হৃদকোঠোরে রেখেছি তোমায় পর্ব-১৫+১৬+১৭

0
215

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১৫)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৩৪)
রাতের বেলা ,
কুশল বিছানার পাশে সোফায় বসে কিছু দরকারী কাগজ পত্র চেইক করছে। তরুনিমা বিছানায় বসে বসে ফোনে ভিডিও দেখতে দেখতে ধীর কন্ঠে বললো….

—“ইসস আজকের আকাশের চাঁদটা কত্তো সুন্দর। সকলেই নিজ নিজ ফোন দিয়ে পিক উঠিয়ে, ভিডিও করে অনলাইন সাইডে আপলোড করছে। আর আমি ২৪ ঘন্টা রুমে বিছানায় শুয়ে-বসে থেকে থেকে বোর ফিল করছি।”

এই বলে তরুনিমা ওর চেহারায় বিষন্নতার ছাপ ফুটিয়ে হাতে থাকা ফোনটি বেডসাইড টেবিলের উপর রেখে বসাবস্থাতেই চোখ বন্ধ করে নেয়৷ তরুনিমার ধীর কন্ঠে বলা কথাটুকু কুশলের কান এড়িয়ে যেতে পারে নি। কুশল তরুর দিকে তাকাতেই ওর মুখশ্রীতে ফুটে থাকা বিষন্নতাপ ছাপ দেখতে পায়। পরক্ষণেই কুশল ওর কাজের কাগজপত্র গুলো গুছিয়ে রেখে সোফা ছেড়ে উঠে বিছানার কাছে এসে দাড়িয়ে তরুকে কিছু না বলেই ওকে নিজের পাজাকোলে তুলে নেয়। কুশলের আকস্মিক এমন কাজে তরু কুশলের দিকে অবাক দৃষ্টি স্থির করে বললো….

—“আরে আরে আপনি আমাকে এখন আবার কোলে নিলেন কেনো? আমার তো ওয়াশরুম যাওয়ার প্রয়োজন নেই এখন।”

কুশল তরুর প্রশ্নের কোনো প্রতিত্তুর না করে ওর দৃষ্টি সামনের দিকে স্থির রেখে হাঁটতে শুরু করে। কুশল তরুকে নিয়ে রুম থেকে বের হলে তরু আবারও বললো…

—“বাসায় গুরুজনরা সবাই আছেন। হুটহাট আমাকে কোলে নিয়ে বাহিরে আসলেন কেও দেখে ফেললে কতোটা লজ্জাজনক পরিস্থিতির মাঝে পড়তে হবে আপনি কি তা বুঝতে পারছেন না?

কুশল সামনের দিকে অগ্রসর হতে হতে শান্ত কন্ঠে বললো….
—“অন্যের বউকে কোলে নিয়ে ঘুরছি নাকি যে কেও দেখলে মান-সম্মান নষ্ট হওয়ার ভ*য় কাজ করবে! আমার বউকে আমি যখন তখন কোলে নিতেই পারি, কে দেখলো বা কে কি ভাবলো তার ধার এই কুশল চৌধুরী ধারে না। তাই এখন উল্টো-পাল্টা প্রশ্ন করে কানের পো*কা না খেয়ে চুপচাপ থাকো৷ নয়তো এই দোতলা থেকে সোজা নিচে ফে*লে দিবো তোমায়।”

তরু কুশলের কথায় চোখ-মুখ কুঁচকে নিয়ে বিরবিরিয়ে বললো….
—“এতোদিন ধরে একে শুধু খা*রু*শ মনে করে ভু*ল করেছিলাম। এ তো আস্ত খা*রু*শ অগুনিত প্রো ম্যক্স।”

কুশল তরুকে নিয়ে ছাদে উঠার সিঁড়ির সামনে এসে হাতের বাম পার্শে থাকা সুইচবোর্ডের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তরুকে বললো….

—“সিড়ির লাইটের সুইচে চাপ দাও।”

তরু কুশলের কথানুযায়ী সুইচ এ চাপ দিতেই পুরো সিঁড়ি আলোকিত হয়ে উঠে। অতঃপর কুশল তরুকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদের দিকে অগ্রসর হয়। কিছুসময় পর সবগুলো সিঁড়ি অতিক্রম করে কুশল তরুকে নিয়ে ছাদের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে। সম্পূর্ণ ছাদের কর্নার দিয়ে নানান ধরণের ফুলের গাছ লাগানো রয়েছে। রাতের প্রথম প্রহরে খোলা আকাশের নিচে কুশল তরুকে পাঁজাকোলে নিয়ে ছাদের মাঝবরাবর দাঁড়িয়ে আছে। ওদের মাথার উপর দূর আকাশে লক্ষ লক্ষ তারার মাঝে বেশ খানিকটা জায়গা দখল করে গোল প্লেটের মতো অনন্য সৌন্দর্যের অধিকারী চাঁদ রয়েছে। সম্পূর্ণ পরিবেশকে ফুলের মিষ্টি গন্ধ আরো রোমান্ঞ্চিত করে তুলেছে। তরু দূর আকাশের ঐ চাঁদের উপর দৃষ্টি স্থির রেখে ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে বললো….

—“আজ পূর্ণিমা তাই না! কি অপূর্ব সুন্দর লাগছে আজকের চাঁদটি দেখতে।”

কুশল তরুর মুখশ্রীর উপর নিজের দৃষ্টি স্থির রেখে শান্ত স্বরে বললো…
—“তোমার কাছে ঐ দূর আকাশের চাঁদটা দেখতে বেশি সুন্দর লাগছে আর আমার কাছে আমার কোলে থাকা এই চাঁদটির সৌন্দর্যের কাছে দূর আকাশের ঐ চাঁদের সৌন্দর্য ফিঁকে লাগছে।”

কুশলের কন্ঠে এমন কথা শুনে তরু চাঁদের উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে কুশলের চোখের উপর দৃষ্টি স্থির করলো। কুশলের হালকা বাদামী রংয়ের চোখের মণির উপর তরুনিমা নিজের মুখশ্রী দেখতে পারছে।

(৩৫)
রায়হানুলের ব্লা*ড স্যম্পল নিয়ে নিলাদ্র ক্লিনিকে এসে নিজের বিশস্ত একজন পুরুষ নার্সকে তা দিয়ে দুই ধরণের পরীক্ষা করার কথা বুঝিয়ে দেয় এবং খুব তাড়াতাড়ি রিপোর্টটি তার কেবিনে দিয়ে যেতে বলে নিলাদ্র নিজের কেবিনে চলে যায়। বেশ কিছুসময় পর নিলাদ্রের কেবিনের দরজায় নক করার শব্দ হলে নিলাদ্র তাকে ভিতরে আসার অনুমতি দেয়। সেই পুরুষ নার্সটি রায়হানুলের রিপোর্ট হাতে নিয়ে কেবিনের দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে নিলাদ্রের ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে রিপোর্টের ফাইলটি বাড়িয়ে দিয়ে বললেন….

—“স্যার রিপোর্ট দুইটি এই ফাইলের ভিতরে আছে।”

নিলাদ্র পুরুষ নার্সটির থেকে ফাইলটি নিয়ে তাকে চলে যেতে বলে। নার্সটি চলে যেতেই নিলাদ্র ফাইলটি খুলে রিপোর্ট দুইটি চেইক করতেই অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় সে। নিলাদ্র শব্দ করে ফাইলটি বন্ধ করে ডেস্কের উপর ছুঁ*ড়ে মা*রে। ডেক্সের উপর দুই হাত রেখে চেহারায় চিন্তার ছাপ ফুটিয়ে তুলে বললো…..

—“আমার সন্দেহই বাস্তবরূপ নিলো। দীর্ঘ সময় ধরে বড় বাবার শরীরে একটি কড়া ডোজের ক্ষ*তি*কর ঔষধ ইনজেক্ট করা হচ্ছে। আর এই ঔষধের প্রভাব এর ফলেই বড় বাবা আজও কো*মায় রয়েছেন। এই ঔষধটি যদি বড় বাবার শরীরে ইনজেক্ট করা না হতো তাহলে অনেক আগেই হয়তো তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারতেন। নিজের রক্তের কাছেই যদি দিনশেষে বে*ই*মা*নীর স্বীকার হতে তাহলে এই স্বা*র্থ*পর পৃথিবীতে আর কাকে বিশ্বাস, ভরসা করা যাবে? আমাকে যে করেই হোক সরষের মাঝের এই ভূ*ত*টিকে খুব তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করতে হবে। আর চৌধুরী পরিবারের বাকি সদস্যদের তাঁর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এই বিষয়ে এখনি কুশলকে কিছু জানানো যাবে না। নাহলে কুশল অনেক কষ্ট পাবে। কাকে ছেড়ে কাকে স*ন্দে*হ করবে তারও কোনো নিশ্চয়তা থাকবে না। তখন সেই অজানা শ*ত্রু*টি কোনো ভাবে আমাদের স*ন্দে*হ সম্পর্কে সামান্যতমও ইঙ্গিত পেলে সতর্ক হয়ে যাবে।”

নিলাদ্র চেয়ারের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে ডান হাত কপালের উপর ভাঁজ করে ভাবতে শুরু করে পরবর্তীতে সঠিক কোন পদক্ষেপটি নেওয়া যায়।

(৩৬)
সন্ধ্যার রুমে বিছানায় বসে সাবরিনা সন্ধ্যাকে ওর জন্য বানানো কিছু ইউনিক ডিজানের স্বর্ণের গহনা দেখাচ্ছে। সেইসময় সন্ধ্যার ফোনে একটি কল আসে। সন্ধ্যা বিছানার অন্যপাশে বসে থাকায় সাবরিনা হাত বাড়িয়ে বেডসাইড টেবিলের উপর থেকে সন্ধ্যার ফোনটা নিতেই দেখে ফোনস্ক্রিণে নিলাদ্রের ছবি ভাসছে। মূলত নিলাদ্রই সন্ধ্যাকে কল করেছে। সাবরিনা সন্ধ্যাকে ফোনটা দেয়। সন্ধ্যা ফোনটি হাতে নিয়ে রিসিভ করে কানে ধরে বললো…

—“হুম বলুন।”

ওপাশ থেকে নিলাদ্র শান্ত স্বরে সন্ধ্যাকে প্রশ্ন করলো….
—“বড় বাবা যেই ক্লিনিকে এতো বছর ধরে ভর্তি ছিলেন সেই ক্লিনিকের নাম, ঠিকানাটা, আর যেই ডাক্তার বড় বাবার চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন সেই ডাক্তারের নামটা আমাকে মেসেজ করে দাও তো এক্ষুণি।”

—“হঠাৎ এসব জানার কি প্রয়োজন পড়লো আপনার?”

—“যেহেতু দীর্ঘ সময় যাবৎ একজন ডাক্তার বড় বাবার চিকিৎসার দায়িত্ব পালন করে এসেছেন তাই আমাকে সেই ডাক্তারের সাথে কথা বলে সবকিছু জেনে নিতে হবে। তাহলে নতুন করে বড় বাবার চিকিৎসা শুরু করাটা আমার জন্য সহজ হয়ে যাবে।”

—“ঠিক আছে আমি মেসেজ করে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

—“হুম দাও।”

এই বলে নিলাদ্র ফোন কেটে দেয়। সন্ধ্যা নিলাদ্রকে ক্লিনিকের ঠিকনা আর ডাক্তারের নাম মেসেজ করে পাঠিয়ে দেয়। সাবরিনা সন্ধ্যার উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থির করে প্রশ্ন করলেন…..

—“কি মেসেজ করে পাঠাতে বললো নিলাদ্র বাবা তোকে?”

সন্ধ্যা সাবরিনাকে সবটা খুলে বলে। সাবরিনা শান্ত স্বরে বললেন….
—“ওহহ আচ্ছা।”

পরক্ষণেই সন্ধ্যার ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠলে সন্ধ্যা ফোন হাতে নিতেই দেখে নিলাদ্র ওকে মেসেজ করে বলেছে ‘ঠিকানা নেওয়ার বিষয়টা যেনো সে কাওকে না জানায়।’

সন্ধ্যা নিলাদ্রের মেসেজটা দেখে মনে মনে বললো….
—“আমি তো মা-কে ইতিমধ্যে বলে দিলাম। এই কথা এখন এই ডে*ভি*ল*টাকে জানালে যদি আমাকে বকা দেয়! থাক বাবা জানাবো না। আমার তো কোনো দো*ষ নেই। নিজেই যদি এই না জানানোর কথাটা আগেই বলে দিতেন তাহলে তো আর আমি মা-কে বলতাম না। হুহহহ!”

অতঃপর সন্ধ্যা নিলাদ্রের মেসেজের কোনো রিপ্লাই না করে আবারও গহনাগুলো দেখায় মনোনিবেশ করে।

(৩৭)
নিলাদ্র ওর চেয়ার ছেড়ে উঠে কাঁচের দেওয়ালের সামনে গিয়ে প্যন্টের পকেটে দু’হাত রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বললো….

—“আগামীকাল ঐ ডাক্তারকে চে*পে ধরলেই জানতে পারবো সরষের মাঝের এই ভূ*ত*টা আসলে কে!”

চলবে ইনশাআল্লাহ…………….

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১৬)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৩৮)
কুশল তরুকে কোলে নিয়ে ছাদের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে দু’জনেই একে-অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। সেইসময় হঠাৎ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলে তরুর ধ্যন ভেঙে যায়। তরু দ্রুততার স্বরে বললো…

—“আরে বৃষ্টি শুরু হলো তো, আমাকে নিচে নিয়ে চলুন।”

তরুর কথাগুলো যেনো কুশলের কান পর্যন্ত পৌঁছালো না। কুশল আকাশের দিকে তাকিয়ে তরুকে কোলে নিয়েই গোলভাবে ঘুরতে শুরু করে। হঠাৎ খুব জোড়ে বা*জ পড়ার শব্দ হলে তরু ভরে দু’হাতে কুশলের গলা জড়িয়ে ধরে ওর বুকের মাঝে মুখ লুকায়। নিজের বুকের উপর তরুকে জায়গা দ*খ*ল করে নেওয়ার অনুভূতি উপলব্ধি করতে পারার সাথে সাথেই কুশল স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। পরক্ষণেই মুষল ধারে বৃষ্টি শুরু হলে কুশল রাতের কালো চাদরে মোড়ানো আকাশের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বললো…….

—“ও আকাশ, ও বৃষ্টি আজকের এই শ্রেষ্ঠ সুন্দর মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্য আমি তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ রইলাম।”

কুশলের মুখে এমন কথা শুনে তরু কুশলের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে কুশলের দিকে তাকায়। কুশল আকাশের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তরুর মুখশ্রীর উপর কিছুটা ঝুঁকে ওর দিকে স্থির করে। যার ফলে কুশলের মুখশ্রী বেয়ে বৃষ্টির পানি গুলো তরুর মুখশ্রীতে পড়তে শুরু করে।

এভাবেই কিছুসময় পেরিয়ে গেলে বৃষ্টি পড়া থেমে যায়। তরু হঠাৎ হাঁচি ফেলতেই কুশলের ধ্যন ভা*ঙে। ওদের দু’জনেরই বৃষ্টিতে ভিজে একাকার অবস্থা। কুশল আর একমুহূর্তের জন্য সেখানে না দাঁড়িয়ে ছাদের দরজা দিয়ে বেড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে আসে। নিচে এসে দাঁড়াতেই কুশল আর তরু একসাথে হাঁচি ফেলে। তরু রাগী দৃষ্টি নিয়ে কুশলের দিকে তাকিয়ে আছে। কুশল তরুর দিকে তাকানোর সাহস না করে রুমের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। রুমে আসার এই রাস্তাটুকু অতিক্রম করতে করতে কুশল আর তরু দু’জনেই পরপর বেশ কয়েকবার হাঁচি ফেলেছে। অতঃপর কুশল তরুকে নিয়ে রুমে এসে সোজা ওয়াশরুমে প্রবেশ করে চৌ*বা*চ্চার সাইড দিয়ে টাইলসের তৈরি বসার জায়গাটির উপরে তরুকে বসিয়ে দিয়ে বললো….

—“আমি টাওয়াল আর তোমার কাপড় দিয়ে যাচ্ছি চেইঞ্জ করে নাও।”

এই বলে কুশল ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আলমারি খুলে টাওয়াল আর এক সেট জামা-পাজামা-ওড়না বের করে আবারও ওয়াশরুমে গিয়ে সেগুলো তরুকে দিয়ে বললো….

—“চেইঞ্জ করা হলে আমাকে ডাক দিও। আমি ওয়াশরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি।”

তরু কোনো প্রতিত্তুর করলো না। কুশল ওয়াশরুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই নিজের ভেজা অবস্থা দেখে বললো….

—“আমার চেইঞ্জ করে নেওয়া উচিত নয়তো এই ভেজাঅবস্থাতে ওকে কোলে নিলে ও আবারও কিছুটা ভিজে যাবে।”

তরু যেহেতু ওয়াশরুমের ভিতরে আছে তাই কুশল আর উপায় না পেয়ে রুমের দরজা ভিতর থেকে লক করে দিয়ে আলমারী থেকে টাওয়াল, কফি রংয়ের টি-শার্ট আর ট্রাউজার বের করে চেয়ারের উপর রাখে। টাওয়ালটা কমোর থেকে হাটু অব্দি জড়িয়ে নিয়ে পরণের ভিজা টি-শার্ট আর ট্রাউজার খুলে ফেলে। তরুর কুশলের উপর কিছুটা রাগ থাকায় সে চেইঞ্জ করার পর আর কুশলকে না ডেকেই ওয়াশরুমের দেওয়াল ধরে বাম পায়ে সম্পূর্ণ ভর দিয়ে খু*ড়ি*য়ে খু*ড়ি*য়ে হেঁটে ওয়াশরুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই কুশলকে শুধু টাওয়াল পড়া অবস্থায় দেখে সঙ্গে সঙ্গে উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়ে বললো…….

—“অ*স*ভ্য, নি*র্ল*জ্জ লোক কোথাকার। রুমের ভিতরেই চেইঞ্জ করবেন সেটা আগে বলে দিতে পারেন নি? সব মেয়েদের নিজের সিক্স প্যক বডি দেখিয়ে আকর্ষিত করতে পারলেও আমাকে পারবেন না। তাই এইসব নি*র্ল*জ্জ*পণা ঘরের বাহিরে গিয়ে করবেন আমার সামনে করবেন না একদম।”

তরুর এমন কথায় কুশল এর কিছুটা খারাপ লাগে। কুশল কোনো প্রতিত্তুর না করে টি-শার্ট আর ট্রাউজার পড়ে তরুর কাছে গিয়ে দাড়িয়ে ওকে আবারও পাজাকোলে তুলে নিয়ে বিছানায় এনে শুইয়ে দেয়। এরপর তরুর পায়ের ক্ষ*ত স্থানটিতে ড্রেসিং করে কিছু ঔষধ বের করে বেডসাইড টেবিলের উপর রেখে তৎক্ষনাৎ রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরু অবাক দৃষ্টিতে কুশলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বললো…

—“হঠাৎ কি হলো এনার! কিছু না বলেই চলে গেলেন। ঔষধ বের করে রেখে গেলেন কিন্তু খাবার যে খেতে হবে সে সম্পর্কে তো কিছু বললেন না।”

তরুর চিন্তাভাবনার মাঝেই একজন মহিলা সার্ভেন্ট খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে তরুর রুমে প্রবেশ করে বললেন…
—“ম্যম আপনার রাতের খাবার নিয়ে এসেছি।”

তরু শান্ত স্বরে মহিলা সার্ভেন্টটি বললো…
—“রেখে যাও তুমি।”

—“ম্যম স্যার বলেছেন আপনি সম্পূর্ণ খাবারগুলো খাওয়া শেষ করে ঔষধ খাওয়ার পরই যেনো আমি এই রুম থেকে চলে যাই তার আগে নয়।”

তরু ভ্রু কুঁচকে মহিলা সার্ভেন্টটির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন….
—“তোমার স্যার কোথায়?”

—“স্যার কোথায় সেই বিষয়ে আমি কিছু জানি না ম্যম। আমাকে যতোটুকু কাজ করতে বলেছেন আমি ততোটুকুই করছি।”

তরু আর কোনো প্রশ্ন না করে খাবারটুকু খেয়ে ঔষধ খেয়ে নেয়। মহিলা সার্ভেন্টটি চলে যেতে নিলে তরু বললো….

—“তোমার সন্ধ্যা ম্যমকে একটু আমার রুমে আসতে বলো তো।”

—“ঠিক আছে ম্যম।”

এই বলে মহিলা সার্ভেন্টটি রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

কিছুসময় পর সন্ধ্যা তরুদের রুমে প্রবেশ করে বললো…

—“ভাবী তুমি হঠাৎ আমাকে ডেকে পাঠালে কোনো সমস্যা হয়েছে কি?”

—“আমার পাশে এসে বসো।”

সন্ধ্যা তরুর পাশে এসে বসতেই তরু সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলো….

—“আচ্ছা সন্ধ্যা, আমার সাথে বিয়ে হওয়ার আগে কি তোমার মেজো ভাইয়ার অন্য কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিলো?”

সন্ধ্যা সহজ কন্ঠে বললো….
—“আমার জানামতে ভাইয়ার কখনও কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড পর্যন্ত ছিলো না সেখানে কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক করা তো দূরের বিষয়। কিন্তু তুমি হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলে কেনো ভাবী? তুমি কি ভাইয়াকে স*ন্দে*হ করছো?”

—“আরে না না, সেরকম কোনো বিষয় না। এমনিই জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি অন্যভাবে নিও না আমার প্রশ্নটিকে।”

—“আচ্ছা।”

—“আচ্ছা সন্ধ্যা, তুমিও কি কাওকে ভালোবাসো না?”

তরুর প্রশ্নে সন্ধ্যা কিছুটা থমকে যায়। কেনো যেনো মুখ দিয়ে ‘না ভালোবাসি না’ বাক্যটি সে উচ্চারণ করতে পারছে না। মন, বিবেক, মস্তিষ্ক শরীরের পন্ঞ্চইন্দ্রীয়ই যেনো সন্ধ্যাকে বাঁ*ধা প্রদান করছে ‘না’ শব্দটি উচ্চারণ করতে। কিছুসময় পেরিয়ে গেলেও সন্ধ্যার কোনো প্রতিত্তুর না পেলে তরুনিমা সন্ধ্যার ডান হাত নিজের হাতের মুঠোয় মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে বললো…..

—“মনে হচ্ছে তুমি কাওকে ভালোবাসো। যদি সত্যিই তুমি কাওকে ভালোবেসে থাকো তাহলে তার নিকট থেকে নিজের মনের ভিতর জমে থাকা অনুভূতি গুলো আর লুকিয়ে রেখো না। জীবনে খুব কম মানুষ এর ভাগ্য এমন হয়, যেখানে যে যাকে ভালোবাসে সে তারই ভালোবাসা পায়। তাই যদি জীবনে এমন কাওকে পেয়ে থাকো তাহলে তাকে হাতছাড়া হতে দিও না। এই স্বা*র্থ*পর পৃথিবীতে সত্যিকারের ভালোবাসা পাওয়া সবথেকে দূর্লভ ও মূল্যবান জিনিস পাওয়ার সমতুল্য।”

তরুনিমার কথাগুলো সন্ধ্যার মনের ভিতর যেনো পুরোপুরি ভাবে গেঁথে যায়। সন্ধ্যা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো….

—“ভাবী..তুমি কি ভাইয়াকে ভালোবাসো?”

তরুনিমা বললো….
—“জানি না।”

তরুনিমার এমন প্রতিত্তুর শুনে সন্ধ্যা একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো….
—“আমার মেজো ভাইয়া মন-মানসিকতা ও আচার-ব্যবহার এর দিক থেকে অনেক ভালো মানুষ গো। কখনও যদি তোমার মনে হয় ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে তাহলে তাকে ক*ষ্ট দিও না। দেখবে ভাইয়া তোমাকে তার সবটুকু উজার করে দিয়ে রানীর মতো করে রাখবে।”

তরুনিমা কোনো প্রতিত্তুর করলো না। সন্ধ্যা বসাবস্থা থেকে উঠে তরুর রুম থেকে চলে যায়।

(৩৯)
সন্ধ্যা নিজের রুমে এসে দরজা ভিতর থেকে আটকে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে বললো….

—“তবে কি আমি তারই মতো করে তাকে ভালোবেসে ফেললাম!”

(৪০)
অনেকসময় ধরে অপেক্ষা করার পরেও কুশল রুমে না ফিরলে তরু নিজের মতো করে ঘুমিয়ে যায়।

পরেরদিন সকালে……
সকালের মিষ্টি রোদের আলো এসে তরুর মুখশ্রীর উপর পড়লে ওর ঘুম ভে*ঙে যায়। আড়মোড়া ভে*ঙে তরু শোয়াবস্থা থেকে উঠে সোফার দিকে লক্ষ্য করতেই বুঝতে পারে কুশল রাতে আর রুমে আসে নি৷ তরু এবার অনেক অবাক হয়। মনের ভিতর ঘুরতে থাকে নানান ধরনের প্রশ্ন। তরুর চিন্তা ভাবনার মাঝেই কুশল রুমে প্রবেশ করে সোফায় গিয়ে বসতেই, তরু কিছুটা রু*ক্ষ কন্ঠে কুশলকে প্রশ্ন করলো…..

—“সারারাত কোথায় ছিলেন আপনি?”

কুশলকে কোনো প্রতিত্তুর না করেই সোফায় শরীর এলিয়ে দিতে দেখে তরুর অনেক রাগ হয়। তরু বিছানা থেকে নেমে কুশলের সামনে গিয়ে রাগী স্বরে বললো….

—“আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছি! কোথা ছিলেন সারারাত আপনি?”

কুশল তবুও কোনো প্রতিত্তুর না করে ডান হাত কপালের উপর ভাজ করে নিয়ে চোখ বন্ধ করে। এতে যেনো তরুর রাগের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। তরু বেডসাইড টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটি হাতে নিয়ে আবারও কুশলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গ্লাসে থাকা সম্পূর্ণ পানিগুলো কুশলের মুখের উপর ছুঁ*ড়ে মে*রে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে শুরু করে। তরুর আকস্মিক এমন কাজে কুশল দ্রুত শোয়াবস্থা থেকে উঠে বসে একহাতে মুখের উপর থেকে পানি গুলো মুছে নিয়ে তরুকে কিছু না বলেই ওর পাশ কেটে আলামীর কাছে চলে যায়। আলমারী থেকে টাওয়াল আর অন্য টি-শার্ট, ট্রাউজার বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়। তরু কুশলকে এমন ইগনোর করতে দেখে অবাক স্বরে বললো…

—“এই লোকটা হঠাৎ আমাকে ইগনোর কেনো করছে বুঝলাম না!”

চলবে ইনশাআল্লাহ………..

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১৭)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৪১)
নিলাদ্র সন্ধ্যার থেকে নেওয়া গতকাল রাতের ঠিকানার সেই ক্লিনিকের মূল দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে রিসিপশনের কাছে গিয়ে দাড়াতেই রিসিপশনে বসারত মহিলাটি নিলাদ্রের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললেন….

—“জ্বী স্যার বলুন, কিভাবে আপনাকে সহযোগিতা করতে পারি?”

—“ডাক্তার খালেকুজ্জামান স্যার তো এই ক্লিনিকের আন্ডারেই চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন!”

—“জ্বি স্যার।”

—“আমি একটু ওনার সাথে পারসোনালি সাক্ষাৎ করতে চাই।”

—“স্যার, এভাবে তো আমরা আপনাকে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে দিতে পারি না। উনি আমাদের এই ক্লিনিকের সবথেকে সিনিয়র ডাক্তার। তাই ওনার রোগীরা ব্যতিত বাড়তি কেও যদি ওনার সাথে পারসোনালি সাক্ষাৎ করতে চায় সেক্ষেত্রে আমাদের তার নিকট থেকে অনুমতি নিতে হবে।”

—“ঠিক আছে আপনি অনুমতি নিন।”

—“আপনার পরিচয় দিয়ে সাহায্য করুন স্যার।”

—“আপনি ওনাকে বলুন রায়হানুল চৌধুরীর পরিবার থেকে একজন এসেছেন তার সাথে পারসোনালি সাক্ষাৎ করার জন্য।”

মহিলাটি নিলাদ্রের কথানুযায়ী খালেককে কল করে বললে খালেক নিলাদ্রকে তার কেবিনে যাওয়ার অনুমতি দেয়। অতঃপর নিলাদ্র মহিলাটির থেকে খালেকের কেবিনে যাওয়ার রাস্তা দেখে নিয়ে সেই দিকে হাঁটতে শুরু করে। কিছুসময় পর খালেকের কেবিনের দরজার সামনে দাড়িয়ে দরজায় নক করলে ভিতর থেকে একটি বয়স্ক কন্ঠ নিলাদ্রকে ভিতরে আসার অনুমতি দিলে সে খালেকের কেবিনের দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে।
খালেক নিজের ডেস্কে চেয়ারে বসে আছে। নিলাদ্র খালেকের ডেস্কের অপর পার্শে রাখা চেয়ারে বসতেই খালেক শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করলেন…..

—“আপনার সাথে চৌধুরী পরিবারের সম্পর্ক কি? আগে তো কখনও আপনাকে চৌধুরী মেনশনের কোনো সদস্যের সাথে এই ক্লিনিকে আসতে দেখি নি।”

—“আমি রওনাক আজমাইন চৌধুরী কুশলের বেস্ট ফ্রেন্ড নিলাদ্র আহমেদ। বড়বাবা অর্থাৎ রায়হানুল চৌধুরীর বর্তমান চিকিৎসার দায়িত্ব আমাকেই দেওয়া হয়েছে।”

—“তো এখন আমার সাথে পারসোনালি সাক্ষাৎ করতে আসার কারণ কি?”

নিলাদ্র ওর হাতে থাকা ফাইলটি ডেস্কের উপর খালেকের সামনে রেখে বললো….
—“ফাইলটি চেক করলেই বুঝতে পারবেন।”

খালেক ফাইলটি খুলতেই দেখে এটা রায়হানুলের ব্লা*ড পরীক্ষার রিপোর্ট। যেখানে বড় বড় করে লেখা আছে দীর্ঘ সময় ধরে রায়হানুলের শরীরে ক্ষ*তি*কর কড়া ডোজের ঔষধ ইনজেক্ট করে আসা হয়েছে যার ফলে রায়হানুল আজ পর্যন্ত কো*মা থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন নি। নিলাদ্র চেয়ারের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে খালেকের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থির করে রেখে বললো….

—“এই রিপোর্ট যদি আমি এখন পুলিশের কাছে জমা করি তাহলে আপনার এই ক্লিনিক ও আপনি যে পুরোপুরি ভাবে নি*শ্চিহ্ন হয়ে যাবেন তা নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন!”

নিলাদ্রের মুখে এরূপ কথাগুলো শুনে খালেকের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে। নিলাদ্র খালেকের দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বললো….

—“এসি চলাকালীন এভাবে ঘামলে কি চলে ডাক্তাসাহেব! পানিটুকু পান করে কপালের ঘামগুলো মুছে নিন।”

খালেক পানির গ্লাসটি হাতে নিয়ে এক ঢোকে গ্লাসের সবটুকু পানি পান করে হাত দিয়েই কপালের ঘামগুলো মুছে নেয়। নিলাদ্র শান্ত স্বরে বললো…

—“এবার আপনি আমার এই প্রশ্নের উত্তর দিন তো যে, কার কথায় আপনি দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ বড় বাবার ভু*ল ট্রিটমেন্ট করে এসেছেন!”

—“তার নাম বললে তিনি আমাকে সহ আমার পরিবারকে মে*রে ফেলবেন।”

—“আর নাম না বললে আমি খুব তাড়াতাড়ি আপনার নিশ্চিহ্ন হওয়ার সুব্যবস্থা করবো।”

খালেক কিছুসময় নিরব হয়ে থাকার পর বললেন….
—“ঠিক আছে, আমি আপনাকে তার নাম বলবো কিন্তু এখানে না৷ আপনি আমার বাসায় আসুন আজ রাতে আমি তখন আপনাকে সব ডিটেইলসে বলে দিবো।”

নিলাদ্র ভ্রু যুগল কুঁচকে নিয়ে প্রশ্ন করলো….
—“এখানে বলতে কি সমস্যা আপনার?”

—“আমি ক্লিনিকে থাকাকালীন পুরো সময়টাতে আমার উপর তাদের ঠিক করা লোকেরা নজর রাখে। তাই আমি আমার জীবন ও আমার পরিবারের জীবন নিয়ে কোনো প্রকার রি*স্ক নিতে পারবো না।”

নিলাদ্র বিষয়টা নিয়ে কিছু সময় ভাবার পর বললো….
—“ঠিক আছে, আমি আজ রাতেই আপনার বাসায় যাবো। কিন্তু একটা কথা বলে রাখছি, আমার সাথে বিন্দুমাত্র চালাকি করার চেষ্টাও করবেন না। তাহলে ফল ভালো হবে না। এটাকে আপনি আমার দেওয়া লাস্ট ও*য়া*র্নিং হিসেবেও ভাবতে পারেন৷”

এই বলে নিলাদ্র চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে খালেকের থেকে তার বাসার ঠিকানাটা নিয়ে ক্লিনিক থেকে বেড়িয়ে আসে। নিলাদ্র চলে যেতেই খালেক ডেস্কের উপর থেকে নিজের ফোন উঠিয়ে কাওকে কল করে। ওপাশ থেকে কল রিসিভ হতেই খালেক নিজের ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বললেন….

—“কাজ হয়ে গিয়েছে।”

(৪২)
সকালের নাস্তাপর্ব শেষ করে তরুনিমা রুমে এসে মেঝেতে পায়চারি করছে আর একটু পর পর দরজা দিয়ে বাহিরের দিকে উঁকি মা*র*ছে। বেশ কিছুসময় পেরিয়ে যাওয়ার পর তরুনিমা ভাবুক স্বরে বললো…

—“এই খা*রু*শ*টা বাসায় ফেরার পর থেকে আমাকে ইগনোর কেনো করছেন কিছুতেই তার কারণ বুঝে উঠতে পারছি না।”

পরক্ষণেই তরুনিমা ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির উপর দৃষ্টি স্থির রেখে বললো…..

—“আর সবথেকে বড় প্রশ্ন ওনার করা ইগনোরের জন্য আমার মন এমন অশান্ত হয়ে আছে কেনো? উনি আমাকে ইগনোর করুক বা আমার সাথে সম্পর্কই না রাখুক তাতে আমার তো যায় আসার কথা না। তবে কি আমি ধীরে ধীরে উনার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছি! উনার আমার সাথে কথা বলা, আমার রাগ সহ্য করা, আমার প্রতি কেয়ার দেখানো এইসব কিছু কি আমার অভ্যাসের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে!”

তরুর কথা বলার মাঝেই সে আয়নায় কুশলকে রুমে প্রবেশ করতে দেখে। কুশল রুমে প্রবেশ করে আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আলমারির উপর থেকে একটা খালি সুটকেইস পেড়ে বিছানার উপর খুলে রাখে। তরু কুশলের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে কুশলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে। কুশল আলমারি খুলে নিজের প্রয়োজনীয় কিছু কাপড়-চোপড় সুটকেইসে ভরতে শুরু করে। কুশল আবারও আলমারীর কাছে চলে গেলে তরু নিজের ডান হাতের আঙুলগুলোর গিঁটের উপর লাল রংয়ের লিপস্টিক হালকা করে লাগিয়ে নিয়ে দ্রুত পায়ে সুটকেইসের কাছে এসে দাঁড়িয়ে ইচ্ছেকৃত সুটকেইসের ভিতর ডান হাতের আঙুলগুলো রেখে সুটকেইসের ঢাকনাটি সাবধানে হাতের উপর ফে*লে মি*থ্যে ব্য*থা পাওয়ার নাটক করে মুখ দিয়ে ‘আহহহ আমার আঙুলগুলো বুঝি ভে*ঙে গেলো’ বাক্যটি উচ্চারণ করে। তরুর কন্ঠে এমন কথা শুনে কুশল পিছন ঘুরে তাকাতেই তরুর হাতের উপর সুটকেইসের ঢাকনাটি পড়ে থাকতে দেখে দ্রুত পায়ে তরুর কাছে এসে ঢাকনাটি সরিয়ে তরুর হাত বের করে হাতের উপরিভাগে ফু দিতে দিতে রাগী স্বরে বললো…

—“সুটকেইসের কাছে আসতে কে বলেছিলো তোমায় হ্যা! সবসময় কেয়ারলেসহীনের মতো করে চলাফেরা করো তুমি। সুটকেইসের ঢাকনাটি আঙুলগুলোর উপর পরে কেমন লাল হয়ে গিয়েছে। ওয়াশরুমে চলো পানি দিতে হবে হাতে। নয়তো আঙুলের গিঁ*টগুলোতে র*ক্ত জমাট বেঁধে যাবে।”

কুশলের মুখে এমন কথা শুনে তরু যেনো বি*ষম খেলো। তরু মনে মনে ভাবে….
—“এই রেএএ..এখন হাতের উপর পানি দিলে তো লিপস্টিকের সব রং উঠে যাবে আর উনিও বুঝতে পারবেন আমি ব্য*থা পাওয়ার মিথ্যে নাটক করেছি। এখন কি করবো আমি?”

—“কি হলো চলো!”

তরু কুশলের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো…
—“ন-না-না লাগবে না পানি দেওয়া। এ-এমনিই সেরে যাবে। এখন আর ব্য*থা নেই বললেই চলে৷”

কুশল কিছুসময় তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকার পর মুখে কিছু না বলে সরাসরি ওকে পাঁজাকোলে তুলে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে তরু তৎক্ষনাৎ নিজের হাত-পা ছুঁ*ড়*তে ছু*ড়*তে বললো….

—“নাআআআ…আমি হাতে পানি দিবো না। আমাকে নামিয়ে দিন, আমি ওয়াশরুমে যাবো না।”

কে শুনে কার কথা! কুশল তরুর কোনো কথা কানে না নিয়ে ওকে কোলে নেওয়া অবস্থাতেই ওয়াশরুমে প্রবেশ করে।

(৪৩)
নিলাদ্র চৌধুরী মেনশনের মূল দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। কিছুসময় পর নিলাদ্র নিজের রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখে সন্ধ্যা ওর বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আপেল খাচ্ছে। নিলাদ্র ভ্রু কুঁচকে সন্ধ্যার দিকে তাকায় পরক্ষণেই দরজা দিয়ে বাহিরের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে দেখে চারপাশে কেও নেই। নিলাদ্র রুমের দরজা ভিতর থেকে আটকে দেয়। অতঃপর সন্ধ্যার সামনা-সামনি রাখা ওয়ারড্রবের সাথে হেলান দিয়ে বুকের সাথে দুই হাত ভাঁ*জ করে দাড়িয়ে সন্ধ্যার উপর শান্ত দৃষ্টি স্থির করে রেখে বললো….

—“কি ব্যপার ম্যডাম আজ নিজ ইচ্ছায় আমার ঘরে এসে বসে আছেন যে! এমনি সময় তো আমার থেকে শুধু পালাতে পারলেই বেঁচে যান যেনো। আজ হঠাৎ কি হলো আপনার জানতে পারি কি?”

সন্ধ্যা আপেল খেতে খেতে বললো….
—“আহহ, দেখছেন তো আপেল খাচ্ছি। এখন আমাকে কোনো প্রশ্ন করে ডি*স্টা*র্ব করবেন না একদম।”

নিলাদ্র তৎক্ষনাৎ সন্ধ্যার একদম কাছাকাছি এসে ওর দু-পাশে বিছানার উপর দু-হাত রেখে ওর দিকে কিছুটা ঝু*কে দাঁড়িয়ে পরে। আকস্মিক নিলাদ্রকে নিজের এতো কাছে আসতে দেখে সন্ধ্যার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। সন্ধ্যা ওর দাঁত দিয়ে আপেলে কা*ম*ড় বসিয়ে ওভাবেই আপেলটি মুখে ধরে রেখে হাত নামিয়ে নেয়। সন্ধ্যাকে অবাক করে দিয়ে নিলাদ্র আপেলের অন্যপাশে কা*ম*ড় বসায়। এতে করে সন্ধ্যার চোখযুগল যেনো কো*টর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম হয়। পরক্ষণেই নিলাদ্র সন্ধ্যার কাছে থেকে সরে নিজের আগের স্থানে এসে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসতে শুরু করে। সন্ধ্যার হেঁচকি উঠলে আপেলটা ওর মুখ থেকে নিচে প*রে যায়। নিলাদ্র সন্ধ্যার এমন অবস্থা ভালো ভাবেই উপভোগ করছে। কিছুসময় পর সন্ধ্যা নিজেকে সামলে স্বাভাবিক হলে নিলাদ্র বললো…..

—“এই সামান্য কাছে যাওয়াতেই তোর এমন অবস্থা! বিয়ের পর যখন তোকে পুরোপুরি ভাবে নিজের করে নিবো তখন কি করবি শুনি?”

নিলাদ্রের মুখে এমন কথা শুনে সন্ধ্যা লজ্জায় চোখ-মুখ কুঁচকে নিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। পরক্ষণেই সন্ধ্যা বিছানা থেকে নেমে চলে যেতে নিলে নিলাদ্র সন্ধ্যার হাত ধরে ওকে আটকে দিয়ে বললো…..

—“তোর মুখে ভালোবাসি শব্দ টা শোনার জন্য এই মনটা সবসময় ব্যকুল হয়ে থাকে রে। একটাবার ‘ভালোবাসি তোমায়’ এই দু’টি শব্দ নিজের মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে আমার ব্যকুল হয়ে থাকা মনটাকে শান্তি দিবি প্লিজ!”

নিলাদ্রের মুখে এমন কথা শুনে সন্ধ্যার হার্ট স্বাভাবিক এর তুলনায় অনেক দ্রুত বিট করতে শুরু করে। পরক্ষণেই সন্ধ্যা বললো….

—“আজ রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আমি আপনার জন্য ছাদে অপেক্ষা করবো। আমার অপেক্ষার অ*ব*শান ঘটিয়ে আপনি ছাদে আসলে, তখন আমার মুখে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ দু’টি শুনতে পারবেন।”

সন্ধ্যার মুখে এমন কথা শোনামাত্র নিলাদ্র ওর হাত ছেড়ে দেয়। হাত ছাড়া মাত্র সন্ধ্যা আর দিক-বেদিক লক্ষ্য না করে নিলাদ্রের রুমের দরজা খুলে এক দৌড়ে বাহিরে চলে যায়। নিলাদ্র ওর চেহারায় হাসি ফুটিয়ে বিছানায় নিজের শরীর এলিয়ে দেয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ……………..