হৃদয়ের ছোঁয়া পর্ব-০৬

0
272

#পর্ব৬
#হৃদয়ের_ছোঁয়া
#অর্ষা_আওরাত

শীতের সকাল চারিদিকে কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে আছে রাস্তাঘাট! যতোদূর চোখ যায় কেবল কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশই দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ। রাস্তা ঘাটে তেমন মানুষজন নেই বললেই চলে সবাই শীতের সকালে নিজ নিজ বাড়িতে আছে। এমনি হাড় কাঁপানো শীতে গোসল সেড়ে নীল রঙের একটি শাড়ি পড়ে বেরিয়ে এলো ছোঁয়া। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে রেডি হচ্ছে হৃদয় আবারো ঘুমে মগ্ন হয়ে আছে। ছোঁয়া নিজেকে পরিপাটি করে যেই না হৃদয়কে ডাকতে যাবে ওঠার জন্য ঠিক তখনি দরজায় কড়াঘাতের শব্দ শুনতে পেলো। শাড়ির আচঁল কাধ থেকে ওঠিয়ে মাথায় বড়ো করে ঘোমটা দিয়ে দরজা খুললো ছোঁয়া। দরজার ওপারে ছোঁয়ার ছোটো ননদ আর কাকী শাশুড়ী হাসিমুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। ছোঁয়াকে দেখেই তারা বললো,

–“নতুন ভাবি তো বেশ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠে গেলে দেখছি। ভাইয়া এখনো বুঝি ঘুম থেকে ওঠেনি ভাবি?”

–“না ইতু সে এখনো ঘুমাচ্ছে। আমি ডাকতেই যাচ্ছিলাম তখনি তুমি আসলে।”

–“তাহলে তুমি ভাইয়াকে ডেকে তাড়াতাড়ি ওঠিয়ে নিচে পাঠাও ভাবি? আর তুমি একটু পর নিচে এসো।”

ছোঁয়া হ্যাঁ বলে হৃদয়কে ডাকতে লাগলো। হৃদয়কে ঘুম থেকে ওঠিয়ে বাজারে পাঠিয়ে ছোঁয়া বসে ছিলো কিছুক্ষণ তারপরেই ইতু আসে ছোঁয়া ইতুর সাথে নিচে নেমে যায়। নিচে নেমেই দেখে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছ সামাদ! সামাদকে মুহুর্তের মধ্যেই ছোঁয়ার হাসি মুখ আঁধারে ছেয়ে গেলো। সামাদ তীক্ষ্ণ নজরে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ছোঁয়া সামাদের দৃষ্টি উপেক্ষা করে নিচে সবার সাথে খেতে বসলো। তারপরই বেলা হলে ছোঁয়াকে সাজিয়ে গুজিয়ে নিচে নামানো হয়। ছোঁয়ার পাশে হৃদয়ও বসে আছে এক এক করে সবাই ভীড় করলো নতুন বউ দেখবে বলে। সবাই নতুন বউ দেখে বউর প্রশংসা করে চলে গেলো। এরই মাঝে ছোঁয়ার চোখ যায় বহু পরিচিতো এক জোরা চোখের দিকে! ভালো করে চেয়ে দেখলো এই চোখের অধিকারী তার পরম শ্রদ্ধেয় বাবার! বাবাকে দেখে বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে গেলো। মেয়েকে দেখে বাবাও কাছে এসে বললো,

–“ভালো আছিস তো মা?”

এক মুহুর্তের জন্য ছোঁয়ার না চাইতেও বাবাকে দেখে কেনো জানি কান্না এসে ভড় করলো নিজের দু চোখে! হয়তো এটাই মেয়েদের বাবার প্রতি ভালোবাসা। হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মুছে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,

–“আমি ভালো আছি বাবা। তোমরা সবাই ভালো আছো তো?”

–“হ্যাঁ রে ভালোই আছি। কিন্তু তোকে ছেড়ে থাকতে যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে রে ছোঁয়া!”

ছোঁয়া আর ছোঁয়ার বাবা কথা বলার সময় হৃদয়ের বাবা এসে তাদের ডাক দিয়ে কথা বলতে চলে যায়। সব নিয়ম কানুন শেষ করে ছোঁয়া আর হৃদয় এসে পৌঁছেছে ছোঁয়াদের বাড়ি। বাড়ির সবার সাথে কথা বলা শেষ করে একটু বিশ্রাম নিয়ে রুমে বসেছিলো ছোঁয়া। তখনি রুমের জানলা দিয়ে দেখতে পেলো সোহা মোবাইল ফোন কানে নিয়ে কারো সাথে কথা বলতে বলতে হন্তদন্ত হয়ে যাচ্ছে! বিষয়টি খটকার মনে করে ছোঁয়া জানলার পাশ ঘেষে দাঁড়ালো সোহার কথা শোনার জন্য কিছু কিছু কথা ছোঁয়া শুনতে পেলো,

–“আমি আর কোনো উল্টো পাল্টা কাজ করতে পারবো না সামাদ। তুমি আর কোনো কিছু বলবে না আমাকে। আমরা জমজ বলেই আপুর জায়গায় আমি বসে হৃদয়কে ঠকাবো এমনটা কোনোদিনও হতে পারে না! আপুরা বাড়িতে এসে পৌঁছিয়েছে। আবার কালকেই চলে যাবে তাই এ ক’দিন আমি কোনো হট্টগোল করতে চাইছি না। তুমি বরং আমাদের*

আর কোনো কথা বলার আগেই টেবিলে থাকা ফুলদানি পড়ে মেঝেতে জোরে এক আওয়াজ সৃষ্টি করলো যার কারনে সোহা আর কোনো কথা না বলে চুপিসারে সেখান থেকে চলে গেলো। ছোঁয়া নিজের মনে মনে ভাবছে,

–“আমার অসাবধানতার জন্য সোহার পুরো কথাটি শুনতে পারলাম না! তবে এটুকু তো বুজলাম সোহার এই অদ্ভুত ব্যবহার, অদ্ভুত কর্মকান্ড সব কিছুর পিছনে সামাদই দায়ী! কিন্তু সোহা সামাদের কথাই বা শুনছে কেনো? সকল প্রশ্ন গুলো যেনো জট পাকিয়ে যাচ্ছে। ছোঁয়াকে চিন্তিতো দেখতে পেয়ে হৃদয় প্রশ্ন কে বসলো,

–“কি ভাবছো আনমনে?”

হৃদয়ের ডাকে সংকুচিত হয়ে ছোঁয়া পিছনে তাকালো! হৃদয়কে দেখে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। হৃদয়কে কোনো কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না সোহা আর সামাদের ব্যাপার। আগে ছোঁয়া নিজে ক্লিয়ার হউক তারপরে সামাদের বিরুদ্ধে সব প্রমান জোগাড় করে সামাদে বিরুদ্ধে সবাইকে সবকিছু জানাবে আপাততো চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করলো ছোঁয়া। হৃদয়ের দিকে ফিরে মুখে হাসির রেখা টেনে বললো,

–“তুমি কখন এলে হৃদয়?”

–“এসেছি তো আরো অনেক আগেই। এসেই দেখছি তুমি আনমনে কিছু একটা ভেবে যাচ্ছো সেই কখন থেকে। আমি যে রুমে এসেছি তার ব্যাপারে তো কোনো খেয়ালই নেই তোমার। কি করছিলে আমার থেকে লুকিয়ে?”

হৃদয়ের কথায় ছোঁয়ার বুক কেঁপে ওঠলো খানিকটা! তাহলে কি হৃদয় কিছু বুঝতে পেরে গেলো কি? ব্যাপারটা ধামাচাপা দিতে ছোঁয়া বলে ওঠলো,

–“সেসব কিছু নয় হৃদয়। এমনি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তুমি বাজার থেকে আসলে নিশ্চয়ই ক্লান্ত? আমি তোমার জন্য শরবত করে নিয়ে আনছি।”

হৃদয়কে আর কোনো কিছু বলার সুযোগ না তিয়ে ছোঁয়া রান্নাঘরে চলে গেলো শরবত বানাতে! শরবত বানানোর সময় খেয়াল করলো রান্নাঘরে সে একলা না সোহাও আছে! সোহা ডাইনিং টেবিলে বসে ভাত খাচ্ছে। সোহা ছোঁয়াকে দেখে মাথা নক করে চুপচাপ খেতে লাগলো যেটা ছোঁয়ার দৃষ্টিগোচর হলো না। ছোঁয়া নিজের মতন করে হৃদয়ের জন্য শরবত বানিয়ে যাচ্ছে আর তীক্ষ্ণ নজরে সোহাকে পরখ করছে! সোহা ব্যাপারটি বুঝতে পেরে খাওয়ার প্লেটে হাত ধুয়েই চলে যেতে যাচ্ছিলো ঠিক তকনি ছোঁয়া ডাক দেয় সোহাকে! ছোঁয়ার ডাক শুনে সোহা পিছন ফিরে তাকিয়ে বললো,

–“আমাকে ডাকছিস কেনো? কিছু বলবি তুই?”

সোহার কথায় ছোঁয়া একবার সোহার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। সোহা ছোঁয়ার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারছে ন! বারবার চোখ নামিয়ে ফেলছে ব্যাপারটি ছোঁয়াও বুঝতে পারলো। ছোঁয়া সোহাকে বললো,

–“হ্যাঁ কিছু বলার জন্যেই ডেকেছি তোকে। এই অবেলায় ভাত খাচ্ছিস কেনো তুই? দুপুরে খাসনি কিছু?”

–“আমি খাই বা না খাই তাতে তোর কি? তুই আমাকে এতো কথা জিগেস করছিস কেনো?”

ছোঁয়ার সন্দেহজনক লাগলো সোহার ব্যাবহার! সোহা তো কখনো তার সাথে এভাবে কথা বলেনি? তাহলে আজ কেনো বলছে? সোহার কথা শুনে মনে হচ্ছে হয়তো কোনো কিছু লুকোতে চাইছে তাই এভাবে কথা বলছে।

–“এই অবেলায় খেতে বসেছিস এতে জিগেস করলেই কি হয়েছে? এরকম করছিস কেনো তুই আমার সাথে? অনেকক্ষন তো হয়েছে আমি বাড়িতে এসেছি কই একটাবার ও তো আমার কাছে আসলি না? একবারো জিগেস ও করলি না আমি কেমন আছি।”

–“দেখ আপু আমি কোনো কিছু করিনি তোর সাথে। আর তোকে দেখে তো আমার অসুস্থ মনে হচ্ছে না যে তোকে জিগেস করবো তুই কেমন আছিস? আমি তো দেখতেই পাচ্ছি যে তুই সম্পূর্ন সুস্থই আছিস তাহলে? তোর সাথে এতো কথা বলার মতন সময় নেই আমার।”

ছোঁয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রান্নাঘর থেকে চলে গেলো সোহা! সোহার যাওয়ার পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়া! সোহা তো আগে ককনোই এরকম করেনি ছোঁয়ার সাথে তাহলে আজ এরকম ব্যবহারের কারন? শুধু আজ নয় কালকের ওরকম অদ্ভুত ব্যবহার বিয়েতে কনে সেজে বসাই বা কিসের জন্য করছে সোহা? ছোঁয়া শরবত হাতে নিয়ে এসব ভাবছে তার ভাবনার মাঝেই রান্নাঘে ছোঁয়ার মা আসলো। মেয়েকে এমন আনমনা দেখে তিনি প্রশ্ন করে ওঠলেন,

–“কি ভাবছিস এতো ছোঁয়া?”

মায়ের প্রশ্নে ছোঁয়া আনমনে বলে ওঠলো,

–“ভাবছি সোহার পরিবর্তন এর কারন কি?”

মেয়েন কথা শুনে ছোঁয়ার মা বললেন,

–“ওর কথা ভাবিস না তুই। মেয়েটার কি হয়েছে আল্লাহই জানে। না হলে যে সোহা কি না সবসময়ই তোর আশেপাশে থাকতো এখন সেইই তোর সাথে এরকম অদ্ভুত ব্যবহার করছে! তোরই বিয়েতে তোর জায়গায় বসেছিলো, তুই আসা অব্দি একবারো তোর সাথে কথা বলেনি! সোহার এরকম পরিবর্তন ঠিক লাগছে না। আমি আর তোর বাবা কালকে কতো করে বোঝালাম কতো জানতে চাইলাম ও এমন করার কারন কি? কিন্তু সোহা একটা শব্দও বলে নি জানিস?”

–“আমি হয়তো কিছুটা বুজতে পারছি। তুমি এসব নিয়ে একদমই চিন্তা করো না। ও বাড়িতে যাবার আগে সোহার সাথে খোলসা করে আমি কথা বলে নিবো একবার।”

#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি হলে ধরিয়ে দিবেন।