হৃদমাঝারে শুধুই তুই পর্ব-১৯

0
509

#হৃদমাঝারে_শুধুই_তুই
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-১৯

বাসার দরজায় স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে আছি।দরজাটা খোলা,তবুও ভেতরে একপা বাড়াতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমি মানুষটার কোনো দাম নেই বাসার কারো কাছেই।হিমুর মতো মনে হচ্ছিলো কপালে “আই অ্যাম নো বডি ” ট্যাগ বসে গেলো।সাতদিন পর বাসায় ফেরার পর আমাকে নিয়ে বাসার সবার মাতামাতি আশা করেছিলাম।আমার আশার সে গুড়ে বালি।কলিংবেল বাজাতেই আম্মু ময়দা মাখানো হাতে দরজা খুলে দিলো।উৎফুল্ল কন্ঠে বললো,

-মিথির আব্বু?মিশু?দেখো,কে এসেছে দেখো!

আমি নিজেও হেসে ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছিলাম।আব্বু,মিশু দরজার কাছে এসে দাড়ালো।কিছু বলার আগেই,

-আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল,আসসালামু আলাইকুম আন্টি।

আরমানের গলা শুনে পিছন ফিরলাম।লোকটা বরাবরের মতো আমার পিঠ ঘেষে দাড়িয়ে আছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে।গাড়ি থেকে নামার সময় চোখ পাকিয়ে একনজর তাকিয়েছিলাম তার দিকে।ধন্যবাদ বা বাসায় আসুন বলার নুন্যতম ভদ্রতাবোধ দেখাইনি ওনাকে।তবুও এসেছেন উনি?আব্বু আম্মু ওনার সালামের উত্তর নিলো।আরমান বিরবিরিয়ে আমার কানের কাছে বললেন,

-যামিনী,বেশ রাগিনীও তুমি!রাগের মাথায় ট্রলিটা ব্যাকসিটে রেখে এসেছিলে!

নিচে তাকিয়ে ওনার বামহাতে ট্রলির হাতল দেখলাম।একটানে ছাড়িয়ে নিলাম ওটা।উনি মিশুকে বললেন,

-হোয়াটস্ আপ মাইশা?

-আপ?এইযে মিথি মহারানীর আগমনে অল ডাউন বলুন ভাইয়া।বাট আপনি এসেছেন,আলহামদুলিল্লাহ ভালোই হবে হয়তো সবটা!

আম্মু বললো,

-এসো এসো!ভেতরে এসো।অনেকটা পথ এসেছো টায়ার্ড নিশ্চয়ই।

-আপু?একজন বাসায় আসছে,তাকে ভিতরে ঢুকতে না দিয়ে দরজা আগলে দাড়িয়ে আছো কেনো বলতে পারো?মিনিমাম সেন্সটুকো নাই!

আমি হা করে ওর দিকে তাকালাম।ভেবেছিলাম ফেরার পরপরই দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরে বলবে আপু কেমন আছো,কতোদিন দেখিনা তোমাকে।আর হলো কি?একটা অচেনা লোকের জন্য আমাকেই ভেতরে ঢোকা থেকে আটকে দিয়ে তাকে সাইড দিতে বলছে?আব্বু কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললেন,

-সরে দাড়াও মিথি!আরমানকে ভেতরে আসতে দাও!

আবারো অবাক হলাম।আব্বু এর জন্য আমাকে আদর না করে সরে দাড়াতে বলছে?যে আমাকে ছাড়া তার ঘুম হয়না,খাবার খেতে কষ্ট হয়,থাকতে পারেন না উনি,সাত সাতটা দিন অন্যজায়গায় কাটিয়ে আসার পরও এইরকম ব্যবহার করছে?সবটা হয়েছে এই লোকটার জন্য!দাত কিড়মিড়িয়ে আরমানের দিকে তাকালাম।উনি বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে আমাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকলেন।

-কেমন আছো বাবা?

আব্বু তার কাধে হাত রেখে বলতে বলতে এগিয়ে গেলেন।মিশু আম্মুও সরে গেছে ততক্ষনে।আমি দরজাতেই ভাঙা মন নিয়ে আহত দৃষ্টিতে সবটা দেখে চলেছি।লোকটা আমার ফ্যামিলিকেও বশ করে নিয়েছে।আর এরা?এরাই বা এমন আজব ব্যবহার করছে কেনো?একে চেনে কিভাবে?আগে কোনোদিন তো দেখিনি আমি!তাহলে আব্বু এতো পরিচিতর মতো কথা কেনো বলছেন?কাদোকাদোভাবে পাশের ট্রলিব্যাগটার দিকে তাকালাম।ওর আর আমার,দুটোরই কোনো দাম নেই এ বাসায়।আমরা দুটো বাদে অহেতুক মানুষ আরমান আর ওনার জিনিসপত্র কাধের ব্যাগটা আমার বাসায় ঢুকে পরেছে!

কারো কোনোরকম আদর আপ্যায়ন ছাড়াই রাগে ফুসতে ফুসতে ভেতরে ঢুকলাম।চেন্জ করে বাইরে এসে দেখি আপি হা করে দরজায় দাড়িয়ে।আমার মতো তাকেও কোনো গুরুত্ব দেয়নি এ বাসার কেউ!ড্রয়িংরুমে আরমানকে নিয়ে চলা আদিক্ষেতা আর তার সামনে নানান রকমের খাবারদাবারের অহেতুক মেলা দেখে আপির চোখ বড়বড় হয়ে গেছে।তার সাথে আছে আম্মুর আরো নাও না,আরো খাও না বলে আদর দেখানো!আর আরমান?উনি রিজোয়ানকে কোলে বসিয়ে দাত কেলিয়ে সবার সাথে কথা বলছেন আর গিলছেন।যেনো এরা ওনার কোন জনমের আত্মার আত্মীয়স্বজন!চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে গিয়ে আপির হাত ধরলাম।আপি আতকে উঠে বললো,

-পাখি!এসব?এই ছেলেটা…

-বলছি।রুমে চলো।

আপিকে নিয়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম।রিয়াপি ওর হাতের ব্যাগটা বিছানায় রেখে ধপ করে বসে পরলো।বললো,

-তোমার যে এমন কোনো হ্যান্ডসাম আত্মীয় আছে,আগে জানতাম না!

-ধ্যাৎ!কেউ হয়না এ আমার!

-তাহলে?

আপিকে কতোটুকো বলবো?নাহ্!সবটা বললে কেস বিগড়াবে!ওর পাশে বসে বললাম,

-এই লোক মামীর বান্ধবির ছেলে,ও বাসাতেই ছিলো,আসার সময় তার গাড়িতে আসতে হয়েছে আমাকে,এখন বাসায় এসে একবর্ন আমার সাথে কথা না বলে সবাই একে নিয়ে মেতেছে!এ্যাঁআআআআ!!!

-ওয়েট ওয়েট!এই ছেলেটা চিটাগাং ছিলো?কি নাম?

-ইশতিয়াক আরমান।

আপি কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো।মেকি হেসে বললো,

-ও।ও ছেড়ে দাও।যা খুশি করুক এরা।

ভ্রুকুচকে আপির দিকে তাকালাম।আপি একগাল হেসে বললো,

-ছাড়োতো।কিছুক্ষনই তো আছে।যখন চলে যাবে তখন তোমারই রাজ্য এ বাসা।

কিছু বললাম না।আপি পাশের ব্যাগটা নিয়ে বললো,

-দেখো তো পছন্দ হয় কি না?

চোখ চকচক করে ওটা নিতে নিতে বললাম,

-দেখি দেখি,কি এনেছো আপি?আমি…

আপি ব্যাগটা সরিয়ে নিলো।হাত বাড়িয়ে বললো,

-আমারটা?

আমি মুচকি হেসে ব্যাগ থেকে একটা ঝিনুকের মালা এনে দিলাম আপির হাতে।ছোট ছোট জিনিসেই খুশি ও।বললো,

-পাখি!এটা তো খুবই সুন্দর!

-জানতাম সুন্দর না হলেও এটাই বলতে!

-না আসলেই,সুন্দর এটা!

-বেশ,আমারটা তো দাও এবার!

আপি ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বাবু হয়ে বসলো।আমি তড়িঘড়ি করে খুললাম ওটা।যতোটা এক্সাইটেড হয়ে খুলেছিলাম,ততোটাই বিরক্ত হলাম গিফট দেখে।বললাম,

-আমার কথা ভেবে কিনছো?নাকি আম্মু মিশুর কথা ভেবে?

আপি আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

-পছন্দ হয়নি?এটা দিয়ে তো সময়টাও দেখা যায়,শুধু অ্যালার্ম ভাবছো কেনো তুমি?

হেসে দিলাম।বললাম,

-খুবই সুন্দর হয়েছে।আর বেশ ম্যানেজ করতে শিখে গেছো দেখছি?

আপি ভাব নিয়ে বললো,

-হুম।মেয়ে এখন জব করে হুম!

-কালই তো জয়েন তোমার তাইনা?

-হুম।

-আমি সকালেই ওবাসায় চলে যাবো।

-হুম।পাখি,ওখানকার ছবি উঠাওনি?

মনটা একটু খারাপ হলো।নাগরশালের ছবিগুলো নেই বলে।ওগুলো বেশ কাজের ছিলো আমি জানি।আপিকে ক্যামেরাটা দিলাম,ও ওগুলো দেখতে লাগলো।নিজের ফ্যামিলি দাম দিচ্ছে না,আপির সাথেই কথা বলতে লাগলাম।দুজনে মিলে অনেকক্ষন আড্ডা দেওয়ার পর আম্মু ডাক লাগালো।ড্রয়িংরুমে আরমানের সাথে আপির পরিচয় করিয়ে দিলেন আব্বু।তারপর সবাইকে বিদায় জানিয়ে আরমান বেরিয়ে গেলেন।এবার অবশ্য আমার সাথে কোনো কথাই বলেন নি উনি।তাতে কার কি?আমার কিছুই না!কিচ্ছু না!!!

আদিব আর রিয়া একটা রেস্ট্রুরেন্টে সামনাসামনি বসে আছে।চাকরিতে জয়েন করার পর বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে।সাথে ওদের সম্পর্কটাও অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।এরমধ্যে বিজনেস পার্পোজে আদিবের সাথে বেশ কয়েকবার বেরিয়েছেও রিয়া।অফিসে মাহির স্যার,বাইরে বন্ধুর মতো লোকটা তার কাছে।অফিসের বাইরেও দেখা হয়েছে ওদের।রিয়া স্বাভাবিকভাবেই বসে আছে আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।আদিব চুপচাপ।স্থির দৃষ্টিতে রিয়ার হাতের ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে ও।বেশ কিছুক্ষন পর রিয়া বলে উঠলো,

-স্যার,এখানে ক্লায়েন্টরা এখনো পৌছালো না কেনো?

চোখ সরিয়ে আদিব বললো,

-ক্লায়েন্টস্ নেই রিয়া।

রিয়া মজার ছলেই বললো,

-তাহলে আপনি বলছেন,অফিসটাইমে আড্ডা দিতে এসেছি?এজ আ ফ্রেন্ড?

আদিব মৃদ্যু হাসলো।এই মেয়েটা ওর সাথে এভাবে কোনোদিন কথা বলবে তা কিছুদিন আগে কল্পনাও করতে পারতো না ও।আর আজ?হয়তো আদিবের ব্যবহারের জন্যই এমনটা হয়েছে।কিন্তু যা ও এখন বলতে চলেছে তার পরিনাম কি?এটুকো খোলাখুলিভাবে কথা বলতে পারছে বলেই নিজের মধ্যে কথাগুলো বলার সাহস সঞ্চার করতে পেরেছে ও।নাহ্,যা হয় হবে।সম্পর্কে ক্লিয়ারেন্সটাই আগে দরকার,এমনটাই আদিবের বিশ্বাস।তাই সত্যিটা জানিয়ে বাস্তবটা মেনে নেবে ও।রিয়া একটু ঝুকে বললো,

-মাহির,কিছু বলবেন আপনি?

আদিব জোরে একটা শ্বাস নিলো।বললো,

-রিয়া আমি চাই আমার সম্পুর্ন কথা শুনে তারপর তুমি রিয়্যাক্ট করো।

-ইয়াহ্।বলুন।

-আমি অনাথ রিয়া।

রিয়া আতকে উঠলো কিছুটা।হুট করে আদিবের এমন কথা একদমই আশা করেনি ও।আদিব বলতে লাগলো,

-জামান ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক আফরোজ জামান আর আমার বাবা বিজনেস পার্টনার ছিলেন।আমি যখন খুব ছোট,একটা কার এক্সিডেন্টে বাবা মা দুজনকেই হারাই।তখন থেকেই আমি আফরোজ আঙ্কেলের বাসায়।আত্মীয়স্বজন বলতে যারা ছিলো সবাই আব্বুর বিজনেসের জন্য আমাকে কাছে রাখতে চেয়েছিলো।আফরোজ আঙ্কেল সেটা টের পেয়ে যান,তাই আমাকে তার কাছেই রেখে দিয়েছিএেন।নিজের ছেলের থেকে কখনো কম ভাবেননি আমাকে।কোনোকিছুতে কমতি রাখেন ক আমার।তারই অবদানে আমি এই জামান ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি।উনি ছাড়া আমি কেউ না।

রিয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।যে লোকটা এতোটা হাসিখুশিভাবে চলাফেরা করে তার মনে এরকম একটা ট্রাজেডি লুকিয়ে থাকতে পারে ওর ধারনার বাইরে ছিলো।আদিব কিছুটা অস্থির হয়ে পরেছে।নিজেকে সামলে আবারো বললো,

-রিয়া,আমি চাই সবটার ক্লারিফিকেশন দিতে তোমাকে।তাই নিজের অনুভুতিটাও আর লুকাতে পারবো না তোমার কাছে।তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি।এখন যদি তুমি চাও এ সম্পর্কটা এগোক,তবেই আমি ভেবে দেখবো।নয়তো এও সম্পর্কটাকে নিয়ে আর দ্বিতীয়বার কিছু ভাববো না আমি।বাট ইউ ডোন্ট ওয়ারি,আমার এই কথার প্রভাব আমাদের সম্পর্কটা ছাড়া আর কোথাও পরবে না।না তোমার চাকরীজীবনে,না আমার ব্যাক্তিজীবনে।শুধু পার্থক্য এটাই,নিজেকে খুব ছোট মনে হবে আমার।তোমার সামনে আর আসতে পারবো না আর আমি।

রিয়া শুধু চুপচাপ দেখে চলেছে আদিবকে।রিয়ার নির্বাক হয়ে থাকা আদিবের কষ্টটাকে আরো যেনো বাড়িয়ে দিচ্ছে।আদিব পাশের চেয়ারে রাখা ওর ব্যাগটা থেকে একটা কাগজ বের করে টেবিলে রেখে বললো,

-যদি তোমার মনে হয় আমি তোমাকে পাশে পাবার যোগ্যতা রাখি,এটা নিয়ে যেও।আর নইলে,এটা এখানেই থাকুক।মুখে বলতে হবে না কিছু।আমি আসছি।

আদিব বেরিয়ে গেলো।রিয়া কোনোদিক না তাকিয়ে ওর চলে যাওয়াটা শেষ অবদি দেখলো।ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ রাখলো আদিবের রেখে যাওয়া কাগজটায়।উপরে বোল্ড হরফে কারিকলাম ভিটায় লেখাটা জ্বলজ্বল করছে।লোকটা তার সিভি রেখে গেছে ওর সামনে।

আজ আপিকে দেখতে আসবে।ওর মাহির স্যার।ভালো লাগছে ভাবতে,কারন মানুষটার বর্ননা ঠিক তেমন যেমনটা রিয়াপি চায়।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো শাড়িতে আপিই আমাকে সাজাচ্ছে,যেনো আমারই আজ বিয়ে।সক্কাল সক্কাল সবাই মিলে এ বাসায় চলে এসেছি।এসে দেখি আপি না সেজে শাড়িটা পরে অর্ধেকসাজে রেডি।আম্মু মাধবী আন্টির সাথে রান্নাঘরে ব্যস্ত।এসবের মধ্যেও ‘ রিয়া ওকে কানমলা দিয়ে শাড়ি পরিয়ে দিও ‘ বলতে একদমই ভুলে যায় নি।
রিজোয়ান,মাইশা ড্রয়িংয়েই বসে।কবির আঙ্কেল আর আব্বু একবার গেইট দেখছেন,তো একবার ঘরের টেবিলের কাগজটা বাকা হয়েছে কিনা,একদম সুচের মতো সবটা পারফেক্ট দেখাতে লেগে আছেন।এদিকে রুমে হাত উচিয়ে,এদিক ওদিক ঘুরে পুতুলের মতো শুধু শাড়ি পরানোটা দেখে চলেছি আমি।রিয়াপি শাড়ির আচলটা আমার কাধে দিয়ে বললো,

-ওমন মুখ বানিয়ে রেখেছো কেনো?

-কেসটা কি হলো?আমি কেনো শাড়ি পরলাম?

আপি ঠোট টিপে হেসে কুচিগুলো ঠিক করতে মেঝেয় বসে গেলো।কোমড়ে হাত গুজে অবলার মতো বললাম,

-তোমার এনগেইজমেন্ট,আমাকে শাড়ি পরানো নিয়ে তোড়জোড় কেনো?উফ্ বুজলাম নাহ্!

আপি উঠে দাড়িয়ে আমার সামনের কিছু চুলে টান দিলো।তারপর বুকে হাত গুজে চোখ ছোট করে তাকালো আমার দিকে।মেকি হাসি দিয়ে বললাম,

-ইয়ে মানে,আমি কিন্তু ওর টিকটক দেখি না।

এইরে!লুকাতে গিয়ে আরো ভালোমতোন ধরা পরে গেলাম।আপি একটু সিরিয়াসভাবে তাকালো।গাল ফোলানোর সাথে সাথেই ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,

-ইউ নো?তুমি একটা পাগল!আস্ত একটা পাগলকে ভালোবাসে আর…

আমার চাওনি পরিবর্তন ঘটলো।আপি কি আরমানের নাম নিতে যাচ্ছিলো?নাকি ভালোবাসা শুনে আমারই তার নাম মনে পরলো?আপি আটকে গিয়ে নিজেকে সামলে বললো,

-কেমন হয়েছে শাড়ি পরানো?কমফর্টেবল তো তুমি?কোথাও কোনো…

-কিছু বলছিলে তুমি আপি।

-কি?

-ভালোবাসা নিয়ে।

-বললাম আমরা সবাই আস্ত একটা পাগলি,মানে তোমাকে ভালোবাসি।

ছোট একটা শ্বাস বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে।আপি আমার থুতনি ধরে মুখটা উপরে তুলে বললো,

-কাউকে মিস করছো?

-সবাই কাছে আমার।তেমন কেউ নেই মিস করার।ইউ নো দ্যাট আপি।

আপি মৃদ্যু হাসলো।কিছু বললো না আর।ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিয়ে গিয়ে ওখানে রাখা কিছু গয়নার বাক্স দেখিয়ে বললো,

-কোনগুলো পছন্দ তোমার?

-সবগুলোই ভালো মানাবে তোমাকে।

-আমি তোমার জন্য বলেছি।

-আমিতো গয়না পরি না আপি।তুমি জানোই তো।

-আজ পরবে।বলো কোনগুলো নিবে?

-আপি এগুলো সব সোনার!

-তো উডবি শশুড়বাড়ি থেকে ইমিটেশন দিবে?

অবাক হয়ে বললাম,

-এগুলো ওই বাড়ি থেকে আসা?

-হুম।

-তাহলে আমাকে কেনো দিচ্ছো তুমি?

-ইচ্ছে হলো তাই।

-না আপি।এমনিতেও পরি না,তারউপর এগুলো তোমার শশুড়বাড়ি থেকে আসা।নেবো না আমি।তুমি বসো।আমি পরিয়ে দিচ্ছি তোমাকে।

-এতো পাকনামি করতে বলছে কে তোমাকে।চুপচাপ কোনটা কোনটা ভালোলাগে বলো।

-আপি এগুলো…

-পাখি!!!

রিয়াপির ছোট একটা ধমকে হাজারো কথা জমানো থাকে।এই কথাটাতে অধিকারবোধ আর সম্ভাব্য অভিমানের ইঙ্গিত ছিলো।মুচকি হেসে ওর হাত ধরে বললাম,

-বেশ।নিচ্ছি।

আপি হাসলো।আমি দম নিয়ে দুটো গয়না ওকে দেখিয়ে দিলাম।ও পরিয়ে সাজিয়ে দিলো আমাকে।তারপর নিজে নিজেই কিছুটা সাজগুজ করলো।আমরা বেডে বসেই আড্ডা দিচ্ছিলাম।আম্মু আর মাধবী আন্টি একপলক দরজা থেকে আমাদের দেখে জলভরা চোখে সরে গেলেন।যা আমার চোখ এড়ায়নি।কান্নাটা অবশ্যই আপির বিদায়ের কথা ভেবেই ছিলো।মনে পরতেই আপির কোলে মাথা রেখে নিজের কান্নাটাকে সংবরন করলাম।

ছেলেপক্ষ এসেছে!আম্মু দরজায় উকি দিয়ে বলে গেলো আমাদের।আমি এক্সাইটেড হয়ে লাফিয়ে খাট থেকে নামতে নামতে বললাম,

-আপি,বর এসেছ বর এসেছে!আজ তো জীজুর…

আপি হাত ধরে টেনে আবারো বসিয়ে দিলো আমাকে।বললো,

-কি করছো টা কি তুমি পাখি?বুদ্ধি কি সব লোপ পেলো তোমার?

-আরেহ!ধরে আছো কেনো?এ অবদি তোমার বরের একটা ছবি অবদি দেখাও নি এই বলে যে বারন আছে।আজও দেখতে দিবা না নাকি?

-দিবো তো।একসাথে বাইরে যাবো আমরা।টিল দেন,কিপ কোয়ায়েট।প্লিজ!

আমি চুপচাপ বসে রইলাম।কিছুটা সময় পর আম্মু আর মাধবী আন্টি এসে আপি আর আমাকে ধরে বললেন,

-চলো এখন।যেতে বলছে।

আপি লজ্জা লজ্জা পেয়ে নিচদিক তাকিয়ে উঠে দাড়ালো।আমি একপলক আম্মুর মুখের দিকে তাকালাম।কাধের উপর থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,

-আমাকে ধরছো কেনো?আমি আপিকে ধরে নিয়ে যাবো।

আম্মু হুংকার ছেড়ে বললো,

-তোর আব্বু বলেছে তোকে ধরে নিয়ে যেতে।তার মেয়ে তিড়িং বিড়িং লাফায় কিনা!

-কিইইই?তুমি আমাকে…

-ঝগড়া পরে করিস।আব্বুর কথামতো চুপচাপ চল।আজ তোর জন্য যেনো ঝামেলা না হয় মিথি খবরদার!নিচদিক তাকিয়ে যাবি একদম!আর হ্যাঁ,খবরদার যদি বেশি কথা বলেছিস তো!

আব্বুর কথা শুনে চুপই রইলাম।মাথা নিচু করে গুটিগুটি পায়ে ড্রয়িংরুমে পৌছালাম।একটা অল্পবয়সী মেয়ে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে বললো,

-ভাইয়ার চয়েজ আছে বলতে হবে।মাশাল্লাহ!ভাবি পেয়েছি একদম মনের মতো!

বিস্ময় নিয়ে তারদিকে মাথা তুলে তাকালাম।রিয়াপিও পাশে দাড়িয়ে।কিন্তু মেয়েটা তো কথাগুলো আমাকেই বললো।অস্বস্তি হচ্ছিলো প্রচুর।বাকা চোখে আগে আব্বুর দিকে তাকাতেই উনি ইশারায় বুঝালেন,শান্ত থাকো।করলামও তাই।আবারো মাথা নামিয়ে নিলাম।মেয়েটা রিয়াপির দিকে তাকিয়ে বললো,

-আপি,তুমিও তো কম জাদুকর নও?শেষে আদি…

-আরিশা,এইদিক আয়।

আরো একটা মেয়েলি গলা।আরিশা মেয়েটা চলে গেলো।রিয়াপিকে মাধবী আন্টি সোফায় বসিয়ে দিলেন।পাশে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকবো ভেবেছিলাম,কিন্তু আম্মু নিয়ে আমাকেও রিয়াপির পাশে বসিয়ে দিলো।সামনের সোফায় থাকা জোড়া কয়েক চোখের কথা ভাবতেই অস্থির লাগছিলো আমার।আপির হাতের দিকে তাকালাম।কতো সুন্দর স্বাভাবিকভাবে আলতো করে একটা আরেকটার উপর দিয়ে রাখা।নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি তা ঘেমে একাকার!কব্জি কচলাচ্ছি,তো তা থামার নামই নেই।খুব বুঝতে পারছি সামনের চোখগুলো পর্যবেক্ষন করে চলেছে আমাকে।কিন্তু কেনো?আমার সাথে এমনটা তো হওয়ার কথা নয়!

সহ্য করতে না পেরে একটা জোরে শ্বাস নিয়ে মাথা তুলে তাকালাম।তৎক্ষনাৎ দাড়িয়ে গেলাম আমি।আমার সামনে সাদা শার্ট আর নেভি ব্লু ব্লেজারে আরমান বসে।চেহারায় তার সেই বাকা হাসি।পাশেই আদিব ভাইয়া কোটসুট পরে আপির দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছেন।অবাকের স্বরে বললাম,

-আপনি?এখানে?

-সারপ্রাইজ!!!

কথাটা বলেই উনিও দাড়িয়ে আমার হাত তুলে তাতে আংটি পরিয়ে দিলেন।উপস্থিত সবাই হাসছে।আমি হা করে তাকিয়ে পরিবেশটা বোঝার চেষ্টা করে চলেছি।আব্বুর দিকে তাকিয়ে তার চেহারায় তৃপ্তির হাসি দেখে আর কিছুই মনে হয়নি আমার।হয়তো আরেকটা কারন আছে কোথাও।এমনটাই চেয়েছিলাম আমি!একইসাথে আদিব ভাইয়া আর রিয়াইির এনগেইজমেন্টটাও হয়ে গেলো সেদিন!বাসায় এসে আব্বু বলেছিলেন,

-না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সরি।কিন্তু ভুল সিদ্ধান্ত নেইনি আমি।তোমরা চিটাগাং থাকতেই আরমান সিভি মেইল করেছিলো আমাকে।তোমার মামাও বলেছিলো।আমিও খোজ লাগিয়েছি।সবদিকেই ভালো ছেলেটা।ভালো রাখবে তোমাকে।ও বাসার সবাই চায় তুমি ওখান থেকে স্টাডি কন্টিনিউ করো।বিয়ের ডেইট এখনো ঠিক হয়নি।এটা তোমার মত অনুসারেই হবে।যখন তুমি চাও।

আরমানের জায়গায় অন্য যে কেউ হলেও আব্বুকে প্রশ্ন করতাম না আমি।স্বীকার করে নিলাম সবটা।তবুও মেনে নেওয়ার কারনটা এখনো অস্পষ্ট আমার কাছে।কেনো তা নিজেও জানিনা।ভালোবাসা?আজও নিরোত্তর!!!

ভার্সিটি যেতে শুরু করেছি।দিনের রুটিনটা এখন এমন,ভার্সিটি,ক্লাস,স্যারের লেকচার,মাতার ভাষন,মিশু রিজোয়ানের দুষ্টুমি,রিয়াপির সাথে আড্ডা।সবটাই ঠিক আছে।স্বাভাবিক আছে।কিন্তু মনে হয় কোথাও যেনো কিছু নেই।এমনটা তো হওয়ার কথা নয়।বারবার একটু একা থাকলেই মনে হয় কেউ কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে যায়,যামিনী মনে পরছে আমার কথা?
অলস বিকালটাতে রেডিও ফুর্তি অন করে আম আটির ভেপু পড়ছিলাম।মিশু এসে জামা বের করতে করতে বললো,

-আপু,দাওয়াতে যাচ্ছি।বাসার বাইরে যাইয়ো না তুমি।

-তোরা যাচ্ছিস আমি বাইরে যাবো না মানে?আমিও যাবো।কোথায় দাওয়াত?কে দাওয়াত করলো?

-তোমার শশুড়!

-কিহ্?

-কেউনা।

-বাজে বকবি না মিশু।কই যাস তোরা?

-যেখানে আব্বু নিয়া যাইতাছে সেখানে।

ওকে কিছু বলা বেকার।আব্বুর কাছে এসে বললাম,

-কোথায় যাচ্ছেন আপনারা?

-এক আত্মীয় ডেকেছে দেখা করতে।এইতো,বাজারেরই রেস্ট্রুরেন্টে ।তুমি বাসায়ই থাকো।

-আমাকে নিবেন না?

-না।

আব্বুর এই ব্যবহারগুলো নিয়ে ইদানিং রাগ হয়।সবটা শুরু হয়েছে আরমান এ বাসায় আসার পর থেকে।চুপচাপ রুমে এসে দুম করে দরজা লাগিয়ে দিলাম।মিশুও বেরিয়ে গেছে।আম্মু গলা উচিয়ে বললো,

-মিথি,গেইট লাগায়া দিও।আমরা বেরোলাম।

রাগ নিয়ে রেডিও ফুর্তির সাউন্ড বারিয়ে দিলাম।দুমিনিট পরই দরজায় নক পরলো।নির্ঘাত মিশু এসেছে।দরজাটা খুলে কোনোদিক না তাকিয়ে আবারো বই হাত বিছানায় বসে গেলাম।সে মানুষটা ভিতরে ঢুকে আগে রেডিও অফ করে দিলো।রাগ আর বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই চোখ কপালে আমার।আরমান!উনি এখানে?কেনো এসেছেন?রুমে কেনো ঢুকলেন উনি?

মুচকি হেসে আরমান রুমের দরজা লক করে দিলেন।গরগর করে বলতে লাগলেন,

-শুনছেন রেডিও ফুর্তি এইট্টি এইট পয়েন্ট ও এফএম,আর শুরু হয়ে গেলো আমার স্পেশাল সেগমেন্ট মিথি আরমানের রোমান্স।আছি আমি ইশতিয়াক আরমান,আর সাথে আছে দ্যা মিথি!

কিছু না বলে চুপচাপ আলমারির পাশে থাকা হকিস্টিক হাত নিলাম।আরমান হেসে বললেন,

-ইন্ট্রো দিলাম রোমান্সের,তুমি হাতে হকিস্টিক নিয়ে দাড়াইলা?পাব্লিক মেনে নিবে?

হকিস্টিকটা উচিয়ে তার সামনে ধরে বললাম,

-কেনো এসেছেন?

আরমান দাত কেলিয়ে বললেন,

-বল্লাম তোহ!রোমাঞ্চ!

-আপনাকে তো…

স্টিকটা উঠানোর সাথে সাথে উনি কান ধরে বললেন,

-আচ্ছা আচ্ছা,সরি সরি।বাসার সব কই?

-বাইরে।

-কেনো?

-ইনভিটিশন আছে।

-তোমাকে নেয়নি কেনো?

-যাইনি তাই।

আরমান তার ঘাড় চুলকে বিরবিরিয়ে বললেন,

-তোমাকে তো ইনভাইট করিই নি।

-কিহ্?

-নাথিং।বলো,বাইরে ঘুরতে যাবা নাকি বাসাতেই…

-ইউ!বেরোন!বেরোন এই‌বাসা থেকে।

-খুব বাড় বেড়েছে বউটার।আমি কিন্তু এখন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত লাভার!হাতের আংটিটা দেখো!

চুপ রইলাম।উনি সবগুলো দাত বের করে বিছানা থেকে আমার মোবাইলটা নিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসতে বসতে বললেন,

-যাও বউ যাও,খাবার বানিয়ে আনো।

-রান্না জানিনা আমি!

-কি জানোটা কি তুমি?অবশ্য এমনটাই এক্সপেক্টেড!যে আমাকে ভালোবাসতে জানে না,সে কিই বা জানবে?আচ্ছা,এ কয়দিন আমার জন্য মন কেমন করে নি?

মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।আরমান কিছু বলতে যাবেন তখনই ফোনটা বেজে উঠলো আমার।রিয়াপির নাম্বার।কিন্তু এসময় ফোন কেনো করলো?আরমান লাউডস্পিকারে দিতেই আপি বললো,

-পাখি তুমি কই?

-বাসাতেই আপি,আমার সাথে।কেনো?

-আ্ আরমান,ত্ তুমি?

-তোতলাতে হবে না।বোনের কাছে বোনজামাই থাকা অস্বাভাবিক কিছু না।তাইনা?

-আ্ আঙ্কেল আন্টি?

-বাইরে গেছে সবাই।

আমি চেচিয়ে বললাম,

-আপি,তুমি আসো এ বাসায়।আমি…

আরমান আরো জোড়ে আপিকে বললেন,

-আপি,এসো না।আমি আছি।লজ্জা করবে।তোমারই!

ফোন কেটে ওটা সোফায় ছুড়ে মারলেন আরমান।আমার দিকে দুষ্টু হেসে এগোতে এগোতে বললেন,

-এ কয়দিন মিস করেছো তা স্বীকার না করার শাস্তি দিবো এবার!

চোখ বড়বড় করে তারদিকে তাকিয়ে পেছোতে লাগলাম।বাসায় কেউ নেই,মারপিট করার স্টিকটাও রুমে।থাকলেও মারপিট করতে পারতাম আমি?কিছুটা ভয় করছে।না।বেশ অনেকটাই ভয় করছে।কিছুটা পেছোতেই আরমানের ফোন বেজে উঠলো।আমার দিকে তাকিয়েই ফোন রিসিভ করে বললো,

-হ্যাঁ,বল!

…..

-কখন?

….

-আচ্ছা,আসছি।

ফোন পকেটে রেখে আমার কপালে হুট করে ঠোট ছোয়ালেন উনি।বললেন,

-ভালোবাসি বলার জন্য রেডি থেকো বউ!

উনি চলে গেলেন আর আমি শুধু ফ্রিজড্ হয়ে দাড়িয়ে রইলাম।আনমনে হেসে উঠলাম।লোকটা এই ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য এতো পাগলামি কেনো করে?এই আমি তো তার হয়েই আছি।কি আছে ওই একটা কথায়?

আরো দুটো দিন কেটে গেছে।এ দু দিনে আরমান একটাবারের জন্যও খোজ নেননি আমার।কিন্তু আমি?না চাইতেও ক্ষনে ক্ষনে তারই কথা ভেবে চলেছি।নিজের কাছে স্বীকার করতে বাধ্য হলাম,তাকে ভালোবাসি।তাইতো এমন মনে হয় আমার।মিস করি তাকে।ভেবে নিয়েছি,তার মতো করেই তাকে ভালোবাসি বলবো।

তার অনুপস্থিতিতে মনটা যে ভালো নেই তা আমি নিজেও বুঝতে পারছি আর আমার আশেপাশের লোকগুলোও।মানুষটা এমন কেনো করছে তাই বুঝে উঠতে পারছি না‌ শুধু।এ দু দিনে আপি বেশ কয়েকবার এ বাসায় এসেছে,গল্প করে,হাসি ঠাট্টা করে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে আমাকে।মৃদ্যু হেসে তাকে বুঝিয়েছি,সে সফল।ব্রেকফাস্ট পর ব্যালকনিতেই দাড়িয়ে ছিলাম।রিয়াপি হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকেই ডাক লাগালো,

-মিথি!!!

আপির গলা শুনে পিছন ফিরলাম।খুবই টেন্সড্ দেখাচ্ছে ওকে।হাপাচ্ছে ও।হাতে একটা নিউজপেপার টাইপ কিছু।ও দৌড়ে এসে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো আমাকে।

-ম্ মিথি!

আমি আলতোভাবে দুহাতে আপিকে জরিয়ে ধরলাম।

-কি হয়েছে আপি?

আপির শরীর কাপছে।এমনটা তো আমার হতো।যখন শুধুমাত্র দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পেতাম,আপিকে ওভাবেই জরিয়ে থাকতাম।

-বলো আপি,কি হয়েছে?

-ম্ মিথি,ইউ হ্যাভ টু বি স্ট্রং!

-আপি,কি হয়েছে বলবে তো?

রিয়াপি একহাত আমার গালে রেখে বললো,

-ইউ আর স্ট্রং রাইট?

আমি মাথা একদম আস্তে উপরেনিচে দোলালাম।আপি ছেড়ে দিলো আমাকে।নিজেকে সামলে চোয়াল শক্ত করে নিউজপেপারটা এগিয়ে দিলো আমার দিকে।কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে ওটা হাতে নিলাম।কিন্তু ফ্রন্টপেইজে বড়বড় করে লেখা হেডলাইনটা পড়ে পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো আমার।ধুপ করে মেঝেতে বসে পরলাম।

রিয়াপি হাটু গেরে সামনে বসে ডাকছে আমাকে,বুঝতে পারছি,ধরে ঝাকাচ্ছে আমাকে।কিন্তু কিছুই কানে যাচ্ছে না।মাথা পুরো ফাকা লাগছে।মনে হচ্ছে কেউ হৃদপিন্ডের স্পন্দনটাকে খামচে ধরে বন্ধ করে দিয়েছে।কাদতে চেয়েছিলাম হয়তো,কিন্তু চোখের পানি সায় দিলো না।একধ্যানে পেপারের ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।একরাশ হারানোর যন্ত্রনা আর ক্ষোভ মনের মধ্যে দামামা বাজিয়ে বলতে লাগলো,

‘ কেনো করলেন আরমান এমন?এভাবে কষ্ট দেওয়ার উপায় না করলেও পারতেন।আর যাই হোক,আপনার থেকে দুরুত্ব যে আমার সইবে না তা যখন বুঝলাম ঠিক তখনি দুরে সরে গেলেন আপনি?ভালোবাসি বলার সুযোগটুকো দিলেন না আমাকে?বললেন তো ভালোবাসি বলার জন্য রেডি হতে!তাহলে?আমি যখন বুঝবো ভালোবাসি,তখন আপনি থাকবেন না সে কথাটা কেনো রাখলেন আপনি?কেনো?কোথায় চলে গেলে আপনি আরমান?কোথায়??? ‘

#চলবে…