হৃদয় জুড়ে তার ছায়া পর্ব-২+৩

0
213

#হৃদয়_জুড়ে_তার_ছায়া
#পর্বঃ২
#আদওয়া_ইবশার

উ’ত্ত’প্ত দুপুর। অসহনীয় গরমে হাঁসফাঁস করছে মানব প্রাণ। সকালে ভার্সিটিতে এসেছিল পালক। রোদের তেজটা তখন সহনীয় ছিল। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে তাপমাত্রা বেড়েই যাচ্ছে। এমন অসহ্য রকম গরমে ক্লাসে টিকে থাকতে না পেরে ভার্সিটির পিছনের পুকুর পাড়ে এসে বসেছে পালক। পুকুরের টলটলে স্বচ্ছ পানিতে পা ডুবিয়ে আপন মনে ভেবে যাচ্ছে হৃদয় জমিনের সমস্তটা জুড়ে বসে থাকা নি’ষ্ঠু’র মানবের কথা। সেই সন্ধ্যার পর কেটে গেছে চারটা দিন। পা’ষা’ণ হৃদয়ের পুরুষটার আর কোনো খোঁজ পায়নি পালক। তার এক পাক্ষিক আকাশ সমান ভালোবাসার বিনিময়ে মানুষটা তাকে তিল পরিমাণ সম্মান’ও দেয়নি কোনো দিন। যতবার ভালোবাসার দাবি নিয়ে ঐ মানুষটার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে পালক।ঠিক ততবার তার পবিত্র ভালোবাসাকে তাচ্ছিল্যের সাথে অবহেলা করেছে মানুষটা। তবুও কেন ঐ নি’ষ্ঠু’র পুরুষটার জন্যই তার মনের ভিতর এতো অস্থিরতা? কেন কাঠিন্য মুখটা এক নজর দেখতে না পেলে এতো বেকুলতা সৃষ্টি হয় তার বুকের মাঝে? এর উত্তর জানা নেই পালকের। বেহায়া মনটা নিজের অজান্তেই কখন যে মানুষটাকে এতোটা ভালোবেসে ফেলল একটুও টের পায়নি সে।,

‘কি গো খালাম্মা! জামাই ম’রছে আজ কয়দিন?ভার্সিটিতে আইসা জামাই ম’রা’র শোক পালন করবেন ভালো কথা। একটু বিলাপ কইরা কান্দেন কুন্দেন।শুধু পেঁচার মতো মুখ কইরা থাকলেই তো পাবলিক বুঝবনা যে আপনি জামাই ম’রা’র শোকে গভীরভাবে শোকাহত ।’

হুট করে এমন অদ্ভুত কথা শুনে ভাবনা জগত থেকে বেড়িয়ে এলো পালক। তার থেকে কিছুটা দূরেই এক দল প্রাণোচ্ছল তরুণ-তরুণী বসে আছে। সেখান থেকেই কেউ একজন কথা গুলো বলেছে বুঝতে পেরে ভ্রু কুঁচকে তাদের দিকে তাকায় পালক। বিরক্তি ভাবে বলে,

‘খোঁচা মা’রা কথা ছাড়া তোদের মুখ দিয়ে কি কখনো কোনো ভালো কথা শোনা যাবেনা?’

‘ভুল কি বলছে আকাশ? তোর ভাব দেখে তো একটা দুধের শিশু’ও বলে দিবে তুই জামাই ম’রা’র শোকে আছিস। আর আমরা তোর ল্যাং’টা কালের বন্ধ হয়েও বলে দিতে পারবনা তোর দুঃখের কথা? এতো অপদার্থ বন্ধু এখনো হয়নি আমরা। চাপ নিস না তুই। বুঝতে পারছি অতি শোকে পাথর হয়ে চোখ দুটোও মরুভুমি হয়ে গেছে তোর। যার কারণে কাঁদতে পারছিস না।একটু পর আমরাই কেঁদেকুটে তোর শোক’টাকে পরিপূর্ণ করে দিব। বন্ধু হিসেবে বন্ধুর প্রতি একটা দায়িত্ব আছে না আমাদের!’

অবনীর কথা শেষ হতেই বন্ধু মহলের সবথেকে ছটফটে সদস্য রামিম বলে ওঠে,

‘আমি ভাই তোদের মেয়েদের মতো ঐসব ন্যাকা কান্না করতে পারবনা। তবে তোরা চাইলে অনেক বড় একটা মানবিক দায়িত্ব পালন করতে পারি।’

‘কি দায়িত্ব?’

উৎসুক কন্ঠে জানতে চাইল প্রিয়ন্তী। বাদ বাকী সকলেও তার মুখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একটু নড়েচড়ে বসে জবাব দিল রামিম,

‘আমাদের ভাবের রাণীর যদি গোপনে দুই-একটা আন্ডা বাচ্চাও থেকে থাকে। আমি তাদের বাপের দায়িত্বটা নিতে পারি। দয়ার শরীর আমার। চোখের সামনে প্রাণপ্রিয় বান্ধবীর এ’তি’ম বাচ্চা কাচ্চার কষ্ট দেখে সইতে পারবনা।’

রামিমের কথা শুনে মুখটাকে অসহায় করে ফেলল প্রীয়ন্তি। ব্যথিত কন্ঠে বলল,

‘পালক! আমি এইসব কি শুনতেছি? তুই গোপনে বিয়ে করে বি’ধ’বা হবার আগে বাচ্চা কাচ্চাও ডাউনলোড করে ফেলছিস? একবারও আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না? এই তোর বন্ধুত্ব? এই দিন দেখার জন্য আমরা তোর সাথে বন্ধুত্ব করছিলাম?’এতো বড় অ’ন্যা’য়টা করতে পারলি তুই আমাদের সাথে?

বুল ফুলিয়ে একটা নিশ্বাস ছাড়ল পালক। এদের সাথে এখানে আর এক মুহূর্ত থাকা যাবেনা। সব কয়টাকে হারে হারে চেনা আছে তার। যতক্ষণ পর্যন্ত মুখ দিয়ে আসল কথা উচ্চারণ না করবে ততক্ষণ পযর্ন্ত এভাবে খোঁচাতেই থাকবে। কাওকে কিছু না বলেই পাশ থেকে ব্যাগটা নিয়ে ওঠে হাঁটা ধরল পালক। রাস্তায় এসে রিকশা নিয়ে সোজা চলে গেল বাড়ির দিকে। পেছনে ফেলে গেল কিছু অবাক, বিস্ময়কর দৃষ্টি।

_________

রাত প্রায় ১ টা বাজতে চলেছে। ঘুম নেই পালকের চোখে। অশান্ত মনে বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করে ওঠে দাড়াল শোয়া থেকে। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল বারান্দার দিকে। গ্রিলের ফাঁকে হাত রেখে উদাস নয়নে তাকিয়ে রইল সামনের দিকে যতদূর চোখ যায়। ভরা পূর্ণিমার চাঁদ। চারিদিকে জোৎস্নার আলো থৈথৈ করছে। রূপালী আলোর ছটায় মনে হচ্ছে অদ্ভুত এক মায়ার জাল বুনে রেখেছে কেউ প্রকৃতিতে। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। পিনপতন নিরবতার জাল ছিড়ে মৃদুমন্দ বাতাসের শো শো শব্দ আর ঝিঝিপোকার ডাক ভেসে আসছে। সারাদিনের দাবাদহের পর এক টুকরো পরশ পাথরের ছোঁয়া নিয়ে এসেছে যেন এই রাতটা। দু-চোখ বন্ধ করে বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস টেনে নিল পালক। প্রকৃতির সবটুকু নির্মলতা যেন নিঃশ্বাসের সাথে নিয়ে নিতে চাইছে বুকের ভিতরে অশান্ত হৃদয়টাকে শান্ত করার নিমিত্তে। পূণরায় চোখ খুলে সামনের দিকে তাকাতেই একটা জায়গায় থমকে গেল পালকের দৃষ্টি জোড়া। বুকের ভিতরটা আচমকায় ছলকে উঠল অজানা এক ভয়ে। পালকদের বাড়িটা গাজীপুর শহর থেকে কিছুটা বাইরে নিরিবিলি গ্রামীণ পরিবেশের মাঝে। মাঝারি আকৃতির এক তলা একটা বাড়ি। সামনের দিকটাতে পাকা রাস্তায় দিনের বেলায় মানুষের পাশাপাশি টুকটাক গাড়ির চলাচল থাকলেও পিছন দিকটা সবসময় নিরব থাকে। গাছপালা দিয়ে ঘেরা কিছুটা জায়গা। সেই জায়গা টুকু পেরোলেই পালকদের পারিবারিক কবরস্থান। যেখানে এই মুহূর্তে চাঁদের আলোয় স্পষ্ট জ্বলজ্বল করছে এক ছায়া মূর্তি। প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পরবর্তীতে মনের মাঝে সাহস যুগিয়ে সেদিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় পালক। পেছন ঘুরে থাকাই মুখটা স্পষ্ট দেখা না গেলেও কয়েক মুহূর্তের মাঝেই ঠিকই বুঝে গেল পালক কে হতে পারে এই ছায়া মূর্তি। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে মানুষটাকে পর্যবেক্ষক করে সন্তর্পণে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। পা টিপে সাবধানে এগিয়ে গেল ছায়া মূর্তিটার ঠিক পেছনে।,

‘ মাঝ রাতে এভাবে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে থেকে মানুষকে ভয় দেখানোর কোনো মানে হয়? সব মানুষের হৃদয় তো আর কারো মতো পা’ষা’ন না যে, এমন একটা গাঁ ছমছমে দৃশ্য দেখেও কিছুই হবেনা। ভয়ের চোটে কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে এর দায়ভার কে নিবে?’

নৈঃশব্দের জাল ছিড়ে ঝঙ্কার তুললো পালকের রিনরিনে গলার স্বর। এমন একটা ভূতুড়ে পরিবেশে মাঝ রাতে হুট করে কোনো মেয়ের আওয়াজ শুনেও ভাবান্তর হলনা ছায়া মূর্তির। নির্বিকার ভাবেই সে দাঁড়িয়ে আছে এখনো। যথেষ্ট বিরক্ত হলো পালক। দিন দিন মানুষটার এমন নির্বিকার ভাব একদম নেওয়া যাচ্ছেনা। র’ক্তে, মাংসে গড়া একটা মানুষের এমন নির্লিপ্ত ভাব কেন থাকবে?,

‘আপনি কি যন্ত্রমানব? এমন অনুভূতিহীন আদও একটা মানুষ হতে পারে!’

‘অনুভূতিদের তো সেই চার বছর আগেই মাটি চাপা দিয়ে ফেলেছি। সেটা তোমার নিশ্চয়ই অজানা নই। তাহলে এমন অহেতুক প্রশ্ন করার মানে কি?’

মুহূর্তের মাঝেই হৃদয়টা কেঁপে ওঠল পালকের। চোখের তারাই ভেসে ওঠল কিছু বিবর্ণ সাদা-কালো অতিত। এক ফোটা জল গড়িয়ে পরল চোখের কোণ বেয়ে। জিবের ঢগায় শুকনো ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠল,

‘সময়ের সাথে সাথে আমরা সবাই তো স্বাভাবিক হতে পেরেছি। তাহলে আপনি কেন পারছেন না নাহিদ ভাই? কষ্ট কি আমাদের মাঝে নেই? আপনি কি একাই কষ্ট পাচ্ছেন? প্রিয় মানুষ হারানোর কষ্ট আমাদের’ও আছে। সেই কষ্টটাকে ছাপিয়ে জীবনে টিকে থাকতে হচ্ছে আমাদের। একটা মানুষের জন্য তো আর বাকি মানুষ গুলোকে আমরা কষ্টে রাখতে পারি না। কিন্তু আপনি সেটাই করছেন। সেই এক অতীত বুকে পুষে রেখে প্রতিনিয়ত নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন। সাথে আপনার আশেপাশের প্রতিটা মানুষকে কষ্টে রাখছেন। খুব তো বড় মুখ করে আমাকে বলেন, আমি স্বার্থপর। আমার ভালোবাসায় স্বার্থ লুকিয়ে আছে।আর আপনার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার নমুনা বুঝি এই? একজনকে ভালোবেসে তার শোক বুকে পোষণ করে বাকী মানুষকে কষ্ট দেওয়াটাকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দাবী করেন আপনি?’

নিঃশব্দে পালকের দিকে ঘুরে তাকাল নাহিদ। শান্ত চোখে তাকিয়ে জলদগম্ভীর কন্ঠে বলে,

‘তুমি’ই তো ঐদিন বলেছো, আমাকে ভালোবেসে না পেলে মৃ’ত্যু’কে আলিঙ্গন করতেও দুইবার ভাববে না। তাহলে আমি কিভাবে আস্তো এক ভালোবাসার সাগর হারিয়ে এই পৃথিবীর বুকে এখনো শ্বাস নিচ্ছি ভেবে দেখেছো একবার?’

কোনো উত্তর নেই পালকের কাছে। অসহায় মুখ করে শুধু ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে নাহিদের দিকে। বারকয়েক চোখের পলক ফেলে কান্নায় মিইয়ে আসা কন্ঠে জানতে চাইল,

‘ভালোবাসায় এতো কষ্ট জেনেও মানুষ কেন ভালোবাসে নাহিদ ভাই?’

বেদনামিশ্রীত অল্প হাসল নাহিদ। ঘাড় ঘুরিয়ে একটা ক’ব’রের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে থেমে থেমে জবাব দিল,

‘কারণ মানুষ কষ্ট পেতে ভালোবাসে। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি তাদের ঝোঁক একটু বেশিই থাকে সবসময়। আ’গু’নে পু’ড়ে কয়লা হবে জেনেও জলন্ত আ’গু’নে ঝাপ দেয়। পু’ড়ে ম’রে অনন্তকাল। দেহের মৃ’ত্যু না হয়ে হৃদয়ের মৃ’ত্যু হয় বারবার।’

নিরবে চোখের অশ্রু ঝরছে পালকের। অশ্রুসিক্ত চোখেই অপলক তাকিয়ে দেখে চলছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিবর্ণ হৃদয়ের মানুষটাকে। চোখ দুটি কেমন ভ’য়ং’কর লাল হয়ে আছে তার। চোখের পলক ফেললেই মনে হচ্ছে যেন টুপ করে ফোটায় ফোটায় র’ক্ত ঝরে পরবে। ভিন্ন দুজন মানুষের হৃদয়ের অনুভূতি গুলো যেন কিছু মুহূর্তের জন্য এক সুতোয় বাঁধা পরে গেছে। নিরব নৈসর্গিক রাতের ঐন্দ্রজালিক মুহূর্ত ছাপিয়ে অশান্ত কা’ল বৈশাখী ঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে দুটি মনেই। একে একে মানসপটে ভেসে উঠছে চার বছর আগের কিছু রঙিন স্মৃতি। যে স্মৃতির পাতায় যুক্ত ছিল আরও একটা প্রাণোচ্ছল কিশোরীর মুখাবয়ব। যে স্মৃতির ডায়েরির প্রথম কয়েক পাতা জুড়ে ছিল সুখের মিছিল। আর শেষে ছিল শোকের মাতম।

চলবে….

#হৃদয়_জুড়ে_তার_ছায়া
#পর্বঃ৩
#আদওয়া_ইবশার

পালক তখন চৌদ্দ বছরের এক চঞ্চল কিশোরী। মা-বাবার চোখের মণি ছিল পাপড়ি-পালক দুই বোন। পাপড়ি তখন সদ্য এইচএসসি পাশ করে ভার্সিটিতে পা দিয়েছে। আর পালক অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। রওশন আরা গাজীপুরের ছোট্ট বাড়িটাতে দুই মেয়েকে নিয়েই সুখে দিন পার করছিলেন। নজরুল সাহেব সৌদি প্রবাসী ছিল। তিন-চার বছর পর পর দেশে এসে স্ত্রী, সন্তানদের সাথে কয়েক মাস সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটিয়ে পূণরায় পাড়ি জমাতো জীবিকার তাগিদে দূর প্রবাসে। কোনো এক কারণে পাপড়ি সেদিন ভার্সিটিতে যায় নি। অলস দুপুরে বিছানায় শুয়ে ফেসবুক স্ক্রল করছিল। এর মাঝেই হঠাৎ হাতে থাকা ফোনটা কর্কশ শব্দে রিং হতে শুরু করে। অল্প একটু চমকায় পাপড়ি। নাম্বারটা কেমন চেনা চেনা মনে হচ্ছে তার কাছে। কিন্তু আননোন নাম্বার। পরিচিত সবার নাম্বারেই তো পাপড়ির ফোনে সেইভ করা। তাহলে এই আননোন নাম্বার এমন পরিচিত মনে হচ্ছে কেন তার কাছে? ভাবনার মাঝেই রিং হতে হতে কেটে যায় একবার। পূণরায় একই সুরে বেজে ওঠে ফোনটা। আর এক মুহূর্ত’ও দেরি করে না পাপড়ি। পরিচিত হোক বা অপরিচিত। রিসিভ করে কথা বললেই তো বোঝা যাবে। কথাটা ভেবেই দ্বিতীয় বার রিং হতেই রিসিভ করে কানে ঠেকায় ফোনটা। মুহূর্তের মাঝেই অপর পাশ থেকে ভেসে আসে এক পুরুষালী কন্ঠ। বিনয়ের সাথে সালাম দিয়ে ওঠে ব্যক্তিটা। ধীর কন্ঠে সালামের জবাব দিয়ে পাপড়ি জানতে চায়,

‘কে বলছেন?’

অপর পাশের পুরুষালী কন্ঠটা যেন এই প্রশ্নটা শুনতেই অপেক্ষা করছিল। তাড়াহুড়ো কন্ঠে বলে,

‘আপু আপনি আমাকে চিনবেন না। আসলে একটা মিস্টেক হয়ে গেছে। ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করি আমি। কালকেই ফাইনাল এক্সামের ফি জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট আমার,

আগুন্তকের এটুকু কথা শুনেই আর কিছুই বলার সুযোগ দেয় না পাপড়ি। বিরক্তি কন্ঠে বলে ওঠে,

‘ বুঝতে পেরেছি ভাই। কালকেই আপনার এক্সাম ফি জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট।কিন্তু আপনার কাছে এই মুহূর্তে কোনো টাকা নেই। খুবই বিপদে পরে আমাকে ফোন দিয়েছেন। এখন যদি আমি আপনাকে কিছু টাকা দিয়ে পরীক্ষাটা দেওয়ার সুযোগ করে দেই তাহলে আপনি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন আমার প্রতি। এই তো? ধা’ন্দা’বা’জী করার আর জায়গা পান না? কি ভেবেছেন আপনার ঐসব কথায় আমি গলে গিয়ে আপনার ফাঁ’দে পা দিয়ে আপনাকে আমি টাকা পাঠিয়ে দিব? মানুষকে ঠ’কি’য়ে খেতে আপনাদের খুব ভালো লাগে তাই না? শুনুন মিস্টার! সবাইকে ঠ’কা’তে পারলেও এই পাপড়িকে ঠকানো না এতোটাও সহজ না।’

পাপড়ির কথা শেষ হতেই ঐ পাশের পুরুষালী কন্ঠটা ধমকে ওঠল তাকে। জলদগম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠল,

‘এই মেয়ে চুপ! কাওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, তার সম্পর্কে কিছু না জেনে কিভাবে এতো গুলো কথা বলে দিতে পারেন আপনি? আপনাদের মেয়েদের এই বেশি বোঝা স্বভাবটা আজীবনেও যাবেনা। ম্যানার্সলেস মেয়ে কোথাকার।’

নিজের সম্পর্কে এতো গুলো বাজে মন্তব্য শুনে আর শুয়ে থাকতে পারলনা পাপড়ি। তড়িঘড়ি করে ওঠে বসল শোয়া থেকে। নাক-মুখ ফুলিয়ে ঝাঝালো কন্ঠে বলে,

‘চো’রে’র মায়ের বড় গলা তাই না? আপনার কূ’টি’ল বুদ্ধি ধরে ফেলেছি দেখে এখন আমাকেই উল্টো কথা শুনানো শুরু করে দিয়েছেন! আপনার মতো ধা’ন্দা’বাজ ছেলে তো ভাই আমি জীবনেও দেখি নি। ধা’ন্দা’বাজী করতে গিয়ে ধরা পরে ভিক্টিমকেই কথা শুনানো শুরু করে দিয়েছে! এই আপনার মা-বাবা নেই? আপনার এসব কী’র্তি’ক’লাপ সম্পর্কে জানে না তারা? না কি জেনেও শা’স’ন না করে এভাবে লে’লিয়ে দেয় মানুষকে মে’রে খেতে?’

‘আর একটা উল্টা পাল্টা কিছু উচ্চারণ করলে একেবারে জি’ভ টেনে ছি’ড়ে ফেলব বে’য়া’দব। এই মুহূর্তে যদি আপনাকে আমার সামনে পেতাম না, তাহলে থা’প’ড়িয়ে আ’ক্কেল দিয়ে দিতাম। বে’য়া’ক্কে’ল মেয়ে মানুষ কোথাকার। আমার কথা শেষ হবার আগে যদি আর একটা শব্দ উচ্চারণ করেন, খোদার কসম মাটির নিচে থাকলেও আপনাকে আমি সেখান থেকে খোঁজে বের করে এনে থা’প’ড়াতে থা’প’ড়াতে চাপার দাঁ’ত সব গুলো পেটের ভিতর ফেলব।’তখন দেখব এই চাপার জোর কোথায় থাকে।’

এবারের ধ’ম’কের জোরটা বোধহয় একটু বেশিই ছিল। যার কারণে সাহসী পাপড়ির সাহস গুলো সব কর্পূরের ন্যায় উড়ে গিয়ে মুখে কূলোপ এটে বসে রইল। ঐপাশের ব্যক্তিটাও কিছুক্ষণ নিরব রইল। হয়তো রাগটাকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টায় আছে। কিছুক্ষণ পার হতেই পূণরায় ভেসে এলো পুরুষালী কন্ঠটা,

‘আপনার বিকাশ একাউন্ট এ ত্রিশ হাজার টাকা ডুকেছে। চেক করলেই পেয়ে যাবেন। ঐ টাকাটা আমার ছোট ভাই আমার কাছে পাঠিয়েছিল ইভার্জেন্সিভাবে এক্সাম ফি জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু দূর্ভাগ্যবসত লাস্ট একটা ডিজিট ভুলের কারণে আপনার একাউন্টে চলে গেছে টাকাটা। আমি যে নাম্বার দিয়ে ফোন করেছি সেই নাম্বারটা নিশ্চয়ই খেয়াল করে দেখেছেন লাস্টের একটা ডিজিট ছাড়া পুরোটাই আপনার নাম্বারের সাথে মিল আছে। এবার কি ম্যাম মেহেরবানী করে আমার টাকাটা রিটার্ন দিবেন? আপনি তো অনেক বড় মনের মানুষ। কারো কথা সম্পূর্ণ না জেনেই ধা’ন্দা’বাজ বলে দিতে পারেন? ভালো মানুষ হয়ে নিশ্চয় এই ধা’ন্দা’বাজ অধমের টাকা মে’রে খাবেন না!’

পিনপতন নিরবতায় ছেয়ে গেল কিছু মুহূর্ত। পাপড়ি থম ধরে কিছুক্ষণ বসে থেকে কান থেকে ফোনটা নামিয়ে মেসেজ অপশনে গিয়ে ঠিকই দেখতে পেল তার একাউন্টে টাকা এসেছে। যে ছেলেটাকে সে এতোক্ষন এতোভাবে অপমান করল ঠ’কবা’জ ভেবে। মুহূর্তের মাঝেই তো আর সেই ছেলেটার কাছে হার মেনে নেওয়া যায় না। যতই হোক মেয়ে মানুষের ভয়ানক এক ধরনের ইগো থাকে। নিজে যতই দো”ষী হোক না কেন, সেই ইগোর কারণে তারা নিজের দোষটা সবসময় সহজে প্রকাশ করতে চায়না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে ধাতস্থ করে কাঠকাঠ গলায় পাপড়ি বলল,

‘দেখুন, নাম্বার মিলে গেছে ঠিক আছে। তাই বলে যে ঐ টাকা’টা আপনার কাছেই পাঠাতে গিয়ে আমার কাছে চলে এসেছে এটা প্রমাণ হয় না। এমনও তো হতে পারে, যে টাকা’টা ভুল করে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। আপনি তার থেকে কোনোভাবে কথাটা জেনে তার আগেই আমাকে ফোন করে টাকা’টা কৌশলে নিজের করে নিতে চাচ্ছেন। আমি এভাবে না জেনে শিওর না হয়ে টাকা দিতে পারবনা। যে নাম্বার থেকে টাকা এসেছে আপনি তাকে বলুন আমাকে ফোন করে বলার জন্য। আমি কনফার্ম হয়ে ঐ নাম্বারেই পাঠিয়ে দিব।’

ফোনের ঐ পাশের ব্যক্তি আর কিছুই বললনা। চুপচাপ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল। এমন কান্ডে পাপড়ি কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল। ভেবে নিল তার কথায় ঠিক। ছেলেটা নিশ্চয়ই ধা’ন্দা’বাজ। নইলে কি আর প্রমাণ ছাড়া টাকা দিবেনা বলতেই লোকটা এভাবে কল কেটে দিবে? ভেবেই পাপড়ির মিইয়ে আসা রাগটা পূণরায় তরতর করে বেড়ে গেল। কত বড় অ’স’ভ্য ছেলে! নিজেই এক চি’টা’র হয়ে পাপড়িকে এতো গুলো কথা শুনিয়ে দিল। এখন তো ইচ্ছে করছে ছেলেটার কথা মতো পাপড়ি নিজেই তাকে মাটির নিচ থেকে হলেও খোঁজে বের করে ঠাস ঠুস দুই গালে দুইটা থা’প্প’ড় লাগিয়ে আ’ক্কে’ল আর বে’য়া’ক্কে’লের হিসেবটা ভালো করে বুঝিয়ে দিতে। পাপড়ির ভাবনার মাঝেই পূণরায় ফোনটা বেজে ওঠল। ভেবেছিল ঐ ছেলে আবারও ফোন দিয়েছে বুঝি। কিন্তু নাম্বার দেখে বুঝল আগের নাম্বার থেকে কলটা আসেনি। কিছুক্ষণ নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে থেকে রিসিভ করে কানে ঠেকাতেই অপর প্রান্তের ব্যক্তির কথা শুনে বুঝলো এটাই সেই নাম্বার। যেটা থেকে তার একাউন্টে টাকা এসেছিল। লোকটা অতিশয় বিনয়ের সাথে বলে,

‘আপু আমার নাম্বার থেকে ভুল করে আপনার একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। একটু আগে এক ভাই আপনাকে ফোন করেছিল ওনার একাউন্টেই টাকা’টা পাঠাতে চেয়েছিলাম। লাস্ট ডিজিট তাড়াহুড়োয় ভুল করে এমন একটা সিচুয়েশন তৈরী হয়ে গেছে। দয়া করে টাকা’টা আপনি ঐ নাম্বারটাতে রিটার্ন দিয়ে দিবেন প্লিজ?’

হচ্ছে টা কি এসব পাপড়ির সাথে! যেই ছেলেটাকে খা’রা’প ভাবতে শুরু করে ওমনি তার ভাবনা সব ভুল প্রমাণিত হয়ে যায়। সব কিছুই এমন উল্টা পাল্টা হচ্ছে কেন তার।? বেচারা ভালো ছেলেটাকে নিয়ে শুধু শুধু এতো গুলো বা’জে মন্তব্য করে ফেলল। ঠিকই বলেছে ছেলেটা। আসলেই সে একটা বে’য়া’ক্ক’ল। মনে মনে নিজেই নিজেকে কতক্ষণ গা’লি দিয়ে নিল। এরপর ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তিটাকে নরম স্বরে বলল,

‘জ্বি ভাইয়া, আমি বুঝতে পেরেছি। আর কিছুই বলতে হবেনা।টাকা’টা এক্ষুণি পাঠিয়ে দিচ্ছি।’

উত্তরে ছেলেটা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করল। আর এক মুহূর্ত সময় ও ন’ষ্ট করলনা পাপড়ি। সাথে সাথেই টাকা’টা পাঠিয়ে দিল ঐ নাম্বারে। বুক ফুলিয়ে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে ধাপস করে শুয়ে পরল বিছানায়। হাবিজাবি ভাবতে ভাবতেই একসময় তলিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে।

প্রকৃতিতে তখন সাজের বেলা। একটু পরেই স্ব-স্বরে কাছের দূরের সব মসজিদ গুলো থেকে সুমধুর কন্ঠে আজানের ধ্বণী ভেসে আসবে। তখনও পাপড়ি ঘুম থেকে ওঠেনি। অথচ পালককে বলেছিল বিকেলে তারা হাঁটতে বের হবে। দু-বোন মনের অনন্দে ঘুরেফিরে মোড়ের আইয়ুব আলীর দোকান থেকে ফুচকা খেয়ে সন্ধ্যায় বাসাই ফিরবে। বোনটা তার এতো সুন্দর একটা প্ল্যানে জল ঢেলে এখনো ঘুমাচ্ছে। বিষয়টা কিছুতেই মানতে পারছেনা পালক। মায়ের ভয়ে বোনকে ডেকে তুলতেও পারছেনা। রওশন আরা বারবার শতর্ক বাণী ছুড়ে দিয়েছে তার দিকে। বোনকে যেন একদম কাঁচা ঘুম থেকে ডেকে না তুলে। এভাবে হুটহাট ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তুললে ব্রে’ইন এর ক্ষতি হতে পারে। তার উপর পালকের কোনো কিছুতেই ধীরস্থির বলে কোনো শব্দ নেই। যা করবে সব কিছুই তাড়াহুড়ো। স্বাভাবিক একটা কথা বলতে গেলেও তার সেই কথাটা চি’ৎ’কা’রের মতো শোনায়। দেখা যাবে পাপড়িকে ডাকতে এসে ঘুমন্ত মেয়েটার মাথার বারোটা বাজিয়ে দিবে এক চি’ৎ’কা’রে। সন্ধার জন্য হালকা নাস্তার ব্যবস্থা করছেন রওশন আরা। ঝটপট হাতে মোগলাই বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর পর পালক রান্নাঘরের দরজায় এসে ঘ্যা’ন’ঘ্যা’ন করে যাচ্ছে বোনকে ডেকে তোলার অনুমতি নেওয়ার জন্য। বিরক্ত হয়ে অবশেষে রওশন আরা অনুমতি দিলেন। সাথে এ’ও বলে দিলেন ধীরে ধীরে যেন ডেকে তুলে। তার চি’ৎ’কা’র চে’চা’মে’চির আওয়াজ শুনলেই মা’ইর একটাও মাটিতে পরবেনা। মায়ের শা’সা’নো স্বরে পালক বাধ্য মেয়ের মতো সম্মতি জানিয়ে মনে মনে আনন্দে লাফঝাপ করতে করতে বোনের রুমের দিকে যায়। মাথায় মায়ের কথা স্বরণে রেখেই পাপড়ির মাথার কাছে বসে নিচু কন্ঠে ডাকতে থাকে। দুই-তিনবার ডাকতেই ঘুম ছুটে যায় পাপড়ির। মাথার কাছে দূরন্ত বোনটাকে শান্ত হয়ে বসে থেকে তাকে ডাকতে দেখে শুয়া অবস্থায় ঘুম জড়ানো কন্ঠে জানতে চায়,

‘ব্যাপার কি? এতো ভদ্র সেজে আহ্লাদী স্বরে ডাকছিস যে আমায়! আবার কোন কে’লে’ঙ্কা’রি বাধিয়ে আমার পিছনে লুকাতে এসেছিস?’

সাথে সাথেই পালকের চেহারার নমনীয় ভাবটা মুছে গেল। চোখ পাকিয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে চি’ৎ’কা’র করতে গিয়েও মায়ের কথা ভেবে কন্ঠ কিছুটা খাঁদে নামিয়ে চি’বিয়ে চি’বিয়ে বলল,

‘কে’লে’ঙ্কারি আমি না তুমি বাধিয়েছো। দুপুরে কি বলেছিলে মনে নেই? বিকেলে আমাকে নিয়ে বাইরে যাবার কথা বলে এখনো ম’রা’র মতো ঘুমাচ্ছো। কয়টা বাজে দেখেছো তুমি? আজকে যদি আমি বাইরে যেতে না পারি তোমার খবর আছে বলে দিলাম। রাতের দশটা বাজলেও আমাকে নিয়ে বের হতে হবে। ফুচকা খাওয়ার কথা কেন বলেছিলে যখন নিয়েই যাবেনা? আজকে আমার পেটে ফুচকা না পরলে একদম ম’রে যাব। তার জন্য কিন্তু দায়ী থাকবে তুমি।’

ছোট বোনের এমন বে’খা’প্পা কথায় বিরক্তিতে চোখ-মুখ ভিষন ভাবে কুঁচকে নিল পাপড়ি। শোয়া থেকে ওঠে বসে বলল,

‘তোর এসব আজাইরা কথাবার্তা কবে বন্ধ করবি বল তো! দিন দিন যত বড় হচ্ছিস। বুদ্ধি তোর ততই হাটুর নিচে নামছে। তোর মতো বয়সের মেয়েরা বিয়ে করে বাচ্চা-কাচ্চার মা’ও হয়ে যাচ্ছে। আর তোর এখনো বাচ্চাদের মতো স্বভাব গেল না। শুনেছিস কখনো ফুচকা খেতে না পেরে কেউ ম’রে গেছে? এমন লজিকহীন কথাবার্তা কিভাবে বলিস?’

‘প্রথমত তোমার আগে আমার বিয়ের সানাই বাজবেনা। সো এই বয়সে বিয়ে আর বাচ্চা-কাচ্চা হবার প্রশ্নই আসেনা। দ্বিতীয়ত অবশ্যই আমি বাচ্চা। আমার বাবা-মায়ের একমাত্র ছোট মেয়ে আমি। তোমার একমাত্র ছোট বোন আমি। দেখো না এখনো আম্মুর বান্ধবী গুলো মাঝে মাঝে ফোন করে আম্মুকে জিজ্ঞেস করে ‘তোর বাচ্চা গুলো কেমন আছে’! তাছাড়া আব্বু নিজেও এখনো ফোন করেই আমার কথা জানতে চেয়ে বলবে ‘আমার ছোট বাচ্চাটা কি করে’। সুতরাং সব দিক বিবেচনা করে এটাই প্রমাণিত হয় যে আমি বাচ্চা। আর বাচ্চা বলেই এখনো বাচ্চাদের মতো কথা বলি। তবুও তোমার মতো লজিকহীন কথাবার্তা বলিনা। যেটাই বলি অবশ্যই একটা না একটা লজিক দেখিয়েই বলি। কিন্তু তুমি আমাকে যে কথা গুলো বললে তার কোনো ভিত্তি আছে? অযথা আমার মতো বাচ্চা একটা মেয়েকে বাচ্চার মা বানানোর চিন্তা পযর্ন্ত করে ফেললে।’

শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বোনের সব গুলো কথা শুনে গেল পাপড়ি। বিপরীতে নিজে থেকে আর কিছুই বলতে গেল না। কারণ সে খুব ভালো করেই জানে। এখন এই মেয়ের সাথে কথা বলতে গেলেই এমন উ’দ্ভ’ট হাজারটা যুক্তি দেখিয়ে কথা বাড়াতেই থাকবে। ফলস্বরূপ বাইরে যাওয়া হবেনা আর। পরবর্তীতে যদি রাতের একটা বাজেও মনে পরে তার বোন তাকে কথা দিয়েও ঘুরতে নিয়ে যায়নি। তখন সেই মাঝ রাতেই মাথায় আবার কি থেকে কি চেপে বসে সেটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। বোনের স্বভাব সম্পর্কে তার খুব ভালো করেই জানা আছে। এখনো বাচ্চাদের মতো লাফালাফি করা, চি’ৎকা’য করে কান্না করা স্বভাব পুরোটাই রয়ে গেছে পালকের। মাঝে মাঝে ভেবে পায় না পাপড়ি। তার মায়ের মতো এতো শান্ত একটা মানুষের এমন অশান্ত ঝ’ড়ে’র মতো মেয়ে কিভাবে হতে পারে। আড়মোড়া ভেঙে বালিশের ফাঁক থেকে ফোনটা নিয়ে সময় দেখতে গিয়ে লক স্ক্রীনে ভেসে থাকা নটিফিকেশন চোখে পরতেই অবাকের তাড়নায় ঘুম ঘুম ভাবটা মুহূর্তের মাঝেই উড়ে গেল পাপড়ির। বেমালুম সব কিছু ভুলে গিয়ে ড্যাবড্যাব করে বড় বড় চোখে তাকিয়ে রইল ফোনের দিকে।

চলবে……