হৃদয়ের ছোঁয়া পর্ব-০৫

0
289

#পর্ব৫
#হৃদয়ের_ছোঁয়া
#অর্ষা_আওরাত

শীতের রাত্রের মধ্যেও ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে সোহা! হৃদপিন্ড কেমন দ্রুত চলছে। ভয়ের চোটে কিছু বলতে পারছে না সামাদকে। ওদিকে সামাদ সোহার উত্তরের অপেক্ষায় আছে। সোহা মাথা নিচু করে আছে। সামাদ তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সোহার দিকে। রাগান্বিত স্বরে সোহাকে বলে ওঠলো,

–“তুমি কি কিছু বলবে সোহা? নাকি আমি চলে যাবো এখান থেকে? আর এটাও মনে রেখো এখান থেকে গেলে আমি একবারের জন্য নয়। তোমার জীবন থেকেই সারাজীবন এর জন্য চলে যাবো। এবার কি তুমি কিছু বলবে? নাকি আমি যাচ্ছি?”

সোহার এবার টনক নড়ে ওঠলো! সামাদ চলে গেলে তার কি হবে? সামাদকে পাবার জন্যইতো তার এতোকিছু করা। মাথা তুলে ঘাড় উঁচু করে এক পলক সামাদের দিকে তার করুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। ছোঁয়ার করুন দৃষ্টি দেখেও সামাদের পাষান হৃদপিণ্ড নরম হলো না! সে কঠোর দৃষ্টি নিয়েই সোহার দিকে তাকিয়ে রয়েছে! সোহা উপায় না পেয়ে বলে ওঠলো,

–“তুমি একদম এসব বলবা না আর একবারের জন্যও। তোমার কথা মতো তো আমি সবকিছুই করেছি বলো? আপুর বিয়েতে আপুকে কিডন্যাপ করতে সাহায্য করেছি তোমার কথায়। জমজ হবার সুযোগ নিয়ে আপুর জায়গায় বিয়েতেও বসেছিলাম। এ সবকিছুই তো আমি করেছি শুধুমাত্র তোমার জন্য। তোমাকে ভালোবাসি বলে! কিন্তু তুমি? তুমি এসব বলছো কেনো বলতো?”

–“এসব বললে তো হবে না সোহা। আমি যা করতে চেয়েছিলাম সেটা তো হয়নি না? তাই বাধ্য হয়েই আমাকে এখন এসব বলতে হচ্ছে।”

এবার সোহার চোখেমুখে রাগের আভাস দেখা গেলো! রাগান্বিত স্বরে সোহা সামাদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠলো,

–“তুমি কি চাইছো সেটা কি আদৌও নিজে জানো সামাদ? তুমি আমাকে বলেছিলে তোমার কথা মতন কাজ করলে আপুর সঙ্গে হৃদয় ভাইয়ার বিয়েটা ভেঙে যাবে আর তখনি তুমি আমাকে বিয়ে করবে ওই বিয়ের আসরে। আর বলেছিলে যে আমাদের বিয়ের পরেই তুমি আপুকে ছেড়ে দিবে তারপর আপু আর হৃদয় ভাইয়ার বিয়ে হয়ে যাবে। প্রথমে আমি রাজি হয়নি তোমার কথায় কিন্তু যখনি তুমি বললে যে এখন যদি এসব কিছু না করতে পারি তাহলে তোমার সাথে আমার বিয়েটা হবে না কোনেদিনও। তখনি আমি বাধ্য হয়ে এরকম ঘৃন্য একটা কাজ করি নিজের আপুর সাথে শুধুমাত্র তোমাকে পাবার জন্য। জানো আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম যখন কাজী কবুল বলতে বলছিলো তখন যদি আপু না আসতো আমিই সব সত্যি বলে দিতাম। আর এখন এতোকিছু করার পরেও তুমি এইসব বলছো আমাকে?”

অবস্থা বেগতিক দেখে সোহাকে সামলানোর জন্য সামাদ বললো,

–“আমি তো তোমাকে বললামই আমার এইসব করার পিছনে একটাই কারন যে আমি তোমাকে ভালোবাসি সোহা! তোমাকে অতি শীঘ্রই নিজের করে নিতে চাইছিলাম। কিন্তু বাবা বলছিলো হৃদয়ের বিয়ের পরেই আমাকে অফিসের কাজের জন্য অনেক মাস বাহিরে যেতে হবে আর তারপরে এসে বিয়ে করবো। কিন্তু আমার পক্ষে তোমাকে ছেড়ে এতোদিন থাকা সম্ভব ছিলো না তাই তো আমি এতোকিছু করলাম। আর তোমাকে বোঝানোর পরেও যখন তুমি বুঝলে না তখন বাধ্য হলাম তোমাকে বলতে যে তুমি এই কাজটা না করলে তোমাকে বিয়ে করবো না। হলোও ঠিক তাই তোমাকে বাধ্য করেছিলাম বলেই তুমি কিন্তু রাজি হলে। কিন্তু তীরে এসে তরী ডুবেছে সোহা! এতোকিছু করেও কোনো কাজ হলো না। সেই তো হৃদয় আর ছোঁয়ার বিয়ে হয়ে গেলো।”

সোহা এবার শান্ত হলো। নির্মল চোখে একবার সামাদকে পরখ করে শান্ত সুরে বলে ওঠলো,

–“তুমি চিন্তা করো না সামাদ। তুমি কাজে যাও বাহিরে। আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।”

সামাদ সোহার উল্টো দিক ফিরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ। হয়তো কোনো কিছুর চিন্তা করছে। অতঃপর কিয়ৎক্ষন পূর্বে হাসিমুখ নিয়ে সোহার দিকে ফিরে বললো,

–“ঠিকআছে এখন আর কোনো আপত্তি নেই আমার। তবে একটা কথা মাথায় রেখো সোহা এসবের কোনোকিছু যাতে কেউ ঘুনাক্ষরেও টের না পায় বুঝেছো?”

সোহা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ নামক সম্মোধন জানিয়ে চলে গেলো ছাঁদ থেকে। সোহা যাবার পরপরই সামাদ ঠিক যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই ছাঁদ থেকে নেমে সোহাদের বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে ফোন লাগালো। অপর ব্যক্তি হয়তো ফোন রিসিভ করেছে। সামাদ কানে ফোন গুঁজে বলতে লাগলো,

–“তুমি চিন্তা করো না। আমি সোহাকে সব বুঝিয়ে বলেছি ও বরাবরের মতনই আমার কথায় বুদ্ধু বনেছে। বিশ্বাস করে নিয়েছে যে আমি সত্যিই ওকে ভালোবেসে ওকে পাবার জন্যই ওর বোনের বিয়েতে ওকে কনে সেজে বসিয়েছিলাম! কিন্তু আসলে যে কোন উদ্দেশ্য ওকে বউ সাজিয়ে বসতে বলেছিলাম সেটা এই সোহা কিছু টের পায়নি! আপাততো ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ব্যাপারটা ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছি। এখন আর সোহা মুখ খুলবে না। আর ছোঁয়া যে কিছু বলবে না সেটা আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম কারন আমি তো আর ছোঁয়াকে অল্পদিন হয়নি চিনি। আমি খুব ভালো করেই জানতাম যে ছোঁয়া যদি বুঝেও যায় আমিই ওকে কিডন্যাপ করিয়েছি তাহলেও ও কাউকে কিছু বলতে পারবে না কারন বলার জন্য কোনো প্রমানই রাখিনি আমি আশেপাশে। ও ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলো প্রমান ছাড়া মুখ খুললে ও নিজেই সবার সামনে দোষী হবে তাই আর কোনো কিছু বলে নি। আর তারপরেও সবচেয়ে বড়ো কথা হলো ছোঁয়াকে তো আমি কখনোই জানতে দিই নি যে হৃদয়ের আপন ভাই আসলে আমি। সময় মতন সবটা আড়াল করে গেছি ওর কাছ থেকে। সবার মতনই ছোঁয়াও জানতো হৃদয়ের ভাই আছে সে দূরে থাকে অফিসের কাজের জন্য। তাই যদি এখনোও প্রমান ছাড়া মুখ খোলার চেষ্টা করে তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই সকলের মনে প্রশ্ন ওঠবে যে সামাদের সাথে ছোঁয়ার শত্রুতা কি? তাই এদিক দিয়ে তুমি নিশ্চিত থাকো ছোঁয়া কখনোই কিছু বলবে না কাউকে আর সোহা? ও কে’তো শুধু ভালোবাসি বললেই সব মেনে নেয় বোকার মতন! এখন আপাততো নিশ্চিত থাকো তুমি কোনো বিপদ নেই আমাদের দু’জনের। তবে হ্যাঁ এই দুর্দান্ত বুদ্ধি টা কিন্তু তুমিই আমাকে দিয়েছিলে! মানতে হবে তোমার মাথা দুষ্টু বুদ্ধিকে ভরা একদম।”

—অপর পাশে ফোনে থাকা ব্যক্তিটির কথা অনুসারে সামাদও বলে ওঠলো,

–“তুমি চিন্তা করো না তো। এখন আর সোহাকে দিয়ে আমাদের বিশেষ কোনো কাজই হবে না। যা করার আড়ালে থেকে আমিই করে যাবো।”

ফোনে থাকা ব্যাক্তিটির সাথে কথা বলা শেষ করে আপন মনে সিগারেট টানছে আর খোলা মাঠ ধরে হেঁটে যাচ্ছে সামাদ। উদ্দেশ্য এখন মনে প্রানে ছোঁয়ার ক্ষতি করা
~~~~~~~~~~~~~~~~~
সকাল হয়ে গিয়েছে। ভোরের রক্তিম আভা জানলা দিয়ে ঘরে ঢুকেছে। আজানের কিয়ৎক্ষন পূর্বেই ঘুম ভেঙে যায় ছোঁয়ার। চোখ আটকে যায় তারই পাশে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত মুখশ্রীর মানুষটির উপর! চোখ বুঝে আপন মে ঘুমাচ্ছে কতো সুন্দর করে তার প্রিয় মানুষটি! এখন শুধু, শুধুই প্রিয় মানুষ নয় এখন সেই প্রিয় মানুষটি তার স্বামীও বটে। হৃদয়ের ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে কতোক্ষণব্যাপী তাকিয়ে রইলো ছোঁয়া! হৃদয়কে দেখলেই তার মনে পড়ে যাচ্ছে কালকে রাত্রের কথা। কাল রাত্রিবেলা তাদের দু’জনের ভালোবাসা পূর্নতা লাভ করেছে ভাবতেই হৃদয়েল ললাটে এক গভীর পরশ একে দিলো ছোঁয়া। যেই হৃদয় কে ছেড়ে ওঠতে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তেই ছোঁয়াকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো হৃদয়! ছোঁয়া হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে হৃদয়ের দিকে! মস্তিষ্কে তকন একটাই কথা বাজছে মানুষটি তো ঘুমাচ্ছিলো তাহলে? ছোঁয়ার ভাবনার মাঝেই হৃদয় বলে ওঠলো,

–“আমাকে চুপিচুপি আদর করে চলে যাবে আর নিজে আদর থেকে বঞ্চিত হবে কেনো? তুমিও যেমন আমাকে কতো সুন্দর করে আদর করে দিচ্ছিলে? এবার তোমার পালা আসো তোমাকেও তোমার পাওনা টুকু বুঝিয়ে দিই?”

ছোঁয়ার বুঝতে বাকি রইলো না হৃদয় অনেকক্ষন আগেই ঘুম থেকে ওঠে গিয়েছিলো। ছোঁয়াকে লজ্জায় ফেলবে বলে চোখ বুঝে ছিলো শুধু। হৃদয়ের কথা বলা শেষ হতেই ছোঁয়া বলে ওঠলো,

–“তা অবশ্য ঠিকই বলেছো তুমি। আমাকে আমার পাওনা বুঝিয়ে দাও এবার?”

হৃদয় বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রয়েছে ছোঁয়ার দিকে! ছোঁয়া এসব বলছে তাকে? যেই না হৃদয় ছোঁয়াকে ধরার জন্য হাত বাড়িয়েছিলো ওমনি তখনি ছোঁয়া হৃদয়কে আচমকা ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে ওঠে চলে গেলো!

–“এবার খাটে একলা একলা শুয়ে থাকো তুমি।”

এই বলে ছোঁয়া ওয়াশরুমে চলে গেলো! ওদিকে হৃদয় ছোঁয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো!

#চলবে?