হৃদকোঠোরে রেখেছি তোমায় পর্ব-৯+১০+১১

0
229

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৯)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৮)
তরুনিমা চৌধুরী মেনশনের ভিতরে নিজেদের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে। ফ্রেশ হয়ে সাধারণ একটা থ্রি-পিস পড়ে এখন অনেকটাই আরামদায়ক অনুভূতি কাজ করছে তরুর মাঝে। ওভাবেই কিছুসময় বসে থাকার পর তরুনিমা ভাবে……

—“গতকাল রাতেই এমন একটা সিন*ক্রি*য়েট হলো। এই বাড়ির সদস্যরা তো শুধু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার দো*ষ খুঁজতেই ব্যস্ত থাকেন। সুযোগ পেলেই সিকদার বংশের শিক্ষার দিকে আঙুল উঠান। এখন যে আমি আগে আগেই রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম এটা নিয়েও কোনো কথা শুনতে হবে না তো আবার! খা*রু*শ*টা তো বড় মুখ নিয়ে বললো ‘আমার চলে আসা নিয়ে বাসার কেও কিছু বলবে না, আমি যেনো চিন্তা না করি। যদি কেও কিছু বলতে আসে তাহলে তিনি নাকি তা বুঝে নিবেন।’ তবুও তো মনের মাঝে স্বস্তি পাচ্ছি না। তাহলে এখন কি আমার আবারও নিচে যাওয়া উচিত! কিন্তু এমন সাধারণ পোশাকে নিচে গেলে যদি সেটা নিয়েও কথা শুনতে হয়! উফহহহ চিন্তায় চিন্তায় আমার মাথাটা ন*ষ্ট না হয়ে যায়। যাকগে যা হওয়ার হবে, আমি এভাবেই বরং আরেকবার নিচ থেকে ঘুরে আসি। যদি দেখি উনি পুরো পরিবেশটা সামলে নিয়েছেন, তখন এসে পুরোপুরি ভাবে বিশ্রাম করবো।”

যেই ভাবনা সেই কাজ। তরুনিমা বিছানা থেকে নেমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কপালের মাঝ বরাবর হালকা কালো রংয়ের একটা টিপ দেয়, ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দেয় আর কানে ছোট সাইজের একজোড়া ঝুমকো পড়ে। খোঁপা খুলে দিতেই চুলগুলো কমোর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর চুলগুলো চিরুনি করে নিয়ে ওড়নাটা ভালোভাবে শরীরে জড়িয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পরে বাহিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

চৌধুরী মেনশনের মূল দরজা দিয়ে বের হয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে তরুনিমা। সেইসময় তরুনিমার জুতা কিছুর সাথে বেজে যাওয়ায় সে হো*চ*ট খেয়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে ব্য*থা*য় ‘আহহহ’ শব্দ উচ্চারণ করে।

তরুনিমার থেকে কিছুটা দূরে উল্টোঘুরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো ২৬-২৭ বছর বয়সী একজন সুদর্শন পুরুষ। তরুনিমার কন্ঠস্বর তার কান পর্যন্ত পৌঁছাতেই সে পিছন ঘুরে তরুনিমার দিকে তাকাতেই দেখে তরু পা ধরে মাটিতে বসে আছে। লোকটি ফোন কেটে দিয়ে তৎক্ষণাৎ তরুনিমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন…..

—“আপনি ঠিক আছেন তো ম্যম?”

অপরিচিত কোনো পুরুষ কন্ঠ কর্ণপাত হতেই তরুনিমা চোখ তুলে তাকায় তার দিকে। লোকটির শরীরের রং অতিরিক্ত ফর্সা ছিলো, মুখে হালকা চাপ দাঁড়ি, চোখে চশমা, পরণে কালো রংয়ের শার্ট আর প্যন্ট ছিলো। সবমিলিয়ে লোকটিকে যথেষ্ট সুদর্শন লাগছিলো। তরুনিমা লোকটির দিক থেকে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো…..

—“জ্বি, আমি ঠিক আছি।”

লোকটি তরুনিমার সামনে হাঁটু ভাজ করে বসে ওর পায়ের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে তরুর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল কে*টে র*ক্ত ঝরছে। লোকটি অস্থির কন্ঠে বললেন…..

—“আপনার পায়ের আঙুল তো কে*টে গিয়ে অনেক র*ক্ত ঝরছে তাহলে আপনি আমাকে মি*থ্যা কেনো বলছেন?”

তরুনিমা লোকটির প্রশ্নে কিছুটা বি*র*ক্তি নিয়েই বললো….

—“দেখছেন ই যখন পা কে*টে র*ক্ত ঝরছে তাহলে আবার আমি ঠিক আছি কি না এমন প্রশ্ন করে নিজের আ*হা*ম্ম*কি রূপ প্রকাশ করছেন কেনো?”

তরুনিমা এমন ত্য*ড়া প্রতিত্তোরে লোকটি সত্যিই যেনো আ*হা*ম্ম*ক হয়ে যায়। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন…..

—“যেভাবে র*ক্ত ঝরছে এক্ষুণি এই র*ক্ত পড়া বন্ধ না করলে ক্ষ*ত স্থানটিতে ইনফে*ক*শন হয়ে যাবে।”

—“সে বিষয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে।”

—“আমি পেশায় একজন ডাক্তার। তাই আপনার এইটুকু সাহায্য আমি খুব ভালো ভাবেই করতে পারবো।”

তরু নিজের হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ডান পায়ের বৃদ্ধা আঙুলটিতে বেশ গভীর ক্ষ*ত হওয়ায় তরু সেই পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারছে না। চেহেরায় কিছুটা কুঁচকানো ভাব ফুটিয়ে তরুনিমা বি*র*ক্তির স্বরে বললো…

—“আমি তো একটা বারের জন্যও আপনাকে বলি নি আমার আপনার সাহায্যের প্রয়োজন। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই আপনাদের ছেলেদের মনে লাড্ডু ফুটতে শুরু করে তাই না! আগ বাড়িয়ে সাহায্য করার এতোই যখন ইচ্ছে তখন কোনো সিংগেল, অবিবাহিত মেয়ের সাহায্য করিয়েন এতে আপনার লাভ হলেও হতে পারে। আমি বিবাহিত মেয়ে তাই আমাকে সাহায্য করার মাধ্যমে ফ্লা*টিং করার চেষ্টা করে কোনো লাভ হবে না আপনার।”

তরুনিমার মুখে এমন কথা শুনে লোকটির মুখ অটোমেটিক হা হয়ে যায়। এইমূহূর্তে লোকটির কি প্রতিত্তোর করা উচিত তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। কুশল কিছু প্রয়োজনে এদিকেই আসছিলো সেইসময় সে ওর সামনে তরুনিমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। তরুর সামনে এখনও ঐ লোকটি হাঁটু ভাজ করে বসে আছে। কুশল ওর ভ্রু যুগল কিন্ঞ্চিত কুঁচকে নিয়ে ওদের দিকে অগ্রসর হয়। পরক্ষণেই লোকটির পিছনে এসে দাড়িয়ে কুশল শান্ত স্বরে তরুকে প্রশ্ন করলো….

—“তরুনিমা তোমাকে তো বিশ্রাম করার জন্য আমি ভিতরে পাঠিয়েছিলাম তাহলে তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো? আর কে এই লোকটি?”

কুশলের কন্ঠ কর্ণপাত হতেই তরুনিমা কুশলের দিকে তাকায়। মাটিতে বসারত ঐ লোকটিও ঘাড় ঘুরিয়ে কুশলকে দেখা মাত্র বললো….

—“আরে দোস্ত তুই….!”

এই বলে লোকটি উঠে দাঁড়ায় কুশল ও তখন ভালো ভাবে লোকটিকে দেখে চিন্তে পেরে তাকে জড়িয়ে ধরে। তরুনিমা অবাক দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণেই ওরা একে অপরকে ছেড়ে দিয়ে পাশাপাশি দাঁড়ায়। কুশল হাসিমুখে বললো…..

—“দীর্ঘ ৪ বছর পর আমেরিকা থেকে দেশে ফিরলি। আমাকে আগে জানালেই তো পারতিস। এয়ারপোর্ট থেকে তোকে রিসিভ করতে পারতাম।”

লোকটি বললেন…..
—“ভেবেছিলাম তোকে না জানিয়েই দেশে ফিরবো আর তোকে সারপ্রাইজ দিবো। কিন্তু দেশে এসে তো আমি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম। আমাকে না জানিয়েই বিয়ে করে নিলি! আজ আবার তোর বিয়ের রিসেপশন। বাহ বাহ, এই হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের কাজের নমুনা।”

কুশল ওর ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসি ফুটিয়ে তরুনিমার দিকে তাকিয়ে বললো….
—“পরিস্থিতির বিপাকে পরে বিয়ে করতে হয়েছে। তোকে পরে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলবো।”

—“ঠিক আছে। এখন আগে আমার ভাবীর সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দে।”

বেশ কিছুসময় ধরে দাড়িয়ে থাকার কারণে তরুনিমার ক্ষ*ত স্থানে য*ন্ত্র*ণা করতে শুরু করেছে। তাই ও ব্যথায় আবারও মুখ দিয়ে ‘আহহহহ’ শব্দ বের করে। কুশল তরুর দিকে তাকিয়ে বললো…..

—“কি হয়েছে তোমার?”

কুশলের বন্ধু তরুর দিকে তাকিয়ে বললো…..
—“ওহহহ সিট…..তোর সাথে কথা বলতে গিয়ে তো আমি ওনার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। আরে দেখ না উনি ওনার ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে আ*ঘা*ত পেয়েছেন। সেই জায়গাটি কে*টে গিয়ে র*ক্ত ঝরতে শুরু করেছে।”

ওনার কথা শুনে কুশল দ্রুত তরুর কাছে এসে বললো….
—“আরে আ*ঘা*ত পেয়েছো সেই কথা আমাকে আগে বলবে তো!”

কুশল তরুর পায়ের কাছে বসে ওর পা স্পর্শ করতে নিলে তরু দ্রুততার স্বরে বললো…
—“আরে আরে কি করছেন! আপনি আমার পা ধরছেন কেনো?”

কুশল দেখে তরুর পায়ের ক্ষ*তস্থানে এখন র*ক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। সে উঠে দাঁড়িয়ে কোনো প্রতিত্তুর না করেই তরুকে নিজের পাঁজাকোলে তুলে নেয়। কুশলের এমন কাজে তরু যেনো হত*বুদ্ধি হয়ে যায়। তরুকে কোলে নিয়েই কুশল দ্রুত পায়ে চৌধুরী মেনশনের ভিতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরে। পরক্ষণেই তরুনিমা নিজের পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বললো…..

—“এই আপনি আবার আমায় কোলে নিয়েছেন! আপনার সাহস দেখে তো আমি রিতীমত অবাক না হয়ে পারছি না। নামান বল…..”

কুশল ধ*ম*কের স্বরে বললো……
—“চুপ….একদম চুপ…আর একটা শব্দ এই মুহূর্তে যদি তুমি তোমার মুখ থেকে বের করেছো তাহলে তোমায় মাথার উপর তুলে আ’ছা*ড় মা*র’বো।”

কুশলের ধ*ম*কের স্বরে বলা কথা শুনে তরু একেবারে নিরব হয়ে যায়। কুশল রাগী স্বরে বললো…

—“চোখ সবসময় কপালে উঠিয়ে রেখে চলাফেরা করো তুমি তাই না! সবসময় কোনো না কোনো ভাবে আ*ঘা*ত পেতেই হয় তোমায়। এতো বেশি দায়িত্বজ্ঞান*হীন হয়ে থাকে কি করে কোনো মানুষ এটা ভেবে তো আমিই রিতীমত অবাক না হয়ে পারছি না।”

চলবে ইনশাআল্লাহ……….

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১০)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৯)
তরুকে কোলে নিয়ে কুশল চৌধুরী মেনশনের ভিতরে চলে যায়। মূল দরজা থেকে কিছুটা দূরে অবাক মুখশ্রী নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রয় কুশলের বেস্টফ্রেন্ড নিলাদ্র আহমেদ। পরক্ষণেই নিলাদ্র স্বজ্ঞানে ফিরলে দ্রুত পায়ে চৌধুরী মেনশনের ভিতরে প্রবেশ করে কুশল-তরুর পিছন পিছন উপরে চলে যায়।

কুশল তরুকে কোলে করে নিজেদের রুমে এনে সাবধানে বিছানায় বসিয়ে দেয়। অতঃপর ওয়ারড্রব এর উপর থেকে ফাস্টএইড এর বক্সটা হাতে নিয়ে তরুর পায়ের কাছে নিচে মেঝেতে হাঁটু ভাজ করে বসে পড়ে। তরু অবাক দৃষ্টি নিয়ে কুশলের দিকে তাকিয়ে আছে। কুশল তরুর পা টা নিজের হাঁটুর উপর রেখে ক্ষ*ত স্থানটি খুব মনোযোগ সহকারে দেখে। তারপর ফাস্টএইড বক্স থেকে ক্ষ*ত স্থান পরিষ্কার করার জন্য স্যভলন এর বোতল আর পরিষ্কার তুলো বের করে হাতে নেয়। স্যভলন দিয়ে তুলোটুকু ভিজিয়ে নিয়ে যেইমাত্র কুশল তরুর পায়ের ক্ষ*ত স্থানে লাগায় ওমনি তরু একহাতে কুশলের ঘাড়ের ডানপাশ চেপে ধরে চোখ-মুখ কুঁচকে নিয়ে মুখ দিয়ে ‘আহহহ জ্ব*লে গেলো’ বাক্যটি উচ্চারণ করে। কুশল তরুর ক্ষত স্থানে ‘ফুউউউ’ দিতে দিতে বললো…..

—“একটু জ্বা*লা করবেই, ক্ষ*ত স্থানটি যথেষ্ট গভীর। র*ক্ত ইতিমধ্যে জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। দ্রুত ক্ষ*ত স্থানটি ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে ইন*ফে*ক*শন হয়ে যাবে তখন য*ন্ত্র*ণা আরো বাড়বে। সহ্য করে নেওয়ার চেষ্টা করো।”

কুশলের কথায় তরু কুশলের ঘাড় আরো শক্ত করে চেপে ধরে নিজের চোখ খিঁ*চে বন্ধ করে রাখে। কুশল খুব যত্নসহকারে তরুর ক্ষ*ত স্থানটি পরিষ্কার করে ব্য*ন্ডে*জ করে দেয়। তরু এখন ও ওর চেহারার অবস্থা আগের ন্যয় করে রেখেছে। কুশল তরুর দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো…..

—“ব্য*ন্ডে*জ করা হয়ে গিয়েছে।”

কুশলের কন্ঠ কর্ণপাত হতেই তরু নিজের চোখ মেলে পায়ের দিকে তাকায়। ক্ষ*ত স্থানে জ্বা*লা করা আগের থেকে কিছুটা কমেছে। পরক্ষণেই তরু দেখে সে কুশলের ঘাড়ে নিজের হাত দিয়ে রেখেছে তাই সাথে সাথেই সে তার হাত সরিয়ে নেয়। কুশল বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের চোখ-মুখ কিছুটা কুঁচকে নেয়। সেইসময় নিলাদ্র ওদের রুমে প্রবেশ করে কুশলের দিকে তাকাতেই ওর চোখ কুশলের ঘাড়ের ডানপাশ থেকে বের হতে থাকা র*ক্তে*র উপর পড়ে। নিলাদ্র কুশলের কাছে এসে দাঁড়িয়ে অস্থির কন্ঠে বললো….

—“কি রে তোর ঘাড়ে কি হয়েছে! এভাবে র*ক্ত ঝড়ছে কেন?”

কুশল নিলাদ্রের দিকে চোখ রা*ঙিয়ে ইশারায় ওকে চুপ করতে বলে। নিলাদ্র কুশলের ইশারা বুঝে উঠতে পারে না। তরুনিমা নিলাদ্রের কন্ঠে বলা কথাটি শুনে নিজের বাম হাতের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে ওর হাতের ৫টি আঙুলের নখেই র*ক্ত লেগে আছে। তরুনিমা বুঝতে পারে কিছুসময় পূর্বে কুশল যখন ওর পা ব্য*ন্ডে*জ করে দিচ্ছিলো তখন সে য*ন্ত্র*ণা সহ্য করতে না পেরে কুশলের ঘাড় চেপে ধরে পাঁচটি নখই বসিয়ে দিয়েছিলো। নিলাদ্র কুশলের হাত ধরে বিছানার দিকে আনতে আনতে বললো…..

—“দেখি এদিকে এসে বোস আমি তোর ক্ষ*ত স্থানটি পরিষ্কার করে দিচ্ছি।”

কুশল তৎক্ষনাৎ নিজের হাত নিলাদ্রের হাতের বাঁধন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো….

—“আরে ছাড় আমায়, তেমন কিছু হয় নি আমার। তুই এখন আমার সাথে বাহিরে চল তোর সাথে আমার পারসোনালি কথা বলার আছে।”

এই বলে কুশল নিলাদ্রকে নিয়ে রুম থেকে বের হতে নিলে তরুনিমা শান্ত স্বরে বললো…

—“দাঁড়ান কুশল!”

তরুনিমার ডাকে কুশল আর নিলাদ্র সেখানেই দাঁড়িয়ে পরে। তরুনিমা আবার বললো….

—“এখুনি আমার পাশে এসে বসুন।”

কুশল ওভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে বললো….
—“আমার কাজ আছে , পরে আসছি তোমার কাছে।”

—“আপনি কি চাইছেন আমি এই ক্ষ*ত যুক্ত পা নিয়ে হেঁটে হেঁটে আপনার কাছে যাই!”

কুশল তরুর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো….
—“একটু আগেই ব্য*ন্ডে*জ করে দিয়েছি তোমার পা। এখন এই পা নিয়া হাঁটা চলা করলে ক্ষ*ত স্থান থেকে আবারও র*ক্ত*পা*ত হতে পারে।”

—“তাহলে আমার কথা মেনে নিয়ে আমার পাশে এসে বসুন এক্ষুনি।”

কুশল আর কোনো উপায় না পেয়ে তরুনিমার পাশে এসে বসে। তরুনিমা কুশলের মাথার ডান পাশ একটু বাম দিকে বাঁকিয়ে দেখলো ওর ঘাড়ে তরুর ৫টা নখ অনেকটুকু গভীর হয়ে বসে গিয়েছে। তরু নিলাদ্রকে উদ্দেশ্য করে বললো….

—“ভাইয়া….ওনার ক্ষ*ত স্থানটুকু পরিষ্কার করে দিন।”

—“আমি পরে করে নিতে পারবো, তোমার বিশ্রা…..”

কুশল ওর পুরো কথা শেষ করার পূর্বেই তরু কুশলের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো….

—“চুপ করুন….এতো বেশি বুঝতে আর বলতে কে বলছে আপনাকে? অন্যের স*ম*স্যা হলে তাকে সবরকম ভাবে সাহায্য করার জন্য ম*রি*য়া হয়ে উঠেন এখন নিজের স*ম*স্যা হয়েছে তা ঠিক না করা নিয়ে যতো রকমের বাহানা শুনাচ্ছেন!”

কুশল আবারও কিছু বলতে নিলে তরু চোখ পাঁ*কিয়ে কুশলের দিকে তাকিয়ে আবারও বললো….

—“আর একটা শব্দ যদি মুখ থেকে বের করেছেন এই মুহূর্তে তাহলে আমার দু’হাতের এই লম্বা লম্বা নখ গুলো দিয়ে আপনার সর্বশরীরের আমি ক্ষ*ত তৈরি করে দিবো বলে দিলাম।”

তরুর এমন কথায় কুশলের মুখ অটোমেটিক খুলে যায়। তরু নিলাদ্রের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো….

—“কি হলো আপনি ওখানে ওমন রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? খুব তো তখন আমার ক্ষ*ত স্থান তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করা নিয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন। এখন নিজের বন্ধুর ক্ষ*ত স্থানে কি ইন*ফে*ক*শন হওয়ার পর তা পরিষ্কার করবেন?”

নিলাদ্র আ*হা*ম্ম*কের মতো মুখশ্রী করে কুশলের কাছে এসে দাঁড়িয়ে ওর ঘাড়ের ক্ষ*ত স্থানটি পরিষ্কার করে দিতে শুরু করে। তরু কুশলের ঘাড়ের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে। কুশল নিজের ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসির রেখা ফুটিয়ে তরুর দিকে মোহনীয় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রয়।

কিছুসময়ের মধ্যেই নিলাদ্র কুশলের ক্ষ*ত স্থানটি পরিষ্কার করে ব্য*ন্ডে*জ করে দেয়। তরুও নিজের দৃষ্টি কুশলের উপর থেকে সরিয়ে নেয়। নিলাদ্র কুশলের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে কুশল তরুর দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসছে। নিলাদ্র তৎক্ষনাৎ কুশলের কাঁধে হালকা ধা*ক্কা প্রয়োগ করতেই ওর ধ্যন ভে*ঙে যায়। নিলাদ্র ওর মাথার পিছনের অংশের চুলগুলো হাত দিয়ে নাড়তে নাড়তে বললো….

—“এই তাহলে আমার ভাবী! এতো সুন্দর ভাবে বেস্ট ফ্রেন্ড এর বউয়ের সাথে পরিচয় হবে আমি কল্পনাও করতে পারি নি দোস্ত।”

কুশল তরুনিমার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো…
—“এখন কি আমি বাহিরে যেতে পারি!”

তরু মুখ বাঁ*কিয়ে বললো……
—“আমি কি আপনার হাত-পা দড়ি দিয়ে বে*ধে রেখেছি নাকি যে এভাবে বাহিরে যাওয়ার জন্য আমার থেকে পারমিশন চাচ্ছেন!”

তরুর এমন প্রতিত্তুরে কুশল শান্ত স্বরে বললো….
—“বেঁধে ছিলেই তো তোমার কথার মাঝেই ছিলো সেই অদৃশ্য কোনো দড়ির বাঁ*ধন। যা আমাকে এই ঘরের বাহিরে যাওয়া থেকে আটকে দিয়েছিলো।”

এই বলে কুশল বিছানা ছেড়ে উঠে নিলাদ্রকে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরু অবাক দৃষ্টি নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রয়।

(২০)
রুম থেকে বেড়োতেই নিলাদ্র কুশলকে বললো….
—“আমি একটা বিষয় চিন্তা করে কুলিয়ে উঠতে পারছি না।”

কুশল সামনের দিকে অগ্রসর হতে হতে প্রশ্ন করলো….
—“কি বিষয়?”

—“রওনাক আজমাইন চৌধুরী কুশল যার নাম শুনলেই কিনা ভ*য়ে বা’ঘে-গরুতে এক ঘাটে জল পান করে। যে কিনা কোনো কাজ করার বা কোনো বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে কারোর কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। নিজে যেই সিদ্ধান্তে একবার মনঃস্থির করবে পৃথিবীর কারোর ক্ষমতা হয় না সেই সিদ্ধান্ত থেকে তাকে পিছু হ*টা*নোর, সেই কুশল চৌধুরীকে ধ*ম*ক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো মাত্র ২১-২২ বছর বয়সী একজন মেয়ে!”

নিলাদ্রের এমন কথার উত্তর কুশলের নিজের কাছেও যেনো অজানা। সে নিজেও নিজের এমন পরিবর্তনের কথা ভেবে অবাক হচ্ছে। নিলাদ্র কুশলের কাঁধে হাত রেখে বললো….

—“আজ তোকে দেখে তো ভাই একটা জিনিস খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারলাম, একজন মেয়ে পারে না এমন কাজ হয়তো পৃথিবীতে খুব নগন্য। শেষ একটা কথাই বলবো, সাবধানে থাকিস দোস্ত আমার। যেই পরিমাণ ডে*ন্ঞ্জে*রা*স বউ তোর কপালে জু*টে*ছে তাতে তোর মাঝে থাকা এক*রো*খা, জে*দ্দি স্বভাবের ইতি ঘটতে খুব বেশি সময় লাগবে বলে আমার মনে হচ্ছে না।”

কুশল নিলাদ্রের কথার কোনো প্রতিত্তুর করে না। কিছুসময়ের মধ্যেই ওরা দু’জন হাঁটতে হাঁটতে চৌধুরী মেনশনের বাহিরে চলে আসে। সেইসময় নিলাদ্রের ফোনে একটি কল আসলে সে অন্য সাইডে চলে যায়। ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে আনমনে সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করে সেইসময় ওর সাথে একজন মেয়ের ধা*ক্কা লাগে। যার ফলে মেয়েটি পরে যেতে নিলে নিলাদ্র মেয়েটির কমোর একহাতে জড়িয়ে ওকে পরে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে নেয়। মেয়েটির মুখের উপর একরাশ চুল এসে পড়ায় নিলাদ্র তার চেহারা দেখতে পারছে না। নিলাদ্রের অন্য হাতে থাকা ওর ফোনটি হাত ফ*সকে নিচে পড়ে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ…………….

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১১)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(২১)
নিলাদ্র এক হাতে মেয়েটির কমোর জড়িয়ে তার দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে। পরক্ষণেই অন্য হাত দিয়ে মেয়েটির মুখের উপর পরে থাকা চুলগুলো সরাতে নিলেই মেয়েটি তার দুইহাত নিলাদ্রের বুকের উপর রেখে চাপ প্রয়োগ করলে নিলাদ্রের ধ্যন ভা*ঙে। নিলাদ্র তৎক্ষণাৎ মেয়েটিকে ছেড়ে দিলে মেয়েটি ধ*প করে নিচে বসে পরে “মাগোওও এতো অল্প বয়সে আমার এতো সুন্দর স্লিম কমোরের হাড় গুলো ভে*ঙে গেলো গো” বলে আ*র্ত*নাদ করে উঠে। নিলাদ্র হত*ভ*ম্ব দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে। পরক্ষণেই মেয়েটি একহাতে নিজের মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে নিলাদ্রের দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বললো….

—“আমেরিকাতে গিয়ে ধ্যন, জ্ঞান সব হারিয়ে হা*দা*রা*ম সাজার উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে এসেছেন নাকি? ১ম এ তো কোথা না কোথা থেকে এসে চোখ থাকতেও কা*নাদের মতো ধা*ক্কা দিলেন, ২য় তো সদয়বান সাজতে পরে যাওয়া থেকে আটকে নিলেন, ৩য় তো কানের মাথা খেয়ে এসেছেন যে এতোবার ডাকাডাকি করলাম কোনো সাড়াশব্দ করলেন না হুট করেই ছেড়ে দিয়ে আমার কমোরের দ*ফা*রফা করে ছাড়লেন।”

নিলাদ্রকে এখনও নিজের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কোনো প্রতিত্তুর করতে না দেখে মেয়েটির রা*গ যেনো এবার মাথায় চ*ড়ে বসে। গত রাতে বৃষ্টি হওয়ায় মেয়েটির পরে যাওয়া অংশের চারপাশে হালকা কাঁদা জমে আছে। পরক্ষণেই মেয়েটি ওর পাশ থেকে কিছু কাঁদা মাটি নিজের হাতে নিয়ে নিলাদ্রের উপর ছুঁ*ড়ে মা*রে। যা সরাসরি নিলাদ্রের মুখের উপর গিয়ে প*রে। মুখের উপর হুট করে একগাদা কাঁদা মাটি এসে পড়ায় নিলাদ্র চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলে। নিলাদ্রের চেহারার এমন বেহাল অবস্থা দেখে মেয়েটি আর নিজের হাসি চেপে রাখতে পারে না। মেয়েটি নিজের ডান হাতের উল্টোপিঠ মুখের উপর রেখে হাসতে শুরু করে। নিলাদ্র ওর দুইহাত দিয়ে মুখের উপর জমে থাকা কাঁদা গুলো সরিয়ে ধ*ম*কের স্বরে বললো…

—“সন্ধ্যার বা’চ্চা….তোর এতো বড় সাহস তুই আমার মুখে কাঁদা ছু*ড়’লি!”

নিলাদ্রের ধ*ম*কের স্বরে বলা কথাটি শুনে সন্ধ্যার হাসি বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা এখন বুঝতে পারছে সে রাগের বসে কার সাথে কি করে ফেলেছে। সন্ধ্যা একবার শুকনো ঢোক গি*লে বিরবিরিয়ে বললো….

—“সন্ধ্যা…যদি নিজের জীবনের প্রতি তোর বিন্দুমাত্র মায়া থাকে তাহলে এক্ষুনি এই স্থান থেকে কে*টে পর। নয়তো এই ধলা ডে*ভিল এর হাতে শহীদ হওয়া থেকে তোকে কেও রক্ষা করতে পারবে না।”

এই বলে সন্ধ্যা ওর এক হাতে ভর দিয়ে বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে পা বাড়াতে নিলে নিলাদ্র সন্ধ্যার হাত চে*পে ধরে দাঁতে দাঁত পি*ষে বললো….

—“এতো সহজে আমার হাত থেকে পালাতে পারবি ভাবলি কি করে?”

নিলাদ্রের এমন কথায় সন্ধ্যার অবস্থা যেনো এখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্ধ্যা কোনো পতিত্তুর করার আগেই নিলাদ্র একটা হেঁ*চ*কা টান দিয়ে সন্ধ্যাকে নিজের দিকে অনেকটা এগিয়ে আনে। দুজনের মাঝে ১টাকর পরিমাণও দুরত্ব নেই। নিলাদ্রের এমন কাজে সন্ধ্যা ভ*য়ে চোখ-মুখ খিঁ*চে বন্ধ করে নেয়। নিলাদ্র সন্ধ্যার ভ*য়ে কুঁচকে রাখা চেহারার দিকে তাকাতেই যেনো ওর সব রাগ অদৃশ্য হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। নিলাদ্র ওর একহাত দিয়ে সন্ধ্যার দুই হাত ওর কমোরের পিছনে চেপে ধরে নিজের সাথে পুরোপুরি ভাবে মিশিয়ে নিয়ে ওর মুখের উপর আসা ছোট ছোট চুলগুলো অন্য হাত দিয়ে খুব যত্নের সাথে সরিয়ে কানের পিছনে গুঁজে দেয়। সন্ধ্যা এখনও আগের ন্যয় চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে। নিলাদ্র ওর ঠোঁটে হালকা হাসি ফুটিয়ে নিজের গালে লেগে থাকা কাঁদা গুলো হাতে নিয়ে সন্ধ্যার দুই গালে মাখিয়ে দেয়। অতঃপর সন্ধ্যার ডান কানের কাছে মুখ এগিয়ে এনে ফিসফিসিয়ে বললো…..

—“৪বছর ধরে তোর থেকে দূরে থেকেও তোর প্রতি কাজ করা এই নেশা কাটিয়ে উঠতে পারলাম না। এতোটুকু সময় হলো কাছে এসেছিস এতেই নিজেকে কেমন মাতাল মাতাল লাগছে। তৈরি হয়ে নে, খুব তাড়াতাড়ি তোকে নিজের রাজ্যের রানী বানিয়ে নিয়ে যাবো।”

এই বলে নিলাদ্র সন্ধ্যাকে ছেড়ে দিয়ে প্যন্টের পকেটে দু’হাত গুঁজে শিঁশ বাজাতে বাজাতে চৌধুরী মেনশনের ভিতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। সন্ধ্যা চোখ মেলে পিছন ঘুরে নিলাদ্রকে চলে যেতে দেখে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো……

—“আল্লাহ কেনো আপনি আবার এই ডে*ভি*লটাকে আমার আশেপাশে ফিরতে দিলেন! গত চারটে বছর তো অনেক শান্তিতেই ছিলাম। আমার শান্তিতে থাকার সময় এতো তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যেতে দিলেন কেনো?”

এই বলে সন্ধ্যাও উল্টোদিকে হাঁটা ধরে। ওরা চলে যেতেই ওদের থেকে কিছুটা দূরে গাছের আড়াল থেকে কোন একজন ছায়া মানবের ছায়াও স্থান ত্যগ করে।

(২২)
রিসিপশন পার্টি শেষ হলে সকল অতিথিরা নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যায়। নিলাদ্র সহ চৌধুরী মেনশনের সকল সদস্যরা ফ্রেশ হয়ে কুশলের কথানুযায়ী আবারও ড্রয়িংরুমে এসে একত্র হয়। তরুনিমা পায়ে আ*ঘা*ত পাওয়ায় সে উপরে নিজের রুমেই থেকে গিয়েছে। কিছুসময় পর কুশল সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে ড্রয়িং রুমে এসে নিজ স্থানে বসে পরে। সাগরিকা কুশলের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলেন…..

—“কি ব্যপার কুশল দাদুভাই হঠাৎ এতো রাতে কি এমন জরুরি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য সবাইকে একত্র হতে বললে?”

কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য সবাইকে একত্র হতে বলি নি দাদীমা, আমি একটা বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি কেবল সেটাই সকলকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য একত্র হতে বলেছি৷”

সায়মন কিছুটা বি*রক্তি ভাব নিজের চেহারায় ফুটিয়ে রেখে বললেন…
—“তুমি কখনও এ বাড়ির গুরুজনদের সঠিক মূল্যায়ন করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের সাথে আলোচনা করেছো নাকি? করো নি তো! তাই তোমার থেকে এমনটা হবে তা এক্সপেক্ট ও করি না আমরা।”

সায়মনের এমন প্রতিত্তুর যে কুশলের উপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারে নি তা ওর চেহারার দিকে তাকালেই বুঝতে পারছে সবাই। সাবরিনা শান্ত স্বরে বললেন….

—“আহা সায়মন….কেনো তুমি বারবার আমার ছেলের কাজের মাঝে দো*ষ খুঁজতে বসো বলো তো? আমার কুশল বাবা আমাদের কারোর সাথে কোনোরূপ আলোচনা না করে যেই সিদ্ধান্তই নিয়েছে তা কখনও আমাদের জন্য ক্ষ*তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় নি। তাই বাবা হয়ে সবসময় ছেলের কাজের মাঝে দো*ষ খুঁজতে গিয়ে আর নিজেদের মধ্যে মনো*মা*লি*ন্যের গভীরতা বাড়িও না।”

সাবরিনার কথায় সায়মন চুপ হয়ে যায়। রিজভী শান্ত স্বরে বললেন…..

—“কুশল…বাবা তুমি বলো এখন কি সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য সকলকে একত্র করলে!”

কুশল সকলের উপর দৃষ্টি স্থির রেখে বললো……
—“বড় বাবার চিকিৎসার জন্য আমি একজন যোগ্য চিকিৎসকের ব্যবস্থা করেছি। আগামীকাল সকাল থেকে সেই বড় বাবার চিকিৎসার দিকটা সামলাবে।”

সাগরিকা প্রশ্ন করলেন….
—“কে সেই চিকিৎসক? আমরা কি তাকে চিনি?”

কুশল নিলাদ্রের দিকে তাকিয়ে বললো….
—“হুম, নিলাদ্রই আগামীকাল থেকে বড় বাবার চিকিৎসার সম্পূর্ণ দিক সামলাবে।”

কুশলের এমন কথা শোনা মাত্র কামিনীর হেঁ*চ*কি উঠে যায়। সাথে সাথেই কামিনী দু’হাতে নিজের মুখ চেপে ধরে হেঁ*চ*কির শব্দ বের হওয়া আটকানোর চেষ্টা করে। নিলাদ্র কামিনীর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো…

—“চাচী…মুখ থেকে হাত সরান। লম্বা একটা নিঃশ্বাস টেনে কিছুসময় শ্বাস ফেলা বন্ধ রাখুন হেঁ*চকি বন্ধ হয়ে যাবে।”

নিলাদ্রের কথানুযায়ী কামিনী লম্বা একটা নিঃশ্বাস টেনে শ্বাস ফেলা বন্ধ রাখে। কুশল শান্ত স্বরে বললো….

—“সবাই এখন সবার নিজ নিজ ঘরে যেতে পারেন। আমার আর কিছু বলার নেই। আর নিলাদ্র তুই আমার সাথে আয় বড় বাবার ঘরে যেতে হবে।”

অতঃপর সকলেই বসা অবস্থা থেকে উঠে নিজ নিজ রুমে চলে যায়। কামিনীকে এখনও নিঃশ্বাস বন্ধ রেখে নিজ স্থানে বসে থাকতে দেখে রিজভী বললেন….

—“একেবারের জন্য নিঃশ্বাস বন্ধ রেখে নিজেকে ক*ব*রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছো নাকি তুমি?”

রিজভীর এমন কথা শোনামাত্র কামিনী চোখ বড় বড় করে রিজভীর দিকে তাকিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে হাঁপাতে শুরু করে।

চলবে ইনশাআল্লাহ……..