হৃদকোঠোরে রেখেছি তোমায় পর্ব-১৮+১৯+২০

0
252

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১৮)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৪৪)
কুশল তরুকে পাজাকোলে নিয়ে ওয়াশরুমের ভিতরে প্রবেশ করে বেসিনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ওকে নামিয়ে দেয়। তরু ছো*টার চেষ্টা করলে কুশল বেসিনের পানির নল ছেড়ে দিয়ে জোর করে তরু হাত পানির নিচে রাখে। অতঃপর কুশল তরুর কানের কাছে নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে শান্ত স্বরে বললো……

—“এই লাল রং শুধু ঠোঁটেই মানায় হাতে নয়। তুমি যে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে নিজের লিপস্টিক উঠিয়ে হাতে লাগিয়ে নিয়ে পরমূহূর্তেই স্বইচ্ছায় সুটকেইসের ঢাকনাটি নিজের হাতে উপর ফেলেছিলে তোমার এই সম্পূর্ণ কার্যকলাপ আমি আয়না দিয়ে লক্ষ্য করেছিলাম।”

কুশলের মুখে এরূপ কথাগুলো শুনে তরু শান্ত হয়ে যায়।কুশল তরুর আঙুলের গিঁ*ট গুলো থেকে লিপস্টিক এর রং পরিষ্কার করে পানির নল বন্ধ করে দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে যায়। কিছুসময় পর তরুনিমা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ওয়ারড্রবের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কুশলকে প্রশ্ন করলো….

—“আপনি কি সুটকেইসে নিজের জামা-কাপড় নিয়ে ব*ন*বাসে চলে যাবেন বলে ঠিক করেছেন?”

—“গ্রামে যাবো, কিছু জরুরী কাজ আছে।”

—“কি কাজ!”

—“আমি আমার কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সেই বিষয়ে কাওকে বলি না।”

তরুনিমা চোখ ছোট ছোট করে কুশলের দিকে তাকিয়ে বললো….
—“আমাকে কি আপনার শ*ত্রু পক্ষের সঙ্গী বলে মনে হয় যে আমি আপনার কাজ সম্পর্কে জানতে পারলে সে কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করবো!”

—“কাজের বিষয়ে আমি আমার নিজের ছায়াকেও বিশ্বাস করি না। আর মেয়ে মানুষের পেটের ভিতর লম্বা সময় ধরে কথা ধরে রাখার ক্ষমতা নেই বললেই চলে।”

এই বলে কুশল নিজের সুটকেইস নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরু কুশলের যাওয়ার পানে ফ্য*ল ফ্য*ল দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থেকে বললো….

—“উনি কি কোনো ভাবে আমাকে অ*প*মা*ন করলেন?”

পরক্ষণেই তরুনিমাও রুম থেকে বেড়িয়ে কুশলের পিছন পিছন যেতে শুরু করে।

(৪৫)
আলমারী থেকে একের পর এক শাড়ি ও জামা বের করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের উপর ধরে ধরে দেখছে আর মেঝের উপর ফেলছে সন্ধ্যা। কোন জামাটি বা কোন শাড়িটা পড়লে তাকে সবথেকে বেশি সুন্দর লাগবে তা কিছুতেই সে চূড়ান্ত করতে পারছে না। সন্ধ্যা ক্লান্তি আর বিরক্তি নিয়ে ধপ করে মেঝেতে বসে পরে বললো….

—“কোনটা যে পড়বো! ভালো লাগছে না কিছু ধ্য*ত।”

পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে সন্ধ্যা বসাবস্থা থেকে উঠে দাড়িয়ে নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে নিলাদ্রের রুমের দিকে হাঁটা ধরে। কিছুসময় হাঁটার পর নিলাদ্রের রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই সন্ধ্যা দেখে নিলাদ্র শার্ট, প্যন্ট পড়ে রেডি হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল চিরুনি করছে। আয়নায় দরজায় দাড়ানো সন্ধ্যার প্রতিচ্ছবি দেখামাত্র নিলাদ্র চিরুনিটা রেখে হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বললো….

—“কি রে কিছু বলবি?”

সন্ধ্যা রুমের ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বললো….
—“কিছু বলার নেই কিন্তু আপনাকে দিয়ে আমার একটা কাজ করানোর আছে, এক্ষুণি একবার আসুন তো আমার সাথে।”

নিলাদ্র সন্ধ্যার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলো…..
—“কি কাজ শুনি?”

—“সেটা আমার সাথে গেলেই বুঝতে পারবেন।”

নিলাদ্র নিজের মধ্যে কিছুটা ভাব নিয়ে বললো….
—“এই যা তো এখান থেকে, আমি এখন তোর কোনো কাজ করতে পারবো না। আমার কিছু কাজ আছে তাই বাহিরে যেতে হবে এখন।”

নিলাদ্রের এমন কথায় সন্ধ্যা নিজের চেহারায় হালকা রাগ ভাব ফুটিয়ে বিরবিরিয়ে বললো….
—“আমার সাথে ভাব নিচ্ছে এখন ডে*ভি*ল টা। দ্বারা দেখাচ্ছি মজা।”

পরক্ষণেই নিলাদ্রকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সন্ধ্যা নিলাদ্রের হাত ধরে টানতে টানতে রুমের বাহিরে নিয়ে যেতে শুরু করে। নিলাদ্র সন্ধ্যার সাথে যেতে যেতে বললো….

—“দেখ সন্ধ্যা এখন আমি তোর কোনো কাজ করে দিতে পারবো না কিন্তু।”

—“আপনি পারবেন না মানে আপনার ঘাড় শুদ্ধ পারবে। আর সবার কাছে গিয়ে নিজের এই ভাব দেখাইয়েন আমার কাছে না।”

সন্ধ্যার এমন কথায় নিলাদ্র মিটিমিটি হাসে। নিলাদ্র তো সবসময় এটাই চায় সন্ধ্যা যেনো তাকে বুঝে, তার ভালোবাসা বুঝে। নিলাদ্র যেমন কারণে অকারণে সন্ধ্যার কাছে নিজের ভালোবাসা নিয়ে হাজির হয় ঠিক তেমনি সন্ধ্যাও যেনো নিলাদ্রের ভালোবাসা গ্রহন করে তার উপর জোর খাটায়।

সন্ধ্যা নিলাদ্রকে নিজের রুমে আসতেই নিলাদ্র রুমের বে*হাল অবস্থা দেখে হা হয়ে যায়। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে নিলাদ্র সন্ধ্যার মাথার পিছনে হালকা ভাবে চ*ড় দিয়ে বললো….

—“এটা কি কোনো মেয়ে মানুষের রুম নাকি আবর্জনার স্তূপ রে! এ কি দূ*র্দ*শা করে রেখেছিস তুই রুমের! এখন কি আমাকে দিয়ে এই সব কাপড় গুছিয়ে নেওয়ার জন্য এখানে নিয়ে আসলি তুই? এই তোর কাজ?”

সন্ধ্যা নিজের মাথার পিছনে হাত বুলাতে বুলাতে রুমের মাঝ বরাবর কাপড় গুলোর মাঝে বাবু সাহেবের মতো করে বসে নিলাদ্রের দিকে অসহায় মুখশ্রী নিয়ে তাকিয়ে বললো….

—“এখান থেকে আমায় একটা শাড়ি বা জামা সিলেক্ট করে দিন প্লিজ। আমি অনেক সময় ধরে আলমারী থেকে সব জামা-কাপড় বের করে নিজের উপর একটা একটা করে ধরে ধরে দেখেও কোনো একটাতে মনঃস্থির করতে পারি নি।”

নিলাদ্র সন্ধ্যাকে আর কিছু না বলে মেঝেতে পড়ে থাকা জামা আর শাড়িগুলো দেখতে শুরু করে। কিছুসময় দেখার পর নিলাদ্র সাদা সুতোর কারুকাজে তৈরি গাড় লাল রংয়ের একটা শাড়ি হাতে তুলে নিয়ে বললো….

—“উঠে দাঁড়া তো।”

সন্ধ্যা উঠে দাঁড়ায়। নিলাদ্র সন্ধ্যার হাত ধরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাতে থাকা শাড়িটা সন্ধ্যার কাঁধের উপর রেখে আয়নার মাঝে সন্ধ্যার প্রতিচ্ছবির উপর দৃষ্টি স্থির করে ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে বললো….

—“এই শাড়িটা পড়লে তোকে সবথেকে সুন্দর লাগবে। আজ রাতে এই শাড়িটা পরে খুব সুন্দর ভাবে সেজে আমার জন্য ছাদে অপেক্ষা করিস! আমি এসে তোর অপেক্ষা অবসান ঘটাবো। তারপর তোর মুখ থেকে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ দু’টি শুনে নিজের অশান্ত মনটাকে শান্ত করবো।”

নিলাদ্রের কথায় সন্ধ্যা নিজের চেহারায় লজ্জাভাব ফুটিয়ে মাথা নিচু করে নেয়। নিলাদ্র সন্ধ্যার লজ্জা ভাব দেখে বললো…

—“এভাবে লজ্জা পেয়ে আমাকে আর য*ন্ত্র*ণা দিস না।”

সন্ধ্যা আরো বেশি লজ্জা পেয়ে পিছন ঘুরে নিলাদ্রকে ঠেলে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে বললো….

—“এই আপনি এখন যান তো, আপনার না কি যেনো কাজ আছে। যান গিয়ে সেই কাজ শেষ করুন।”

নিলাদ্র আর কিছু না বলে প্যন্টের দুই পকেটে দু’হাত রেখে হাসতে হাসতে সন্ধ্যার রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

(৪৬)
কুশল গাড়ির পিছনে এসে দাঁড়িয়ে ডিকিটা খুলে সেখানে নিজের সুটকেইসটা রেখে দেয়। ইতিমধ্যে পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলে পড়তে শুরু করেছে। সূর্যের শেষ লালচে আভায় পুরো পরিবেশে এক অন্যরকম সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে। পরমূহূর্তে কুশল ডিকিটা বন্ধ করে ড্রাইভিং সিটের দরজা খুলতেই দেখে পাশের সিটে তরুনিমা পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। কুশল ড্রাইভিং সিটে বসতে বসতে তরুকে প্রশ্ন করলো….

—“তুমি এখানে কি করছো?”

—“আমিও গ্রামে যাবো। বহুবছর হলো গ্রাম সাইডে যাওয়া হয় না। হঠাৎই কেনো জানি না গ্রামের মনমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য মনের মাঝে প্রবল ইচ্ছে জাগলো। আপনি যেহেতু গ্রামে যাচ্ছেন ই তাই ভাবলাম আপনার সাথেই চলে যাই।”

কুশল গাড়ির দরজা আটকে দিয়ে তরুর দিকে কিছুটা ঝুঁকে ওর সিটবেল্ট লাগিয়ে দিতে দিতে বললো….

—“সরাসরি বললেই পারো আমার একলা গ্রামে যাওয়া নিয়ে তুমি ভরসা পাচ্ছো না। তাই এতো সুন্দর বাহানা তৈরি করে আমার সাথেই গ্রামে যাবে বলে মনঃস্থির করেছো।”

কুশলের নিজের এতো কাছাকাছি আসার জন্য তরু যেনো নিঃশ্বাস ফেলতেই ভুলে গিয়েছে। কুশল নিজের সিটে ভালোভাবে বসে ঠোঁটে স্মিত হাসি ফুটিয়ে বললো…

—“আমাদের সন্তানদের পটি পরিষ্কার করার ভ*য়ে কি নিঃশ্বাস ফেলা বন্ধ করে নিজেকে শে*ষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করলে তুমি!”

কুশলের মুখে এমন কথা শুনে তরুর মুখ অটোমেটিক হা হয়ে যায়। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে তরু জানালার পাশে মুখ ঘুরিয়ে বিরবিরিয়ে বললো….

—“কতো বড় খ*চ্চ*ড় এই মানুষটা ভাবা যায়!”

তরুর রিয়াকশন দেখে কুশল হাসতে হাসতে গাড়ি স্টার্ট করে।

২ ঘন্টার রাস্তা অতিক্রম করার পর হঠাৎ একটা ব্রিজের সামনে আসতেই রাস্তার মাঝে অনেক মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কুশল গাড়ির ব্রেক ক*ষে। তরুও সামনের দিকে লক্ষ করার পর কুশলকে বললো….

—“কি হয়েছে সামনে এতো লোকের ভিড় কেনো?”

কুশল নিজের সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বললো…
—“তুমি গাড়ি থেকে নেমো না। আমি দেখছি কি হয়েছে।”

তরু জেদী স্বরে বললো….
—“আমি একা একা গাড়িতে বসে কি করবো? আমিও দেখতে চাই কি হয়েছে ওখানে।”

—“আচ্ছা নামো গাড়ি থেকে।”

তরু নিজের সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। কুশল ও গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির দরজা লক করে তরুর কাছে এসে ওর হাত শক্ত করে ধরে সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। কিছুটা পথ অগ্রসর হওয়ার পর দু’জন লোক তরুদের পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে কুশল তাদের উদ্দেশ্য করে বললো….

—“সামনে এতো লোকের ভি*ড় কেনো ভাই? কি হয়েছে ওখানে?”

লোক দু’জনের মাঝে একজন আফসোসের কন্ঠে বললো….
—“রাজপুত্তুরের মতো একটা পোলা গো, বয়স ২৭-২৮ হইবো। না জানি কোন গাড়ি আইসা পোলাটারে ধা*ক্কা দিছে। সম্পূর্ণ মুখের অবস্থা বি*কৃ*ত হইয়া গেছে। চেহারা দেইখা চেনার কোনো উপায় নাই। সম্পূর্ণ শরীর আর রাস্তা র*ক্ত দিয়া ভাইসা গেছে। মনে হয় না পোলাটা বাঁইচা আছে এখনও। না জানি কোন বাপ-মায়ের কোল সন্তান হা*রা হইয়া গেলো।”

এই বলে লোক দু’জন চলে যায়। তরুর হাত-পা ইতিমধ্যেই কাঁ*পতে শুরু করেছে। মনের ভিতর অজানা ভ*য় কাজ করছে। কুশল তরুর হাত ধরে আবারও সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে।

চলবে ইনশাআল্লাহ…….

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১৯)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৪৭)
ব্রিজের মাঝবরাবর এসে মানুষের ভির ঠেলে একদম সামনে চলে আসে তরু আর কুশল। ছেলেটির থেঁ*ত*লে যাওয়া বি*ভ*ৎ*স মুখশ্রী চোখে পড়া মাত্রই তরু “আহহহহ” বলে দু’হাতে দুই চোখ ঢেকে কুশলের বুকে মাথা রাখে। কুশল এক হাতে তরুকে জড়িয়ে ধরে এক দৃষ্টিতে রাস্তার উপর প*ড়ে থাকা ছেলেটির নি*থ*র শরীরের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটির পরণের সাদা শার্ট র*ক্তে ভিজে লাল হয়ে গিয়েছে। পরক্ষণেই ছেলেটির হাতের দিকে লক্ষ্য করলে হাতে থাকা ঘড়িটা দেখামাত্র কুশল এর হা-পা থরথর করে কাঁ*প*তে শুরু করে। কুশল কাঁ*পা কাঁ*পা কন্ঠে বললো….

—“নি-নিল-নিলাদ্র!”

কুশলের মুখে নিলাদ্র নামটি শোনামাত্র তরুর বুকটা যেনো কেঁপে উঠে। তরু কুশলের বুক থেকে মাথা তুলে ওর চোখের দিকে তাকালে দেখে কুশলের দু’চোখ লাল হয়ে এসেছে। যেনো কুশলের এই দু’চোখ ফেঁ*টে অজস্র নোনাজল বেড়িয়ে আসতে চাইছে কিন্তু কোনো এক অজানা বাঁ*ধা*র কারণে আ*ট*কা পড়েছে।

কুশল তরুর হাত শক্ত করে ধরে নিলাদ্রের কাছে গিয়ে বসে চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের উদ্দেশ্য করে বলছে….

—“কেও একটু সাহায্য করুন, ও আমার ভাই। ওকে বাঁচাতে হবে দয়াকরে কেও ধরুন, ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।”

চারপাশে দাড়িয়ে থাকা লোকগুলোর কান পর্যন্ত যেনো কুশলের সাহায্যের ডাক পৌঁছাচ্ছে না। তরু ‘থ’ হয়ে বসে আছে কুশলের পাশে। ওর চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরছে। চারপাশে দাড়িয়ে থাকা লোকগুলোর মাঝে একজন আরেকজনকে কা*না*ঘু*ষো করে বলছে….

——‘কে না কে তাঁকে এভাবে স্পর্শ করা ঠিক হবে না।’

‘এ*ক্সি*ডে*ন্ট হয়েছে নাকি ষ*ড়*য*ন্ত্র করে মে*রে ফেলার চেষ্টা করেছে কে জানে? এখন যদি স্পর্শ করি তাহলে পুলিশ কে*স হয়ে যাবে। কে চায় এসব পুলিশি ঝা*মে*লা*য় স্বইচ্ছায় জড়াতে বাপু?’

‘চেহারার যে বি*শ্রী অবস্থা হয়েছে দেখেই তো শরীর গু*লি*য়ে আসছে একে ধরবে কে?’

‘এতো র*ক্ত*পা*ত হয়েছে এখনও বেঁচে আছে বলে তো মনে হয় না।’

‘শুনেছি এ*ক্সি*ডে*ন্ট, ফাঁ*সি হয়ে কারোর মৃ*ত্যু হলে তার আ*ত্না আমাদের চারপাশেই ঘুরে বেড়ায়। এসব অ*প*মৃ*ত্যু*র লা*শ আমরা স্পর্শ করতে পারবো না।’

লোকমুখে বলা কথাগুলো কুশল-তরুর কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে। তরু আর চুপ হয়ে বসে থাকতে পারে না। বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রাগ নিয়ে উচ্চস্বরে বললো….

—“ব্য*স যথেষ্ট বলেছেন আপনারা সবাই। হাতজোর করে অনুরোধ করছি, আপনাদের কোনো প্রকার সাহায্য করার দরকার নেই শুধু মুখ দিয়ে এইসব কথা বের করে নিজেদের নি*ম্ন মানসিকতা, শিক্ষা আর চিন্তা-ভাবনার প্রকাশ ঘটাবেন না। দোহাই লাগে….”

তরুনিমার কথাগুলো শোনামাত্র উপস্থিত সকলেই পুরোপুরি ভাবে নিরব হয়ে যায়। কিছুসময়ের মধ্যেই অনেকেই স্থান ত্যগ করতে শুরু করে ধীরে ধীরে। পরক্ষণেই তরু কুশলকে উদ্দেশ্য করে বললো….

—“আপনি নিল ভাইয়ার কমোরের উপরের অংশটুকু ধরুন আমি পায়ের অংশটুকু ধরছি। দ্রুতই উনাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, উনার কিচ্ছু হবে না।”

তরুর কথানুযায়ী কুশল নিলাদ্রের কমোরের উপরের অংশটুকু ধরে আর তরু পায়ের অংশটুকু। উপস্থিত মানুষরূপী একটা প্রাণীও ওদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না। শুধু নিরব হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখে। কুশল আর তরু নিলাদ্রকে গাড়ির পিছনের সিটে শুইয়ে দেয়। অতঃপর ওরা দু’জনেই গাড়িতে উঠে বসে। কুশল গাড়ি স্টার্ট করে ঘুরিয়ে নিয়ে চালাতে শুরু করে শহরের দিকে।

(৪৮)
ডাক্তার খালেকুজ্জামানের বাসার ড্রয়িং রুমে আপাদমস্তক কালো হুডিতে ঢাকা একজন মানুষ পায়ের উপর পা তুলে সোফায় বসে আছে। হাত হাতের দুই আঙুলের মাঝে পি*স্ত*ল*টি ঘুরাচ্ছে। তার পাশে কালো হুডির আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে আরো একজন মানুষ। তার সামনে দু’হাত উপরে উঠিয়ে হাঁটু ভে*ঙে বসে আছেন খালেক, খালেকের স্ত্রী ও ২০ বছর বয়সী একজন মেয়ে। খালেকের স্ত্রী ও মেয়ের মাথায় পি*স্ত*ল ঠে*কি*য়ে রেখেছে কালো হুডি পরিহিত আরো দুইজন মানুষ। একটু নড়াচড়া করার চেষ্টা করলেই যেনো পিস্তল এ থাকা সবগুলো গু*লি তাদের তিনজনের মস্তিষ্কের এপাশ দিয়ে প্রবেশ করে ওপাশ দিয়ে বেড়িয়ে যাবে। ভ*য়ে থরথর করো কাঁ*প*ছে খালেক ও খালেকের পরিবার। সেইসময় খালেক ভ*য় মিশ্রিত কন্ঠে বললেন…..

—“আপনি তো বলেছিলেন আপনার কথানুযায়ী কাজ করলে আপনি আমার আর আমার পরিবারের কোনো ক্ষ*তি করবেন না। আমি তো আপনার কথানুযায়ীই সব কাজ করেছি। ঐ নিলাদ্র নামের ছেলেটা যখন আমার বাসায় এসেছিলো তখন সুযোগ বুঝে ওর কমোরে কড়া ডোজের ড্রা*গ*স ইনজেক্ট করে দিয়েছিলাম। তখন একে একে আপনারা আপনাদের আসল পরিচয় ও এতো বছরের লুকায়িত সব সত্য ওর সামনে তুলে ধরেছিলেন। নে*শা*র প্রভাব পড়ায় ছেলেটা সব জেনেও কিছু করে উঠার শক্তি পায় নি। পরমুহূর্তে ওর চ্যপ্টার পুরোপুরি ভাবে ক্লোজ করতে শহর থেকে অনেক দূরে মেইন রাস্তার উপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। আর ইচ্ছাকৃত ট্রাক এর সাথে ওর এ*ক্সি*ডে*ন্ট ও করিয়েছিলাম। আমি দেখেছি এ*ক্সি*ডে*ন্টে*র কারণে নিলাদ্রের মুখ পুরোপুরি ভাবে থেঁ*ত*লে গিয়েছিলো। আর এই লম্বা সময়ের এর মাঝে যে নিলাদ্র মা*রাও গিয়েছে সেই গ্যরান্টিও আমি দিচ্ছি। তাই আপনাদের সব সত্য ও আসল পরিচয় সে জেনে গিয়েছে সত্ত্বেও আপনাদের চি*ন্তা বা ভ*য় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। প্লিজ এবার আমাদের ছেড়ে দিন। আমরা এই দেশ ছেড়ে অনেক দূরে অন্য কোথাও চলে যাবো। কখনও আপনাদের কারোর ছায়াও আমাদের উপর পড়বে না এমন জায়গায় লুকিয়ে থাকবো আমি আমার পরিবারকে নিয়ে।”

সোফায় বসারত মানুষটি খালেকের দিকে পি*স্ত*ল তাঁক
করে বললো…
—“আপনাকে এতো বেশি কষ্ট করতে হবে না। সেই সুব্যবস্থা আমি নিজ হাত করছি। ওপারে নিজের পরিবারকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে থাকবেন। আলবিদা…”

এই বলে মানুষটি খালেক বা তার পরিবারকে ২য় কোনো শব্দ উচ্চারণ করার সুযোগ না দিয়ে গু*লি করে। ৩টে গু*লি তিনজন মানুষের মস্তিষ্কের এপাশ দিয়ে প্রবেশ করে ওপাশ দিয়ে বেড়িয়ে যায়। মূহূর্তের মধ্যেই মেঝেতে লু*টিয়ে পড়ে খালেক, খালেকের স্ত্রী ও মেয়ের প্রাণ*হী*ন লা*শ গুলো।

(৪৯)
নিলাদ্রের পছন্দ করে দেওয়া সাদা সুতোর কারুকাজে তৈরি গাড় লাল রংয়ের শাড়ির সাথে ম্যচিং জুয়েলারি পড়ে, হাতে পায়ে আলতা দিয়ে, চুলগুলো খোঁপা করে খোঁপায় বেলিফুলের মালা লাগিয়ে, হালকা মেকআপ আর চোখে গাড় করে কাজল দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে সেজেছে সন্ধ্যা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে শেষ আরেকবার দেখে নিয়ে সন্ধ্যা ওর রুম থেকে বের হয়। এরপর চারপাশ লক্ষ্য করে সকলের চোখ এড়িয়ে ছাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করে। কিছুসময় পর ছাদে এসে পর পাশ থেকে আস্তে করে দরজা আটকে দেয় সন্ধ্যা। যদিও এতো রাতে কারোর ছাদে আসার চান্স নেই তবুও কোনো প্রকার রি*স্ক সন্ধ্যা নিতে চায় না। হাতে থাকা ফোনটা অন করে নিলাদ্রের নাম্বারে মেসেজ সেন্ড করে……

—“ছাদের দরজায় দাঁড়ানোর পর কোনো প্রকার শব্দ না করে আমাকে একবার কল দিবেন।”

অতঃপর সন্ধ্যা ছাদের ছোট ঘরে প্রবেশ করে সেখান থেকে আগের এনে রাখা একটা ডালা হাতে নিয়ে ছাদের মাঝবরাবর এসে হাঁটু ভাজ করে বসে পড়ে। ডালাটির উপর থেকে ঢাকনাটি সরিয়ে ভেতর রংবেরঙের অনেকগুলো সুগন্ধ ছড়ানো মেমবাতি আর দেশলাই বের করে। এরপর মোমবাতি গুলো লাভ শেইপ এ সাজিয়ে দেশলাইয়ের সাহায্যে জ্বালাতে শুরু করে। সবগুলো মোমবাতি জ্বালানো শেষ হলে মুহূর্তের মধ্যে পুরো পরিবেশে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে মোড় বদলায়। মোমের সুঘ্রাণ পুরো পরিবেশকে সৌন্দর্যের উচ্চমাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে যেনো।

সন্ধ্যা মোম দিয়ে সাজানো লাভ সেইপ এর এক পার্শে বসে দূর আকাশের দিকে দৃষ্টি স্থির করতেই দেখে আজ পুরো আকাশ কেমন কালো মেঘে ছেয়ে আছে। আকাশজুড়ে একটা তারা দেখা যাচ্ছে না। আজ পূর্ণিমার ২য় দিন বলে মনেই হচ্ছে না সন্ধ্যার কাছে। সন্ধ্যা অভিমানী স্বরে বললো…..

—“আজকেই আকাশকে তার মন খারাপের কালো চাদর দিয়ে চাঁদ ও তারার সৌন্দর্যকে ঢেকে দিতে হলো? যদি এইমূহূর্তে বৃষ্টি এসে যায় তাহলে তো আমার এতো সুন্দর করে ছাদ সাজানোর দৃশ্য উনার দেখাই হবে না। কখন যে আসবে এই ডে*ভি*ল*টা! আরেকটা মেসেজ করে বরং বলি তাড়াতাড়ি চলে আসতে।”

এই কথা বলেই সন্ধ্যা ওর পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে নিলাদ্রকে মেসেজ সেন্ড করতে গিয়েও থেমে যায়। পরক্ষণেই মেসেজটা কা*ট করে সন্ধ্যা বললো….

—“বারবার মেসেজ করলে এখানে আসার পর সেটা নিয়েও আমাকে পঁ*চা*নি দিতে ছাড়বে না এই ব*জ্জা*ত*টা। থাক কোনো মেসেজ বা কল করবো না আমি। দেখি কখন আসার সময় হয় জনাবের। যদি আমাকে বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করিয়েছে তাহলে আসার পর প্রতি মিনিট হিসাব করে ওনাকে যদি কানে ধরে উঠাবসা না করিয়েছি তাহলে আমার নামও সন্ধ্যা চৌধুরী নয়। হুহহহহহহহহ…….”

এই বলে সন্ধ্যা দুই হাঁটু একত্র করে তার উপর থুতনি ঠেকিয়ে নিলাদ্রের আসার অপেক্ষা করতে শুরু করে।

চলবে ইনশাআল্লাহ…………….

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(২০)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৫০)
ধীরে ধীরে রাত আরো গভীর হতে শুরু করেছে। সন্ধ্যা নিলাদ্রের আসার অপেক্ষার প্রহর গুণছে। সন্ধ্যা বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সময় দ্রুত পার করার জন্য পায়চারী করছে। পরক্ষণেই রাতের আকাশজুড়ে বিরাজ করা কালো মেঘের দলাগুলো একে-অপরের সাথে ঘ*র্ষ*ণ খেয়ে গ*র্জ*ন তুলতে শুরু করেছে। বাতাসের মাত্রাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। ছাদের উপর সন্ধ্যার বানানো লাভ সেইপ এর মোমবাতি গুলোর মাঝে কিছু মোমবাতি নিভেও গিয়েছে ইতিমধ্যে। পরক্ষণেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামতে শুরু করে। সন্ধ্যা একঠায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টির পানিতে মোমবাতি গুলোকে নিভে যেতে দেখছে। নিলাদ্রের না আসার রাগে, অভিমানে নিজের সব সাজ দু’হাত দিয়ে মুছতে মুছতে বললো…..

—“আমার অপেক্ষার এমন প্রতিদান দিলেন তো আপনি! আজকের পর যদি আরও হাজারবার আমার কাছে নিজের ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসেন তবুও আমি আপনাকে ভালোবাসবো না।”

সন্ধ্যার মুছে ফেলা সব সাজ বৃষ্টি পানিতে ধুয়ে গিয়েছি ইতিমধ্যে। অতঃপর সন্ধ্যা ছাদের দরজা খুলে দ্রুত পায়ে নিচে নিজের রুমে চলে যায়।

(৫১)
শহরের একটি বড় ক্লিনিক এর সামনে এসে গাড়ি থামায় কুশল। কুশলের কল পেয়ে সাদিক ও বেশ কয়েকজন গার্ডদের নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়। দ্রুততার সাথে গাড়ি থেকে নেমে ক্লিনিকের ভিতরে এসে রিসেপশনের কাছে এসে দাঁড়িয়ে সেখানে থাকা মহিলাটিকে বললো….

—“আমার ভাইয়ের এ*ক্সি*ডে*ন্ট হয়েছে। খুব খা*রাপ অবস্থা ওর। দ্রুত একটা স্ট্রেচারে করে ওকে ভিতরে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।”

মহিলাটি শান্ত স্বরে বললেন…
—“স্যার, এ*ক্সি*ডে*ন্ট এর পেশেন্টদের এভাবে সরাসরি
আমাদের ক্লিনিকে ভর্তি করাতে পারি না। প্রথমত পুলিশকে ইনফর্ম করতে হবে। তারা পুরো বিষয়টাকে তদন্ত করে দেখবে তারপর আমরা পেশেন্টকে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা শুরু করা হবে।”

মহিলাটির মুখে এমন কথা শুনে কুশলের রাগ যেনো এবার মাথায় চড়ে বসেছে। কুশল ওর পকেট থেকে পি*স্ত*ল*টি বের করে মহিলাটির দিকে ধরে। সেইমূহূর্তে সাদিক গার্ডদের নিয়ে ক্লিনিকের ভিতর প্রবেশ করে সেখানে বসারত সকলের দিকে ব*ন্দু*ক ধরে। মহিলাটি সহ উপস্থিত সবাই ইতিমধ্যে ভয়ে চু*প*সে গিয়েছে যেনো। কুশল রাগ নিয়ে উচ্চস্বরে বললো….

—“আমার ভাই বাহিরে জীবন-মৃ*ত্যু*র সাথে ল*ড়াই করছে আর আপনারা আমাকে এখানে পুলিশি ফর্মালিটি পালন করতে বলছেন?এক্ষুণি আমার ভাইকে ভর্তি করিয়ে ওর চিকিৎসা শুরু করার ব্যবস্থা করুন নয়তো এই ক্লিনিক থেকে একটা মানুষকে আমি তার জীবন নিয়ে বের হতে দিবো না।”

মহিলাটি তৎক্ষনাৎ দু’জন পুরুষ নার্সকে ডেকে স্ট্রেচার নিয়ে বাহির থেকে নিলাদ্রকে আনার ব্যবস্থা করতে বলে। নার্স দু’জন দ্রুত স্ট্রেচার নিয়ে বাহিরে এসে নিলাদ্রকে স্ট্রেচারে করে ক্লিনিকের ভিতরে নিয়ে আসে। তরুনিমাও তাদের পিছন পিছন ভিতরে এসে দাঁড়ায়। নিলাদ্রের মুখের ক*রু*ণ অবস্থা দেখা মাত্র একজন মহিলা তার বাচ্চার চোখ হাত দিয়ে ঢেকে দেয়। যা কুশলের চোখ এড়ায় না। কুশল নিজের শার্ট খুলে নিলাদ্রের মুখ ঢেকে দেয়। কুশল মহিলাটিকে বললো…

—“ডাক্তার কোথায়?”

মহিলাটি ভী*ত কন্ঠে কিছু বলতে নিবেন সেইসময় একজন মধ্যবয়সের পুরুষ ডাক্তার সেখানে উপস্থিত হয়ে গার্ডদের হাতে ব*ন্দু*ক দেখে বললেন….

—“কি হচ্ছে এসব এখানে? আপনারা কারা?”

কুশল নিজের পি*স্ত*ল*টি নামিয়ে ডাক্তারটির দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো…
—“এখন পরিচয় দেওয়ার সময় আমার হাতে নেই। দ্রুত আমার ভাইয়ের চিকিৎসা শুরু করুন।”

ডাক্তারটি উচ্চস্বরে বললেন….
—“এটা ভদ্র মানুষদের চিকিৎসা করানোর জায়গা। এখানে এসব মা*স্তা*নী চলবে না। আমার ক্লিনিকে আমি এসব এলাও করবো না। বেড়িয়ে….. ”

ডাক্তারটি পুরো কথা শেষ করার আগেই কুশল রাগে ওর হাতে থাকা পি*স্ত*ল*টি দিয়ে নিচের দিকেই একবার গু*লি করে। গু*লি*র আঘাতে টাইলসের অনেকটা জায়গা ফে*টে যায়। কুশল শান্ত স্বরে বললো…

—“এক্ষুণি যদি আমার ভাইয়ের চিকিৎসা শুরু না করা হয় তাহলে এই পি*স্ত*লে থাকা বু*লে*ট গুলো আপনার শরীরের ঠিক কতোগুলো জায়গায় ছি*দ্র তৈরি করবে তা আপনি ভাবতেও পারবেন না।”

ডাক্তারটি ভী*ত কন্ঠে নার্স দুজন আর ঐ রিসেপশনের মহিলাটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন…..
—“এক্ষুণি পেশেন্টকে ও.টিতে নিয়ে চলো। আর ডাক্তার আকরাম কে কল করে আসতে বলো দ্রুত।”

তরুনিমা কুশলের কাছে এসে ওর হাত থেকে পি*স্ত*লটি নিয়ে সাদিককে দিয়ে বললো….
—“গার্ডদেরকে বাহিরে যেতে বলুন। সবাই অনেক ভ*য় পাচ্ছে।”

সাদিক তরুনিমার কথা শুনে কুশলের দিকে তাকালে তরু সাদিকের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাতে দাত পি*ষে বললো….

—“আমি আপনার স্যারের ওয়াইফ হই। আর আমি আপনাকে কিছু করতে বললে তখনও আপনার স্যারের এক্সট্রা পার্মিশন নিতে হবে নাকি?”

সাদিক দ্রুত কন্ঠে বললো….
—“জ্ব-জ্বি না ম্যডাম।”

এই বলে সাদিকে গার্ডদের ইশারা করে তাদের নিয়ে ক্লিনিকের মূল দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যায়। ওরা চলে যেতেই উপস্থিত সবাই যেনো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তরুনিমা কুশলের হাত ধরে অপারেশন থিয়েটারের সামনে এসে থাকা চেয়ারে ওকে বসিয়ে দিয়ে বললো….

—“চুপচাপ এখানে বসে থাকুন। আমি ভর্তির সব ফর্মালিটি পূরণ করে আসছি।”

তরু চলে যেতে নিলে কুশল তরুর হাত ধরে নেয়। তরু কুশলের দিকে ফিরে তাকাতেই দেখে কুশল ছলছল দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণেই কুশল কাঁ*পা কন্ঠে তরুকে বললো….

—“নি-নিল সুস্থ হয়ে যাবে তো তরু!”

কুশলের এমন অসহায় মুখশ্রী দেখে এই প্রথম তরুর বুকের ভিতরটা যেনো মো*চ*ড় দিয়ে উঠলো। নিলাদ্রের কথা চি*ন্তা করে তরুর নিজের মনেও যথেষ্ট ভ*য় কাজ করছে। তবুও তরু বাহির থেকে নিজেকে শ*ক্ত রেখে কুশলের হাতের উপর নিজের অন্যহাত রেখে বললো….

—“আপনি চি*ন্তা করবেন না। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুণ তিনি আমাদের নিরাশ করবেন না। নিলাদ্র ভাইয়া আবারও পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হয়ে উঠবেন।”

কুশল তরুর হাত ছেড়ে দিয়ে বললো….
—“ইনশাআল্লাহ।”

অতঃপর তরু রিসেপশনের কাছে এসে ভর্তির সব ফর্মালিটি পূরণ করে কার্ড দ্বারা চিকিৎসার সম্পূর্ণ বিল পেমেন্টও করে দেয়। সেইসময় ডাক্তার আকরাম এসে ও.টির ভিতরে ঢুকতে নিলে কুশল তার হাত ধরে। ডাক্তার আকরাম অবাক হয়ে কিছু বলতে নিলে কুশল তার হাতের উপর কয়েকফোটা চোখের পানি ফেলে অনুরোধের স্বরে তাকে বললেন….

—“দয়াকরে আমার ভাই সমতুল্য বন্ধুকে বাঁচিয়ে দিন ডাক্তার। আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে হারাতে পারবো না।”

কুশলের অনুরোধে ডাক্তার তার অন্যহাত কুশলের কাঁধে রেখে বললেন….
—“আমরা আমাদের বেস্টটা দিয়ে চেষ্টা করবো তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে বাঁচানোর, বাবা। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো। জীবন বাঁচানোর একমাত্র শক্তিকর্তা তিনিই। আমরা তো শুধু অ*ছিলা মাত্র।”

এই বলে ডাক্তার আকরাম ও.টির ভিতরে চলে যান। কুশলও তৎক্ষনাৎ স্থান ত্যগ করে। এ*ক্সি*ডে*ন্ট ক্লিনিক থেকে পুলিশকে কল করায় পুলিশ সেখানে আসলে সাদিক পুলিশের দিকটা সম্পূর্ণ ভাবে সামলে নেয়। তরুনিমা ও.টির সামনে আসলে কুশলকে সেখানে দেখতে না পেয়ে বললো….

—“ইনি আবার কোথায় চলে গেলেন?”

তরুনিমা কুশলকে খুঁজতে শুরু করে। বেশ কিছুসময় ধরে খোঁজার পর ক্লিনিকের নামাজ ঘরের সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখে কুশল সেখানে জায়নামাজে বসে আল্লাহর নিকট দু’হাত তুলে নিলাদ্রের সুস্থতা কামনা করে চোখের পানি ফেলছে আর প্রার্থনা করছে। তরুনিমা মুগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে কুশলের দিকে তাকিয়ে থাকাবস্থাতেই বললো….

—“আজকাল তো এমন সত্যিকারের বন্ধুত্বের বন্ধন দেখাই যায় না। সবাই নিজ নিজ স্বা*র্থ হা*সিলের জন্য বন্ধুত্বের মতো সম্পর্ককে ব্যবহার করে। আর আপনি ওনার জীবন-মৃ*ত্যু*র সাথে ল*ড়াই করার মুহূর্তে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন। নিলাদ্র ভাইয়া ভিষণ ভাগ্যবান পুরুষ তাই হয়তো আপনার মতো একজন বন্ধু পেয়েছেন।”

তরুনিমা নামাজঘরের স্থান ত্যগ করে আবারও অপারেশন থিয়েটারের সামনে এসে সেখানে রাখা চেয়ারে বসে পরে। কিছুসময় পর ও.টির ভিতর থেকে একজন নার্স একটা ট্রে হাতে বেড়িয়ে আসে। তরুনিমাকে সেখানে বসে থাকতে দেখে নার্সটি বললেন…

—“আপনি পেশেন্টের আত্নীয় তো?”

—“জ্বী।”

—“এই ঘড়ি আর স্বর্ণের আংটি আমরা ওনার কাছে পেয়েছি এগুলো আপনি আপনার কাছে রেখে দিন।”

তরু সোগুলো নিয়ে নিজের কাছে রেখে নার্সকে প্রশ্ন করলো….
—“ভাইয়ার কি অবস্থা এখন!”

—“অপারেশন এখনও চলছে। ডাক্তার বের হলে তাকে জিঙ্গাসা করে পেশেন্টের অবস্থা সম্পর্কে জেনে নিয়েন।”

এই বলে নার্সটি আবারও ও.টির ভিতরে প্রবেশ করে। তরু নিলাদ্রের ঘড়িটা দেখে বুঝতে পারে এটা স্মার্ট ওয়াচ। এই ঘড়িতে সিম কার্ড, মেমোরি কার্ড এমনকি ক্যমেরাও সেটআপ করানো যায়। এক্সিডেন্টের কারণে ঘড়িটার উপরের গ্লাসটা ভে*ঙে গিয়েছে। তরুনিমা কিছু একটা ভেবে ঘড়িটার ভিতর থেকে সিম কার্ড আর মেমোরি কার্ডটি বের করে নিজের ফোনে সেট করে।

চলবে ইনশাআল্লাহ……….৷