হৃদকোঠোরে রেখেছি তোমায় পর্ব-১২+১৩+১৪

0
207

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১২)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(২৩)
কুশল নিলাদ্রকে নিয়ে রায়হানুলের রুমে প্রবেশ করে। রায়হানুল বিছানার উপর স্থির হয়ে শুয়ে আছে। কুশল আর নিলাদ্র বিছানার কাছে যায়। কুশল রায়হানুলের পাশে বসে তার দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে বললো….

—“খুব অদ্ভুত তাই না! যেই মানুষটার মুখ থেকে কখনও আমার নাম উচ্চারণ করতে শুনি নি, যেই মানুষটাকে কখনও আমার মাথার উপর আদর ও দোয়ার হাত ছোঁয়াতে দেখি নি। সেই মানুষটার প্রতি এক অদৃশ্য টান কাজ করে। শুধু মাত্র একই বংশের, একই রক্তের সম্পর্কের জন্য এতো বেশি টান, মায়া, ভালোবাসা কাজ করাটা দেখতে ও শুনতে সত্যিই ভিষণ অদ্ভুত লাগে। এ বাড়ির মানুষগুলো তো অনেক আগেই বড় বাবার সুস্থ হওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন কিন্তু আমার মন কেনো যেনো তাতে সায় দেয় নি৷ আমার মন আজও বলে বড় বাবা একদিন না একদিন ঠিকই সুস্থ হয়ে উঠবেন। নিজের মুখ দিয়ে আমার নাম উচ্চারণ করবেন, আমার মাথায় ভালোবাসা ও দোয়ার হাত স্পর্শ করবেন। তুই পারবি তো দোস্ত আমার এই স্বপ্নটিকে বাস্তব রূপ দিতে?”

নিলাদ্র কুশলের কাঁধে এক হাত রেখে বললো…..
—“আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবো দোস্ত বড়বাবাকে পুরোপুরি ভাবে সুস্থ করে তুলতে।”

কুশল ওর কাঁধে নিলাদ্রের রাখা হাতের উপর নিজের বাম হাত রেখে শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে। পরক্ষণেই কুশল রায়হানুলের পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বললো…

—“তোকে একটা বিষয় জানানো উচিত বলে মনে হচ্ছে আমার। গতকাল মাঝরাতে আমার স্ত্রী তরুনিমা বড় বাবার রুমে এসেছিলো আর সে দেখেছিলো বড় বাবা নাকি অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছিলেন। কিছুসময় পর যখন আমরা সবাই বড় বাবার রুমে এসেছিলাম তখন বড় বাবাকে এখনের ন্যয়ই স্থির হয়ে থাকতে দেখেছিলাম। দীর্ঘ ২০ বছরের মাঝে হুট করে বড়বাবার এমন অস্বাভাবিক আচারণের কথা তরুনিমাই প্রথম নোটিশ করেছিলো। এটাকে কি আমরা পজেটিভ সাইন হিসেবে ধরতে পারি?”

কুশলের এমন কথায় নিলাদ্র ওর কপালে চিন্তার কয়েকটা ভাজ স্পষ্ট করে বললো…..
—“আমার জানামতে দীর্ঘ সময় ধরে কো*মায় থাকা কোনো পেশেন্টের ক্ষণিক সময়ের জন্য অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপা-কাঁপি করার বিষয়টা কখনই তার সুস্থ হওয়ার পজেটিভ সাইন হিসেবে মনে করতে পারি না। তবে যদি রোগীর শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে কোনো কড়া ডোজের ঔষধ ইনজেক্ট করা হয় তখন রোগীর শরীর ক্ষণিক সময়ের জন্য অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপা-কাঁপি করতে পারে। আমি যেহেতু এই বিষয়টা নিয়ে পুরোপুরি ভাবে শিওর নই তাই তুই টেনশন করিস না।”

নিলাদ্রের মুখে এরূপ কথাগুলো শুনে কুশল কিছুসময় নিরব হয়ে থাকে। পরক্ষণেই কুশল রায়হানুলের রুম থেকে বের হতে হতে বললো……

—“তুই বড় বাবার কাছে থাক আমি একটু আসছি।”

এই বলে কুশল রায়হানুলের রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। নিলাদ্র রায়হানুলের পাশে বসে তার পালস এর গতি চেইক করে। কিছুসময় পর কুশল ওর হাতে একটা বড় আকারের চাইনিজ তালা আর চাবি নিয়ে রায়হানুলের রুমে প্রবেশ করে বললো…..

—“নিল…চল এখন। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে, বিশ্রামের প্রয়োজন আছে তোর।”

নিলাদ্র কুশলের কথানুযায়ী রায়হানুলের পাশ থেকে উঠে দাড়ায়। অতঃপর ওরা দু’জনেই রায়হানুলের রুমের বাহিরে চলে আসে। কুশল রায়হানুলের রুমের দরজা বাহির থেকে আটকিয়ে তালা লাগিয়ে দেয়। কুশলের এমন কাজে নিলাদ্র অবাক স্বরে প্রশ্ন করলো…

—“কি রে বড়বাবাকে ভিতরে রেখে তার রুমের দরজায় তালা লাগালি কেনো?”

কুশল নিলাদ্রের দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে বললো….
—“বড় বাবার ট্রিটমেন্ট চলাকালীন পুরো সময়টাতে তুই আর আমি ব্যতিত যেনো ৩য় কোনো ব্যক্তি বড় বাবার রুমে প্রবেশ করতে না পারে তাই এই কাজ করলাম।”

—“কিন্তু, বড় বাবা তো এখন তার নিজ বাসাতেই আছেন। এখানে থাকাকালীন তার চিকিৎসায় ব্য*ঘা*ত ঘটাবে এমন তো কেও এ বাসায় থাকার কথা না।”

—“যদি তোর ধারণা অণুযায়ী বড় বাবার শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলার উদ্দেশ্য নিয়েই গত রাতে কেও কড়া ডোজের ঔষধ তার শরীরে ইন*জে*ক্ট করে থাকে তাহলে অবশ্যই এমন কেও আছে আমাদের চারপাশে যে চায় না বড় বাবা সুস্থ হয়ে যাক। তাই পূর্ব থেকেই সতর্ক থাকা ভালো।”

নিলাদ্র আর কিছু বললো না৷ অতঃপর ওরা দু’জনে দু’জনের রুমে চলে যায়।

(২৪)
কুশল নিজের রুমে প্রবেশ করতেই দেখে তরুনিমা বিছানার উপর জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে। কুশল তরুনিমার পাশে এসে গিয়ে দাঁড়িয়ে তরুর পায়ের কাছে থাকা কম্বলটি টেনে ওর শরীরে দিয়ে দেয়। সেইসময় তরুর হাতের সাথে কুশলের হাত স্পর্শ হতেই সাথে সাথে সে হাত সরিয়ে নেয়। পরক্ষণেই কুশল তরুর কপালে, গালে হাত রেখে চিন্তিত স্বরে বললো…

—“ওর শরীর তো জ্বরে পু*ড়ে যাচ্ছে।”

কুশল লক্ষ্য করে এতো ভাড়ি কম্বল তরুর শরীরে জড়িয়ে দেওয়ার পরেও সে কাঁপছে। তাই কুশল আলমারি থেকে আরো ১টি কম্বল বের করে ভালো ভাবে তরুর শরীরে জড়িয়ে দেয়। অতঃপর কুশল রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে এসে একটা বাটি নিয়ে আবারও রুমে যায়। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে দুইটি রুমাল বের করে বেডসাইড টেবিলের উপর রাখা পানির বোতল থেকে বাটিতে পানি ঢেলে নিয়ে তরুর মাথার পাশে বসে জলপট্টি দিতে শুরু করে। বেশ কিছুসময় ধরে জলপট্টি দেওয়ার ফলে তরুর শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা কমে যায়। কুশল তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো….

—“আমি তোমার স্বামী তাই তোমাকে স্পর্শ করার জন্য আমার তোমার কাছে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যেহেতু তুমি আমাকে এখনও নিজের স্বামী রূপে পুরোপুরি ভাবে মেনে নিতে পারো নি তাই তোমার অনুমতি ব্যতিত তোমাকে স্পর্শ করা আমার উচিত হবে বলে আমার মনে হয় না। আজ তোমার অসুস্থতা আমায় বাধ্য করলো তোমায় স্পর্শ করতে। আমায় তুমি ক্ষমা করে দিও তরুনিমা।”

এই বলে কুশল কম্বলের নিচ থেকে তরুর একটা হাত বের করতেই দেখে হাত ঘেমে গিয়েছে। তাই কুশল তরুর উপর থেকে কম্বল দুটি সরিয়ে দেয়। এরপর বিছানা থেকে নেমে আলমারি খুলে একটি পাতলা কম্বল ও একটি পাতলা গামছা বের করে। কম্বলটি বিছানার উপর রেখে কুশল ওয়াশরুম থেকে গামছাটি ভিজিয়ে এনে তরুর কাছে বসে ওকে ধরে শোয়াবস্থা থেকে উঠিয়ে নিজের বুকের সাথে ওর পিঠ ঠেকিয়ে বসিয়ে দিয়ে তরুর দু’হাতের জামার হাতা গুটিয়ে দেয়। এরপর ভেজা গামছাটি দিয়ে তরুর মুখ, গলা, ঘাড়, দু-হাতের ঘামগুলো মুছে দেয়।

শরীরের শুধু এতোটুকু অংশ মুছলেই হবে না, ভিতরের অংশগুলোও মুছতে হবে। তাই কুশল ভিজা রুমালটি দিয়ে নিজের চোখ বেঁধে নেয়। এরপর তরুর শরীরের ভেতরের সামনে ও পিছনের অংশ যত্নসহকারে মুছে দিয়ে ওর জামা ঠিক করে দিয়ে চোখের বাঁধন খুলে ফেলে। এরপর তরুকে আবারও আগের স্থানে শুইয়ে দিয়ে কুশল ওর পায়ের কাছে বসে দৃষ্টি অন্যদিকে স্থির রেখে ওর দুই’পা মুছে দিয়ে পাজামা ও নামিয়ে দেয়। কুশল বিছানা থেকে নেমে পাতলা কম্বলটি তরুর শরীরে জড়িয়ে দেয়৷ মূলত সন্ধ্যার পর পায়ে আ*ঘা*ত পাওয়ার কারণেই যে তরুর জ্বর এসেছে তা কুশল বুঝতে পেরেছে।

জ্বর যেনো আবার ফিরে না আসে তাই কুশল ওয়ারড্রবের উপর রাখা ফাস্টএইড বক্স থেকে জ্বরের আর ব্য*থা কমার ট্যবলেট নিয়ে তরুর পাশে এসে বসে। অতঃপর কুশল তরুকে ধরে আবারও নিজের বুকের সাথে ওর ঠেকিয়ে বসিয়ে ঔষধ দুটি ওকে খাইয়ে দিয়ে আগের ন্যয় শুইয়ে দেয়। তরুকে শুইয়ে দিয়ে কুশল বিছানা থেকে নামতে নিলে তরু ঘুমের মাঝেই কুশলের হাত চেপে ধরে বিরবিরিয়ে বললো…

—“যাবেন না প্লিজ….থাকুন না আমার পাশে…!”

কুশল আর উপায় না পেয়ে ওভাবেই তরুর হাতের মাঝে নিজের হাত রাখাবস্থাতেই বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে তরুর ঘুমে মগ্ন মায়া ভরা মুখশ্রীর উপর নিজের দৃষ্টি স্থির করে রাখে।

(২৫)
রায়হানুলের রুমের দরজার সামনে তরুনিমার দেখা সেই দুই ছায়ামানব এসে দাঁড়াতেই দেখে রায়হানুলের রুমের দরজায় তালা দেওয়া। ছায়া মানবের মাঝে ১ম ছায়া মানব নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে দরজায় লাগানো তালার উপর স্বজোরে একটা ঘু*ষি দিয়ে বসে। যার ফলে সেখানে শব্দের সৃষ্টি হয়। ১ম ছায়া মানবের এমন কাজে ২য় ছায়া মানব যেনো হত*ভম্ব হয়ে যায়। তৎক্ষনাৎ ২য় ছায়া মানব ১য় ছায়া মানবের অন্য হাত ধরে টানতে টানতে অন্ধকারের মাঝে মিলিয়ে যায়। রায়হানুলের দরজায় লাগানো তালার উপর যে ১ম ছায়া মানবের হাতের র*ক্ত লেগে গিয়েছে তা ওরা দু’জন লক্ষ্য করে নি। কয়েক ফোঁটা রক্ত দরজার সামনে মেঝেতে পড়ে রয়েছে তাও ওরা লক্ষ্য করে নি।

চলবে ইনশাআল্লাহ…………..

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১৩)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(২৬)
ভোর ৫টার পর পরই নিলাদ্রের ঘুম ভে*ঙে গেলে সে জগিং করার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হয়। ড্রয়িংরুমের পাশেই রায়হানুলের রুম সেখান থেকে সোজা ভিতরের দিকে আরো ৪টা রুম পর গেস্টদের থাকার জন্য রুম আছে। নিলাদ্র সেখানেই ঘুমিয়েছিলো রাতে৷ নিলাদ্র রায়হানুলের রুম পেরিয়ে সামনের দিকে কিছুটা পথ অগ্রসর হতেই থেমে যায়। সাথে সাথেই পিছনের দিকে পিছিয়ে রায়হানুলের রুমের দরজার সামনে দাঁড়াতেই দরজার তালায় জমাট বেঁধে থাকা র*ক্ত গুলো নিলাদ্র স্পষ্ট দেখতে পায়। নিলাদ্র নিজের ভ্রু যুগল কুঁচকে নিয়ে বললো….

—“বড় বাবার রুমের তালার উপর র*ক্ত কোথায় থেকে আসলো?”

সেইসময় মেঝেতে জমাট বাঁধা ফোঁটা ফোঁটা রক্ত গুলোও নিলাদ্রের চোখে পরে। নিলাদ্র নিজের চেহারায় চিন্তার ছাপ ফুটিয়ে তুলে বললো….

—“তবে কি কুশলের ধারণাই ঠিক! আমাদের আশেপাশেই এমন কেও আছে যে চায় না বড় বাবা সুস্থ হয়ে উঠুক! আমার ধারণানুযায়ী হয়তো মাঝরাতে কেও বড় বাবার রুমে এসে তার শরীরে এমন ধরণের কোনো ক*ড়া ডোজের ঔষধ ইন*জেক্ট করে দেয় যা বড় বাবার সুস্থ হওয়ার পথে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। হয়তো গতকালও একই উদ্দেশ্য নিয়েই বড় বাবার রুমের সামনে এসেছিলেন সেই অজানা শ*ত্রু। কিন্তু রুমের দরজায় তালা লাগানো থাকায় নিজের কাজে সফল হতে পারেন নি। তাই রাগের বশেই তালার উপর নিজের শরীরের কোনো অংশ দিয়ে আ*ঘা*ত করে ফেলেছিলেন। আর নিজের ক্ষ*ত স্থানের র*ক্ত যে দরজার তালায় এবং মেঝেতে রয়ে গিয়েছে তা সে খেয়াল করে নি। অজানা শ*ত্রুটি তো বড্ড বো*কামী করে ফেলেছে। এবার এই বো*কা*মীকেই তার জীবনের কা*ল বানাতে হবে।”

এই বলে নিলাদ্র তালায় লেগে থাকা র*ক্ত থেকে কিছু র*ক্ত নিজের সাথে সংরক্ষণ করে রাখে। আর জায়গায় জায়গায় লেগে থাকা বাকি র*ক্ত গুলো ভিজা কাপড় দিয়ে খুব ভালো ভাবে পরিষ্কার করে ফেলে।

(২৭)
সকালবেলা……
তরুনিমার আগে ঘুম ভে*ঙে যাওয়ায় সে চোখ মেলতেই দেখে সে কুশলের ডান হাত জড়িয়ে শুয়ে আছে। আর কুশল একদম কর্ণারে বিছানার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসাবস্থাতেই ঘুমিয়ে আছে। তরুর আবছা আবছা মনে পড়ে গতরাতে জ্বর আসায় কুশলের তার মাথায় জলপট্টি দিয়ে দেওয়ার, ঔষধ খাইয়ে দেওয়ার ঘটনাগুলো। তরু কুশলের হাত ছেড়ে দিয়ে সাবধানে শোয়াবস্থা থেকে উঠতে নেয় কিন্তু জ্বর সেরে যাওয়ার পর শরীর দূর্বল থাকায় সে কুশলের দিকে হেলে পরে যায়। নিজের শরীরের নিচে মাথার চুল টানা পড়ায় মুখ দিয়ে মৃদুস্বরে ‘আহহহ’ বলে উঠে। সাথে সাথেই কুশলের ঘুম ভে*ঙে যায় কুশল ভালো ভাবে বসে অস্থির কন্ঠে তরুকে উদ্দেশ্য করে বললো…..

—“কি হয়েছে তরুনিমা! তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে?”

তরুনিমা ধীরস্বরে বললো…..
—“আমাকে ধরে বসিয়ে দিন তো।”

কুশল তরুকে ধরে বিছানার সাথে বালিশ রেখে বালিশের সাথে তরুর পিঠ ঠেকিয়ে ওকে বসিয়ে দেয়। তরু কুশলের চোখের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে ওর দু-চোখ হালকা লালচে বর্ণ হয়ে আছে। তরু শান্ত স্বরে কুশলকে প্রশ্ন করলো….

—“আপনি কি সারারাত ঘুমান নি?”

কুশল তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে বললো…
—“ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়েছিলাম এখন জেগে গেলাম।”

তরুনিমা এবার পুরোপুরি শিওর হয়ে যায় যে কুশল সারারাত জেগে ওরই সেবাযত্ন করেছে৷ কুশল ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে তরুকে বললো….

—“ফ্রেশ হতে হবে না!”

কুশলের এমন প্রশ্নে তরু নিজের করুণ অবস্থা দেখে অসহায়ের মতো মুখশ্রী করে রাখে যা কুশলের দৃষ্টি এড়াতে পারে না। পরক্ষণেই কুশল তরুর প্রতিত্তুরের অপেক্ষা না করে তরুর হাতের ডান পার্শে বিছানার কাছে এসে দাঁড়িয়ে ওকে সাবধানে পাজাকোলে তুলে নেয়। কুশলের হঠাৎ এমন কাজে তরু কিছুটা অবাক হলেও মুখে কিছু বলে না। কারণ তরু নিজেও বুঝতে পেরেছে তার বর্তমান যে অবস্থা তাতে কারোর সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করা তার পক্ষে সম্ভব না। কুশল তরুকে ওয়াশরুমের ভিতরে নিয়ে গিয়ে নামিয়ে দিয়ে বললো….

—“তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি। সমস্যা মনে হলে কোনো দ্বিধা না করে আমাকে ডাকবে আমি আসবো। মনে রেখো আমি তোমার স্বামী হই আর তুমি আমার স্ত্রী তাই তোমার সবরকম সমস্যায় আমি তোমার পাশে থাকার অধিকার রাখি।”

এই বলে কুশল ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে ওয়াশরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। ওয়াশরুমের ভিতরে বেসিনের সামনে দাঁড়াতেই আবারও তরুর মাথা ঘুরে উঠলে তরু দেওয়াল ধরে সেখানেই বসে পরে ‘কুশল’ বলে ডেকে উঠে। কুশল তরুর ডাক শোনামাত্র ওয়াশরুমের ভিতর প্রবেশ করে দেখে তরু মাথার দু’পাশে দুই হাত রেখে ওয়াশরুমের মেঝেতে বসে আছে। কুশল তরুর কাছে গিয়ে ওকে ধরে দাঁড় করায়। তরু কুশলের বুকের সাথে নিজের পিঠ ঠেকিয়ে বেসিনের সামনে দাঁড়াতেই কুশল বললো…..

—“আমি তোমায় ফ্রেশ করিয়ে দিচ্ছি, তুমি একা পারবে না। তোমার শরীর ভিষণ দূর্বল।”

তরু কোনো প্রতিত্তুর করলো না। কুশল খুব যত্ন সহকারে তরুকে ফ্রেশ করিয়ে দিতে শুরু করে। তরু বেসিনের আয়নার উপর নিজের দৃষ্টি স্থির করে কুশলের কর্মকান্ড দেখছে। কিছুসময় এর মধ্যেই কুশল তরুকে ফ্রেশ করিয়ে দিয়ে আবারও পাজাকোলে তুলে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে ওকে বিছানায় আগের ন্যয় বসিয়ে দেয়। অতঃপর কুশল ওয়ারড্রব থেকে টাওয়াল বের করে এনে তরুর ভেজা হাত-মুখ মুছে দিয়ে শান্ত স্বরে বললো…..

—“তুমি এখানে বসে কিছুসময় অপেক্ষা করো আমি নিচ থেকে তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি। নাস্তা করে ঔষধ খেতে হবে তোমায় আর ক্ষ*ত স্থান টাও ড্রে*সিং করে দিতে হবে।”

এই বলে কুশল রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরু শান্ত দৃষ্টি নিয়ে কুশলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।

রুম থেকে বেড়িয়ে কুশল সিঁড়ি বেয়ে নিচে এসে ডায়নিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখা সব খাবারের বাটির উপর থেকে ঢাকনা সরিয়ে সরিয়ে দেখে বললো….

—“এই অসুস্থা অবস্থায় এসব খাবার খাওয়া ওর ঠিক হবে না। একটু স্যুপ হলে ভালো হতো। কোনো সার্ভেন্টকে বলি স্যুপ তৈরি করে দিতে।”

এই বলে কুশল রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। রান্নাঘরে এসে দেখে সেখানে কেও নেই৷ কুশল আর কোনো উপায় না পেয়ে ওর পকেট থেকে ফোন বের করে ইউটিউব এ ঢুকে সবজি স্যুপ তৈরি করে কিভাবে সার্চ করে সেই ভিডিও বের করে। এরপর ভিডিও দেখে ফ্রিজ থেকে কিছু টাটকা সবজি বের করে সবগুলো ছোট ছোট টুকরো করে নেয়। ভিডিওতে যেভাবে দেখিয়েছে সেভাবেই কুশল স্যুপটা তৈরি করে ফেলে। অতঃপর স্যুপটা একটা বাটিতে ঢেলে নেয়, আর একগ্লাস কুসুম গরম পানি গ্লাসে নেয়। অতঃপর একটা ট্রেতে করে স্যুপের বাটি আর পানির গ্লাস নিয়ে নিজের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। কিছুসময় পর কুশল খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে ওদের রুমে প্রবেশ করে তরুর পাশে গিয়ে বসে নিজ হাতে তরুকে খাইয়ে দেয়। পায়ের ক্ষ*তে*র ব্য*থা কমার আর জ্বর আর না আসার জন্য ঔষধ খাইয়ে দেয়। এরপর কুশল তরুর পায়ের ক্ষ*ত*তে ড্রে*সিং করিয়ে দিয়ে ওকে ধরে শুইয়ে দেয়। কুশল বিছানা থেকে নেমে শান্ত স্বরে বললো…

—“বিশ্রাম করো এখন। আমার একটু কাজ আছে আমি আবার পরে আসবো।”

—“ঠিক আছে।”

কুশল রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরু ওর ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে চোখ বুঝে নেয়।

(২৮)
ডায়নিং টেবিলে চৌধুরী পরিবারের সকলে বসে নাস্তা করছে। নিলাদ্র একটু পর পর ডায়নিং টেবিলে বসারত সবাইকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে দেখছে। সেইসময় নিলাদ্র দেখলো রিজভী বাম হাতে চামচ ধরে খাবার খাচ্ছে। রিজভীর এমন আচারণে নিলাদ্র ভ্রু কুঁচকে রিজভীর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো….

—“চাচ্চু তুমি হঠাৎ বাম হাতে চামচ ধরে খাবার খাচ্ছো কেনো? তোমার ডান হাতে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?”

নিলাদ্রের এমন প্রশ্নে রিজভী কোনো প্রতিত্তুর করার পূর্বের ওনার পাশ থেকে কামিনী বললেন….

—“আরে নিল বাবা আর বলো না, তোমাদের চাচ্চু এতোটাই হু’স-জ্ঞান*হী’ন হয়ে গিয়েছেন যে কি বলবো! গতকাল রাতে লাইট না জ্বা’লি’য়েই ওয়াশরুমে গিয়েছিলো। তাই অন্ধকারে পা পি’ছ’লে পরে যাওয়ার সময় পানির লাইনের সাথে ডান হাতের আঙুলের অংশ খুব জো*ড়ে বা*রি খেয়েছিলো। ফলে সেখান থেকে র*ক্ত ঝরে ওয়াশরুমের মেঝেতে ছড়াছড়ি হয়ে গিয়েছিলো। আমি তো ওর এমন অবস্থা দেখে বাড়ির সবাইকে ডাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু রিসিপশন পার্টির পর সকলেই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো মাঝরাতে ঘুম ন*ষ্ট করা ঠিক হবে না জন্য কাওকে ডাকতেও দেয় নি। তাই পরে আমিই কোনো রকম ভাবে ওর হাতের ক্ষ*ত স্থান পরিষ্কার করে ব্য*ন্ডে*জ করে দিয়েছিলাম।”

নিলাদ্র মনে মনে বললো…..
—“চাচ্চু-চাচীর চেহেরা দেখে তো মনে হচ্ছে না চাচী মি*থ্যা বলছে। তবুও শিওর হয়ে নেওয়া ভালো। চাচ্চুর ক্ষ*ত পরিষ্কার করার বাহানায় তার ক্ষ*ত থেকে সামান্য র*ক্ত সংগ্রহ করতে হবে আমায়। তারপর চাচ্চুর র*ক্তে*র সাথে বড় বাবার দরজার তালার উপর থেকে সংগ্রহ করা র*ক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে। আশা রাখছি চাচ্চু সেই অজানা শ*ত্রু হবে না। তাহলে যে এই চৌধুরী পরিবার ভে*ঙে গু*ড়*গু*ড়ে হয়ে যাবে।”

সাগরিকা চৌধুরী নিলাদ্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন….
—“নিল দাদুভাই নাস্তা করা শেষ হলে তুমি রিজভীর ক্ষ*ত স্থানটি ভালো ভাবে পরিষ্কার করে দিও। নয়তো ই*ন*ফে*ক*শন হয়ে যাবে।”

—“ঠিক আছে দাদীমা।”

চলবে ইনশাআল্লাহ………….

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১৪)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(২৯)
নাস্তার পর্ব শেষ করে সকলেই নিজ নিজ কাজে চলে যায়। ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে আছে নিলাদ্র, রিজভী আর কামিনী। সেইসময় সন্ধ্যা ওদের পাশ কাটিয়ে নিজের রুমে যেতে নিলে নিলাদ্র শান্ত স্বরে বললো…

—“সন্ধ্যা তোর রুম থেকে ফাস্টএইড বক্সটা নিয়ে আয় তো। চাচ্চুর হাতের ক্ষ*ত স্থান পরিষ্কার করে দিতে হবে।”

নিলাদ্রের কথানুযায়ী সন্ধ্যা নিজের রুমে গিয়ে ফাস্ট এইড বক্সটি নিয়ে আবারও ড্রয়িংরুমে এসে নিলাদ্রের দিকে বাড়িয়ে দেয়। রিজভী আর কামিনীর চোখের আড়ালে নিলাদ্র সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে একবার চোখ টিপ দিয়ে ওর হাত থেকে বক্সটা নিয়ে নেয়। সন্ধ্যা নিলাদ্রের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিরবিরিয়ে বললো…..

—“অ*স*ভ্য কোথাকার।”

এই বলে সন্ধ্যা স্থান ত্যগ করে। নিলাদ্র রিজভীর ক্ষ*ত স্থান পরিষ্কার করে দেওয়ার বাহানায় ওর ক্ষ*ত থেকে সামান্য পরিমাণ র*ক্ত সংগ্রহ করে নেয়। এরপর রিজভীর ক্ষ*ত স্থানে ব্য*ন্ডে*জ করে দিয়ে ব্য*থা কমার জন্য কি ঔষধ খেতে হবে সেটাও সাজেস্ট করে দেয়। রিজভী আর কামিনী সোফা ছেড়ে উঠে নিজেদের রুমে চলে যায়। নিলাদ্র রিজভীর ক্ষ*ত থেকে সংগৃহীত র*ক্ত নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে আগের সংগৃহীত রক্তের সাথে পরীক্ষা করতে শুরু করে।

পরীক্ষা পর্ব শেষ হলে নিলাদ্র দেখে রিজভীর র*ক্তের গ্রুপের সাথে তালা থেকে সংগৃহীত র*ক্তের গ্রুপ মিলছে না। দুইটা র*ক্ত দু’জন আলাদা ব্যক্তির হওয়ায় নিলাদ্রের চেহারায় চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে। নিলাদ্র মনে মনে বললো….

—“যদি সেই অজানা শ*ত্রু রিজভী চাচ্চু না হয় তাহলে কে সে? মাঝরাতে এতো এতো সিকিউরিটি গার্ডদের চোখ ফাঁ*কি দিয়ে চৌধুরী মেনশনের ভিতরে বাহিরের কেও ঢোকার সাহস করবে না। তাহলে সরষের মাঝে ভূ*ত*টা আসলে কে?”

(৩০)
বিকেল বেলা ছাদে রেলিং ধরে খোলা আকাশের দিকে দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে কুশলের পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট সাদিক। সেই সময় সন্ধ্যা এক মগ কফি হাতে নিয়ে ছাদে প্রবেশ করতেই সাদিককে সেখানে দেখে কিছুটা অবাক হয়। সাদিকের থেকে কিছুটা দূরে সন্ধ্যা দোলনার উপর এক হাঁটু ভাজ করে বসে কফির মগে একবার চুমুক দিয়ে শান্ত স্বরে সাদিককে প্রশ্ন করলো….

—“কি ব্যপার সাদিক ভাই আজ হঠাৎ ছাদে এসে উদাসীন মুখশ্রী নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন যে?”

সাদিক নিজের ধ্যনে মগ্ন থাকায় সন্ধ্যার উপস্থিতি এতো সময় বুঝতে পারে নি। তাই হঠাৎ সন্ধ্যার কন্ঠ কর্ণপাত হতেই সাদিক কিছুটা চমকে উঠে। সাথে সাথেই সাদিক নিজেকে সামলে নিয়ে সন্ধ্যার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ওর উপর শান্ত দৃষ্টি স্থির করে বললো….

—“জানেন ম্যডাম….আমি নামক এই মানুষটা কারোর জীবনে কখনও এতোটাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারি নি যে আমারে হা*রি*য়ে ফেলার জন্য কারোর মনে ভ*য় কাজ করবে কিংবা আমারে হারিয়ে ফেললে কেও আফসোস করবে। আমারে ছাড়া এই দুনিয়ার সকল মানুষ খুব সুন্দর ভাবে নিজেদের জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে।”

সাদিকের মুখে এমন কথা শুনে সন্ধ্যা অবাক স্বরে বললো…
—“এমন মনে হওয়ার কারণ কি জানতে পারি সাদিক ভাই?”

—“কয়েকবছর ধরে আমি একজন মেয়েকে অনেক ভালোবাইসা ফেলেছি। কিন্তু তারে নিজের ভালোবাসার কথা জানানোর সাহস কখনও করে উঠতে পারি নি। কিছুদিন আগে জানতে পারলাম আমার ভালোবাসার মানুষটিরও অন্য একজন ভালোবাসার মানুষ আছে। বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলার পর তারে নিয়ে জীবনে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলাম কিন্তু স্বপ্নগুলো সত্যি হওয়ার আগেই সব ভে*ঙে চু*ড়ে একাকার হয়ে গেলো। তাই আজ নিজেকে ভিষণ একা মনে হচ্ছে। যেদিকেই তাকাচ্ছি নিজের ছায়া ব্যতিত কাওকে দেখতে পারছি না।”

—“ভালোবাসার মানুষটির কাছে সময় থাকতেই নিজের মনের অনুভূতিগুলোর বহিঃপ্রকাশ করতে হয় নয়তো একটা সময় তাকে হারিয়ে ফেলতে হয়। ভালোবাসা কোনো অ*ন্যা*য় বা পা*প না তাই নিজের অনুভূতিগুলো তাকে জানিয়ে দেওয়ার পর তার রিয়েকশন কেমন হবে তা অগ্রীম ভেবে ভ*য় পাওয়াটা বো*কা*মী ছাড়া কিছুই না।”

সাদিক তৎক্ষণাৎ উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে আকাশের উপর দৃষ্টি স্থির করে দীর্ঘশ্বাস ভরা কন্ঠো বললো….

—“আমি যে বড্ড দেড়ি করে ফেললাম ম্যডাম। এখন আর সম্ভব না তার নিকট নিজের ভালোবাসার অনুভূতি
গুলোর বহিঃপ্রকাশ করা। আর আমার জীবনের সবথেকে ক*ষ্ট*কর ও য*ন্ত্র*ণা দায়ক মুহূর্ত এটাই হবে যখন আমি আমার ভালোবাসার মানুষটিকে তার ভালোবাসার মানুষের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবব্ধ হতে দেখবো। আমি আমার ভু*লে*র কারণে যেই য*ন্ত্র*ণার সম্মুখীন হতে যাচ্ছি আপনি সেই ভু*ল কখনও করিয়েন না ম্যডাম। যদি কাওকে ভালোবাইসা থাকেন তাহলে সময় থাকতেই তার নিকট আপনার মনের অনুভূতি গুলোর বহিঃপ্রকাশ করে দিয়েন৷ কারণ ভালোবাসার মানুষটিকে মনের অনুভূতি গুলো জানিয়ে দেওয়ার পর তার মনে ঘৃ*ণার জায়গা নিয়ে থাকা এতোটা ক*ষ্ট*কর হয় না যতোটা ক*ষ্ট*কর হয় তার নিকট মনের অনুভূতি গুলোর বহিঃপ্রকাশ না করে আফসোসের সাথে প্রতিটা নিঃশ্বাস ফেলা।”

এই বলে সাদিক আর একমুহূর্ত ছাদে দাঁড়ায় না। সন্ধ্যাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে ছাদ ত্যগ করে নিচে চলে যায়। সন্ধ্যা নিজের দৃষ্টি ছাদের মেঝেতে স্থির করে রেখে সাদিকের বলে যাওয়া শেষ কথা গুলো ভাবে।

(৩১)
ড্রয়িংরুমে চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে বসে আছে নিলাদ্র। সেইসময় ২জন গার্ড সায়মনকে ধরে মূল দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। নিলাদ্র সায়মনের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে সায়মনের মাথায়, হাতে, পায়ে ব্য*ন্ডে*জ করা। নিলাদ্র সোফা ছেড়ে উঠে সায়মনের দিকে অগ্রসর হতে হতে বললো….

—“মেজো চাচ্চু আপনার এমন অবস্থা হলো কি করে?”

গার্ডরা সায়মনকে সাবধানে সোফায় বসিয়ে দিতেই সায়মন ইশারায় তাদের চলে যেতে বলে। নিলাদ্র সায়মনের দিকে তাকিয়ে আছে নিজের প্রশ্নের উত্তর শোনার জন্য। কিছুসময় নিরব থাকার পর সায়মন শান্ত স্বরে নিলাদ্রকে বললেন….

—“ব্যবসার কাজে আজ একটু নির্জন সাইডে একটা জমি দেখতে গিয়েছিলাম সেখানেই আমাদের বংশের চির শ*ত্রু মতিউর খানের ছোট ছেলে মুবিন খান তার গার্ডদের নিয়ে আমার উপর এ্যা*টা*ক করার চেষ্টা করেছিলো। সেইসময়ই আমি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আ*ঘা*ত পেয়েছিলাম। এরপর আমার বন্ধুর চেম্বারে গিয়ে ক্ষ*ত স্থান গুলোতে ড্রে*সিং করে নিয়ে বাসায় ফিরলাম। আর হ্যা, এই বিষয়ে কাওকে কিছু বলো না। কুশলকেও বলো না। জানোই তো কুশলের কেমন উ*গ্র মেজাজ। রাগের বশে খারাপ কিছু করে ফেলতে পারে।”

—“কিন্তু মেজো চাচ্চু এভাবে খানরা আপনার উপর এ্যা*টা*ক করলো এটা তো কোনো সামান্য বিষয় না। ওদের করা অ*ন্যা*য়ে*র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করলে ওরা আরো সুযোগ পেয়ে বসবে। আজ আপনার উপর এ্যা*টা*ক করার সাহস দেখিয়েছে কালকে বাড়ির অন্য সদস্যের উপর ও এ্যা*টা*ক করতে পারে।”

সায়মন সোফা ছেড়ে উঠে বললো….
—“তোমাকে নিষেধ করেছি কাওকে এই বিষয়ে জানাবে না তাই এতো বেশি চিন্তা-ভাবনা না করে আমার নিষেধ মান্য করিও।”

এই বলে সায়মন খু*ড়ি*য়ে খু*ড়ি*য়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটতে শুরু করে৷ কিছুসময় পর সায়মন নিজের রুমে না গিয়ে পাশের ফাঁকা রুমে এসে রুমের দরজা ভিতর থেকে আটকে দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে হাঁটতে বিছানায় গিয়ে বসে পায়ের, মাথার ও হাতের ব্য*ন্ডে*জ গুলো খুলে ফেলে। অদ্ভুত বিষয় হলো সায়মন এর পায়ে, হাতে বা মাথায় কোনো ক্ষ*তে*র চিহ্ন ছিলো না। সায়মন স্বশব্দে হেসে উঠে বিছানায় নিজের শরীর এলিয়ে দেয়।

(৩২)
কুশল মূল দরজা দিয়ে চৌধুরী মেনশনের ভিতরে প্রবেশ করতেই নিলাদ্রকে সোফার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর কাছে গিয়ে দাড়িয়ে বললো….

—“কি রে এখানে একা একা দাঁড়িয়ে কি করছিস তুই?”

কুশলের প্রশ্নে নিলাদ্রের ধ্য*ন ভা*ঙে। নিলাদ্র কুশলের কাছে সম্পূর্ণ বিষয়টা লুকিয়ে বললো….

—“এমনিই দাঁড়িয়ে ছিলাম, কিছু করছি না।”

কুশল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে নিলাদ্রের দিকে তাকায়। নিলাদ্র কুশলকে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে নিজেই প্রশ্ন করলো….
—“ভাবী শারীরিক অবস্থা এখন কেমন, দোস্ত?”

—“শরীর দূর্বল আছে। ক্ষ*ত*টা যথেষ্ট গভীর হওয়ায় সারতে সময় লাগবে।”

—“তুই বাহির থেকে আসলি তাহলে ভাবীর কাছে কে আছে?”

—“২জন মহিলা সার্ভেন্টকে সর্বক্ষণ ওর খেয়াল রাখার দায়িত্ব দিয়েই বাহিরে গিয়েছিলাম। আমি না থাকাকালীন বড় বাবার রুমে তালা দিয়ে রাখার বিষয় নিয়ে তোর সামনে কেও কিছু বলেছিলেন কি?”

—“না কেও কিছু বলে নি। বড় বাবার ব্লা*ড স্যম্পল নিয়ে আজ রাতে আমি একটু আমার ক্লিনিকে যাবো। তারপর ব্লা*ড এর ২টা পরীক্ষা করতে হবে। রিপোর্ট দেখার পর বড় বাবার ট্রিটমেন্ট শুরু করতে পারবো।”

—“ঠিক আছে।”

এই বলে কুশল সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। নিলাদ্রও ওর রুমে চলে যায়।

(৩৩)
কুশল রুমে প্রবেশ করতেই দেখে তরুনিমা বিছানায় শুয়ে চিপস খাচ্ছে আর সামনের দেওয়ালে টাঙানো টিভিতে কার্টুন দেখছে। কুশল বিছানার পাশের সোফায় গিয়ে বসে শান্ত স্বরে বললো…

—“কিছুদিন পর আমাদের বাচ্চারা কার্টুন দেখার জন্য তোমার কাছে বায়না করবে আর তুমি কি না নিজেই এখনও কার্টুন দেখো?”

তরুনিমা টিভির উপর দৃষ্টি স্থির রেখেই আনমনে বললো….
—“বাচ্চারা যখন কার্টুন দেখার জন্য বায়না করবে তখন বাচ্চাদের সাথে বসে বাচ্চার মাও যেনো কার্টুন দেখে সময়টাকে ইন্ঞ্জয় করতে পারে তার জন্য তো অভ্যাস রাখতে হবে।”

তরুর কথায় কুশল ওর ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলে। পরক্ষণেই তরু বুঝতে পারে সে আনমনেই কুশলকে কি বলে ফেলেছে। তাই সাথে সাথেই তরু রিমোট দিয়ে টিভি বন্ধ করে লজ্জায় কম্বলের নিচে নিজের মুখ লুকিয়ে ফেলে। কুশল তরুর লজ্জা পাওয়ার বিষয়টা বুঝতে পেরে হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে চলে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ………….