়ভাই তাই আমার গায়ে হাত তুলে শাসন করেছিস।ও কর্ম আমাকে মেরে ফেললেও আমার দ্বারা হবে না।তবে শুনে রাখ তুই যদি আর এক পা এগোস ঐ দিকে তবে আমি বিষ খেয়ে,গলায় দড়ি দিয়ে নাকি হাতের শিড়া কেটে মরবো সেটা পরে ভেবে চিন্তে ঠিক করবো।রেডি থাকিস তুই। আমার বৌদিদির কোন কষ্ট নিজের চোখে দেখবো না আমি।একটা শয়তানি হাসি দিয়ে চড় খাওয়া গালে হাত ডলতে ডলতে নিচে নেমে গেল বিরূপাক্ষ। রঘুনাথ বিস্ফোরিত নেত্রে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলো সেদিকে।এমন হুমকিতে তার এখন নিচের দিকে পা বাড়াতেও ক্যামন জানি গা ছমছম করছে।
রাগে গা টা জলে উঠলো রঘুনাথের, বিরূপাক্ষ শিশ বাজিয়ে হাঁটছে,,,

এই রাত তোমার আমার,,,

ঐ চাঁদ তোমার আমার,,,

চলবে,,,,,

উপন্যাস:হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে ছিলে।

কলমে:চন্দ্রা।

পর্ব:২৫

আমি বা কে?
আমার মনটা বা কে?
আজো পারলাম না আমার মনকে চিনিতে,,,
পাগল মন রে,,মন ক্যানো এতো কথা বলে,

উত্তরের আমবাগান থেকে ধেয়ে আসা শীতল বাতাসের সাথে অখিলেশের মুখ থেকে নির্গত ধোঁয়ার কুণ্ডলী মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। ছাদের রেলিংয়ের গায়ে হেলান দিয়ে একের পর এক সিগারেটের মুখে আগুন দিয়ে নিজের কলিজাটা পোড়াতে ব্যস্ত সে।মনটা ছেয়ে আছে বিষন্নতার মেঘে। অনেক দিন হলো মন তার এমন বিক্ষিপ্ত রূপ ধারন করে না।আজ খুব মনে পরছে ফেলে আসা সেই একান্ত ব্যক্তিগত অতীত স্মৃতি গুলো।মনে পরছে তার নিরুপমার কথা।আজ বিকেলে বুটিক হাউস থেকে ফেরার পথে একজনের পেছন দিক দিয়ে দেখলো একদম নিরুপমার মতো চলন ভঙ্গি তার। কিন্তু নিরুপমা শাড়ি পরতো না সেই রমনীর পরনে একটা হালকা রঙের ক্যাটালগ শাড়ি ছিলো। ভীষণ ভীষণ ভাবে মনে পরছে।এ যেনো সেই সময়ে দাঁড়িয়ে আছে,,,

হোটেলের ধূসর শুভ্র বিছানায় শুয়ে আছে দুজনেই।কারো শরীরে পরিধেয় বস্ত্র হয়তো অবশিষ্ট নেই। কিন্তু গায়ের উপর গাঢ়ো নীল রঙের পাতলা চাদর চাপানো।নিরুর নগ্ন কাঁধে মুখ ডোবাতেই কিছু একটা বুঝে আঁতকে ওঠে অখিলেশ।তার নিরুপমা কাঁদছে?ব্যতিব্যস্ত হয়ে শায়িত অবস্থায় নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়, বুকের ভেতর খাঁ খাঁ করছে তার।কি এমন হলো তার নিরুর?

এই নিরু কাঁদছো ক্যানো?কি হয়েছে আমায় বলো? কয়েকবার বলতেই নিরু মুখ খোলে কিন্তু কান্নার প্রবল স্রোতে বাক্য স্রোত তিরোহিত হয়।

কি হলো বলো?এভাবে কাঁদছো কেন? অসহনীয় গলা অখিলেশের।

অখিল কাল আমার বিয়ে,,, বাকরুদ্ধ স্বরে বলে নিরুপমা।
অখিলেশ অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকায় নিরুর দিকে,,
কি বললে,, আবার বলো নিরু,,
এমন আদুরে ডাকে নিরুর সকল সংযমের বাঁধ ভেঙে যায় নিমিষেই।প্রবল বেগে জাপটে ধরে সামনের মানুষটাকে।এমন ভাব যেনো কখনোই আর ছাড়বে না প্রিয় ভালোবাসার মানুষটাকে।অতি কষ্টে অখিলেশ নিজের শক্তিহীন হাত দুটো উঠিয়ে দেয় নিরুপমার নগ্ন পিঠে।মিথ্যে শান্তনার আভাস শুধু,,এ হাত নিরুর হাতের মতো আকড়ে ধরে রাখার জন্য নয়।
ভালোবাসলে তাকে আগলে রাখতে হয় যেকোনো প্রতিকূল, অনুকূল পরিবেশে।কখনোই ছাড়তে হয় না প্রিয় মানুষটার সাথ। কিন্তু সবাই তো আর ভালোবাসায় বেঁধে রাখতে জানে না,, বাঁধা পরতে জানে না। অবশেষে কলঙ্ক রটে প্রেমের নামে,,প্রেমিক প্রেমিকা থাকে ধোঁয়া তুলসী পাতা।যত দোষ,নন্দঘোষ।ছ্যাকা খেয়ে এবং ছ্যাকা দিয়ে অবশেষে নীতিবাক্য ঝাড়বে,,,প্রেম করোনা,প্রেমে পড়োনা, প্রেম বড্ড খারাপ জিনিস।

অখিল নিজের বুকের মধ্য থেকে নিরুর মুখটা তুলে ধরে। ততক্ষণে নিরু অনেকটা সামলে নিয়েছে নিজেকে। অখিল নিজেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করে বলে,,,কাল বিয়ে আর আজ এভাবে আমার সাথে সময় কাটানো ঠিক হয়নি তোমার নিরু।

নিরু যেনো খানিকটা থমকায়,,,

কিন্তু অখিল আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবো না বিশ্বাস করো।আমি একেবারে ই চলে এসেছি আর ফিরবো না ওখানে।

এসব কি বলছো তুমি?অবাক অখিলেশ।

হ্যা,,আমি তো জানি,, তুমি আমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না। আমিও পারবো না।এই দ্যাখো তুমি আমাকে যেখানে যেভাবে রাখো সেখানেই মানিয়ে নেবো।এতটুকুও অভিযোগ করবো না দেখো। শুধু তোমার পাশে একটু জায়গা দাও আমায় প্লিজ,,

অখিলেশ এর বুকটা ফেটে যেতে চায়।নিরুর কান্না তাঁর বুকে হাজারোধিক ক্রুশ বিদ্ধ করে। কিন্তু কি করে সে নিজের, আশ্রয়হীন জীবনে ভালোবাসার মানুষটির আশ্রয় দেবে। নিজের দুমুঠো অন্নের সংস্থান সে করতে পারে না।মা,ভাই,বোনেদের একমুঠো ভাতের জোগাড় করতে কিভাবে হন্যে হয়ে ঘুরছে। না না নিরুকে এমন কষ্টের জীবন দেখাতে পারবে না কিছুতেই।তাতে যদি বুকে পাথর বাঁধতে হয় তাও রাজী।

কি হলো কি এত ভাবছো?কোথায় রাখবে আমাকে সেটাই ভাবছো তো?আমি বেশকিছু টাকা নিয়ে এসেছি। তুমি শুধু ম্যারেজ রেজিস্টার এর অফিসে গিয়ে আমাকে বিয়ে করে নাও।তুমি থাকো এইখানে,,,আমাকে গ্রামে মায়ের কাছে রেখে আসো শুধু।
বিশ্বাস করো।এক বছরের মধ্যে বাড়িতে না গেলেও আমি কিছু বলবো না।আমি শুধু তোমার জন্য পাগল, তোমায় পাশে চাই।সঙ্গ না দিলেও চলবে শুধু সাথ দিও।

ভাবা ভাবির সময় নেই এখনি নিরুকে নিরস্ত করতে হবে,নইলে যে ঘোর বিপদ।
তুমি ফিরে যাও নিরু,,,
নিরুর বিশ্বাস হলো না কথাটা,,

আবার বলো?ফ্যাসফেসে গলা নিরুর।

তুমি ফিরে যাও তোমার উপযুক্ত ঠিকানায়। আমাদের একসাথে চলা আজ থেকেই ফুরোলো নিরু।কন্টকাকীর্ণ পথে তোমার প্রতি পদে পদে যে রক্তক্ষরণ হবে আমার বুকে যে তা সইবে না নিরু। আমার পথ যে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ঝলসানো, কাঁটায় ভরা,সে পথে হাঁটতে হাঁটতে তুমি ক্ষত বিক্ষত হবে তা আমি কোন প্রাণে সইবো বলো? তুমি মুক্ত প্রান্তরে, অন্তহীন সুখের মাঝে ডানা মেলে উড়ে বেড়াও মুক্ত বিহঙ্গের মতো, তোমার সে পাখনার ছায়াটুকু আমার ঊষঢ় মরু বুকে জাগাবে প্রশান্তির স্পন্দন।সেই তো আমার বড্ড সুখ গো।বড়ো শান্তি।
প্রতিক্রিয়া হীন নিরুপমা ক্ষণকাল হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকে তার ভালোবাসার অখিলেশের দিকে।আচ্ছন্নের মতো বিবস্ত্র দেহে বস্ত্র জড়ায়। অবশেষে অখিলেশের হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে নিজের কম্পনরত ঠোঁট ছোঁয়ায়।পাথর দৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে বলে আপন গতিতে,,, তুমি সত্যিই আমাকে ভালো বাসতে পেরেছো কিনা জানিনা তবে এতদিন যে আমাকে ভালোবাসার অধিকারটুকু দিয়েছো তাতেই পরিতৃপ্ত আমি।ঐ টুকুই হবে আমার চলার পথের পাথেয়,হোক না সে এ পাড়ে কিংবা ঐ পাড়ে।
সেই নিরুর সাথে অখিলেশের আর দেখা হয়েছিলো গতবছর।একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তানের মা হয়েছে নিরু। ফুসকা খেতে এসেছিলো মেয়েকে নিয়ে। কিন্তু একাই ।অমন কন্যার ভাগ্যবান পিতাকে দেখার ইচ্ছা জেগেছিলো অখিলেশের কারণ কোথাও না কোথাও মেয়েটির পিতার জায়গায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছিলো।
বুকের ভেতর কুট কুট করছে অখিলেশের।ঠিক যেনো এক ঝাঁক লাল বিষাক্ত পিঁপড়ের কামড়। নিকোটিনের ধোঁয়া হয়তো তার কাজ শুরু করে দিয়েছে।ডান হাতে নিজের বুকের বাঁ পাশটা খামছে ধরে সে, পিঁপড়ের কামড় এর জন্য নয় এক নামহীন অসহনীয় যন্ত্রণার জন্য।

******
এই রিতি তুই তো গতদিন স্কুলে এলি না। আমাদের নতুন টিচার জয়েন করেছে কালই।সে কি সুন্দর চেহারা মেয়ের না দেখলে বিশ্বাস করবি না। কিন্তু শহরের স্কুল ছেড়ে এই গ্রাম্য এলাকায় বদলী হলো ক্যানো কে জানে?টিচার্স রুমে ঢোকার মুখে কথাগুলো বললেন মনিকা ম্যাডাম।প্রথম ক্লাস শেষে ফিরছিলেন তিনি।
রিতি প্রতিউত্তরে এক ঝলক হাসলো শুধু।

হাসছিস যে?এখনি আসবে মিলিয়ে নিস।

আমি কি অবিশ্বাস করছি আপনাকে?এমনিই হাসি পেলো।

সত্যি করে বলতো হাসলি ক্যানো? মনিকা ম্যাডাম নাছোড়বান্দা।

আপনার চেয়ে বেশী বর্ণণা আমাকে পুনিত স্যার ইতিমধ্যেই দিয়েছেন।তাই হাসছি।

ওহ্ তাই বল?মন্দ হয় না আমাদের পুনিতের সাথে একটা কিছু হলে বল?
চোখ সরু করে তাকায় রিতি,,,

খারাপ কি বললাম বল?

বর্তমান মেয়েদের পেছনে আগে থেকেই ইট পাতানো থাকে আর আপনি ঘটকালি শুরু করলেন ম্যাডাম?হাসছে রিতি।কথাটা
মনিকা ম্যাডামর মনঃপুত হলো না বোধহয় মুখের হাসিতে ভাটা পরল খানিক। পুনরায় সে হাসি উজ্জীবিত হলো দরজা দিয়ে ঢুকছেন নতুন ম্যাডাম।রিতি মনিকার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো ,, আসলেই প্রশংসা পাওয়ার মতোই সৌন্দর্যমন্ডিত নতুন ম্যাডাম।অবাক হলো রিতি, সে ভেবেছিলো ম্যাডামের বয়স হয়তো একটু বেশিই হবে কিন্তু না অনেক টেনেটুনে বেশী হলেও ত্রিশের উর্দ্ধে হয়তো একচুল ও নড়ানো যাবে না।
উস্ ্্করে শব্দ করে রিতি, মনিকা ম্যাডাম উৎফুল্ল হয়ে নিজের কনুই চালিয়ে দিয়েছেন রিতির বাহুর নরম মাংস পেশিতে।

দুঃখিত সোনা,,বেশি ব্যাথা পেয়েছিস? অনুতাপে ঢলে পরা দেখে রিতির মায়া হয়, নিজের ব্যাথা চেপে মুখে হাসি এনে বলে,,না না ঠিক আছে ম্যাডাম।

অতঃপর রিতির সাথে নতুন ম্যাডামের আলাপ পরিচয় করিয়ে দিলেন প্রধান শিক্ষক।।এতে অবশ্য পুনিত স্যারের আগ্রহের সীমা বিপদ সংকেত অতিক্রম করেছে।
রিতির ভালোই লাগলো নতুন ম্যাডাম নিরুপমা সেন কে।বেশ সদালাপী মেয়েটা।
নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ সে হিসেবে জড়তা নেই একদমই।

*****
দিনের শেষ ভাগ প্রায়। বুটিক হাউস থেকে বেরিয়ে বেশ কয়েকজন কর্মী হেঁটে চলেছে নিজেদের গৃহাভিমুখে। পুরুষ যে কজন আছে তাদের হাঁটতে হয় না।বাই সাইকেল ই ভরসা।রিতি স্কুল শেষে এসেছিলো বুটিক হাউসে।ফিরতি পথে পেলো রাহুলকে। দুজনেই কথায় কথায় এগোলো তাঁত কলের ঐ দিকে।বেশ কয়েকদিন যায় না রিতি। শুধু কর্মচারীদের দিয়ে কি আর এসব কাজ সম্পূর্ণ হয়?

কাল তাহলে চলেই যাচ্ছেন? রাহুলের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছোঁড়ে রিতি।

হুম,,যেতেই হবে।না গিয়ে উপায় কি বলো?প্রলম্বিত শ্বাস ত্যাগ করে রাহুল।রিতির কান এড়ায় না।

আপনি থাকলে ভীষণ ভরসা পাই রাহুল বাবু।যা অন্য কোথাও পাই না।

শুনে শান্তি পেলাম রিতি।

আপনার শান্তি পাওয়ার জন্য কিন্তু বলিনি কথাটা ।

জানি,,কারো মন রাখতে কখনো নিজের মনের বিরুদ্ধে তুমি যাওনা সেকথা আমার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না বোধহয়।

এবার সময় দিতে পারলাম না বলে দুঃখিত আমি।

বাব্বাহ যে ঝক্কি ঝামেলা তোমার। নিজেকে দেওয়ার মতো সময়ইতো পাওনা। তবুও একটু দিও।সব জায়গায় দিয়ে থুয়ে নিজের কাছে নিজেই যদি কিছু না পাও তাহলে আর জবাব দিতে পারবে না আয়নার ওপারের প্রতিবিম্ব কে।
রাহুলের কথায় জবাব দিলো না রিতি শুধু এক টুকরো ম্লান হাসি উপহার দিলো।

যাক সে কথা,, আমার কাজ তো এগিয়ে নিয়েছি অনেক টা। এখন সরকারী অনুমোদনের ব্যবস্থা বাকী শুধু। এবার কিন্তু তোমার পার্টনারের সাক্ষর গুলো নিয়ে নিও সময় করে।

দেখি!অত গুলো সই সাবুদ চাইলে আবার কি বলে বসবে কে জানে?আমি তো আবার তার অর্থ সম্পদ লুটে নেওয়ার ধান্দায় আছি।
শশব্দে হেসে ওঠে রাহুল।কি ধারালো সেই হাসি। মনটা মুহূর্তে ভালো হয়ে যাবে সে হাসিতে।এই লোকটার হাসিটাই বোধহয় সবচেয়ে সুন্দর সকল বৈশিষ্ট্য এর মাঝে। সেদিকে তাকিয়ে ভাবে রিতি।

যত যাই বলো রিতি। তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।রূপদাকে দেখে আমার কিন্তু একটুও অমন মনে হয়নি।পারলে তুমি যে কি তার একটু আধটু উপমা তাঁকে দিও।নইলে যে একেবারে অবিচার করা হয়।

আমার নিজের কানে শুনেছি।জোর দিয়ে বলে রিতি।

কি আশ্চর্য!কেউ কি অন্যের কানে শোনে নাকি হ্যা?
ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট করে তাকায় রিতি,,,
সব সময় মজা,মশকরা কিন্তু ভালো লাগে না!
আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে?

মানে ?

আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে যে শ্রীমতী ত্ররিতি হালদার রায় চৌধুরীর সাথে তামাশা করবো?

এবার কিন্তু বেশি বেশি হচ্ছে রাহুল বাবু?
রাহুল খুব উপভোগ করে রিতির এই ছেলেমানুষি গুলো। একমাত্র রাহুলের কাছেই রিতি উন্মুক্ত খাতার মতো, তা জানে রাহুল‌।রিতির এই প্রাণখোলা উচ্ছলতার ঢেউ রাহুলের বুকে তুফান আনে ভীষণ ভাবে।সে যে বাঁধ ভাঙা ঢেউ।আত্মসংযমী রাহুল তা সামলে নেয় নিজের মতো করে।সামলে নিতে হয়।

আর এইটুকু সময়ইতো। চলেই তো যাচ্ছি। রাহুলের চেহারার গভীর বেদনার ছাপ রিতিকে ভাবায় ভীষণ ভাবে।

******
কি ব্যাপার রিতি,, তুমি নাকি তোমার বড়মাকে বলেছো বাড়িতে যেতে চাও?

জেঠু এখানে আমার পড়াশোনা ঠিকমতো হচ্ছে না। তাছাড়া আঙ্কেল উনারা কাল তো চলেই যাবেন। পূজাও শেষ। আমতা আমতা করে বলল রিতি। জেঠুকে সে ভীষণ ভয় পায় তাইতো বাড়িতে ফিরে যাবার কথা বড়মাকে বলেছিল সন্ধ্যায়।এরই মধ্যে হেড অফিসে কথাটা বলে দিয়েছে বড়োমা।
অন্নপূর্ণা দেবী ঘড়ে ঢুকতেই রিতি তাকায় তীক্ষ্ণ চোখে। অন্নপূর্ণা দেবী দেখলেন সবই,,মনে মনে হেসে ছদ্ম উষ্মার সাথে বললেন,,,
খবরদার চোখ রাঙাবি না আমাকে।তোর চোখ রাঙানির ভয় পাই না আমি।যা বলার জেঠুকে বল।
রিতি থতমত খায়,,এই মহিলা তাকে ডুবাবে। মেঝেতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

আহ্ অনু,কথা বলছি তো আমি থামো। তুই কি সত্যিই বাড়িতে চলে যেতে চাস ?

রিতি আস্কারা পায়। প্রভাকর রায় চৌধুরী তাকে তুই বলছে মানে লক্ষণ অতীব উত্তম।

হ্যা জেঠু।

আচ্ছা,,, প্রভাকর রায় চৌধুরী কথা শেষ করে পারে না।

কি আচ্ছা হ্যা?কোথাও যাচ্ছো না তুমি। দুদিন বাদে লক্ষী পূজা।কোথায় শুনেছিস লক্ষীপূজায় ঘড়ের লক্ষী বাপের বাড়িতে থাকে? তুমি এখানেই থাকছো।অন্য কোথাও নয়।

আমি সত্যিই কি তোমার ঘড়ের লক্ষী বড়মা? ক্যানো একটা মিথ্যে সম্পর্ক নিয়ে ওনাকে কষ্ট দিচ্ছো বলোতো? তোমাদের একমাত্র ছেলে সে ,পরের মেয়ের জন্য পেটের ছেলের দুঃখ ডেকো না আর।মায়ের চোখ ভিজে আসে।রিতির মুখটা দুহাতের তালুর মধ্যে নিয়ে বলে,,,ও আমার পেটের ছেলে,তুই বুঝি কিছুই না?ওকে ভালোবাসি তোকে বাসিনা?বল?বেশ তো জ্ঞান দেওয়া শিখেছিস তোরা। ভুলে যাস না।মা আমি ,তোরা না।নিজেদের বিদ্যা, বুদ্ধির দৌড় আমাকে দেখাতে আসবি না।যে পুত্র মা, বাবার মনের ব্যাথা বোঝেনা সে কুপুত্র।আর কুপুত্রের জন্য আমার এই লক্ষী প্রতিমার অসম্মান আমি করতে পারবো না।তুই থাকবি আমার বুকে।তোকে নিয়ে বাঁচবো আমারা,সে আসলে ভালো,না আসলে থাকুক ওর মনের মতো করে। কিন্তু তোকে আমি কাছছাড়া করতে পারবো না রে।পারবি না আমাদের ভরসা হয়ে থাকতে?তোর সহায় আমরা আর আমাদের সম্বল তুই।গলাটা কান্নায় ভেঙে আসে অন্নপূর্ণা দেবীর।রিতি আর সইতে পারে না।ব্যাথার ব্যাথী না হলে কিসের আপন জন সে।রিতি জড়িয়ে ধরে বড়োমাকে।সে জানে যতই যা বলুক ছেলের নামে, দূরে গেলে আর সইতে পারবেননা তিনি। কিন্তু রিতি তা হতে দেবে কি করে?যাকে মা জ্ঞান করে এসেছে এত বছর ধরে। তাঁর স্নেহের ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করতেই হবে যে।

****
অধিক চিন্তায় সারা ঘড়ময় পায়চারী করছে বিরূপাক্ষ।ভাবনা চিন্তার প্রেসারে মাথাটা দপদপ করছে তার। একটু আগে মায়ের শয়নগৃহের দরজা থেকে ফিরে এসেছে সে। গতকাল রাত থেকে রিতির ব্যবহারে রিতিমত পরিবর্তন টের পেলেও ঘটনা আমলে নেয়নি সে কিন্তু এখন তো আর না ভাবলে চলছে না। বিরূপাক্ষ ভেবেই পাচ্ছে না।কি এমন ঘটলো যে,রিতি সরাসরি বাবার সামনে দাঁড়িয়ে ও বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা বললো। আবার মা এবং সে কাঁদছে?
আর ভাবতে পারছে না বিরূপাক্ষ। হেঁটে গিয়ে সটান শুয়ে পরে বিছানায়।বাহাতটা কপালে বিচরণ করছে নিরলস ভাবে।মাথাটা ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে ব্যাথায়।

আস্তে দরজা ঠেলে রিতি ঢুকলো ঘড়ে।একপলক আড় চোখে দেখেই বুঝতে অসুবিধা হলো না বিরূপাক্ষের,,, ভালো মতোই কেঁদেছে।নাকটা লাল হয়ে আছে পাকা টমেটোর মতো।চোখ দুটো ফোলা ফোলা। বিরূপাক্ষ কোনো শব্দ করলো না।পরে রইলো যন্ত্রণায় কুঁচকানো কপালে ভাঁজ ফেলে।চোখ বুজেই টের পেলো রিতি ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে নিজের বিছানা পাতছে।বিরূপাক্ষের খুব ইচ্ছে হলো বলতে,,এই ঠান্ডায় নিচে না শুয়ে খাটে শো। শরীর খারাপ করবে।
কিন্তু কথাটা মনের গহীনেই মিশে গেলো।রিতি শোয়ার জন্য বসেছে সবে বিরূপাক্ষ মৃদু কাতর স্বরে বলল,, তোর কাছে জামবাক আছে?
আর বেশি কিছু বলার ইচ্ছা বা সাহস হলো না কারণ কাল থেকে সে যাই বলছে রিতি কোনো কথার ঠিক ঠাক উত্তর দিচ্ছে না।টের পেলো রিতির দরজা খুলে বেরিয়ে যাওয়া।আশাহত হলো বিরূপাক্ষ ,,হয়তো আর ফিরবে না।

মিনিট তিনেক অতিবাহিত হয়েছে কি হয়নি। বিরূপাক্ষ যন্ত্রণা ক্লিষ্ট কপালে একটা কোমল হাতের স্পর্শ পেলো সাথে জামবাকের ঝাঁঝালো গন্ধ গিয়ে ঠেকলো নাকে।রিতি দাঁড়িয়ে ই ছিলো বিরূপাক্ষ ভেতর দিকে সরে পাশে বসার জায়গা করে দিলো।
কোনো উচ্চবাচ্য না করেই বসলো রিতি পা তুলে।সে কখনো কর্তব্যে পিছুপা হয় না। কষ্ট সে পেয়েছে ঠিকই কিন্তু অসুস্থ মানুষটা যন্ত্রণায় ছটফট করবে আর ও ঘুমাবে শান্তিতে সেটা এ জীবনেও হবে না। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হলো এভাবেই একজনের শুধু হাত চলছে অবিরাম ভাবে আরেকজনের সমস্ত শরীরে যত রকমের অনুভূতি আছে সব চলছে খুব দ্রুত গতিতে।রিতির হাতের কব্জিটা আলতো হাতে ধরে নিতেই খানিকটা কেঁপে ওঠে সে। করুন চোখে তাকায় বিরূপাক্ষ।রিতি না চাইতেও বিরূপাক্ষের যন্ত্রণাক্লিষ্ট লালচে চোখে চোখ পরে। দৃষ্টি নত করে ঠায় বসে থাকে রিতি। বিরূপাক্ষের হাতের মুঠোয় তির তির করে কাঁপছে রিতির হাতটা।

কি হয়েছে রে তোর বুড়ি?বল আমাকে।

বিরূপাক্ষের এমন রেশম কোমল পেলব স্বরে রিতির ভেতর ভেঙে কান্না আসে।সব অভিযোগের ঝাঁপি খুলে বসতে ইচ্ছে করে তার। কিন্তু নিজের নামের অভিযোগ কেউ অন্যের মুখে শুনতে পছন্দ করে কি?সে কিভাবে যার নামের নালিশ তাকেই শুনাবে?
অনেক কসরত করে কান্না আটকে বলে,,,

কিছু হয়নি তো।

সত্যি করে বলনা?হাতে মৃদু চাপ দিয়ে বলে বিরূপাক্ষ।

এত জেদ ক্যানো করছো রূপদা? আমার কিছু হয়নি। আমার কিছু হতে নেই।

বলবি না তাহলে? বিরূপাক্ষের কন্ঠে হতাশা টের পায় রিতি। নিজের গরজেই বলে,,

মনটা একটু খারাপ আছে।আর কিছু নয়। নীহার আঙ্কেল,আন্টি উনারা কাল চলে যাবেন তো তাই?

রাহুলের জন্যই তাহলে মনটা খারাপ তোর?বিরূপাক্ষের স্বরে সেই কোমল ভাব আর নেই।রিতি মনে মনে খানিক হাসে,তাচ্ছিল্যের হাসি।

সে তুমি যেটা ভাবো।হতেও পারে।
বিরূপাক্ষ রিতির হাতটা ছেড়ে দেয়।তার এখন আর ভালো লাগা বলে কোনো বস্তুতে বিশ্বাসই নেই যেনো,,

রিতি পুনরায় বিরূপাক্ষের কপালে হাত দিতেই এক ঝটকায় সরিয়ে দিলো সে।

রিতি কুটিল হেসে বলে ওঠে,,
রাগ ক্যানো করো তুমি? রাহুল বাবুর অনেক টাকা পয়সা। তোমার চেয়ে হয়তো বেশী।সুযোগটা কি হাতছাড়া করা ঠিক হবে বলো?

বিরূপাক্ষ হতভম্ব হয়ে তাকায় রিতির দিকে। মাথা ব্যাথাটাও যেনো লাঘব হয়েছে খানিকটা।কি বলে এই মেয়ে?

এতই যখন রাহুলকে প্রয়োজন তাহলে পরে আছিস ক্যানো এখানে?যা না তার কাছে? বেঁধে তো কেউ রাখেনি।

ঐ যে বললাম না,টাকা পয়সার লোভ বেশি আমার। তারউপর ছেলে ভোলানো মেয়ে কি না! গাছের ও খাবো তলারও কুড়োবো।

বিরূপাক্ষ স্পষ্ট বুঝতে পারে গতরাতে দাদা ভাইকে বলা কথা গুলো রিতি শুনে নিয়েছে।পায়ের শব্দটা তাহলে রিতির ছিল?
কিন্তু রিতির মুখে এই কথাগুলো বিরূপাক্ষের কানে বিষের জ্বালা ছড়ায়,অত্যন্ত কঠিন কন্ঠে বলল,,তুই এক্ষুনি সর আমার পাশ থেকে নইলে লাত্থি খাবি।কি হলো যা!অসভ্য মেয়ে কোথাকার!
রিতিকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে পাশ ফিরে শোয় বিরূপাক্ষ।মনটা তার বিষাদের শেষ সীমানায়।

নিজের পাতানো বিছানায় শুয়ে চোখের জল ছেড়ে দিলো রিতি।আজও একটা নির্ঘুম যাতনাময় নিশি নিঃশেষ করবে সে।

বিরূপাক্ষ রিতির পেছনে তাকিয়ে থাকে অপলকে।অন্তর্দহনে জলছে সে।ক্যানো যে মাথাটা হুট হাট গরম হয়ে উঠছে আজকাল ভেবে পায়না।
*****
পুনিত স্যার আছেন মহা বিরক্ত হয়ে।কত আশা করেছিল নিরুপমা ম্যাডামকে দিয়ে নিজের পঁয়ত্রিশটা রঙহীন বসন্তের ক্ষতিটা পুষিয়ে নেবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি ঢেলে দিয়েছে স্কুলের দপ্তরি শরিফুল নামের ছেলেটা।নিরুপমা যখন গেট দিয়ে ঢুকলো তখন টিচার্স রুমের জানালা ভেদ করে নিজের চোখ দুটো তার উপর ফেলে রাখলো পুনিত।

শরিফুল খাতা পত্র গোছগাছ করতে করতে মুচকি হেসে সাবধান বাণী দিলো,,,স্যার লাড্ডু কমায় খান।ও দিদিমনির ঘড়ে কিন্তু মেয়ে আছে একটা।

পুনিত বিষম খেলো যেনো।রিতি, মনিকা সহ আরো যে টিচার্স রা ওখানে উপস্থিত ছিলেন সবাই হাসলো একদফা।

স্যার আপনার জন্য মনিকা ম্যাডাম এর ঘটক হওয়ার স্বপ্ন টা জলাঞ্জলি দিতে হলো?ভেরী স্যাড। রসিকতা করে রিতি।
পুনিত মালহোত্রা নিজের জন্য নয় মনিকার জন্য যেনো দুঃখে ভেঙে পরলো।রিতি তা দেখে হাসি চাপালো কোন মতে মাথাটা নিচু করে।
মনিকা মুখটা চুন করে আধোমুখে বসে নিজের নির্বোধ ভাবনার জন্য নিজেকেই গালমন্দ করলো।এক দিনের দেখায় কত কি ই না ভেবে ফেলেছিল।
নিরুপমা ঢুকলো রুমে।সবার সাথেই সৌজন্য আলাপ আলোচনা করে বসলো নিজের জায়গায় কিন্তু পুনিত মালহোত্রার গতকালের সেই আন্তরিকতাটুকু যেনো আর পেলো না।
ব্যপারটা ঠিক বুঝলো না নিরুপমা।

চলবে,,,,

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।

ভালো থাকবেন সবাই।