হৃদকোঠোরে রেখেছি তোমায় পর্ব-০৮ + বোনাস পর্ব

0
220

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৮)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১২)
মাঝরাতে পানি পিপাসায় তরুনিমার ঘুম ভে*ঙে যাওয়ায় সে কিছুটা বি*র*ক্তি বোধ নিয়ে শোয়াবস্থা থেকে উঠে বসে। বেডসাইড টেবিলের উপর থেকে পানির বোতল টা হাতে নিতেই দেখে সেখানে পানি নেই এতে তরুর মাঝে বি*র*ক্তি ভাব আরো বেড়ে যায়। বিছানা থেকে নেমে কুশলের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে কুশল ঠান্ডায় কিছুটা জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে আর মেঝেতে ওর কম্বলটিও পরে আছে।

তরুনিমা কম্বলটি উঠিয়ে কুশলের শরীরের উপর দিয়ে পানির বোতল হাতে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে ডায়নিং সাইডে এসে টেবিলের উপর রাখা জগ থেকে বোতলে পানি ঢালতে শুরু করে। ডায়নিং সাইডের ডানপার্শেই রায়হানুলের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো কুশল। সেইসময় তরুর চোখে পড়ে রায়হানুলের রুমের দরজার সামনে দু’জন ছায়া মানব দাড়িয়ে আছে। তরু ভ্রু যুগল কুঁচকে বললো……

—“এতোরাতে বড় বাবার রুমের সামনে কারা দাঁড়িয়ে আছে! বড় বাবার কোনো স*মস্যা হয় নি তো?”

এই বলে তরু রায়হানুলের রুমের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। তরুর পায়ের আওয়াজ কর্ণপাত হতেই ছায়া মানব দু’জন তৎক্ষণাৎ স্থান ত্যগ করে। তরু রায়হানুলের রুমের অপরপার্শে কেও আছে নাকি দেখার চেষ্টা করলেও অন্ধকারের জন্য কাওকে দেখতে পায় না। অতঃপর তরু সেই বিষয়টি নিয়ে আর ঘাটা-ঘাটি না করে রায়হানুলের রুমে প্রবেশ করে। রুমে প্রবেশ করতেই তরু দেখে রায়হানুল বিছানায় শুয়ে থর*থর করে কাঁপছে।

দীর্ঘ ২০ বছর ধরে কো*মায় থাকা একজন পেশেন্টকে মধ্যরাতে এভাবে থরথর করে কাঁ*পতে দেখে তরুর মাঝে চি*ন্তা ও ভ*য় কাজ করতে শুরু করে। তরু দ্রুততার সাথে রায়হানুলের রুম থেকে বেড়িয়ে উচ্চস্বরে সকলকে ডাকতে শুরু করে। মধ্যরাতে পুরো পরিবেশে শান্ত ও নি*স্ত*ব্ধতা বিরাজ করছিলো। সেইসময় তরুর উচ্চস্বরের ডাক শুনে বাসার সকলের ঘুম ভে*ঙে যায়। সবাই তাদের নিজ নিজ ঘর থেকে বেড়িয়ে ড্রয়িংরুমে এসে উপস্থিত হয়।

কুশলও নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে। সাবরিনা বললেন…..

—“কি হয়েছে তরুনিমা! মাঝরাতে এভাবে চি*ৎ*কার চেঁ*চা*মেঁ*চি করছো কেনো?”

তরু ভী*ত কন্ঠে বললো….
—“ব-বড়-বড় বাবা…!”

সেইসময় কুশল সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে প্রশ্ন করলো….
—“বড় বাবা! কি হয়েছে বড় বাবার?”

—“উনি শোয়াবস্থাতেই কেমন থর*থর করে কাঁ*প*ছেন, ওনাকে দেখতে ভিষণ অস্বাভাবিক লাগছে!”

তরুর এমন কথা শুনে কুশল সহ সকলেই অনেক অবাক হয়ে যায়। রিজভীর পাশে দাঁড়িয়ে কামিনী নিজের মুখে একহাত রেখে বললেন…..

—“এতোগুলো বছর ধরে কো*মায় থাকা রো*গী কিনা মাঝরাতে থর*থর করে কাঁ*পছে! কি গো আমাদের চৌধুরী মেনশনে কি ভূ*ত-পে*তে’রা বাসা বাঁধতে শুরু করলো নাকি?”

সায়মন রাগী স্বরে বললেন….
—“আহহহ…রিজভী তুই তোর বউকে সামলা আর উল্টো-পাল্টা কথা বলতে নিষেধ কর।”

কুশল সেখানে দাঁড়িয়ে সকলের কথা শুনে সময় ন*ষ্ট না করে দ্রুতপায়ে রায়হানুলের রুমের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। তরুনিমাও কুশলের পিছন পিছন যেতে থাকে। সাবরিনা বাকিদের উদ্দেশ্য করে বললেন….

—“চলো বড় ভাইজানের রুমে গিয়ে দেখি তরুনিমা যা বলছে তা আসলেই ঠিক বলছে কি না!”

সায়মন সহ বাকিরাও সাবরিনার কথায় সম্মতি জানিয়ে রায়হানুলের রুমের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। কুশল রায়হানুলের রুমে প্রবেশ করতেই দেখে রায়হানুল সম্পূর্ণ ভাবেই স্থির হয়ে শুয়ে আছে। তরুর কথানুযায়ী রায়হনুলের মাঝে কোনোরকম অস্বাভাবিকতা কিংবা কাঁপার লক্ষণ নেই। সেইসময় তরু সহ চৌধুরী বাড়ির বাকি সদস্যরাও রায়হানুলের রুমে প্রবেশ করে একই অবস্থা দেখে তরুনিমার প্রতি বেশ বি*র*ক্ত হয়। সায়মন বি*র*ক্তি নিয়ে রাগমিশ্রিত কন্ঠে বললেন….

—“মাঝরাতে সকলের ঘুম ভা*ঙি*য়ে এতোসময় ধরে কি ম*শ*করা করলে তুমি তরুনিমা!”

কামিনী নিজের বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে বললেন…..
—“আমারও তো তাই মনে হচ্ছে আমাদের রাতের ঘুম ভ*ঙ্গ করার জন্যই এমন জ*ঘ*ণ্য ম*শ*করা করেছে আপনাদের ছোট ছেলের বউ।”

রিজভী রাগী স্বরে বললেন….
—“বংশ মর্যাদা আর সম্পর্ক রক্ষার জন্য আমার ভাতিজাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছো বলে আমাদের বড় ভাইজানের অ*সুস্থতাকে মাঝরাতে সকলের সামনে মজার খো*রা*ক বানানোর মতো জ*ঘ*ন্য কাজ করতে তোমার রুচিতে বাঁ*ধলো না! এই তোমাদের সিকদার বংশের সুশিক্ষার রূপ! ছি*হ্:…..!”

উপস্থিত মধ্যবয়সের প্রায় সকলেই তরুনিমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই নানান ধরণের উল্টোপাল্টা কথা শুনাচ্ছে। তরু অ’প*মানে, ল*জ্জায় মাথা নিচু করে চোখ দিয়ে পানি ফেলতে শুরু করে। সেইসময় কুশল রায়হানুলের পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বললো…..

—“ব্য*স…..যথেষ্ট বলেছেন আপনারা সবাই।”

কুশলের উচ্চস্বরে বলা কথা শুনে রায়হানুলের রুম জুড়ে এখন নি*স্ত*ব্ধতা বিরাজ করছে। কুশল তরুর পাশে এসে দাঁড়িয়ে কঠিন কন্ঠে বললো…..

—“আপনারা সবাই হয়তো ভুলে যাচ্ছেন বর্তমান স্থানে দাঁড়িয়ে তরুনিমা সিকদার বংশের মেয়ে হওয়ার আগে আমার বিবাহিতা স্ত্রী সে। আর আমার স্ত্রীর সম্মান ও শিক্ষার উপর আঙুল উঠানো মানে আমার সম্মান ও শিক্ষার উপর আঙুল উঠানোর সমতুল্য। আমি আমার সম্মান ও শিক্ষার উপর আজ পর্যন্ত কাওকে আঙুল উঠাতে দেই নি ভবিষ্যতেও কখনও দিবো না। রইলো তরুনিমার বলানুযায়ী বড় বাবার অ*স্বাভাবিক আচারণ করার বিষয়টি! এটা যে তরুনিমা সত্য বলেছে তার যেমন কোনো প্রমাণ আমাদের কাছে নেই তেমনি এটা যে তরুনিমা মি*থ্যা বলেছে তারও কোনো প্রমাণ আমাদের কারোর কাছে নেই। এমনটাও তো হতেই পারে এতোগুলো বছর পর বড় বাবা তার নিজের বাসায় এসেছেন তাই তার মাঝে ক্ষণিক সময়ের জন্য ইম্প্রুভমেন্ট হতে শুরু করেছে। আর ভাগ্য ক্রমে তরুনিমাই শুধু বড় বাবার ইম্প্রুভমেন্ট টুকু নিজ চোখে দেখতে পেরেছে। আমরা বড় বাবার কাছে আসার পূর্বেই তিনি আবারও আগের মতো হয়ে গিয়েছেন! নিজের পরিবারের মানুষদের মাঝে দো*ষ ও ভু*ল গুলো খোঁজার চেষ্টা না করে, তাদেরকে আ*ঘা*ত দায়ক কথা না শুনিয়ে প্রথমত প্রতিটি বিষয়ের পজেটিভ দিকটি চিন্তা করা উচিত আমাদের। পরবর্তীতে দো*ষ ও ভু*ল গুলোর যথাযথ প্রমাণ হাতে পেলে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত তা নিতে হবে । নয়তো শুধু শুধুই মনো*মা*লিন্য বা ভু*ল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করে সুন্দর সম্পর্ক গুলো ন*ষ্ট করা উচিত না। আজকের পর আর কখনও কেও আমার স্ত্রীকে কোনো বিষয় নিয়ে ভু*লা*ক্রমেও একটা ছোট-বড় কথা শোনানোর চেষ্টা করলে আমি তাকে ছেড়ে কথা বলবো না। যদি কোনো বিষয়ে আমার স্ত্রীর সামান্যতমও ভু*ল বা দো*ষ থেকে থাকে তাহলে সেই ভু*ল বা দো*ষের যথাযথ প্রমাণ এনে আমার হাতে তুলে দিবেন এরপর আমি আমার স্ত্রীর কি শা*স্তি প্রাপ্প্য তা নির্ধারণ করবো। তরুনিমা এসো আমার সাথে।”

কথাগুলো বলে কুশল তরুনিমার হাত ধরে রায়হানুলের রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরে। তরু স্ত*ব্ধ ও ছলছল দৃষ্টি নিয়ে কুশলের দিকে তাকিয়ে থেকেই ওর সাথে হাঁটছে।

(১৩)
কামিনী নিজের বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে সাবরিনার হাতের বাম পার্শে এসে দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে কিছুটা ঝুঁ-কে ফিসফিসিয়ে বললেন…..

—“মেজো ভাবী….ছেলের বিয়ের ১ম রাতই কাটে নি এখনও পর্যন্ত। এতো তাড়াতাড়িই সিকদার ভাইজানের মেয়ে তো আপনার ছেলের উপর ভালো জা*দু*টো*না করে নিজের ব*শে নিয়ে নিয়েছে। ছেলের লা*গা*ম নিজের হাত থেকে পুরোপুরি ছু*টে যাওয়ার আগেই শক্ত হাতে ধরুণ নয়তো ২দিন পর এই ছেলেই তার বউয়ের কথায় উঠাবসা করবে। তখন সে আপনাকে, মেজো ভাইজানকে কোনোরূপ তো*য়া*ক্কা*ই করবে না।”

সাবরিনা কিছু একটা বিষয় নিয়ে ভাবলেন মাত্র। অতঃপর কামিনীর কথাগুলোর কোনোরূপ প্রতিত্তুর না করেই রায়হানুলের রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন। সাবরিনা চলে যেতেই একে একে বাকি সদস্যরাও নিজ নিজ রুমে চলে যায়।

(১৪)
কুশল তরুর হাত ধরে সোজা নিজেদের রুমে নিয়ে আসার পরই ছেড়ে দেয়। তরু স্ত*ব্ধ মুখশ্রী নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে। কুশল ও তরুকে পা*ল্টা কোনো প্রশ্ন না করে শান্ত মুখশ্রী নিয়েই সোফায় গিয়ে বসে। তরু বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে মনে মনে ভাবে…..

—“বড় বাবার রুমের বাহিরে দরজার সামনে এতো রাতে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ছায়া মানব দু’জন কে ছিলো? কেও আমার কথা বিশ্বাস না করলেও আমি নিজ চোখে যা দেখেছিলাম তা তো মি*থ্যা হয়ে যাবে না। উনাকে বা এই বাসার কাওকেই ঐ ছায়া মানব দু’জনের কথা বলা যাবে না। তাহলে তখন যেমন সবাই আমাকে অ*বিশ্বাস করে ছোট-বড় কথা শুনিয়েছিলেন এখন তিনিও তেমনি শুনাবেন। আগে আমাকে খুঁজে বের করতে হবে সেই ছায়া মানব দু’জন কে ছিলো! কি ছিলো তাঁদের উদ্দেশ্য! বড় বাবাই বা হঠাৎ ওমন অ*স্বাভাবিক আচারণ কেনো করছিলেন! সত্যিই কি তিনি ইম্প্রুভমেন্ট করছিলেন! নাকি এই সবকিছুর মাঝে লুকিয়ে আছে আলাদা কোনো রহস্য?”

চলবে ইনশাআল্লাহ………………..

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(বোনাস পর্ব)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৫)
কুশল শান্ত স্বরে তরুকে বললো….

—“আমি তোমাকে বিশ্বাস করি তরুনিমা।”

কুশলের মুখে এরূপ কথা শুনে তরুনিমা ঘাড় ঘুরিয়ে কুশলের দিকে তাকায়। কুশল তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে। কুশল আবারও বললো……

—“বাবা-চাচা-চাচীর এমন ব্যবহারের জন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। তাদের বলা কথাগুলো ভেবে আর ক*ষ্ট পেও না। এরপর আর কখনও যদি বড় বাবার বা আমাদের পরিবারের কোনো সদস্যের মাঝে তুমি স*ন্দে*হজনক কিংবা অ*স্বাভাবিক কোনো আচারণ লক্ষ্য করো তাহলে পরিবারের সকলকে জানানোর পূর্বে তুমি বিষয়টা আমাকে জানিও। তাহলে পরবর্তীতে পরিস্থিতি এতোটা জ*টিল হবে না। আমি চাই না আমার স্ত্রীর সম্মান ও শিক্ষার উপর আর কখনও কেও আঙুল উঠানোর সাহস করুক।”

এই বলে কুশল আবারও সোফায় শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঝে নেয়। তরু স্ত*ব্ধ নয়নে কুশলের দিকে রয় কিছু সময়। অতঃপর দৃষ্টি সরিয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয় তরুনিমাও।

(১৬)
পরেরদিন সকালবেলা………
তরু আর কুশল দু’জনেই নিজ স্থানে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। সেইসময় ওদের রুমের দরজায় নক করার আওয়াজ ভেসে আসে। তরু আর কুশল দু’জনেরই ঘুম ভে*ঙে যায়। কুশল সোফা ছেড়ে উঠে দরজা খোলার জন্য সামনের দিকে অগ্রসর হয়। তরু দ্রুত বিছানা থেকে নেমে সোফার উপর থেকে কম্বল আর বালিশ নিয়ে বিছানার উপর রাখে। কুশল দরজা খুলে দিতেই দেখে দরজার বাহিরে সন্ধ্যা দাঁড়িয়ে আছে। সন্ধ্যা কুশলকে দেখামাত্র শান্ত স্বরে বললো…

—“মেজো ভাইয়া…তোমাকে আর মেজো ভাবীকে এক্ষুনি নিচে আসার জন্য বলতে পাঠালেন দাদীমা।”

কুশল শান্ত স্বরে বললো….
—“তুই যা, আমরা যাচ্ছি।”

—“ঠিক আছে।”

এই বলে সন্ধ্যা নিচে চলে যায়। অতঃপর কুশল আলমারির কাছে এসে আলমারি থেকে একটা পাঞ্জাবি আর পাজামা বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়। কিছুসময় পর ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তরুনিমাকে বললো….

—“ফ্রেশ হয়ে নাও, দাদীমা তোমাকে আর আমাকে নিচে যেতে বলেছেন।”

তরুনিমা কিছু না বলে আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে যায়। কুশল বিছানার কাছে এসে দাঁড়িয়ে নিজেই বিছানা গোছাতে শুরু করে। বিছানা গোছানো শেষ হলে কুশল সোফায় বসে সোফার পাশে থাকা টি-টেবিলের উপর থেকে ফোন নিয়ে ফোন দেখতে শুরু করে। বেশ কিছুসময় পর তরুনিমা ওয়াশরুম থেকে বের হলে দু’জনে একসাথে নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হয়। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে তরুনিমা লক্ষ্য করলো ড্রয়িংরুমের সোফায় চৌধুরী পরিবারের সকল সদস্যই উপস্থিত আছেন। কুশল আর তরুনিমা ড্রয়িংরুমে এসে দাঁড়ায়। অতঃপর কুশল তার নিজস্থানে বসে আর তরুনিমা সন্ধ্যার পাশে গিয়ে বসে। সাগরিকা সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন…..

—“সকলেই যখন উপস্থিত হয়েছো এখন যে কারণে সকাল সকাল সকলকে একত্র করা হয়েছে সেই কারণটি বলছি।”

কুশল শান্ত কন্ঠে বললো….
—“দাঁড়ান দাদীমা, এখনও পরিবারের সকল সদস্য উপস্থিত হয় নি এখানে।”

সাগরিকা সহ বাকি সকলেই নিজেদের চারপাশ দেখে বুঝতে পারলেন কুশল কার অনুপস্থিতির কথা বলছে। কুশল দু’জন সেক্রেটারিকে ডাক দেয়। সেক্রেটারি দু’জন কুশলের সামনে এসে দাঁড়ালে কুশল বললো….

—“বড় বাবাকে সাবধানে হুইলচেয়ারে বসিয়ে এখানে নিয়ে এসো।”

সেক্রেটারি দু’জন চলে যায়। কামিনী নিজের বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে বললেন….

—“বড় ভাসুর মশাই তো রোবট এর মতো হয়ে গিয়েছেন। তার উপস্থিতিতে কিংবা অ*নু*পস্থিতিতে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা তো সমানই। তিনি তো আর কোনো মতামত জানাতে পারবেন না। আমার তো মনে হয় তার কান দ্বারা আমাদের কথাগুলো তার মস্তিষ্ক পর্যন্তও পৌঁছাবে না।”

কামিনীর এমন কথায় কুশল শান্ত কন্ঠে বললো….
—“বড় বাবার অনু*পস্থিতিতেই যদি সব আলোচনা করার হয় তাহলে আমি বড় বাবাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে বাসায় নিয়ে আসলাম কেনো চাচী? আমাদের বলা প্রতিটি কথা তার কান দ্বারা মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌছায় কি না তা তুমি বা আমরা কেউই উপলব্ধি করতে পারবো না কখনও। এমনও তো হতে পারে আমাদের সাথে থেকে আমাদের বলা কথা গুলো শুনলে বড় বাবার মাঝে ইম্প্রুভমেন্ট হতে শুরু করবে। তাই পরবর্তীতে যেকোনো পারিবারিক বিষয়ে আলোচনা করার সময় বড় বাবার সেই স্থানে উপস্থিত থাকা নিয়ে কেও কোনো কথা উঠাবে না।”

কুশলের কথাগুলো শুনে কামিনী কোনো প্রতিত্তুর না করে নিজের চেহারায় গ*ম্ভী*রতার ছাপ ফুটিয়ে দ্রুততার সাথে বিনুনি নাড়াতে শুরু করেন। সেইসময় সেক্রেটারি দু’জন হুইলচেয়ারে বসিয়ে রায়হানুলকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হয়। অতঃপর সেক্রেটারি দু’জন স্থান ত্যগ করে। কুশল শান্ত স্বরে বললো…

—“দাদীমা…এবার বলুন কি বলবেন আপনি!”

সাগরিকা উপস্থিত সবাইকে একপলকে দেখে নিয়ে শান্ত স্বরে বললেন….
—“কনক দাদুভাই-অনন্যা দিদিভাই, কুশল দাদুভাই-তরু দিদিভাই তোমাদের বিবাহকার্য যেহেতু অ*স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সম্পন্ন হয়েছে তাই আমি আজ সন্ধ্যায় সোসাইটির সকল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে দাওয়াত করে তোমাদের সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি আমার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তোমাদের কারোর কোনো স*ম*স্যা নেই।”

সাগরিকার এমন সিদ্ধান্তে কনক আর অনন্যার চেহেরায় খুশির ছাপ ফুটে থাকলেও কুশল আর তরুর চেহারায় খুশির ছাপ ফুটে নেই। সন্ধ্যায় রিসেপশন পার্টি হওয়া নিয়ে সকলের সম্মতি আছে বুঝতে পেরে কুশল, তরুও আর মতবিরোধ করে না।

(১৭)
সন্ধ্যেবেলা…….
পুরো চৌধুরী মেনশন রঙিন আলোয় ঝলমল করছে। একে একে আমন্ত্রিত সকল অতিথিরা চৌধুরী মেনশনে আসতে শুরু করেছেন।

সাগরিকা নিজ দায়িত্বে দুই জোড়া কাপলের জন্য ম্যচিং করে ডিজাইনার ল্যহেঙ্গা ও শেরওয়ানি আনিয়েছেন। কনক আর অনন্যা গাড় নীল আর গোল্ডেন এর কম্বিনেশনে তৈরি ডিজাইনার লেহেঙ্গা ও শেরওয়ানি পড়েছে। অন্যদিকে কুশল আর তরু গাড় কালো আর হোয়াইট এর কম্বিনেশনে লেহেঙ্গা ও শেরওয়ানি পড়েছে। যথাসময়ে দুই জোড়া কাপল একে-অপরের হাত ধরে হেঁটে বাগানের পাশে আয়োজিত জায়গায় এসে উপস্থিত হয়। অতঃপর ওরা মন্ঞ্চে উঠে স্ব স্ব স্থানে বসে পরে। একদিকে কনক ও অনন্যার মুখশ্রীতে খুশির ঢেউ বইছে অন্যদিকে কুশল ও তরু নিজেদের মুখশ্রীতে জোরপূর্বক খুশির ছাপ ফুটিয়ে রেখেছে। একে একে আমন্ত্রিত সকল অতিথিরা মন্ঞ্চে এসে ওদের সাথে পরিচিত হয়ে ওদের হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দিচ্ছে। এভাবেই কেটে যায় বেশ লম্বা সময়। এতো লম্বা সময় ধরে একস্থানে বসে থাকার কারণে ভিষণ অ*স্বস্তি বোধ করছে তরু। তরুর এই অ*স্বস্তি বোধ হওয়ার বিষয়টি কুশলের চোখ এড়ায় নি। কুশল পকেট থেকে নিজের ফোনটি বের করে কাওকে একটা মেসেজ পাঠায়। পরক্ষণেই উপস্থিত সকল অতিথিদের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে এমন সংবাদ নিয়ে আসে খাবার পরিবেশনের মূল দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিটি। ধীরে ধীরে সব অতিথিরা খাবারের আয়োজন করা জায়গাটিতে চলে যায়। সকল অতিথিদের অন্যত্র চলে যেতে দেখে তরু কিছুটা স্বস্তি পায়। কুশল ওর বসার স্থান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তরুকে উদ্দেশ্য করে শান্ত স্বরে বললো……

—“রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও তরুনিমা। সকল অতিথিদের সাথে পরিচয় পর্ব যতোটুকু হওয়ার তা শেষ হয়েছে।”

তরু কুশলের এমন কথা শুনে অবাক দৃষ্টি নিয়ে কুশলের দিকে তাকায়। কুশল ওভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে বললো….

—“পরিবারের কেউ তোমাকে কিছু বলবে না, চিন্তা করো না। যাও তুমি, ফ্রেশ হয়ে রেস্ট করো। যদি কেও কিছু বলার সাহস করে তাহলে তোমার স্বামী তা বুঝে নিবে।”

তরু ওভাবেই কুশলের দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বললো…

—“খা*রু*শ টাকে যতোটা খা*রা*প ভেবেছিলাম ততোটাও খারাপ না৷”

অতঃপর তরুনিমা সোফা ছেড়ে উঠে চৌধুরী মেনশনের ভিতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ………..